#সূর্য_ডোবার_আগে
পর্ব-৩০
লেখিকা ~ #সুমন্দ্রামিত্র
কঠোরভাবে প্রাপ্তমনষ্কদের জন্য।
.
.
বেলা বাড়ছে, পাল্লা দিয়ে রোদের তাপ। তবে সরাসরি গায়ে এসে লাগছে না, হালকা হিমেল হাওয়া ভেসে আছে দিনের বেলাতেও। রাস্তাঘাটে ছড়িয়ে ছিটিয়ে বাঁশ, তেরপল। দেড় সপ্তাহ ধরে চলা বাঙালীর মহোৎসব উৎসব ফাইন্যালি শেষ, এবার ডেকোরেটর্সদের ফিরে যাওয়ার পালা। ব্যস্ত যানজটে প্রতিদিনের মিনিট দশের বাড়ি ফেরার রাস্তা আজ যেন অনন্ত পথ। রিকশা থেকে নেমেই বড় একটা শ্বাস নিয়ে নিজেকে প্রস্তুত করলো তিন্নি আসন্ন ঝড়ের সামনাসামনি হতে। এ ঝড়ে নুয়ে পড়লে চলবে না।
যেন কিছুই হয় নি। রোজকার মতোই বাড়ি ফিরছে তিন্নি, এমনি স্বাভাবিক দৃঢ় পায়ে, গেট পেরিয়ে উঠোনে কলতলা পৌঁছতে পৌঁছতেই ভাস্বতীদেবী চলে এলেন বারান্দায়। পাড়াপড়শী সকলকে জানান দিয়ে কর্কশস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন
—-ওখানেই দাঁড়াও! কোথায় গিয়েছিলে?
— অফিসে ইম্পরট্যান্ট কাজ পড়ে গিয়েছিলো, বলেছিলাম তো বাবাকে।
একবারও গলা কাঁপলো না, আজ যেন নিপুণ অভিনয়ে নেমেছে তিন্নি। ভাস্বতীদেবী একটু থমকে গেলেন তিন্নির দৃঢ় গলা শুনে, সেটা ঢাকা দেওয়ার চেষ্টাতেই গলার ঝাঁঝ আর একটু বেড়ে গেলো।
— তারপর? দুই দিন ধরে কোনো ফোন নেই, আমরা চিন্তা করে করে হয়রান হয়ে যাচ্ছি, দু পয়সা রোজগার করছো বলে কি সাপের পাঁচ পা দেখছো?
—- ফোনের চার্জার ছিল না সাথে।কাল সকালেও বাবাকে মেসেজ করে দিয়েছিলাম সেইজন্যই, যাতে অযথা চিন্তা না করো তোমরা। কাজ এসে গেলে এ ছাড়া আর কি করতে পারি আমি? রাত দেড়টায় বাড়ি ঢুকবো? নাকি এককথায় রেজিগনেশন দিয়ে দেব?
— দেখেছো? মেয়ের চোপা দেখেছো? মুখ পুড়িয়ে বাড়ি ঢুকছে, পাড়া প্রতিবেশী ছিছিকার করছে আর উনি…..
মায়ের কথা থামিয়ে দিলো তিন্নি, শান্ত গলায় বললো — পাড়া প্রতিবেশী তো আমি শনিবার অফিস যাওয়া নিয়েও ছি ছি করে মা! তবে তোমার কিছু জানার থাকলে আমার কলিগের নম্বর দিতে পারি যার বাড়িতে ছিলাম….. চিন্তা করো না, মেয়ে কলিগ সে।
—তিন্নি!!!
রঞ্জনবাবুর ভারী গলায় থমকে গেলো তিন্নি। বাবা কখন বারান্দায় চলে এসেছে খেয়ালই করে নি, নিজের মনে তর্ক করে যাচ্ছিলো। সংকুচিত হয়ে পড়ে চুপ করে গেলো তখনি।
— কি অসভ্যতামি এটা? মা’র মুখে মুখে তর্ক করো না, ক্ষমা চাও এখনই! তোমার ফোনে চার্জ ছিল না অন্য কারো ফোনে ব্যবহার করো নি কেন?
— সরি বাবা, আমি বুঝতে পারি নি, কাল সকালে তোমায় মেসেজ করে দেওয়ার পরও তোমরা এতটা চিন্তা করবে! কাজের চাপে মাথা কাজ করছিলো না!
চোখে চোখ মিলিয়ে মিথ্যে কথাগুলো বলতে পারলো না তিন্নি, মাটির দিকে তাকিয়ে ধীর স্বরে ঠোঁট দুটি নড়ে উঠলো ওর। মনে মনে ডুকরে কেঁদে উঠলো ” আমাকে ক্ষমা করে দাও বাবা! তোমাকে মিথ্যে বলতে চাই না …. কিন্তু সত্যিটাও যে তোমাকে বলতে পারবো না!”
