#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৪
.
সকালকে পরশ পছন্দ করে। কিন্তু সকাল ওকে একজন ভালো বন্ধু ছাড়া আর কিছু ভাবে না তার প্রমাণ পরশ আজ পেয়ে গেল। এক দীর্ঘশ্বাস ফেলে পরশ চুপ করে বসে রইলো। ও কি পারবে সকালকে নিজের অনুভূতি গুলো বুঝাতে? এসবই ভাবতে লাগলো পরশ।
অনুভব গরম কফির মগ নিয়ে ফোন টিপতে টিপতে নিজের রুমের দিকে যাচ্ছিল। এমন সময় সকাল নিজের রুম থেকে বের হতেই অনুভবের সঙ্গে ধাক্কা লাগলো। গরম ধোঁয়া ওঠা কফিটা সম্পূর্ণ অনুভবের বুকে গিয়ে পরলো। সাথে সাথে অনুভব চোখ-মুখ কুঁচকে ফেললো। বুকটা জ্বলে যাচ্ছে কফি পরায়। সকাল তা খেয়াল করে দ্রুত অনুভবের হাত থেকে মগটা নিয়ে পাশের টেবিলে রেখে বললো,
-“স্যরি স্যরি স্যরি আমি একদম খেয়াল করি নি। আপনার খুব লেগেছে তাই না! প্লিজ মাফ করে দিন।”
অনুভব চোখ খুলে সকালের অসহায় চেহারা দেখে কিছু সময় ওর দিকে তাকিয়ে রইলো। কিছু একটা আছে এই চেহারায়। যা ক্রমশ ওকে বিমোহিত করে তোলে। সকাল অনুভবের হাত ধরতেই অনুভবের সর্বাঙ্গ শিউরে উঠলো। একবার সকালের হাতের দিকে তাকিয়ে আবার সকালের দিকে তাকালো। সকাল হাত ধরে অনুভবকে নিজের রুমে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
-“আপনি আসুন আমার সাথে।”
অনুভব কিছু বললো না। সকালের সাথে সকালের রুমে গিয়ে খাটে বসে পরলো। সকাল অনুভবকে বসতে বলে কোথায় যেন চলে গেল। একটু পরেই হাতে বরফ নিয়ে রুমে ঢুকলো সকাল। তার পেছন পেছন সকালের মা-ও এলেন। উনি নিচে সকালের কাছ থেকে অনুভবের ব্যাপারটা জেনেই দ্রুত চলে এসেছেন অনুভবকে দেখতে। সকালের মা অনুভবকে জিজ্ঞেস করলো,
-“তুমি ঠিক আছো তো বাবা?”
-“হ্যা চাচীমনি আমি ঠিক আছি। তেমন কিছু হয় নি আমার।”
-“তেমন কিছু হয় নি মানে! আমি কত করে বললাম যে তুমি রুমে যাও আমি কফি কাজের লোক দিয়ে উপরে পাঠিয়ে দিব। কিন্তু তুমি শুনলে না। এখন দেখলে কি হলো!”
-“আহা! এত টেনশন করো না তো। কিছু হয় নি আমার।”
সকাল অনুভবকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“গেঞ্জিটা খুলুন।”
অনুভব ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কি?”
-“গেঞ্জিটা খুলুন। বরফ লাগাতে হবে। তারপর মলম লাগাতে হবে।”
-“না না তার দরকার নেই। আমি করে নিবো।”
-“দেখুন কফিটা অতিরিক্ত গরম ছিল। দেরি করলে ফোস্কা পরে যাবে। আর তাছাড়া একা লাগাতে গেলে আপনার কষ্ট হবে। তাই আমি হেল্প করছি। এবার গেঞ্জিটা খুলুন দয়া করে।”
সকালের মা বললো,
-“আমি নিচে যেয়ে রুমিকে দিয়ে মলম পাঠিয়ে দিচ্ছি।”
সকাল মাথা নেড়ে আবারও অনুভবকে বললো,
-“কি হলো! আপনাকে না গেঞ্জি খুলতে বললাম?”
