সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ৬৫

0
1652

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৬৫

নিয়মমাফিক ফজরের সময় ঘুম ভাঙল ইলোরার। আড়মোড়া ভাঙতে গিয়ে ব্যর্থ হলো। এরেন এখনও তাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরে গভীর ঘুমে মগ্ন। এরেনের গতরাতের পাগলামির কথা মনে পড়তেই ইলোরা হেসে ফেলল। এরেনের চুলের ফাঁকে আঙুল চালিয়ে কয়েকবার ডাকল। এরেন চোখ খুলল না। এটা নতুন না। প্রত্যেকদিন ভোরে এরেনের ঘুম ভাঙাতে গিয়ে ইলোরা ক্লান্ত হয়ে পড়ে। ইলোরা এরেনের গায়ে মৃদু ধাক্কা দিয়ে বারবার ডেকেই চলেছে। এরেন প্রতিবার নড়েচড়ে উঠছে, কিন্তু সাড়া দিচ্ছে না। মিনিট পাঁচেক পর এরেন ঘুমঘুম মৃদু কন্ঠে বলল,“হুম, কী হয়েছে?”

“ওঠো।”

“উঁহু, ঘুমাতে দাও।” বলেই এরেন ইলোরার গলায় ঠোঁট ছোঁয়াল। ইলোরা এরেনকে ঠেলে সরানোর চেষ্টা করে বলল,“উফ্ ওঠো তো। নামাজ পড়বে না?”

“হুম।”

“হুম হুম করছো, তো উঠছো না কেন? তোমার এই বাজে অভ্যাস জীবনেও পরিবর্তন হবে না। ওঠো না, ওঠোওওওওও।”

এরেন এবার ইলোরার গলা থেকে মুখ তুলে তার দিকে তাকিয়ে বলল,“জ্বালাচ্ছ কেন? কত রাত করে শুয়েছিলাম, তা-ও তো ঘুমাতে পারিনি।”

“না করেছিল কে?”

“প্রেমাসুখ। দেখবে না কি?”

এরেন ভ্রু জোড়া নাচিয়ে দুষ্টু হাসছে। ইলোরা লাজুক হাসিমাখা মুখে এরেনকে ধাক্কা মেরে বলল,“অসভ্য। ওঠো তুমি।”

এরেন ইলোরার কানের কাছে মুখ নিয়ে ফিসফিস করে বলল,“এখন থেকে তোমার পিল নেওয়া বন্ধ, বুঝেছ? আমি চাই এবার একটা ছোট্ট ইলোনি আসুক। অবশ্য ছেলে এলেও আমার অসুবিধা নেই। আমার শুধু ছোট্ট একটা বেবি চাই।”

ইলোরা লজ্জায় চোখ ফিরিয়ে নিয়ে বিড়বিড় করে বলল,“পিল তো কাল থেকেই বন্ধ।”

এরেন ইলোরার কপালে পড়া চুলগুলো পেছনে ঠেলে দিয়ে ঠোঁট টিপে হেসে বলে উঠল,

“লজ্জাবতী লাজুকতা, তুমি কি জানো না?
তোমার লাজে রাঙা মুখটা
আমাকে বাধ্য করে, প্রতিটা মুহূর্তে
নতুন করে তোমার প্রেমে পড়তে।
জেনেও কেন বারংবার লজ্জায় নুয়ে পড়ো?
তবে কি তুমিও চাও, আমাকে প্রত্যেক মুহূর্তে
তোমার প্রেমের শিকলে বাঁধতে?”

ইলোরা এরেনের চুলগুলো এলোমেলো করে দিয়ে বলল,“নতুন করে আপনাকে প্রেমের শিকলে বাঁধব কী? আপনি তো সেই দু বছর আগে থেকে নিজেই বাঁধা পড়ে আছেন।”

এরেন হেসে ইলোরার কপালে লম্বা একটা চুম্বন রেখা এঁকে তাকে ছেড়ে দিয়ে উঠে বসল। ইলোরা নিজের শাড়িটাকে গায়ে জড়িয়ে বিছানা থেকে নেমে অন্য একটা শাড়ি নিয়ে ওয়াশরুমে চলল। ততক্ষণে এরেনও বিছানা ছেড়েছে। দুজন ফ্রেশ হয়ে একসঙ্গে নামাজ আদায় করল। নামাজ শেষ করে এরেন ইলোরাকে বলল,“শোনো, যা যা অগোছালো আছে গুছিয়ে নাও। ব্রেকফাস্ট করে আমরা বাইরে বেরোব। আজ সারাদিন কলকাতা ঘুরব। তারপর সন্ধ্যায় হোটেল ছাড়ব।”

ইলোরা কিছুটা অবাক হয়ে বলল,“কেন? এই হোটেলে কী সমস্যা?”

“সমস্যা না। অন্য এক জায়গায় যাব।”

“কোথায়?”