— ভেতরে যাও এখন। ভাস্বতী, মেয়েটা সবে ঢুকলো বাড়িতে, বারান্দায় দাঁড়িয়ে পাড়ার লোক শুনিও না, যা বলার ঘরে বলো।
মা- মেয়ে কারোর দিকে না তাকিয়ে কথাগুলো বলে হুইলচেয়ার ঠেলে ভিতরে ঢুকে গেলেন রঞ্জনবাবু।
জ্বলন্ত চোখে তাকিয়ে থাকা ভাস্বতীদেবীকে পাশ কাটিয়ে রঞ্জনবাবুর পিছন পিছন তিন্নিও ঢুকে পড়লো ঘরে, সোজা বাথরুমে গিয়ে দরজা বন্ধ করে নিলো।
যুদ্ধের সবে শুরুও হয় নি, এখনই যে তিন্নির হাত পা কেঁপে অস্থির।
**************************__****************************
পিয়াসার সাথে কথা বলানোর দরকার পড়ে নি, তাও বিবেক দংশনে বুকের ভেতরটা ব্লাস্ট ফার্নেসের কয়লার মতো জ্বলছে যেন। মনের সাথে অনেক যুদ্ধ করে এক হঠকারী সিদ্ধান্তে উপনীত হলো তিন্নি, এই মিথ্যের বোঝা আর টেনে নিয়ে যেতে পারবে না ও। বাবাকে বলেই দেবে সত্যিটা। বড়োজোর কি হবে! বাবা রাগারাগি করবে, দুইদিন কথা বলবে না কিন্তু তিন্নির সকল বিপদে ঢাল হয়ে দাঁড়ানো দেবতার মতো মানুষটা নিশ্চয়ই ওকে বুঝবে – এই বিশ্বাসটুকু আছে তিন্নির। সবটা শুনলে বাবা নিশ্চয়ই তিন্নির পছন্দতে কোনো আপত্তি করবে না। বুক দুরুদুরু করছিলো তাও চব্বিশ বছরের নীতিশিক্ষা মাথায় রেখে তিন্নি ঠিক করলো- আজ রাতে অভিমন্যুর ফোন আসার অপেক্ষামাত্র, কাল সকালেই নিজের ভালোবাসার কথা বাবাকে জানিয়ে দেবে তিন্নি।
ধীর পায়ে মা-বাবার ঘরের দিকে এগোলো তিন্নি, সকালের এপিসোডটার জন্য ক্ষমা চাইতে। নক করে ঢোকার আগেই পা আটকে গেল মাটিতে।
— দুধ দিয়ে কালসাপ পুষছিলাম এতদিন! খাইয়ে-পরিয়ে, লেখাপড়া শিখিয়ে বড়ো করলাম…. ভেবেছিলাম একটা মানুষ তৈরী হবে তা নয়, স্বার্থপর, ধিঙ্গি মেয়ে এখন মা বাবার সাথে তর্ক করবে, যথেচ্চার করবে! আমি আর কোনো কথা শুনতে চাই না! তুমি মেয়ের বিয়ে দেবে, জানুয়ারিতেই! এসব কথা পাঁচকান হওয়ার আগেই এই মেয়েকে বাড়ি থেকে বিদায় করো নয়তো সমাজে মুখ দেখতে পারবো না!
কানের ভেতর কে যেন গনগনে লোহার শলাকা ঢুকিয়ে দিল। সম্ভাব্য সব রকম পরিস্থিতির কথা ভেবে রেখেছিলো তিন্নি কিন্তু বিয়ের কথা মাথাতেও আসে নি। ঝড়ের বেগে মা বাবার ঘরে ঢুকে পড়লো ওনাদের কথার মাঝেই, যা আজ অবধি কোনোদিন দুঃসাহস অবধি করে নি তিন্নি।
— কিসের বিয়ে? কার বিয়ে? আমি তো এখন বিয়ে করবো না!
তিন্নিকে আচমকা এভাবে ঘরে ঢুকতে দেখে প্রায় ঝাঁঝিয়ে উঠলেন ভাস্বতীদেবী
— তোমার মতামত জানতে চাওয়া হয় নি এখানে। যা বলবো চুপচাপ শুনবে নয়তো ঠাঁটিয়ে একটা থাপ্পড় মারবো!
— আহ্ ভাস্বতী! কি বলছো কি? তিন্নি তুই নিজের ঘরে যা, বড়োদের কথায় নাক গলাস না।
চরম উত্তেজনায় থরথর করে তিন্নির হাত কাঁপছে, রঞ্জনবাবুর দিকে তাকিয়ে বললো — বাবা… তুমি মা’কে কিচ্ছু বলবে না? কি বলছে মা এসব আমার বিয়ে নিয়ে?
রঞ্জনবাবুকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই রেগেমেগে চেঁচিয়ে উঠলেন ভাস্বতীদেবী — বিয়ে তোমাকে করতেই হবে আর সেখানেই করতে হবে যেখানে আমি বলবো।
চড়াৎ করে মাথায় রক্ত চড়ে গেলো তিন্নির, একটু আগের শান্ত থাকার প্রমিস ভুলে গিয়ে মায়ের চোখে চোখ রেখে বললো — আমি “না” বললে কি জোর করে আমার বিয়ে দেবে?
একমুহূর্ত থমকে গিয়ে বাঁজখাই গলায় দ্বিগুন জোরে চেঁচিয়ে উঠলেন ভাস্বতীদেবী — হ্যাঁ তাই দেবো! কোথায় না কোথায় কার সাথে রাত কাটিয়ে মুখ পুড়িয়ে এসেছিস আবার বড়ো বড়ো কথা!
তারপর ঘুরে রঞ্জনবাবুর দিকে ফিরলেন।—- আর এই যে তুমি! এখনো ঠুঁটো জগন্নাথ হয়ে বসে থাকবে নাকি? আর একটু মাথায় তোলো মেয়েকে? মেয়ে আমার উচ্চশিক্ষিত, মেয়ে আমার কালচারাল, এ পরিবারে আমরা নাকি ওর যোগ্য সম্মান দিয়েই না, আরো কতো কি? এখন হলো তো? পাড়া প্রতিবেশী সবার সামনে মুখে চুনকালি মাখিয়ে দিলো!