অনুভব ইতস্তত করে গেঞ্জিটা খুলে ফেললো। সকাল খেয়াল করলো বুকের বেশ অনেকাংশ লাল হয়ে গেছে। বোঝাই যাচ্ছে কফিটা বেশ ভালোই গরম ছিল। সকাল বাটি থেকে বরফ নিয়ে অনুভবের বুকে ভালো করে লাগিয়ে দিল। এতে জ্বালাপোড়া ভাবটা অনেকটাই কমে গেল। বেলকনি থেকে নিজের টাওয়ালটা নিয়ে এসে অনুভবের বুকে লেগে থাকা পানিগুলো মুছে রুমির দিয়ে যাওয়া মলমটা নিয়ে লাগিয়ে দিল অনুভবের বুকে। যতবারই সকালের হাতের স্পর্শ নিজের বুকে পাচ্ছে অনুভব, ততবারই শরীরে এক অদ্ভুত শিহরণ কাজ করছে ওর। সকালের দিকে সেই যে তাকিয়েছে এ-র মধ্যে আর পলক ফেলে নি অনুভব। অপ্সরী হয়তো একেই বলে। এত ভয়ংকর সুন্দরী মেয়ে এ জীবনে আর একটি দেখে নি অনুভব। ওপর ওয়ালা হয়তো খুব যত্নে অনেকটা সময় নিয়েই বানিয়েছেন সকালকে, ভাবছে অনুভব। সকাল মলম লাগিয়ে বললো,
-“এখন গেঞ্জি পড়ার দরকার নেই। নাহলে সব মলম গেঞ্জির সাথে লেগে যাবে। বাসায় যতক্ষণ থাকবেন মলম লাগিয়ে ঘরে খালি গায়ে থাকবেন। এতে তাড়াতাড়ি ঠিক হয়ে যাবে। আর আমি রুমিকে বলে দিব ফার্মেসি থেকে মেডিসিন নিয়ে আসতে।”
-“আচ্ছা। ধন্যবাদ।”
-“ধন্যবাদটা নিতে পারলাম না। কারন আমার জন্যই আপনার এই অবস্থা। এ-র জন্য আমি বিশেষ ভাবে আপনার কাছে ক্ষমাপ্রার্থী।”
-“আরে ব্যাপার না। মাঝে মাঝে এমন ভুল হয়েই থাকে।”
-“হুমম। আচ্ছা আপনি যেয়ে বিশ্রাম করুন। আপনাকে কি রুম পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসতে হবে?”
-“আমার জাস্ট বুকে একটু পুড়ে গিয়েছে। পায়ে কিছু হয় নি। সো জাস্ট রিলাক্স! আমি চলে যেতে পারবো।”
-“আচ্ছা তাহলে যান। কিন্তু সাবধানে।”
অনুভব মুচকি হেসে চলে গেল। সকাল ধপ করে বিছানায় বসে পরলো। তখন পরশের উপরে রাগ উঠে গিয়েছিল। যার ফলে বেখেয়ালি ভাবে রুম থেকে বের হতে গিয়ে অনুভবের সাথে ওর সংঘর্ষ হলো। আর অনুভব আঘাতও পেলো। সকাল মন খারাপ করে বই নিয়ে বসে পরলো। মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে। মেডিকেলে যে এত পড়া আগে জানতো না সকাল। যার জন্য এখন অনেক আফসোস করে যে কেন স্নিগ্ধর উপর জেদ বজায় রেখে মেডিকেলে ভর্তি হয়েছে ও। কিন্তু এখন কিছু করারও নেই। মাথায় হাত দিয়ে বই নিয়ে বসলো সকাল। একটু ভালো ভাবে পরলেই সকালের সবকিছু মনে থাকে। স্কুল-কলেজে সব সময়ই ভালো রেজাল্ট করে এসেছে সকাল। তাই পড়াশোনার সাথে ওর তেমন কোনো শত্রুতা নেই। তবে নিজেকে যেভাবেই হোক শক্ত করতে হবে ওর। একজন ডক্টর যদি রক্ত দেখে ভয় পায় তাহলে তো কোনো পেশেন্ট জীবনেও ওর ধারের কাছে ঘেঁষবে না। সকাল বড় বড় দু-তিনটে শ্বাস নিয়ে পড়তে লাগলো।
স্নিগ্ধ দু’টো অপারেশন শেষ করে রাত আড়াইটার দিকে বাড়ি ফিরলো। নিজের রুমে যেয়ে শাওয়ার নিয়ে বেরিয়ে এসে দেখে ফোনের স্ক্রিনে আখির নামটা ভেসে উঠেছে। স্নিগ্ধ ফোনটা রিসিভ করে মুচকি হাসলো। হাসলো আখিও। আগে স্নিগ্ধই কথা শুরু করলো।
-“কিরে কেমন আছিস?”
