সেই_সন্ধ্যা পর্ব_৪৩

0
1443

#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৪৩_প্রথম_অংশ
.
অনেকক্ষণ যাবৎ টেবিলে বসে পড়ায় মনোযোগ দেওয়ার চেষ্টা করছে সকাল। কিন্তু কোনোভাবেই সে মনোযোগ দিতে পারছে না পড়ায়। মাথার ভেতরে শুধু স্নিগ্ধ ঘুরঘুর করছে। সকালে ঘটে যাওয়া দৃশ্যগুলো বারবার মনে পড়ছে। কতদিন পর আজ স্নিগ্ধর বুকে ছিল ও। অনেক শান্তি লাগছিল ওর যখন স্নিগ্ধ নিজের সাথে জাপ্টে জড়িয়ে ধরেছিল ওকে। মুখে এক চিলতে হাসি ফুটে উঠলো। আজকে সারাদিন এই হাসি তার মুখে লেগেই ছিল। স্নিগ্ধ নিজেও যে এতদিন তাকে না দেখে হাসফাস করেছে তা জেনে খুব ভালো লেগেছে সকালের। অন্তত ওকে নিয়ে অনুভূতি তো কাজ করে স্নিগ্ধর মাঝে! এই অনেক। কিন্তু এত তাড়াতাড়ি স্নিগ্ধকে মাফ করা যাবে না। এই ক’দিন কম তো কষ্ট পায়নি সকাল। ওর কষ্টগুলো স্নিগ্ধকেও উপলব্ধি করতে হবে।

সম্পূর্ণ টেবিলে ফাইলপত্র ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়ে আছে। মিহু কয়েকটা ফাইল একসাথে নিয়ে আরিফুল ইসলামের বায়োডাটার সাথে মিলিয়ে দেখছে। অনেক কিছুই জানতে পেরেছে মিহু আরিফুলের ব্যাপারে। খোঁজা-খুঁজির এক পর্যায়ে একটা ছবি পেলো মিহু। সেখানে আরিফুল, টিলি, রিয়াজ এবং আরও কিছু বিদেশি লোক আছে। টিলিকে দেখে মিহুর মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেল। এই মেয়েটাই নারীপাচারের পুরো গ্রুপটাকে চালাচ্ছে। বিগত প্রায় চার বছর ধরে ওকে খুঁজছে পুলিশ আর সিআইডিরা। মোস্ট ওয়ান্টেড লিস্টে আছে টিলি। কিন্তু কিছুদিন পর পর নিজের বেশভূষা পাল্টে অন্য দেশে চলে যায়। ফলে ওকে ধরার কোনো চান্স পায়না ওরা। এ পর্যন্ত বহুবার হাতছাড়া হয়ে গেছে টিলি। কিন্তু এবার হাতছাড়া হওয়ার আর কোনো উপায় নেই। কারণ টিলির ডানহাত আরিফুল ইসলামকে তো পেয়েই গেছে ও।

মিহু দ্রুত নিজের টিমের সাথে একটি মিটিং এর ব্যবস্থা করলো। কিছুক্ষণ পরেই মিটিং শুরু হবে। এর মাঝেই তানিশা মিহুর কেবিনে নক করলো।

-“কাম ইন।”

তানিশা ভেতরে এসে মিহুর দিকে একটা ফাইল এগিয়ে দিয়ে বললো,
-“ম্যাম মিস্টার নাজিম, মিস্টার রুবেল আর মিস্টার পাটোয়ারীর পরিবারের খোঁজ তো এখনো পাইনি, তবে উনাদের বাচ্চাদের স্কুল থেকে খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম যেদিন মিস্টার নাজিম, মিস্টার রুবেল আর মিস্টার পাটোয়ারী মারা গিয়েছেন, সেদিনই বাচ্চাদের স্কুলের সামনে থেকে উনাদের বাচ্চাদের কিডন্যাপ করা হয়েছে। এটা অবশ্য কেউ দেখেনি। স্কুলের সামনে সিসিটিভি ক্যামেরা থাকায় আমরা গিয়ে চেক করে দেখতে পেয়েছি।”
-“বাচ্চাদের কিডন্যাপ কেন করা হয়েছিল? আর তারা এখনই বা কোথায়? উনাদের তিনজনকেই বা কেন খুন করেছে? এতকিছুর লোড আমি আর নিতে পারছি না।”
-“আপনার বিশ্রাম প্রয়োজন ম্যাম। গত দু’বছরে আপনি একদিনও ছুটি নেন নি।”
-“দরকার না পড়লে ছুটি নিয়ে কি হবে? আর তাছাড়া এখন বিশ্রাম করার সময় নেই। আগে এই কেস দু’টোর রফাদফা করে নিই, তারপর শান্তিতে কয়েকদিন ঘুমিয়ে নিবো।”
-“ঠিক আছে। ওহ ম্যাম আরও একটা কথা বলতে ভুলে গিয়েছি। যে গাড়িতে করে বাচ্চাদের কিডন্যাপ করা হয়েছিল সেই গাড়ির নম্বর প্লেট সিসিটিভি ক্যামেরায় দেখা গিয়েছে। আমরা নম্বরটা নিয়ে খোঁজ নিয়ে জানতে পেরেছি গাড়িটা ভাড়া করা হয়েছিল। আর যিনি ভাড়া করেছিলেন তার তথ্য এই ফাইলে দেওয়া আছে।”
-“ভ্যেরি গুড।”

