#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৪৪
আজ তিনদিন ধরে এরেন গ্রামে আছে। এরমধ্যে খুব কম সময়ই ইলোরার সাথে তার কথা হয়েছে। ইলোরাও খুব একটা ফোন করেনি। ভেবেছে গ্রামে গিয়ে হয়তো এরেন ব্যস্ত থাকতে পারে। আজ সকাল থেকে এরেনকে সে একনাগাড়ে ফোন করেই চলেছে, কিন্তু এরেন ফোন তোলার নামও নিচ্ছে না। জারিনকেও ফোন করেছিল। সকালে জারিন ফোন ধরেনি আর এখন সুইচ অফ বলছে। এদিকে আজ সকালে খাবার টেবিলে হঠাৎ মালিহা বেগম ইলোরাকে জানিয়েছেন বিকেলে তাকে পাত্রপক্ষ দেখতে আসবে। কথাটা শুনে ইলোরা এক মুহুর্তের জন্য স্তব্ধ হয়ে গিয়েছিল। গলায় খাবার আটকে গিয়েছিল একপ্রকার। ডালিয়াও থমকে গিয়েছিল। কিন্তু কেউই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারেনি। বলা নেই কওয়া নেই হঠাৎ করেই এভাবে পাত্রপক্ষ আসার কথা বলার মানে বুঝতে পারল না তারা। পরে শুনল সাজিদ হোসেন হঠাৎ করে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। তার পর থেকেই ইলোরা বারবার এরেনকে ফোন করে চলেছে। এখন এরেনের সাথে কথা বলাটা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দরকারের সময়ই সে ফোন তুলছে না। বিকেলের আগেও যখন এরেন ফোন তুলল না তখন ইলোরা কেঁদেই ফেলল। ডালিয়া মুখ কালো করে ইলোরাকে ইনিয়ে-বিনিয়ে বুঝানোর চেষ্টা করছে। অথচ তার নিজেরও কম চিন্তা হচ্ছে না। মিথিলা বারবার জিজ্ঞেস করছে ইলোরা কেন কাঁদছে। ডালিয়া তাকে কোনোমতে বুঝিয়েছে ইলোরা নার্ভাস হয়ে পড়েছে। বিকাল তিনটায় মালিহা বেগম অনন্যার হাতে একটা শাড়ি ধরিয়ে দিয়ে বললেন ইলোরাকে রেডি করতে। কিছুক্ষণের মধ্যেই পাত্রপক্ষ এসে পড়বে। অনন্যা শাড়ি নিয়ে ইলোরার রুমে ঢুকে দেখল ইলোরা বিছানায় পা ভাঁজ করে, হাঁটুতে মুখ গুঁজে বসে আছে। ডালিয়া গম্ভীর মুখে তার পাশে বসে আছে। অনন্যা ওদের দুজনকে নিরীক্ষণ করে বলল,“তোরা এভাবে বসে আছিস কেন?”
ডালিয়া উঠে দাঁড়িয়ে বলল,“এমনি। আসলে ইলোর মন খারাপ। পাত্র পক্ষের যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে তো বিয়ে হয়ে যাবে, তাই আর কী।”
অনন্যা হেসে বলল,“এখনই এত মন খারাপ করলে চলবে? বিয়ে ঠিক হয়ে গেলে তখন কী করবে তাহলে? এই ইলো, এদিকে তাকা।”
ইলোরা মুখ তুলল না। ডালিয়া বলল,“থাক আপ্পি, ওকে ডাকিস না। তুই শাড়ি হাতে নিয়ে ঘুরছিস কেন?”
“এটা ফুপি দিলো ইলোকে পরানোর জন্য। মেহমান চলে আসবে কিছুক্ষণের মধ্যেই। ওকে রেডি করাতে বলেছে।”
“আমাকে দে, আমি রেডি করাচ্ছি।”
“তুই একা পারবি?”