-“আলহামদুলিল্লাহ। তুই কেমন আছিস?”
-“এইতো আলহামদুলিল্লাহ। তা এত রাতে ফোন করলি যে!”
-“ওরে হাঁদারাম এখানে রাত বলে তোর মনে হয়?”
-“ওহ আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম। তা পলক কেমন আছে?”
-“ভালো। নয়নের সাথে খেলা করছে।”
-“নয়ন বাবাটা কি করে এত সকালে?”
-“ও তো এমন-ই। ভোরবেলা ঘুম থেকে উঠেই ভ্যা ভ্যা শুরু করে দেয়।”
-“হাহাহা…. তোর জন্য একদম ঠিক আছে। তোর মতো চুরায়েলকে তোর ছেলেই ঠিক করবে।”
-“ফাজিল! কি করিস তুই?”
-“হসপিটাল থেকে আসলাম।”
-“এত রাতে! অপারেশন ছিল না-কি?”
-“হ্যা।”
-“ওহ! তো আঙ্কেল-আন্টি ভালো আছে?”
-“এইতো আছে মোটামুটি।”
-“তো! দিনকাল কেমন চলে?”
-“এইতো চলে ভালোই। ওহ আচ্ছা শোন!”
-“বল।”
-“মিস বিকাল আই মিন সকালের কথা মনে আছে তোর!”
-“কোন সকাল?”
-“আরে ওই যে প্রায় তিন বছর আগে একটা পিচ্চি মেয়ে কার এক্সিডেন্ট করে মাঝরাতে হসপিটালে ভর্তি হয়েছিল যে! যাকে তুই চকলেট, আইসক্রিম এনে দিতি লুকিয়ে লুকিয়ে।”
-“ওহ আচ্ছা ওই পিচ্চি? হ্যা মনে পরেছে। খুব মিস করি রে ওকে। কত্ত কিউট ছিল মেয়েটা। তখনি যা ভয়াবহ সুন্দরী ছিল। না জানি এখন কত সুন্দর হয়েছে!”
-“আগের থেকে আরও বেশি কিউট হয়েছে।”
-“তুই কিভাবে জানলি?”
-“আমাদের মেডিকেলেই ভর্তি হয়েছে।”
-“সত্যিই! দেখ ভাগ্যও চায় তোদের মেলাতে। তা নাহলে এত বছর পর আবার দেখা হতো না তোর সাথে। তা কথা বলিস ওর সাথে?”
-“হ্যা। প্রতিদিনই কথা হয়। আজকে ওর সাথে রেস্টুরেন্টে বসে একসাথে লাঞ্চ করেছি। এর আগে একদিন ঘুরতে গিয়েছিলাম ওকে নিয়ে।”
-“ওয়াও… গ্রেট! ভালোবাসিস ওকে?”
-“আখি আমার মনে এখনো নীলামের নামটা গেঁথে রয়েছে। আমার জীবনের প্রথম ভালোবাসা। ওকে ভুলে কি করে অন্য একজনকে ভালোবাসবো আমি বল!”
-“তাই বলে তো আর বর্তমানকে অতীতের সাথে বেঁধে রাখলে চলবে না। জীবন তোকে আরও একটা সুযোগ দিচ্ছে। একবার সুযোগটা কাজে লাগিয়ে দেখ! আমি গ্যারান্টি দিচ্ছি তুই ভালো থাকবি, সুখে থাকবি।”
-“আমি জানি না আমি করব। কিন্তু বর্তমানে যা করছি আমার হয় না আমি ঠিক করছি।”
-“মানে?”
স্নিগ্ধ সবটা বললো আখিকে। আখি বিষ্ময় নিয়ে চেঁচিয়ে বললো,
-“আর ইউ ম্যাড স্নিগ্ধ? কি করছিস কি তুই এসব?”
-“আমি জানি না। কিন্তু আমার ভেতর থেকে এক স্বত্বা আমাকে বারবার জানান দিচ্ছে যে আমি যা করছি ঠিক করছি।”
-“আমি তোর কাছ থেকে এসব আশা করি নি। কাজটা একদম ঠিক করছিস না তুই।”
-“এছাড়া আর কোনো উপায়ও নেই আমার কাছে আখি।”
-“একবার বিষয়টা ভালোভাবে ভেবে দেখিস।”
-“অনেক ভেবেছি।”
-“যা মন চায় কর। তবে আরেকবার ভাবিস। এখন আমি রাখছি।”
-“হুমম।”
আখি ফোন নামিয়ে রাখতেই পেছন থেকে পলক এসে ওকে জড়িয়ে ধরলো। আখি হালকা কেঁপে উঠলো। বললো,
-“আচ্ছা পলক!”
