সেই সন্ধ্যা পর্ব-১৭

0
1720

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_১৭
.
পরশ দাঁত দিয়ে নিজের হাত কামড়ে ধরলো কান্না থামানোর জন্য। সত্যি একতরফা ভালোবাসা গুলোর মতো যন্ত্রণা আর কিছুতে নেই। পরশ চেয়েও পারছে না নিজেকে স্বাভাবিক করতে। বুকের বাম পাশটা প্রচন্ড ব্যাথা করছে। এই ব্যাথা ভালোবাসার মানুষটিকে না পাওয়ার ব্যাথা। সে অন্য কাউকে পছন্দ করে সেটা শোনার ব্যাথা। পরশ এক হাত কামড়ে ধরে আরেক হাত দিয়ে নিজের মাথার চুল টেনে ধরলো নিজেকে স্বাভাবিক করার জন্য।
সকাল মন খারাপ করে মেডিকেলের পেছন থেকে সামনে আসতেই দেখলো আফি হাত ভাজ করে বুকের সাথে লাগিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সকাল আফির কাছে যেয়ে ওকে জড়িয়ে ধরলো। সকালের এই মুহূর্তে প্রচন্ড মন খারাপ তা বুঝতে পারলো আফি। মেডিকেলের পেছনে যা হয়েছে সবটাই আফি দেখেছে সাথে শুনেছেও। পরশের জন্য খারাপ লাগলেও কিছু করার নেই। কারন জোর করে তো আর ভালোবাসা হয় না। তাছাড়া সকালের মনে অন্য কেউ রয়েছে। আফি সকালের মাথায় হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললো,
-“মন খারাপ করিস না। দেখবি সব ঠিক হয়ে যাবে। পরশের লাইফে অনেক ভালোবাসার একটা মানুষ আসবে।”
-“সত্যি বলছিস! এমনটা হলে আমি কিছুটা হলেও শান্তি পাবো। নাহলে যে আমার ভেতরে একটা অপরাধবোধ কাজ করছে।”
-“আমি জানি। সেজন্যই বললাম কথাটা। এবার আর মন খারাপ করে থাকিস না।”
-“হুমম।”

সকাল ‘হুমম’ তো বলে দিল। কিন্তু এখনো ওর মন খারাপ। তাই দেখে আফি আর ওকে ঘাটালো না। সকালকে নিয়ে সোজা মেডিকেলের অডিটোরিয়ামের দিকে গেল। সেদিকে অনুষ্ঠান শুরু হয়ে গেছে। সকাল আফির উদ্ভট কিছু কথাবার্তা শুনে আর মন খারাপ করে থাকতে পারলো না। নিমিষেই মনটা ভালো হয়ে গেল ওর। তবে মনের ভেতরে খারাপ লাগাটা এখনো রয়ে গেছে। সকাল এদিক সেদিক তাকিয়ে স্নিগ্ধকে খুঁজতে লাগলো। এত শত শত মানুষের ভীড়ে কিভাবে খুঁজবে ওর ডাক্তার সাহেবকে? অনেকক্ষণ যাবৎ এদিক ওদিক তাকিয়ে স্নিগ্ধর দেখা না পেয়ে চুপচাপ গোমড়া মুখ করে বসে রইলো সকাল। পাশ থেকে আফি সকালকে খোঁচা দিয়ে বললো,
-“মনে আছে আজকে তোকে কি করতে হবে?”
-“কি করতে হবে?”
-“তুই ভুলে গিয়েছিস?”
-“আরে বাবা কি বলবি তো!”
-“তোর না আজকে স্নিগ্ধ ভাইয়াকে প্রপোজ করার কথা!”

