সেঁজুতি পর্ব_১৮

0
1829

#সেঁজুতি(পর্ব_১৮)
#লেখা_সুমাইয়া_আক্তার_মনি

আশিকের কথায় চুপ হয়ে যায় সাওন। আশিক চুপচাপ মুখের দিকে তাকিয়ে আছে, উত্তরের আশায়।

সাওন সান্ত্বনা দিয়ে বলল,“ কিছুদিন পরে আসবে। ”

আশিক চুপচাপ বললো,“ এবারে আমি মামীর কাছে যাবো না। আম্মু আর খালামনি নিষেধ করেছে।”

সাওন দাঁতে দাঁত চেপে বললো,“ নিষেধ করেছে কেন?”

আশিক বললো,“ জানি না। ”

.
.

আশিকের কথায় চুপ রইলো সাওন। একজন বাচ্চা ছেলের সাথে কী বলবে! ইতোমধ্যে আনোয়ারা বেগম এসে ডেকে গেল। সাওন, আশিককে কোলে নিয়ে সবার সামনে গেল।

কম-বেশি দুই বোনের পরিবারই রয়েছে এখানে। হাসি মুখে সবার সাথে কথাবার্তা বলছে সাওন। নিজ দায়িত্বে অতিথি আপ্যায়ন করাচ্ছে।
খাওয়া-দাওয়ার শেষে সবাই ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে। তবে মনের মধ্যে কেমন একটা অস্থিরতা রয়েছে। সেঁজুতির ভাই কত ভালো ভাবে বুঝিয়ে দিলো, বোনের পাশে থেকেছে আবার বোন জামাইয়ের পাশেও থেকেছে। অথচ সাওন না পারছে বোনদের পাশে থাকতে, না পারছে বউয়ের পাশে থাকতে আবার না পারছে ওর বোন জামাইদের পাশে থাকতে। যেখানে নিজের পাশেই নিজেকে খুঁজে পাচ্ছে না তাহলে অন্যদের সাহায্য কীভাবে করবে! মনের অজান্তেই একটা দীর্ঘশ্বাস বেরিয়ে আসলো।
সবাই আগের ঘটনাগুলো ভুলে হাসিতামাশায় মেতে আছে, বিশেষ করে সাওনের মেজো দুলাভাই। তার নিজের মধ্যে যেমন চালাকচতুর মানুষদের মতো ভাব রয়েছে, ঠিক তেমনি হাসিতামাশাও অনায়াসেই করতে পারে।
সাওনকে চুপ দেখে মেজো বোনের ভাসুর বলল,“ বিয়াই চুপ কেন?”

তার কথা শুনে মৃদ্যু হেসে সাওন বললো,“ কিছু না, এমনি।”

মেজো বোনের ভাসুর বললো,“ আচ্ছা। ”

বিকেলের দিকে চলে যায় সবাই। এখন আগের মতোই মেজো বোন, তার স্বামী, বড় বোন এবং বড় বোনের স্বামী রয়েছে।

সন্ধ্যের পরে সাওন নিজের রুম থেকে বেরিয়ে আনোয়ারা বেগমকে উদ্দেশ্য করে বলল,“ সবাইকে ডাকেনতো মা। ”

আনোয়ারা বেগম জিজ্ঞেস করলে জবাবে সাওন বলে, “ পরেই দেখতে পারবেন। ”

সাওনের কথায় কিছু বলে না আনোয়ারা বেগম। চুপচাপ ইতস্তত বোধ করে বললো,“ তোর মাথা গেছে? জামাইরা ঘরে। ”

আনোয়ারা বেগমের কথা শুনে চুপ হয়ে, নিজেই আসে সাওন। সবাইকে ড্রয়িংরুমে ডেকে এনে বসালো। চারিপাশে ঘরের উপস্থিত মানুষজন রয়েছে।

সাওনের মেজো বোন বললো,“ কিছু বলবি?”