-“হুমম।”
-“বাবা-মায়ের সাথে আর একবার কথা বললে হয় না! না মানে উনারা এখন হয়তো আমাদের মেনে নিবেন। এখন তো আমরা একা নই। আমাদের ঘর আলো করে আমাদের সন্তান আমাদের চোখের মনি নয়ন এসেছে। বাবা-মা হয়তো ওকে দেখে আমাদের মেনে নিবেন।”
পলক আখিকে ছেড়ে বললো,
-“যে বাড়ির লোকেরা তোমাকে অপমান করেছে, সে বাড়ির লোকের কথা তুমি এখনো ভাবো?”
-“কি করব বলো! ছোটবেলা থেকে তো আর বাবা-মায়ের ভালোবাসা পাই নি। বড় হয়ে বুঝতে শেখার পর থেকে তুমি আর স্নিগ্ধই আমার সব। স্নিগ্ধ আমাকে নিজের ছোট বোনের মতো ভেবে সব সময় আমার পাশে থেকেছে। আর তুমি আমাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসে আমাকে নিজের করে নিয়েছো। ভালোবাসতে শিখিয়েছো আমাকে।কিন্তু তোমার বাবা-মা’কে দেখার পর মনে হয়েছে আমিও হয়তো বাবা-মায়ের ভালোবাসা পেতে পারি। কিন্তু উনারা আমাকে মেনে নিলেন না। উল্টো তোমাকেও আমার জন্য উনাদের ছেড়ে থাকতে হচ্ছে। তুমি আমার জন্য উনাদের কেন ছাড়লে পলক?”
-“মন খারাপ কেন করছো? দেখো একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে। আর উনাদের না ছাড়লে তোমাকে ছাড়তে হতো। কিন্তু আমি তোমাকে কিভাবে ছাড়তাম? আমি কি আমার বাবুর আম্মুকে ছাড়তে পারি? আর আমি জানি উনারা একদিন না একদিন ঠিক আমাদের মেনে নিবেন। অন্তত আমাদের এই সোনা বাচ্চাটার মুখ দেখে উনারা আর মুখ ফিরিয়ে থাকতে পারবেন না।”
-“দু’আ করি তাই যেন হয়। খুব শীঘ্রই যেন উনারা আমাদের মেনে নেন।”
-“হুমম। এখন একটু কাছে আসো তো। কতদিন তোমাকে ঠিকমতো কাছে পাই না।”
-“পলক কি করছো কি? নয়ন জেগে আছে, এখনি কান্না করে দিবে।”
-“কাঁদবে না। ওকে ফিডার খাইয়ে ঘুম পাড়িয়ে এসেছি। এখন আর কোনো বাহানা চলবে না।”
আখি হাসলো পলকের পাগলামি দেখে। পলক আখিকে কাছে টেনে নিতেই ওপাশ থেকে নয়ন কেঁদে উঠলো। পলক নিজের কপাল চাপড়াতে লাগলো। আখি হাসতে হাসতে পলককে ধাক্কা দিয়ে উঠে চলে গেল নয়নের কাছে।
স্নিগ্ধ আখির সাথে কথা বলে ফোন কেটে চোখ বন্ধ করে বিছানায় যেয়ে শুয়ে পরলো। বালিশের নিচ থেকে নীলামের ছবিটা বের করে বুকে জড়িয়ে ধরলো। চোখের কার্নিশ বেয়ে জল গড়িয়ে পরলো স্নিগ্ধর। চোখ বন্ধ করতেই চোখের সামনে ভেসে উঠলো নীলামের সাথে কাটানো কিছু মুহূর্ত।
-“মা! মা!”
-“কি হয়েছে নীলাম? চেঁচাচ্ছিস কেন?”
-“ওমা চেঁচাবো না তো কি করব?”
-“কি হয়েছে বলবি তো!”
-“তোমরা আমাকে বিয়ে দিচ্ছো না কেন বলো তো?”
