সেঁজুতি পর্ব_৭ ৮

0
1902

৭+৮
#সেঁজুতি(পর্ব_৭)
#লেখা_সুমাইয়া_আক্তার_মনি

সেঁজুতি রুমে একা বসে বসে মোবাইল ঘাটছে। সাওনের বোন, বড় দুলাভাই, আনোয়ারা বেগমের রুমে আলাপ-আলোচনায় বসেছে। এসব ব্যপারে সাওনের বিন্দুমাত্র ইচ্ছে নেই তবুও বড় দুলাভাইয়ের জন্য আসছে। কারণ, ওর বোনদের ব্যপারে তো সবকিছু জানাই আছে। আনোয়ারা বেগম কিছুক্ষণ গম্ভীর থেকে বড় জামাইকে উদ্দেশ্য করে বলা শুরু করলেন, “ দেখো বাবা! একটা ৩ বছরের ছেলে আছে, এখনো সাংসারিক কথা ভাববে না? এভাবে চললে তো ছেলেমেয়ে মানুষ করতে পারবে না। ”

আনোয়ারা বেগমের কথা শুনে বড় জামাই বলল, “ আম্মা! এখানে ঝামেলার তো কিছুই নেই, ও সবকিছু মানিয়ে চললেই তো ঠিক হয়ে যায়। মা, বাবা আর ভাই ছাড়া তো কেউ নেই সেখানে তাতেও এমন ঝামেলা করে কেন! ”

সাওনের বড় বোন বললো, “ তোমার বোনগুলোর জ্বালাতন সহ্য করবে কে? বিয়ে দিয়েছে তারপরেও আমার সংসারে এসে হস্তক্ষেপ করবে, কেন? চার-পাঁচ বছর এমন ঝামেলা সহ্য করছি আর ইচ্ছে নেই ; এরপরেও যদি তুমি কিছু না বলো তাহলে সংসার এখানেই শেষ। ”

বড় বোনের কথা শুনে মেজো বোন বললো, “ মাথা গরম করে লাভ আছে কোনো? ছেলের বয়স তিন বছর চলে, এখন সবকিছুতে চিন্তাভাবনা করা উচিত। রাগলেই তো সমস্যার সমাধান হবে না, আশিকের চিন্তা আগে।”

আশিকের বাবাকে উদ্দেশ্য করে বলল, “ ভাইয়া! কিছু মনে করবেন না, রাগের মাথায় মানুষ অনেক কিছু বলে ফেলে। মা-বাবাকে তো ফেলে দেওয়া যায় না, না বউ ছেলেকে দেওয়া যায়। তবে আশিকের ভবিষ্যতও দেখতে হবে, ওর জন্য টাকা জমানো শুরু করে দিন। আপু তো কয়েকবার বলেছিল, অন্যদের কথায় গায়ে লাগাবেন কেন? মাঝেমাঝে বউয়ের কথাও শুনতে হয়, সে তো ভালোর জন্যই বলবে। তার সংসারের ভালো তো তার থেকে অন্যকেউ বুঝবে না, তাই সবকিছু ভেবে দেখবেন। ”

সাওনের মেজো বোনের কথা শুনে চুপচাপ রইলো ওর দুলাভাই। গা জ্বলে গেলেও ভদ্রতার খাতিরে বসে আছেন তিনি। সাওন কটমট করে তাকালো, বোনদের মুখের উপরে কিছু বলবে এখন? অনেককিছুই তো বলা যায়, তবুও নিশ্চুপ হয়ে আছে।

আনোয়ারা বেগম দৃঢ় ভাবে বললো, “ বাবা, শান্ত ভাবে সবকিছু ভেবে দেখো। ঝগড়া ঝামেলায় তো সবকিছু ঠিক হবে না, সবকিছুর সমাধান করতে হবে। ”

সাওনের বড় দুলাভাই কিছুক্ষণ চুপ থেকে বলল, “ ওর সাথে তো কারো কোনো ব্যক্তিগত শত্রুতা নেই। ওর কার্যকলাপে ঝামেলা হয়, আমার কোনো আত্নীয়-স্বজন আসতে পারবে না ; তাতে ওর সমস্যা। যেহেতু আমার ভাই বিয়ে করেনি এখনো, তাই বাড়ির বউ হিসেবে তো সবকিছু ওরই সামলাতে হবে। কিন্তু মানুষ আসলে ওর সমস্যার শেষ নেই, আমার টাকা যায় কেন! তাতেও ঝামেলা করে। মেহমানদের না খাইয়ে কী টাকা জমিয়ে রাখবো? এই সামান্য কথাটা আপনার মেয়ে বুঝে না, বুঝতেও চায় না। ”

