সেঁজুতি পর্ব_৬

0
1931

#সেঁজুতি(পর্ব_৬)
#লেখা_সুমাইয়া_আক্তার_মনি

সাওনের কথা শুনে চুপ হয়ে গেল সবাই। সাওনের বড় দুলাভাই ওর কাঁধে হাত রেখে শান্ত হতে বললো। সাওন নিশ্চুপ হয়ে বসে আছে। আনোয়ারা বেগম বিড়বিড় করতে করতে চলে গেল।
রান্নাঘর থেকে সবকিছুই শুনতে পেয়েছে সেঁজুতি। হঠাৎ এভাবে রিয়াক্ট করবে বুঝতে পারেনি, এত রেগে গেল কেন! তখন বিদ্রুপ করে যে কথাটি বলেছিল তার জন্য? আজকে মেহমানদের সামনে হয়তো এমন কথা বলা উচিত হয়নি। সবার সামনে ওর ব্যঙ্গাত্মক কথার জন্য লজ্জা পেতে হয়েছে ; যার জন্য এমন রেগে গেল সাওন। তাছাড়া, এমন ছেলেদের মাঝে মাঝে লজ্জাও দিতে হয়। না হলে মুখের বুলি ফুটে না কখনোই। আজকে কিছু বলা উচিত ছিল সাওনের বোনদের, যেটা সেঁজুতির খোঁচা লাগানো কথার জন্য রেগেমেগে বলে দিলো সাওন।
এর পরিণাম ভালো কিংবা ঝাঁঝালো হতে পারে, তা জানে না সেঁজুতি। এসব ভাবতে ভাবতে খুব জোরেসোরে একটা নিঃশ্বাস ফেলে রান্না করতে লাগলো।

মাছ, মাংস, সবজি রান্নার শেষে পোলাও রান্না করলো। তবে সব রান্নার আগে সেঁজুতির মায়ের কাছে ফোনকল দিয়ে রেসিপি জেনে নিয়েছিলো। রান্না মোটামুটি হলেও আতঙ্কে আছে, কি-না কি হতে পারে দ্বিধায় পরে গিয়েছে। ভালো যে হবে না, অন্য সবার মতো তা জানে সেঁজুতি। তবে যেকোনো রান্না’ই যদি পরিশ্রম দিয়ে করে তাহলে খাওয়ার উপযোগী তো নিশ্চয়ই হবে। সবার রান্নার স্বাদ তো একরকমের হয় না, আলাদা আলাদা হবে। তাহলে এই একটি কথা সবাই বুঝতে পারে না কেন!
কেউ কিছু না জানলে তাকে শিখিয়ে দিতে হয়। মেয়েরা মায়ের হাতে অর্ধেক শিখে বাকি অর্ধেক শ্বশুর বাড়ি এসে শিখে ; অথচ সেসব না করে কথার পর কথা শুনিয়ে যাচ্ছে। এটাই কী নিয়ম? যেকোনো কিছুতে দায়সারা হয়ে মিনিটের পর মিনিট কথা শুনিয়েই যাবে। সবাই তো চুপচাপ হয়ে থাকতে পারে না, সেঁজুতির মতো কিছুকিছু মেয়েরা মুখের উপরে জবাব দেয়। ফলস্বরূপ, নানা ধরনের উপাধিতে ভূষিত হয়। তবে এসব উপাধি সেঁজুতি ছোট থেকেই পেয়ে এসেছে তাই যে কারো কথাকে গায়ে লাগায় না ; কিন্তু সাওন কিছু বললে মুহুর্তের মধ্যে টলমল চোখ স্পষ্ট ভেসে উঠে। ভালোবাসা হয়তো এমনই হয়। তবে সেঁজুতি নিজ থেকে কখনোই ভেঙে পরেনা, কেউ কিছু বলবা আর সবকিছু মুখ বুজে সহ্য করে যাবে! এমন নয়। তার উত্তর সে দিয়ে আসবে লোক সম্মুখে, হোক প্রিয়জন নয়তো প্রয়োজন।

