#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৪৫
গভীর রাতে মুখে কারো গরম নিঃশ্বাস অনুভব করায় ইলোরার ঘুম ছুটে গেল। চোখ-মুখ কুঁচকে সে পিটপিট করে চোখ খুলল। পাশে বসা এরেনকে তার দিকে ঝুঁকে থাকতে দেখে সে চমকে উঠল। লাফ দিয়ে উঠে বসে হাত দিয়ে চোখ কচলে আবার তাকাল। যখন বুঝল এটা বাস্তব তখন কাঁপা কাঁপা ভীতু কন্ঠে বলল,“তুমি!”
এরেন সোজা হয়ে বসে বলল,“হ্যাঁ, মাত্রই এসেছি। তোমাকে জাগানোর আগেই তো উঠে পড়লে। ভয় পেলে না-কি?”
ইলোরা এরেনের প্রশ্নের পিঠে প্রশ্ন করল,“তুমি রুমে কীভাবে এলে?”
এরেন কিছুটা এগিয়ে এসে ইলোরার হাত ধরে বলল,“সেসব পরে বলছি। আগে………..।”
এরেনের কথা শেষ না হতেই ইলোরা হঠাৎ এরেনের মুঠো থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে ছিটকে সরে বসল। তার এহেন কাজে এরেন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“কী হলো?”
“যাও এখান থেকে।” কথাটা বলার সময় ইলোরার গলাটা হালকা কেঁপে উঠল।
এরেন মিনিট খানেক ইলোরার মুখের দিকে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল। মেয়েটা কখনও তার সাথে এমন ব্যবহার করেনি। এরেন অসহায় দৃষ্টিতে প্রেয়সীর চোখের কোণের চিকচিকে পানি দেখল। তারপর ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে শান্ত স্বরে বলল,“আ’ম সরি ইলোনি। আজ ভোরবেলা মামার অবস্থা অনেক বেশি খারাপ হয়ে পড়েছিল। তাকে নিয়ে সারাদিন হসপিটাল ছিলাম। ফোনটা বাড়িতে ফেলে রেখে হসপিটালে চলে গিয়েছিলাম আর সাইলেন্ট ছিল বলে কেউ শব্দও পায়নি। জারিনের ফোনও সাইলেন্ট করে পার্সে রেখেছিল তাই ও-ও শোনেনি। ওর ফোনে চার্জ ছিল না তাই বন্ধ হয়ে গিয়েছিল। হসপিটাল থেকে বাড়ি ফিরেই আমি আর জারিন ঢাকায় রওনা দিয়েছিলাম। একটানা ড্রাইভিং করায় খুব ক্লান্ত হয়ে পড়েছি তাই ফোনটা চার্জ দিয়ে একটু শুয়েছিলাম। ফোন অন করার পরপরই তুমি কল করেছ। ক্লান্ত ছিলাম বলে কথা বলতে পারিনি। কল কেটে দেয়ার পরেই দেখি সকাল থেকে তুমি ননস্টপ কল, মেসেজ করেছো। আমি অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তারপর আবার ফোন করে দেখি তোমার ফোন সুইচ অফ। মেসেজ দেখে আমার মাথা ঘুরে গিয়েছিল। তোমার ফোন বন্ধ পেয়ে ডালিয়াকে মেসেজ করেছি। তারপর ওর থেকে সব শুনেছি। ওর মুখে তোমার মনের অবস্থার কথা শুনে জারিনকে বলে সাথে সাথে চলে এসেছি। বেলকনির পাশের গাছ বেয়ে উঠে দেখি বেলকনির দরজা খোলা। তাই ভেতরে ঢুকতে সমস্যা হয়নি।
একটানা কথাগুলো বলে এরেন থামল। ইলোরার গাল বেয়ে টপ টপ করে অশ্রু গড়িয়ে পড়ছে। সে মেঝের দিকে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। এরেন করুণ কন্ঠে বলল,“ইলোনি, তাকাও এদিকে। বলছি তো সরি। এই রাত-দুপুরে আমি তোমার কান্না দেখতে এসেছি?”