দুলাভাইয়ের কথা শুনে সাওনের বড় বোন উচ্চস্বরে চেঁচিয়ে উঠলেন।
“তোমার মেহমান আসবে তাতে আমার সমস্যা থাকবে কেন! কিন্তু এমন দিন নেই তোমার ঘরে মেহমান থাকবে না। নিত্যনতুন রান্না করতে হয়, এই টাকাগুলো কই পাবা? যে টাকা রোজগার করো সবকিছুই তো শেষ হয়ে যায়। আর এত এত রান্না আমি করতে পারবো না। ”

সাওনের বড় দুলাভাই রেগে বললো, “ আমার বাবা-মা যতদিন আছে ততদিন মানুষ আসবে, যাবে, থাকবে। সংসারে না থাকতে ইচ্ছে করলে তুই থাকিস না। তবুও সারাদিন ঝামেলা করবি না। ”

আনোয়ারা বেগম হকচকিয়ে বলল, “ সামান্য ব্যপার নিয়ে ঝামেলা করো না। ওকে বুঝিয়ে বলবো।”

সাওনের দুলাভাই, আনোয়ারা বেগমের মুখের কথা কেড়ে নিয়ে বলল, “ কতগুলো বছর কেটে গিয়েছে সংসারের। এখনো আপনার মেয়ে বুঝেনি কিছু, আমার জন্য যদি ওর চিন্তাভাবনা থাকতো তাহলে এমন অকারণে ঝামেলা করতো না। নূন্যতম কোনো শিক্ষা নেই ওর মধ্যে। ”

বড় মেয়ে জামাইয়ের মুখে এমন কথা শুনে শরীর অসার হয়ে গেল আনোয়ারা বেগমের। যে মানুষটি খুব শান্ত স্বভাবের একজন। যা কিছু হয়ে যায় শান্ত ভাবে থাকতো, কিন্তু আজকে আনোয়ারা বেগমের মুখের উপরেই কথা বলে দিলো। নিজের মেয়ের শিক্ষার দিকে আঙুল তুলেছে, তাহলে কতটা নিচে নেমে গেছে তার মেয়ে। ”

সাওন নিজেও চুপ হয়ে ছিল। কিন্তু রক্ত মাংসে গড়া মানুষ থাকলে সবসময় চুপ থাকা যায় না। সবকিছুই তো এতক্ষণ শুনছিল, ভালো-মন্দ সবকিছুই। দোষগুণও বুঝার কথা। দৃঢ় ভাবে বলল, “ আপু নিজেদের দোষের জন্য আমাদের মানইজ্জত শেষ করো না। মেজো ভাইয়া ঘরে আছে। ভুলে যেয়ো না, সে কিন্তু পুরাতন নয়। ”

বড় বোন উচ্চস্বরে বললো, “ আমার সংসারে তোরে হস্তক্ষেপ করতে বলছে কে? ”

বড় বোনের কথার ভঙ্গিমা শুনে আহাম্মক হয়ে গেল সাওন। লজ্জা মুখর দৃষ্টি নিয়ে নিশ্চুপ হয়ে বেরিয়ে গেল। নিশ্চুপ আছে আনোয়ারা বেগমও, তার জানা আছে ভালোভাবেই তার ছেলেমেয়ের ব্যপারে। সাওন ভালোতে ভালো একজন, খারাপেও ওর থেকে খারাপ নেই কেউ। জনসম্মুখে মুখ বন্ধ করে দিবে, আর পরবর্তীতে তার কাজে হস্তক্ষেপ করবে! এমন ছেলে সাওন নয়। আনোয়ারা বেগম বড়োসড়ো একটা ঢোক গিললো। ওর বড় বোন রাগের মধ্যে কথা শুনিয়ে দিলো সাওনকে, কিন্তু কথা বলার পরে নিজেই আহাম্মক হয়ে আছে। সাওনের বড় দুলাভাই দাঁতে দাঁত চেপে বলল, “ মুখের ব্যালেন্স করতে পারো না এরজন্যই লাগাতর ঝামেলা হয়। কোথায় কীরকম কথা বলতে হয় এই সামান্য জ্ঞান নেই তোমার। ” কথাটি বলেই হনহন করে বেরিয়ে গেলেন তিনি।

