সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-১৮

0
1164

#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব_১৮
#Tahmina_Akther

তিয়ানা, মিরা আবির সাঈদ ওরা ঘুরে ঘুরে ওদের জন্য পাঞ্জাবি, শাড়ী চয়েজ করছে। আর আমি বসে আছি অভিকের পাশে অভিক বিয়ের বেনারসি দেখছে আমার জন্য। কারণ, তার একটাই কথা ওর পছন্দের বেনারসি আমায় পড়তে হবে। এরইমাঝে অভিক আমাকে বললো,

-এই শাড়িটা বেশ সুন্দর তাই না ফুল। তোমাকে বেশ মানাবে।

-হিয়াকে আসলেই মানাবে এই শাড়িটাতে। পিছন থেকে মিরা বলে উঠলো।

শাড়িটি আসলেই সুন্দর। রক্ত লাল রঙা, সোনালী পাড়ের শাড়ী।মাঝে ছোট ছোট ফুল সোনালী রঙের।

-হুম, শাড়ীটা সুন্দর।

-মানতে হবে স্যারের চয়েজ আছে। ম্যাম আপনাকে পুরো প্রতিমার মতো দেখাবে এই শাড়িতে।

-প্রতিমা বলবেন না। আমরা মুসলিম আমাদের এই শব্দে শোভা পায় না। আচ্ছা, অভিক তোমার শেরওয়ানি নিবে না?

-হ্যা নিবো তবে আগামীকাল। বিল কত হলো বলুন পে করে দিচ্ছি?

বিল পরিশোধ করে ওরা চলে গেলো অর্নামেন্টস শোরুমে।আগেই থেকেই অর্ডার করে রেখেছিলো আজ দিয়ে দিবে।
নেকলস,কানের দুল, হাতের বালা,মাথার টায়রা, টিকলি অভিকের পছন্দ মতো ডিজাইন করা।হিয়া মনোযোগ দিয়ে দেখছে আর ভাবছে আসলেই মানুষটির রুচি বেশ ভালো।আনকমন ডিজাইনের তৈরি। এরই মাঝে কেউ হিয়াকে উদ্দেশ্য করে বললো,

-ম্যাম, আপনি নোজপিন নিবেন না? বিয়ের কনে নাকে ফুল দিবে না ব্যাপারটা বেশ উইয়ার্ড ?
শোরুমের নারী কর্মচারী বললো।

আসলেই তো হিয়া তো নোজপিন নেয় নি?আর নিয়ে বা কি করবে ও তো নাক ফুরায় নি। বেশ মন খারাপ হয়ে গেলো হিয়ার। কেন যে মা এতবার বলার পরও নাক ফুড়ায় নি এখন বেশ আফসোস হচ্ছে?

-কি হয়েছে মন খারাপ কেন? জুয়েলার্সের বক্সের প্যাকেটগুলো হাতে নিতে নিতে বললো অভিক।

-আসলে নাকের ফুল কেনা হয় নি।

-ও আমিও তো ভুলেই গেছি। তাহলে তুমি পছন্দ করে নিয়ে নাও।

-কিন্তু, আমি তো নাকই ফুড়াই নি।

-তাহলে বাদ দাও লাগবে না। এমনিতেই তুমি অপরুপা এইসব লাগবে না।

-কিন্তু,

-কোনো কিন্তু না। এখন চলো বাড়িতে ফিরতে হবে রাত হয়ে যাচ্ছে।
হিয়ার হাতে ধরে অভিক বেরিয়ে এলো।আর হিয়া মনে মনে কি যেন ভাবছে?

এবার আর বাইকে করে আসতে হয়নি। আবির আর তিয়ানা বাইকে করে এসেছে। হিয়া অভিক আর সাঈদ মিরা এসেছে কারে।

এরইমাঝে হিয়ার মোবাইলে টুং করে একটি মেসেজ এলো।হিয়ার হাতেই ছিলো মোবাইল তাই চেক করলো কে দিলো মেসেজ? মেসেজটি পড়তেই হিয়ার পুরো শরীর কাঁপছে। আজ এতবছর পর সেই নাম্বার থেকে মেসেজ এসেছে।
হিয়ার পাশেই অভিক বসা হিয়াকে হঠাৎ এভাবে নার্ভাস হতে দেখেই অবিক ব্যতিব্যস্ত হয়ে বললো,

-কি হয়েছে এভাবে কাপছো কেন? আরে বলবে তো চুপ করে আছো কেন?