মিহু ফাইলটা ভালোভাবে উল্টেপাল্টে দেখে ভ্রু কুঁচকে বললো,
-“এই নতুন ব্যক্তিটা আবার কে এই কেস এর ভেতরে?”
-“গড নোউস। আমি উনার সম্পূর্ণ ডিটেইল বের করতে বলেছি। কালকের ভেতরে ডিটেইল হাতে পেয়ে যাবো।”
-“ওকে।”

মিহু তানিশার সাথে কথা বলতে বলতে মিটিং রুমে চলে গেল। মিটিং এ সবাইকে সবকিছু বুঝিয়ে দিল মিহু।

মেঘ গালে হাত দিয়ে একধ্যানে মিহুর দিকে তাকিয়ে আছে। মিটিং এর কোনো কথা ওর কানে আদৌও ঢুকেছে কি-না সন্দেহ। বারবার শুধু মিহুর দেওয়া চুমুর কথা ভাবছে ও। কেন মিহু ওকে চুমু দিল এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে নিজ মনে মেঘ। কিন্তু এখনো কোনো উত্তর পায়নি। মিহু একাধারে কথা বলে যাচ্ছে আর মেঘ অপলক দৃষ্টিতে ওর ঠোঁটের দিকে তাকিয়ে আছে। হঠাৎ মিহুর চোখ মেঘের দিকে পড়তেই ভ্রু কুঁচকে ফেললো মিহু।

-“মিস্টার মেঘ আপনি কি শুনছেন আমাদের কথা?”
-“(….)”
-“এক্সকিউজ মি!”
-“(….)”

মেঘ এখনো একইভাবে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে মিহুর দিকে। ওর কানে কোনো কথাই যাচ্ছে না। মিহু রেগে গেল মেঘের এমন বেখেয়ালিপনা দেখে। চেয়ার ছেড়ে উঠে দাঁড়িয়ে জোরে বারি দিল টেবিলে। মেঘ হকচকিয়ে গেল।

-“কি হয়েছে? গুলি কে চালালো?”

মিটিং রুমে উপস্থিত সবাই অবাক হয়ে মেঘের দিকে তাকিয়ে ওর কথা শুনে হেসে ফেললো। চোখ দুটো ছোট ছোট করে তাকিয়ে রইলো মেঘ সবার দিকে। মিহু দাঁতে দাঁত চেপে বললো,
-“আপনার ধ্যান এতক্ষণ কোথায় ছিল?”
-“জ্বি মানে… না আসলে আ..আমি…আমি তো মিটিং এর কথাই মনোযোগ দিয়ে শুনছিলাম।”
-“একদম মিথ্যে কথা বলবেন না। আপনাকে আমি অনেকক্ষণ ধরে পর্যবেক্ষণ করছি। আপনি কিছু একটা ভাবছিলেন গালে হাত রেখে। কয়েকবার ডেকেও আমি আপনার কোনো সাড়াশব্দ পাইনি। এখন হুঁশে ফিরে বলছেন গুলি চালালো কে। বলি আপনার কি মাথার তাঁড় সব ছিড়ে গেছে? যদি কাজ করতে ভালো না লাগে তো বলে দিন! আপনাকে এই কেস থেকে সাসপেন্ড করে দেওয়া হবে। আর আমি স্যারের সাথে কথা বলে উনাকে জানাবো যাতে আপনাকে অন্য কারও টিমে দিয়ে দেয়। আপনাদের মতো ফাঁকিবাজ অফিসারের আমার টিমে কোনো জায়গা নেই।”
-“স্যরি ম্যাম। পরবর্তীতে আর এমন হবে না। আমি আমার ব্যক্তিগত একটা ব্যাপার নিয়ে চিন্তিত ছিলাম একটু। সেজন্য মিটিং এ মনোযোগ দিতে পারছিলাম না।”
-“ব্যক্তিগত ব্যাপারগুলো এখানে আসার সময় বাসায় ফেলে রেখে আসবেন। এখানের কাজ শেষ হওয়ার পর ব্যক্তিগত ব্যাপার নিয়ে ভাববেন। নেক্সট টাইম বি কেয়ারফুল। এখন মিটিং এ মনোযোগ দিন।”

