সেদিনও জ্যোৎস্না ছিল পর্ব-২১

0
7284

#সেদিনও_জ্যোৎস্না_ছিল

#তানিয়া

পর্ব:২১

মেহু আবারও সেই পুরোনো সময়ের মতো একা একা চালাঘরে বাস করছে।একটা সময়ে ভয়ে ছিল কিন্তু এখন সেটা নেই কারণ এখন তাকে নিয়ে কারো কোনো মাথা ব্যাথা নেই সবাই সোহানাকে নিয়ে ব্যস্ত। আদ্যর সাথে বলতে গেলে এখন মেহুর খুব একটা দেখা হয়না।অফিস শেষ করে এসেই আদ্য আর সোহানা গল্প নিয়ে মেতে উঠে। খাবার টেবিলেও মেহু যায় না।রাতে শোবার ঘরে দেখা হওয়ার যে ক্ষীণ আশা ছিল সেটাও বন্ধ কারণ মেহুর স্থান ছাদে।সব মিলে খুব একটা দেখা হয়না দুজনের।তাতে কি,আদ্যর সময় তো ভালোই যাচ্ছে কিন্তু বিচ্ছিন্ন ঘরে একাকী রাত্রি যাপনে নিশাচর পাখির মতো রাত কাটছে মেহুর।

সোহানা মেহুকে কাজের হুকুম দিলে মেহু সেটা নির্বিকারে করে দেয় কারণ সোহানাকে তুষ্ট রাখায় যেন এ বাড়ির ধর্ম।এ নিয়ে লুৎফা শাহেদের সাথে কথা বলেছিল শাহেদ খুব শান্ত জবাবে জানায়,কাজের মেয়েকে কাজের হুকুম দিলে জাত যায় না।তাছাড়া বিয়ে হয়েছে তো কি হয়েছে তিনমাস পর সেই বিয়ের ডিভোর্স হবে অতএব এখন আর ওসব ভেবে লাভ নেই। লুৎফা স্বামীকে চটানোর সাহস পেলো না।

দিন দিন আদ্য কেমন জানি আরো পরিবর্তন হচ্ছে। আগে ধমক দিতো না এখন আবার উঠতে বসতে ধমক দিতে শুরু করেছে এমনকি সোহানা এখন আদ্যর সামনেও মেহুকে দাসীর মতো হুকুম করে মেহু পিটপিট চোখে আদ্যর দিকে তাকায় তাতে আদ্য সোহানার সাথে গল্পে মগ্ন থাকে।মেহু কি বলতে বা বোঝাতে চায় তা যেন তার জানার দরকার পড়ে না।

নীলা আর সূচী আড়ালে মেহুকে বিভিন্ন ভাবে সাপোর্ট দেয় কিন্তু তাতে কি? এ বাড়িতে যার ভরসায় মেহুর অবস্থান সে মানুষটাই তো মেহুকে গুরুত্ব দিচ্ছে না তাহলে মেহু আর কার আশায় থাকবে।

মেহুর খুব গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস চলছে কিন্তু সেটার মাঝে তার মন নেই। মেহুর মন পড়ে আছে সংসারের যাবতীয় চিন্তার মাঝে। তার ওপর বাসায় নানা রকমের সমস্যা তো লেগেই আছে। মেহু বুঝতে পারছে না, যে আদ্য তাকে বাঁচানোর জন্য এতকিছু করলো তাতে কি মেহুর প্রতি তার একটুও মায়া ছিলো না।মেহু কতকিছু করলো আদ্যকে নিজের অনুভূতি বোঝানোর কিন্তু কি হলো কিছুই না।উল্টো সে নিজেই কষ্ট পেলো।