প্রিয়জন আর প্রয়োজন! এই দুটি শব্দকেই একটি পয়সার এপিঠ-ওপিঠ বলা যায়। প্রয়োজন আছে বলেই প্রিয়জনকে চেনা যায়। প্রয়োজনের ঘট পূর্ণ করেই প্রিয়জন হয়ে ওঠা যায়। প্রয়োজনের পরিসর পূরণ করার জন্যই প্রিয়জনের এত কদর। তবে লোক দেখিয়ে যে প্রিয়জন হওয়ার চেষ্টা করে ; তার থেকে অধম আর কেউ নেই। এই ছোট্ট পার্থক্য যে বুঝতে পারে মূলত সে ব্যক্তিই সুন্দর জীবন লাভ করতে সক্ষম। অন্ততপক্ষে, কারো ধোঁকার সম্মুখীন তো হতে হবে না। তবে এতদিন এই দুটো শব্দ নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিল সেঁজুতি। মাঝে মাঝে সাওনের পরিবর্তন আবার মাঝে মাঝে অন্যরকম হয়ে যাওয়া, এসব নিয়ে বেশ দ্বিধায় ছিল। তবে আজকের সাওনকে দেখে সবকিছু স্পষ্ট হয়ে গিয়েছে৷ আজ স্পষ্ট বুঝতে পেরেছে, সেদিনের সেই ছোট সেঁজুতির প্রিয়জন আর প্রয়োজন এই দুটো শব্দকে ঘিরেই একজনের বসবাস।

.
.
.

সবকিছু রান্না হয়েই গেল। কিন্তু আনোয়ারা বেগম আসেননি একবারের জন্যও, না এসেছে তার দুই মেয়েরা। সেঁজুতিরও কোনো অভিযোগ নেই, বাড়ির বউ তাই অতিথি আপ্যায়নের ব্যপারটা তারই দেখতে হবে। ডাইনিং টেবিলে সবকিছু গুছিয়ে রাখছে, এখন হাতের ব্যথা তেমন একটা নেই। সেটা হয়তো ক্ষণিকের ব্যথাই ছিল কিন্তু সাওনের যদি সঙ্গ না থাকতো ; তাহলে হয়তো হাতের ব্যথার পরিবর্তে মনের ব্যথা দীর্ঘস্থায়ী হতো।

.

ডাইনিং টেবিলে সবাই অপেক্ষা করছে সেঁজুতির। দুই মেয়েজামাই, সাওনকে আগে খেতে বলা হয়েছিল। তবে তিনজনের কেউই খায়নি, সবাই একসাথে খাবে এমনটাই বলেছে। এখানে সবাই ঘরের মানুষ, তাহলে আলাদা আলাদা খাওয়ার প্রশ্নই উঠে না। বিশেষ করে সাওনের মেজো দুলাভাইয়ের কথা ছিল, সবাই একসাথে খাবে। আনোয়ারা বেগম ও তার মেয়েরা সবকিছুই বুঝতে পেরেছে ; এখানে পরিবারের সবাই আছে শুধু সেঁজুতি নেই। সেঁজুতির জন্যই এমন অপেক্ষা সবার, তাই খাওয়ার সময়ে বেশি একটা কথা বাড়ালো না। কিছুক্ষণ পরে সেঁজুতির দেখা মিললো। গোসল করে নামাজ আদায়ের পরে এখানে আসা, তবে শাড়ি পরিহিত মাথায় কাপড় জড়ানো এক নারী সম্মুখে দাঁড়িয়ে আছে সবার। মুখে এক চিলতে হাসির রেখা টেনে সম্মুখে গিয়ে দাঁড়ালো সেঁজুতি।

ঝাল! এই শব্দটির জন্য খেতে পারছে না সাওনের বড় দুলাভাই, বাচ্চাদেরও সমস্যা হচ্ছে।

নতুন কিনে আনা মরিচ গুড়োর জন্য এতটা আন্দাজ করতে পারেনি। নিম্নস্বরে কথাটি বলেই ঢোক গিললো সেঁজুতি।

সেঁজুতির কথা শুনে কটমট করে তাকায় আনোয়ারা বেগম। সেঁজুতি কিছু বলে না। সাওনের বড় বোন বললো, “ আশিকের আব্বুতো ঝাল খেতে পারে না, সেটাতো জানার কথা সবার। ”

তাঁর কথা শুনে সাওনের দুলাভাই বললো, “ ফোঁপাতে ফোপাঁতে না খেলে শান্তি লাগে না। আজ না হয় তেমনই খেলাম, কী বলেন ভাবী! ” কথাটি বলেই তিনি হেসে দিলেন। তাঁর কথা শুনে কপাল কুঁচকে তাকালো তার সহধর্মিণী, তবে ঠাট্টার ছলে সবকিছু পানসে করে দিল সাওনের দুলাভাইয়েরা। তাদের বউদের সম্পর্কে জানা আছে, সবকিছুতেই গণ্ডগোল করে শান্তি পায় এরা।

.
.
.