নিজের মায়ের কাছ থেকে নোংরা কথাগুলো শুনতে শুনতে অপমানে তিন্নির প্রায় চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো। তীব্র অভিমানে ফুঁসে উঠলো — দুদিন অফিসের কাজে বাড়ি না ফিরলেই তোমরা জোর করে আমার বিয়ে দিয়ে দেবে? আর বাবা, তুমিই বা মা’কে কিছু বলছো না কেন?
— আমরা কি তোর খারাপ চাইবো তিন্নি?
ধীর স্থিতধী স্বরটা ভেসে আসতে অবাক হয়ে তাকিয়ে রইলো তিন্নি,রঞ্জনবাবুর দিকে।
এতদিন তিন্নির ধারণা ছিল বাবার কাছে সবকিছু খুলে বলতে পারে ও, বাবা ওর বন্ধুর মতো। সমবয়সী, সমমনন। কিন্তু রঞ্জনবাবুও ওর বিয়ে নিয়ে এরূপ আগ্রহান্বিত দেখে তিন্নির সকল বিশ্বাস আজ যেন চূর্ণ বিচূর্ণ হয়ে গেলো। বালির বাঁধের মতো ঝুরঝুর করে ভেঙে পড়ছিলো তিন্নির সকল আত্মবিশ্বাস। এই পরিস্থিতিতে কি করে বলবে অভিমন্যুর কথা?
সম্বিৎ ফিরে এলো রঞ্জনবাবুকে উদ্দেশ্য করে ভাস্বতীদেবীর পরবর্তী বিষাক্ত কথাগুলোতে, তেঁতুল বিছের জ্বালাময়ী কামড়ের মতো তিন্নির গায়ে এসে ফুটলো শব্দগুলো
— সব তোমার জন্য! মেয়েকে আস্কারা দিয়ে মাথায় তুলেছো তুমি। রোজগেরে মেয়ের সাতখুন মাফ? একা একা ঘুরতে যাচ্ছে, পরপর দু’রাত বাড়ির বাইরে কাটিয়ে এসেছে … এসব খবর একবার ছড়িয়ে পড়লে কোন পরিবার ওকে ছেলের বৌ করে নিয়ে যাবে? না না! যা করার এখনই করো, আজই!
কর্কশ আওয়াজে ল্যান্ডফোনটা বেজে উঠেছে ততক্ষনে।
— ফোন বাজছে ভাস্বতী, তুমি যাও। আমি তিন্নির সাথে কথা বলবো।
—- মেয়েকে অনেক ছাড় দিয়েছো এতোদিন, এবার লাগাম পরাও। আমাদেরও মানসম্মান বলে একটা ব্যাপার আছে।
গজগজিয়ে কথাগুলো ছুঁড়ে দিয়ে ঘর ছেড়ে ভাস্বতীদেবী বেরিয়ে গেলে স্থির গলায় রঞ্জনবাবু তিন্নিকে উদ্দেশ্য করে বললেন
— বল এবার, কি বলার আছে তোর।
রাগে অভিমানে গলা বুজে আসছিলো তিন্নির। কি ভেবে এই ঘরে এসেছিলো আর কি হয়ে গেলো! শেষে বাবাও কি মনে করে বিয়েটাই তিন্নির জীবনের একমাত্র লক্ষ্য? কান্না পাচ্ছে না, শুধু অদ্ভুত একটা মানসিক ক্লান্তি ঘিরে ধরছে ওকে। কি দিয়ে শুরু করবে, কিছুই বুঝে উঠতে পারলো না! মুখ নিচু করে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে রইলো তিন্নি! মাথা কাজ করা বন্ধ করে দিয়েছে ওর, শরীরের প্রতিটি রোমকূপ, প্রতিটি কোষ চেঁচিয়ে উঠছে তীব্র প্রতিবাদে।
চুপ করে কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে ভাবনাগুলো গুছিয়ে নিয়ে জীবনে এই প্রথমবার বাবার সামনাসামনি গলা তুলে কথা বললো তিন্নি
— না বাবা! এভাবে জোর করে যখন খুশি আমাকে না জানিয়ে তোমরা আমারই বিয়ে ঠিক করতে পারো না। আমার ইচ্ছে অনিচ্ছে বলেও একটা ব্যাপার আছে! আমি…. আ-মি এখন বিয়ে করবো না!
তিন্নির এরূপ উগ্র ব্যবহারে রঞ্জনবাবু অবাক হলেও নিজেকে সামলে নিলেন, গলার স্থিরতা বজায় রেখেই বললেন
— একদিন না একদিন সবাইকেই বিয়ে করতেই হয় তিন্নি! এটাই নরমাল, সমাজের নিয়ম! আমাদেরও বয়স হচ্ছে, ভালো মন্দ কিছু হয়ে যাওয়ার আগে তোর একটা ব্যবস্থা করে দিলে… তোকে নিজের সংসারে থিতু করে দিলে আমাদেরও চিন্তা কম হয়!
