সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-১৬

0
1365

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_১৬

#Tahmina_Akther

হিয়ার হাত ধরে অভিক চলে এলো নিচে ডাইনিং টেবিলে। একটা চেয়ার টেনে বসিয়ে দিলো হিয়াকে এরপর রান্না ঘরে যেয়ে ওর মাকে বললো,

-মা, ফুল আর আমি এসেছি ডাইনিংয়ে খাবার দাও তো।

-তোর বন্ধুদের ডাক দিস নি?

-আন্টি ওর কি আর আমাদের মতো নাদানের দিকে খেয়াল থাকবে সে তো তার ফুলকে নিয়ে ব্যস্ত। একটিবার বললো না, দোস্ত খাবার খেয়ে নে। দেখিস হারামি তোকে আমার বিয়েতে নিয়ে না খাইয়ে রাখবো।

অভিকের কাঁধ চেপে বললো আবির। অভিকের মা হেসে ফেললেন ওদের কথা শুনে।

-তোমরা বসো বাবা আমি খাবার পাঠিয়ে দিচ্ছি।

রান্না ঘরে থেকে একে একে সব খাবার টেবিলে এনে সাজিয়ে রাখছে জরি খালা। অভিক আর হিয়া মিলে ওদের সব বন্ধুদের খাবার বেড়ে দিলো। অভিক সবাইকে খাবার দেয়ার পর হিয়াকে বলছে,

-ফুল তুমি বসে পড়ো। নয়তো দেখা যাবে তুমি মার্কেটে যেয়ে হাটতে পারবে না।

-কেন রে ভাই তোর বৌ কি বেশি খেয়ে ফেলবে আর যদি খেয়েও ফেলে কোলে নিয়ে হাটবি।
বলে বিদ্রুপের হাসি দিলো তিয়ানা।

অভিকের বেশ রেগে গেলো। তারপরও কিছু বললো না, কারণ তিয়ানা ওদের বাড়িতে গেস্ট হিসেবে এসেছে। জাস্ট একটু করে বললো,

-আসলে হিয়া বেশি খাবার একসাথে খেতে পারে না। ওর অস্বস্তি হয় তাই বলছিলাম আগে খেয়ে একটু রেস্ট নিতে।

তিয়ানার কথা শুনে বেশ লজ্জা পেয়েছে হিয়া। ও আর কারো দিকে মুখ তুলে তাকায় নি। হয়তো এই বিষয়টা অভিক খেয়াল করেছে।
সুপ্ত দীর্ঘশ্বাস ফেলে একটি প্লেটে ভাত আর ঝাল গরুর মাংস নিয়ে মেখে হিয়ার মুখের সামনে ধরলো।
মুখের সামনে ভাতের লোকমা দেখে চোখ তুলে তাকালো হিয়া ওমনি ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে পানি পড়লো। অভিক বেশ কষ্ট পেলো হিয়াকে কাঁদতে দেখে। একহাতে ওর চোখের পানি মুছে দিলো। এরপর হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-কারো কথায় কি আসে যায় বলো তো ফুল।তোমার জন্য যেটা সবচেয়ে বেস্ট তাই তুমি বাছাই করে নিবে। কারো কথায় মনে কষ্ট নিয়ে শুধু শুধু নিজেকে কষ্ট দেয়ার কোনো মানে হয় না বুঝলে এখন হা করো তো আমার হাত ব্যাথা হয়ে যাচ্ছে।

হিয়া হা করতেই অভিক খাইয়ে দিলো। আর তিয়ানা সে বেশ লজ্জা পেয়েছে নিজের বলা কথায়।
আবির, মিরা আর সাঈদ ওরাও মনে মনে বেশ খুশি হয়েছে অভিক উত্তর দেয়াতে।