“পারব। হেল্পের দরকার হলে মিথিকে ডেকে নেব। তুই তোর কাজ কর।”
অনন্যা হাতের শাড়িটা ডালিয়ার দিকে এগিয়ে ধরে বলল,“আচ্ছা নে। তাড়াতাড়ি করিস।”
ডালিয়া ঘাড় কাত করে শাড়িটা হাতে নিল। অনন্যা নিজের কাজে চলে গেল। ডালিয়া শাড়িটা বিছানায় রেখে দরজা বন্ধ করে এল। ইলোরার পাশে বসে তার কাঁধে হাত রেখে ডাকল। কিন্তু ইলোরা মুখ তুলে তাকাল না। কয়েকবার ডাকার পরেও যখন ইলোরা সেভাবেই বসে রইল তখন ডালিয়া জোর করে ইলোরার মুখ তুলল। মেয়েটার মুখের দিকে তাকিয়ে তার নিজেরই কান্না পেয়ে গেল। একনাগাড়ে কান্না করার ফলে চোখ-মুখ ফুলে লাল হয়ে গেছে। ডালিয়া নরম কন্ঠে বলল,“ইলো, প্লিজ নিজেকে সামলা। এটুকুতেই এভাবে ভেঙে পড়ছিস কেন?”
ইলোরা ডালিয়াকে জড়িয়ে ধরে ফুঁপিয়ে কেঁদে উঠল। ধরা গলায় বলল,“আমি তো অলরেডি ম্যারিড। তাহলে কেন অন্য লোকের সামনে গিয়ে সং সেজে বসে থাকব?”
ডালিয়া ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“তুই ম্যারিড তা তো আর সবাই জানে না। জানলে কি তাদের আসতে বলত? তাছাড়া দেখতেই তো আসছে, বিয়ে তো আর হয়ে যাচ্ছে না। এমনও তো হতে পারে যে বিয়েটা হবে না।”
“যদি ঠিক হয়ে যায়?”
ডালিয়া কোনো জবাব দিলো না। কী জবাব দিবে? তার মনেও এই আশংকা রয়েছে। ইলোরা কাঁদতে কাঁদতে বলল,“ও ফোন কেন তুলছে না ডালিয়া? কখনও তো এমন করে না।”
“হয়তো কোনো সমস্যা হয়েছে। নইলে কি ভাইয়া ইচ্ছে করে তোর ফোন না ধরে বসে থাকে?”
“এমন একটা দিনেই ওর সমস্যায় পড়তে হলো? ওর সাথে কথা না বলে আমি কিচ্ছু করতে পারব না। আল্লাহ্ কোন বিপদে ফেলল আমায়!”
ডালিয়া ইলোরাকে সোজা করে বসিয়ে চোখ মুছে দিয়ে বলল,“ধৈর্য ধর। কিচ্ছু হবে না দেখিস। রাতের মধ্যেই হয়তো ভাইয়া ফোন করবে।”
“তার আগেই যদি বিয়ে ঠিক হয়ে যায়?”
“দেখলেই কি সাথে সাথে বিয়ে ঠিক হয়ে যায়? দেখেশুনে, খোঁজখবর নিয়ে, ভেবেচিন্তে তারপর ঠিক করে। ভাবিস না, তার আগেই ভাইয়ার সাথে কথা বলতে পারবি।”
“আমার খুব ভয় করছে ডালিয়া। মনে হচ্ছে খারাপ কিছু হবে।”
“ধুর! এক লাইন বেশি ভাবছিস। এখন আয় তো, তোকে শাড়ি পরিয়ে দেই।”
ইলোরা মাথা দুলিয়ে বলল,“অসম্ভব। আমি পারব না বিয়ের জন্য সেজেগুজে কারো সামনে যেতে।”
ডালিয়া বলল,“বুঝার চেষ্টা কর ইলো। বাসার কেউ জানে না তোদের বিয়ের কথা। এমন পাগলামি করলে সবাই সন্দেহ করবে। অন্তত ভাইয়ার সাথে কথা বলার আগ পর্যন্ত চুপচাপ থাক। নইলে ভাই আর ফুপা-ফুপির সম্মান নষ্ট হবে। প্লিজ বোন, নিজেকে একটু শক্ত রাখ।”
