সেই সন্ধ্যা পর্ব-২১

0
1651

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_২১
.
আজ প্রথমবার স্নিগ্ধ তার মিস বিকালকে খোলা চুলে দেখলো। হাঁটু ছাড়িয়ে গিয়েছে তার ঘন কালো লম্বা চুলগুলো। দু’হাত ভরতি কালো চুড়ি। কপালে ছোট একটা কালো টিপ। চোখে চিকন করে কাজল দেয়া। এছাড়া আর কোনো সাজ নেই। স্নিগ্ধ সকালকে দেখে চোখ সরাতে পারছে না। হা করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। হঠাৎ স্নিগ্ধর কি যেন খেয়াল হতেই আশেপাশে তাকালো। প্রায় সব ছেলেই সকালের দিকে হা করে তাকিয়ে আছে। কিছু কিছু মেয়েরাও তাকিয়ে আছে। জিনিসটা মোটেও ভালো লাগলো না স্নিগ্ধর।
সকাল ভীষণ ভাবে বিরক্ত হচ্ছে নিজের চুলের ওপর। ও এরকম সেজেগুজে আসতে চায় নি মেডিকেলে। কিন্তু সকালের মাম্মাম মিসেস রেহেনা জোর করে আজ এভাবে সাজিয়েছেন নিজের মেয়েকে। সকালের এক দূর সম্পর্কের খালামনির মেয়ের আকদ আজকে। মেডিকেল থেকে সোজা ওখানে যাবে বলে সকাল নিজের মাম্মামের জোরাজুরিতে এভাবে সেজে এসেছে। চুলগুলো একহাতে কানের পেছনে গুঁজে দিয়ে ফোন থেকে চোখ সরিয়ে আশেপাশে তাকালো। প্রায় সবাইকে এভাবে ওর দিকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বিরক্ত হলো সকাল। আফিকে দেখতে না পেয়ে ফোনে আফির নম্বর বের করে কল দিতে গিয়ে স্নিগ্ধকে দেখে থেমে গেল। পরক্ষণেই মুখ ফুলিয়ে মেডিকেল বিল্ডিংয়ের ভেতরে চলে গেল।
সকালকে এভাবে চলে যেতে দেখে স্নিগ্ধ হালকা গলা ঝেড়ে দৌড়ে গেল সকালের পেছনে। লিফটে ঢুকে বাটনে চাপ দিতেই স্নিগ্ধ এসে লিফটের ভেতরে ঢুকে গেল। সকাল অবাক হয়ে তাকালো স্নিগ্ধর দিকে। সাথে সাথেই লিফটের দরজা বন্ধ হয়ে গেল। পরক্ষণেই গতকালের ঘটনা মনে পরতেই মুখ ঘুরিয়ে নিলো ও। স্নিগ্ধ চিন্তিত সুরে জিজ্ঞেস করলো,
-“মিস বিকাল কি হয়েছে আপনার?”
সকাল কোনো উত্তর দিল না দেখে স্নিগ্ধ আবারও জিজ্ঞেস করলো,
-“আরে বাবা বলবে তো কি হয়েছে! গতকাল থেকে দেখছি তুমি আমাকে উপেক্ষা করছো। এ-র কারন কি?”
এবার সকাল নাক-মুখ কুঁচকে স্নিগ্ধর দিকে তাকিয়ে বললো,
-“আপনি একটা মিথ্যেবাদী। সকাল আপনাকে উপেক্ষা করছে কাল থেকে! না-কি আপনি সকালকে উপেক্ষা করেছেন?”
স্নিগ্ধ অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“আমি কখন উপেক্ষা করলাম তোমাকে?”
-“এই! একদম এখন ঢং করবেন না। গতকাল ক্লাসে আপনি একবারও আমার দিকে তাকান নি। সকাল কত চেষ্টা করেছিল আপনার মনোযোগ নিজের দিকে নিয়ে আসার জন্য। কিন্তু আপনি! আপনি ইচ্ছে করেই তাকান নি।”
সকালের কথায় স্নিগ্ধর মুখে হাসি ফুটে উঠলো। বললো,
-“গতকাল একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত ছিলাম। সেজন্য কোনো কিছুতে মন বসাতে পারছিলাম না। তুমি এই সামান্য কারনে মুখ ফুলিয়ে রেখেছো?”
-“কথা বলবেন না আপনি সকালের সাথে। সকাল আপনার সাথে রাগ করেছে।”
স্নিগ্ধ হেসে উঠলো সকালের গাল ফোলানো দেখে। সকাল আড়চোখে স্নিগ্ধর দিকে তাকালো। লিফট গন্তব্যে এসে পৌঁছাতেই সকাল বেরিয়ে গেল। স্নিগ্ধও এলো তার পেছন পেছন। স্নিগ্ধকে নিজের পেছনে আসতে দেখে সকাল দাঁড়িয়ে গেল। পেছন ঘুরে বললো,
-“কি হলো! আমার পেছন পেছন আসছেন কেন আপনি?”
-“আমার কেবিন এই ফ্লোরেই। আর সেটা সামনে। তাই আমি এদিকে যাচ্ছি। তোমার পেছন পেছন কোথায় যাচ্ছি?”
-“আপনি… আপনি খুব খারাপ। ধুর ভাল্লাগে না!”
সকাল আবারও গাল ফুলিয়ে হেঁটে ক্লাসের দিকে চলে গেল। স্নিগ্ধ হাসতে হাসতে সামনে এগিয়ে গেল। সকাল ক্লাসে ঢুকতে যাবে এমন সময় স্নিগ্ধ সকালের হাত ধরে ওকে থামিয়ে দিল। সকাল তৎক্ষনাৎ পেছনে ঘুরে তাকালো। স্নিগ্ধ মুচকি হেসে সকালের হাতে একটা ক্যাডবেরি আর একটা কিটক্যাট চকলেট দিয়ে বললো,
-“গতকালের জন্য স্যরি। আর তোমাকে গোমড়া মুখে মানায় না। সবসময় হাসিখুশি থাকবে। এতে করে আমারও ভালো লাগবে।”

