সূর্য ডোবার আগে পর্ব – ১

0
4434

#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব – ১
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
সম্পূর্ণভাবে প্রাপ্তমনষ্ক এবং প্রাপ্তবয়ষ্কদের জন্য।

.

.

.

পিঁক পিঁক করে মুঠোফোনের যান্ত্রিক স্বর জানিয়ে দিলো, সময় হয়ে গেছে – এবার উঠে পড়তে হবে! আল্যার্মটা বন্ধ করে আরো কিছুক্ষন চোখ বন্ধ করে গায়ের চাদরটা মাথা অবধি টেনে গুটিশুটি মেরে শুয়ে রইলো তিন্নি অরফে সীমন্তিনী। শেষরাতের বৃষ্টিটা হয়ে গত কয়েকদিন ধরে টানা চলে আসা প্যাচপ্যাচে গরমটা আজ যেন একটু কম আছে মনে হচ্ছে। মনে মনে ভাবতে থাকলো তিন্নি, আজ যদি ও চুলে শ্যাম্পু না করে বা কাজলটা যদি অফিস পৌঁছেই লাগায়…. তবে আরো কতোটা সময় বাঁচিয়ে ও বিছানায় পড়ে থাকতে পারবে?

শনিবারগুলো অফিস যেতে একদম ইচ্ছে করে না ওর! বছর দুই হয়ে গেলো কর্পোরেট পৃথিবীর কেজো দুনিয়ায় কাজ করছে ও, তাও যেন শনিবারগুলো এলেই চব্বিশ বছরের বুড়িধাড়ি তিন্নী একপলকে নার্সারির বাচ্চা হয়ে যায় – শনিবার মানেই হাফ স্কুল- পিটি ক্লাস, বাড়ি ফিরে বাবার কোলে চেপে পার্কে হাঁটতে যাওয়া, বা বাজার যাওয়া। রাতের বেলায় আধখোলা ঘুমচোখে লুচি খেতে খেতে দুরদর্শনে সিনেমা দেখা! এখন আর সেই রামও নেই আর সেই অযোধ্যাও নেই। সপ্তাহের সবদিনই এক। তার ওপর তিন্নির অফিসটাও হয়েছে তেমনি! আমেরিকার সাথে সময় মিলিয়ে শনিবারের বদলে সোমবার ছুটি।সারা সেক্টরফাইভ ফাঁকা গড়ের মাঠ, শুধু ওদের অফিসটা যেন গমগম করছে। আকাশউঁচু ঝাঁ চকচকে কর্পোরেট হাব, কলকাতার সেক্টরফাইভের দুইলেনের পিচওঠা ভিড়ে গমগমে রাস্তায় গাড়িগুলো যেন শনিবারগুলোর ফাঁকা রাস্তা পেয়েও একটু ধীরেই চলে, শহরের আলসেমিটা গায়ে মাখতে মাখতে। চোখটা লেগেই এসেছিল প্রায় চটকাটা ভেঙে গেল রান্নাঘরে ঝনঝন করে বেশকিছু বাসন পড়ে যাওয়ার আওয়াজে। ম্যাঁওওওও – আওয়াজ করে মিসেস বিয়াঙ্কা মানে তিন্নির সাদা হলদে মেনী একলাফে ওর চাদরের তলা থেকে বেরিয়ে জানলা দিয়ে পগারপার। পালানোর আগে তিন্নিকে একটা বড়োসড়ো আঁচড় কাটতে ভোলে নি। পা’টা একটু জ্বলছে, তা জ্বলুক, মা’কে বলা যাবে না। বললেই চেঁচিয়ে পাড়া মাথায় করবে আর তিন্নির অফিস যাওয়ার দেরী হবে বেকার। বিছানা ছেড়ে জলদি উঠে পড়লো তিন্নি, বেরোনোর আগে পায়ের আঁচড়টায় একটু বোরোলীন লাগিয়ে নিতে হবে। পরপর গায়ের চাদর পাট করে, বিছানা বালিশ ঝেড়ে মিনিটখানেকের মধ্যেই ঘরটা চলনসই গুছিয়ে ফেললো ও। জানলাদুটো হাট করে খুলে দিতেই সকালের বৃষ্টিমাখা নরম রোদ হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো ওর ছোট্ট ঘরটাতে। মিসেস বিয়াঙ্কা পাঁচিলের ওপর বসে একমনে নিজের থাবা চাটছে। কিছুক্ষন জানলায় দাঁড়িয়ে তিন্নি মনে মনে যেন বেশ উপভোগ করলো এই দৃশ্যটা। তারপরই নিজেকে তাড়া লাগিয়ে ঘর থেকে বের হয়ে এলো ও।

**************************__*****************************

 

— মা ও মা! তাড়াতাড়ি খেতে দাও, দেরী হয়ে যাচ্ছে!

