সুপ্ত ভালোবাসা❤পর্ব-৭

0
1389

#সুপ্ত_ভালোবাসা
#পর্ব:৭
#Tahmina_Akther

-ফুল তুমি এভাবে দৌড়াতে গেলে কেন? আর দৌড় যখন দিয়েছো তখন আশপাশে বা সামনে তাকিয়ে দেখে নিবে না।
বেশ রাগী স্বরে বললো অভিক।

-অভিক সবসময় এভাবে শাসন করবি না ঠিক আছে আমি তোর বড় এটা কি তোর মনে থাকে না।

-সে তো দেখতেই পেলাম তুমি আমার থেকে কত বড় হয়েছো!আর তুমি নিঝুম ভাইয়ের কাছ থেকে দূরে দূরে থাকবে ঠিক আছে?

-নিঝুম ভাই আবার কি করলো তোর?উনি আমাদের ফুপাতো ভাই হন তাহলে উনাকে কি ভাবে ইগনোর করবো?

-এতশত কথা বাদ আমি যা করতে বলেছি তুমি তাই করবে । তারাতারি রেডি হও ভার্সিটির জন্য বের হতে হবে আধঘন্টা পরে।
বলে গটগটিয়ে চলে গেলো অভিক।

আজ নোভা এসেছে ওকে ছেড়ে ভার্সিটিতে যেতে মন চাইছে না। বেশ মন খারাপের সুরে বললো হিয়া। গোসল করে রেডি হয়ে নেই নয়তো এই অভিক আবার ওর পকপক শুরু করে দিবে।

আজ নোভার পরনে কালো রঙের গ্রাউন, কাধের একপাশে সাদা ওড়না আর মাথায় কালো হিজাব বাঁধা। মুখে কোনোপ্রকার প্রসাধনী ব্যবহার করেনি হিয়া।
হিয়া আয়নায় নিজেকে দেখে বললো,

-সাদা রঙটি যেন আমার জন্যই তৈরি হয়েছে! কি সুন্দর ভাবে সারা শরীরে সেঁটে আছে। অথচ, আহান একবার আমায় বলেছিলো, হিয়া তোমায় সব রঙে অনেক মানায় কিন্তু, কখনো সাদা রঙ পরতে দেখেনি একবার আমাকে সাদারঙ পরে দেখিয়ো তো।
আমার জবাব ছিলো,

-সাদারঙ আমার পছন্দ না আহান তাই আমি পরি না বুঝলে।যদিও কখনো পরি তুমি দেখবে না আর আমিও চাই না কখনো এই সাদা রঙ গায়ে জড়াতে।

কিন্তু, কে জানতো এই সাদা রঙ আমার জীবনের সবচেয়ে প্রিয় রঙ!
চোখের পানি মুছে কাধে ব্যাগ নিয়ে চললাম অভিকের রুমে।

দরজায় নক করলাম ভিতর থেকে কোনো সাড়া পাচ্ছি না দেখে দরজা খুলে ভিতরে ঢুকলাম। দেখলাম অভিক মহাশয় সিগারেট খাচ্ছে তাও আবার ব্যালকনির দরজা লাগিয়ে। কাচের এপাশ থেকে স্পষ্ট দেখতে পেলাম আমি।
কাঁধের ব্যাগটি রেখে ব্যালকনির দরজায় বেশ কয়েকবার টোকা দিতেই ও তাড়াতাড়ি হাত থেকে সিগারেট ফেলে এসে দরজাটা খুলে দিলো। আমাকে দেখে হালকা হেসে বললো,

-তুমি আজ আমার রুমে বাহ বাহ কি সৌভাগ্য আমার। তা কি মনে করে এলে?

-তুই যে আমাকে ভার্সিটিতে যাওয়ার জন্য তৈরি হতে বললি সেটা কি ভুলে গেলি? আর তুই সিগারেট খাস কবে থেকে?