আজ আদ্য তাড়াতাড়ি অফিস থেকে ফিরেছে উদ্দেশ্য হলো সোহানাসহ বাড়ির সবাইকে নিয়ে বাইরে ডিনার করবে। সেই সুবাদে অফিস থেকে ফিরেই লম্বা শাওয়ারে ঢুকে।টাওয়াল জড়িয়ে বাইরে বের হতে দ্বিধায় পড়ে যায় কোন কাপড়টা পরবে।সে কোনোভাবেই ভালো পোশাক চুস করতে পারছেনা।তাই মেহুকে ডাক দেয়।মেহু বাইরেই ছিলো ডাক শুনে রুমে এসে থমকে যায়। গোসল করায় আদ্যর সারা শরীরে বিন্দু বিন্দু পানির কণা লেগে আছে তার ওপর তার চুল থেকে টুপটুপ করে জল পড়ছে।ইশশ মেহুর মনে অন্য রকম অনুভূতি কাজ করছে।তার ইচ্ছে করছে সোজা গিয়ে ঐ উন্মুক্ত বুকে গিয়ে কিছুক্ষণ মাথা রাখতে।এমনকি আদ্যর ভেজা চুলগুলো খুব সুন্দর করে মুছে দিতে কিন্তু সেই সুযোগটা তার হাতে নেই। মনের মধ্যে কতো ইচ্ছে হাতছানি দেয় কিন্তু সব ইচ্ছ কি আর পূরণ হয়?মেহুর পাথর রূপ দেখে আদ্য ভ্রু তুলে।চেহারায় কাঠিন্য এসে জিজ্ঞেস করে,

“কি সমস্যা এভাবে কি দেখছো?”

অন্য জগতে থাকায় মেহু এতক্ষণ বুঝতে পারে নি সে জাগ্রত অবস্থায় স্বপ্ন দেখছে তাই লজ্জা পেয়ে জিভে কামড় দেয়।মেহু চোখ নামিয়ে প্রশ্ন করে,

“আমাকে ডেকেছেন?”

“হু কিন্তু তোমাকে যার জন্য ডেকেছি তুমি তো সেই অবস্থা নেই মনে হচ্ছে কল্পনার রাজ্য আছো।যায় হোক আমাকে একটা স্যুট চুস করে দাও তো।বুঝতে পারছি না কি পরবো
তাছাড়া এ প্রথম সোহানার সাথে ডিনারে যাচ্ছি তাই সুন্দর করে না গেলে কি হয়?দাও চটপট ড্রেস চুস করো।”

রাগে মেহুর চোখ মুখ শক্ত হয়ে গেলো।ইচ্ছে করছে ঐ বুকে মাথা না কয়েকটা কিল ঘুষি দিতে।আহা কি কথা!প্রথম ডিনার যাচ্ছে তাই সেজে না গেলে যেন হয় না।কই এতদিন হলো বিয়ের একবারও তো তাকে নিয়ে বারান্দায়ও গেলো না আর কোত্থেকে কে এলো তাকে নিয়ে…..। মেহু কিছু বলতে যাবে তখনি সোহানা এসে রুমে ঢুকে গেলো।

“হেই হ্যান্ডসাম বয় হোয়াট আর ইউ ডুয়িং?অও ইউ আর লুকিং সো সেক্সি।”

কথাগুলো বলতে বলতে আদ্যর কাছাকাছি চলে যায়।নিজের একটা আঙুল দিয়ে আদ্যর বুকে স্লাইড করছে।আদ্য খুব শান্ত ভঙ্গিতে মিষ্টি হেসে চেয়ে আছে। সবটা দেখে মেহুর চোখের কোণে জল চিকচিক করে।মেহু নিজের উপস্থিতি জানান দিতে গলা খাকড়ি দেয়।আদ্য হঠাৎ এমনভাব দেখায় যেন মেহু এখানে ছিলো সেটা সে জানতোই না।আদ্য মেহুকে বলে,

“মেহু তুমি চলে যাও।তোমাকে আর চয়েস করতে হবে না।আমার ড্রেস সোহানা চুস করবে কি সোহানা পারবে না?”

সোহানা বিশ্বজয়ের তৃপ্তি নিয়ে আদ্যর কথায় সায় দেয়।মেহু পেছনে না ফিরে চোখের জল ফেলতে ফেলতে বের হয়ে যায়। মেহু জানে পেছনে যা চলছে সেসব সহ্য করার ক্ষমতা তার নেই।

মেহু ঘরে বসে পড়ছে।এখন তার অনেক পড়া বাকি।সামান্য ক’টা বই কেনা হয়েছে। কিছুই শুরু করা হয় নি।এর মধ্যে যত ঝামেলা যাচ্ছে তাতে মন বসানো সম্ভব হচ্ছে না।না আর কিছু ভাববে না এবার মন লাগিয়ে পড়াশোনা করবে মেহু।

