সুপ্ত_প্রেমাসুখ পর্বঃ৬৬

0
1993

#সুপ্ত_প্রেমাসুখ
#ইলোরা_জাহান_ঊর্মি
#পর্বঃ৬৬

হসপিটালের কেবিনের বাইরে অস্থির ভঙ্গিতে পায়চারি করছে তাহসিন আর মাহাদি। পাশেই চিন্তিত মুখে চেয়ারে বসে আছে আরহাম। তার দৃষ্টি জারিনের মলিন মুখে আবদ্ধ। আরহামের পাশে বসে জারিন দেয়ালে মাথা ঠেকিয়ে চোখ বন্ধ করে আছে। দুচোখ বেয়ে টপ টপ করে গড়িয়ে পড়ছে অশ্রুজল। ব্যাগের ভেতরে ফোনটা সশব্দে বেজে উঠতেই আরহাম জারিনের ব্যাগের দিকে তাকাল। জারিনের সেদিকে হুঁশ নেই। আরহাম ব্যাগ থেকে জারিনের ফোনটা বের করে দেখল আন্নি হক কল করেছেন। তাহসিন ফোন করে এরেনের এক্সিডেন্টের খবর জাকির জামান আর সাকিবকে জানানোর পর থেকে একের পর এক ফোন এসেই চলেছে। আরহাম জারিনের হাতের ওপর হাত রেখে নিচু স্বরে বলল,“মিস জারিন, আপনার মা ফোন করেছে।”

জারিন চোখ মেলে তাকাল। অশ্রুসিক্ত চোখে ফোনের স্ক্রিনে ‘আম্মী’ নামটা দেখে তার গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করল। ঠোঁটে ঠোঁট চেপে আরহামের হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কাঁপা হাতে রিসিভ করে কানে ধরতেই ওপাশ থেকে আন্নি হকের বুকফাটা আহাজারি শোনা গেল। তিনি আর্তনাদ করে বললেন,“জারিন, আমার মানিক কই মা? আমার এরেন না কি হসপিটালে ভর্তি? ও মা, তোরা থাকতে আমার ছেলে বাসের নিচে চাপা পড়ল কীভাবে মা? আমার মানিককে ফিরিয়ে আন মা। যেমন সুস্থ শরীরে গেছে, তেমন সুস্থ শরীরে ফেরত নিয়ে আয়। আমার মানিকের যেন কিছু না হয়।”

ঠোঁটে ঠোঁট চেপে মায়ের কথা শুনে জারিন এবার শব্দ করে কেঁদে উঠল। আরহাম এক হাতে জারিনকে আগলে ধরে আরেক হাতে তার হাত থেকে ফোনটা নিয়ে কানে ধরে বলল,“হ্যালো আন্টি, আমি আরফান বলছি। আপনি কান্নাকাটি করবেন না প্লিজ। আপনার হার্টের অবস্থা ভালো না। এখানে আমরা আছি তো। এরেন ভাই ঠিক সুস্থ হয়ে যাবে। প্লিজ আপনি নিজেকে সামলান। আমি ফোন করে সব জানাব আপনাকে।”

আন্নি হককে কোনো উত্তর দেওয়ার সুযোগ না দিয়েই আরহাম ফোন কেটে দিলো। জারিন দুহাতে মুখ চেপে ধরে ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদছে। আরহাম আহত দৃষ্টিতে জারিনের মুখের দিকে তাকিয়ে বলল,“শান্ত হন মিস জারিন। আল্লাহর ওপর ভরসা রাখুন। দেখবেন সব ঠিক হয়ে যাবে। আপনি এতটা ভেঙে পড়লে ভাবিকে সামলাবে কে?”

জারিন চোখ তুলে সামনের দুটো কেবিনের দরজার দিকে তাকাল। দুই প্রান্তের দুটো কেবিনে শুয়ে আছে এরেন-ইলোরা। একজন মৃত্যুর সাথে পাঞ্জা লড়ছে, আর একজন প্রিয় মানুষটার শরীরের আঘাত সহ্য করতে না পেরে সেই যে জ্ঞান হারিয়েছে, আর ফেরার নাম নেই। বেশ কিছুক্ষণ পরে হঠাৎ করেই কেবিনের দরজা খুলে ইলোরা বেরিয়ে এল। বিধ্বস্ত মুখে, টলমলে পায়ে সে ছুটে আসতেই তাহসিন খপ করে তার হাত ধরে আটকাল।‌ জারিন, আরহাম আর মাহাদি এগিয়ে গেল। ততক্ষণে কেবিন থেকে অরিশা ছুটে এসে হাঁপাতে হাঁপাতে বলল,“ওর জ্ঞান ফিরেছে মাত্রই। জ্ঞান ফিরতেই দিশাহারার মতো বেড থেকে নেমে বাইরে ছুট লাগিয়েছে। আমি চেষ্টা করেও থামাতে পারিনি।”