আফির কথা শুনে সকালের মুখের ভাবগতি নিমিষেই বদলে গেল। ও তো ভুলেই গিয়েছিল এই কথা। মুখটা চুপসে যাওয়া বেলুনের মতো করে তাকালো আফির দিকে। ভ্রু জোড়া কিঞ্চিৎ উঁচু করে আফি বললো,
-“ঢং করবি না একদম। তুই উনাকে ভালোবাসিস না?”
-“এ্যাকচ্যুলি আমি নিজেও জানি না আমি উনাকে ভালোবাসি কি-না। কিন্তু উনাকে ভাবতে ভালো লাগে আমার। যখন উনার সাথে থাকি তখন আমি সব থেকে বেশি হাসি-খুশি থাকি। উনার সাথে থাকলে আমার দিনে দুনিয়ার কোনো খেয়াল থাকে না। উনার মুখের হাসিতে আমার মনে হয় আমি কোনো এক ঘোরের মাঝে চলে গিয়েছি। মোট কথা হলো, উনাকে দেখলে আমার যেই অনুভূতিটা কাজ করে, সেই অনুভূতি অন্য কোনো ছেলের সাথে থাকলে কাজ করে না। এই অনুভূতিটা একদম ভিন্ন, একদম আলাদা।”
-“ব্যস! এতেই তো প্রমাণ হয়ে যায় যে তুই স্নিগ্ধ ভাইয়াকে ভালোবাসিস।”
-“এটাকেই তবে ভালোবাসা বলে?”
-“হ্যা। তোর এই সকল অনুভূতি গুলো ভালোবাসার আওতায় পরে।”
-“তাহলে এখন!”
-“এখন আর কোনো কথা না। সোজা প্রপোজ করে দিবি।”
-“উনি যদি রিজেক্ট করে দেয় তাহলে?”
-“আরে বাবা রিজেক্ট করবে না তোকে উনি।”
-“তুই এতটা জোর দিয়ে কি করে বলছিস যে উনি আমাকে রিজেক্ট করবে না?”
-“কারন আমি জানি।”
-“কি জানিস?”
-“কচু! চুপচাপ যা বলেছি তা কর। এত প্রশ্ন করছিস কেন?”
-“আমার ভয় করছে ইয়্যার।”
-“ডোন্ট ওয়্যারি বেব। জাস্ট চিল! সোজা যেয়ে প্রপোজ করে দিবি।”
-“তুই আমার হাতে সেই লেভেলের একটা ধোলাই খাবি যদি আমি রিজেক্ট হই তো।”
-“পরেরটা পরে দেখা যাবে। এখন চল ভাইয়াকে খুঁজি।”

সকালকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়ে সকালের হাত ধরে টানতে টানতে নিয়ে গেল আফি। স্নিগ্ধ মেডিকেলে ঢুকার সময় কে যেন ওর নাম ধরে ডাকলো। স্নিগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে সামনে তাকাতেই একটি মেয়েকে দেখে বেশ অবাক হলো। মেয়েটি একগাল হেসে স্নিগ্ধকে জড়িয়ে ধরতেই স্নিগ্ধ হকচকিয়ে গেল। এরকম কিছুর জন্য ও মোটেও প্রস্তুত ছিল না। হালকা ভাবে মেয়েটিকে জড়িয়ে ধরে ছেড়ে দিয়ে ঠেলে সরিয়ে দিল স্নিগ্ধ। কিছুটা অস্বস্তি নিয়ে স্নিগ্ধ বললো,
-“অনন্যা তুমি এখানে?”
-“হ্যা আমি এখানে। অনেকদিন তোমাকে দেখি না। তাই ভাবলাম আজ দেখা করে যাই।”
-“সেটা ঠিক আছে। কিন্তু তুমি কিভাবে জানলে আমি এসময় এখানে আছি?”
প্রশ্নটা শুনে অনন্যাকে একটু অপ্রস্তুত দেখালো। পরক্ষণেই হাসি মুখে অনন্যা বললো,
-“আমি তো জানতাম না। এদিক দিয়েই যাচ্ছিলাম, তখন দেখলাম এখানে স্টুডেন্টদের অনেক ভিড়। দারোয়ানকে জিজ্ঞেস করতেই বললো এখানে না’কি আজ ফাংশন আছে। তাই আমি এখানে তোমার কথা ওয়েট করছিলাম। কারন ফাংশন যখন আছে, টিচার আর ডক্টররাও থাকবে মাস্ট বি।”
-“বাহ! তুমি তো ভালোই ইন্টেলিজেন্ট।”
-“সেটা তো আমি অনেক আগে থেকেই।”
-“আচ্ছা ভেতরে আসো। ফাংশন দেখে যাও।”
-“তুমি থাকবে সাথে?”
-“হ্যা থাকবো।”
-“আচ্ছা চলো তাহলে।”