ফুঁসে ওঠা রাগে চোখ ফেটে জল বেরিয়ে এলো তিন্নির। চেঁচিয়ে কথা বলা ওর স্বভাব নয়, চেঁচাতে গিয়ে কাশির দমকে গলা বুজে আসতে ভাঙা গলায় মনের প্রশ্নগুলো উজাড় করে দিলো
— এটা আমার সংসার নয় বাবা? বিয়ে হয়ে গেলে তোমরা আমার জন্য চিন্তা করা বন্ধ করে দেবে?
—- বাপের বাড়ি তো দুদিনের রে মা! স্বামীর ঘরই তো মেয়েদের আসল বাড়ি। বড়ো হয়েছিস এবার তো তোর দায়িত্ব নেওয়ার জন্য একজনকে ঠিক করে দিতেই হবে, যে তোর দায়িত্ব নেবে, তোকে ভালো রাখবে…..আর কতদিন আমরা তোর দায়িত্ব নেবো?
বিস্ফারিত চোখে তিন্নি তাকিয়ে রইলো রঞ্জনবাবুর দিকে। অনবরত রবীন্দ্রনাথ-জীবনানন্দ আউড়ে যাওয়া মানুষটার মুখে বাংলা সিনেমার টিপ্যিকাল চরিত্রাভিনেতা বাবাদের স্টিরিওটিপিক্যাল ডায়লগ শুনে নিজের কানকেও বিশ্বাস হচ্ছিল না যেন। অব্যক্ত অভিমানে স্তব্ধ হয়ে দাঁড়িয়ে থেকে ধীরে ধীরে বললো
—- আমার “দায়িত্ব” দেবে আরএকজনের ওপর? কিসের দায়িত্ব? দুইবছর ধরে দেশের টপ কোম্পানিতে চাকরি করছি, বিজনেস মিটিং হ্যান্ডেল করছি, আমার দ্বিগুন বয়সী লোকের সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে মিলিয়ন ডলারের প্রজেক্ট সাবমিট করছি, তারপরও আমার দায়িত্ব নিতে আর একটা লোকের দরকার পড়ে?
— বোকার মতো কথা বলছিস তিন্নি। চাকরি করা, স্বাবলম্বী হওয়া আলাদা জিনিস, তারপরও তোর ভালোমন্দর দায়িত্ব তো আমাদের ওপর থেকেই যায়!
— তুমি এমন বলছো বাবা?!
— এবার কিন্তু তুমি মুখে মুখে তর্ক করছো তিন্নি।
রেগে গেলে রঞ্জনবাবু তিন্নিকে তুমি সম্বোধন করেন। তিন্নি ঘাবড়ালো না, মুখ নিচু করেই বললো
— এতদিন তোমাদের সব কথা মুখ বুঝে মেনে এসেছি! স্কুল-কলেজের কথা বাদ দাও তখন না হয় আমি ছোট ছিলাম কিন্তু এখন তো আমি অ্যাডাল্ট! একবার আমাকে জিজ্ঞেস করার প্রয়োজনটুকুও করলে না যে আমি কি চাই? তোমাদের কাছে কি আজও আমার মতামতের কোনো দাম নেই?
বলতে বলতে রঞ্জনবাবুর পায়ের কাছে বসে পড়ে কান্নায় অভিমানে ভেঙে পড়লো তিন্নি।
নিজের গোপন প্রেমের থেকেও আরো বেশি করে বুকে বাজছিলো অপমান আর অসহায়তা। একটি মেয়ে হয়ে জন্মানোর অসহায়তা। যে মেয়ে বাইশ বছর বয়স থেকে বিনা প্রশ্নে সংসার খরচ সামলাতে পারে, বেকার ভাইয়ের দায়িত্ব নিতে পারে, আন্তর্জাতিক অফিসে ভালো বেতনের চাকরি করতে পারে, অফিসের বিজনেস মিটিং করতে পারে, নিজের দ্বিগুন বয়সী সহকর্মীর সাথে সমান তালে তাল মিলিয়ে কাজ করতে পারে তারপরও কেন তার ব্যক্তিগত মতামত, পছন্দ অপছন্দ বলে কিছু থাকতে নেই? কেন একজন অ্যাডাল্ট হয়েও নিজের বিয়ে করা আর না করাটা ওর মতামত অনুযায়ী হতে পারে না?
টপটপ করে কয়েকফোঁটা জল পড়লো মাটিতে, রঞ্জনবাবু ওর মাথায় হাত রেখে স্নিগ্ধ স্বরে বললেন
— কি হয়েছে রে মা? বিয়ের কথা শুনে এতো কাঁদছিস কেন? আমায় বল?
কান্নার দমক সামলে কোনোরকমে মুখ খুললো তিন্নি
— এখন আমি বিয়ে করতে চাই না বাবা।
— কেন? তোর কি কাউকে পছন্দ?
একটু আগেই তিন্নি ঠিক করেছিল বাবাকে জানিয়ে দেবে অভিমন্যুর কথা। কিন্তু এই মুহুর্তে গরম লোহার চিমটে দিয়ে কে যেন ওর জিভ টেনে ধরলো, বেজে উঠলো আত্মসম্মানবোধ। যেন ওর ইচ্ছে অনিচ্ছের তখনই গুরুত্ব দেওয়া হবে যখন অন্য আর একটি পুরুষ তিন্নির “দায়িত্ব” নেওয়ার জন্য প্রস্তুত! শিরা উপশিরা দিয়ে বয়ে যাওয়া রক্তস্রোত চিৎকার করে উঠলো অভিমন্যুর নাম, শুধু জিভ অসার হয়ে রইলো। তীব্র স্বাভিমানতায় একটি শব্দও বেরোলো না ওর মুখ দিয়ে।
— কি রে? বল?