আনোয়ারা বেগম দুই মেয়েকে নিয়ে রুমেই আছেন। শান্ত ভাবে দুই মেয়েকে বুঝাচ্ছেন কিন্তু কেউ কথা শোনার নয়। শ্বশুর বাড়িতে গেলেই সবার কথা শুনতে হবে কেন! এমন উক্তি তাদের।
এদিকে সেঁজুতিকে দিনের পর দিন নানান কথা শুনিয়ে রাখে, সেদিকে বিন্দুমাত্র খেয়াল নেই কারো। অন্য মেয়েকে ঘরে আনলে নিজেরা সাধু এবং নিজেরা অন্য বাড়িতে গেলে সেখানের মানুষ দোষী। এমন চিন্তাধারার জন্য সংসারে ঝামেলা লেগেই থাকে।

.
.
.

রুমে গিয়ে চুপচাপ বসে আছে সাওন। সেঁজুতি কিছু হলেও আন্দাজ করতে পেরেছে। সবাই একসাথে মিটিংয়ে ছিল নিশ্চয়ই কোনো কথা কাটাকাটি হয়েছে। আনোয়ারা বেগমের ঘর থেকে ছোট-বড় কথার ধ্বনি ভেসে আসছে, সবকিছু স্পষ্ট না শুনলেও কিছু হলেও আঁচ করতে পেরেছে। যারা অন্যের সংসারে ফোঁড়ন কাটবে তাদের নিজেদেরও তো তেমনই হবে।

সাওনের মেজো বোন রুমে যাওয়া মাত্রই তার স্বামী জিজ্ঞেস করলো, “ কোনো ঝামেলা হয়েছে কি-না! কথা কাটাকাটি কীসের ছিল?”

জবাবে সাওনের বোন বললো, “ এসবে মাথা ঘামানোর দরকার নাই। আশিক দুষ্টুমি করে তাই আপু মেরেছে, এসব নিয়েই একটু তর্ক হয়েছে। ”

মেজো দুলাভাই আর কথা বাড়ালেন না। কিছু হলেও টের পেয়েছে।

.
.

সকালে বড় দুলাভাই চলে গেলেন। অফিসে যেতে হবে, এখান থেকে অনেক দূর হয়ে যাবে। তাই নিজের বাড়িতে গেলেন। যাওয়ার সময়ে বলে গেছেন তার সহধর্মিণীকে, কয়েকদিন বেড়ানোর পরে যেতে। সে নিজে এসেই নিয়ে যাবে। জবাবে তার সহধর্মিণী কিছু বললো না।

রান্নাবান্না সবকিছু গুছিয়ে বেশ আরামে আছে সেঁজুতি। দোষ ধরলে ধরবে, রান্না ভালো-মন্দ হতেই পারে। ওর স্বামীর ভালো লাগলেই হলো, এ বাড়িতে যার জন্য আসা সে তো পছন্দ করে। তাই অন্যসবার কথা গায়ে মাখছে না সেঁজুতি।

সাওন অফিসে। বাড়িতে ওর দুই বোন, মেজো দুলাভাই আর আনোয়ারা বেগম আছেন। রান্নাঘরে যখন সেঁজুতি রান্না করছিল তখন সাওনের বড় বোন এসে টুকিটাকি করে দেয়। মেজো বোন আগ পেতে সবকিছু ঘুরে ঘুরে খায়। সাথে লাগাতার কথা তো আছেই। সেঁজুতি এসব কার্যকলাপ দেখেও দাঁতে দাঁত চেপে থাকে। অফিসে যাওয়ার সময়ে সাওন বারবার বুঝিয়ে গেছে, ওদের সাথে কোনো কথায় না জড়াতে। নিজের মতো কাজ করে তারপরে রুমে এসে যেন বসে থাকে ; অথবা আশিকের সাথে যেন খেলে। সেঁজুতিও চুপচাপ সম্মতি দেয় সাওনের কথায়। মনে মনে ঠিকই সাওনকে ভেঙানি দেয়।
যা বলবে সাওনের সামনেই বলবে, ওর অনুপস্থিতিতে কিছু বললেই সাথে হাজারো রকম বানিয়ে বলবে ; তখন সেঁজুতির উপরে তুফান যাবে। এসব ভেবেই চুপচাপ আছে সেঁজুতি।

