সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ২২

0
1026

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ২২

আজ মুনার গায়ে হলুদ। এ কদিনে আফসারের উপর মুনার বিরক্তি অনেকটা কমে গেছে। সেদিন আফসার সত্যিটা বলার পর থেকে সে মুনাকে মাঝে মাঝে ফোন করে আর মুনাও রিসিভ করে। প্রথম প্রথম সে খুব অস্বস্তিকর অবস্থায় পড়েছিল। আফসার অনেক কথা বললেও সে বলার মতো কোনো কথাই খুঁজে পেত না। তবে আফসার অনেক চেষ্টা করে মুনার অস্বস্তি কিছুটা কাটাতে সক্ষম হয়েছে। এখন মুনা আগের মতো ততটা অস্বস্তিতে না পড়লেও লজ্জায় পড়ে যায়। আফসার সুযোগ পেলেই মুনাকে তার হাসি নিয়ে খোঁটা দেয়, তখনই মুনার রাগ উঠে যায়। কিন্তু স্যার বলে রাগও দেখাতে পারে না। লোকটাকে আগের মতো বিরক্তিকর না মনে হলেও মুনা তাকে সেই পাজি স্যার নামকরণই করে রেখেছে। এমনকি আফসারের নাম্বারটাও পাজি স্যার নামে সেভ করে রেখেছে। আফসারের কথামতো মুনাও ঠিক করেছে যত যাই হোক সে তার ইচ্ছেমতো বিয়েতে এনজয় করবে। সেই কবে থেকে নিজের বিয়ে নিয়ে সে বস্তা ভর্তি স্বপ্ন জমিয়ে রেখেছে। সেগুলো তো আর বিফলে যেতে পারে না। এ কথা চিন্তা করেই মুনা আজ একদম ফুরফুরে মেজাজে আছে। ইলোরা, অরিশা, ডালিয়া, নাদিয়া আর টুম্পা সন্ধ্যার আগেই চলে এসেছে। তারা সবাই লাল শাড়ি পড়েছে আর হালকা সাজগোজ করেছে। সবাইকে দেখতেও খুব সুন্দর লাগছে। মুনা ওদের দেখেই চোখ বড়ো করে বলল,“তোরা তো লাল শাড়ি স্কোয়াড! এটা কি বিয়ে, না গায়ে হলুদ? আমি কনফিউজড।”

অরিশা দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“এটা অবশ্যই গায়ে হলুদ। তাই বলে যে হলুদ শাড়িই পড়তে হবে এমন মাথার দিব্যি তো কেউ দেয়নি। কখনও কখনও ইউনিক কিছুও করতে হয়। বুঝলা মুলা?”

মুনা ঠোঁট উল্টে বলল,“বইন, মাফ কর। এই মুলা নামে আর ডাকিস না। ঐ পাজি স্যার এমনিতেই আমাকে খোঁচা মেরে কথা বলার নামে পন্ডিত। এই নাম যদি একবার শোনে তাহলে আবার এটা নিয়ে পড়বে।”

টুম্পা বলল,“তা-ই তো ভালো হবে। তোর হাসির কারণে বিনা দোষে আমরা সবাই স্যারদের কাছে অনেক বকা শুনছি। এখন তার সব শোধ তোর জামাইকে দিয়ে উঠাব।”

নাদিয়া হেসে বলল,“আমরা কত ভেবেছি আমাদের মধ্যে কার আগে বিয়ে হবে। ফাইনালি মুনা সবার আগে সিরিয়ালে পড়ল।”

নাদিয়ার কথা শুনে ইলোরা মনে মনে হাসল। বিয়ে তো তারই আগে হয়েছে। এটা যদি এখন এখানে বলা যেত, তাহলে ভীড়ের মধ্যে বোম ব্লাস্ট করার মতো অবস্থা হত। ডালিয়া ভ্রু নাচিয়ে বলল,“ওই ইলো, তুই একা একা হাসছিস কেন? তোরও কি বিয়ের শখ জাগছে?”