আবার জিজ্ঞেস করলেন রঞ্জনবাবু।জলভরা চোখ তুলে তাকালো তিন্নি
— এখনই বিয়ে করাটা কেন জরুরি বাবা?
— একদিন না একদিন বিয়ে তো করতেই হবে রে পাগল মেয়ে, তবে এখন কেন নয়? আমরা তোর ভালো চাই, নিজের সংসারে তোকে সুখী দেখতে চাই। কালকেই তো আর তোর বিয়ে হয়ে যাচ্ছে না, কথাবার্তা শুরু করলে…….
রঞ্জনবাবুর কথা শেষ হওয়ার আগেই তিন্নি থামিয়ে দিলো ওনাকে, অবরুদ্ধ স্বরে বললো
— এখন না! এখন বিয়ে করা আমার পক্ষে সম্ভব নয়।
— কেন? কেন নয় বল?
প্রশ্নদুটো করেই থমকে গেলেন রঞ্জনবাবু। গত কয়েকদিন ধরে তিন্নির খাওয়াদাওয়ায় অরুচি, মুখ শুকিয়ে শুকিয়ে পুজোর চারদিন কাটানো, তারপর আজ এভাবে ভেঙেপড়া, অনুভূতির বিস্ফোরণগুলো বড্ডো অচেনা। তবে কি ভাস্বতী যা ভাবছেন তাই? মেয়েটা কবে এতো বড়ো হয়ে গেলো যে বাবাকেও মিথ্যে বলতে শিখে গেলো? ধীরে ধীরে মেয়ের অবনমিত চিবুক তুলে ধরে স্থির গলায় জিজ্ঞেস করলেন
— তুই কি কাউকে পছন্দ করিস তিন্নি? এই দুদিন অফিস না গিয়ে তুই কি অন্য কোথাও কিছু …….
কথাগুলো শেষ করতে পারলেন না রঞ্জনবাবু, চোখে চোখ রাখতে পারলো না তিন্নি, কান্নাভেজা স্বরে কাতর আর্তি ফুটে উঠলো গলায়
— বিশ্বাস করো বাবা, আমি এমন কিছু করি নি যাতে তোমার সম্মানের কোনো ক্ষতি হয়! নিজেকে গুছিয়ে নিতে আমায় একটু সময় দাও বাবা, মাত্র দুইটি মাস – ডিসেম্বর অবধি! সব বলবো তোমায়!
মেয়ের কথার মর্মোদ্ধার করতে পারলেন না রঞ্জনবাবু, বিস্মিত হয়ে বললেন
— কেন? ডিসেম্বরই কেন?
ফুঁপিয়ে উঠলো তিন্নি
—- আমার ওপর তোমার কি একটুও বিশ্বাস নেই, বাবা?
মর্মরমূর্তির মতো নিশ্চল হয়ে রঞ্জনবাবু বসে রইলেন দেখে এবার ডুকরে কেঁদে উঠলো তিন্নি
—- বাবা প্লিজ, কিছু একটা বলো। মা’কে আটকাও! তুমিও চুপ থাকলে আমি কার কাছে যাবো?
একটা শব্দও বেরোলো না মুখ দিয়ে, মেয়ের মাথায় হাত রেখে স্তব্ধ হয়ে বসে রইলেন রঞ্জনবাবু।
**************************__****************************
শ্রীরামপুরের ফিরিঙ্গিডাঙার আচার্য্যবাড়িতে কেমন যেন থমথমে পরিবেশ আজ। নিস্তব্ধতার গুমোট কালো চাদরে ঢেকে আছে বাড়িটি আর তার মানুষগুলোও। সারা দুপুর বিকেল সন্ধ্যে চলেছে রাগারাগি, কান্নাকাটি আর অশান্তির পালা, মুখে কুলুপ এঁটে চুপ করে সব গালাগালি হজম করে নিয়েছে তিন্নি, শুধু একটি ফোনের অপেক্ষায়। এক একটি মিনিট যেন এক একটি ঘন্টা! হাতে ফোন নিয়ে শূন্যচোখে বসে আছে তিন্নি, কিন্তু আজ যেন সময় কাটছেই না। ঘড়ির কাঁটা থমকে আছে একই ঘরে। অবশেষে ঠিক রাত এগারোটায় বহুপ্রতীক্ষীত ফোনটি এলো। গভীর গলাটি একটু চিন্তিত
— শরীর ঠিক আছে সোনা?
— হুমম।
— রাস্তায় কোনো অসুবিধে হয় নি তো?
— নাহহ্।
— বাড়িতে কি বেশি কিছু …..
প্রিয় মানুষটির গলার আওয়াজ শুনেই সারাদিনের সকল অনুযোগ, অভিযোগ চোখের জল হয়ে ডুকরে বেরিয়ে আসতে চায়, প্রাণপনে ঠোঁট কামড়ে সে কান্না চেপে নিল তিন্নি। অভিমানী কান্না চাপতে এককথায় উত্তর সারছিলো কিন্তু এবার আর পারলো না। ভেঙে চুরমার হয়ে যাওয়ার আগের মুহুর্তে কান্নাচাপা অবরুদ্ধ স্বরে বলে উঠলো
— অভিমন্যু? আজ অনেক মিথ্যে বলেছি, আর আমাকে মিথ্যে বলতে বাধ্য করো না প্লিজ।
কিছু না বলেও সব বলা হয়ে গেলো একটি কথায়। কয়েকপল অসহায় নীরবতা, অদৃশ্য রেডিওওয়েভের মধ্যে দিয়ে দুইপ্রান্তে বয়ে চলেছে পাশে না থাকার অক্ষমতার নিস্তব্ধ অভিশাপ। গভীর নিঃশ্বাস ফেলে অভিমন্যু ধীর গলায় বললো
— সীমন্তিনী? সব কষ্ট কি তোমার একার?