মেঘ মাথা নিচু করে বসে পড়লো। রাগে হাত মুষ্টিবদ্ধ করে বসে আছে সে। আজকে তার খামখেয়ালিপনার জন্য এভাবে সবার সামনে তাকে অপমান হতে হবে ভাবতেও পারেনি মেঘ। ভীষণ রাগ লাগছে ওর। নিজের প্রতি আবার মিহুর প্রতিও।

কলেজের উদ্দেশ্যে গাড়ি চলছে। পেছনের সিটে বসে ফোনে ফেসবুকিং করছে সকাল। ফেসবুকিং করার মাঝেই একটা অপরিচিত নম্বর থেকে কল আসলো ওর ফোনে। প্রথমে রিসিভ করবে না ভেবেও পরে রিসিভ করলো।

-“হ্যালো!”
-“এতকিছুর পরও তুমি স্নিগ্ধকেই বিয়ে করবে?”

হঠাৎ এমন প্রশ্নে ভ্রু কুঁচকে গেল সকালের। ও কিছুটা উত্তেজিত হয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-“কে আপনি?”
-“আমি কে সেটা বড় কথা নয়। স্নিগ্ধ তোমাকে ভালোবাসে না জেনেও কেন তুমি ওকে বিয়ে করতে চাইছো?”
-“সেটা নিশ্চয়ই আমি আপনাকে বলবো না! আর আপনাকে কে বললো ডাক্তার… আই মিন স্নিগ্ধ আমাকে ভালোবাসে না?”
-“আমাকে বলতে কেন হবে? আমি তো জানিই ও তোমাকে ভালোবাসে না। তার কারণ ওর মন তো এখনো ওর অতীত নীলামে আটকে আছে।”
-“নীলাম! কে এই নীলাম? আর স্নিগ্ধর অতীত মানে?”

অনেকটা অবাক হয়ে প্রশ্ন করলো সকাল। কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গেছে ওর। ওকে কি এখন এমন কিছু শুনতে হবে, যা ও শুনতে চায় না? নিচের ঠোঁট কামড়ে ধরে ওপাশ থেকে উত্তরের অপেক্ষায় বসে রইলো সকাল।

-“তোমার ডাক্তার সাহেব যদি তোমাকে ভালোই বাসতো তাহলে নিজের অতীত গোপন রাখতো না তোমার কাছ থেকে।”
-“কি বলতে চাইছেন আপনি?”
-“স্নিগ্ধ নীলামকে ভালোবাসে। নীলাম স্নিগ্ধর একমাত্র ভালোবাসা। পুরোপুরি ভাবে সাড়ে তিন বছর হয়ে গেছে স্নিগ্ধর জীবন থেকে নীলাম চলে গেছে। কিন্তু এখনো ও নীলামকে ভুলতে পারেনি। নীলামের প্রতিটা স্মৃতি আঁকড়ে ধরে বেঁচে আছে ও। স্নিগ্ধর বাসার ছাদে যে গোলাপ গাছগুলো দেখেছো, ওগুলো সব নীলামের প্রিয় ছিল বলে স্নিগ্ধ এনেছিল। নীলাম ওর জীবনে নেই তবুও গাছগুলোকে কত যত্ন করে রেখে দিয়েছে। ও যদি তোমাকে ভালোবাসতো তাহলে নিশ্চয়ই নিজের এক্স এর জিনিস এখনো এত যত্নে রাখতো না!”
-“(….)”
-“সেই কথা তো বাদই দিলাম। ও যদি তোমাকেই ভালোবাসতো তাহলে এখনো নিজের রুমে নীলামের ছবি দেখে নিজের চোখেরজল ফেলতো না। ও কিছুদিন আগে তোমার সাথে খারাপ ব্যবহার করেছিল শুধুমাত্র নীলামের জন্য। সেদিন কেউ একজন ওকে বুঝেয়েছিল যে ও নীলামকে ভুলে তোমাকে ভালোবাসতে শুরু করেছে। ও সেই কথাটাকে সত্যি ভেবে রেগে গিয়েছিল। আর সেই রাগ তোমার উপর ঝেড়েছে। ওর ভাষ্যমতে ও শুধু নীলামকে ভালোবাসে আর অন্য কাউকে ও ভালোবাসতে পারবে না।”