ইলোরা ভেজা কন্ঠে বলল,“এসেছ কেন? আমি বলেছি আসতে? যাও তুমি।”
“বাচ্চামি করছো কেন বলো তো? শুনলে তো আমি কত বড়ো সমস্যার মধ্যে ছিলাম। আগে জানলে কি আমি এমন কিছু হতে দিতাম? জানো তোমার মেসেজ দেখে আমার আত্মা কেঁপে উঠেছিল?”
ইলোরা এবার অশ্রুসিক্ত চোখে এরেনের দিকে তাকিয়ে বলল,“শুনেছি। এবার যাও। সিমপ্যাথি লাগবে না আমার।”
এরেন এবার একটু বেশিই অবাক হলো। কী বলে এই মেয়ে! এখানে সিমপ্যাথি এল কোত্থেকে? এরেন ইলোরার হাত ধরার জন্য হাত বাড়াল। কিন্তু এবার ইলোরা আগেভাগেই হাত সরিয়ে নিল। এরেন শান্ত দৃষ্টিতে ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ইলোরা তার থেকে দৃষ্টি সরিয়ে নিল। হঠাৎ এরেন খেয়াল করল ইলোরা শাড়ি পরে আছে। শাড়িটা এলোমেলো হয়ে একদম নষ্ট হয়ে গেছে। চুলগুলো খুলে এলোমেলো হয়ে ঘাড়ে-পিঠে ছড়িয়ে আছে। কান্নার কারণে চোখের কাজল লেপ্টে আছে। প্রেয়সীর এমন অগোছালো রূপও এরেনকে ঘায়েল করল। কিছু সময়ের জন্য সে থমকে গেল। আচমকা সে ইলোরার দিকে এগিয়ে গিয়ে তার এক হাত ধরে হেঁচকা টান দিলো। ইলোরা টাল সামলাতে না পেরে এরেনের বুকে হুমড়ি খেয়ে পড়ল। এরেন দুহাতে ইলোরাকে নিজের সাথে মিশিয়ে নিয়ে নিচু স্বরে বলল,“শাড়ি চেঞ্জ করোনি কেন লজ্জাবতী? হাসবেন্ডের সামনে এই রূপে থাকলে যেকোনো সময় অঘটন ঘটে যেতে পারে, জানো না?”
ইলোরা এবার আর নিজেকে সামলাতে পারল না। এরেনের বুকে মুখ গুঁজে তাকে শক্ত করে ধরে ফুঁপিয়ে উঠল। এরেন হন্তদন্ত হয়ে বলল,“এই একদম কাঁদবে না। এত রাতে আমি তোমার কান্না দেখতে পারব না। একদম হার্ট অ্যাটাক করব।”
ইলোরা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে বলল,“আমি খুব ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম। মনে হয়েছিল তোমাকে হারিয়ে ফেলেছি।”
এরেন ইলোরার মাথায় হাত বুলিয়ে বলল,“বলেছি না তোমার থেকে হারিয়ে যাওয়ার সাধ্য নেই আমার? যা হবার হয়েছে, এরকম হওয়াটা স্বাভাবিক। কেউ তো আর জানে না তুমি ম্যারিড। তাছাড়া বিয়ে ঠিক হয়েছে, হয়ে তো আর যায়নি। তোমার মনে হয় আমি হাত-পা গুটিয়ে বসে বসে আমার স্ত্রীর বিয়ে দেখব?”
ইলোরা এরেনের বুক থেকে মাথা তুলে বলল,“এখন কী করব আমরা?”
এরেন ইলোরাকে সোজা করে বসিয়ে চোখ মুছে দিয়ে কিছুটা সরে বসল। মেঝের দিকে দৃষ্টি রেখে বলল,“তোমাকে কিছু করতে হবে না। যা করার আমিই করব।”
ইলোরা হেঁচকি তুলে বলল,“কেউ যদি আমাদের বিয়েটা না মানে, আর ওই ছেলেটার সাথে আমার বিয়ে হয়ে যায়?”
এরেন ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,“এমন কিছু আমি কোনোদিনও হতে দেবো না। তুমি কেন এত ভয় পাচ্ছ?”
“আমার মন বলছে সব শেষ হয়ে যাবে।”
“এমন কিছুই হবে না। তুমি বেশি বেশি ভাবছো বলেই এসব মাথায় আসছে।”
“স্বান্তনা দিও না। আমার মন মানতে চাইছে না।”
“কেন? কীভাবে মানবে তোমার মন?”