ফুঁপিয়ে উঠলো তিন্নি — জোর করো না অভিমন্যু, প্লিজ। আমি ঠিক সামলে নেবো।
পরিবারের প্রতি অভিমানে দাউদাউ করে জ্বলতে থাকা বুকের ভেতর চন্দনের স্নিগ্ধ প্রলেপ লাগিয়ে দেওয়ার মতো শান্ত গলায় অভিমন্যু বললো
— আই নো দ্যাট সোনা! আমি জানি ইউ আর স্ট্রং, তুমি সবকিছু সামলে নেবে। তাও, যদি কোনোভাবে আমি হেল্প করতে পারি… প্রমিস মি, ইউ উইল লেট মি নো!
চুড়ান্ত ভালোবাসা আর কষ্ট মেশানো দু’এক ফোঁটা চোখের জল ভিজিয়ে দিলো বালিশ, তারপর খুব ধীর স্বরে তিন্নি বললো
— এতো প্রমিস বোধহয় আমি রাখতে পারবো না অভিমন্যু। তুমি শুধু আমার সাথে থেকো, তাহলেই হবে।
গভীর একটা দীর্ঘশ্বাস পড়লো ওপ্রান্তে, ভারী গলাটা তারপর বলে উঠলো — ও.কে। আ্যজ ইউ উইশ।
কিছুটা সময় দুজনের কেউই কথা খুঁজে পেলো না। তারপর অভিমন্যু একটু ইতস্তত করে কেমন অন্যরকম একটা স্বরে বললো
—- কাল সারাদিন একটা কথা তোমায় বলা হয় নি। ট্রুলি স্পিকিং বলতে “চাই নি” …. বললে হয়তো তোমার মুড্ খারাপ হয়ে যেত।
সারাদিনের সকল অপমান লাঞ্ছনা আর মা বাবার ওপর রাগ ভুলে গিয়ে ধক্ করে উঠলো তিন্নির বুকের ভেতরটা। শিঁড়দাঁড়া দিয়ে বয়ে গেলো ছমছমে শীতল একটা তড়িৎপ্রবাহ। রেসপন্স করতে ভুলে গেল তিন্নি, একটু থেমে নিস্পৃহ শান্ত গলায় অভিমন্যু বললো
— এ’কয়দিন নিউজপেপার থেকে একটু দূরে থেকো।
দুর্গাপুজোর নবমীর রাত থেকে পরপর তিনরাত যখন অভিমন্যুর ফোন আসে নি, চারিদিকে ঢাকের বোল আর পাড়ার পুজো প্যান্ডেল ঘিরে আলোর রোশনাইয়ের মধ্যে থেকেও তিন্নি ছিল সেই আনন্দঘন মুহূর্তগুলি থেকে থেকে কয়েকশ যোজন আলোকবর্ষ দুরে! সেই ৬৫ ঘন্টার সিকিমের সীমান্তে সামান্যতম অশান্তিও হয়েছে কিনা – ভালো মন্দ যাহোক কিছু একটা খবরের আশায় সারা দিনরাত সকল অনলাইন নিউজচ্যানেলের ওয়েবসাইট আর টুইটারে গরুখোঁজা খুঁজে গিয়েছিলো তিন্নি! মিশন শেষ হওয়ার পর সেই যে অভিমন্যু ফোন করেছিল তারপর থেকে গত বাহাত্তর ঘন্টায় আর একবারও কোনো খবরের কাগজে চোখ বোলায় নি তিন্নি। কি হয়ে গেছে এই কটা ঘন্টায়? চরম আশংকায় গলা শুকিয়ে আসার আগের মুহূর্তে অস্ফুটে বললো
— কেন?
— জাস্ট ফর প্রিকশন। অনর্থক চিন্তা বাড়বে। আর…..
ঠান্ডা নিস্পৃহ স্বর অভিমন্যুর, কোনো আবেগ নেই তাতে। যে স্বর বারবার তিন্নির বুকে শীতল কাঁপন তুলে দেয়। হাজার একটা সম্ভাবনা আর প্রশ্ন তিন্নির মাথায় ছিনেজোঁকের মতো কিলবিল করে ওঠার আগেই একটু ইতস্তত করে অভিমন্যু আগের কথার রেশ টেনে বললো
— ইটস বিকামিং বিট সিরিয়াস আউট হিয়ার।কয়েকদিন হয়তো নিয়মিত ফোন করতে পারবো না। চেষ্টা করবো কিন্তু হয়ে উঠবে না।
অজানা ভয়ে বুকের ভেতরটা ঢিপঢিপ করে উঠলো তিন্নির, অসহ্য একটা ব্যাথা পেট থেকে পাকিয়ে পাকিয়ে সারা শরীরে ছড়িয়ে পড়ছে। কোনো কথা বেরোলো না মুখ ফুটে, যেন কান্নাও ভুলে গেছে ও। অভিমন্যুর ভারী গলাটা এবার আর একটু কঠিন, যেন শীতল সতর্কবাণী
— আ্যন্ড রিমেম্বার ইউ প্রমিসড মি, যা’ই হয়ে যাক না কেন, আর তুমি আসবে না।
বোবামুখে চাদর গুঁজে ফুঁপিয়ে উঠলো তিন্নি, উত্তরের অপেক্ষায় কয়েক সেকেন্ড নিস্তব্ধ থেকে গভীর একটা শ্বাস ফেলে অভিমন্যু বললো
— নিজেকে শক্ত করো সীমন্তিনী! বলেছিলাম না, সামনে আরো কঠিন সময় আসবে?