বাড়ির সবাই ডিনারে গিয়েছিল এসেছে কিনা মেহু জানে না।সবাই যাওয়ার পর থেকে মেহু একবারের জন্যও নিচে নামে নি।লুৎফা, নীলা সূচী সবাই মেহুকে জোর করছিল তাদের সাথে যাওয়ার জন্য কিন্তু মেহু যায় নি।না যাওয়ারও কারণ আছে, যাদের সাথে যাবে স্পেশিয়াল যে তাকে নিয়ে যাবে সে আদ্যই তাকে একবারও মুখ ফুটে বলে নি তাহলে সে কার মুখ পানে চেয়ে যাবে?তাই সে যায় নি।অবশ্যি মেহু সবার যাওয়ার শেষ অবধি অপেক্ষায় ছিল যে আদ্য তাকে একবারের জন্য হলেও বলবে তৈরি হতে কিন্তু সে গুড়ে বালি!আদ্য নাচতে নাচতে সোহানাকে নিয়ে মেহুর সামনে চলে গেলো আর মেহু সেদিকে চেয়ে একফোঁটা জল ফেলল। শেষ পর্যন্ত তার যাওয়া হলো না।

রাত প্রায় ১১ টা বাজে হৈ হৈ করে সবাই বাড়ি ফিরলো। মেহু নিচের কাজগুলো শেষ করে আমেনা খালার সাথে কথা বলছিল।আমেনা খালা বারবার মেহুকে খেতে বলেছে কিন্তু মেহুর বুকের চাপা কষ্ট কমাতে না খেয়ে বসে ছিল।অন্তত একরাত না খেলে তো সে মরে যাবে না।আদ্য বাড়িতে ঢুকেই আমেনা খালাকে ডেকে হাতে কিছু প্যাকেট দেয় যেখানে তার আর মেহুর জন্য খাবার আনা হয়েছিলো।মেহু একটু দূরে দাঁড়িয়ে আদ্যর কথা শুনছিল।হাসি হাসি মুখে নীলা আর সূচী ঢুকছিল কিন্তু মেহুর শুকনে মুখটা দেখে তাদের মনটা খারাপ হয়ে গেলো। মেহু ওদের বিষয়টা ধরতে পেরে হেসে উঠে যাতে ওরা সহজ হতে পারে।নীলা এগিয়ে এসে বলে,

“সরি প্রিয় জা তোমাকে ফেলে আমরা খেতে গেছি।কি করবো বলো তোমার ভাই কে বললাম তোমার কথা কিন্তু সে বললো তার পক্ষে বলা সম্ভব না। মাকে বললাম তিনি নাকি কয়েকবার বাবাকে বলেছেন কিন্তু বাবা কটমট চোখে মাকে হুমকি দিয়েছে। যাওয়ার পথে কতবার আদ্যকে বললাম কিন্তু সে তো কোনো উত্তরও দিলো না।বুঝতে পারছি না তার মনে কি চলছে?”

“ভাবি তোমরা এসব বিষয় নিয়ে অযথা চিন্তা করো না তো।সেসব নিয়ে আমি ভাবছিও না।এমনিতেও এ বাড়িতে আমার সময় ফুরিয়ে এসেছে। তাই আমাকে নিয়ে নিজেদের মধ্যে আর মন খারাপ করো না।বাদ দাও খেয়ে দেয়ে নিশ্চয়ই ক্লান্ত হয়ে পড়েছো যাও ফ্রেশ হয়ে শুয়ে পড়ো।এক গ্লাস লেবুর শরবত দিব কি?”