স্নিগ্ধ মুচকি হেসে চলে গেল। সকাল ওখানেই থ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ও বুঝতে পারলো না ওর সাথে মাত্র হলোটা কি। কিছুক্ষণ ড্যাবড্যাব করে স্নিগ্ধর চলে যাওয়া দেখে নিজের হাতের দিকে তাকালো। পরক্ষণেই স্নিগ্ধর বলা কথাগুলো মনে পড়তেই খুশিতে লাফিয়ে উঠলো। চকলেট দু’টো বুকে জড়িয়ে ধরে আহ্লাদে আটখানা হয়ে গেল সকাল।
স্নিগ্ধ নিজের কেবিনে বসে হাতের দিকে তাকিয়ে আছে। এই হাত দিয়ে ও একটু আগে সকালকে স্পর্শ করেছে। এক অদ্ভুত ভালো লাগায় আচ্ছন্ন হয়ে আছে ওর মনটা। তার মিস বিকাল তাকে ঠিক কতটা ভালোবাসে তার প্রমাণ সে নিজের ছোট ছোট কাজের মাধ্যমে বা কথার মাধ্যমে সব সময় বুঝিয়ে দেয়। কথাগুলো ভেবেই মুচকি হাসলো স্নিগ্ধ।
স্নিগ্ধর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটলো ফোনের শব্দে। ফোন রিসিভ করে কথা বলা শেষ করে ফোন রাখতে যাবে, সেই সময় চোখে পরলো ফোনের ওয়ালপেপারে থাকা নীলামের ছবিটার দিকে। পরক্ষণেই ওর মনে হলো ও ভুল করছে। ও ভুল করছে সকালের সাথে। ধোঁকা দিচ্ছে নীলামকে। যেখানে ওর পুরো হৃদয়টা জুড়ে নীলাম আছে, সেখানে সকালকে ও জায়গা দিবে কি করে? শুধু ভালো লাগাটা প্রাধান্য দিলে তো চলবে না। ও নীলামকে ঠকাতে পারবে না। যাকে নিজের সবটা দিয়ে ভালোবেসেছে, তাকে রেখে অন্য একজনের সাথে নিজেকে জড়াতে পারবে না। তাহলে সকালের কি হবে? মেয়েটা তো তাকে সত্যি ভালোবাসে। এ-র মাঝে তো সকালের কোনো দোষ নেই। স্নিগ্ধ ওকে আস্কারা দিয়েছে বলেই তো সকাল তার মনে স্নিগ্ধর জন্য অনুভূতিগুলো জমিয়েছে, ভালোবেসেছে স্নিগ্ধকে। ওই পিচ্চি মেয়েটাকে কি করে কষ্ট দিবে স্নিগ্ধ? মেয়েটার মন ভেঙে যাবে যদি স্নিগ্ধ তাকে প্রত্যাখ্যান করে দেয়। মেয়েটা প্রচুর অভিমানী। কিন্তু তার থেকেও বড় কথা হলো মেয়েটার মনে কষ্ট দেয়া ঠিক হবে না। সকাল তো স্বভাবতই বাচ্চা একটা মেয়ে। যদি আবেগের বশবর্তী হয়ে উল্টো পাল্টা কিছু করে বসে তখন! তখন তো স্নিগ্ধ নিজেকে মাফ করতে পারবে না। মাথাটাকে দু’হাতে চেপে ধরে বসে পরলো স্নিগ্ধ। এত লোড ও আর নিতে পারছে না। কি করবে আর কি করবে না কিছুই বুঝে উঠতে পারছে না স্নিগ্ধ।