“সারপ্রাইজ। তুমি গোছাও, আমি বাইরে থেকে আসছি।” বলেই এরেন রুম থেকে বেরিয়ে গেল। ইলোরা পিছু ডাকতে গিয়েও থেমে গেল।‌ এরেন দ্রুত হেঁটে চলে গেছে। ইলোরা সময় নষ্ট না করে তার আর এরেনের লাগেজ গোছাতে লেগে পড়ল। কিছুক্ষণ পরেই এরেন রুমে এসে বলল,“চলো, ব্রেকফাস্ট করে নিই।”

ইলোরা ঠোঁট উলটে বলল,“এত সকালে খেতে ইচ্ছে করছে না।”

“খেতে হবে লক্ষ্মীটি। লং জার্নি হবে।”

“মহারাজ, এটা খুব সুন্দর হয়েছে।” বলতে বলতে ইলোরা আঁচল সরিয়ে কোমরের বিছাটা দেখাল। এরেন হেসে বলল,“বকবে না? আবার টাকা খরচ করলাম যে।”

ইলোরাও হেসে বলল,“উঁহু, এটা খুব পছন্দ হয়েছে।”

এরেন হাসিমুখে ইলোরার কোমরের বিছাটা ছুঁয়ে দেখল। তারপর হাত সরাতে গিয়েও থেমে গেল। ইলোরার পেটের বাঁ পাশে ক্ষত হয়ে কালো দাগ পড়ে আছে। ফর্সা পেটে দাগটা স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। গতরাতের কামড় থেকে যে এই অবস্থা হয়েছে, তা বুঝতে বাকি রইল না এরেনের। ক্ষতস্থানটায় আলতো করে আঙুল বুলাতে-বুলাতে এরেন অনুশোচনাভরা দৃষ্টিতে ইলোরার মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,“এই অবস্থা হয়ে গেল! সরি ইলোনি। অয়েন্টমেন্টও সাথে নেই। বাইরে গিয়ে কিনে লাগিয়ে দিব।”

ইলোরা দুহাতে এরেনের গলা জড়িয়ে ধরে হাসিমুখে বলল,“আমি তোমার কে হই?”

“বউ।”

“তাহলে? মনে তো হচ্ছে তুমি আজ পর্যন্ত আমার ধারেকাছেও ঘেঁষনি।”

এরেন এবার মৃদু শব্দ তুলে হেসে বলল,“আমার কথা আমাকেই ফেরত দিচ্ছেন ম্যাম?”

ইলোরা হাসল। তারপর এরেনের চোখে চোখ রেখে বলল,“দুটো বছর কেটে গেল। অথচ আমার মনে হয়, এই তো সেদিন এক্সিডেন্টলি একটা অচেনা ছেলের সাথে আমার বিয়েটা হয়ে গেল। তারপর দুজন দুজনের পথে চলে গেলাম। আবার হঠাৎ দেখা হয়ে গেল ভার্সিটির ক্যাম্পাসে। ম্যাজিকের মতো প্রণয় হলো। হাতে হাত রাখা হলো, শক্ত করে বুকে চেপে ধরে অনুভূতিগুলো বাড়ানো হলো। কতশত বাঁধা পেরিয়ে সংসার বাঁধলাম। আর আজ সেই বিয়ের দু-দুটো বছরই পার হয়ে গেল।”

এরেন ইলোরার নাকে নাক ঘষে বলল,“এভাবেই আমরা একসাথে কয়েক যুগ কাটিয়ে দিব। শুধু তুমি আমার কাছে থেকো ইলোনি।”

ইলোরা হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। দুজন হাতে হাত রেখে রুম থেকে বেরিয়ে এল। খাবার টেবিলে আগে থেকেই জারিন আর আরহাম বসে ছিল। তারা নিজেদের মধ্যে কথা বলছিল। ইলোরা আর এরেন এসে চেয়ার টেনে বসতেই জারিন হেসে বলল,“গুড মর্নিং ভাবি। হ্যাপি ম্যারেজ অ্যানিভার্সারি। সরি, ভাইয়ার সারপ্রাইজ নষ্ট হবে বলে লেইট করে উইশ করতে হলো।”

আরহামও হাসিমুখে বলল,“হ্যাপি অ্যানিভার্সারি।”

অরিশা আর মাহাদিও উইশ করল। ইলোরা মুচকি হেসে বলল,“থ্যাংকস। আপু, তুমি এই কথাটা পেটে রাখলে কীভাবে? আমি তো পুরো সারপ্রাইজড হয়ে বসে আছি।”

জারিন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“একটামাত্র ভাই আমার। তার জন্য এটুকু তো করতেই হত।”

তখনই তাহসিন এসে উপস্থিত। সে চেয়ার টেনে বসতে-বসতে বলল,“গুড মর্নিং গাইস।”

অরিশা ভ্রুকুটি করে বলল,“গুড মর্নিং বলছিস, অথচ চোখই তো খুলতে পারছিস না।”