সাওন বললো,“ হ্যাঁ। চেয়েছিলাম অনেককিছু বলতে।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে সাওন বলা শুরু করলো,“যেহেতু এখানে উপস্থিত সবার সামনেই ঘটনার সূত্রপাত হয়েছে তাই কথাটা সবার সামনেই বলতে চাই। যে কথাগুলো বলবো শান্ত মাথায় সবাই শুনবেন এবং মনে রাখবেন। এই কথাগুলো আজকেই প্রথম এবং শেষ বারের মতো বলবো। এরপরে না কিছু বলবো, না কোনো সুযোগ দেবো। আজকের কথাগুলোকে সাবধানতা এবং হুমকি দুটোই বলা যায়। যার ভালো লাগবে আমায় পরিচয় দিবেন, যার ভালো লাগবে না আজকে থেকেই পরিচয়ের সমাপ্তি করবেন। ”

সাওনের কথার মধ্যে আনোয়ারা বেগম বললেন,“ এসব কেমন ধরণের কথা?”

সাওন দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ আপনি চুপ থাকেন। আপনাকে কথা বলার সুযোগ দেওয়া হয় বলে আজ পর্যন্ত এমন কাহিনী ঘটে আসছে; সামনেও ঘটতে পারে। তাই আমার কথার মধ্যে দয়া করে বা-হাত দিবেন না। আমি প্রথমেই সবাইকে সুস্থ ভাবে, শান্ত হয়ে শুনতে বলেছি।”

সাওনকে থামিয়ে মেজো দুলাভাই বললো, “আচ্ছা। মাথা গরম করো না। তুমি বলো, আমরা শুনছি। ”

সাওন জোরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো,“ রাজনীতি সম্পর্কে ধারণা আছে কারো?”

সাওনের কথায় সবাই ভ্রু কুঁচকে তাকালে সাওন জোরপূর্বক হেসে বলে, “ রাজনীতির প্রকারভেদ অনেকরকমের রয়েছে। দেশের রাজনীতি। স্কুল,কলেজ, ভার্সিটির রাজনীতি। সিনিয়র, জুনিয়রদের রাজনীতি। ছেলে ছেলে রাজনীতি, মেয়ে মেয়ে রাজনীতি এবং সাংসারিক রাজনীতি। সবগুলোর মধ্যেই ভালো-খারাপ রয়েছে। কিন্তু সবথেকে আগাছা রাজনীতি হলো সাংসারিক রাজনীতি, যার প্রকারভেদে মেয়ে মেয়ে রাজনীতিও অন্তর্ভুক্ত আছে। এই রাজনীতিটি এত পরিমাণে খারাপ, কারণ এতে কোনো ভালো দিক নেই । যেদিকে তাকাবে সেদিকে খারাপের প্রভাব ছড়িয়ে রেখেছে এরা। এর মাধ্যমে একটা মানুষ শান্তি পাবে না, যারা এর কবলে পরবে পুরো জীবন ত্যানা ত্যানা করে ফেলবে। যে এর কবলে পরে সে বুঝে, কতটা ভয়ংকর পরিস্থিতিতে জীবন পার করতে হয়। এই পরিস্থিতিতে অধিকাংশ মেয়েরা জড়িত থাকে এবং অধিকাংশ মেয়েরা ভুক্তভোগী হয়। বাকি অধিকাংশ ছেলেদের ভুগতে হয়। সবথেকে ভয়াবহ হল ছেলেদের জন্য। এবং এর প্রধাণ কারণও ছেলেরা নিজেরাই। কারণ, এই রাজনীতি শুরু হওয়ার আগেই যদি ছেলেরা সাবধান হয়ে যায় তাহলে এর চান্স থাকে না। না কাউকে ভুগতে হবে, না কেউ সুযোগ পাবে। সেক্ষেত্রে, ছেলে-মেয়ে উভয়কেই দোষ দেওয়া যায়। প্রকারভেদ বুঝাতে পেরেছি?”