সকাল দু’টো ক্লাস করেই চলে গিয়েছে মেডিকেল থেকে। আফি সবগুলো ক্লাস করে বেরিয়ে মাঠে আসতেই দেখলো মাঠের এক কোণে পরশ বসে আছে। আফি কোনো কিছু না ভেবে সেদিকে এগিয়ে গেল। দু’দিনেই কি বেহাল অবস্থা করেছে ছেলেটা নিজের। ভালোবাসলে সবাইকেই কষ্ট পেতে হয় বুঝি! হঠাৎ আফির মনটা আঁতকে উঠলো। সকালকেও কষ্ট পেতে হবে না তো, স্নিগ্ধকে ভালোবাসার জন্য? না না স্নিগ্ধ কখনো সকালকে কোনো কষ্ট পেতে দিবে না। সকাল নিতান্তই অবুঝ একটা মেয়ে। ও কষ্ট পেলে ভালোবাসার ওপর থেকে চিরজীবনের মতো ওর বিশ্বাস উঠে যাবে এবার। কিন্তু স্নিগ্ধ তো সকালের প্রেমের প্রস্তাবের কোনো জবাব দেয়নি। আর দিলেও কি দিতে পারে এই নিয়ে এক মহা চিন্তায় পরে গেল আফি। আশেপাশের কিছু ছেলেমেয়েদের চেঁচামেচিতে ধ্যান ভাঙলো আফির। আপাতত সকালের চিন্তা বাদ দিয়ে ও যেয়ে পরশের পাশে বসলো। পরশ আফিকে দেখে মাথা নিচু করে নিলো। ধীর কন্ঠে বললো,
-“তুমি এখানে?”
-“তুমি গত দু’দিন আসো নি কেন মেডিকেলে? আর যখন এসেছে, তখন দেখা করোনি কেন?”
-“কি হতো দেখা করে? সান্ত্বনাবাণী শোনাতে তাই তো!”
-“সান্ত্বনাবাণী শোনার মতো কি কিছু হয়েছে?”
পরশ আফির দিকে অশ্রুসিক্ত নয়নে তাকালো। ছেলেটা যে এতক্ষণ যাবৎ নিজের কান্না আটকানোর চেষ্টা চালাচ্ছিল তা পরশের লাল চোখজোড়া দেখেই বোঝা যাচ্ছে। আফি এক দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে বললো,
-“ছেলেদের কাঁদতে নেই পরশ। আমি জানি তোমার কষ্ট হচ্ছে। এই কষ্ট যেন-তেন কোনো কষ্ট নয়। এটা ভালোবাসার কষ্ট। এই কষ্টটা খুবই ভয়ংকর। একবার এই কষ্ট পেলে, বুকের বাম পাশে যে ছোট একটা হৃদয় আছে না! তা ভেঙে টুকরো টুকরো হয়ে যায়। সবসময় মনে হয় কেউ একজন গলাটা টিপে ধরে রেখেছে। এই কষ্ট শুধু তারাই উপলব্ধি করতে পারে, যারা প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে। আমি জানি প্রেমে ব্যর্থ হওয়ার কষ্ট কেমন। তাই তোমাকে সান্ত্বনা দেয়ার মতো দুঃসাহস আমার নেই।”
-“ভালোবাসলে কষ্ট পেতেই হবে এমন কোনো বাধ্যবাধকতা কি দেয়া আছে কোথাও?”
-“না।”
-“তবে আমার এত কষ্ট কেন হচ্ছে আফি?”
-“কারন তুমি অন্যায় করেছো।”
-“অন্যায়!”
-“হু।”
-“অন্যায় কেন?”
-“ভালোবাসাটাকে আমি অন্যায় মনে করি। কারন আজ পর্যন্ত যারাই ভালোবাসার স্বাদ উপভোগ করতে চেয়েছে, তারাই কষ্ট পেয়েছে। আমরা কষ্ট তখনি পাই যখন আমরা কোনো শাস্তি পাই। আর শাস্তি তখন পাই যখন কোনো অন্যায় করি। অতএব ভালোবাসাটা হলো অন্যায়। সেজন্যই ভালোবাসায় এত কষ্ট।”
-“ভালো বলেছো। তবে ভালোবাসাকে সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি বলে কেন মানুষ?”
-“হয়তো কোনো একজনের ভালোবাসা পূর্ণতা পেয়েছিল কোনো একদিন। তাই সে প্রচার করে দিয়েছে যে ভালোবাসা পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর অনুভূতি।”
-“বাহ! একজনের এই কথাটার ওপর বিশ্বাস করে হাজারো ছেলেমেয়েরা কত বড় ধোঁকা খাচ্ছে দেখেছো!”
-“হু।”