হিয়াকে খাইয়ে অভিক খেতে শুরু করলো। এরইমাঝে অভিকের নানু আসলেন। এসে আরেকটি চেয়ার টেনে বসে পড়লেন। হিয়াকে আর অভিককে একসাথে বসতে দেখে হালকা হেসে হিয়াকে জিজ্ঞেস করলো, খেয়েছে কি না?
হিয়া মাথা নাড়িয়ে হ্যা বললো। অভিকের নানু

অভিকের খাওয়া শেষ হওয়ার অপেক্ষায় ছিলেন। অভিক বেসিন থেকে হাত ধুয়ে আসতেই ওর নানু ওকে বললেন,

-শুন অভিক তোর সাথে কিছু কথা আছে বস এখানে।

অভিক এসে বসে পড়লো। এবার ওর নানু অভিকের মা এবং হিয়ার মা’কে ডাকলেন। ওনারা ডাক শুনতে পেয়ে চলে এলেন।
এরপর সবার উদ্দেশ্য অভিকের নানু বললো,

-রেহনুমা, বিয়ের সময় কি বর কনে এক বাড়িতে
থাকে কোথাও দেখেছো?

– না আম্মা, কেন কি হয়েছে?

-কি হয়নি তাই বলো? অভিক আর হিয়ার বিয়ে হতে আর মাত্র তিনদিন বাকি ওরা এখনো একবাড়িতে থাকছে কেন?

-আসলে কি আম্মা?

– মা, তুমি কোনো কথা বলো না আমি বলছি নানুকে। নানু তুমি বলতে চাইছো আমরা এখন একবাড়িতে থাকছি এইটা বিশাল সমস্যা?

-বেশি বুঝবি না অভিক বিয়ের বর কনে এক বাড়িতে দেখতে খারাপ লাগে। যতই তোরা এক পরিবারের লোক তবুও। তাই আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি বিয়ে হবার আগ পর্যন্ত তুই বাড়ির বাইরের গেস্ট হাউজে থাকবি আর তোর হলুদের অনুষ্ঠান এবং বিয়ের চলন কমিউনিটি সেন্টারে এই গেস্ট হাউজ থেকেই যাবে।
আর তুই এই বিষয়ে একটাও কথা বলবি না। বিয়ের পর বৌকে সারাজীবন দেখিস তখন কেউ না করবে না।

-কিন্তু, নানু?

-কোনো কিন্তু না। আজ বিকেলে যেয়ে সব ধরণের কেনাকাটা শেষ করবি। আজকেই হিয়াকে দেখতে পারবি এরপর একেবারে বিয়ের পর। হিয়ার মা?

-জি খালাম্মা।

-আমি কি বলেছি সবাই বুঝেছো?

-জি খালাম্মা।

অভিক বেচারার অবস্থা তখন দেখার মতো ছিলো ওর বন্ধুরা মুখ টিপে হাসছিল আর হিয়া বেশ মজা পেলো অভিকের নানু সিদ্ধান্ত শুনে।

রাগে দুঃখে অভিক হিয়াকে টেনে নিয়ে চললো। হিয়াকে টেনে নিয়ে যাচ্ছে দেখে অভিকের নানু বলে উঠলো,

-কি রে ওকে আবার হাত ধরে কোথায় নিয়ে যাচ্ছিস?

-ওর রক্ত খাবো তাই নিয়ে যাচ্ছি খুশি?

বলেই চলে গেলো। আর ওরা দুজন চলে যেতেই পুরো টেবিলে যেন হাসির ফোয়ারা ছুটলো।

——————–

হিয়া বসে আছে অভিকের রুমে অভিক কি যেন বের করছে আলমারি থেকে। হয়তো পেয়ে গেছে একটি প্যাকেট হাতে নিয়ে হিয়াকে দিলো আর বললো,

-এটাতে যা আছে তা পরে নাও। একটু পর বের হবো।

হিয়া অভিকের হাত থেকে প্যাকেটটি নিয়ে ওর রুমে চলে এলো। প্যাকেট খুলে দেখলো একটি কলাপাতা রঙের শাড়ি আর একটি চিরকুট। আগে চিরকুটটি খুললো হিয়া। চিরকুটে লেখা,

“আজ থেকে না হয় তোমার জীবনের শুভ্র রঙকে চিরজীবনের জন্য বিদায় দিয়ে আর আমার রঙে নিজেকে রাঙিয়ে নিও। বড্ড বেমানান এই রঙ তোমার সাথে ”

প্রত্যেকটি শব্দ যেন আজ হিয়ার হৃদয়ে গিয়ে কম্পিত করলো। সত্যি কি তবে এই শুভ্র রঙকে বিদায় জানানোর সময় হয়েছে?

