#সেই_সন্ধ্যা
#সুমাইয়া_সিদ্দিকা_আদ্রিতা
#পর্ব_৪৫
.
মাঝরাতের দিকে মেঘ বাসায় আসলো। দরজা খোলা থাকায় বাসায় ঢুকতে সমস্যা হলো না ওর। রুমে ঢুকে আলো জ্বালিয়ে বিছানার দিকে তাকিয়ে মিহুকে না দেখে অনেক অবাক হলো ও। বারান্দায় উঁকি মেরে দেখলো সেখানেও মিহু নেই। ওয়াশরুমের দরজা তো খোলাই আছে। তাহলে এত রাতে মেয়েটা গেল কোথায়? চিন্তায় পড়ে গেল মেঘ।
বাসা থেকে বেরিয়ে যাওয়ার পর মাথা ঠান্ডা হতেই ওর মনে পড়েছে যে ও মিহুকে থাপ্পড় মেরেছে। সেই থেকে নিজের উপর রাগ উঠছে ওর। এই প্রথম কোনো মেয়ের গায়ে হাত তুললো মেঘ। মিহু যে এই নিয়ে একটা কথাও বলবে না তা ও জানে। কারণ মিহুর সাথে এই বাসার মানুষজন হাজার অন্যায় করলেও তাদের কিছুই বলবে না মিহু। শুধু তার দীদার সাথেই মাঝে মাঝে ঝামেলা বেঁধে যায়। কিন্তু আজ বাসায় ঢুকে দীদার সাথে মিহুকে খারাপ আচরণ করতে দেখে সহ্য হয় নি মেঘের। কেন করলো মিহু এমন? ও তো এরকম মেয়ে নয়। আর যাই হোক ওর গায়ে হাত তোলাটা ঠিক হয় নি। মেঘ খুব অনুতপ্ত নিজের কাজের জন্য।
প্রায় আধঘন্টার মতো অপেক্ষা করার পরও যখন মিহুর খবর পেলো না তখন মেঘ উঠে রুমের বাইরে বের হলো। সম্পূর্ণ বাসা অন্ধকার। শুধু ওর রুমেই আলো জ্বলছে। এত রাতে কোথায় যেতে পারে মিহু? মেঘ তার মায়ের রুমের সামনে এসে দাঁড়ালো। আর যাই হোক উনাকে কখনো কিছু না বলে বাসা থেকে বের হয় না মিহু। নিশ্চয়ই উনি জানেন মিহু কোথায়। এই ভেবে মেঘ ওর মায়ের রুমের দরজায় টোকা দিতে গেলে দেখে দরজা আগে থেকেই খোলা আছে। রুমে ঢুকে সুইচবোর্ড হাতড়ে খুঁজে বের করে রুমের আলো জ্বালালো মেঘ। বিছানায় তাকিয়ে এক স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো। মিহু ওর মায়ের কোলে ঘুমিয়ে আছে। আর মেঘের আম্মু একহাত মিহুর মাথায় রেখে বালিশে হেলান দিয়ে বসে ঘুমিয়ে আছেন।
মেঘ খেয়াল করলো ঘুমের ভেতরেও মিহুর চেহারাটা মলিন হয়ে আছে। চোখের কোণে পানি চিকচিক করছে। বড্ড খারাপ লাগলো মেঘের। মিহুকে কোলে তুলে একপাশে শুইয়ে দিয়ে মাকে ধরে ঠিকভাবে শুইয়ে দিল। নাহলে উনার কোমড় ব্যাথা হয়ে যাবে। রুমের আলো নিভিয়ে মিহুকে আবার কোলে তুলে নিজের রুমে নিয়ে গেল। দরজা বন্ধ করে আলো নিভিয়ে ড্রিম লাইট জ্বালিয়ে দিয়ে মিহুকে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। মিহু ঘুমের ভেতরে হালকা নড়েচড়ে উল্টো দিকে ফিরে আবার ঘুমিয়ে গেল।