মাহাদি ছুটল নার্স ডাকতে। ইলোরাকে জোর করে চেয়ারে বসিয়ে দিয়ে সবাই তাকে সান্ত্বনা দেওয়ার চেষ্টা করল। কিন্তু ইলোরা পাগলের মতো বিলাপ শুরু করল। বারবার একে-ওকে ধরে জিজ্ঞেস করতে লাগল,“আমার এরেন কোথায়? আমি ওর কাছে যাব। আমাকে নিয়ে চলো ওর কাছে। তোমাদের পায়ে পড়ি, বলো ও কোন কেবিনে আছে। ঐ দিকের কেবিনে? ছাড়ো আমাকে, আমি ওর কাছে যাব। আমি পাশে না থাকলে ও সুস্থ হবে না।”

ইলোরার আহাজারি দেখে উপস্থিত সবার চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এল। জারিন ইলোরার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে তার হাত দুটো মুঠোয় নিয়ে কান্নাভেজা কন্ঠে বলল,“ও ভাবি, তুমি জানো না তোমার চোখের পানি আমার ভাইটা সহ্য করতে পারে না? তাহলে কাঁদছো কেন? ভাইয়া সুস্থ হয়ে যখন জানতে পারবে তুমি এমনভাবে কেঁদেছ, তখন তো তোমাকেই বকবে। সাথে আমার মাথায় চাটি মেরে বলবে, তুই থাকতে আমার বউয়ের চোখে পানি এল কীভাবে? তুমি শক্ত না থাকলে আমার ভাই শক্তি পাবে না ভাবি।”

ইলোরা ফোঁপাতে ফোঁপাতে বলল,“আমাকে তোমার ভাইয়ের কাছে নিয়ে চলো আপু। তুমি তো জানো ওর শরীর খারাপ হলে সারাক্ষণ আমাকে পাশে থাকতে বলে। জেনেও আমাকে আটকে রাখছো কেন? ও আপু, সত্যি করে বলো তো, তোমার ভাই বেঁচে আছে তো? ও আমাকে ছেড়ে চলে যায়নি তো?”

“এসব কী বলছো তুমি? ভাইয়ার কিচ্ছু হয়নি। ডক্টর ট্রিটমেন্ট করছে, দেখবে কিছুক্ষণ পরেই সুস্থ হয়ে যাবে। তুমি একটু রেস্ট নাও ভাবি। ভাইয়া সুস্থ হয়ে যদি দেখে তুমি কাঁদতে কাঁদতে অসুস্থ হয়ে পড়েছ, তাহলে কি ওর ভালো লাগবে? তুমি অসুস্থ হয়ে পড়লে ভাইয়ার দেখাশোনা করবে কীভাবে? প্লিজ একটু রেস্ট নাও।”

“চল, কিছুক্ষণ রেস্ট নিবি।” বলেই অরিশা ইলোরাকে ধরে দাঁড় করিয়ে দিলো। ইলোরা করুণ কন্ঠে বলল,“আমাকে একবার যেতে দে না ওর কাছে। আমার মনটা কেমন উস-খুশ করছে।”

অরিশা ছলছল চোখে বলল,“নিজেকে সামলা ইলো। ভাইয়ার সুস্থতা চাইলে আগে তোকে সুস্থ থাকতে হবে। চল।”

অরিশা আর তাহসিন ইলোরাকে পুনরায় কেবিনে নিয়ে গেল। ততক্ষণে মাহাদিও নার্স নিয়ে এল। আরহাম জারিনের দিকে তাকিয়ে দেখল জারিনের ঠোঁট কাঁপছে। হয়তো মেয়েটার অনেক কষ্ট হচ্ছে নিজেকে সামলাতে। আরহাম ছোটো একটা দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে জারিনের পাশে বসে বলল,“নিজেকেই সামলাতে কষ্ট হচ্ছে, অথচ ভাবিকে সামলানোর চেষ্টা করলেন!”