তাহসিন অসহায় মুখে বলল,“প্রচুর ঘুম পাইতাছে দোস্ত। মনে হইতাছে আমার আজকের জার্নি ঘুমময় হইব।”

আরহাম হেসে বলল,“তোমার জন্য মরিচের গুঁড়ো সাথে নিয়ে যাব। বেশি ঘুম পেলে তা তাড়ানোর জন্য এটাই সবচেয়ে কার্যকর মেডিসিন।”

তাহসিন বলল,“থাক ভাই, এত বেশি উপকার করা লাগবে না। আপনি হার্টের ডক্টর আছেন, তা-ই থাকেন। ঘুম তাড়ানোর ডক্টর হতে হবে না। আর যদি আপনার একান্তই ঘুম তাড়ানোর ডক্টর হওয়ার শখ জাগে, তাহলে আমাদের জারিন আপু আছে। তার ডক্টর হন।”

তাহসিনের কথায় সবাই মুখ টিপে হাসছে। তা দেখে জারিন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে রইল। মাহাদি বলল,“এখন খাবার অর্ডার দেওয়া উচিত। খেয়েদেয়ে রওনা দিতে হবে তো।”

মাহাদির কথায় সবাই সম্মতি জানাল। অর্ডার করার কিছুক্ষণের মধ্যেই খাবার চলে এল। সবাই খোশগল্প করতে-করতে বেশ জমিয়ে ব্রেকফাস্ট সারল। তারপর শুরু হলো কলকাতা ভ্রমণ। সারাটা দিন সবাই মিলে কলকাতার অলিগলি ঘুরে, পেটপুরে খেয়েদেয়ে সন্ধ্যার কিছু আগে হোটেলে ফিরল। আগে থেকেই ব্যাগপত্র গুছিয়ে রাখায় আর কারোর ঝামেলা পোহাতে হলো না। ফ্রেশ হয়ে ব্যাগপত্র বগলদাবা করে হোটেল ছাড়ল। সন্ধ্যা সাড়ে ছয়টার দিকে সবাই কলকাতার এনএসসিবিআই এয়ার পোর্টে পৌঁছল। বিমানে ওঠার পূর্ববর্তী যাবতীয় কার্য সঠিকভাবে সম্পন্ন করল। নির্দিষ্ট সময় মোতাবেক ‘এনএসসিবিআই এয়ার পোর্ট’ থেকে ‘ইন্ডিগো এয়ার লাইন্স’ সাড়ে সাত ঘটিকায় আকাশে আরোহণ করল। মূলত স্বল্প সময়ে গন্তব্যে পৌঁছাতে এরেন আগে থেকেই বিমানে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছিল। এক অছিলায় আকাশ পথ ভ্রমণটাও হয়ে যাবে। আওরঙ্গবাদ এয়ার পোর্টে বিমান অবতরণ করল সকাল সাড়ে ছয়টায়। জার্নিটা ছিল দীর্ঘ এগারো ঘন্টার। এয়ার পোর্ট থেকে বেরিয়ে ক্যাব নিয়ে চলল ভারতীয় পর্যটন সংস্থার তারকা খচিত ‘হোটেল আওরঙ্গবাদে।’ হোটেলে গিয়ে সবাই ফ্রেশ হয়ে ব্রেকফাস্ট করল। ব্রেকফাস্ট করে সবাই রেডি হতে লেগে পড়ল। কারণ আজ সারাদিন সবাই বাইরে কাটাবে। এরেন মাত্র দশ মিনিটের মধ্যেই ঝটপট রেডি হয়ে গেল। সে রেডি হয়ে ইলোরার জন্য অপেক্ষা করতে লাগল। ইলোরা আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে রেডি হচ্ছিল। এরেন এগিয়ে এসে তার পাশে দাঁড়িয়ে বলল,“আর কতক্ষণ লাগবে?”

ইলোরা চুলে চিরুনি চালাতে-চালাতে বলল,“এই তো, চুলটা বেঁধে হিজাব পরব। তাহলেই শেষ।”

“তাড়াতাড়ি করো না। দেরি হয়ে যাবে ‌”

“আরে একটু ওয়েট করো না।”

এরেন কপালে ভাঁজ ফেলে দাঁড়িয়ে রইল। ইলোরা তখন আয়নার দিকে তাকিয়ে চুল আঁচড়াতে ব্যস্ত। একদৃষ্টিতে প্রেয়সীর চুলে চিরুনি চালানো দেখে এরেন হঠাৎ করেই মুগ্ধ হলো। পাশ থেকে সরে এসে ইলোরার সামনে দাঁড়াল। আয়নার সামনে দাঁড়ানোয় ইলোরা ভ্রুকুটি করে বলল,“কী হলো? আয়না আড়াল করে দাঁড়ালে কেন?”

এরেন কোনো উত্তর না দিয়ে দুহাতে ইলোরার কোমর ধরে হেঁচকা টানে বুকে টেনে নিল। ইলোরা দুহাত এরেনের বুকে ঠেকিয়ে অবাক হয়ে বলল,“আরে, কী করছো?”

এরেন ইলোরার হাত থেকে চিরুনিটা কেড়ে নিয়ে রেখে দিয়ে বলল,“এই চিরুনি জিনিসটাকে আমার বড্ড হিংসা হয়।”

ইলোরা এরেনের কথা বুঝার চেষ্টা করে বলল,“চিরুনিকে তোমার হিংসা হয়! আর কিছু খুঁজে পেলে না? চিরুনিকে হিংসা হয় কেন?”

“এই যে, চিরুনি প্রত্যেকদিন সকাল-বিকাল-রাত তোমার চুল ছুঁয়ে দেয়। এতবার তো আমিও তোমার চুল ছুঁতে পারি না। কাজের চাপে তোমাকে কাছে পাওয়াই হয়ে ওঠে না।”

কথাটা বলেই এরেন ইলোরার চুলে মুখ গুঁজল। ইলোরা মৃদু হেসে বলল,“এখন তোমার দেরি হচ্ছে না?”

এরেন ইলোরার চুলে মুখ গুঁজেই ছোটো একটা শব্দ করল,“উঁহু।”

“এখানে এসে পাগলামি বেড়ে গেছে তোমার।”

এরেন এবার মুখ তুলে ইলোরার চোখের দিকে তাকাল। মুগ্ধতা মাখা নিচু স্বরে বলল,“এত সুন্দর কেন তুমি? এখন যদি আমি সত্যি সত্যিই হার্ট অ্যাটাক করে বসি?”

এরেনের কথায় ইলোরা চোখে-মুখে বিরক্তি ফুটে উঠতেই এরেন মুচকি হাসল। মুখটা এগিয়ে নিতেই ইলোরা আঙুল দিয়ে এরেনের মুখ চেপে ধরল। কপট রাগ দেখিয়ে বলল,“এখন তোমার অসভ্যতামি করার সময় না। সরে দাঁড়াও, আমি হিজাব পরব।”

এরেন এক হাতে নিজের মুখ থেকে ইলোরার আঙুল সরিয়ে নিল। ডান হাতে ইলোরার কোমর জড়িয়ে ধরে বাঁ হাতটা তার ঘাড়ে রাখল। ইলোরা বাঁধা দেওয়ার আগেই তার ওষ্ঠে ওষ্ঠ মিশিয়ে দিলো। ইলোরা স্থির হয়ে গেল। শিরদাঁড়া বেয়ে শীতল স্রোত বয়ে যেতেই ইলোরা এরেনের শার্ট খামচে ধরে চোখ বুজে নিল। না চাইতেও এরেনের পাগলামি তাকেও পেয়ে বসল। মানুষটাকে দূরে ঠেলে দেওয়ার সাধ্য তার নেই। দুবছর পার করেও আজও মনে হয় মানুষটার প্রতিটা স্পর্শ নতুন। অনুভূতিগুলো বুঝি সদ্য অনুভব করা। প্রত্যেকদিন সে একই মানুষের প্রেমে নতুন করে পরতে যেন বাধ্য হয়। ইলোরা অনুভব করে, এই মানুষটাকে পেয়ে সে পৃথিবীর সমস্ত সুখ পেয়ে গেছে। প্রতিদিন সময় অসময়ে ভালোবাসার মানুষটার বুকে মাথা রাখতে পারলে, আর কী চাই? এর থেকে বড়ো সুখ বুঝি আর হতে পারে!

এরেন হোটেলে উঠেই ‘এনইউভি’ জিপ বুক করে রেখেছিল। তাতে চড়েই সবাই রওয়ানা দিলো গন্তব্যের উদ্দেশ্যে। ত্রিশ কিলোমিটার দূরত্ব পেরোতে সময় লাগল প্রায় এক ঘন্টা। জিপ থেকে নেমে সামনে এগোতেই ইলোরা দুচোখে বিস্ময় নিয়ে চারদিক দেখতে লাগল। চোখ ভর্তি বিস্ময় নিয়ে এরেনের দিকে প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকাল। এরেন মুচকি হেসে বলল,“ভারতীয় ঐতিহ্যের নিদর্শন, ইলোরা গুহা।”

ইলোরা হেসে বলল,“মাই গড! আর কত সারপ্রাইজ দিবে?”