ইলোরা ফিক করে হেসে উঠে বলল,“আমি ভাবছি, জীবনে কোনোদিন এমন ফ্রেন্ড সার্কেল দেখিনি যেখানে সবগুলো ফ্রেন্ড সিঙ্গেল। সব ফ্রেন্ড সার্কেলেই কারো না কারো জিএফ/বিএফ থাকে। অথচ আমাদের ফ্রেন্ড সার্কেল দেখ। একদম সবগুলো সিঙ্গেল। একটারও জিএফ/বিএফ নেই। মানে ভাবতে পারছিস? আমাদের দ্বারা কিচ্ছু হবে না।”

ইলোরার কথা শুনে সবাই শব্দ করে হেসে উঠল। নাদিয়া হাসতে হাসতে বলল,“আমরা সিঙ্গেল স্কোয়াড! প্যারা নাই, চিল।”

একদফা হাসাহাসির পর অরিশা গালে হাত দিয়ে বলল,“আর হাসিস না বইনেরা। সামান্য একটা বিএফ জোগানোর যোগ্যতা নেই কারোর। লজ্জা থাকা উচিত গাইস।”

মুনা মুখ বাঁকিয়ে বলল,“অ্যাহ্, তোমার খুব যোগ্যতা আছে মনে হয়। তুমি তো ছ্যাঁকা খাওয়ার ভয়ে প্রেমের ধারেকাছেও যাও না।”

অরিশা মুখ গোমড়া করে বলল,“অপমান!”

মুনা বলল,“আমাকে শাড়ি পরাবি না?”

টুম্পা অবাক হওয়ার ভান করে বলল,“তর সইছে না তোর? আফু ষাঁড়ের বউ হওয়ার জন্য এত তাড়া!”

মুনা সরু চোখে তাকিয়ে বলল,“শোন, ওই পাজি লোকটার বউ হওয়ার জন্য আমি মরে যাচ্ছি না। আমি তো আমার বিয়েতে প্রচুর এনজয় করব। বর কে, সেসব পরে ভাবা যাবে।”

অরিশা বসা থেকে উঠে বলল,“আচ্ছা শোন, এভাবে বসে বসে গল্প করলে শুধু শুধু সময় নষ্ট হবে। আমরা বরং ওকে রেডি করি আর গল্প করি।”

ডালিয়া বলল,“হ্যাঁ। তা-ই ভালো হবে।”

অরিশার কথায় সায় দিয়ে সবাই মিলে মুনাকে রেডি করতে লেগে পড়ল। মুনাকে শাড়ি পরিয়ে মেকআপ করানোর সময় তাহসিন আর অন্তর উপস্থিত হলো। টুম্পাকে দেখেই অন্তরের মুখটা আপনা-আপনি হা হয়ে গেল। অন্তরের কান্ড দেখে সবাই হুঁ-হা করে হাসতে শুরু করল। আর টুম্পা মুখটা বাংলার পাঁচের মতো করে কটাক্ষ করে বলল,“সার্কাস দেখেছিস মনে হচ্ছে। মুখ বন্ধ কর। নইলে মশা ঢুকে ডিম পেড়ে সংসার পেতে বসবে তোর মুখের মধ্যে।”

অন্তর সঙ্গে সঙ্গে মুখটা বন্ধ করে ফেলল। তাহসিন মুখ গোমড়া করে বলল,“আমার ডালিয়া ফুল কই রে?”

ইলোরা মুনার খোঁপায় গাজরা পরাতে পরাতে বলল,“তোর বাসার ছাদে।”

“অ্যাঁ!”

“হ্যাঁ। মুনার বাসায় কোনো ডালিয়া ফুল গাছ নেই। তাই এখানে খুঁজে বিশেষ কোনো লাভ হবে বলে আমার মনে হয় না।”

তাহসিন গাল ফুলিয়ে বলল,“ডালিয়া নামক রমণীর খোঁজ দে। ফুল লাগবে না।”

অরিশা মেকআপ বক্স বন্ধ করতে করতে বলল,“পানি খেতে গেছে। বাইরে গিয়ে দেখ, পেয়ে যাবি।”

তাহসিন হেসে বলল,“থ্যাংক ইউ।”

তাহসিন মুনার রুম থেকে দ্রুত পায়ে হেঁটে বাইরে চলে গেল। ডালিয়া পানির গ্লাসটা টেবিলে রেখে ঘুরে দাঁড়াতেই সামনে কাউকে দেখে ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে দু’পা পিছিয়ে গেল। তারপর তাহসিনকে দেখে বুকে হাত দিয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,“খাম্বার মতো পেছনে দাঁড়িয়ে ছিলি কেন? ভয় পেয়ে গেছি আমি। টু শব্দও নেই মুখে?”