এরেন প্রশ্নভরা শান্ত দৃষ্টিতে ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ইলোরা মিনিট খানেক এরেনের চোখের দিকে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ এরেনের দিকে এগিয়ে গেল। এরেন ভ্রুকুটি করে ইলোরার মুখের দিকেই তাকিয়ে রইল। ইলোরা এরেনের দুহাত তার দুহাতের মুঠোয় নিল। তারপর হঠাৎ এরেনের বাঁ হাতটা নিয়ে নিজের শাড়ির ফাঁক দিয়ে পেট ঘেঁষে কোমরে রাখল। এরেন হতভম্ব হয়ে ইলোরার কান্ড দেখতে লাগল। ইলোরা এরেনের ডান হাতটা নিজের ঘাড়ে রাখল। এরেন বড়ো বড়ো চোখ করে শুধু দেখছে। সে মুখ খুলে কিছু বলতে যাবে তখনই ইলোরা এরেনের একদম কাছে চলে গেল। তারপর হঠাৎ এরেনকে নিজের দিকে আকর্ষণ করতে লাগল। তার এহেন কান্ডে এরেন চমকে উঠল। এমন লাজুক মেয়েটাকে স্ব-ইচ্ছায় এত কাছে আসতে দেখেই সে বুঝে গেল মেয়েটার মনের অবস্থা। এরেন নিজের শুকনো ঠোঁটটা জিব দিয়ে ভিজিয়ে নিয়ে মৃদু কন্ঠে ডাকল,“ইলোনি!”
ইলোরা অসহায় কন্ঠে বলল,“আমার মন বলছে সব শেষ হওয়ার পথে। তুমি ছাড়া অন্য কোনো পুরুষের ছোঁয়া আমি সহ্য করতে পারব না। তোমার জায়গা কোনো দিনও অন্য কাউকে দিতে পারব না। আমি শুধুমাত্র তোমার ভালোবাসা পেতে চাই। প্লিজ।”
এরেন ইলোরার ঘাড়ে রাখা হাতটা দিয়ে গাল ছুঁয়ে বলল,“পাগলামি কোরো না ইলোনি। তুমি বেশি ইমোশনাল হয়ে পড়েছ তাই এসব বলছো। স্বাভাবিক হলে আবার ঠিকই লজ্জা পাবে এর জন্য। আমি বলেছিলাম না তোমাকে আমার বাড়ি না নেয়া পর্যন্ত তোমার কাছে যাওয়ার চেষ্টাও করব না?”
ইলোরা এরেনের শার্টের কলার টেনে ধরে কাঁদো কাঁদো গলায় বলল,“প্লিজ।”
এরেনের সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে উঠল। ইলোরার এলোমেলো রূপে এমনিতেই তাকে আবেদনময়ী লাগছে। এমন রূপে প্রেয়সীর মুখের ভালোবাসার করুণ আবেদন এরেনের মস্তিষ্ক এলোমেলো করে দিলো। সে জানে ইলোরা আবেগের বশে আর অতিরিক্ত ভয়ে এমন পাগলামি করছে। ঠিক হয়ে গেলে আবার নিজেই লজ্জায় লাল হয়ে যাবে। এরেন ভাবছে সে কোনো ভুল করবে না। কিন্তু ইলোরা তাকে ক্রমাগত নিজের দিকে আকর্ষণ করছে। এরেন পারল না প্রেয়সীর অসহায় মুখের আবদারকে হেলা করতে। কিছু না ভেবেই সে হঠাৎ ইলোরার কোমরে রাখা হাতটা দিয়ে আরও শক্ত করে কোমর চেপে ধরে নিজের সাথে মিশিয়ে নিল। ইলোরা হালকা কেঁপে উঠল। প্রেয়সীর চোখের দিকে তাকিয়েই এরেন সব ভুলে তার গলায় মুখ গুঁজল। ইলোরা চোখ-মুখ খিঁচে বন্ধ করে এরেনের শার্ট খামচে ধরল। দুজনের হৃদস্পন্দনই দ্রুত গতিতে ছুটছে। ইলোরা বারবার কেঁপে কেঁপে উঠছে আর এরেন প্রেয়সীর ঘাড়ে-গলায় ওষ্ঠ ছোঁয়াতে মত্ত। বেশ কিছুক্ষণ পর এরেন ইলোরার গলা থেকে মুখ তুলে তাকে আলতো করে শুইয়ে দিলো। তারপর নিজেও তার পাশে শুয়ে তাকে নিজের বুকে টেনে নিল। শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে রাখল। ইলোরার এতক্ষণের উত্তেজিত হৃদপিন্ডটা এবার শান্ত হয়ে গেল। চোখ বন্ধ করে সে স্বামীর বুকে মাথা রেখে শুয়ে রইল। এই সুখটা সে হারাতে চায় না। সারাজীবন এই সুখ পেতে চায়। কিন্তু এরেনের এত শান্ত ব্যবহারে সে বেশ অবাক হলো। সে ধরেই নিয়েছিল আজ এরেন সব কথা ভুলে তাকে গভীরভাবে ভালোবাসবে। কিন্তু না, সে তা করেনি। বরং পরম আবেশে প্রেয়সীকে নিজের বুকে আগলে রেখেছে। ইলোরা হঠাৎ আবার ফুঁপিয়ে উঠল। এই সুখটা হারানোর ভয়ই তাকে বারংবার কাঁদাচ্ছে। এরেন ইলোরার মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বলল,“আমি তোমার আবেগের সুযোগ নিতে পারব না ইলোনি। আমি চাই দুই পরিবারের সম্মতিতে তোমাকে স্বীকৃতি দিয়ে সম্পূর্ণ নিজের করে নিতে। এটুকু ধৈর্য আমার আছে। এই যে আমার বুকে মাথা রেখে শুয়ে আছো, তোমাকে আমার হৃদয়ের এত কাছে আঁকড়ে রেখেছি। ব্যাস, আর কী চাই! আমি কোনো সো কলড হাসবেন্ড হতে পারব না।”
ইলোরার কান্নার গতি আরও বেড়ে গেল। সে হেঁচকি তুলে বলল,“চাইলেই তুমি আমার কাছে আসতে পারো। এটা ভুল না, তোমার অধিকার। অথচ তোমার চিন্তা-ভাবনা সম্পূর্ণ আলাদা। এত ভালো কেন তুমি?”
এরেন মৃদু হেসে ইলোরার মাথায় চুম্বন করে বলল,“আজ রাতটা তোমাকে বুকে নিয়ে শান্তিতে ঘুমাতে চাই ইলোনি। তুমিও ঘুমাও।”
ইলোরা বলল,“বাড়ি ফিরবে না? জারিন তো একা আছে।”
এরেন বলল,“ভোরের আগে চলে যাব। জারিন তোমার মতো ভীতু না। আর আমি বাইরে থেকে দরজা লক করে চাবি নিয়ে এসেছি। সমস্যা হবে না। বাই দ্যা ওয়ে, আমার সাথে রাগ করে ফোন কী করেছ?”
ইলোরা এরেনের বুকে মুখ গুঁজেই হাত দিয়ে মেঝের দিকে ইশারা করে বলল,“ভেঙে ফেলেছি।”
এরেন সেদিকে তাকিয়ে হেসে বলল,“বাহ্! আমার বউ তো দেখছি রাগও করতে জানে।”
ইলোরা নিঃশব্দে হাসল। তার কান্না পুরোপুরি বন্ধ হয়ে গেছে। সে আর কোনো কথাও বলল না। চোখ বন্ধ করে চুপচাপ প্রিয় মানুষটাকে আঁকড়ে ধরে তার বুকে পড়ে রইল। মানুষটার হৃদস্পন্দন শুনতে শুনতে একসময় পরম শান্তির ঘুমে আচ্ছন্ন হয়ে গেল। তারপর ঘুম ভাঙল দরজায় করাঘাতের শব্দে। আড়মোড়া ভেঙে উঠে বসতেই পরনের অগোছালো শাড়ির দিকে নজর পড়ল। সঙ্গে সঙ্গে কাল রাতের করা পাগলামির কথা মনে পড়তেই সে লজ্জায় লাল হয়ে গেল। ইশ! কী পাগলামিটাই না করেছে! এখন এরেনের সামনে সে যাবে কীভাবে? শিয়রের পাশে নিজের ফোনটা চোখে পড়ল। বুঝল এরেন ঠিক করে রেখে গেছে। তেমন ক্ষতি