দু’জনেই চুপ হয়ে গেল। আফিরও এবার কান্না পাচ্ছে তার কৃতকর্মের কথা ভেবে। পলাশকে তো ও নিজের সবটুকু দিয়ে ভালোবেসেছিল। তাহলে কেন পলাশ তাকে এভাবে ছুঁড়ে ফেলে দিল? ওর ভালোবাসায় তো কোনো খাঁদ ছিল না। তবে পলাশের ভালোবাসায় খাঁদ ছিল। তাই তো সে পেরেছে আফিকে ভুলে যেতে।
পরশ দু’হাতে মুখ ঢেকে বসে আছে। সকাল তাকে প্রত্যাখ্যান করার পর থেকে তার বুকে এক রকম চিনচিন ব্যাথা অনুভব করছে। ভালোবেসে যে কত বড় ভুল করেছে ও তা আজ বুঝতে পারছে। কি করে পারবে সে সকালকে ভুলে যেতে। ভালোবাসার মানুষটিকে অন্য কারো সাথে দেখলে যে এ বুকের রক্তক্ষরণ কেউ আটকাতে পারবে না। তাছাড়া স্নিগ্ধ কি পারবে সকালের খেয়াল রাখতে? এসব ভেবে পরশ মুখ থেকে হাত সরিয়ে আফির দিকে তাকালো। বললো,
-“আমি সকালকে কখনো ভুলতে পারবো না। এই হৃদয়ে আমি ওকে জায়গা দিয়ে ফেলেছি।”
আফি পরশের দিকে তাকিয়ে বললো,
-“ভুলতে কে বলেছে? ভালোবাসার মানুষকে কখনো ভোলা যায় না। তুমি সকালকে ভালোবাসো, কিন্তু এই ভালোবাসাটা আর কোনোদিনও সকালের সামনে প্রকাশ করো না। নাহলে পরে যখন তোমার মনে পরবে যে সকাল অন্য কারো তখন তোমায় আবারও কষ্ট পেতে হবে। আর সকাল নিজেকে অপরাধী ভাববে। তুমি সকালকে ভালোবাসো, কিন্তু ভালোবাসার সুপ্ত অনুভূতি গুলোকে হৃদয়ের এক কোণে আটকে রেখে দাও, যাতে তারা তোমার অনুমতি ব্যতীত বাইরে বেরিয়ে না আসতে পারে।”
-“কিন্তু সকালকে দেখলেই তো আমি….”
-“শোনো! তুমি সকালের সাথে একদম আগের মতো করে চলা শুরু করো। তুমি ভেবে নাও সকাল তোমার প্রেমিকা হয়নি তো কি হয়েছে? ও এখনো তোমার খুব ভালো বন্ধু আছে। তুমি কি এখন এই ভালোবাসার জালে আটকে থেকে নিজের বন্ধুত্বটাও হারাতে চাও?”
পরশ মাথা নেড়ে না করলো। আফি বললো,
-“তাহলে নিজের অনুভূতি গুলোকে লুকিয়ে রেখে শুধু বন্ধু হিসেবে আবারও মেলামেশা শুরু করো। এতে তুমিও ভালো থাকবে আর সকালও খুশি থাকবে।”
-“হু।”