“সামনে এগিয়ে চলো। নিজেই সারপ্রাইজড হবে।” বলেই এরেন ইলোরার হাত ধরে সামনের দিকে পা বাড়াল।

উপর থেকে নিচে গ্রানাইট পাথরের পাহাড় কেটে নির্মিত ইলোরা গুহার আঞ্চলিক নাম ‘চরনন্দ্রী।’ এখানে প্রতিষ্ঠিত মন্দিরগুলো হিন্দু, বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের উপাসনালয় হিসেবে নির্মিত হয়েছে। ইলোরার একশত গুহার মধ্যে মাত্র চৌত্রিশটি গুহা দর্শনার্থীদের জন্য উন্মুক্ত আছে। এই চৌত্রিশটি গুহার মধ্যে সতেরোটি হিন্দু, বারোটি বৌদ্ধ এবং পাঁচটিতে জৈন ধর্মের নিদর্শন রয়েছে। ইলোরা যতই দেখছে ততই অবাক হচ্ছে। বিস্ময় বাড়ার সাথে-সাথে হঠাৎ করেই তার কন্ঠে বেরিয়ে এল,

“ইলোরা গ্রামের গুহার ভাঁজে
আমি লজ্জাবতী লাজুকলতা,
কখনও উচ্ছল, কখনও নীরব,
নিজের মাঝেই বিভিন্নতা।
যে যা-ই ভাবুক
আমি নিজের মাঝেই খুঁজি অনন্যতা।”

এরেনের হাততালির শব্দে ইলোরা ফিরে তাকাল। এরেন প্রশস্ত হেসে বলল,“বাহ্! আমার বউয়ের মাঝে দেখছি কবি কবি ভাব এসেছে।”

“সবই আপনার কৃপা, স্বামী।” বলেই ইলোরা হেসে উঠল। এরেনও শব্দ করে হাসল। পরক্ষণেই গলা ঝেড়ে বলল,“একটা সত্যি কথা বলব?”

ইলোরা প্রশ্নভরা দৃষ্টিতে তাকিয়ে চোখের ইশারায় প্রশ্ন করল,“কী?”

“জারিন আর আরহাম ভাইয়ের জন্য আমরা ইন্ডিয়া আসিনি।”

এরেনের কথা কানে যেতেই ইলোরা পা থামাল। অবাক হয়ে বলল,“মানে? তুমি তো বললে আমরা ওদের জন্যই এসেছি। এখন আবার বলছো ওদের জন্য আসিনি! তাহলে কেন এসেছি?”

“আমাদের জন্য।”

ইলোরা ভ্রু কুঁচকাল। বার তিনেক চোখ ঝাপটে বলল,“আমাদের জন্য! এই তুমি যা বলার স্পষ্ট করে বলবে প্লিজ? তোমার হেঁয়ালিপূর্ণ কথা সবই আমার মাথার ওপর দিয়ে যাচ্ছে।”

এরেন দাঁত কেলিয়ে হেসে বলল,“যাও বলব না। এবার তোমার মাথার মধ্যে এটাই ঘুরপাক খেতে থাকবে যে, আমাদের জন্য ইন্ডিয়া কেন এসেছি।”

এরেন সামনের দিকে পা বাড়াতেই ইলোরাও তার পিছু নিল। পায়ে পা মিলিয়ে হাঁটতে হাঁটতে বলল,“এই দাঁড়াও। বলো বলো।”

এরেন ডানে-বায়ে মাথা দুলিয়ে ছোটো একটা শব্দ করল,“উঁহু।”

ইলোরা ঠোঁট উলটে অনুরোধের সুরে বলল,“বলো না।”

এরেন মুচকি হেসে ইলোরার ডান হাতটা নিজের বাঁ হাতের মুঠোয় ধরে হাঁটতে হাঁটতে বলল,“মনে আছে, আজ থেকে ঠিক এক বছর আগে এক বাস জার্নিতে আমাদের প্রথম দেখা হয়েছিল? আর সেই জার্নির কারণেই তোমাকে আমি স্ত্রী হিসেবে পেয়েছিলাম। ফার্স্ট অ্যানিভার্সারিতে তো আমি বাস জার্নি করে তোমায় নিয়ে গ্রামে গিয়েছিলাম। তাই আমার প্ল্যান ছিল সেকেন্ড অ্যানিভার্সারিতেও তোমাকে নিয়ে বাস জার্নি করব। কিন্তু এবার তোমাকে বড়োসড়ো একটা সারপ্রাইজ দিব। ভাবতে ভাবতে হঠাৎ মাথায় এসেছিল মিসেস ইলোরাকে যদি বাস জার্নি করে কোনোভাবে ইলোরা গুহা দর্শন করাই, তাহলে সেটা দারুণ হবে। প্ল্যান অনুযায়ী আমরা বিমানে না এসে বাসে ইন্ডিয়া এসেছি। আর তারপর এই ইলোরা গুহা। বাস জার্নিও হলো, আর ইলোরা দর্শনও।”

ইলোরা অবাক দৃষ্টিতে এরেনের মুখের দিকে তাকিয়ে রইল। বিস্মিত কন্ঠে বলল,“এত প্ল্যান করলে আর আমি কিছুই টের পেলাম না। পারোও বটে তুমি! তবে আমি সত্যিই খুব সারপ্রাইজড হয়েছি। এসে হতে তুমি সারপ্রাইজ দিয়েই চলেছ।”

“তাহলে? এর বিপরীতে তো আমিও কিছু পাওনা থাকি তাই না?”