একহাতে মিহুর চুলগুলো মুখের উপর থেকে সরিয়ে পাতলা কম্বল নিয়ে ওর গায়ে জড়িয়ে দিল ভালোভাবে। মেঘ ওখান থেকে উঠে ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেস হয়ে এসে শুয়ে পড়লো মিহুর পাশে। কোলবালিশটা ইচ্ছে করে অন্যদিকে সরিয়ে রাখলো মেঘ। মিহুর কাছে এসে ওর গা ঘেঁষে শুতেই, উষ্ণতা পেয়ে মেঘের আরও কাছে এসে ওর বুকে মুখ গুঁজলো মিহু। মুচকি হাসলো মেঘ। কপালের উপর থেকে চুল সরিয়ে আলতো করে চুমু দিয়ে মিহুর কানে ফিসফিস করে বললো,
-“স্যরি। আমি ইচ্ছে করে মারিনি তোমাকে। আমার নিজের রাগের উপর কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই জানো তো তুমি! রাগের বশে তোমার গায়ে হাত তুলে ফেলেছি। মাফ করে দিও আমায়। আ’ম রিয়্যালি স্যরি।”
-“উমম…
ঘুমের ভেতরে বেশ বিরক্ত হলো মিহু কানের সামনে ফিসফিস আওয়াজ শুনে। কিন্তু কিসের আওয়াজ হচ্ছে তা বুঝলো না। উল্টো মেঘের বুকে নাক-মুখ ঘষে জড়িয়ে ধরলো মেঘকে। শিউরে উঠলো মেঘ। সেদিন ঘুম থেকে উঠে নিজেকে মিহুর বুকের উপর আবিষ্কার করেছিল। সেদিনই প্রথম ও এত কাছে ছিল মিহুর। আর তারপর আজ আবার এত কাছে থেকে দেখছে মিহুকে। বুকের ভেতরে ঢিপঢিপ করছে ওর। এই মেয়েটাকে দেখে তো অনেক আগেই ঘায়েল হয়ে গেছে মেঘ।
যেদিন ওদের বিয়ে হয়েছিল তার দু’দিন পরেই মিহুর ইচ্ছেতে মিহুকে হোস্টেলে দিয়ে এসেছিল মেঘের বাবা-মা। সেখানে থেকেই মিহু পড়াশোনা করেছে। ওর সকল খরচ উনারাই দিতেন। তখন না কোনো ছুটিতে মিহু বাসায় আসতো আর না কোনো অনুষ্ঠান বা উৎসবে বাসায় আসতো। দীর্ঘ পাঁচ বছর পর মেঘের মা-বাবার জোড়াজুড়িতে হোস্টেল ছেড়ে বাসায় আসতে রাজি হয় মিহু। এতগুলো বছরে মেঘ-মিহু একে অপরের সাথে কথা বলা তো দূরে থাক চেহারাও দেখেনি। পাঁচ বছর পর হোস্টেল ছেড়ে যখন বাসায় আসলো মিহু তখন বাসায় মেঘ ছিল না। রাতে যখন বাসায় এসে রুমে ঢুকলো মেঘ তখন ভীষণ অবাক হয়েছিল নিজের রুমে একটা মেয়েকে দেখে। তার পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল মিহু। পেছন থেকে মেয়েটাকে দেখেই ভালো লাগে মেঘের। হালকা বাদামি রঙের চুলগুলো কাঠি দিয়ে কিছুটা উঁচু করে খোঁপা করা। মেয়েটার পড়নে ছিল লং শার্ট আর ধুতি পাজামা। মেঘ পেছন থেকে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে ছিল ওর দিকে। উল্টো দিকে ঘুরে বসে থাকার জন্য মেয়েটার চেহারা দেখতে পাচ্ছিল না মেঘ। তখনি মেঘের মা শাহনাজ বেগম এসে মেঘকে এভাবে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে কিছুটা অবাক হয়ে বললেন,
-“কিরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন এভাবে?”