ফোনের ওপাশের ব্যক্তির কথা শুনে সকাল পুরো থমকে গেছে। শরীর কাঁপছে ওর। চোখ দুটো জলে ভরে উঠেছে। স্নিগ্ধ অন্য কাউকে ভালোবাসে! আর সেই জন্যই ওকে সেদিন স্নিগ্ধ অতোগুলো কথা শুনিয়েছিল! কিছু বলার মতো ভাষা খুঁজে পাচ্ছে না সকাল। তা-ও নিজেকে অনেক কষ্ট করে স্বাভাবিক করে কম্পিত কণ্ঠে জিজ্ঞেস করলো,
-“তাত..তাহলে উনি আমাকে বিয়ে করতে রাজি হয়েছেন কেন?”
-“ওর মায়ের জন্য। স্নিগ্ধর মা স্নিগ্ধকে অনেক কষ্টে রাজি করিয়েছে যাতে ও তোমাকে বিয়ে করে। কারণ তোমাকে স্নিগ্ধর মায়ের অনেক পছন্দ হয়েছে। ও বাধ্য হয়ে বিয়ে করছে তোমাকে, ভালোবেসে নয়।”
-“আপ..আপনি…আপনি মিথ্যে কথা বলছেন।”
-“আমার কথা বিশ্বাস না হলে তুমি স্নিগ্ধর বাসায় গিয়ে স্নিগ্ধর রুম দেখতে পারো। ওর রুমের দক্ষিণ দিকের দেয়ালের পর্দা সরিয়ে দেখবে সেখানে একটা বড় ছবি টাঙানো আছে। সেটা ওর ভালোবাসা ওর নীলামের ছবি।”
-“(….)”
-“তোমার ভালোর জন্যই তোমাকে আমি এগুলো বললাম। কারণ আমি চাই না বিয়ের পর তুমি অবহেলিত হও স্নিগ্ধর কাছ থেকে। আর তখন এসব জানতে পারলে তুমি আরও বেশি কষ্ট পাবে। তার থেকে বিয়ের আগে সত্যিটা জেনে সিদ্ধান্ত নেওয়া ভালো। আমাকে তুমি নিজের একজন শুভাকাঙ্ক্ষী মনে করতে পারো।”
-“(….)”
-“আমার যা বলার আমি বলেছি। বাকিটা তুমি বুঝে নাও কি করবে না করবে। আশা করি ভালো করে চিন্তা ভাবনা করে তারপর সিদ্ধান্ত নিবে যে তুমি স্নিগ্ধকে বিয়ে করবে কি-না। এখন রাখছি আমি।”
-“(….)”

ওপাশ থেকে লাইন কেটে গেল। কিন্তু সকাল এখনো মূর্তির মতো বসে আছে। ও নিজের কানকে বিশ্বাস করতে পারছে না। চোখেরজলগুলো অঝোর ধারায় গড়িয়ে পড়ছে। ঠোঁট কামড়ে কান্না আটকানোর চেষ্টা করছে সকাল, কিন্ত পারছে না। কিছু একটা ভেবে তাড়াতাড়ি নিজের চোখেরপানি মুছে ড্রাইভারকে গাড়ি ঘুরিয়ে স্নিগ্ধর বাসায় যেতে বললো ও। নাক টেনে জোরে জোরে শ্বাস নিয়ে নিজেকে স্বাভাবিক করতে লাগলো সকাল।

স্নিগ্ধর বাসার সামনে গাড়ি থামতেই গাড়ি থেকে একপ্রকার দৌড়ে বের হলো সকাল। বাসার সামনে দাঁড়িয়ে একসাথে ৪-৫ টা বেল দিল। একটু পরেই আসমা বেগম এসে দরজা খুলে দিলেন। সকালকে দেখে ভীষণ অবাক হলেন উনি। জোরপূর্বক হেসে আসমা বেগমকে সালাম জানালো সকাল।

-“আরে মা তুমি!”
-“জ্বজ..জ্বি আন্টি। আসলে কলেজে যাচ্ছিলাম। আজকে অনেক আগে বেরিয়েছি বাসা থেকে। তাই ভাবলাম আপনার সাথে দেখা করে যাই।”
-“খুব ভালো করেছো। সেই যে একবার এসেছিলে এরপর তো আজই প্রথম আসলে।”
-“জ্বি আন্টি।”
-“তুমি বসো এখানে। আমি তোমার জন্য কিছু খাবারের ব্যবস্থা করি।”
-“না না আন্টি আপনাকে এত ব্যস্ত হতে হবে না। আমি ঠিক আছি।”
-“আরে মা তুমি বসো তো! আমি এখুনি আসছি।”
-“আব.. আ..আন্টি!”
-“কিছু বলবে?”
-“না মানে এ..একটু ওয়াশরুমে যেতে চাচ্ছিলাম আমি।”
-“হ্যা অবশ্যই যাও। স্নিগ্ধর রুম তো চিনোই।”
-“আ.. জ্বি।”