স্নিগ্ধ অনন্যাকে নিয়ে ভেতরে ঢুকতেই ওর চোখ পরলো সকালের ওপর। ইনোসেন্ট একটা চেহারা বানিয়ে ওর দিকেই তাকিয়ে আছে। মুহূর্তেই মুখে হাসি ফুটে উঠলো স্নিগ্ধর। সকালের দিকে এগোতে গেলেই অনন্যা স্নিগ্ধর হাত ধরে বললো,
-“চলো না আমাকে তোমারদের মেডিকেলটা একটু ঘুরিয়ে দেখাবে।”

অনন্যার কথা শুনে মুহূর্তেই স্নিগ্ধর মুখের হাসি উড়ে গেল। সামনে দাঁড়ানো সকালের দিকে তাকাতেই সকাল মুচকি হাসলো। এই মলিন হাসিটা দেখেই স্নিগ্ধর মন খারাপ হয়ে গেল। কারন ও জানে সকাল ওকে পছন্দ করে। আর এখন অনন্যাকে সাথে দেখে হয়তো সকাল অন্য কিছু ভেবে নিয়েছে। উল্টো দিক ঘুরে আফির হাত ধরে টেনে নিয়ে গেল সকাল। স্নিগ্ধ সেদিকে তাকিয়ে রইলো। অনন্যা স্নিগ্ধর হাত ধরে ঝাঁকিয়ে বললো,
-“কি হলো চলো!”
-“চলো।”
আফিকে নিয়ে কিছুটা দূরে আসতেই সকালের থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে নিয়ে আফি ওকে উদ্দেশ্য করে বললো,
-“এভাবে টেনে নিয়ে আসলি কেন? আমরা তো স্নিগ্ধ ভাইয়াকে খুঁজছিলাম।”
-“ডাক্তার সাহেব এখন ব্যস্ত আছেন।”
-“তুই কিভাবে জানলি?”
-“সামনে তাকিয়ে দেখ, তাহলে তুইও জেনে যাবি।”
সামনে তাকিয়ে স্নিগ্ধকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে কপাল কুঁচকে গেল আফির। সে সকালের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“মেয়েটা কে রে?”
-“আমি কিভাবে জানবো? হয়তো উনার কোনো রিলেটিভ।”
-“কিন্তু তাই বলে তাকে মেডিকেলের ফাংশনে কেন নিয়ে আসতে হবে?”
-“আমি কি জানি?”
-“আচ্ছা দোস্ত! ওই মেয়েটা কোনো ভাবে ভাইয়ার গার্লফ্রেন্ড নয় তো?”
-“উনার গার্লফ্রেন্ড নেই উনি কথাটা আগেই বলেছিলেন।”
-“তাহলে কে? আর দেখ কিভাবে ভাইয়ার সাথে চিপাকাচ্ছে। ভাইয়ার যে অস্বস্তি হচ্ছে তা বুঝা যাচ্ছে ভাইয়ার চেহারা দেখে।”
-“হুম।”
-“এই তোর খারাপ লাগছে না ভাইয়াকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে?”
-“সত্যি বলতে খারাপ লাগছে না, রাগ লাগছে আমার। কিন্তু কি করব বল! এটা তো ফাংশন তাই কোনো সিনক্রিয়েট করতে চাইছি না।”
-“আচ্ছা তুই দাঁড়া। আমি দেখি কিছু করতে পারি কি’না।”