শাহনাজ বেগমের প্রশ্নে থতমত খেয়ে যায় মেঘ। আমতা আমতা করে বলে,
-“মেয়েটা কে মা? আমার রুমে কি করছে?”
ততক্ষণে মিহু পড়ার টেবিল ছেড়ে উঠে মেঘের দিকে তাকিয়েছে। মেঘ আরও কিছু বলতে যাবে এর আগেই মিহুকে দেখে হা হয়ে গেল। মেয়েটাকে বেশ চেনা পরিচিত মনে হচ্ছে ওর। কিন্তু কে সেটা ভেবে পাচ্ছে না। মেঘের ঘোর ভাঙলো ওর মায়ের কথায়।
-“তুই ওকে চিনতে পারিস নি! আরে ও মিহু।”
আরো একদফা অবাক হলো মেঘ। এটা মিহু? প্রথমে বিশ্বাস হতে চাইলো না ওর। আগের চেহারার সাথে এই চেহারার খুব একটা মিল নেই। মিহুর সেই হালকা মোটা ঘন ভ্রু আর ঘন চোখের পাপড়ি দেখে এটা যে মিহু নয় তা অস্বীকার করার কোনো কারণ খুঁজে পেলো না মেঘ। কিন্তু অনেকটাই পরিবর্তন এসেছে মিহুর ভেতরে। এই যেমন এখন ওকে দেখে একদম ম্যাচিউর মনে হচ্ছে। আগের থেকে মোটামুটি অনেকটাই সুন্দর হয়েছে। চেহারায় একটা কাঠিন্য ভাব এসেছে।
-“কিরে! কি হলো তোর?”
-“নান..না কিছু না। কিন্তু ও এখানে কি করছে? তাও আমার রুমে!”
-“মিহু এখন থেকে আমাদের সাথে এই বাসায়ই থাকবে। আর তোর সাথে তোর রুমে থাকবে। এই নিয়ে একটা বাড়তি কথাও আমি শুনতে চাই না মেঘ। ভুলে যাবি না যে তোরা স্বামী-স্ত্রী।
-“কিন্তু মা!”
-“কোনো কিন্তু না। তোর বাবা এসে তোকে বুঝাতে চাইলে কিন্তু পিটুনিও খেতে পারিস উনার হাতে।”
-“না না ঠিক আছে। মিহু থাক আমার রুমে। আমি কি নিষেধ করেছি না-কি! আমার কোনো সমস্যা হবে না ও এখানে থাকলে।”
-“গুড! কথাটা মাথায় রাখিস।”
শাহনাজ বেগম রুম থেকে চলে যেতেই মিহু কিছু না বলে আবারও চেয়ারে বসে পড়তে লাগলো। তা দেখে মেঘ ভ্রু চুলকিয়ে বিরবির করে বললো,
-“মেয়ের ভাব দেখো! আমাকে ভাব দেখাচ্ছে। অবশ্য যা রূপ বানিয়েছে তাতে ভাব দেখানোটা অস্বাভাবিক কিছু না। আচ্ছা ওর কি কোনো বয়ফ্রেন্ড আছে? না না কিসব ভাবছি আমি! ও তো আমার বউ। ওর কেন কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকতে যাবে?”