জারিন তাচ্ছিল্যের স্বরে বলল,“কঠিন মুহূর্তগুলো বোধ হয় সবসময় আমার জীবনেই হানা দেয়। তাই নিজেকে সামলানোর অভ্যাস আছে আমার।”

এই পর্যন্ত এরেনের শরীরে দুই ব্যাগ রক্ত লেগেছে। এক্সিডেন্টটা তাকে এতটাই মারাত্মকভাবে আহত করেছে যে, ডক্টররা সেই তিন ঘন্টা ধরে তাকে আইসিইউতে ঢুকিয়ে রেখেছেন। কী হয়েছে, না হয়েছে সে বিষয়ে সরাসরি কিছু বলছেনও না। আরহাম বারকয়েক জিজ্ঞেস করার পর তাকে সবকিছু খুলে বলেছেন। তা-ও আরহাম একজন ডক্টর হওয়ার সুবাদে। কিন্তু সবাই যখন আরহামকে জিজ্ঞেস করেছে তাকে ডক্টর কী বলেছেন, তখন সে শুধু এইটুকু বলেছে যে, আঘাতটা শরীরের থেকে বেশি মাথায় লেগেছে। এদিকে নার্স ইলোরাকে ঘুমের ইনজেকশন পুশ করায় ইলোরা না চাইতেও গভীর ঘুমে তলিয়ে গেছে। তার যখন ঘুম ভাঙল, তখন রাত দশটা। ইলোরা নাদিয়ার সাথে কেবিন থেকে বেরিয়েই আবার এরেনের সাথে দেখা করার জন্য পাগল হয়ে উঠল। তার কিছুক্ষণ পরেই এক মধ্য বয়স্ক শ্বেতাঙ্গা ডক্টর এসে বললেন,“পেসেন্টের জ্ঞান ফিরেছে।”

কথাটা শুনে উপস্থিত সবার বুকের ওপর থেকে যেন একটা ভারী পাথর নেমে গেল। ইলোরা অস্থির হয়ে বলল,“আমি কি ওর সাথে দেখা করতে পারি? প্লিজ না করবেন না, আমি ওর ওয়াইফ।”

ডক্টর বলল,“দেখুন, যদিও আমরা এমন সিচুয়েশনে আইসিইউতে কাউকে ঢোকার অনুমতি দিই না। তবে আপনি কিছুক্ষণের জন্য যেতে পারেন। পেসেন্টের জ্ঞান ফেরার পর সে তার ওয়াইফের সাথে দেখা করতে চাইছে। যদিও সে এখনও স্পষ্ট করে কিছু বলতে পারছে না। তবে সাবধান, ওনার সামনে কান্নাকাটি করবেন না। এতে উত্তেজনা বেড়ে তার শরীরের ক্ষতি হতে পারে।”

ইলোরা মাথা দুলিয়ে বলল,“করব না। আমি শুধু একবার ওর সাথে দেখা করতে চাই।”

“ওকে, যান।”

ডক্টরের অনুমতি পেয়ে ইলোরা আর কারো দিকে ফিরে তাকাল না। এক ছুটে গিয়ে কেবিনের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে গেল। সে ঢুকতেই যে দুজন নার্স ভেতরে ছিল, তারা বেরিয়ে গেল। বেডে চোখ বন্ধ করে পড়ে থাকা মানুষটার দিকে চোখ পড়তেই ইলোরা আঁতকে উঠল। সম্পূর্ণ মাথাটা ব্যান্ডেজ করা, হাত আর মুখেও ব্যান্ডেজ। শরীরটা চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা বলে শরীরের অবস্থা বুঝা যাচ্ছে না। মাত্র কয়েক ঘন্টার ব্যবধানে মানুষটার চোখ-মুখ শুকিয়ে কী অবস্থা হয়ে গেছে! এই তো আজ দুপুরেও হাতে হাত রেখে হাঁটল, কতশত কথা বলল, হাসল, দুষ্টুমি করল। আর এখন সেই জলজ্যান্ত মানুষটা এভাবে বেডে পড়ে আছে! ইলোরা শুকনো ঢোক গিলে ধীর পায়ে এগিয়ে গিয়ে এরেনের পাশে বসল। কাঁপা হাতটা এরেনের কপালে ছোঁয়াতেই এরেন পিটপিট করে চোখ মেলে তাকাল। ঝাপসা চোখে ইলোরার মুখটা দৃশ্যমান হতেই এরেন হাত তোলার চেষ্টা করল। ইলোরা তা খেয়াল করে এরেনের ডান হাতটা নিজের হাতের মুঠোয় নিল। বুক ফেটে কান্না আসতে চাইলেও সে ঠোঁটে ঠোঁট চেপে কান্না আটকানোর চেষ্টা করল। কিছু বলতে গিয়েও পারল না, ঠোঁট দুটোতে কম্পন ধরে গেল। এরেন একদৃষ্টিতে মিনিট দুয়েক তাকিয়ে থেকে অস্ফুট স্বরে ডাকল,“ইলোনি।”