সাওনের কথায় সবাই চুপ হয়ে গেল। সাওনের দুই দুলাভাই, হ্যাঁ বললো। সাওন আবারও বলা শুরু করলো,“ এই রাজনীতির প্রধাণ কার্যালয় থাকে আমার ঘরে, আপনাদের ঘরে এবং চারিপাশে যত পরিবার রয়েছে প্রতিটি পরিবারে। মোটকথা, এটা বহুল পরিমাণে প্রচলিত একটা পন্থা। সবার নাক গলাতেই হবে, না হলে পেটের ভাত হজম হয় না।
একটা প্রমাণসহ উদাহরণ দেই? আমার ঘর, দুই দুলাভাইয়ের ঘর। সবখানে এসবের নিয়ম-কানুন অনুসারে খুব মনযোগের সাথে কাজ চলছে। তারমধ্যে ঘরে-বাইরে এর কম-বেশি সবাই জড়িত। এক পরিবার অন্য পরিবারের মেয়েকে মানুষ মনে করে না, দিন-রাত কাজ করা একটা মেশিন রোবট মনে করে। এরা এতটাই চতুর ব্যক্তি যার জন্য একটা জ্যান্ত মানুষকে নিমিষেই রোবট মানুষে পরিণত করে দিবে। তারপর আসে ছেলেরা! এদেরকে চতুর বলা যায় না৷ এদেরকে কী বলে সম্বোধন করা যায় আমার জানা নেই। কারণ এদের মধ্যে অনেক রকমের রূপের সাক্ষাৎ মিলে। মাথাখারাপ, বোকা, চালাকচতুর, রগচটা সবকিছুতেই পরে। পরবেই বা না কেন! দিন-রাত খাটুনি করার পরে যখন শান্তির জন্য বাড়িতে আসে তখন একেরপর এক বিচারসভার সামনে বসতে হয়। কারণ, তার জন্য যে অনেক বিচার পরে আছে। পেটে ক্ষুধা নিয়ে, শরীরের ঘাম নিয়ে তাদেরকে এই বিচারগুলো হজম করতে হয় ; এবং জাজ হয়ে নিত্যনতুন বিচারের ফলাফল সবার সম্মুখে দিতে হয়। এক্ষেত্রে যারা অ্যাডভোকেটের দায়িত্ব পালন করে, তারা কোর্স করা অ্যাডভোকেটদের মতোই নিখুঁত ভাবে সবকিছুর প্রমাণ সাজিয়ে রাখে। যার জন্য শরীরে ঘাম থাকা, পেটে ক্ষুধা থাকা, মাথায় সমস্ত চিন্তা থাকা বিচারকরা সবকিছু মেলাতে সক্ষম হয় না। বরং সত্য-মিথ্যা যাচাই না করেই রায় কার্যকর করে। কারণ, বিপক্ষের ভুক্তভোগীর পাশে তো কোনো ডিফেন্স থাকে না। এভাবে বিচারসভার বিচার পেয়ে প্রধাণ ব্যক্তিবর্গরা একেরপর এক অন্যায় করতেই থাকে ; যার শেষ হয় না কখনো। তবে কথায় আছে,
যে অন্যায় সহে, সে রহে।
যে ক্রমাগত অন্যায়গুলো করেই যাবে, তাদের পাপকর্মের ফল ইহকালেই ভোগ করতে হয়। যেকোনো মাধ্যমে ভোগ করবে।

