#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-২
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
.
ময়দান থেকে ভিক্টোরিয়া এই জায়গাটুকু অভিমন্যুর বড় প্রিয়। এখনো দিনের মিনিবাসগুলোর হুড়োহুড়ি শুরু হয়ে যায় নি, মাখনের মত পিচঢালা রাস্তায় মসৃন সাবলীল গতিতে ACB ফ্লাইওভারে উঠে পড়লো ওর স্টীল ব্লু SUVটা। জানলার কাঁচ একটু নামিয়ে দিকেই হুড়মুড় করে গাড়িতে ঢুকে পড়ল সকালের মিষ্টি সোঁদা গন্ধওলা বাতাস। দিনকয়েকের টানা প্যাচপ্যাচে গরমটা আজ একটু কম। নৈঋত কোণে ছাইরঙা বড়ো একটা মেঘ ঘনাচ্ছে একটু। দুপুরেও বৃষ্টি হবে নাকি?
আক্সিলেটরে চাপ দিল অভিমন্যু, বাড়ি পৌছনোর আগে পিহুর মেডিসিনগুলো মনে করে কিনতে হবে আর নতুন ফিজিওথেরাপিস্টকেও একবার ফোন করতে হবে।। ফিরে যাওয়ার আগে এই নতুন ফিজিওথেরাপিস্টকে খুব দরকার, পিহুর ট্রেনিং আটকে থাকবে না হলে।ফাঁকা রাস্তায় হু হু করে এগিয়ে চললো অভিমন্যুর চারচাকা।
***********************__************************
— আজ তিন মিনিট জলদি পৌঁছে দিলে রতনকাকু!
— রেলগেটে আজ যে ভিড় কম ছিল দিদিমনি।
সীমন্তিনীর বয়স চব্বিশ, দেখে মনে হয় খুব বেশি হলে আঠারো উনিশ পার হয়েছে। বি.টেক গ্র্যাজুয়েট, রিলেশনশিপ স্টেটাস – সিঙ্গেল। মা বাবা, ওর থেকে বছর দুয়েকের ছোটভাই নিয়ে মফস্বলের নিউক্লিয়ার ফ্যামিলি ওদের। বিগত ছয় বছর ধরে তিন্নির বাবা রঞ্জনবাবু হুইলচেয়ারে বন্দী, অফিসে কাজ করতে করতে একটা মিনি হার্ট আ্যটাক হয়, তারপর থেকে কোমরের নিচ থেকে অসাড়। শ্রীরামপুর রেল স্টেশন থেকে মিনিট দশেক দূরে ওদের বাড়ি। মঙ্গলবার থেকে শনি প্রতিদিন তিন্নির এক রুটিন, রোজ সকালে স্নান, খাওয়া সেরে বেরিয়ে যায় কাজে। রাতে ক্লান্ত হয়ে ফিরে খেয়েদেয়ে শুয়ে পড়ে, যাওয়া আসায় চার ঘন্টার জার্নি প্রতিদিনের, শরীরে এনার্জি বলতে আর কিছু থাকে না।
আজ রতনকাকুর রিকশা থেকে নেমে দেখলো হাতে একটু বেশী সময় রয়েছে। আর ওভারব্রিজে ওঠার দৌড় দিল না তিন্নি, বরং চলতি পায়ে হাঁটতে লাগলো প্রতিদিনের চেনা জায়গাটায়, ৭:৫৫র লোকালের লেডিস কম্পার্টমেন্টটা তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের যেখানে এসে দাঁড়ায়। ছোটো থেকেই জোরে হাঁটা স্বভাব ওর, বাকি মেয়েদের হিল জুতো পায়ে ওর সাথে পা মেলাতে অসুবিধা হয়, ও সেখানে