ইলোরা চুপ হয়ে গেল। বেশ কিছুক্ষণ ঝিম মেরে বসে থেকে উঠে ওয়াশরুমে চলে গেল। ফ্রেশ হয়ে কয়েক মিনিট পর বেরিয়ে এল। ডালিয়া একটা ব্লাউজ আর পেটিকোট হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল পরে নিতে। ইলোরা আর কথা না বাড়িয়ে চুপচাপ পরে নিল। তারপর ডালিয়া বেশ কিছুক্ষণ সময় নিয়ে একা একাই শাড়ি পরাল। পুরোটা সময় ইলোরা একদম চুপ মেরে দাঁড়িয়ে ছিল। চিন্তায় তার মাথা ফেটে যাচ্ছে। মনের মধ্যে কেমন উস-খুস করছে! শাড়ি পরানো শেষ করে ডালিয়া ইলোরাকে ড্রেসিং টেবিলের সামনে বসিয়ে দিলো। তারপর তার চুল বেঁধে দিয়ে হালকা সাজগোজ করাল। তখনই দরজায় টোকা পড়ল। ডালিয়া গিয়ে দরজা খুলে দিয়ে দেখল মালিহা বেগম আর মিথিলা দাঁড়িয়ে আছে। মিথিলা জানাল মেহমানরা চলে এসেছে। মালিহা বেগম রুমে ঢুকে ইলোরার দিকে এগিয়ে গেলেন। ইলোরা মাকে দেখে উঠে দাঁড়াল। মালিহা বেগম ইলোরার মাথায় আঁচল টেনে দিয়ে হেসে বললেন,“মা শা আল্লাহ্! আমার মেয়েকে তো বিয়ের আগেই বিবাহিত মনে হচ্ছে! আমি নিশ্চিত তোকে ওনাদের পছন্দ হবেই।”
ইলোরা শুকনো একটা ঢোক গিলে জোরপূর্বক হাসার চেষ্টা করল।
“তোর চোখ-মুখ এমন লাগছে কেন?”
মায়ের প্রশ্নে ইলোরা বিপাকে পড়ে গেল। ডালিয়া দ্রুত বলে উঠল,“ঘুমিয়েছিল তাই হয়তো। তাছাড়া ওর না-কি খুব নার্ভাস লাগছে।”
মালিহা বেগম হেসে বললেন,“বোকা মেয়ে! বড়ো হয়েছিস, এমন বাচ্চামি করিস কেন? বিয়ে তো সব মেয়েদেরই করতে হয়। তোকেও করতে হবে। আমি যাচ্ছি, কাজ আছে।”
মালিহা বেগম তাড়া দেখিয়ে চলে গেলেন। মিথিলাও তার পেছন পেছন চলে গেল। ইলোরা মুখটা অন্ধকার করে বিছানায় পা ঝুলিয়ে বসে পড়ল। ডালিয়া করুণ চোখে বোনের দিকে তাকাল। কিছুক্ষণ পরেই অনন্যা রুমে এল। তাকে দেখে ইলোরা নিজেকে সামলে নিল। অনন্যা ইলোরার হাত ধরে দাঁড় করিয়ে বলল,“চল, সবাই ডাকছে। আর শোন, ওখানে গিয়ে আগে সবাইকে সালাম দিবি।”
ইলোরার বুকটা ধক করে উঠল। সে অসহায় দৃষ্টিতে ডালিয়ার দিকে তাকাল। ডালিয়া চোখ দিয়ে ইশারা করে তাকে শান্ত থাকতে বলল। অনন্যা ইলোরাকে নিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ডালিয়াও পেছন পেছন গেল। অনন্যা ইলোরাকে নিয়ে বসার ঘরে ঢুকল। ডালিয়া মিথিলার সাথে পর্দার আড়ালে দাঁড়িয়ে রইল। ইলোরা অনন্যার কথা মতো সবার সামনে গিয়ে মৃদু স্বরে সালাম দিলো। তার বাবার বয়সী একজন লোক সালামের জবাব দিয়ে বললেন,“বসো মা।”
অনন্যা ইলোরাকে একটা সিঙ্গেল সোফায় বসিয়ে দিয়ে তার পাশেই দাঁড়িয়ে রইল। ইলোরার বুকের মধ্যে ঢিপঢিপ করছে। আবার এরেনের জন্য প্রচুর চিন্তাও হচ্ছে। দুদিকের চিন্তায় মেয়েটার মনের মধ্যে কী চলছে তা সে নিজেই জানে। ইলোরা আড়চোখে একবার চারদিকে চোখ বোলালো। একপাশের সোফায় তার বাবা-মায়ের বয়সী দুজন মহিলা-পুরুষ বসে আছে। সম্ভবত পাত্রের বাবা-মা। তাদের মাঝখানে বসা প্রায় পাঁচ বছর বয়সী একটা পিচ্চি মেয়ে। ছেলের বাবার পাশে ইলোরার বাবাও বসে আছেন। আরেকপাশের সোফায় অনন্যার বয়সী একটা মেয়ে। অনুমান করলে হয়তো ছেলের বোন বা কোনো আত্মীয় হতে পারে। তার পাশে বেশ হ্যান্ডসাম