প্রচন্ড ঝড়ের আগেও বোধহয় এমনই নিস্তব্ধতা বিরাজ করে। দুইদিনের সুখস্বপ্ন ভুলিয়ে দিয়েছিল বাস্তব, বর্ডারে পোস্টেড্ ফৌজের জীবনে হলিডে নেই, প্রেম নেই! আছে শুধুই দেশমাতৃকার রক্ষার ভার, অটল নিষ্ঠা আর কর্ত্যব্য।
বোধকরি নিশ্বাস নিতেও ভুলে গিয়েছিলো তিন্নি! অনেকটা সময় পেরিয়ে যাওয়ার পর নিজের সম্বিৎ ফিরে পেয়ে চোখের জলগুলো মুছে নিলো, কোন এক অসীম সাহসে মনটা শক্ত পাথরে বেঁধে, গলা থেকে কান্নার আভাসটুকুও মুছে ফেলে দৃঢ় স্বরে বললো
— ইটস ও.কে। ডু ইওর জব, আমি অপেক্ষা করে থাকবো।
দুপ্রান্তে একসাথে ঠিকরে বেরোনো ঘন দীর্ঘশ্বাসের সাথে মিশে থাকলো পাশে থাকার নিঃশব্দ অঙ্গীকার, নীরব ভালোবাসা বয়ে গেল ফোনের বেতারতরঙ্গের মধ্যে দিয়ে।
কয়েক সেকেন্ড পর অভিমন্যু ফোন রেখে দিলে দুরুদুরু বুকে গুগুল নিউজ খুললো তিন্নি ….. তারপর বিবিসি, টাইমস নাউ, এবিপি, NDTV, ZEE আর যত নিউজ চ্যানেল আছে, সব। তিনদিনের নিস্তব্ধতার পর “দ্য বিগেস্ট আউটব্রেক”; পাতার পর পাতা, চ্যানেলের পর চ্যানেলে একই নিউজ। টুইটার-ফেসবুকে ট্রেন্ডিং হ্যাশট্যাগ, সব মিডিয়াতেই একটাই খবর বারবার ফ্ল্যাশ হচ্ছে
“সিকিম সীমান্তে গোপন ঘাঁটি তৈরির চেষ্টা আটকে দেওয়ায় গর্জন শুরু চিনের।“
“সিকিমে সীমান্ত লঙ্ঘন চিনের, দুই বাহিনীর মধ্যে তুমুল ধস্তাধস্তি।”
“গত চব্বিশ ঘন্টায় ইন্দো চীন ডোকা’লা সীমান্তে ‘লাইন অব অ্যাকচুয়াল কন্ট্রোল’ (এলএসি) এরিয়াতে ভারতীয় এবং চিনা বাহিনীর তৎপরতা আচমকা বেড়ে গেছে। ’৬২-র ভারত-চিন যুদ্ধ আর ২০১৩ সালে জম্মু-কাশ্মীরের লাদাখে ২১ দিনের টানাপড়েনের পর দু’দেশের মধ্যে এত দিন ধরে উত্তেজনা জিইয়ে রয়েছে এই প্রথম। দু’দেশই সীমান্তে বিশাল বাহিনী পাঠিয়েছে এবং তারা এখন মুখোমুখি অবস্থানে। এই পরিস্থিতিতেই আজসিকিম গেলেন ভারতের সেনাপ্রধান জেনারেল বিপিন রাওয়াত। সেনা সূত্রে জানানো হচ্ছে, জেনারেল রাওয়াতের এই সিকিম সফর আসলে রুটিনমাফিক। কিন্তু ভারত-ভুটান-চিন সীমান্তে উত্তেজনা আচমকা যে ভাবে বেড়েছে, তার প্রেক্ষিতে সেনাপ্রধানের সিকিম যাওয়া এবং বাহিনীর প্রস্তুতি ও বিন্যাস খতিয়ে দেখার কর্মসূচিকে বিশেষ তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞরা। “
পড়তে পড়তে গলার কাছে কি যেন একটা দলা পাকিয়ে উঠছিলো তিন্নির, শরীর গুলিয়ে উঠলো। অসহ্য যন্ত্রনায় মাথার চুলগুলো দুহাতে খামচে ধরে চোখ বন্ধ করে নিলো তিন্নি, ঠোঁট কামড়ে রক্ত বার করে দিলো তাও শান্তি পেলো না। দিনকয়েক ভালোবাসার যুদ্ধে জিততে জিততে তিন্নি ভুলে গিয়েছিলো একটি অমোঘ বাস্তব ~ ভালোবাসার মানুষটি যে দেশের জন্য যুদ্ধ লড়তে ব্যস্ত। ওল্টাতে লাগলো মনের পাতা ……….. গত ছত্রিশ ঘন্টা অভিমন্যুর সাথে গ্যাংটকে কাটানো প্রতিটি মুহূর্ত, অভিমন্যুর প্রতিটি স্পর্শ, প্রতিটি চুম্বন, প্রতিটি চোখের দৃষ্টি পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে মনে পড়ছিলো তিন্নির, অনুভব করতে পারছিলো আর ভাবতে ভাবতেই ওর চোখ দিয়ে গড়িয়ে আসা অজস্র নিঃশব্দ নোনতা গরম জলে ভিজে যাচ্ছিলো বিছানার চাদর-বালিশ। বুকের ভিতরের পাঁজরগুলো রসিয়ে রসিয়ে কাটছে কে যেন ইলেকট্রিক করাত দিয়ে! হাহাকারে ভরে উঠছিলো হৃদয় “আর কি দেখা হবে?” “এই দেখা হয়েই কি শেষ দেখা ছিল?” ঈশ্বরের ইচ্ছায় আর কত কষ্ট পাবে তিন্নি “ভালোবাসা” নামক অপরাধটি করে?