স্নিকার্স পড়ে তরতর পায়ে মাথা নীচু করে মাটির দিকে তাকিয়ে জোরে জোরে হাঁটে, যেন রেসে নেমেছে। তবে শাড়ি হোক বা সালোয়ার কামিজ, স্নিকার্স পরেই শীত গ্রীষ্ম বর্ষা কাটিয়ে দেয় তিন্নি। বন্ধুরা, কলীগরা কতো প্যাঁক দেয় ওকে এই নিয়ে কিন্তু তিন্নি গায়ে মাখে না। সত্যি বলতে তিন্নি নিজের চারপাশে এমন একটা নির্লিপ্ততার বলয় বানিয়ে রেখেছে সহজে কেউ ওর সাথে ইয়ারকি মারে না। যে রেগে ওঠে না, প্রতিবাদ করে না আবার চুপ করে থেকে কোনো সমালোচনাকে পাত্তাও দেয় না তাকে খেপিয়ে কি মজা পাওয়া যায়? তাই সবাই এক দুবার বলেই থেমে যায়। তিন্নিও হাসে এসব শুনে, শব্দহীন হাসি। সেক্টর ফাইভের এই কর্পোরেট অফিসটায় জয়েন করার পর প্রথমদিকে অনেকে এগিয়ে এসেছিল “বন্ধু” হতে, তিন্নির থেকে তেমন রেসপন্স না পেয়ে সবাই কেটে পরেছে একটু একটু করে। তিন্নির যদিও এসব গা সওয়া! ছোটো থেকেই তিন্নি জানে আর বাকী পাঁচটা সমবয়সী মেয়েদের মত ও ঠিক “স্বাভাবিক” নয়। তিন্নি জোরে হাসতে পারে না, কারো গলা জড়িয়ে কাঁদতে পারে না, ফুচকাওলার সাথে ফাউ নিয়ে ঝগড়া করতে পারে না বা ট্রেনের হকারদের সাথে উচ্চেস্বরে চেঁচিয়ে দরদাম করতে পারে না। এই সোশ্যাল মিডিয়ার সেলফির যুগেও তিন্নি সেলফি তুলতে পছন্দ করে না, মেসেন্জারে বা হোয়াটসআপে ঘন্টার পর ঘন্টা চ্যাট করতে পারে না। এমনকি কাজের সময়টুকুর বাইরে অফিসের কলীগদের ফোনটাও তুলতে ওর দ্বিধা। তাই তিন্নির কোনো বন্ধু নেই, মন খুলে গল্প করার কেউ নেই।
.
.
.
সপ্তাহের অন্য দিনগুলিতে অফিস টাইমের ভিড়ে ট্রেনটায় তিল ধারণের জায়গা থাকে না, লেডিজ কম্পার্টমেন্টেও। পা-দানিতে কোনও রকমে পা ঠেকিয়ে তিন্নি ঠেলেঠুলে ঢুকে যায় ভিতরে। কিন্তু শনিবার বলে আজ ভিড় নেই একদমই। জানলার পাশেই একটা সীট পেয়ে গেল তিন্নি। প্রায় ফাঁকা কম্পার্টমেন্টে এক দু জন এপাশে ওপাশে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বসে, কেউ কেউ ঝিমোচ্ছে। ব্যাগ থেকে জলের বোতলটা বার করে এক ঢোঁক জল খেয়ে একমনে বাইরের দিকে তাকিয়ে রইলো তিন্নি। শেষরাতের বৃষ্টিটায় চারপাশ যেন বড্ড বেশী সবুজ হয়ে চোখে লাগছে, চলন্ত ট্রেনের জানলা দিয়ে আসা ফুরফুরে হাওয়া একটু আগে মায়ের বলা কটু কথাগুলো উড়িয়ে নিয়ে গেল। বসে বসে তিন্নি ভাবছিলো, এই চব্বিশ বছর বয়সেও কেন ওর বন্ধু নেই একটাও!