আফিকে বেশ কয়েকবার পিছু ডাকলো সকাল। কিন্তু আফি সেদিকে ভ্রুক্ষেপ না করে দৌড়ে চলে গেল। অনন্যা যেভাবে হাত ধরে রেখেছে, তাতে স্নিগ্ধ সবার সামনে কিছু বলতেও পারছে না। নাহলে খামোখা একটা সিনক্রিয়েট হয়ে যাবে এখানে। স্নিগ্ধ আশেপাশে তাকিয়ে উপায় খুঁজছে অনন্যার কাছ থেকে ছাড়া পাওয়ার। কেন যে সেধে সেধে একে নিয়ে আসতে গেল এখানে আল্লাহ মাবুদ জানে। এমনিতেই মন খারাপ হয়ে আছে তখনকার সকালের মলিন হাসিটা দেখে। ঘাড় ঘুরিয়ে এদিক-সেদিক তাকিয়ে সকালকেও খুঁজলো, কিন্তু পেলো না স্নিগ্ধ। হুট করে কোত্থেকে যেন আফি এসে স্নিগ্ধর সামনে দাঁড়ালো। আফিকে এভাবে সামনে আসতে দেখে অনন্যা ভ্রু কুঁচকে ফেললো। স্নিগ্ধ অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো আফির দিকে। আফি হালকা গলা ঝেড়ে নিয়ে বললো,
-“আসসালামু আলাইকুম স্যার। ভালো আছেন?”
-“ওয়ালাইকুমুস সালাম। এইতো আছি থাকার মতন।”
কথাটা অনন্যার দিকে তাকিয়ে বললো স্নিগ্ধ। যা অনন্যা বুঝতে না পারলেও আফি বুঝলো। মুখ টিপে হেসে বললো,
-“স্যার আপনাকে একটু আমার সাথে আসতে হবে। প্রিন্সিপাল স্যার আপনাকে ডেকেছেন। আপনি সকালে যে গেস্ট লিস্ট উনাকে দিয়েছিলেন, সেখানে একটু প্রবলেম হয়েছে। তাই আপনাকে যেতে বলেছেন।”

স্নিগ্ধ বোঝার চেষ্টা করছে আসলে আফি কোন গেস্ট লিস্টের কথা বলছে। স্নিগ্ধ যখনি কিছু বলতে যাবে তখনি আফি চোখের ইশারায় পেছনে তাকাতে বললো স্নিগ্ধকে। ইশারা বুঝতে পেরে স্নিগ্ধ পেছনে তাকিয়ে সকালকে দেখতে পেয়ে বুঝলো যে আফি নাটক করছে। মুহূর্তেই ওর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। মুখের হাসি বজায় রেখে স্নিগ্ধ বললো,
-“আচ্ছা গেস্ট লিস্ট! হ্যা চলো দেখি কি প্রবলেম হয়েছে ওখানে”
-“জ্বি স্যার চলুন।”
অনন্যা স্নিগ্ধর হাত শক্ত করে ধরে বললো,
-“আমাকে রেখে কোথায় যাচ্ছো?”
-“তুমি এখানেই থাকো। আমি যাবো আর আসবো। প্রিন্সিপাল স্যারের কাছে তো আর আমি তোমায় নিয়ে যেতে পারবো না তাই না?”
-“কিন্তু…
-“বোঝার চেষ্টা করো অনন্যা, এটা আমার কাজের জায়গা। সো প্লিজ! লেট মি গো। আর তুমি এখানেই থাকো। আবার চাইলে বাসায়ও চলে যেতে পারো।”
-“না আমি অপেক্ষা করছি। তুমি আসো।”
-“আচ্ছা।”

স্নিগ্ধ অনন্যাকে রেখে, আফিকে নিয়ে সেখান থেকে সরে পরলো। সকাল অনেক্ক্ষণ যাবৎ অপেক্ষা করছে আফির। মেয়েটা যে কোথায় গেছে কে জানে! সকাল বিরক্ত হয়ে ফোন বের করে আফিকে কল দিতে যাবে, এমন সময় কে যেন ওর হাত ধরে ওকে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। সাথে সাথে মুখ তুলে সামনে তাকিয়ে স্নিগ্ধকে দেখে মুখে কিঞ্চিৎ হাসি ফুটে উঠলো সকালের। পুরো শরীর শিউরে উঠলো স্নিগ্ধর স্পর্শে। পরক্ষণেই চেহারায় আগের মতো বিরক্তিকর একটা ভাব এনে স্নিগ্ধর সাথে যেতে যেতে বললো,
-“আপনি কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন আমাকে?”
-“গেলেই দেখতে পাবে।”