প্রতিদিন ঘড়ির কাঁটা যখন সকাল সাতটা ছুঁইছুঁই, স্নানে ঢোকার ঠিক আগে এই একই কথাগুলো চেঁচিয়ে বলে যায় সীমন্তিনী অরফে তিন্নি। হুড়ুমদুড়ুম করে পাক্কা ছয় মিনিটের মধ্যে গায়ে জল ঢেলে বেরিয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে চেপে চেপে মাথা মুছতে মুছতে বাইরে এলো তিন্নি। তাড়াহুড়োর সময়, গায়ের জল ভালো করে না মুছেই জামাটা পরে নিয়েছে। আর একবার ডাক দিল আজ রান্নাঘরের উদ্দেশ্যে। কোনো সাড়া নেই! কি ব্যপার? মাতৃদেবী আজ একদম পিনড্রপ সাইলেন্স? ব্যাপারটা নিয়ে বেশি মাথা না ঘামিয়ে নিজের ঘরে ঢুকে গেল তিন্নি। দিনকয়েক আগে অনলাইন বুটিক থেকে কেনা হালকা কচি কলাপাতা রঙা লক্ষনৌ চিকনকারি কুর্তি-সালোয়ারটা পড়ে মিনিট দশেক পর ভেজা চুল আঁচড়াতে আঁচড়াতে অফিসের খাওয়ার টেবিলে এসে বসলো তিন্নি, সামনে ভাতের থালা তখনও অদৃশ্য। মনে মনে একটু বিরক্ত হয়ে উঠলো তিন্নি! প্রতিদিন একই রুটিন তাও ভাস্বতীদেবী মানে, সীমন্তিনীর মা, মেয়ে টেবিলে এসে না বসা অবধি ভাতের থালা আনবেন না! কি না, ঘরের লক্ষী রাগ করবে। ঘরের জ্যান্ত লক্ষী না খেয়ে অফিস চলে যাক তাতে কোনো অসুবিধা নেই – ওঁনার বক্তব্য, মেয়েমানুষের শরীর, একটু কষ্ট সহ্য না করলে চলে? প্রায়দিনই কোনোরকমে নাকেমুখে জলন্ত গরম দুগ্রাস ভাত তুলেই পড়িমড়ি করে রোজকার বাঁধা রিকশায় স্টেশন ছোটে তিন্নি।ভাগ্য ভালো থাকলে ৭:৫৫র লোকালটা যদি পেয়ে যায় ও, ৮:৪৫র মধ্যে বিধাননগর স্টেশন পৌছোনো যায়। এরপর শেয়ার অটোর লাইনে আধাঘন্টা দাঁড়ালেও আরো ঘন্টাখানেকের মধ্যেই সেক্টর ফাইভ পৌঁছোনো যায়! গত দুইবছরের এক বাঁধাধরা রুটিন তা-ও যে মা কেন রোজ রোজ ইচ্ছে করে দেরী করায়, আজও বুঝে উঠতে পারে না তিন্নী!

হাতঘড়িটায় চটজলদি একবার সময়টা দেখে নেয়। ৭:৩৬। বাড়ি থেকে স্টেশন যেতে পাক্কা সাড়ে সাত মিনিট সময় লাগে। ওভার ব্রিজ পেরিয়ে তিন নম্বর প্ল্যাটফর্মের লেডিস কামরার সামনে অবধি দৌড়তে আরো চার মিনিট ৪৭সেকেন্ডস! মানে খাওয়ার জন্য ওর হাতে আছে আর মাত্র ছয় মিনিট। একটু জোড়েই এবার হাঁক পাড়লো তিন্নি

— আজ কি দেবে না খেতে? কখন থেকে ডাকছি?

— না গো নবাবপুত্রী! বিনী পয়সার ঝি ঘরে থাকতে তুমি আর কেন না খেয়ে চলে যাবে?

