সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল পর্ব-১৩

0
7502

#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল

#তানিয়া

পর্ব:১৩

পরীক্ষার হলে বসে আছে মেহু।এখনো প্রশ্নপত্র হাতে আসে নি তার আগেই তার হাত মুখ শরীর ভিজে একাকার।নার্ভাস বেড়েই চলেছে। হয়তো পরীক্ষা শেষ হওয়ার আগ মুহুর্ত পর্যন্ত এ নার্ভাস চলবে।এটা নতুন না ছোট থেকে যখনি কোনো বিষয়ে ভয় পায় বা নার্ভাস হয় তখনি মেহুর শরীর কাঁপতে থাকে।হাত মুখ ঘামে।মেহুর প্রস্তুতি খুব ভালো এর আগে একটা পরীক্ষা দিয়েছে সেখানে ওয়েটিং লিস্টে আছে। জানে না কখন রেজাল্ট দিবে সেটার?মেহু চেষ্টা করছে এবারে যেন একচান্সে চলে আসতে পারে।

পরীক্ষাতে আনা নেওয়ার কাজটা খুব সহজ করে দিয়েছে আদ্য।সে নিজেই এ দায়িত্বটা নিয়েছে।বাসায় এটা ওটার অজুহাত দিয়ে সে কাজের নাম করে মেহুকে নিয়ে বের হয়।মেহু জায়গা মতো নিজেকে তৈরি করে সোজা সেন্টারে চলে যায় সেখান থেকে পরীক্ষা শেষ হলে আদ্য তাকে বাসায় পৌঁছে দেয়।মেহু অবাক হয়ে যায় আদ্যর ব্যবহারে।সত্যিটা জানার পর থেকে মেহু দেখছে আদ্য অনেকটা সহানুভূতির ন্যায় আচরণ করে।কোনোরূপ সমস্যা হলেই অভিভাবকের মতো সেটার সমাধান করে। মেহুর মনে হলো অনেক বছর পর সে আবারও ছায়াতলে এসেছে। ভাবতেই আনন্দে মনটা ভরে উঠে।

আদ্য গাড়ি নিয়ে গেটের বাইরে ছিলো।যা গরম পড়েছে তাতে অনেক অস্থির হয়ে গেছে সে।তাছাড়া গাড়িতেই বা কতক্ষণ বসে থাকা যায় তাই গাড়ি থেকে বের হয়ে এদিক ওদিক হাঁটছিল।সাথে সাথে গেটের দিক দিয়ে ঝাঁকে ঝাঁকে মানুষ বের হতেই বুঝতে পারে পরীক্ষা শেষ হয়েছে। সে অপেক্ষা করছে কখন গেইট দিয়ে মেহু বের হবে সেই হিসেবে? অনেক্ক্ষণ উঁকি দিলো উঁহু মেহু আসছে না।আদ্যর অস্থির লাগছে মেহু এত সময় নিচ্ছে কেন?

অপেক্ষার পালা শেষ হলো যখন মেহু হাসতে হাসতে বের হচ্ছে সাথে একটা মেয়েকে নিয়ে। কোনো কারণ ছাড়াই আদ্যর ঠোঁটে হাসি ফুটে ওঠলো।মেহু এদিক ওদিক তাকাতে আদ্যকে নজরে পড়ে আর দেখেই অবাক হয় কারণ আদ্য তাকে দিতে আসে আর মেহু একা একা চলে যায় কিন্তু আজ এতক্ষণে আদ্য যায় নি দেখে মেহু একটু বেশিই অবাক হয়।মেহু দ্রুত এগিয়ে আসতেই আদ্য হুংকার ছাড়ে,

“এ মেয়ে কি করছিলে এতক্ষণ? এত সময় লাগে বের হতে?সবাই বের হয়ে যাচ্ছে আর তুমি পেছনে পড়ে রইলে কারণ টা কি?”