হয়নি, শুধু সবকিছু খুলে গিয়েছিল আর স্ক্রিনটা একপাশ দিয়ে একটু ফেটে গেছে। ফোনের পাওয়ার বাটন অন করে দেখল সকাল সাড়ে আটটা বাজে। বিছানা ছেড়ে উঠে শাড়িটা কোনোরকম ঠিক করে রুম থেকে বেরিয়ে নিজের রুমে গেল। রুমে ঢুকে দেখল মিথিলা বই গোছাচ্ছে আর ডালিয়া বিছানা গোছাচ্ছে। ইলোরাকে দেখে মিথিলা বলল,“অবশেষে তাহলে তোমার ঘুম ভাঙল! কাল রাতে ডাকতে ডাকতে গলা ব্যথা করে ফেলেছি। অথচ জানালা দিয়ে দেখি তুমি পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছ। তারপর আম্মু ডাকতে বারণ করেছিল।”
ইলোরা বলল,“আমি তো ভেবেছিলাম কেউ ডাকেইনি।”
মিথিলা হেসে বলল,“তুমি তো ঘুমে মগ্ন ছিলে। এই শাড়ি পড়ে ঘুমালে কীভাবে? শাড়ি তো প্রায় খুলে যাচ্ছে। চেঞ্জ করো তাড়াতাড়ি।”
মিথিলা হাসতে হাসতে রুম থেকে চলে গেল। ইলোরা জামাকাপড় নিয়ে ওয়াশরুমে যেতে নিতেই ডালিয়া প্রশ্ন করল,“ভাইয়া কখন গিয়েছে?”
ইলোরা উত্তর দিলো,“জানি না। আমি ঘুমে ছিলাম। মনে হয় ফজরের আগে চলে গেছে।”
“তো? খালামনি হতে পারব সামনে?”
ডালিয়ার প্রশ্ন শুনে ইলোরা হা করে তার মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। ডালিয়া মিটিমিটি হাসছে। ইলোরা মুখ কুঁচকে ওয়াশরুমে ঢুকতে ঢুকতে বলল,“ইদানিং অনেক বেশি বকবক করিস ডালিম।”
ডালিয়া একা একা হাসতে লাগল। ইলোরা ফ্রেশ হয়ে ওয়াশরুম থেকে বেরোতেই ডালিয়া বলল,“অনেক সময় আছে। চল আজ খেয়েদেয়ে পরে রেডি হই।”
ইলোরা বলল,“আচ্ছা।”
ডালিয়া স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে বলল,“ভাগ্যিস কাল ভাইয়া এসেছিল। নইলে এখনও তোর কাঁদো কাঁদো মুখ দেখতে হত। জানিস? ভাইয়াকে যখন বিয়ের কথা বললাম তখন সে পুরো তিন মিনিট থম মেরে ছিল। তোর কথা জিজ্ঞেস করায় যখন বললাম তুই অন্য রুমে ঘুমিয়েছিস, তখনই সে এখানে আসার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। আমি না করেছিলাম কিন্তু শোনেনি। কী বলল বিয়ের ব্যাপারে?”
ইলোরা বড়ো দম নিয়ে বলল,“বলেছে আমাকে কিছু করতে হবে না। সে নিজেই যা করার করবে।”
ডালিয়া মাথা দুলিয়ে বলল,“আচ্ছা, চল খেয়ে আসি।”
ইলোরা আর ডালিয়া রুম থেকে বেরিয়ে গিয়ে খাবার টেবিলে বসল। কিন্তু খাবার টেবিলে আবার সেই বিয়ের আলাপের চাপে ইলোরার আর খাওয়াই হলো না। একটু মুখে দিয়ে খেতে ইচ্ছে করছে না বলে উঠে চলে গেল। ডালিয়া ছাড়া বাকি সবাই ভেবে নিল ইলোরা বিয়ের কথা শুনে লজ্জা পেয়েছে। খাবার শেষ করে ডালিয়া রুমে গিয়ে দেখল ইলোরা রেডি হচ্ছে। তাই সেও ঝটপট রেডি হয়ে গেল। তারপর সাকিবের সাথে ভার্সিটির উদ্দেশ্যে বেরিয়ে পড়ল।
চলবে……………….🍁