হিয়ার এবার শাড়িটিকে উল্টে পাল্টে দেখলো। বেশ বেশ চেনা চেনা লাগছে এই শাড়িটি। কিছুক্ষণ ভাববার পর মনে এলো। এটা সেই শাড়ি যেটা একবার মার্কেটে গিয়ে কিনেছিলো অভিক। শাড়ি কার জন্য নিয়েছে জিজ্ঞেস করাতে অভিক বলেছিলো,

-কিনলাম আমার প্রিয়তার জন্য। ওর গায়ে ভীষণ রকমের মানাবে এই শাড়িটি।

হিয়া বললো,

-ও তলে তলে আমাদের অভিক প্রিয়তার জন্য শাড়িও কেনে। তবে কে এই প্রিয়তা.?

-আছে, তাকে খুব গোপনে আমার বুকের বা পাশের কুটিরে রেখেছি। গোপন মূল্যবান সে আমার কাছে। তাই ও কে জিজ্ঞেস করো না কারণ তুমি আমার কাছে থেকে উত্তর পাবে না ফুল।

পুরোনো স্মৃতিচারণে হিয়া হারিয়ে গেলো। আর ভাবতে লাগলো, অভিকের প্রিয়তা তবে আমিই ছিলাম, ওর গোপন কুটিরে তবে আমাকে রেখেছিলো। একটি বার বুঝতেও দেয়নি পাগলটা। ভ্যাগিস, নিঝুম ভাইয়া বলেছিলো সে আমাকে পছন্দ করে বিয়ে করতে চায় নয়তো অভিক কখনোই ওর সুপ্ত ভালোবাসা কারো কাছে প্রকাশ করতো না।

হিয়া শাড়িটা পড়ে তৈরি হয়ে নিলো। মাথায় সাদা রঙের হিজাব বেঁধে নিলো। এরপর,বের হয়ে চলে গেলো ওর বাবার রুমে। গিয়ে দেখে ওর বাবা ঘুমাচ্ছে তাই আর না জাগিয়ে চলে গেলো অভিকের কাছে। অভিক তখন মোবাইলে কার সঙ্গে কথা বলছিলো।

দরজায় নক হতেই বললো,

-দরজা খোলা আছে। আসতে পারো।
না দেখেই বললো।

হিয়া এবার গলা খাঁকারি দিলো। অভিক ঘাড় ঘুরিয়ে তাকালো। ব্যস, ওমনি যেন ও বড় ধরনের ধাক্কা খেলো প্রায়। কারণ, সে ভেবেছিলো হিয়া হয়তো শাড়িটা পড়বে না কিন্তু ওকে অবাক করে দিয়ে শাড়িটি পড়েছে। কল কেটে দিয়ে এবার ভালো করে তাকালো হিয়ার দিকে।

ফর্সা গায়ে কলাপাতা রঙটি বেশ মানিয়েছে। মাথায় হিজাবটি পরাতেই যেন ওর চেহারাতে আলাদা জৌলুশ এনেছে। অভিক যেন মোহিত হয়ে গেছে হিয়ার আজকের রুপ দেখে।

হালকা হেসে হিয়ার সামনে গিয়ে দাড়ালো। এরপর, হিয়াকে বললো,

-অবশেষে আজ অনেক বছরের অপেক্ষার পর এই শাড়িটা তার আসল মালিককে খুজে পেলো।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here