আমি নিজেই ভুক্তভোগী। আবার নিজেই এর সহযোগী। আমার পাপের শেষ নেই। যেকোনো উপায়ে এর ফল পেতেই হবে। শুধু সময়ের অপেক্ষা। তবে আমি যে সুখী এমন নয়। আমার যতটুকু ধারণা তা হল, এই পৃথিবীতে আমার থেকে দুঃখী কেউ নেই। এর সম্পূর্ণ দায়ভার আমি নিজেকে দেবো। কারণ, আমি ঠিক করতে পারিনি কিছু। সবকিছু বুঝেও চুপ থেকেছি, এরজন্য আশেপাশের লোকজন অতিরিক্ত মাথায় চেপে বসেছে। এবং একেরপর এক অন্যায় করেই যাচ্ছে। তবুও কিছু বলিনি, হয়তো অবুঝ ছিলাম। অথবা, ভেবেছিলাম সবাই ঠিক হয়ে যাবে। কিন্তু সবকিছুর যেমন শুরু আছে, তেমন শেষও রয়েছে। আজকেই এর শেষ হবে। আমি সাওন বলছি! এরপর থেকে যদি এমনকিছু ঘটতে দেখি বা ঘটেছে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না। হোক বোনের সংসার, হোক আমার নিজের সংসার। সব পরিবারে এমন নিয়ম তৈরি করা উচিত , যার জন্য সে পরিবারে কেউ যেন হাত তুলতে না পারে। আমার সংসার ভেঙে গেছে এমন অবস্থায়। না পারি নিচে নামতে, না পারি উপরে উঠতে। এর সমস্ত দায়ভার আমি আমার পরিবারকে দিচ্ছি এবং নিজে ভাগ করে নিচ্ছি। সবাই সমান দোষী। আমার মা, বোন, বউ এবং আমি নিজেই এর মধ্যে আছি। এটা হচ্ছে আমার পরিবারের কীর্তিকলাপ। এভাবে সব পরিবারেই চলছে, ক্রমাগত চলতেই থাকবে। তাছাড়া, এসবের ক্ষেত্রেও ছেলেদের দায়ী করবো। তারা বউ, ভাই-বোন, মা কাউকে ঠিক রাখতে পারেনি যার জন্য এমন কাণ্ড গুলো অহরহ হয়ে আসছে এমনকিছু ভবিষ্যতে হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
যেহেতু একজন ছেলের তার পরিবারের প্রতিটি মানুষের সম্পর্কে কম-বেশি ধারণা রয়েছে ; সেহেতু সে পরিবারের সামনেই তার সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত । না হলে পরিবারের মানুষজন সুযোগ পেয়ে যায়। আমি নিজে এসবের ভুক্তভোগী তাই নিজেই এর ব্যাখ্যা দিতে পারছি, উত্তরও আমার কাছে আছে।
আমার বউকে, আমার পরিবারের কারো পছন্দ না। তাদের এই অপছন্দের জন্য, সেঁজুতি নিজেও কাউকে পছন্দ করে না। এসবের পিছনে দায়ী কে, জানো? আমরা সবাই। যেমন:- বড় আপুর শ্বশুর বাড়িতে তাঁর ননদিনীরা এসে রাজনীতি করে, ঠিক তেমনই আমার আপুরা এসে সেঁজুতির শ্বশুর বাড়িতে রাজনীতি করবে। এভাবেই একজনের সাথে অন্যজন জড়িয়ে যাচ্ছে। কি ভাইয়া, ঠিক বলেছি না? বড় দুলাভাইকে উদ্দেশ্য করে কথাটি বললো সাওন। ”