এরপরও কি নিজেকে সামলানো সম্ভব? এরেনের ডাক কানে পৌঁছাতেই ইলোরা এরেনের বুকে আছড়ে পড়ে ফুঁপিয়ে উঠল। এরেন ধীরস্থির ভাঙা ভাঙা গলায় বলল,“ইলোনি, আমি ছাড়া দ্বিতীয় কোনো পুরুষ কোনোদিন তোমাকে ছুঁলে, আমি তা সহ্য করতে পারব না। শুধুমাত্র তোমার ক্ষেত্রে তোমার অসভ্য খুব হিংসুটে।”

এরেনের কথা কানে যেতেই ইলোরা মাথা তুলে অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল,“এসব কী বলছো তুমি?”

এরেন ইলোরার প্রশ্নের উত্তর না দিয়ে পুনরায় বলল,“তোমাকে যুগ যুগ ধরে ভালোবাসার খুব আকাঙ্ক্ষা আমার। এ আকাঙ্ক্ষা এক জীবনে মিটবার নয়।”

ইলোরা নিজের মুঠোয় আবদ্ধ এরেনের হাতের উলটো পিঠে ছোট্ট একটা চুমু খেয়ে, গালে আলতো করে হাত রেখে বলল,“এসব এখন বলতে হবে না। আমার কি এসব অজানা? দুটো বছর কি এমনি এমনি কেটে গেছে? আমি জানি তুমি আমাকে কতটা ভালবাসো। আমাকে এটা বুঝিয়ে বলতে হবে না।”

“তোমাকে এভাবে কাঁদানোর জন্য আমি সরি ইলোনি।”

ইলোরা কথা পালটানোর জন্য বলল,“শোনো, তুমি না আজ সকালে বলেছিলে তোমার ছোট্ট একটা বেবি চাই? দ্রুত সুস্থ হয়ে যাও না। তুমি জানো? মুনার যখন বেবি হয়েছিল, তখন থেকেই আমার খুব ইচ্ছে আমারও একটা বেবি আসবে। কিন্তু তোমাকে বলতে পারিনি। এই শোনো, আমি চাই আমাদের ফার্স্ট বেবিটা ছেলে হোক। ঠিক তোমার মতো। তুমি কিন্তু আর কখনও মেয়ে মেয়ে করবে না।”

এরেন জিব দিয়ে শুকনো ঠোঁটটা ভিজিয়ে নিয়ে মৃদু হাসল। যে মেয়েটা এসব কথা শুনলেই লজ্জায় নুয়ে পড়ে, আজ সে-ই এসব বলছে। শুধুমাত্র ভালোবাসার মানুষটার জন্য। এরেন চোখের ইশারায় ডেকে ফিসফিস করে বলল,“ইলোনি, চোখ মুছে আরেকটু কাছে এসো তো।

ইলোরা চোখের পানি মুছে এরেনের মুখের ওপর ঝুঁকে পড়ে বলল,“তুমি অসুস্থ, এখনও পাগলামি করবে?”

“তাতে কি? আমার সব অসুখের ঔষধ তো তুমিই।”

বলেই এরেন ইলোরার ঠোঁটে ঠোঁট ছোঁয়াল। তারপর কপাল, গাল, নাক, চিবুকে। ইলোরা ছলছল চোখে বলল,“তোমার রেস্ট দরকার। আর কখনও এমন বেখেয়ালে রাস্তায় নামবে না। দেখি কোথায় কোথায় লেগেছে।”

ইলোরা চাদর সরাতে নিতেই এরেন চোখ-মুখ-কপাল কুঁচকে জোরে শ্বাস টেনে বলল,“ইলোনি, আমাকে একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরো।”

ইলোরা ব্যস্ত হয়ে বলল,“শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে তোমার?”

এরেন আবার শ্বাস টানতে টানতে অনেক কষ্টে ফিসফিস করে বলল,“শেষবারের মতো আমার হৃদস্পন্দন শোনো ইলোনি। তোমাকে অনুভব করার শেষ সুযোগটা দাও আমায়, তাড়াতাড়ি। আই লাভ ইউ ফরেভার ইলোনি।”

এরেনের শ্বাস টানা দেখে ইলোরা হন্তদন্ত হয়ে উঠে দাঁড়াল। এরেনের গালে হাত বুলিয়ে দিয়ে আদুরে গলায় বলল,“আই লাভ ইউ টু। একটু অপেক্ষা করো, আমি ডক্টর ডাকছি। ওকে? তোমার কিচ্ছু হবে না।”