খাটে মাথা ঠেকিয়ে বসে আছে সাওন। তার সামনেই ওর ভাগ্নেকে নিয়ে বসে আছে সেঁজুতি। আঁড়চোখে সাওনের দিকে তাকাচ্ছে, যে চাহনিতে বিশাল এক চাওয়া-পাওয়া স্পষ্ট। তবে আজকে কোনোরকম হাসি-ঠাট্টা করার মুডে নেই সাওন। সকাল থেকেই মন-মেজাজ অগোছালো হয়ে আছে। এমনকি কটুক্তি কথাও হজম করতে হয়েছে।
বিয়ের পরে ছেলেরা পরিবর্তন হয়ে যায়, বিবেকবুদ্ধি সব লোপ পায়। এমন কথার সম্মুখীন হতে হয়েছে আজ।

সাওনকে নীরব দেখে সেঁজুতিও চুপ হয়ে আছে। শুধু মাঝেমাঝে আশিকের সাথে খেলছে, হাসছে। সেঁজুতি যেমন নিজে চুপ থাকতে পারে না, তেমনি অন্যকে চুপ দেখতে পারে না। অন্যকোনো কারণ হলে ঠিকই খুঁচিয়ে কথা বলাতো। কিন্তু আজকে বাড়াবাড়ি হয়ে যাবে, এমনিতেই সকালে ওর জন্যই এমন অবস্থা হয়েছে। তাই আর কোনো ঝামেলা করতে চায় না। নিশ্চুপ হয়ে নিজেও নীরবতা পালন করছে।

.

আনোয়ারা বেগম ও তার দুই মেয়ে একসাথে মিটিংয়ে বসে আছে। মূলত, বড় মেয়ের শ্বশুর বাড়িতে ঝামেলা হয়েছে সেসব নিয়েই কথাবার্তা চলছে। বড় মেয়ের শাশুড়ি ভালো না, সারাক্ষণ পায়ে পায়ে দোষ ধরবে। একটা সন্তানের মা হয়েছে এখনো নতুন বউদের মতো দোষ ধরে যাচ্ছে। এসব নিয়েই ঝগড়াঝাটি হয়। তাছাড়া, বড় মেয়ের শাশুড়ি অসুস্থ হয়েছিল তখন দেখাশুনা করেনি এরজন্য সে পরিবারে লঙ্কাকাণ্ড বয়ে গিয়েছিল। বড় জামাইয়ের সাথেও তর্কাতর্কি হয়েছে।

আনোয়ারা বেগমের মেজো মেয়ে একটু অন্য ধাঁচের। তার শ্বশুর বাড়িতে শাশুড়ির ঝামেলা নেই। সেখানে তার সাথে কেউ পেরে উঠেনা, না পায়ে পায়ে লাগতে আসে। ছোট ছেলের বউ বলে কথা, সব দোষ বড় জা আর ভাসুরের। তার ক্ষেত্রে উল্টো কাহিনী হয়, সে শাশুড়িকে দেখতে পারে না।

দুই মেয়ের শ্বশুর বাড়ির কাহিনী শোনার পরে সেঁজুতির কথা উঠলো। একমাত্র ছেলে আর একমাত্র ভাইয়ের জন্য কি-না শেষ পর্যন্ত দেখে শুনে একটা বেয়াদপ, অভদ্র মেয়ে নিয়ে এসেছে! কাউকে সম্মান দিয়ে কথা বলে না, এমনকি নিজের স্বামীকেও আজ অন্য বাড়ির ছেলেদের সামনে অপমান করলো। সাওন না-কি ভয় পাচ্ছে! এটা বলা উচিত ছিল ওর?

#চলবে

( পর্ব ছোট দেই কেন! এমন অভিযোগ এসেছে কয়েকজনের। কথা হলো, ভার্চুয়াল ছাড়াও ব্যক্তিগত জীবন আছে সেখানে সারাক্ষণ মোবাইল ঘাটাঘাটি চলে না। তাহলে লেখালেখিই বন্ধ হয়ে যাবে, এমনিতেও লেখালেখির ব্যপারে সঙ্গ দিচ্ছে না কেউ ; তাই মোবাইল ঘাটাঘাটি করে গল্পও লিখতে দিবে না। সবকিছু বন্ধ করে এই আবোলতাবোল লেখা লিখতে দিবে? এমন তো নেই কেউ। তবে একটা কথা বলতে চাই, লেখালেখিতে একটু শান্তি খুঁজে পাই। তাই শত বাঁধার পরেও লিখে যাচ্ছি কিন্তু প্রতিদিন তো ১০০০ অথবা ১২০০ শব্দ ছাড়া দেওয়া সম্ভব না। এতটা স্বাধীনতা পাইনি। এমন ১০০০ শব্দের পর্ব পড়তে চাইলে প্রতিদিন পাবেন এবং এর থেকে বড় পর্ব পড়তে চাইলে একদিন পরপর পাবেন। অবশ্যই যাদের কাছে পর্ব ছোট লাগে তাঁরা জানাবেন । এছাড়া আমার কোনো উপায় নাই)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here