একটা ছেলে। দেখেই বুঝা যাচ্ছে ইনিই সব চিন্তার মূল, মানে পাত্র। তার পাশে বসা আরেকজন মধ্যবয়স্ক লোক। ইলোরার থেকে কিছুদূরে সাকিব আর মালিহা বেগম দাঁড়িয়ে আছেন। পাত্রের মা, বোন আর আরেকজন যে ভদ্রলোক এসেছেন উনি কয়েকটা প্রশ্ন করলেন। ইলোরা অনিচ্ছা সত্ত্বেও নিচু স্বরে জবাব দিলো। ব্যাপারটা তার খুব বিরক্ত লাগল। অনন্যা হঠাৎ পাত্রকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠল,“ভাইয়া, আপনার কোনো প্রশ্ন থাকলে করতে পারেন।”
ছেলেটা মুচকি হেসে বলল,“আমার কোনো প্রশ্ন নেই।”
বড়োরা নিজেদের মধ্যে কয়েকটা কথাও বললেন। তাতেই বুঝা গেল সাজিদ হোসেনের সাথে পাত্রের বাবার অনেক আগের বন্ধুত্ব আছে। পাত্রের মা সাজিদ হোসেনকে বললেন,“মেয়ে কিন্তু আমাদের খুব পছন্দ হয়েছে ভাইজান। আমরা বেশি সময় নিতে চাই না তাই সোজাসাপ্টা বলে দিলাম। যেহেতু আপনার সাথে আগের চেনাজানা আছে, তাই আর খোঁজখবর নিয়ে সময় নষ্ট করার ঝামেলাও নেই। কী বলেন?”
ইলোরা চমকে উঠল। তার বুঝতে বাকি রইল না সে যার জন্য ভয় পাচ্ছিল তা-ই হতে চলেছে। তার ধারণা সত্যি করে দিয়ে পাত্রের বাবা বলে উঠলেন,“আমরা আজই পাকা কথা বলতে চাই। তোমাদের আপত্তি আছে সাজিদ?”
সাজিদ হোসেন বললেন,“না না, আপত্তি থাকবে কেন? আমরা একমত।”
ইলোরার এবার দমবন্ধ হয়ে এল। মাথাটা ঘুরে উঠল। এখানে বসে থাকতে ইচ্ছে করছে না তার। তখনই মালিহা বেগম এগিয়ে এসে অনন্যাকে বললেন,“অনু, ওকে নিয়ে ভিতরে যা।”
ইলোরা এটাই চাইছিল। এখান থেকে সরতে পারলেই যেন সে ঠিকমতো নিঃশ্বাস নিতে পারবে। অনন্যা ইলোরাকে ভেতরে রেখে চলে গেল। ইলোরা নিজের রুমে না গিয়ে অন্য রুমে ঢুকল। এই রুমে কেউ থাকে না। মাঝে মাঝে মেহমান এলে এখানে থাকে। ডালিয়াও তার পেছন পেছন রুমে চলে গেল। ইলোরা ডালিয়ার দিকে তাকিয়ে চোখের পানি ছেড়ে দিল। ডালিয়া তাকে স্বান্তনা দেয়ার ভাষা খুঁজে না পেয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। মিনিট খানেক পর ইলোরার ফোন হাতে নিয়ে আবার রুমে এল। ইলোরার দিকে ফোনটা এগিয়ে দিয়ে বলল,“ভাইয়াকে আবার কল করে দেখ তো। ইলোরা ডালিয়ার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে বিছানায় উঠে বসল। এরেনের নাম্বারে ডায়াল করল। কিন্তু ফলাফল শূন্য। এবার এরেনের ফোনও সুইচ অফ বলছে। ইলোরা ফোনটা বিছানায় রেখে শব্দ করে কেঁদে উঠল। ডালিয়া দৌড়ে এসে ইলোরার পাশে বসে বলল,“ইলো, কাঁদিস না বোন। আমি নিশ্চিত ভাইয়া কোনো প্রবলেমের মধ্যে আছে। আমার মনে হয় রাতের মধ্যে হলেও তোকে ফোন করবে। এখন শান্ত থাক।”
ইলোরা নিঃশব্দে কাঁদতে লাগল। ডালিয়া চুপ মেরে তার পাশে বসে রইল। কিছুক্ষণ পর মিথিলা হন্তদন্ত হয়ে রুমে ঢুকে উচ্ছসিত কন্ঠে বলল,“আর মাত্র দশ দিন পর আপ্পির বিয়ের ডেট ফিক্সড করা হয়েছে। ইয়েএএএএ!”