“আসলে আজকের পরীক্ষাটা খুব ভালো হয়েছে। তাছাড়া আমার জীবনে ভালো কিছু হলে আমি একটু ভয়ে থাকি তাই পরীক্ষা শেষ করে ওয়াশরুমে কিছুক্ষণ পানি দিয়ে মুখ ধুলাম।তাছাড়া হলে ঢোকার সময় একটা মেয়ের সাথে আলাপ হয়েছে তার জন্য অপেক্ষা করতেই…. ”

“হয়েছে অনেক বড় একটা হিস্ট্রি শুনিয়ে দিলে আর লাগবে না। তাড়াতাড়ি গাড়িতে বসো।”

মেহু আদ্যর বাধা পেয়ে আর কথা না বলে গাড়িতে গিয়ে বসে।আদ্য গাড়ি চালাতে শুরু করে।কি মনে করে যেন তারা একটা খাবার দোকানের সামনে নামে।আসলে আদ্য লক্ষ্য করেছে মেহু এ নিয়ে গাড়িতে কয়েকবার পানি খেয়েছে।নিশ্চয়ই খিদে লেগেছে তাই পানি খেয়ে সেটাকে মেটাতে চাইছে।তাই আদ্য নিজেই খাবারের আয়োজন করে।মেহু আদ্যর কাজ দেখে বিস্ময় হয় সাথে খুশিও।আসলে অনেক খিদে লেগেছিল কিন্তু মুখ ফুটে বলতে ভয় করছে তাই বলে নি কিন্তু আদ্যর আচরণে সে আনন্দটা প্রকাশ করলো।

“আব্বা আফনে যে এ ঢাকা শহরে আইছেন আফনের কি মনে হয় আমরা ঐ মা** রে খুইজা পামু?”

“আরে ব্যাটা তুই এত অধৈর্য্য ক্যান?তোর মতো বয়স থেইক্কা আমার অনেক ধৈর্য্য ছিল তাই তো এতো অফমান সওয়নের পরও বাপের ভিটায় গিয়া হুকুম দিতাছি।তয় ঐ ছেমরি মহা খা**কি।একদম মা বাপ দুনোটার মতোই হয়েছে। হের বাপে আমার জীবন শেষ করছে ওহোন হের মাইয়া আমার পোলার জীবন। একবার হাতে পাইয়া লই তয় দেহিস হে দামড়া ছেরির আমি কি করি?অহোন খাইয়া লো। হুনছি ঢাহা শহরে একটা পিঁপড়া হারাইলেও খুইজ্জা পাওন যায়। আর এতো একটা দামড়া মা***।তুই বাপ খাইয়া লো।আর ওতো তোর বউই শুধু কবুল কইনায় দেইখা বিয়া হয় নাই। আর তোরে কত্তো বড় খানার দোকানে আনছি তুই যদি তেজ দেখাইয়া না খাস তাইলে আমার টেহা পানিতে যাইবো বাজান খাইয়া লো।”

বাপ ব্যাটা মজা করে মধ্যহ্ন ভোজনে বসে।মোজাম্মেল আর আজগর যখন মেহুর সন্ধানে পাগল প্রায় তখন তার মতোই এক দালাল খবর দেয় ঢাকা শহর ছাড়া মেহুকে কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।তাই এক সপ্তাহ হলো তারা ঢাকায় এসেছে। আগে স হাতের লাগালের সব জায়গায় খুঁজবে নাহলে মিডিয়া ধরবে।কথিত টাকা দিলে এ শহরে ডাইনোসর মেলে আর এ তো জলজ্যান্ত মেয়ে মানুষ।

খাওয়ার মাঝখানে আজগর হা হয়ে যায়। মোজাম্মেল খেতে খেতে ছেলেকে দেখে নেয়।ছেলের হা করা মুখ দেখে ধাক্কা দেয়,

“কিরে ব্যাটা কোনদিকে তাকাস,খাইয়া লো।আমার টেহা পানিতে ফালাইস না।”

“আব্বা দেহেন তো ঐ ডারে মেহুর মতো লাগে না?আব্বা ঐ দেহেন সাথে একটা বেডাও আছে। ”

মোজাম্মেল ছেলের কথা অনুযায়ী ইতিউতি করে কিন্তু কাউকে দেখে না।তবে বিল কাউন্টারে দুজনকে দেখা যায় তাও মেয়েটা উল্টো দিকে মুখ দেখা যায় না।নির্ঘাত এ ছেলের মাথা গেছে। ঐ মেয়ের কথা ভেবে ছেলেটা বোধ হয় পাগল হয়ে যাবে যা মোজাম্মেলের ধারণা। মোজাম্মেল খাওয়ায় মনোযোগী হয় তখনি তার খাওয়া থেমে যায় কারণ তার কানে একটা শব্দ এসেছে। এটা কি ভুল নাকি সত্যি?