দুপুরের খাবারের পরে সবকিছু গুছিয়ে নিজের রুমে এসে মোবাইল ঘাটছে সেঁজুতি। বিয়ের আগেই কত ভালো ছিল, এখন সব দায়িত্ব পালন করলেও কথা শুনতে হয়। অথচ, বাপের বাড়িতে কত সুখ ছিল। সেখানে তো নিজের ভাইয়ের বউ আছে, কই একবারের জন্যও তো সেঁজুতিকে কথা শোনায় না। আর সেঁজুতিও কোনো কটুক্তি কথা বলে না। উল্টো মনের মধ্যে যা কিছু থাকে গড়গড় করে ওর ভাবিকে বলে দেয়। ওর ভাবিও শান্ত মাথায় বলতো, “ এমন কিছু করলে সবাই খারাপ ভাববে, মা-বাবার আদরের মেয়ে তুমি, তোমার ভাইয়ের আদরের বোন। তারা যেন কোনো খারাপ কিছু শুনেনা, তাহলে কষ্ট পাবে। ” এমন বুঝিয়ে কথা বলতো সেঁজুতিকে। কিন্তু শ্বশুর বাড়িতে সব ননদ বড়, তাদেরকে বুঝিয়ে কথা বলতে না পারলেও দুই-একটা ভালো কথাও বলা যায় না। উল্টো কথা শুনিয়ে বসিয়ে রাখে। এগুলো ভাবতে ভাবতে একাএকা বিড়বিড় করছে সেঁজুতি।

কোন ঝগড়াটে বাড়িতে যে বিয়ে দিলো এত যাচাই-বাছাইয়ের পরে ; আল্লাহ জানে আর বাবা-মা জানে।

দরজা থেকে রুমে ঢুকতে ঢুকতে কথাগুলো সাওনের কান অবধি পৌঁছালো। টাইয়ের নট খুলতে খুলতে হেসে প্রশ্ন ছাড়লো সাওন, “ ঝগড়াটে বাড়ি কোথায়?”

হঠাৎ সাওনের কণ্ঠধ্বনি শুনে হকচকিয়ে গেল সেঁজুতি। তাও এই কথাটিই শুনতে হবে! থতমত খেয়ে সাওনকে বলল, “ আমার বাড়ি থেকে ১ ঘন্টার পথ, তারপরেই ঝগড়াটে বাড়ি। ”

সেঁজুতির কথা শুনে ভ্রু কুঁচকে গেল সাওনের। পাশ ঘেঁষে বসে বলল, “ আমাদের বাড়ি থেকে ১ ঘন্টার পথ! এমন বাড়ির নাম তো কখনোই শুনলাম না। ”

খুব জোরেসোরে নিঃশ্বাস ফেলে সেঁজুতি বললো, “ আপনার বাড়ির কথা কে বলছে? আমার বাপের বাড়ি থেকে এক ঘন্টার পথ, সেটা বলছি। আর আপনি জানবেন কীভাবে? কথায় আছে, মক্কার মানুষ হজ্জ্ব পায় না। তাই শুধু শুধু মাথা ঘামিয়েন না। এমনিতেও আপনার মাথায় এসব কথা ঢুকবে না। ”

সেঁজুতির কথা শুনে বিচলিত হয়ে যায় সাওন। সেঁজুতির দিকে কিছুটা ঝুঁকে বললো, “ আমার মাথায় ঢুকবে না মানে? আর মেয়ে হয়ে সবকিছু জানলে আমি কেন জানবো না, হ্যাঁ? ”

সেঁজুতি নড়েচড়ে বললো, “ আপনি একজন জ্ঞানী মানুষ। যাকে মহাজ্ঞানীও বলা যায়। এসব ছোটখাটো কথা আপনার মাথায় থাকবে কেন! তাছাড়া, আপনি ছেলে হয়ে যদি এমন বাড়ির সন্ধান খুঁজেন তাহলে অন্যের বাড়ি গিয়ে সংসার করতে হবে। ”
কথাটি বলতে বলতে হাই তুললো সেঁজুতি। এদিকে সেঁজুতির কথাশুনে কথাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে সাওন। কিছুতেই সফল হচ্ছে না। এই মেয়েটির সব কথাতেই ব্যর্থ সে।