“আচ্ছা? তো আপনি কী চান মহারাজ?”

“মহারানির মুখে ‘ভালোবাসি’ শুনতে চাই।”

ইলোরা হেসে বলল,“এত বড়ো সারপ্রাইজের বদলে শুধু এইটুকু ছোট্ট একটা শব্দ?”

“এইটুকু ছোট্ট শব্দই আমাকে পৃথিবীর সব সুখ দিতে সক্ষম।”

ইলোরা ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে বলল,“ভালোবাসি।”

এরেন নিজের মুঠোয় আবদ্ধ ইলোরার হাতটা আরও শক্ত করে ধরে বলল,“আমিও ভালোবাসি ইলোনি। তোমার অসভ্য তোমাকে যুগ যুগ ধরে এভাবেই ভালোবাসতে চায়। এক মুহূর্তের জন্যও আমার দৃষ্টির আড়ালে যাবে না। এজন্যই তো বলি, সম্ভব হলে তোমাকে যত্ন সহকারে এইখানটায় ঢুকিয়ে রাখতাম।”

বলতে বলতে এরেন আঙুল দিয়ে নিজের বুকের বাঁ পাশটা দেখাল। ইলোরা হাসিমুখে বলল,“পাগল!”

অদূর থেকেই জারিন আর আরহাম এরেন-ইলোরাকে লক্ষ্য করছিল। আরহামকে জারিন লক্ষ্য না করলেও, জারিনকে আরহাম ঠিকই লক্ষ্য করেছে। জারিন যখন একদৃষ্টিতে এরেন-ইলোরার দিকে তাকিয়ে ছিল, তখন আরহাম বলে উঠল,“কারো ভালোবাসা দেখতেও ভালো লাগে, তাই না? ভালোবাসা সত্যিই সুন্দর!”

আরহামের কথায় জারিনের ধ্যান ভাঙল। এই দুদিনে আরহামের সাথে তার বেশ সখ্যতা গড়ে উঠেছে। আর এরজন্য অবশ্য আরহাম খুব চেষ্টা করেছে। আরহামের কথা শুনে জারিন তার দিকে ফিরে তাকালেও কোনো উত্তর দিলো না। চুপচাপ দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। জারিনের এই নিরুত্তর স্বভাবের সাথে আরফান পরিচিত। তাই সে নিরাশ না হয় পুনরায় বলল,“মিস জারিন, আপনি আমার সব প্রশ্নে নিরবতা পালন করুন, আমি কোনো প্রতিবাদ করব না। কিন্তু শুধুমাত্র একটা প্রশ্নের উত্তর দিবেন প্লিজ?”

জারিন ভ্রুকুটি করে বলল,“কী?”

“আপনি কি কোনোদিনই বিয়ে করবেন না?

জারিনের মুখটা চুপসে গেল। তবু এবার সে চুপ থাকল না। বড়ো করে দম নিয়ে বলল,“করব না কেন? জীবন তো আর একইভাবে চলে না। সময়ের সাথে সাথে জীবন পালটায়। সারাজীবন তো আর একা পার করে দিতে পারব না। একদিন তো আমাকেও কাউকে না কাউকে বিয়ে করতেই হবে।”

“সেই একজনটা আমি হলে কি খুব খারাপ হয়ে যেত?”

জারিন ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলল,“তা নয় ডক্টর আরহাম। আমি আসলে এত দ্রুত সংসার জীবনে বাঁধা পরতে চাই না। পড়াশোনা শেষ করে তারপর এসব বিয়ে, সংসার নিয়ে ভাবতে চাই। কিন্তু আমার ফ্যামিলিই তো সেটা বুঝতে পারছে না। তারা শুধু আমার আবেগের কথাই ভাবছে।”

বলেই জারিন মলিন হাসল। আরহাম বলল,“আপনার পড়াশোনা শেষ হওয়া অবধি যদি আমি অপেক্ষা করি, তাহলে? তখনও আমাকে বিয়ে করতে আপনার কোনো আপত্তি থাকবে? আপনার ভাষ্যমতে, তখন তো আর আপনার আপত্তি থাকার কথা না।”

জারিন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“এসব কী বলছেন? ততদিনে আপনি হয়তো আমার থেকেও বেটার কাউকে পেয়ে যাবেন।”

আরফান হেসে বলল,“ভালোবাসার সংজ্ঞাটা আমার থেকে বোধ হয় আপনিই বেশি ভালো জানেন। সেই হিসেবে আমার দিকটা বোঝা আপনার কাছে তেমন কঠিন কিছু না। তাই না মিস জারিন?”