“মেহু তুমি গাড়িতে গিয়ে বসো।আমি বাকিদের জন্য কিছু খাবার নিয়ে যায় নাহলে ওরা আবার রাগ করবে।”

মেহু আদ্যর কথায় হেঁটে দরজার কাছে যায় আর মোজাম্মেলের দৃষ্টি পড়ে তার ওপর।তৎক্ষনাৎ তার খাওয়া বন্ধ হয়ে যায় আর নাকে মুখে খাবার উঠে আসে।এটা কি সত্যিই,তার চোখ ভুল দেখছে না তো?মোজাম্মেল দৌড়ে বাইরে যায় কিন্তু এত শত গাড়ির ভীড়ে মেহুকে দেখে না।যখন আদ্য বের হয়ে গাড়ির কাছে যায় তখনি বাপ ছেলে পেছনে দৌড়ায়।ততক্ষণে গাড়ি নাগালের বাইরে।

মোজাম্মেল একদলা থুতু ফেলে। রাগে তার শরীর কাঁপা কাঁপি শুরু হয়।

“মা**রী এ ঢাকা শহরে আইসা পাখনা গজাইছে।একবার পায় তারপর দেহামু নে!”

উফফ অনেকদিন পর স্বস্তির একটা শ্বাস নিলো মেহু।আজ মনে হচ্ছে সে রিল্যাক্সে ঘুমোতে পারবে।আল্লাহ আজকের পরীক্ষায় যেন সে অবশ্যই জগন্নাথে একটা সাবজেক্ট পেয়ে যায়। তাহলে থাকা খাওয়া নিয়ে তার আর কোনো চিন্তা থাকবে না।এরপর এ বাড়ি থেকে সে চলে যেতে পারবে।তবে এ বাড়ি থেকে গেলেও তার মনে এ বাড়ির জন্য টান থাকবেই আফটার অল তার সাফল্যের জন্য এ বাড়ির মানুষগুলো খুব হেল্পফুল ছিল।বিশেষত আমেনা খালা আর আদ্য স্যার। মেহু ভালো করে দরজা জানলা বন্ধ করে একটা ঘুম দেয়।আমেনা খালা জানিয়েছে এখন কাজ করার দরকর নাই অল্প কাজ সে করে নিতে পারবে।মেহু যেহেতু পরিশ্রম করে এসেছে তাই এবার তার বিশ্রাম দরকার।

মোজাম্মেল আর আজগর একটা বড় বিল্ডিং এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে। মনে হচ্ছে এটা বড়লোকদের কাজের জায়গা কারণ অনেক স্যুট বুট পরা মানুষরা ভেতরে যাওয়া আসা করছে।কিন্তু মোজাম্মেল আর আজগর ভেতরে যেতে পারছেনা।দারোয়ান বারবার বাঁধা দিচ্ছে। তাদের কাপড়চোপড়ের যা অবস্থা তাতে বোঝাই যাচ্ছে তাদের ভিক্ষুক ছাড়া আর কিছুই মনে হচ্ছে না।বাপ ছেলে অনেক্ক্ষণ দাঁড়ানোর পর হঠাৎ একটা গাড়ি বের হতে দেখে। আর সেখানে আদ্যকে দেখে। চট করে দুজনে একটা সিএনজিতে উঠে গাড়িটাকে ফলো করতে থাকে। এক সময় বিশাল এক বাড়ির সামনে এসে সিএনজি থামলেও গাড়ি ভেতরে চলে যায়। দুজনের বুঝতে বাকি রই না এটাই আদ্যর বাড়ি আর এখানেই মেহুর খোঁজ পাওয়া যাবে।তারা অপেক্ষা করে সময়ের যে ফাঁকে এ বাড়িতে ঢুকতে পারবে!
,
,
,
চলবে…….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here