অবশ্য “নেই” বলা ভুল হবে! ছিল তো! অনেক কাল আগে কলেজের প্রথম বছর, একজন ছিল – মানব তার নাম, তিন্নির প্রথম বয়ফ্রেন্ড। যদিও কিছুমাস পরই সে সরে গিয়েছিলো আর যাওয়ার আগে বলে গিয়েছিলো – “ইউ আর সো ফ্রোজেন সীমন্তিনী! লাইক এ কোল্ড বিচ্। দেয়ারস্ নো ফান কিসিং ইউ।“
.
.
ওদের সম্পর্কটা ভাঙার পর মানব দায়িত্ব নিয়ে সারা কলেজে রটিয়ে দিয়েছিল “সীমন্তিনী আচারিয়া ইজ লাইক কোল্ড ডেড ফিস।শী ডাসনট ফীল এনিথিং।” তাতে অবশ্য তিন্নির কিছু যায় আসে নি। দু তিনজন অতি উৎসাহী ব্যাচমেট এগিয়ে এসেছিল মানবের খালি জায়গাটা নেওয়ার জন্য, তিন্নির থেকে কোন সাড়া না পেয়ে মানবের ছড়ানো গুজবটাই দেওয়াল লিখন হয়ে দাঁড়িয়েছিল। সত্যি বলতে, হাঁফ ছেড়ে বেঁচেছিল তিন্নিও। রোজরোজ প্যানপ্যানে ন্যাকা প্রেম নিবেদন থেকে যেন মুক্তি পেয়েছিল ও। আজ ভাবে, আদৌ কি মানব ওকে ছেড়ে যাওয়ায় তিন্নির দুঃখ হয়েছিল না স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলেছিল? মানবের সাথে সম্পর্কটা থাকার সময় প্রতি মুহুর্তে ওর মনে হতো এই বুঝি মা জেনে গেলো! খুবই অবাস্তব চিন্তা – মানব বোঝাতো ওকে! ভাস্বতীদেবী তো আর কলেজে আসছেন না তিন্নি কি করছে দেখতে, তাও তিন্নির ভয় করতো। বাড়ি থেকে একটা স্টেশন দুরেই কলেজ, ওয়ার্ডবয়, সিকিউরিটি গার্ড থেকে শুরু করে অনেক সিনিয়র বা টীচাররাই ওদের এরিয়ায় থাকে, যদি এদের কারোর সাথে মা’র আলাপ থাকে তবে? যদি কেউ মা কে রিপোর্ট করে ফেলে? কেমন একটা প্যানিকের মধ্যে চলে গিয়েছিলো তিন্নি, আবেশ ভরে মানব একটা চুমু খেতে গেলেও তিন্নির চোখজোড়া খুঁজে বেরাতো কেউ দেখছে কিনা! প্রথমদিকে মানব বোঝাতো, তারপর বিরক্ত হতো। আডাল্ট মেয়ে, কো এডুকেশন কলেজে পড়ে, প্রেম করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। এ নিয়ে এত প্যানিক করার কি আছে! তিন্নি বোঝানোর চেষ্টা করে নি মানবকে, আজও জানে না- মা’কে কেন ও এত ভয় পায়। মানব চলে যাওয়ার পর সে জন্য নতুন কোন সম্পর্কে জড়ায় নি তিন্নি -আবার সেই একই ভয়ের পুনরাবৃত্তি ও চায় নি। মানব যদিও ভেবেছিল – তিন্নি হয়তো ওকে ভালেবেসেই নতুন কোনো রিলেশনে জড়ায় নি। তিন চারটে গার্লফ্রেন্ডের সাথে ছুটকো ছাটকা প্রেম করে কলেজ শেষ হওয়ার মুখে। আর একবার মানব হাঁটু গেড়ে প্রোপোজ করেছিল তিন্নিকে —“সীমন্তিনী, গিভ মি ওয়ান মোর চান্স।লেটস গো টু রায়চক অর মন্দারমনি ফর ওয়ান ডে, আই উইল ব্রেক ইওয়োর আইস। ইউ ডোন্ট নো হোয়াট আর ইউ মিসিং! “
মানবের কদর্য ইঙ্গিতটায় গা গুলিয়ে উঠেছিল তিন্নির, নিজের সম্পূর্ণ অস্ত্বিত্বটা জাস্ট একটা মাংসপিন্ডের দলা মনে হয়েছিলো। ওর মুখ দেখে কালো হয়ে উঠেছিল মানবের মুখও। সশব্দে একদলা থুতু মাটিতে ফেলে বলেছিল – “একটা চান্স দিচ্ছিলাম তোকে স্বর্গসুখ দেওয়ার, নিলি না! ইউ কোল্ড বিচ! ইউ ফিল নাথিং, নো ওয়ান উইল ফাক ইউ এভার!”