কথাটা বলেই ইলোরা এরেনের কপালে ঠোঁট ছুঁয়ে দিয়ে ছুট লাগাল বাইরের দিকে। এরেন কিছু বলতে চেয়েও পারল না। দ্রুত গতিতে শ্বাস ওঠা-নামার সাথে প্রেয়সীর চলে যাওয়া দেখল। এই মুহুর্তে তার ইচ্ছে করছে মেয়েটাকে একবার শক্ত করে বুকে চেপে ধরে, অনেক অনেক কথা বলতে। কিন্তু মাথার তীব্র যন্ত্রণা আর শ্বাসকষ্ট তার সেই ইচ্ছেটাকে আর পূরণ হতে দিলো না। ইলোরা পাগলের মতো ছুটে এসে এরেনের শ্বাসকষ্টের কথা বলতেই ডক্টররা ছুটে গেল কেবিনের ভেতর। অরিশা ইলোরাকে ধরে চেয়ারে বসিয়ে দিতেই ইলোরা তার একহাত মুঠোয় চেপে ধরে বলল,“এই অরি, ও সুস্থ হবে তো? আমার ভালো লাগছে না ওকে এভাবে দেখতে। ওকে সুস্থ হতে বল না তাড়াতাড়ি।”

অরিশা ইলোরাকে বুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলাতে বুলাতে বলল,“শান্ত হ ইলো। বলছি তো ভাইয়া একদম সুস্থ হয়ে যাবে। ডক্টর গেছে তো ভেতরে।”

‘অপেক্ষা’ শব্দটা সত্যিই খুব ভয়াবহ। যতই সময় কাটছে ততই সবার উত্তেজনা আর আশঙ্কা বাড়ছে। উত্তেজনা আর আশঙ্কার ঢেউয়ে ঘড়ির কাঁটা ঘুরতে ঘুরতে রাত বারোটার ঘর ছাড়িয়ে গেল। ঠিক রাত বারোটা দশে কেবিনের দরজা খুলে ডক্টর বেরিয়ে আসতেই উপস্থিত সবার গলা শুকিয়ে কাঠ হয়ে গেল। তবু সবাই ছুট লাগাল ডক্টরের কাছে। ডক্টরের মুখের দিকে তাকিয়ে কেউ কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস জুগিয়ে উঠতে পারল না। সবার প্রশ্নভরা দৃষ্টি দেখে ডক্টর নিজেই ফ্যাকাসে মুখে বলল,“আমি ডক্টর আরহামকে বলেছিলাম, বাট উনি বোধ হয় আপনাদের কিছু বলেননি। পেসেন্টের মাথায় বেশি আঘাত পাওয়ায় ব্রেইনে হেভি ব্লিডিং হয়েছে। আমরা আমাদের সাধ্যমতো চেষ্টা করেছি, অস্ত্রোপচারও করেছি। নাউ উই আর সরি। হি ইজ ডেড।”

কথাটা যেন উপস্থিত সবার মাঝে ছোটো-খাটো একটা বজ্রপাত আঘাত হানল। জারিন শরীরের সমস্ত ভর ছেড়ে দিতেই আরহাম খপ করে তাকে ধরে বাহুডোরে আবদ্ধ করে ফেলল। বাকি সবার করুণ স্থির দৃষ্টি ইলোরার দিকে। ইলোরা পাথুরে মুর্তির ন্যায় অবাক দৃষ্টিতে ডক্টরের মুখের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে। যেন সে অপেক্ষায় আছে, ডক্টর এখনই বলবে এরেন সম্পূর্ণ সুস্থ হয়ে গেছে। ডক্টর সামনে থেকে সরে যেতেই ইলোরা ধপ করে মেঝেতে বসে পড়ল। অনুভূতিহীন চোখ দুটোতে শ্রাবণের ঢল নেমে এল। অশ্রুসিক্ত শূন্য দৃষ্টিতে আইসিইউ রুমের দরজার দিকে তাকাতেই তার ফাঁকা মস্তিষ্ক জানান দিলো,“মানুষটাকে তো শেষবারের মতো একবার শক্ত করে জড়িয়ে ধরা হলো না। তবে কি সে তীব্র অভিমানে ছেড়েই চলে গেল?”

চলবে………………..🌸

(আজ সমাপ্তি টানার কথা ছিল। কিন্তু সম্ভব হলো না। আশা করি আগামী পর্বে সমাপ্তি টানতে পারব। এরেন কি তবে সত্যি সত্যিই মারা গেছে? আপনাদের কী মনে হয় জনগনস? অনুভূতি প্রকাশ করে যান।👀)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here