ইলোরা দ্রুত চোখের পানি মুছে চকিত চাহনিতে মিথিলার দিকে তাকাল। ডালিয়াও একইভাবে তাকাল। মিথিলা ভ্রুকুটি করে বলল,“কী হলো? তোমরা স্ট্যাচু হয়ে গেলে কেন? জানো? তমাল ভাইয়াকে আমার খুব ভালো লেগেছে। আপ্পির জন্য একদম পার্ফেক্ট।”
ইলোরার পুরো পৃথিবী যেন থমকে গেল। গলা দিয়ে কোনো কথাই বের হলো না। মিথিলা কিছুক্ষণ নিজের মতো বকবক করে চলে গেল। সে চলে যেতেই ডালিয়া করুণ চোখে ইলোরার দিকে তাকাল। ইলোরা অনুভূতিহীনভাবে বলল,“এখনও বলবি দেখতে এলেই বিয়ে ঠিক হয়ে যায় না?”
ডালিয়া মাথা নিচু করে একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইলোরা বিছানা ছেড়ে নেমে গিয়ে দরজাটা লাগিয়ে দিলো। তারপর বিছানায় সটান শুয়ে পড়ল। এত চিন্তা আর সে নিতে পারছে না। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে। এখন একটু ঘুম প্রয়োজন। বেশ কিছুক্ষণ এপাশ-ওপাশ করার পর তার চোখে ঘুম এল। তারপর যখন ঘুম ভাঙল তখন রাত এগারোটা বাজে। ইলোরা কিছুটা অবাক হলো। এত রাত হয়ে গেল অথচ কেউ তাকে ডাকলও না। মাথা ব্যথাটা এখন অনেকটা কমে গেছে। তবু বিছানা ছেড়ে উঠতে ইচ্ছে করল না। পরনের শাড়ির দিকে তাকিয়ে দেখল শাড়ি এলোমেলো হয়ে গেছে। এখন এটা পাল্টাতে হলে রুমে যেতে হবে। কিন্তু এই মুহূর্তে আলসেমি জেঁকে বসেছে তাই আর উঠল না। শুয়ে শুয়েই এরেনের নাম্বারে ডায়াল করল। এবার কল ঢুকল। ইলোরার বুকটা ধুকধুক করছে। মনে মনে আল্লাহকে ডাকল আর বলল এরেন যেন এবার ফোনটা রিসিভ করে। কয়েকবার রিং হওয়ার পরই এরেন ফোন রিসিভ করে হ্যালো বলল। ইলোরার সারাদিনের প্রাণহীন হৃদয়টা যেন এবার প্রাণ ফিরে পেল। সে কাঁপা গলায় বলল,“তুমি সকাল থেকে ফোন রিসিভ করলে না কেন?”
ওপাশ থেকে এরেনের ঘুমঘুম কন্ঠ ভেসে এল,“আমি খুব ক্লান্ত ইলোনি। কাল সকালে ফোন করব হুম? ঘুমিয়ে পড়ো। গুড নাইট।”
ওপাশ থেকে এরেন ফোন কেটে দিলো। ইলোরা স্তব্ধ হয়ে গেল। সারাটা দিন ধরে সে কেঁদে কেঁদে মরছে আর উনি কি না এখন গুড নাইট বলে শান্তির ঘুম দিবে! রাগে দুঃখে ইলোরা ফোনটাকে মেঝেতে ছুঁড়ে মারল। মেঝেতে পড়েই ফোনটা শব্দ করে এদিক-ওদিক ছড়িয়ে পড়ল। সেদিকে তার ভ্রুক্ষেপ নেই। সে আপাতত বালিশে মুখ গুঁজে নিঃশব্দে কাঁদতে ব্যস্ত।
চলবে………………..🌸