তারপরে নিঃশ্বাস নিয়ে বললো, “ কথাগুলো ভাইয়ার (মেজো দুলাভাই) সামনে বললাম কেন, জানেন? সেদিন সেঁজুতির সাথে এ বাড়িতে যা ঘটেছিল এমনকি আজকে এ বাড়িতে যা হয়েছে সবকিছু সবার সামনেই ঘটেছে। তাই মনে করি, কারণও সবার জানা উচিত।
মানে! যা তা একটা ব্যপার হয়ে যাচ্ছে, সব জায়গাতে একই কাহিনী। মজার ব্যপার হল, মানুষ একটা ভুল করার পরে সঠিক-ভুল নির্ধারণ করতে পারে। তখন আপনা-আপনিই সমস্ত জ্ঞানভাণ্ডার মাথায় এসে জমা হয়। যেমন, সেদিন রাগের মাথায় সবার সামনে সেঁজুতির গায়ে হাত তুলি। যেখানে আমার পরিবার সেঁজুতিকে পছন্দই করে না, সেখানে সবার সামনেই গায়ে হাত তুলে সবাইকে সুযোগ করে দেই মজা নেওয়ার। কারণ, আমার এই কাজগুলোর জন্য আমার পরিবার সুযোগ সন্ধানী হওয়ায় আবারও এমন কাজের উৎসাহ পাবে। আজকে বড় ভাইয়াও ঠিক এমন কাজ করেছে। বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে আপুর সাথে একই কাহিনী করেছে। রোজার ঈদেও পুরো বাড়ি ভর্তি অতিথির সামনে মেজো আপুকে একইভাবে হেনস্তা করা হয়।
আসল কথা হল, যে যেদিক থেকে পারে আগে বাড়ির বউদের হেনস্তা করে। সবশেষে বিচার একটাই তা হল চড়, থাপ্পড়। এবং এগুলো বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে না করলেই নয়, টোটালি বউকে হেনস্তা করতেই হবে। এতে মানইজ্জত কার যায়? আমাদের সবারই তো। আজকে সবার সামনে বড় আপুর গায়ে হাত তুলেছেন। যেখানে মেজো আপুর শ্বশুর বাড়ির মানুষজন ছিল, এর জন্য মেজো আপুকে যে কথা শুনতে হবে না এর কী নিশ্চয়তা রয়েছে? ঈদে সবার সামনে মেজো আপুর চালচলন নিয়ে কথা উঠে, যার দায়ভার বড় আপুর শ্বশুর বাড়িতে সম্পূর্ণ বাড়ি ভর্তি মানুষের সামনে আপুকেই ইঙ্গিত করে। সেদিন কী হল! সেঁজুতির সাথে একই কাহিনী হল। এমন কাহিনীগুলো যদি হওয়ারই থাকে অথবা হয়েই আসে তাহলে বাড়ির বউদের দোষী সাবস্ত কীভাবে করি! এখানে তাদের দোষ ২০% বাকি ৮০℅ পরিবারের। অন্ততপক্ষে, এতটুকুর হিসেব সবার মাথায় রাখা উচিত।
একটা কিছু হলেই কারো গায়ে চড়, থাপ্পড় উঠবে কেন! এদিকে খেয়াল রাখা উচিত। মুখ দিয়ে শান্ত মাথায় বুঝানো যায়। শান্ত মাথায় একটা পাগলকে কিছু বুঝালেও সে বুঝতে চাওবে ; সেখানে বাড়ির বউ নিজেদের সংসারের কথা কেন বুঝবে না! অবশ্যই বুঝবে। যাই হোক, কারো পরিবারে নাক গলাবো না। তবে সতর্ক বার্তা ছিল, আজকে যা হয়েছে সেগুলো যেন ভবিষ্যতে না হয়।
সবশেষে আমার কথা একটাই। এ বাড়িতে বহু আগে থেকেই চলমান ছিল এবং সেদিন হাসপাতাল থেকে নতুনভাবে সবকিছুর সূত্রপাত ঘটে, সবার সামনেই। তাই কথাটি সবার সামনেই বললাম, আজকেই প্রথম এবং শেষ কথা।
এমনিতেই রাত থেকে পরিবারের জন্য ঝামেলার পর ঝামেলা বেঁধেই চলেছিল। সকালে না খেয়ে অফিসে গেলাম, এতটুকু আমার ঘরের মানুষগুলো জানে। দুপুরের সময়ে তারা ফোনকল দিয়ে বিচার দেওয়া শুরু করে, পেটে ক্ষুধা তা নিয়েও সব শুনতে হয়। সেঁজুতি না-কি আশিককে মারতে চেয়েছে। এটা কে কতটুকু বিশ্বাস করেন? আমি বলবো, যে একটু হলেও বিশ্বাস করেছেন তার মধ্যে কোনো মনুষ্যত্বই নেই। তবুও আমার পরিবারের সবাই ধরেই নিয়েছে, সেঁজুতি ইচ্ছেকৃত সব করেছে। আচ্ছা মানলাম, ও ইচ্ছে করে করে এসব। তাহলে দিন-রাত আশিকের পিছনে খাটতো কেন? সুযোগ খুঁজেছিল, তাই? আসল কথা হল একজন মানুষকে নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে নেই, তাহলেই সবরকমের অযৌক্তিক, আগাছা ঝামেলায় তাকে পরতেই হবে। এটাই স্বাভাবিক এবং হয়েও আসছে।