#চলবে

#সেঁজুতি(পর্ব_৮)
#লেখা_সুমাইয়া_আক্তার_মনি

সেঁজুতি নড়েচড়ে বললো, “ আপনি একজন জ্ঞানী মানুষ। যাকে মহাজ্ঞানীও বলা যায়। এসব ছোটখাটো কথা আপনার মাথায় থাকবে কেন! তাছাড়া, আপনি ছেলে হয়ে যদি এমন বাড়ির সন্ধান খুঁজেন তাহলে অন্যের বাড়ি গিয়ে সংসার করতে হবে। ”
কথাটি বলতে বলতে হাই তুললো সেঁজুতি। এদিকে সেঁজুতির কথাশুনে কথাগুলো মিলিয়ে যাচ্ছে সাওন। কিছুতেই সফল হচ্ছে না। এই মেয়েটির সব কথাতেই ব্যর্থ সে।
.
.
সাওন কিছুক্ষণ চুপচাপ সেঁজুতির মুখমণ্ডলের দিকে তাকিয়ে রইলো। তারপরে বললো, “ অন্যের বাড়িতে গিয়ে সংসার করতে হবে? তাহলেই এরকম আজগুবি বাড়ির ঠিকানা পাওয়া যাবে, তাইতো? আমাদের বাড়ির এমন নাম কখন হল, আমিই জানি না! ”

সাওনের কথা শুনে সেঁজুতি ঢোঁক গিলে বললো,“ আমিতো এমনিই বলেছিলাম, আপনার পছন্দ না হলে আবারও ভেবেচিন্তে অন্য নাম রাখবো।”

সেঁজুতির কথা শুনে কপাল কুঁচকে তাকালো সাওন। সেঁজুতি বিছানা থেকে নামতে নামতে বলল, “ অফিস থেকে এসেছেন ফ্রেশ হয়ে নিন। আমি ততক্ষণে সুন্দর নাম খুঁজি আর খাবার গুছিয়ে রাখি।”

সেঁজুতির এমন কথা শুনে খুব জোরেসোরে একটা নিঃশ্বাস নিয়ে সাওন বললো, “ ফাজিল মেয়ে। ”

গম্ভীরমুখ করে সেঁজুতি বললো,“ ভদ্র ছেলে। ”

সেঁজুতির কণ্ঠধ্বনি থেকে এমন কথা শুনবে ভাবেনি সাওন। চোখ বড়বড় করে তাকানো মাত্রই সেঁজুতি দরজা অবধি যেতে যেতে বললো, “ মন রক্ষার জন্যও মাঝেমাঝে ভালো বলতে হয়। ”

এবারে ফিক করে হেসে দেয় সাওন। নিজের চুল নিজে টেনে বললো, “ সুন্দরী বউ থাকলে মাঝেমাঝে পাগলামো কথাকেও ভালো বলে মেনে নিতে হয়। ”

সাওনের কথা শুনে দরজার আড়ালে মুখ লুকিয়ে চলে গেল সেঁজুতি। সাওন হাসছে।

.
.

সন্ধ্যের পরে ড্রয়িংরুমে বসে আড্ডা দিচ্ছে সবাই। আনোয়ারা বেগম ছেলেমেয়েদের মধ্যে যাননি, তিনি তার কক্ষে আছেন। সাওনের দুই বোন আপাতত কিছুই বলেনি, সবাই স্বাভাবিক ভাবেই আছে। এর মাঝেই বই নিয়ে আশিকের পাশে বসলো সেঁজুতি। ওর সাথে আনোয়ারা বেগমের ঝামেলার আগেই বই কিনেছিল। বাচ্চাদের পড়াতে ভালো লাগে। যখন ছোট ছোট হাত দিয়ে বই ছুঁয়ে দেয়, চোখ পিটপিট করে তাকায় সে মুহূর্ত খুব আনন্দের সহিত উপভোগ করে সেঁজুতি।
.
.