ডালিয়ার কথা তাহসিনের কান অবধি পৌঁছল কি না সন্দেহ আছে। সে তো মুগ্ধ দৃষ্টিতে তার ডালিয়া ফুলের নতুন রূপ দেখতে ব্যস্ত। ডালিয়াকে এই প্রথম সে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখছে। অন্য দিনের তুলনায় মেয়েটাকে আজ কয়েকগুণ বেশি সুন্দর লাগছে। এজন্যই বলে ‘শাড়িতে নারী।’ তাহসিনের কোনো হেলদোল নেই দেখে ডালিয়া ভ্রুকুটি করে তাকাল। তারপর তাহসিনের মুখের সামনে হাত নাড়িয়ে বলল,“স্ট্যাচু হয়ে গেলি কেন? কোন জগতে হারিয়ে গেলি?”

তাহসিন কিছুটা চমকে উঠল। তারপর কয়েকবার চোখ ঝাপটে বিস্মিত কন্ঠে বলল,“মা শা আল্লাহ্। ইউ লুকিং বিউটিফুল!”

এতক্ষণে তাহসিনের স্ট্যাচু হওয়ার রহস্য উদঘাটন করতে পেরে ডালিয়া লজ্জায় পড়ে গেল। সে তাহসিনের থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে এলোমেলো দৃষ্টিতে এদিক-ওদিক তাকাল। তাহসিন হেসে বলল,“শাড়িতে মেয়েদের সৌন্দর্য কয়েকগুণ বাড়িয়ে দেয়। তোর ক্ষেত্রেও সেটাই হয়েছে।”

ডালিয়া অপ্রস্তুত হাসল। তাহসিন বুঝতে পারল ডালিয়া লজ্জা পাচ্ছে। তাই সে হাসিমুখে বলল,“চল ওদের কাছে যাই।”

তাহসিন উল্টোদিকে ঘুরে আবার মুনার রুমের দিকে পা বাড়াল। ডালিয়া আপন মনে হেসে তাহসিনের পেছন পেছন হাঁটা ধরল।


সন্ধ্যায় গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শুরু হলো। মুনাকে হলুদ ছুঁইয়ে সবাই একজন আরেকজনের গালে হলুদ লাগাল। কাজটা তারা মজা করার জন্যই করেছে। ফটোশুটও হলো অনেক। মুনা হাসিমুখে পুরো অনুষ্ঠানটা বেশ এনজয় করেছে। অন্তর মুনাকে বলল,“মুলা রে, যত খুশি হেসে নে। কালকের পর তো পড়াশুনা ছাড়া আর কিছু চোখে দেখবি না। যেদিকে তাকাবি সেদিকেই দেখবি আফু ষাঁড় বই হাতে দাঁড়িয়ে আছে।”

মুনা বরাবরের মতো অন্তরের বাহুতে জোরে এক থাপ্পড় মেরে বলল,“টিচার বলেই যে বউকে সারাক্ষণ বই নিয়ে বসিয়ে রাখবে, এটা কে বলল?”

অন্তর বাহু ঘষতে ঘষতে কপাল কুঁচকে বলল,“আজকের দিনেও তোর এই বিখ্যাত থাপ্পড় খাইতে হইল আমার! আফু ষাঁড় বেচারার লাইগা আমার খুব মায়া লাগতাছে। এই বিশ কেজি ওজনের একটা থাপ্পড় যদি কোনোভাবে ওনার গায়ে পড়ে, মানসম্মান ধুলায় গড়াগড়ি খাইব।”

“আমি অত বেয়াদব না যে বড়োদের গায়ে হাত তুলব।”

মুনার কথায় অরিশা দুষ্টুমি করে বলল,“আরে বাহ্! এখনই কী ভালোবাসা! এতদিনে স্যারের প্রেমে পড়ে গেছিস মনে হচ্ছে।”

তাহসিন দৃঢ়ভাবে বলল,“তা তো পড়েছেই। আগে স্যারের নামই শুনতে পারত না। আর এখন? এখন তো দিনে দুবার করে স্যারের সাথে ফোনে ফিসফাস করে।”

টুম্পা হেসে বলল,“আরে ওরই তো জামাই। ও প্রেমে পড়বে না তো কে পড়বে?”

মুনা গাল ফুলিয়ে বসে সবার কথা শুনছে। হঠাৎ মুনার এক কাজিন এসে তার ফোন এগিয়ে ধরে বলল,“আপু, অনেকক্ষণ ধরে তোমার ফোন বাজছে।”

মুনা ফোন হাতে নিয়ে কললিস্ট চেক করে দেখল আফসার কয়েকবার কল করেছে। ইলোরা উঁকি দিয়ে দেখে ঠোঁট টিপে হেসে বলল,“বলতে না বলতে কল করে ফেলেছে। আহা, কী প্রেম!”