কথাগুলো মেঘ বিরবির করে বললেও মিহু স্পষ্ট শুনতে পেয়েছে। তাই ও চেয়ার ছেড়ে উঠে মেঘের সামনে এসে দাঁড়ালো। মেঘ চোখ দুটো বড় বড় করে তাকিয়ে আছে ওর দিকে। মিহু বললো,
-“তোমার আর আমার বিয়েটা শুধু লোক দেখানো বিয়ে ছিল। তাই এই বিয়েকে এত সিরিয়াসলি নেওয়ার কিছু নেই। তাছাড়া আমি কখনোই তোমাকে আমার হাজবেন্ড মানিনি। আর মনে হয় না সামনেও মানতে পারবো। কেন না তুমি জানো আমাদের সম্পর্কটা সাপ আর নেউলের মতো। আমরা এক রুমে থাকবো, এক বিছানায় ঘুমাবো কিন্তু তুমি কখনো আমার উপর স্বামীর অধিকার ফলাতে আসবে না। যতটা সম্ভব আমার থেকে একটু দূরে দূরে থাকবে। ওহ আরো একটা কথা! আমাদের বিয়েটাকে কিন্তু ঠিক বিয়ে বলা চলে না। কারণ আমরা দুজনই তখন অপ্রাপ্তবয়স্ক ছিলাম। আশা করি আমার কথাগুলো বুঝেছো তুমি। আর না বুঝলেও বোঝার চেষ্টা করো।”
মিহু আবারও পড়ার টেবিলে চলে গেল। মেঘ কিছু না বলে ছাদে চলে গেল। ছাদের রেলিঙের উপর বসে বাইরে পা ঝুলিয়ে দিল। মিহুর কথায় মন খারাপ হয়ে গেছে ওর। খুব খারাপ লাগছে। পকেট থেকে সিগারেটের প্যাকেট আর লাইটার বের করে একটা সিগারেট ধরিয়ে ওগুলো পাশে নামিয়ে রাখলো। এরপর থেকে মেঘ সবসময় চেষ্টা করতো মিহুকে এড়িয়ে চলতে। কিন্তু কোনো না কোনোভাবে সেই মিহুর সাথেই ওর ঝগড়া লেগে যেতো। অবশ্য মেঘ ইচ্ছে করেই ঝগড়া করতো যাতে কিছুটা সময় অন্তত মিহুর সাথে কাটাতে পারে। কিন্তু মিহুর সেই কথাগুলো কখনো ভুলেনি ও। মিহুর উপর একপ্রকার চাপা রাগ আর জেদ করেই অনেক মেয়ের সাথে সম্পর্কে জড়িয়েছে মেঘ। যাকে বলা যায় টাইমপাস। সেই দেখাতেই মেঘ দূর্বল হয়ে পড়েছিল মিহুর প্রতি। আর আজও সেই দূর্বলতা বিন্দুমাত্র কমে নি। বরং আরো কয়েকগুণ বেড়ে গিয়েছে। কিন্তু কখনো তা প্রকাশ করে নি মিহুর সামনে। যদি মিহু ওকে ভুল বুঝে! এই ভয়ে। মিহু কি এতগুলো বছর একসাথে থেকেও মেঘের প্রতি একটুও দূর্বল হয় নি! প্রায় সময়ই এই কথা ভাবে মেঘ। কিন্তু বুঝে উঠতে পারে না।
পুরোনো কথাগুলো মনে করে হাসলো মেঘ। দু’হাতে মিহুকে জড়িয়ে ধরে মাথায় চুমু খেলো। আজ অনেক শান্তির ঘুম হবে ওর, মিহুকে নিজের বুকে জড়িয়ে ধরায়।
মুখের উপর গরম নিঃশ্বাস পড়ায় ঘুম ভেঙে গেল মিহুর। আলতো করে চোখ মেলতেই সামনে মেঘকে ঘুমিয়ে থাকতে দেখে চমকে উঠলো ও। তাড়াতাড়ি করে সরতে গেলে বুঝতে পারলো মেঘ ওকে নিজের সাথে আষ্টেপৃষ্টে জড়িয়ে ধরে আছে। তাই চুপ হয়ে গেল মিহু। বুঝতে পারলো যে কাল রাতে মেঘ ওকে মামনির রুম থেকে নিয়ে এসেছে। কিন্তু কেন? অপলক দৃষ্টিতে মেঘের দিকে তাকিয়ে রইলো মিহু।