বিয়ের আগে টিউশনি করাতো তখন স্টুডেন্টদের পাশাপাশি তাদের ছোট ভাইবোন থাকলে আদরের সাথে খুশি মনে পড়াতো। এরজন্য অভিভাবকরাও বেশ খুশি হতো। শ্বশুর বাড়িতে আসার পরে সবকিছুই গুটিয়ে নিতে হয়েছে, নিজেকে ব্যস্ত রাখতে আনোয়ারা বেগমের তর্ক ছাড়া আর কিছুই নেই। আনোয়ারা বেগমের সাথে কথা কাটাকাটি বেশ উপভোগ করে সেঁজুতি। কারণ, আনোয়ারা বেগম ওর সাথে জিততে পারে না ; যাকে বলে বউ শাশুড়ির হাড্ডাহাড্ডি লড়াই।
আনোয়ারা বেগমও চুপচাপ থাকার নয় সেও লড়াই চালিয়ে যাবে। আবার, সেঁজুতির জন্য মাঝেমাঝে মায়াও কাজ করে তখন নিজ হাতেই রান্না করে রাখবে। কিন্তু পরমুহূর্তেই সবকিছু এলোমেলো হয়ে যায়, হয়তো মেয়েদের সাথে কথা বলার পরে পরিবর্তন হয় নয়তো নিজের কাছেই নিজে হেরে যায়।

.
.

আশিকের সামনে বই রেখে আশেপাশের তাকালো সেঁজুতি। দুই বোন একসাথে বসা, মেজো দুলাভাই পাশেই আর সাওন বসে বসে মোবাইল ঘাটছে। চারিদিকে চোখ দুটো বুলিয়ে বইয়ে নজর দিলো সেঁজুতি। আশিকের হাতের আঙুল ধরে বইয়ের উপরে রাখলো আর পড়ানো শুরু করলো। এবারে আশিকের কথা শুনে সবার চোখ দুটো কোটর থেকে বের হওয়ার উপক্রম হলো। কিছুক্ষণের জন্য সবাই স্ট্যাচু হয়ে নিজ নিজ অবস্থানে বসে আছে। সেঁজুতির মুখেত ভঙ্গিমা অপরিবর্তিত রেখে চুপচাপ আশিকের দিকে মনযোগ দিলো।
আশিক বই পড়া রেখে বায়না নিয়ে বসে আছে।
বইয়ের ছবিতে হাত রেখে আ তে আম বললে সে আম খাওয়ার জন্য বায়না নিয়ে বসে থাকে। এখন আম কোথায় পাবে! ওর বায়না দেখে সবাই বড়সড় একটা ঢোঁক গিললো।
সেঁজুতি কোনোভাবে আশিকের মনযোগ অন্য পড়ায় নিলো, কিন্তু আশিকের মন সেই ‘আম’-এ পরে আছে। এবারে নিজের কপাল নিজে চাপড় দিয়ে আবারও ব্যর্থ চেষ্টা চালাচ্ছে সেঁজুতি।
এ ফর অ্যাপল। এবারে আপেল খাওয়ায় মনযোগ দিলো আশিক। ভাগ্য ভালো ছিল ফ্রীজ থেকে আগেই বের করা ছিলো তাই তড়িঘড়ি করে আশিকের আম্মু আপেল নিয়ে আসলো। ছেলের পড়ার এখানেই সমাপ্তি ঘটলো আজ। সবাই আশিকের কাণ্ড দেখে হাসছে, সেঁজুতি করুণ মুখ করে বসে আছে। ওর জীবনে এই একমাত্র স্টুডেন্ট পেয়েছে আর কাউকে এমন পায়নি।
সাওনের বড় বোন হাসতে হাসতে বললো, “ এই ছেলেরে নিয়ে কী করবো বুঝিনা। বই পড়াতে বসলেউ এমন করবে, আজকে সবাই টের পেয়েছো তো!”

বড় বোনের কথা শুনে বিড়বিড় করে সেঁজুতি বললো, “ আশিকতো খাওয়ার জন্য বায়না করছে, আর আমি তো ঘুমের ঘোরেও ঘুরতে যাওয়ার বায়না নিয়ে কেঁদে উঠতাম। কত ভদ্র ছিলাম আল্লাহ জানে আর আমার পরিবার জানে। ”

সেঁজুতির বিড়বিড় করা কথাগুলো শুনে সাওন চোখ বড়বড় করে তাকায়। সেঁজুতি থতমত খেয়ে চা করার বাহানা দিয়ে উঠে যায়।

সাওন একাএকা মিটমিট করে হাসে। ভাগ্যক্রমে একজন বউ পেয়েছে সে।

.
.
.