তখনই আবার ফোন বেজে উঠল। নাদিয়া বলল,“আরে ধর ধর। আমাদের দুলাভাই মনে হয় বউয়ের জন্য পাগল হয়ে যাচ্ছে।”

মুনা রিসিভ করতে গিয়েও সবার দিকে চোখ বুলিয়ে ইতস্তত করে বলল,“না থাক।”

ডালিয়া বলল,“আচ্ছা যা তুই কথা বলে আয়।”

সবাই মিলে মুনাকে ঠেলে রুমে পাঠিয়ে দিলো। মুনা রুমে গিয়ে ফোন রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে আফসার বলে উঠল,“এতক্ষণে ফোন রিসিভ করলে?”

মুনা খাটে পা ঝুলিয়ে বসে শান্ত স্বরে বলল,“ফোন রুমে ছিল। অনুষ্ঠান চলছে জানেন তো। এখন ফোন না করলেও পারতেন।”

“সে তো আমার বাড়িতেও চলছে। এতক্ষণ লাগে গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান শেষ হতে? সত্যিই তোমাদের মেয়েদের না সবকিছুতেই এত এত সময় লাগে।”

“মানে?”

“ভাবো, এখন তো আমি কোথাও গেলে মাত্র দশ মিনিটেই ঝটপট রেডি হয়ে চলে যাই। বিয়ের পর যখন তোমাকে নিয়ে কোথাও যাব, তখন এই দশ মিনিটকে তুমি চল্লিশ মিনিট বানিয়ে ছাড়বে।”

মুনা গাল ফুলিয়ে বলল,“আমি মোটেও অত সাজি না।”

আফসার হঠাৎ বলে বসল,“এই মুন, তুমি তো আজ হলুদের সাজ দিয়েছ। ভিডিয়ো কল দেই?”

মুনা পড়ল বিপাকে। এতদিন আফসার অডিয়ো কলেই কথা বলেছে। আজ প্রথম সে ভিডিয়ো কলের কথা বলছে। কিন্তু অডিয়ো কলে কথা বলতেই তো মুনার লজ্জায় পড়তে হয়। আর ভিডিয়ো কলে তো সে চোখ তুলে তাকাতেও পারবে না। মুনাকে চুপ দেখে আফসার হেসে বলল,“লজ্জা পাচ্ছেন মিসেস আফসার? কাল থেকে তো সারাজীবন আমার চোখের সামনেই থাকবেন। তখন লজ্জা লাগবে না?”

মুনা লজ্জা মিশ্রিত হাসি দিলো। আফসার আবার বলল,“ঠিক আছে তুমি বরং পিক পাঠিয়ে দিও, তা-ই দেখব। বউ লজ্জা পেলে কী আর করার আছে।”

মুনা এবারও নিঃশব্দে হাসল। কিছুক্ষণ চুপ থেকে মুনা হঠাৎ বলে উঠল,“একটা প্রশ্ন করি?”

“পারমিশন নিতে হবে না। করতে পারো।”

মুনা আমতা-আমতা করে বলল,“ইয়ে মানে, বিয়ের পর কি আপনি সারাক্ষণ আমাকে বই নিয়ে বসিয়ে রাখবেন?”

মুনার কথা শুনে আফসার ফিক করে হেসে উঠল। মুনা গোমড়া মুখে বলল,“হাসছেন কেন?”

আফসার হাসি থামিয়ে একটু গম্ভীর গলায় বলল,“তা তো অবশ্যই। আমার বউকে আমি সারাক্ষণ বই নিয়ে বসিয়ে রাখব, এটাই তো স্বাভাবিক। তাই না? শুধু তাই নয়, না পড়লে পানিশমেন্টও দিব। আমি কিন্তু তোমার টিচার। এটা মনে রাখবে।”

মুনার মন খারাপ হয়ে গেল। আফসার আবার শব্দ করে হেসে বলল,“আমি তোমার টিচার বলেই যে সারাক্ষণ বই নিয়ে বসিয়ে রাখব এমন ধারণা কেন হলো? তোমার ফ্রেন্ডরা মজা করেছে নিশ্চয়ই? আরে বোকা সারাক্ষণ পড়বে কেন? সময়মতো পড়বে।”

মুনা এবার বেশ খুশি হলো। আফসার প্রশ্ন করল,“কিছু খেয়েছ?”