স্নিগ্ধ সবেমাত্র নীলামের বাড়িতে ঢুকতে যাচ্ছিল, কিন্তু নীলামের কথা শুনে ও ‘থ’ খেয়ে দাঁড়িয়ে গেল। নীলাম আবার তার মা’কে বললো,
-“বেচারা আমার স্নিগ্ধটা দিন দিন শুঁকিয়ে যাচ্ছে আমার আশায় আশায়।”
-“ওরে শয়তান মেয়ে রে… সত্যি কথা বল যে তুই আর থাকতে পারছিস না স্নিগ্ধকে ছাড়া।”
-“না না স্নিগ্ধই তো প্রতিদিন আমাকে বলে যে, তুমি কবে আমার হবে? তোমাকে ছাড়া আর থাকতে পারছি না। জানো! আমার না রাতে ঘুম হয় না তোমায় ভেবে। তোমার আশায় আশায় আমি দিন দিন শুঁকিয়ে যাচ্ছি। তোমরাই একটু চিন্তা করো বেচারার বেহাল অবস্থাটা।”
স্নিগ্ধ মাথায় যেন বাজ পড়লো। ও তো এসব কিছুই বলে নি। তবে নীলাম ওর নামে মিথ্যে কেন বলছে? বরং এই সকল কথাগুলো তো নীলাম ওকে বলেছে। ওহ আচ্ছা! তার মানে নীলাম স্নিগ্ধর নাম করে কথা বলছে যাতে তাড়াতাড়ি দুই পরিবার মিলে ওদের বিয়ের ব্যবস্থা করে ফেলে। স্নিগ্ধ বাড়িতে ঢুকে তীক্ষ্ণ দৃষ্টিতে নীলামের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আমার নামে এত বড় মিথ্যে অপবাদ?”
নীলাম স্নিগ্ধকে দেখে একটু হকচকিয়ে গেল। পর মুহূর্তেই বোকা বোকা হাসি দিয়ে বললো,
-“আরে লজ্জা পাচ্ছো কেন? সত্যিটা স্বীকার করে নাও।”
-“আচ্ছা আমি যে এসব বলেছি তার কোনো প্রমাণ আছে?”
এবার নীলাম একটু চিন্তায় পরে গেল। স্নিগ্ধ নীলামের মায়ের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আন্টি তোমার মেয়ে উল্টো আমাকে এই কথাগুলো বলেছে। বিশ্বাস নাহলে আমার কাছে প্রমাণ আছে। ওয়েট দেখাচ্ছি।”
স্নিগ্ধ নিজের ফোনের কল রেকর্ডিং সব সময় অন করে রাখে। ফলে সব কলের রেকর্ডই থাকে ওর কাছে। নীলাম যে কলে এই কথাগুলো বলেছে, তারও প্রমাণ আছে। স্নিগ্ধ রেকর্ডিং-টা বের করে শুনিয়ে দিল নীলামের মা’কে। নীলাম জিহ্ব কামড়ে চুপিচুপি সেখান থেকে কেটে পরলো। স্নিগ্ধ রেকর্ডিং-টা অফ করতেই নীলামের মা হেসে দিলেন। বললেন,
-“তোমরা একে অপরকে অনেক ভালোবাসো আমরা সবাই জানি। যত তাড়াতাড়ি সম্ভব আমরা দুই পরিবার মিলে তোমাদের বিয়ের দিন তারিখ ঠিক করে ফেলবো।”
স্নিগ্ধ মুচকি হেসে নীলামের রুমে চলে গেল। দরজা চাপিয়ে দিয়ে পেছন থেকে নীলামকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-“আমাকে ফাঁসানোর চেষ্টা চলছিল তাই না! আর একদিন আমাকে ফাঁসাতে গেলে না, আমি সবাইকে কিস এ-র ব্যাপারটা বলে দিব। তুমি যে কিভাবে আমাকে জোর করে আমাকো কিস করেছো আর আমার ইজ্জতেও হামলা করেছিলে, সব বলে দিব।”
-“ব্ল্যাকমেইল করছো আমাকে?”
-“যদি মনে করো তাই, তবে তাই-ই।”
-“আচ্ছা! তবে এখনো তা-ই করি।”
-“কি?”
-“জোর করে কিস।”
নীলাম ধাক্কা দিয়ে স্নিগ্ধকে দেয়ালের সাথে লাগিয়ে ধরলো। স্নিগ্ধ কিছু বললো না, অন্য দিকে তাকিয়ে মুচকি হাসলো।
চলবে…