জারিন এবারও নিশ্চুপ। আরফান বলল,“আপনি যেদিন প্রথম আমার চেম্বারে গিয়েছিলেন, সেদিনও আমি জানতাম না যে একদিন আপনারই প্রেমে পড়ে যাব। আমরা যা কখনও না ভাবি, তা-ই আমাদের সাথে বেশি হয়। আমার ক্ষেত্রেও এমনটাই হয়েছে। প্রথমে ভালো লাগা, ভালো লাগা থেকে ভালোবাসা, ভালোবাসা থেকে জীবনে জড়ানোর ইচ্ছা। সত্যি কথা বলতে আমি কখনোই দ্বিধা করি না। আমি সত্যিই আপনাকে আমার জীবনের একটা অংশ হিসেবে পেতে চাই। তার জন্য যদি আমাকে আগামী কয়েক বছরও অপেক্ষা করতে হয়, তাতে আমার বিন্দুমাত্র আপত্তি নেই। তবুও তো এটা জানব যে, অপেক্ষার অবসান হলে একদিন আপনাকে ঠিকই নিজের করে পাব।”

জারিন অবাক হয়ে আরফানের কথা শুনল। কিন্তু কোনো প্রতিউত্তর না করে চুপচাপ হেঁটে চলল। তার সাথে অনেকক্ষন যাবত আরফানও নিরবতা পালন করল। অতঃপর নিরবতা ভেঙে হঠাৎ বলে উঠল,“ইফ ইউ ডোন্ট মাইন্ড, আমি কি আপনার হাতটা ধরতে পারি মিস জারিন?”

জারিন চমকে উঠে আরফানের দিকে তাকাল। আরফান মৃদু হেসে বলল,“আপনার দ্বিধা থাকলে প্রয়োজন নেই।”

জারিন দৃষ্টি ফিরিয়ে নিল। মিনিট খানেক চুপ থেকে হঠাৎ বলে উঠল,“আমার হাত ধরতে হলে ভেবেচিন্তে ধরতে হবে ডক্টর সাহেব। অপেক্ষা ছাড়া কিন্তু সত্যিই আমাকে পাওয়া যাবে না।”

আরফান জারিনের মুখের দিকে ফিরে তাকাল। জারিন অন্যদিকে তাকিয়ে হাঁটছে। জারিনের বলা এই দুটো বাক্য যে তাকে কতটা আনন্দ দিয়েছে, তা সে মুখে প্রকাশ করল না। মুচকি হেসে জারিনের এক হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বলল,“ভালোবাসলে সবই সম্ভব। একদিন আপনি নিজের অজান্তেই আমাকে ভালোবাসতে বাধ্য হবেন মিস জারিন। কারণ সেদিন আপনি বুঝবেন, আপনার প্রতি আমার ভালোবাসায় বিন্দুমাত্র খাদ নেই।”

জারিন তবু ফিরে তাকাল না। আরফানের হাতে হাত রেখে, পায়ে পা মিলিয়ে চুপচাপ হেঁটে চলল। রনিকে সে ভালোবেসেছিল, কিন্তু কোনোদিন এভাবে তার হাতে হাত রেখে একসাথে কয়েক পা হাঁটা হয়নি। আজ প্রথম কোনো পুরুষের হাতে হাত রেখে সে একসঙ্গে হাঁটছে, তা-ও যে তাকে ভালোবাসে। অতশত না ভেবে হঠাৎ করেই জারিন সিদ্ধান্ত নিয়ে বসল, একদিন জীবনের সাথে জড়ানো কেউ একজনটা আরফানই হোক। একবার যখন হাতে হাত রাখা হলো, পায়ে পা মিলিয়ে পথ চলা হলো, তখন এই পথ চলাটা দীর্ঘস্থায়ী হলে দোষ কী? একপাক্ষিক প্রণয়ের ভাঙা অনুভূতিগুলোকে ভুলে, হোক না এবার দ্বিপাক্ষিক প্রণয়।

অরিশা ভিডিয়ো কল করার সঙ্গে সঙ্গে নাদিয়া রিসিভ করল। গতরাতে তাদের মধ্যে কথা হয়েছিল যে, ইলোরা গুহা ঘোরার সময় অরিশা নাদিয়াকে ভিডিয়ো কল দিয়ে দেখাবে। কথামতো অরিশার কল পেয়ে নাদিয়া মুখ ভার করে বলল,“এত দেরি করলি কেন? কতদূর ঘুরলি?”

অরিশা অনুশোচনার সুরে বলল,“সরি দোস্ত। অনেকদূর ঘুরে ফেলেছি, তোকে ফোন করতে একদম ভুলে গিয়েছিলাম। মাত্রই মাহাদি মনে করিয়ে দিলো।”

নাদিয়া মুখ বাঁকিয়ে বলল,“হ্যাঁ, তা তো ভুলবাই। হবু জামাই সাথে থাকলে কি আর দুনিয়ার খবর থাকে?”