ঠক করে একটা স্টিলের থালা সামনে এসে পড়লো। একহাতা ভাত আর এক খাবলা আলুসেদ্ধ, ছাড়ানো খোসাটা থালাতেই পড়ে! জলন্ত গরম ভাতটা মাখতে মাখতে তিন্নি বললো

— আমি তো বলেইছিলাম রোজ রোজ কষ্ট করার দরকার নেই, অফিসের ক্যান্টিনে খেয়ে নেবো! তুমিই তো জোর করো বাড়ি থেকে খেয়ে যেতে।

— বলি কি আর সাধে? নয়তো মাইনের সবকটি টাকাই তো নিজের শখ আহ্লাদের পেছনে উড়িয়ে দিয়ে আসবে! এই যে হাজার টাকা গিয়ে এই কুর্তিটা কিনলি, একবার মনে পড়েছিলো ছোটো ভাইটার জন্য হাতে করে কিছু নিয়ে আসি? একটা স্বার্থপর পেটে ধরেছি আমি!

ভাত মাখতে যাওয়া নাড়াচড়া করা আঙুলগুলো থেমে গেল তিন্নির, মুখ অবধি পৌঁছোলো না। কান্নাটা উঠে আসতে আসতে গিলে ফেললো তারপর নীচু গলায় বললো – এটা তো আমার বোনাসের টাকা থেকে বাঁচিয়ে কিনেছি মা! মাইনের সাতাশ হাজার টাকা পুরোটাই তো তোমার হাতে তুলে দিই!

— তবে আর কি! উদ্ধার করেছো। মাসমাইনের টাকা হাতে তুলে দাও তাই তো ধরাকে সরা জ্ঞান করছো! মা তোমার দাসীবাঁদি, ভাই তোমার চাকর আর ওদিকে বাপ হয়েছে তেমন মেয়ে সোহাগী। ধিঙ্গি মেয়ের টাকায় বসে বসে খায়…..

টাকার খোঁটা আর শুনতে পারলো না তিন্নি, আর বাবার নামে একটা খারাপ কথা শুনলেই ওর গায়ে কেমন একটা বিচুটি ধরানো জ্বালা ধরে যায়। ভাতটুকু না খেয়েই হাত ধুতে উঠে গেল ও! ভাস্বতীদেবী তেড়ে এলেন বেসিন অবধি

— খেয়ে যা বলছি! টাকাটা কি মাগনা আসছে?

ধীরে সুস্থে অনেকক্ষন ধরে সাবান দিয়ে হাতটা ধুয়ে পিছন ফিরলো তিন্নি। অফিসের ব্যাগটা কাঁধে নিয়ে জুতো পড়তে পড়তে মনে মনে বললো — মাগনা আসছে না তো। ওটাই রোজগার করতে যাচ্ছি।

মেয়ে না খেয়ে চলে যাচ্ছে দেখেও স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলেন ভাস্বতীদেবী। স্নিকার্সের নিঃশব্দ আওয়জে ঘর থেকে নেমে বারান্দার হুইলচেয়ারে বসে থাকা বছর ষাটের কাঁচাপাকা দাড়ি গালে দুটি হামি খেলো তিন্নি। “আসছি বাবা! আজ কি আনবো তোমার জন্য?”

ক্ষীনকেশ বৃদ্ধ মৃদুস্বরে তিন্নির মাথায় হাত রেখে বললেন —- “আমার নাম করে দুটো মিষ্টি খেয়ে নিস মা অফিস পৌঁছেই, ছবি পাঠাবি তারপর আমি ওষুধ খাবো”।

চট করে উঠে পড়লো তিন্নি — দেরী হয়ে গেছে, আমি এলাম!

গলা ঝেড়ে কোনরকমে কথাগুলো বলেই উপচে পড়া চোখের জলটা সামলাতে সামলাতে রতনকাকুর রিকশায় উঠলো ও! একদৃষ্টে সেদিকে তাকিয়ে থাকতে থাকতে রঞ্জনবাবু বললেন —মেয়েটাকে আজকেও কিছু খেয়ে যেতে দিলে না?

—কি এমন বলেছি যে অত তেজ তোমার মেয়ের? তোমরা বাপবেটি তো খালি আমার দোষই দেখ! লাই দিয়ে মেয়েকে মাথায় তুলছো যেদিন ও মেয়ে তোমার মুখে জুতোর বাড়ি মেরে পালাবে সেদিন বুঝবে।

ঝাঁঝিয়ে উঠলেন ভাস্বতীদেবী। কিন্তু তেমন জোর পেলেন না গলায়। স্থলিত স্বরে রঞ্জনবাবু বললেন

— তিন্নির ওপর তোমার এত রাগ কেন ভাস্বতী? তিন্নি মেয়ে বলে? নাকি শুভদীপ তিন্নির মতো হলো না বলে?