আকুল কান্নায় ভেঙে পড়তে পড়তে আবারো সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের কাছে কাতর প্রার্থনা করতে লাগলো তিন্নি “ওকে দেখো ভগবান, ওকে ভালো রেখো। যা পারো শাস্তি আমাকে দাও, কিন্তু ওকে অক্ষত রেখো। প্লিজ ভগবান, ওর যেন কিছু না হয়। ওর কিছু ক্ষতি হওয়ার আগে আমাকে উঠিয়ে নিও ঠাকুর, প্লিজ।”
সেই রাতে তিন্নির চোখে আর ঘুম এলো না। হয়তো দুইহাজার কিলোমিটার দূরে নামহীন শীতল পার্বত্য উপত্যকায় আর একজন পাথরদিল ইমোশনলেস আনরোমান্টিক ভূতও নির্ঘুমেই কাটিয়ে দিয়েছিলো সারা রাত।
.
.
.
তিনদিন পর তিন্নির অফিসে একটা কুরিয়ার প্যাকেজ এলো ওর নামে, প্রেরকের কোন নাম বা ঠিকানার কোন উল্লেখ নেই। বেশ ভারী বক্স। নাড়িয়ে চাড়িয়েও কিছু বোঝা যায় না ভেতরে কি আছে। অনেকটা কিন্তু কিন্তু করে প্যাকেজটা ওখানেই খুলে ফেললো তিন্নি তারপর ডেলিভারী বয়কে অবাক করে দিয়ে দুই চোখভর্তি জল নিয়ে হেসে ফেললো জোরে।
.
.
.
.
কি ছিল সেই প্যাকেজে? The Adventures of Tintin – চব্বিশটি বইয়ের অরিজিনাল কপি, একসাথে এক প্যাকেজে। ভিতরে একটা ছোট্ট নোট
~ এই’কয়দিন মিসেস বিয়াঙ্কার মন ভালো রাখার জন্য।
From ক্যাপ্টেন (মেজর হ্যাডক)
.
.
.
.
সব ভালোবাসা সমান হয় না, সব লাভ লেটারে “I LOVE YOU” লেখা থাকে না। 💋
ক্রমশঃ
© সুমন্দ্রা মিত্র। ভালো লাগলে নামসহ শেয়ার করবেন।
খবরসূত্র ইন্টারনেট। অনুগ্রহ করে একে সত্য কাহিনী বলে ভ্রম করবেন না।
***********************__******************************
সকল পর্বের লিঙ্ক~
Video Teaser
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145475543838322/?vh=e&d=n
Part 1
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145129087206301/?d=n
Part 2
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/145859077133302/?d=n
Part 3
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146221053763771/?d=n
Part 4
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/146595433726333/?d=n
Part 5
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/147293876989822/?d=n
Part 6
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148075966911613/?d=n
Part 7
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148530310199512/?d=n
Part 8
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/148951006824109/?d=n
Part 9
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/149405760111967/?d=n
Part 10
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/150313546687855/?d=n
Part 11
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151106323275244/?d=n
Part 12
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/151923336526876/?d=n
Part 13
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/152353663150510/?d=n
Part 14
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/154065792979297/?d=n
Part 15
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/156163186102891/?d=n
Part 16
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157132182672658/?extid=QdVQFGSjLzQUsE31&d=n
Part 17
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/157444422641434/?extid=fI3jIc0PCiYXDa0N&d=n
Part 18
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158095955909614/?extid=1E2JOZfMCmqscBoi&d=n
Part 19
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/158831902502686/?extid=R8zo6L2l274CIQ7r&d=n
Part 20
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/159626782423198/?extid=0e8jrLLhsuLqgsQX&d=n
Part 21
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160047349047808/?extid=e9DIdFXAkqxTg77U&d=n
Part 22
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/160963752289501/?extid=EgYDh0z3hVr5TCBY&d=n
Part 23
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/161833698869173/?extid=gRK0HHMoLW0bu0gK&d=n
Part 24
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/162740122111864/?extid=KIR9o3zetBHgH9mt&d=n
Part 25
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163061178746425/?extid=fhzBxEjnlA7n6Ulu&d=n
Part 26
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/163695728682970/?extid=tm0Y81ykORQhpsq9&d=n
Part 27
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164305438621999/?extid=WsYE2BjXkYvPmqyF&d=n
Part 28
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/164941361891740/?extid=Ck5D6rJFfhyP5vvH&d=n
Part 29
https://www.facebook.com/110448980674312/posts/165252361860640/?extid=Nq4U03rtVoPWvXTe&d=n