মুনা উত্তর দিলো,“না, মাত্র গায়ে হলুদ শেষ হলো।”

“আচ্ছা যাও খেয়ে নাও। মনে করে পিক পাঠিয়ে দিয়ো। ওকে?”

মুনা মুচকি হেসে ছোটো একটা শব্দ করল,“হুম।”

আফসার ফোন কেটে দিলো। মুনা রুম থেকে বেরিয়ে দেখল নাহিদা আহমেদ সবাইকে খেতে ডাকছেন। মুনাকে দেখেই তিনি বললেন,“এতক্ষণ ধরে রুমে কী করছিলি? তোর জন্য তোর বন্ধুরা কেউ খেতে বসছে না। তাড়াতাড়ি বসে পড় সবাইকে নিয়ে।”

মুনা বলল,“এই শাড়ি পাল্টে ফ্রেশ হয়ে খেতে বসলে ভালো হত না?”

নাহিদা আহমেদ বললেন,“ওরা সবাই বাসায় ফেরার জন্য উঠেপড়ে লেগেছে। খেয়েদেয়ে ফ্রেশ হবি।”

মায়ের কথামতো মুনা সবাইকে নিয়ে খেতে বসে পড়ল। খাওয়ার শেষ পর্যায়ে সাকিব ইলোরাকে ফোন করে বলল সে মুনাদের বাসার সামনের রোডে অপেক্ষা করছে তার জন্য। তাড়াতাড়ি খাওয়া শেষ করে সবাই মুনাদের বাসা থেকে বিদায় নিয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা দিলো। ইলোরা আর ডালিয়া রাস্তায় নেমে দেখল সাকিব, এরেন আর রনি দাঁড়িয়ে আছে। তিনজন মিলে হয়তো আড্ডা দিচ্ছিল একসাথে। ইলোরাকে দেখে এরেন কিছুক্ষণের জন্য থমকে গেল। মুহুর্তে মনে পড়ে গেল কিশোরগঞ্জে রাতের বেলা ডালিয়াদের বাগানে চাঁদের আলোতে প্রথম সে ইলোরাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখেছিল। আজও চাঁদের আলো ইলোরার মুখে পড়েছে। সেদিনের মতো আজও তাকে খুব স্নিগ্ধ দেখাচ্ছে। আজ দ্বিতীয়বার আবার সে ইলোরাকে শাড়ি পরিহিতা অবস্থায় দেখে মুগ্ধ হয়েছে। প্রথমবার ইলোরার অজান্তেই আড়ালে দাঁড়িয়ে দেখেছিল, আর আজ সামনা-সামনি দাঁড়িয়ে দেখছে। ইলোরার স্নিগ্ধ মুখটা ছুঁয়ে দিতে ইচ্ছে হলো তার। কিন্তু সেই প্রবল ইচ্ছেকে চাপা দীর্ঘশ্বাসে দমিয়ে রাখল সে। এরেনের চাহনি দেখে ইলোরা লজ্জায় জড়োসড়ো হয়ে পড়ল। সে ভাবতেই পারেনি ভাইয়ের সাথে এরেনও থাকবে। সাকিব একটা সিএনজি দাঁড় করালো। তারপর এরেন আর রনির থেকে বিদায় নিয়ে সিএনজিতে উঠে বসল। ইলোরা আড়চোখে একবার এরেনের দিকে তাকাল। এরেনের দৃষ্টিতে একরাশ মুগ্ধতা আর আফসোস। কিসের আফসোস? হয়তো কথা বলতে ইচ্ছে করছে,কিন্তু পারছে না। নিজের অজান্তেই ইলোরা আপন মনে হাসল। সাকিবদের সিএনজি চোখের আড়াল হওয়া পর্যন্ত এরেন একদৃষ্টিতে সেদিকেই তাকিয়ে রইল। রনি হালকা কেশে বলল,“দেখা হয়নি ভাই?”

এরেন ভ্রু কুঁচকে রনির দিকে তাকাল। রনি দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“না মানে, যেভাবে তাকিয়ে ছিলি তাতে তো মনে হচ্ছে সারারাত এখানে দাঁড়িয়ে থাকতে ইচ্ছে করছে তোর।”

এরেন রনির কথায় পাত্তা না দিয়ে বলল,“চল।”

চলবে…………………….🌸

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here