-কি হয়েছে? সামনে থেকে সাঈদ প্রশ্ন করলো।

-বলছে না তো, আরে বলবে তো নাকি?

হিয়া কাপা হাতেই মোবাইল বাড়িয়ে দিলো অভিকের দিকে।অভিক মোবাইল হাতে নিলো।মেসেজ এসেছে একটি আননোন নাম্বার থেকে সেখানে লেখা,

“হিয়াপাখি, কেমন আছো? বেশ ভালোই আছো দেখলাম অভিকের সাথে বেনারসি কিনলে।এটা কি ঠিক বলো তুমি? আমি তোমায় ভালোবেসে পুরো দুনিয়াকে ধ্বংস করতে পারি আর তুমি আমার জন্য অপেক্ষা করতে পারো না?দিস ইজ নট ডান।
আমি তোমার পাশে কারো ছায়া সহ্য করতে পারি না আর তোমার সাথে কি না লেপ্টে থাকবে তোমার হবু স্বামী অভিক!আমি বেচে থাকতে কখনোই তা হতে দিবো না। যদি অভিকের কোনো ক্ষতি না চাও তবে এই বিয়ে ভেঙে দাও। আর যদি তুমি এই বিয়ে করো তাহলে অভিককে হারাবে এরপর সারাজীবনের জন্য তুমি শুধুই আমার। শীঘ্রই তোমার সাথে আমার দেখা হবে কারণ আজ বহুবছর ধরে তোমায় সামনাসামনি দেখিনা। কত লুকিয়ে চুরিয়ে দেখা যায় বলো?
আমার মায়ের জন্য পারি না বুঝলে নয়তো আজ চারবছর তোমায় হীন নিঃসঙ্গ থাকতে হতো না আমায় । আমি যা বললাম তাই করবে এই বিয়ে ভেঙে দিবে তুমি নয়তো অভিকের মৃত্যু অনিবার্য। ”

অভিক বেশ শান্ত সুরে হিয়াকে বললো,

-এইটা কি সেই মেসেজ দাতা যে আগেও তোমাকে মেসেজ দিয়েছিলো?

-হ্যা, এই সেই লোক।কিন্তু, কে সে আমি কিছুই জানি না,যদি সে স্যতিই তোমার ক্ষতি করে বলেই কাঁদতে লাগলো হিয়া।কারণ, সে জানে এই লোক কত ভয়ংকর ওই ছেলে দুটোকে কিভাবে মেরেছিলো ভাবলে এখনো গায়ের লোম দাঁড়িয়ে যায়।

অভিক ভাবতে থাকলো কে হতে পারে এই অজানা ওর নাম পর্যন্ত জানে। আর এত বছর লাপাত্তা থাকার পর হঠাৎ উদয় হলো কোত্থেকে? না, বাবার সাথে এই ব্যাপারে আলাপ করতে হবে।

হিয়ার মুখের দিকে তাকালো বেশ আতংকিত হয়েছে। হিয়ার হাতে হাত রাখলো অভিক এরপর আস্বস্ত করে বলল,

-আমার কিছুই হবে না বোকা ফুল। শুধু শুধু ভয় পাচ্ছো বাবাকে এই নাম্বার দিলেই আসল কালপ্রিট কে ধরতে পারবে। তুমি নিশ্চিত থাকো। তোমার অভিককে কেউ একটা ফুলের টোকাও দিতে পারবে না।

হিয়া অভিকের কাঁধে মাথা রেখে কেঁদে কেঁদে বলছে,

-কেন আমায় যারা ভালোবেসে তারা চলে যায় আমাকে ছেড়ে অভিক?আহান চলে গেলো আমায় ছেড়ে যখন সব ভুলে তোমাকে আঁকড়ে ধরলাম। তখন কে এলো আমার জীবনটাকে বিষিয়ে তুলতে? অভিক তোমার কিছু হলে এবার আমি বাঁচবো না মরে যাবো। কারণ, হারিয়ে ফেলার শক্তি যে আমার আর নেই।

-আমি যদি মরে তাহলে তোমার কি ফুল? তুমি তো আর আমাকে ভালোবাসো না তাই না?

বলেই হিয়ার মুখের দিকে তাকিয়ে আছে কি উত্তর
দেয়া জানার জন্য।

আর হিয়া অভিকের কাঁধ থেকে মাথা তুলে অভিকের দিকে তাকিয়ে রইলো।কি নিষ্ঠুরভাবে কথা বললো এই পাষানটা!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here