-“তোমার সাথে থাকতে থাকতে তোমার মায়ায় খুব বাজেভাবে জড়িয়ে গিয়েছি। এই মায়া আমাকে তোমার দিকে এতটাই ঠেলে দিয়েছে যে ধীরে ধীরে নিজের মনে তোমাকে জায়গা দিয়ে ফেলেছি। ভালোবেসে ফেলেছি তোমাকে। কিন্তু তুমি তো আমাকে সহ্যই করতে পারো না। মাঝে মাঝে তোমার কাজকর্মে আর কেয়ারে মনে হয় তুমি আমায় ভালোবাসো। কিন্তু পরক্ষণেই তা ভুল প্রমাণিত হয়। খুব কি খারাপ হয়ে যেতো আমায় একটু ভালোবাসলে? এতদিন তোমার ঘাড়ের বোঝা হয়ে ছিলাম আমি। চিন্তা করো না, খুব শিঘ্রই এই মিহু নামের বোঝা তোমার ঘাড় থেকে নেমে যাবে। কিন্তু কখনোই তুমি জানবে না যে কেউ একজন তোমায় ভীষণ ভালোবাসতো।”
মনে মনে কথাগুলো ভেবে মেঘের গালে হাত রাখতে যেয়েও থেমে গেল মিহু। কিছু একটা ভেবে মলিন হেসে হাত সরিয়ে নিলো। নিজের উপরে থাকা মেঘের হাতগুলো কষ্ট করে ছাড়িয়ে উঠে গেল। ফ্রেস হয়ে তৈরি হয়ে রুম থেকে বের হওয়ার আগে আরেকবার ঘুমন্ত মেঘকে দেখে নিলো। রুম থেকে বেরিয়ে শাহনাজ বেগমকে বলে অফিসে চলে গেল মিহু। অবশ্য অফিস টাইম শুরু হতে এখনো আরো দেড় ঘন্টার মতো বাকি আছে। বাসায় দম বন্ধ হয়ে আসছিল বলে ও তাড়াতাড়ি বেরিয়েছে বাসা থেকে।
মার্কেটের সামনে গাড়ি থামিয়ে ভেতরে যেয়ে কতগুলো চকলেট বক্স কিনে নিলো স্নিগ্ধ। বাসা থেকে অনেকটা তাড়াহুড়ো করে বেরিয়েছে সকালের সাথে দেখা করার জন্য। মার্কেট থেকে আসার সময় হঠাৎ পাশের একটা দোকানে চোখ গেল ওর। চিন্তা ভাবনা না করেই দোকানে ঢুকে গেল। একটা সিলভার কালারের পেনডেন্ট খুব পছন্দ হয়েছে ওর। স্নিগ্ধ দোকানদারের সাথে কথা বলে পেনডেন্টটা কিনে বেরিয়ে এলো দোকান থেকে। গাড়ির সামনে এসে থেমে গেল অনন্যাকে দেখে। এতক্ষণ অনন্যার প্রতি যে রাগ ও দমিয়ে রেখেছিল, এখন অনন্যাকে দেখে সেই রাগগুলো যেন আগের থেকে দ্বিগুণ বেড়ে গেল। সকালের সাথে আগে কথা বলতে হবে ভেবে নিজের রাগকে নিয়ন্ত্রণ করে নিলো ও। অনন্যা স্নিগ্ধকে দেখে হেসে এগিয়ে এলো ওর কাছে।
-“কি ব্যাপার স্নিগ্ধ! তুমি এখানে কি করছো?”
-“সেই কৈফিয়ত নিশ্চয়ই আমি তোমাকে দিব না!”
-“এভাবে কেন কথা বলছো আমার সাথে?”
-“এর থেকেও জঘন্যভাবে কথা বলা উচিৎ তোমার সাথে। কিন্তু কি বলোতো! আমি তো মেয়েদের অসম্মান করি না তাই তুমি আজ বেঁচে গেলে।”
-“আজব! কি করেছি আমি? তুমি নিজেও খুব ভালো মতো জানো কি করেছো তুমি। আমাকে কল করে নীলাম আর সকালকে নিয়ে আমার মনে দ্বিধা তৈরি করেছো। যখন দেখলে তোমার এই দ্বিধা কাটিয়ে উঠে আমি আবারও সকালকে কাছে টেনে নিচ্ছি তখন তুমি সকালকে কল করে নীলাম আর আমার ব্যাপারে সব বলে দিলে তাই তো!”