“আরে না না গলা অবধি খেয়েছি। এখন কিছু খাব না। বরং আদ্য তোমাদের জন্য খাবার নিয়ে এনেছে তোমরা খেয়ে নাও।”

মেহু জবাবে হেসে দেয়।নীলা উপরে উঠতে মেহুও নিজের কাজে যায় তখনি আমেনা খালা পেছন থেকে ডাক দেয়,

“ও মাইয়া কই যাও।দেহো আদ্য বাবা আমাগো লাইগা খাওন আনছে।তুমি তো সন্ধ্যা থেইকা কিছুই খাও নাই আহো খাবারটা খাইয়া লও।”

“না খালা আমি খুব সাধারণ মানুষ এসব অসাধারণ খাবার আমার পেটে সইবে না।তাছাড়া কিছু বিষয় থাকে আলাদা মানুষের জন্য সেগুলোতে জড়িয়ে পড়লে অর্থহীন হয়ে পড়ে। তাই আমি কিছুই খাবি না তোমার ইচ্ছে হলে তুমি খেয়ে নাও।তুমিও তো কিছু খাও নি।”

মেহু কথা শেষ করে কোনদিক না তাকিয়ে গটগট করে সিড়ি দিয়ে উঠে যায়। একবারের জন্যও পেছনে তাকায়নি, তাকালে হয়তো আদ্যর অগ্নি চোখের ধরনটা সে দেখতো। ভাগ্যিস দেখে নি না হলে এতো সাহসিকতার সাথে কথা গুলো বলতে পারতো না।

মেহু নিজের বিছানাটা গুছিয়ে শোয়ার প্রস্তুতি মাত্র শেষ করেছে ঠিক তখনি দরজায় শব্দ হয়।মেহুর মুখে বিরক্তের ছাপ ফুটে তার মনে ক্ষীণ সন্দেহ জাগে যে দরজার ওপাশে কে আছে সেটা ভেবে কিন্তু তার দরজা খুলতে ইচ্ছে করছেনা। সে ঠাঁই নিজের জায়গায় দাঁড়িয়ে রইলো।আবারও শব্দ হলো দরজায় মেহু তবুও নড়লো না।এবার গলার আওয়াজ ভেসে এলো।

“মেহু তুমি কি ঘুমিয়ে পড়েছো?”

মেহু যা সন্দেহ করেছিল ঠিক তাই। আদ্য দরজা ধাক্কাচ্ছে।কিন্তু এত রাতে তার এখানে আসার দরকার কি?তার প্রিয়সিনী তো নিচে আছে। তার কাছে গিয়ে গল্প করলে হয়।অগত্যা মেহু দরজা খুলে স্বাভাবিক ভঙ্গিতে ফিরে গেলো আগের জায়গায়।

“কি হলো সেই কখন থেকে দরজায় নক করছি তুমি দরজা খুলছো না কেনো?”

“কাজ করছিলাম তাই। ”

“কি এমন কাজ করছিলে যে আমার দরজার আওয়াজেও তুমি যেতে পারলে না।”

“সেই যায় করি না কেনো আপনাকে বলার প্রয়োজন মনে করছি না।তাছাড়া এতরাতে আমার কাছে কি?এখন তো আর কোনোকিছু লুকোচুরি করে করতে হয় না যে আপনাকে রাতবিরাতে আমার ঘরে আসতে হবে তাই না?”

আদ্য অবাক হয়ে যায় মেহুর এমন কথার ধরনে।যে মেয়ে সহজে চোখ তুলে তাকাতে সাহস পায় না সেই মেয়ে কিনা তাকে কাটকাট করে কথা বলছে তাও কতো নির্বিঘ্নে। আদ্যর রাগ উঠছে কিন্তু সে চোখ বন্ধ করে সেটাকে সামাল দিচ্ছে।

“মেহু কি সমস্যা তোমার তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?”

“কীভাবে কথা বলছি?আমি তো স্বাভাবিক হয়ে কথা বলছি।তাছাড়া আমি এখন খুব ক্লান্ত তাই কথা বলতে ভালো লাগছে না।ঘুমাবো আপনার যদি কিছু বলার ইচ্ছে থাকে বলেন নাহলে যেতে পারেন।”

আদ্যর রাগ এবার চোখে মুখে ফুটে ওঠলো।কিন্তু মেহুর চেহারায় বিশেষ কোনো পরিবর্তন সাধিত হলো না।সে কতো অনায়াসে হাই তুলে যাচ্ছে মনে হচ্ছে আদ্য গেলেই সে চট করে ঘুমিয়ে পরবে।আদ্য তার হাতে থাকা প্যাকেটটা মেহুকে এগিয়ে দেয়।মেহু কথায় এতই মনোযোগী যে আদ্যর হাতে কিছু ছিল সেটা নজরে আসেনি।সে সপ্রশ্নে আদ্যর দিকে তাকায়।