সবাইকে চা পরিবেশন করে আনোয়ারা বেগমের রুমে গেল সেঁজুতি। আনোয়ারা বেগম তসবি হাতে নিয়ে বসে আছেন। সেঁজুতির হাতে চা দেখে বললেন, “একটু চায়ের দরকার ছিল এখন। মাথাটা ঝিম ধরে আছে। ”

আনোয়ারা বেগমের কথা শুনে সেঁজুতি বললো,“ মাথা ব্যথা করছে?”

আনোয়ারা বেগমের জবাব,“ একটু। দুপুরে ঘুমানোর পরে আশিকের জন্য ঘুম ভেঙে গিয়েছে তখন থেকেই এমন। ”

আনোয়ারা বেগমের কথা শুনে শান্ত ভাবে সেঁজুতি বললো, “আমাদের ডাকলেন না কেন? ”

আনোয়ারা বেগম বিনয়ের সাথে বললো, “ মাথা ব্যথার জন্য ডাকাডাকি লাগে না। ”

সেঁজুতি আর কথা বাড়ালো না। আনোয়ারা বেগমকে চা খেতে বলে নিজের রুমে আসলো। মাথা ব্যথার মলম নিয়ে আনোয়ারা বেগমের কপালে লাগিয়ে দিলো। আনোয়ারা বেগম কিছুক্ষণ নিশ্চুপ হয়ে তাকিয়ে রইলেন। ঠোঁট নাড়ছে, মুখ দিয়ে অনেককিছু বলতে চাইলেন তবুও কোনো জড়তার কারণে আঁটকে গেলেন তিনি। সেঁজুতিও আর কিছু না বলে সবার সম্মুখে এসে বসলো।

মেজো দুলাভাই ভণিতা করে বললো, “ ভাবি, চা দিতে গিয়ে আঁটকে গেলেন যে!”

সেঁজুতি চায়ের কাপে চুমুক দিয়ে বললো,“ মায়ের মাথাব্যথা করছিল, মাথায় মলম লাগিয়ে দিয়েছি।
ও দুঃখীত আম্মার মাথাব্যথা ছিল।”

সেঁজুতির শেষের কথাটি শুনে কোথাও একটা ছোটখাটো আঘাত পেলো সাওন। সবাই নিশ্চুপ হয়ে আছে। সেঁজুতি কিছু না বলে চায়ে চুমুক দিচ্ছে।

সাওনের বড় বোন হেসে বললো, “সারাক্ষণ নাতি নাতি করতো এখন নাতি এসেই অসুস্থ বানিয়ে দিয়েছে। ”

বড় আপুর কথা শুনে সবাই হেসে দিলো। আশিকের নিষ্পাপ চাহনি কিছুই বুঝতে পারেনি। চুপচাপ এসে সেঁজুতির গায়ে হেলান দিয়ে আছে। মামী বলতে অজ্ঞান সে। এ বাড়িতে আসলেই সেঁজুতির পিছুপিছু থাকবে। সেঁজুতিও আশিকের সমস্ত দায়িত্ব নিজের কাঁধে নেয়। বড়দের সাথে যতই রাগারাগি হোক, সে রাগের সূত্রপাত ধরে বাচ্চাদের সাথে কখনোই রাগ দেখায় না সেঁজুতি।

#চলবে

( আজকে কার্টুন দেখেছি সারাদিন, তাই গল্প লিখতে দেরী হয়েছে। এবং যার যার গঠনমূলক কমেন্ট করতে সমস্যা হয়, তারা দয়াকরে নাইচ, নেক্সটও লিখবেন না। আমি জানি, আপনাদের অনেক কষ্ট হয় এসব লিখতেও। আর এসব দেখার পরে আমারও কষ্ট হয়। পর্ব ছোট হলে অভিযোগ থাকে অথচ এসব কমেন্ট দেখলে আমার অভিযোগ থাকতে পারে না? আপনারা কষ্ট করে এসবও লিখবেন না। আপনাদের কষ্ট সহ্য হয় না।
ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। লেখার পরে আর পড়া হয়নি।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here