-“(….)”
-“কি এখন চুপ কেন! তোমার কি মনে হয় সকাল আমার জীবন থেকে চলে গেলে আমি তোমাকে মেনে নিবো! কখনো না। আমি সারাজীবন একা থাকতে পছন্দ করবো তবুও তোমাকে নিজের জীবনে জড়াবো না।”
-“আমি তোমাকে ভালোবাসি স্নিগ্ধ।”
-“আর আমি সকালকে ভালোবাসি।”
-“কিহ! তুমি না নীলামকে ভালোবাসো?”
-“নীলামকে আমি ভালোবাসতাম। কিন্তু সে আর আমার জীবনে নেই। এখন আমি সকালকে ভালোবাসি। আজ হাজার চেষ্টা করেও তুমি আমায় দ্বিধায় ফেলতে পারবে না।”
-“বাহ! এত সহজে ভুলে গেলে নীলামকে?”
-“তোমার যদি তাই মনে হয় তবে তাই। কিন্তু আমি সকালকেই ভালোবাসি। একটা কথা ভালো করে মাথায় ঢুকিয়ে নাও। যদি পরবর্তীতে কখনো আমার আর সকালের মাঝে তুমি ভুল বোঝাবুঝি তৈরি করার চেষ্টা করো তাহলে খুব খুব খুব খারাপ হয়ে যাবে তোমার জন্য অনন্যা।”
-“ওরফে মিস টিলি রাইট!”
চমকে উঠলো অনন্যা। স্নিগ্ধ অবাক হয়ে পাশে তাকিয়ে দেখে মিহু আর তার সাথে আরো ছয়জন সিআইডি অফিসার দাঁড়িয়ে আছে। অনন্যা ঢোক গিলে নিজেকে স্বাভাবিক করে নিলো। স্নিগ্ধ মিহুর দিকে এগিয়ে এসে বললো,
-“সিআইডি অফিসার মিহু রাইট!”
-“জ্বি।”
-“আপনি এখানে কি করছেন?”
-“ওয়েল আমি তো আপনার মেডিকেলের প্রাক্তন শিক্ষকদের খুনিকে ধরতে এসেছিলাম। বাট আনফরচ্যুনেটলি আপনার কাজিন মিস অনন্যা ওরফে টিলিই সেই খুনি।”
-“হোয়াট!”
স্নিগ্ধ প্রচন্ড অবাক হয়ে অনন্যার দিকে তাকালো। অনন্যার কপাল বেয়ে ঘাম পড়ছে। ভয়ে কাঁপতে শুরু করেছে ও। মিহু বাঁকা হেসে তানিশাকে ইশারা করতেই তানিশা এগিয়ে যেতে লাগলো অনন্যার দিকে। অনন্যা আশেপাশে তাকিয়ে বাঁকা হেসে ব্যাগ থেকে রিভলবার বের করে তানিশার হাতে গুলি করলো। সাথে সাথেই সেখানে একটা গোলমাল বেঁধে গেল। এত এত মানুষের দৌড়াদৌড়ির সুযোগ নিয়ে অনন্যা রাস্তা পাড় হয়ে দৌড়ে গিয়ে নিজের গাড়িতে বসে গাড়ি নিয়ে বেরিয়ে গেল।
মিহু তানিশাকে ধরে উঠিয়ে অন্য অফিসারকে বলে হসপিটালে পাঠিয়ে দিল ওকে। বাকি অফিসাররা আর মিহু গাড়িতে উঠে চলে গেল অনন্যার গাড়ির পেছনে। স্নিগ্ধ সেখানে ঠায় দাঁড়িয়ে রইলো।
চলবে….