উত্তর না দিয়ে ভাস্বতীদেবী ঢুকে গেলেন ঘরে। মেয়ের না খেয়ে যাওয়া শুকনো ভাতের থালাটা দেখে বুকটা মুচড়ে উঠলো! আহারে, সকাল সকাল মেয়েটাকে অত কথা না শোনালেই পারতেন হয়তো। মনটা ভার হয়ে ছেলেকে ঘুম থেকে তুলতে গেলেন ভাস্বতীদেবী।

**************************__*****************************

 

হাতের স্মার্টওয়াচের পিঁক পিঁক যান্ত্রিক স্বর আর হালকা ভাইব্রেশন জানিয়ে দিল , আজকের মতো বিশহাজার স্টেপস কমপ্লিট। এবার কিছু ফ্রী হ্যান্ড এক্সারাইজ করার পালা। ফুটবল খেলার গোলবক্সের ঠান্ডা ধাতব রডটার ওপর ছয় ফুটের ওপর লম্বা মেদহীন টানটান শরীরটা একবার পরীক্ষা করলো ওর ৮২কেজি শরীরের ভার নিতে পারবে কিনা। তারপর রডটা ধরে ঝুলে পড়লো। মাথা নীচে পা ওপরে করে বাদুরের মতো মিনিট তিন ঝুলে আবার স্বাভাবিক পজিশনে ফিরে এলো।মুখটা একটু লাল হয়ে এসছে, ঘাম দিচ্ছে হালকা। ডান হাতটা ওর বরাবরের দুর্বল। বামহাত দিয়ে রডটা ধরে সারা শরীরটা ঝুলিয়ে দিল আবার, হাতের পেশীগুলো টান টান হয়ে উঠলো। প্রতিটি শিরা উপশিরা ফেটে বেরোচ্ছে যেন। এবার ডানহাতের পালা। একটু থেমে তিনটে বড় বড় শ্বাস নিলো, তারপর শুধু ডানহাতের ওপর ভর দিয়ে ঝুলে পড়লো আবারও। একটু চিনচিন করে উঠল নিঃশ্বাস চেপে জোরে জোরে গুনতে লাগলো সিক্সটি – ফিফটিনাইন – ফিফটিএইট -ফিফটিসেভেন……

 

জিরো!

ইয়েস!!! হয়েছে তবে।

ভোরের হালকা লালচে আলোয় ময়দানের বৃষ্টি ভেজা ঘাসে উত্তেজনায় লাফাতে গিয়ে হালকা পিছলে গেলেন মেজর অভিমন্যু সেন! মাসখানেকের ছুটিতে কলকাতায় ফেরা বাঙালীর গর্ব মেজর অভিমন্যু সেনকে নিয়ে আজ সকালেই একটা বড়োসড়ো প্রতিবেদন ছাপা হয়েছে! যদিও সেই প্রতিবেদনে মেজর অভিমন্যু সেনের ফটো আলাদা, নামটাও আলাদা আর প্রতিবেদকের সাথে উনি যে ফোনে কথা বলেছেন, সেটাও এনক্রিপ্টেড। বিগত তিন বছর অরুনাচল প্রদেশের পোস্টেড, ভারতের দুর্গমতম রিমোট এরিয়ায় আর্মির দায়িত্বের পাশাপাশি মেজর অভিমন্যু সেনের আর একটা পরিচয় – উনি একজন ইন্ডিয়ান স্পাই, র-এর এজেন্ট। দেশের স্বার্থে ওঁনার পাসপোর্ট একাধিক, তাতে ওঁনার নাম, ঠিকানা বিভিন্ন। হিন্দি, বাংলা, মারাঠি, পান্জাবি , তেলেগুর পাশাপাশি আরো ৪-৫টি দেশিবিদেশি ভাষায় তুখোর মেজর অভিমন্যু সেনের বাড়ির ঠিকানা কেউ জানে না, ব্যক্তিগত জীবন কেউ জানে না। মেজর অভিমন্যু সেন একটা ছায়ামাত্র। দুর থেকে দেখা যায় কিন্তু ধরা যায় না।সুর্যের আলো আরো ছড়িয়ে পড়ার আগেই আর একবারের ময়দানের চক্কর লাগানো শুরু করলেন ট্র্যাকসুট আর হুডি পরা মেজর অভিমন্যু সেন। সাতটা বাজার আগেই বাড়ি ফিরে পিহুকে ঘুম থেকে ওঠাতে হবে, অনেক কাজ।

 

ক্রমশঃ(পরশু আবার)

© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।

সকল পর্বের লিঙ্ক~

Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n

Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n
**************************__*****************************

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here