আসমা বেগম মুচকি হেসে রান্নাঘরে যেতেই সকাল সিঁড়ি বেয়ে উপরে চলে এলো। স্নিগ্ধর রুমের দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে আশেপাশে তাকিয়ে দেখলো কেউ নেই। সকালের চোখে জল জমে যাচ্ছে বারবার। হাত-পা কাঁপছে ওর। ধীর পায়ে রুমে ঢুকে দক্ষিণে থাকা দেয়ালের পর্দার দিকে তাকালো। গলা ভীষণ ভাবে শুকিয়ে আসছে ওর। পর্দার সামনে দাঁড়িয়ে একহাতে আলতো করে পর্দা ধরে সরিয়েই থমকে গেল ও। চোখ দুটো মুহূর্তেই জলে ভরে উঠলো। হঠাৎ পেছনে কারও অস্তিত্ব টের পেয়ে পেছন ঘুরে দেখে বাসার এক কাজেরলোক দাঁড়িয়ে আছে। উনি সকালের দিকে তাকিয়ে বললেন,
-“আপায় আমারে কইলো আপনে ঠিক রুমে আইছেন কি-না তা দ্যাখতে। তাই দ্যাখতে আইসেছিলাম।”

সকাল কিছু বললো না। দুটো ঢোক গিলে জিজ্ঞেস করলো,
-“এই ছবিতে থাকা মেয়েটি কে?”
-“ওয় তো নীলাম মা। স্নিগ্ধ বাবার…

বলতে গিয়েও থেমে গেল মহিলাটি। সকাল জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। মহিলাটি মুখ ফস্কে বলে ফেলেছে নীলামের কথা। সকালের দিকে তাকিয়ে ভীত গলায় বললো,
-“আমি যাই, আপায় আমারে ডাকতাছে।”

তড়িঘড়ি করে চলে গেল মহিলাটি। সকাল সেদিকে তাকিয়ে কান্নায় ভেঙে পড়লো। তার মানে সত্যি স্নিগ্ধ এই নীলামকে ভালোবাসে। ও মাঝখানে স্নিগ্ধর জীবনে জোর করে ঢুকেছে! স্নিগ্ধর জীবনে ওর কোনো মূল্যই নেই। স্নিগ্ধ ওর প্রতি যে কেয়ারগুলো দেখায় তা শুধুই করুণা। ওকে স্নিগ্ধ কখনোই ভালোবাসে নি। শুধু করুণা করেছে। চিৎকার করে কাঁদতে মন চাইছে এই মুহূর্তে সকালের। কিন্তু সেই চিৎকারও গলা দিয়ে বের হতে চাইছে না।

প্রায় বিশ মিনিট যাবৎ সোফায় বসে সকালের জন্য অপেক্ষা করছেন আসমা বেগম। কিন্তু কোনো খবর নেই সকালের। একটু পরেই সকাল ধীর পায়ে নিচে নেমে এলো। মাথা নিচু করে রেখেছে ও। আসমা বেগম সকালকে দেখেই হাসলেন।

-“কখন থেকে তোমার জন্য অপেক্ষা করছি আমি। এসো বসো এখানে। কিছু খেয়ে তবেই যাবে।”
-“না আন্টি আমি কিছু খাবো না। আমার পেট ভরা। আসার সময় খেয়ে এসেছি আমি।”
-“তোমার কোনো কথা শুনবো না আমি। একটু কিছু তো অবশ্যই মুখে দিতে হবে তোমাকে।”
-“এখন আর সম্ভব নয় আন্টি। দেরি হয়ে যাচ্ছে আমার।”
-“কিছু না খেয়ে গেলে কিন্তু আমি খুব রাগ করবো।”

সকালের ভেতরে এখন কি চলছে তা শুধু সকালই জানে। আর কিছুক্ষণ এখানে থাকলে নিজেকে সামলাতে পারবে না ও। আসমা বেগম জোর করে ওর হাত ধরে সোফায় বসিয়ে খাবার এগিয়ে দিলেন। সকাল কিছু বলতে যাবে এর আগেই ওর ফোন বেজে উঠলো।

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here