-এইতো বেশ কিছু দিন হলো, তুমি কেন এইসব প্রশ্ন করছো?
আর আমি ভুলি নি তোমাকে কি করতে বলেছি? চলো নিচে যেয়ে নাশতা খেয়ে বের হয়ে পরি।

বলে অভিক দরজার কাছে যেয়েও আবার ফিরে আসে আমার দিকে। আমার মুখের দিকে কয়েক পলক তাকিয়ে বললো,

-ফুলো আজ তোমায় পুরো কালো গোলাপ দেখাচ্ছে। হিজাব পড়লে তোমায় বেশ লাগে আজকের পর থেকে কোথাও গেলে হিজাব বেঁধে যেও।

-ও মনে পরেছে শোন অভিক আজ ক্লাস শেষে একটু মার্কেটে যেতে হবে।

-কেন? কিছু লাগবে তোমার আমাকে বলো আমি এনে দিবো তোমাকে।

-আসলে আমি বোরকা কিনতে চাচ্ছিলাম।

– আচ্ছা, ভালোই হলো তবে নিয়ে যাবো তোমাকে।
এখন আসো দেরি হয়ে যাচ্ছে।

ডাইনিংটেবিলে নিঝুমকে আর দেখা যায়নি ও নাকি আগেই খেয়ে উপরের রুমে ঘুমাচ্ছে। অভিক মনে মনে স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো।

ভার্সিটির ক্লাস শেষ করে দুজন মার্কেটে যেয়ে বোরকা-নিকাব কিনলো। অভিকের হঠাৎ করে একটি শাড়ির শো-রুমের ভিতরে নজর পড়লো। কলাপাতা রঙের একটি শাড়ি বেশ পছন্দ হলো অভিকের তাই ও কিনে ফেললো।

হিয়া বেশ ক’বার জিজ্ঞেস করলো কার জন্য এই শাড়ি কিনেছে? অভিক হালকা হেসে বললো,

-কিনলাম আমার প্রিয়তার জন্য। ওর গায়ে ভীষণ রকমের মানাবে এই শাড়িটি।

হিয়া বললো,
-ও তলে তলে আমাদের অভিক প্রিয়তার জন্য শাড়িও কেনে। তবে কে এই প্রিয়তা.?

-আছে, তাকে খুব গোপনে আমার বুকের বা পাশের কুটিরে রেখেছি। গোপন মূল্যবান সে আমার কাছে। তাই ও কে জিজ্ঞেস করো না কারণ তুমি আমার কাছে থেকে উত্তর পাবে না ফুল।

-হয়েছে বহু কাব্যিক কথা এখন চল বাসায় দেরি হয়ে যাচ্ছে। আম্মু বকবে তাড়াতাড়ি বাসায় না ফিরলে।

-হু চলো।

————-

আজ রাতের আকাশে তারা আর চাঁদের মিলনমেলা চলছে। কি অপরুপ সৌন্দর্য ছেয়ে আছে আকাশজুড়ে!
এতসুন্দর পরিবেশ নাকি কখনোই দেখেনি নোভা আর নিঝুম ভাইয়া। তাই ওরা দুজন সন্ধ্যার পর থেকে ছাঁদে বসে আছে। আমি বসে বসে মোবাইলে ক্যান্ডি ক্রাস গেম খেলছি। সাদাফ, অরিন আর অভিক নিচে গিয়েছে তোষক আর চাদর আনতে। সবাই নাকি ট্রুথ এন্ড ডেয়ার খেলবে। আমার এসব খেলা একটু পছন্দ নয় কিন্তু, আমি যদি না খেলি তবে নোভা আর অভিক মন খারাপ করবে তাই রাজি হলাম।

ওরা তিনজন সব নিয়ে এসে ছাদের ফ্লোরে বিছিয়ে দিলো।একে একে আমরা সবাই গোল হয়ে বসে পড়লাম। নোভা এবার বোতলটি নিয়ে বললো,