“চুপ কর। এই দেখ।” বলেই অরিশা ব্যাক ক্যামেরায় চারপাশটা দেখাতে লাগল। নাদিয়া উত্তেজনা নিয়ে অনেকক্ষণ দেখল। তারপর অরিশা ফোন রাখতেই সে ঠোঁট উলটে ঈশানের দিকে তাকাল। ঈশান এগিয়ে এসে দুহাতে নাদিয়ার মুখটা তুলে ধরে বলল,“মন খারাপ করে না জান। বলেছি তো, আমার কাজ শেষ হলেই তোমাকে নিয়ে ঘুরতে যাব। তোমার যেখানে ইচ্ছে হয় সেখানেই নিয়ে যাব। মুখ ভার করে না থেকে, হাসো তো একটু।”

নাদিয়া ঠোঁট জোড়া প্রসারিত করে হেসে ঈশানের বুকে মাথা রাখল। ঈশান নাদিয়াকে দুহাতে বুকে চেপে ধরে তার মাথায় ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে বলল,“লাভ ইউ জান।”

নাদিয়া মুচকি হাসল। তাহসিন বলেছিল অন্তুর কথা যেন সত্যি হয়। সত্যি হয়েছে। হ্যাঁ, আজ তার জীবন ভালোবাসার রংয়ে রঙিন হয়ে আছে। ঈশান তার ভালোবাসা দিয়ে নাদিয়ার জীবনে ভালোবাসার অভাব রাখেনি। তাহসিনের শূন্যতাটা মাঝে মাঝে মনে খোঁচা মারলেও, আজ আর নাদিয়ার আক্ষেপ নেই। সে আজ মন থেকে ভালবাসে তার স্বামীকে।


হাতে হাত রেখে পথ চলতে চলতে এরেন প্রশ্ন করল,“ইলোরার বিস্ময় কেমন লাগল মিসেস জামান?”

ইলোরা উৎফুল্ল মনে বলল,“খুব, খুব, খুব ভালো। এত বড়ো সারপ্রাইজ হজম হতে সময় লাগবে।”

এরেন শব্দ তুলে হেসে উঠল। হাসিমুখেই বলল,“ভাবছি প্রতি অ্যানিভার্সারিতে তোমাকে নিয়ে বাস জার্নি করব। আমাদের অ্যাক্সিডেন্টলি বিয়ের স্মৃতিচারণা হবে।”

ইলোরা প্রশস্ত হেসে বলল,“তবু আমি তারিখ ভুলে যাব, আর প্রতিবার সারপ্রাইজড হব।”

ইলোরা দেখা শেষ হলো দুপুর সাড়ে তিনটার দিকে। সেখান থেকে বেরিয়ে সবাই ছোটো একটা রেস্তোরাঁয় দুপুরের খাবার খেল। রেস্টুরেন্ট থেকে বেরিয়ে মাহাদি বলল,“একদিনে ইলোরা আর অজন্তা দেখা সম্ভব না। অজন্তা দেখতে হলে আরও একদিন লেগে যাবে।”

অরিশা প্রশ্ন করল,“তাহলে এখন কী করব আমরা?”

তাহসিন বলল,“আমার মনে হয় এখন হোটেলে ফিরে যাওয়া উচিত। একটু বিশ্রাম নিয়ে না হয় আবার রাতে বেরোনো যাবে। রাতের আওরঙ্গবাদ ঘুরে দেখব। কী বলেন এরেন ভাই?”

এরেন মাথা দুলিয়ে বলল,“ওকে, চলো তাহলে। দাঁড়াও আমি ক্যাব ডাকছি। ইলোনি, চুপটি করে কিনারায় দাঁড়াও। ক্যাব ডাকছি আমি।”

ইলোরা হাসিমুখে মাথা দুলিয়ে সম্মতি জানাল। এরেন কয়েক পা সামনে এগিয়ে ফাঁকা ক্যাব খুঁজতে লাগল। আরহাম গলা ঝেড়ে বলল,“ভাবি, ভাই কিন্তু আপনার নামটা আরও বেশি সুন্দর করে ডাকে।”

ইলোরা আরফানের দিকে তাকিয়ে লাজুক হাসল। হঠাৎ করেই জারিনের আর্তনাদ করে ‘ভাই’ ডাক শুনে ইলোরা চমকে ফিরে তাকাল। চোখের পলকে নিজের ভালোবাসার মানুষটাকে এক রাক্ষুসে বাস পিষে দিয়ে গেল। ঘটনাটা এত দ্রুত ঘটে গেল যে, ইলোরার সারা শরীর ঝাঁকুনি দিয়ে হাত-পা অবশ হয়ে গেল। গলা ফাটিয়ে চিৎকার করতে চাইলেও কন্ঠনালি রোধ হয়ে গেল। নিমেষেই দুচোখ বেয়ে উত্তাল স্রোত বয়ে যেতেই তার মাথাটা চক্কর দিয়ে পুরো পৃথিবী অন্ধকার হয়ে এল।

চলবে……………….🌸

(ভুলত্রুটি ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন। বলেছিলাম আজ বড়োসড়ো এক পর্ব দিব। আমি কিন্তু আমার কথা রেখেছি। আশা করি সবাই রেসপন্স করবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here