সকাল সোফার এক কোণে বসে আছে। গায়ে হলুদের আয়োজনে ব্যস্ত সকলে। এখানের কাউকে চিনে না ও। আসার পর থেকে মাম্মাকে খুঁজে চলেছে। কিন্তু না পেয়ে বিরক্ত হয়ে এখানে বসে পরেছে। কিছুক্ষণ পর সকাল খেয়াল করলো ওর মাম্মা সিঁড়ি বেয়ে নিচে নামছে। ও একদৌড়ে সেদিকে চলে গেল। রেহেনা সকালকে দেখে বললেন,
-“তুমি কখন এসেছো?”
-“আধঘন্টা আগে। তোমাকে আমি কখন থেকে খুঁজছি কিন্তু পেলাম না। কোথায় ছিলে তুমি?”
-“আমি ওপরে তোমার যেই আপুর বিয়ে, তার সাথে কথা বলছিলাম।”
-“ওহ আচ্ছা। কিন্তু মাম্মা আমার না অস্বস্তিকর লাগছে।”
-“কেন?”
-“কাউকে চিনি না। একা একা ভালো লাগছে না।”
-“চিনো না তো চিনে নাও।”

রেহেনা সকালের হাত ধরে রান্নাঘরে নিয়ে এলেন ওকে। রান্নাঘরের সব মহিলারাই কাজে ব্যস্ত। তার মধ্যে একজন মহিলা সবাইকে নির্দেশনা দিচ্ছে কোন কাজ কিভাবে করতে হবে। সকালের মাম্মা তাকে ডাক দিলেন। তিনি পেছন ঘুরে সকালকে দেখে বেশ হাসি-হাসি মুখ করে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে এলেন। রেহেনা বললেন,
-“আপা এই হলো আমার মেয়ে সকাল।”
-“মাশাআল্লাহ! কি মিষ্টি দেখতে।”
সকাল একটু হেসে বললো,
-“ধন্যবাদ আন্টি।”
রেহেনা সকালকে উদ্দেশ্য করে বললেন,
-“আজ তোমার যেই আন্টির মেয়ের বিয়ে! সেই আন্টির ননদ উনি। মানে তোমার আরও একটা আন্টি। উনার নাম আসমা।”
সকাল ড্যাবড্যাব করে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে বললো,
-“ননদ কাকে বলে মাম্মা?”
সকালের কথায় আসমা হেসে দিলেন। রেহেনা অসহায় মুখে তার দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“দেখেছেন আপা আমার মেয়ের কাণ্ড! এই অবুঝ মেয়েকে নিয়ে আমি কোথায় যাবো বলুন তো!”
-“আহা তা তোমাকে ভাবতে হবে না। ও এখনো ছোট তাই এসব বুঝে না। তাছাড়া তোমরাও তো কখনো সম্পর্কের এত মারপ্যাঁচ বোঝাও নি ওকে।”
-“তা ঠিক বলেছেন।”
আসমা সকালের দিকে তাকিয়ে হেসে বললেন,
-“ছেলের ছোট বোনেরা সম্পর্কে ছেলের বউয়ের ননদ হয়।”
সকাল তাও কিছু বুঝতে পারলো না। তাই ও নিষ্পাপ চেহারা বানিয়ে তাকিয়ে রইলো। আসমা তা বুঝতে পেরে বললেন,
-“থাক মা, তোমাকে আর এত চিন্তা করতে হবে না।”
-“আচ্ছা।”
-“তুমি মেডিকেলে পড়ছো না!”
-“জ্বি।”
-“বেশ ভালো। আমার ছেলেও একজন ডাক্তার।”
-“ওহ আচ্ছা।”
ডাক্তার শব্দটা শুনতেই সকালের মনে পরলো তার ডাক্তার সাহেবের কথা। পরক্ষণেই আজ সকালের কথা মনে পরতেই এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো ওর মুখে।

চলবে….

নোটঃ গল্প লেখার পর ডিলিট হয়ে গেলে যে কষ্ট লাগে, ব্রেকাপ হলেও মনে হয় অতো কষ্ট লাগে না🥺😭

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here