-বোতলের এই অংশটি যার দিকে থামবে সে ট্রুথ অথবা ডেয়ার নিবে। আর এই অংশটি যার দিকে থামবে সে ট্রুথ অথবা ডেয়ার দিবে। তাহলে, খেলা শুরু করা যাক।
আমরা সবাই একসাথে বলে উঠলাম, হ্যা, শুরু করা যাক।

নোভা এবার বোতলটি ঘুরিয়ে দিলো। বোতলটি গিয়ে থামলো সাদাফের দিকে। সাদাফ ডেয়ার নিলো আর ওকে ডেয়ার দিবে অভিক। সাদাফের সে কি কান্না? ও বারবার বলছে ভাইয়া আমাকে উল্টাপাল্টা কিছু করতে বলো না।অভিক বলছে,

-যা, তোকে বেশি কিছু দিলাম না।তুই শুধু কাল সকালে এসে এই ফুলগাছ গুলোতে পানি দিয়ে দিস।

-ধন্যবাদ, ভাইয়া আমি কাল খুব সকালে উঠে এই গাছগুলোতে পানি দিব।
চোখের পানি মুছে বললো সাদাফ।

ওর কথা শুনে আমাদের সবার যেন হাসি থামছিলো না। বাবারে কি ভয়টাই না পেয়েছে বেচারা।

এবার পড়লো আমার উপর তাই ট্রুথ নিয়েছি আর ট্রুথ দিবে নোভা ।

-হিয়া, যদি তোর জীবনে আবার কেউ বসন্ত এনে দেয় তুই কি গ্রহন করবি? একদম সত্যি করে বলবি নো চিটিং ওকে।

দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললাম,
-শুকনো মরুভূমিতে যেমন গাছ জন্ম নেয়া অসম্ভব তেমনি আমার জীবনে আহান ব্যতিত অন্যকেউ অসম্ভব। তবুও, জীবনটা অনেক দীর্ঘ চলার পথে একটি হাত বাড়িয়ে দিবে আমার হাত ধরার জন্য। সে হাত যদি এসে আমার সব আমিটাকে পুরোদস্তুর গ্রহণ করে, আমার পুরোনো সব ক্ষতের মাঝে সুখের প্রলেপ লাগিয়ে দেয় তবে সেই বসন্ত আমি গ্রহণ করতে রাজি আছি।
কিন্তু, আমি চাই না আমার জীবনে কেউ আর বসন্ত হয়ে আসুক। হারিয়ে বুঝতে শিখেছি ভালোবাসাহীন থাকতে বড়ই কষ্ট হয়।

আমার কথায় শুনে সবাই যেন চুপ হয়ে গেলো। তাই মহল ঠিক করতে আমি হেসে নোভার হাত থেকে বোতল নিয়ে ঘুরালাম। আর বোতল ঘুরে পরলো নিঝুম ভাইয়ের দিকে।ডেয়ার নিবেন নিঝুম ভাই আর আমাকেই ডেয়ার দিতে হবে। কি দেয়া যায় ভাবছিলাম? তখন মনে একটি জবরদস্ত খেয়াল এলো।

– নিঝুম ভাইয়া,এখন এই মূহুর্তে আপনার পছন্দের মানুষকে আপনার পছন্দের কথা বলবেন।

-ওকে,
বলে হালকা হাসলেন নিঝুম ভাইয়া। উনি উঠে আমার দিকে এগিয়ে আসছিলেন।

উনি কেন আমার দিকে আসছে? আজব তো?
হায় আল্লাহ, অভিক যেভাবে আমার দিকে আছে আজ নিশ্চয়ই কোনো অঘটন ঘটিয়ে ছাড়বে। আল্লাহ আজকের মতো বিপদ থেকে উদ্ধার করো।
মনে মনে বিরবির করে বলছে হিয়া।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here