শুভদীপ, তিন্নির ভাই ওই কলেজেই পড়তো, তিন্নির দুই ব্যাচ জুনিয়র।দুর থেকে দেখে হাসছিলো দাঁত বার করে দিদির অপমান দেখে। মানবের অপমানের থেকেও তিন্নির সেদিন বড় অপমান হয়ে বেজেছিল, নিজের ভাইয়ের ওই রূপ দেখে। শুভদীপ কলেজে ভর্তি হওয়ার আগের রাতেই তিন্নিকে শাসিয়ে গিয়েছিলো, খবরদার যেন কলেজের কেউ জানতে না পারে শুভ আর তিন্নি ভাইবোন, তাহলেই কিন্তু ……. কথাটা শেষ না করে শুভদীপ বেরিয়ে গিয়েছিলো আর “না বলা” ইঙ্গিতটা বুঝতে তিন্নির কোনো অসুবিধে হয় নি।
.
.
.
ছোটো থেকে ভাস্বতীদেবীর ছেলে অন্ত প্রাণ। মাছের মাথা, মাংসের বড়ো পিস, পায়েসের বড় বাটি থেকে ঘড়ি, ল্যাপটপ, ক্যামেরা, ভিডিওগেম সবই ছেলের জন্য আসে। তিন্নির জন্য কিনতে গেলে উনি বলেন- সেই তো পরের বাড়ি চলে যাবে দুদিন পরে, ওর জন্য এসব টাকা খরচ কেন? তাই চব্বিশটা বছর তিন্নি দুইবছরের ছোটো ভাইয়ের বাতিল খেলনা, ফেলে দেওয়া মোবাইল, ভাঙা ল্যাপটপ নিয়েই দিন কেটেছে। তিন্নির হাতে ছিল লেখাপড়া -সেটাই ও করে এসেছে মন দিয়ে। ক্লাস ওয়ান থেকে পাড়ার সরকারি অল-গার্লস স্কুলের ফার্স্ট গার্ল যখন উচ্চমাধ্যমিকে বোর্ডের পরীক্ষায় রাজ্যে সপ্তম এবং জেলায় প্রথম হল, বাড়ির পাশের তৈরী হওয়া বেসরকারী ইন্জিনিয়ারিং কলেজের সেক্রেটারী স্বয়ং ওদের বাড়ি এসেছিলেন, তিন্নিকে ফুল স্কলারশিপ দেওয়ার প্রোপোজাল নিয়ে। শর্ত একটাই, কলেজের বুলেটিনে তিন্নির নাম ও ছবি ছাপা হবে আগামী সাত বছর।আজও শ্রীরামপুর স্টেশন ক্রস করতে বিশাল বড়ো হোর্ডিংটা চোখে পড়ে – কলেজের ইউনিফর্ম পড়া সীমন্তিনীর হাসিমুখে সেই বেসরকারী কলেজের বিজ্ঞাপন। অফিস যাতায়াতের পথে হোর্ডিংটা দেখে একই সাথে তিন্নির হাসিও পায় আবার বুকের ভেতর খচখচ করে ওঠা একটা কাঁটা আজও নিঃশব্দে রক্ত ক্ষরণ করিয়ে যায়! হাসি পায় ওই কথাটা মনে করে, “ঈশ্বর যা করেন মঙ্গলের জন্যই করেন”!
.
.
.