ধরে নিলাম সেঁজুতি নেই। নিজের পরিবারের একজন সদস্যের কথা কে কতটুকু ভেবছেন? কখনো ভাবেনি কেউ, কোনো কালেই নয়। সে সদস্যটি আমি নিজেই। নিজের মুখ নিজেই সেলাই করে ছিলাম হয়তো, তাই কারো কোনো কথার জবাব কোনো কালেই দিতে পারিনি। তাই বলে সবসময় মানুষ এক থাকবে সেটাও না।
সেদিন হাসপাতালে সবার সামনে ইনিয়েবিনিয়ে সেঁজুতির কথা আমার কাছে বলা হয়। যতটুকু জানি, তার একটু কথাও আমি বিশ্বাস করিনি। বাড়িতে আসার পরে রাগের কারণ একটাই ছিল এবং তা হল ; এত ভালো মানুষী করে কেন সবসময়! নিজের সর্বস্ব দিয়ে ভালোবাসতে যায় কেন? তাহলে আশিক অন্তত ছুটে যেত না ওর কাছে আর এমন ভয়ংকর বদনামের মুখেও পরতো না। মোটকথা, ও এ বাড়িতে আসছে কেন! যেদিন এ বাড়িতে পা রেখেছে তার এক সপ্তাহ পর থেকে এমন আলামত শুরু হয়ে যায়। এসব সহ্য করে দিনের পর দিন রয়েছে কেন? আমার জন্য এত মায়া দেখায় কেন? আমার রক্তের সম্পর্কের কেউ দেখায় না, ও দেখাতে আসবে কেন? হ্যাঁ? সেদিন চলে যাওয়ার সময়ে মেয়েটা আমার দিকে করুণ চোখে তাকায়, এই বুঝি বাঁধা দেবো। আমি ইচ্ছেকৃত বাঁধা দেইনি। কারণ আমি নিজেই চেয়েছিলাম এমন বাড়িতে ওর মতো স্বচ্ছ মনের মানুষের থাকার অধিকার নেই। এ বাড়িতে ভালো মানুষী খাঁটে না। একদমই না। আমার পরিবার চায় না আমি সংসার করি, সুখী থাকি। তাহলে এমন কাহিনীগুলো দিনের পর দিন করতো না।
যেহেতু যা হওয়ার হয়েই গিয়েছে, তাই এর সমাধান তো করাই লাগবে। অশান্তি নিয়ে ক’দিন থাকতে পারে মানুষ! আজ থেকে আমার কথা যে ভাববে না, আমিও তার কথা ভাবছি না। একটুও না। তাছাড়া, আমার কথা যে ভাববে যত বাঁধা হোক আমি ঝাঁপিয়ে পরবো সেখানে। যে কথাগুলো মানতে পারবেন সে জানবেন আপনাদের একটা ভাই আছে। যে আগেরমতোই থাকবেন, সে জানবেন কোনোকালেই আপনাদের ভাই নামের কিছুই ছিল না। যার ইচ্ছে হয় পরিচয় দিবেন যার ইচ্ছে হয় আজ থেকেই ভাই নামের কাউকে মুছে ফেলবেন।
তবুও দয়া করে, আমার সংসারে নাক গলাবেন না কেউ। আর বাকি রইল মা! যত যাই হোক মা তো মাই থাকে। সে যদি মা হয়েও অবুঝ থাকে তাহলে কিইবা করার আছে! সে যদি নিজের ছেলের সংসার নিজেই ভাঙতে চায়, তাহলে তাকে বুঝানোর ক্ষমতাও হয়তো কারো নেই। শুধু এতটুকুই বলবো, মায়ের সমস্ত দায়িত্ব আমার। কিন্তু আমার সংসারে তৃতীয় কোনো ব্যক্তি যেন মাথা না ঘামায়। মাকে মায়ের মতো থাকতে দাও ছেলের সংসারে। তাহলে সে ঠিকই বুঝবে। কিন্তু তার মাথা যেন ভার না হয়! এটা সতর্ক বার্তা। যার ইচ্ছে হয় নিজ স্থানে থাকেন, যার ইচ্ছে হবে না আজ থেকেই আমার সাথে সমস্ত সম্পর্কের ইতি টানবেন।

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here