সকাল আর কিছু বললো না। আশেপাশে তাকাতেই দেখতে পেলো অডিটোরিয়ামের গানের তালে আফি উড়াধুরা নাচছে মাঠের একপাশে দাঁড়িয়ে। সাথে ওদের কয়েকজন ক্লাসমেটও আছে। আফি সকালের দিকে তাকিয়ে চোখ টিপ দিতেই সকালের বুঝতে সময় লাগলো না যে স্নিগ্ধকে আফি নিয়ে এসেছে। সকাল মৃদু হাসলো আফির কাজে। সকালকে নিয়ে নিজের কেবিনে আসলো স্নিগ্ধ। সকালের ভেতরে একরকম ভালো লাগা কাজ করছে। আবার লজ্জাও লাগছে। অনেকটা স্নায়বিক অর্থাৎ নার্ভাসও লাগছে।
সকালকে মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে স্নিগ্ধ মুচকি হাসলো। এই মেয়েটার প্রতি এক আলাদা টান অনুভব করে ও। গভীর মায়ায় পরে গেছে সকালের। এই মায়া কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। বরং দিন দিন এই মায়া বাড়বে। কারন মায়া এমনই এক জিনিস যা খুবই জঘন্য। একবার কারও প্রতি মায়া জন্মে গেলে, হাজার চাইলেও সেই মায়া কাটিয়ে ওঠা সম্ভব নয়। নীলাম ছাড়া এই প্রথম অন্য কোনো মেয়ের প্রতি ভালো লাগা জন্মেছে স্নিগ্ধর। ভালো লাগার পাশাপাশি মায়াও জন্মেছে। কেন জানে না স্নিগ্ধর মন বলছে, এই মেয়েই পারবে ওকে ওর অতীত ভুলতে সাহায্য করতে। স্নিগ্ধ ধীর কন্ঠে ডাকলো সকালকে।

-“মিস বিকাল!”
-“হু..হুম।”
-“এভাবে মাথা নিচু করে রেখেছো কেন?”
-“এমনি।”
-“ওহ আচ্ছা। শুনলাম আমার ওপর না’কি তোমার অনেক রাগ লাগছে! কথাটা কি সত্য?”
সকাল মুখ তুলে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“রাগ কেন লাগবে?”
-“আমাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে তোমার না’কি রাগ লাগছে। আফি তো আমাকে তাই বললো।”

সকাল মনে বললো, “আফির বাচ্চা তোর খবর আছে। শালি তুই এই কথা কেন বলতে গিয়েছিস উনাকে? উনি এখন না জানি কি ভাবছে আমাকে? আর কি কি বলেছিস উনাকে কে জানে! আল্লাহ রক্ষা করো। আর হাতির বাচ্চা থুরি আফির বাচ্চাকে তো আমি ছাড়বো না। শালি ঘরের শত্রু বিভীষণ।” কিন্তু মুখে বললো,
-“আমার কেন রাগ লাগবে আপনাকে অন্য একটা মেয়ের সাথে দেখে? আপনি অন্য মেয়েদের সাথে থাকতেই পারেন। হয়তো ও আপনার ফ্যামিলি মেম্বার ছিল।”
-“কিন্তু তোমার চোখ তো অন্য কথা বলছে।”
-“আপনি সকালের চোখও পড়তে পারেন?”
-“জ্বি। কারন তোমার মতো দুষ্টু মেয়ের চোখ খুব সহজেই পড়া যায়। কিন্তু আমি শুধু তোমারটাই পড়তে জানি।”

স্নিগ্ধর কথায় সকালের ভালো লাগার সাথে সাথে লজ্জাও লাগলো। যার ফলে ওর গাল দু’টো গরম হয়ে গেল। হালকা লাল আভা ফুটে উঠলো মুখে। স্নিগ্ধ তা বুঝতে পেরে হালকা হাসলো। বেশ লাগছে সকালকে এভাবে দেখতে। লজ্জা পেলে যে সকালকে আরও বেশি ভয়ংকর সুন্দর লাগে আগে দেখে নি স্নিগ্ধ। আজই প্রথম খেয়াল করলো। কিন্তু এই সকালকে দেখে আজ দ্বিতীয়বারের মতো ওর হৃৎস্পন্দন ওর অবাধ্য হলো। তুলনার চেয়ে অধিক দ্রুত বেগে চলতে লাগলো হৃৎস্পন্দন গুলো।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here