হবে হয়তো! ভাগ্যিস সেদিন কলেজের সেক্রেটারি স্যর এসেছিলেন ওদের বাড়ি, না হলে তো তিন্নির ইন্জিনিয়ারিংও পড়া হতো না আর এ চাকরিটাও পেতো না। বাবার আ্যক্সিডেন্টের পরই যে হারে মা বিয়ের সম্বন্ধ দেখা শুরু করেছিল রেজাল্ট বেরোনোর আগেই, এতদিনে হয়তো কোনো আধবুড়ো কাকুর গলায় মালা দিয়ে তিন্নিকে ডুবে যেতে হতো সংসারের কালো অন্ধকুপে। আর কষ্টটা হয়, ওদের কলেজের বিজ্ঞাপনের পাশেই ইন্ডিয়ান নেভির একটা আকাশ ছোঁয়া হোর্ডিং আছে, তিন্নি যখন ক্লাস ইলেভেনে পড়তো, বাড়িতে আসা নিউসপেপার থেকে ইন্ডিয়ান আর্মি আর ইন্ডিয়ান নাভির জন্য বেরোনো বিজ্ঞাপন, ফর্ম, সব যত্ন করে কাটিং করে রেখে দিতো, বড়ো শখ ছিল, ও-ও একদিন দেশের হয়ে কাজ করবে, ঝাঁ চকচকে ইউনিফর্ম পড়ে গর্ব ভরে ২৬শে জানুয়ারী দিল্লির রাজপথের প্যারেডে অংশ নেবে। যদিও সব আশা সেদিনই শেষ হয়ে গিয়েছিলো যেদিন পাড়ার ডাক্তারবাবু বলে দিয়েছিলেন ওর হার্টে ছোট্ট একটা ফুটো আছে, অপারেশন করানোর মতো বড়ো না হলেও কোনোদিনই তিন্নি খেলাধুলো, দৌড়ঝাঁপ করতে পারবে না, ভারতীয় সেনাবাহিনীতে অংশ নেওয়া তো দূরের কথা!
************************__************************
.
.
ঠক্ ঠক্ ঠক্!
.
.
এবারের আওয়াজটা একটু জোরে। পাঁচমিনিট হয়ে গেল ছেলের দরজায় নক করছেন তাও কোনো সাড়া নেই।
— “কিরে কখন থেকে দরজা ধাক্কা দিচ্ছি , কি করছিস টা কি?” বেশ চেঁচিয়েই বললেন ভাস্বতীদেবী।
—- উফফ্। সকাল সকাল এত চেঁচামিচির কি হলো?
ঘুমচোখে দরজা খুলে দিল শুভদীপ, ভাস্বতীদেবী ও রঞ্জনবাবুর পুত্রসন্তান – মা কা লাডলা।
বাইশ বছরের শুভদীপ, পিঠোপিঠি ভাইবোন ওরা, তিন্নির থেকে বছরদুইয়ের ছোটো। সবে কলেজ শেষ হয়েছে, BCA পড়ে এক বছর হলো ঘরে বসে আছে, ক্যাম্পাসিং হয় নি, শুভদীপের নিজেরও চাকরির কোনো চেষ্টা নাই। সারাদিন টো টো করে বন্ধুদের সাথে ঘুরে বেড়ায়, ইদানীং বারিনদা’র জিমে সন্ধ্যেবেলায় আড্ডা বসে ওদের, ওই সময় অনেক মেয়েরা আসে। ইমপ্রেস করতে শুভদীপও ইনস্ট্রুমেন্টগুলো নিয়ে নাড়াচাড়া করে ফলস্বরূপ, সবে পরিবর্তনের স্বাদ পেয়েছে ওর শরীর। আর তারই সাথে ওর উড়ুউড়ু মন পরিবর্তনের সেই রঙে রঙিন হয়ে উঠেছে আজকাল। আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে টিকটক ভিডিও বানাতে বানাতে বার বার নিজের ফিজিকেরই তারিফ করছিলো শুভদীপ।
— কত টাইম লাগে তোর? জলখাবার নিয়ে আমি কি তোর জন্য দাঁড়িয়ে থাকবো রোজ?
— উফফ মা!! সকাল সকাল আবার স্টার্ট কোরো না তো!
— খুব বড়ো বড়ো কথা হয়েছে না তোর? তাড়াতাড়ি খেয়ে নে, তারপর বাজারটা নিয়ে আয়। সাড়ে আটটা বেজে গেল!
— রোজ রোজ আমি বাজার যেতে পারবো না, ভালো লাগেনা আমার! বিরক্ত হয়ে উঠলো শুভদীপ।
— মানে? চেঁচিয়ে উঠলেন ভাস্বতীদেবী।
— এতদিন তো দিব্যি যেতিস আজ আবার কি হলো?
— আমার কি একটা প্রেস্টিজ নেই নাকি? রোজ সকালে বুড়ো দাদুদের মতো বাজারের থলি হাতে বেড়িয়ে পড়ো! বন্ধুরা সবাই খেপায়, আমি নাকি বাচ্ছাদের মতো এখনও তোমার কথা শুনে চলি! কই, আমার বাকি বন্ধুরা তো বাজার যায় না আমার মতো? সবাই হাসে।
— যা ইচ্ছে কর, বড়ো হয়ে গেছিস… বুড়ি মা এখন বাজার যাবে আর দামড়া ছেলে ঘরে বসে থাকবে!
রেগে চলে গেলেন ভাস্বতীদেবী। তাও ছেলেকে জোর করলেন না বাজার করে আনতে, ঠিকে কাজের ঝি মালতি কাজ সেরে যাক, উনি নিজেই নাহয় বেরোবেন বেলার দিকে!
শুভদীপ আর কথা বাড়ালো না, সে এখন খুব বেশি কথা বলে না বাড়িতে, নিজের মতো নিজের জগৎ নিয়ে ব্যস্ত থাকে। সে বড়ো হয়েছে, তার একটা নতুন রং-বেরঙের পৃথিবী তৈরি হয়েছে,, তাতে আছে শুধু রঙিন স্বপ্ন – টিকটক স্টার হওয়ার স্বপ্ন! ১ মিলিয়ন ভিউ পাওয়ার স্বপ্ন! নতুন কেনা হেয়ার ওয়াক্সটা দিয়ে চুলটা ভালো করে পাফ করে খাড়া করে দিল শুভদীপ। — ইশশ্! বিবেকের মতো ওই নতুন সেলুনটায় গিয়ে চুল কাটিয়ে এলে ভালো হতো! এদিকে বাড়ির জ্বালায় সেই ছোটো থেকে বাঁধাধরা সেলুনে বাঁধাধরা পঞ্চাশ টাকার কাট, এক রকম ভাবেই চুল কেটে আসছে বাইশ বছর ধরে, অবশ্য ফ্যাশন ট্যাশন আবার এরা বোঝে নাকি? আপনমনেই রাগে গজগজ করতে থাকে শুভদীপ। চুলটা আরেকটু তুলে দিল ওপরে, আজই গিয়ে একটু হাইলাইট করিয়ে আসবে – ভাবলো শুভদীপ। ভিডিও ভাইরাল হতে গেলে এসব একটু দরকার, ওর সব বন্ধুরাও এভাবেই চুল সেট করে। এবার থেকে ও-ও করবে!
— “আর কতক্ষন খাবার নিয়ে বসে থাকবো? নয়টা বাজতে চললো, তাড়াতাড়ি আয়।” তাড়া লাগালেন ভাস্বতীদেবী।
— আসছিইইই!!!
একফোঁটা শান্তি নেই এই বাড়িতে! বিড়বিড় করে কথাগুলো বলে বাথরুমের দিকে এগোতে এগোতে ততোধিক জোরে চেঁচালো শুভদীপ।
ক্রমশঃ
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
-পরবর্তী পর্ব কাল দুপুর দুটোয়-
সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
art 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n