“আমেনা খালা বলেছে তুমি নাকি সন্ধ্যা থেকে কিছু খাও নি।রাতেও না খেয়ে ঘুমতে এসেছো তাই তোমার জন্য খাবার নিয়ে এলাম।খাবারটা খেয়ে নাও।অবেলা না খেলে সমস্যা হবে।”

“আমি আগেও বলেছি আমার খেতে ইচ্ছে করছেনা। আপনাকে আমার খাবার নিয়ে চিন্তা করতে হবে না।আপনি খেয়েছেন তো আর ঐ যে সোহানা সে খেয়েছে তো তাহলেই হলো।আমার খাওয়া না খাওয়া নিয়ে আপনি চিন্তা না করলেই হলো।যাই হোক স্যার এখন আপনি যান সত্যি আমার ঘুম পাচ্ছে।আপনি না গেলে আমি দরজা বন্ধ করতে পারবো না।”

স্যার শব্দরা শুনে আদ্যর কপাল দপদপ করতে থাকে।আদ্য মেহুকে এর আগেও বলেছে যেন মেহু তাকে স্যার না ডাকে।সে বস নয় আর মেহুও কর্মচারী নয় যে তাকে স্যার বলে ডাকবে।যে সময়টায় স্যার কর্মচারীর সম্পর্ক ছিল সেটা এখন নেই। অতএব স্যার ডাকার মানে হয় না।তাছাড়া আদ্য মেহুকে তার নাম ধরে ডাকতে বলেছে।কথাটা শুনেই মেহুর চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। সে ডাকবে আদ্যর নাম ধরে? কথাটা শুনেই মেহুর যা তা অবস্থা। যদিও এরপর মেহু যথাসম্ভব আদ্যকে কিছু সম্বোধন না করে কথা বলতো কারণ স্যার ডাকলে আদ্য রাগ করে আর নাম ধরে ডাকা মেহুর পক্ষে সম্ভব না।এতদিন কোনো কথা হয় নি তাই ডাকাডাকি নিয়ে সমস্যা ছিলো না কিন্তু এখন হঠাৎ আদ্যর জোরাজুরিতে মেহু তাকে স্যার ডেকে ফেলে আর তাই শুনেই আদ্যর রাগ চওড়া হয়।

“মেহু তুমি আমাকে কি বললে,তোমাকে কতবার বলেছি আমাকে স্যার না ডাকার জন্য?”

“আপনাকে স্যার ডাকা না ডাকাতে আপনার বা আমার কিছু যায় আসে না কারণ এমনিতেও আমি এ বাড়িতে কাজ করার সুবাদে আপনাকে স্যার ডাকতাম তাছাড়া আপনার সাথে তো আমার সম্পর্ক অন্য দের মতো না।খুব শীঘ্রই ডিভোর্স হবে তখন দুজন দুদিক তাতে আমি আপনাকে কি ডাকলাম না ডাকলাম তা নিয়ে মাথা ঘামাবেন না যান ঘুমিয়ে পড়ুন আমকেও ঘুমোতে দিন।”

“তার মানে কি তুমি খাবার টা খাবে না?”

“একবার যখন না বলেছি তার মানে না।আমার খিদে নাই তাই খাবো না।আর আপনার সমস্যা কোথায় বলুন তো আমি না খেলে?”

“আমার সমস্যা আছে বলেই বলছি।আমি আবারও বলছি তুমি খাবে কিনা?”

চোয়াল শক্ত করে আদ্য মেহুকে জিজ্ঞেস করে।মেহু আগের মতোই একই উত্তর দেয়।তবে এবার রেগে গিয়ে না শব্দটা বেশিই উচ্চারিত করে ফেলে দরুন আদ্যর রাগ মাথা চাপা দিয়ে উঠে। মেহু না না বলতে ব্যস্ত হলে আদ্য তৎক্ষনাৎ ভয়ংকর কাজটা করে ফেলে।মেহুকে নিজের দিকে ফিরিয়ে মেহুর ঠোঁট বন্ধ করে দেয় নিজের ঠোঁট দিয়ে।আর মেহু মূর্তির মতো শক্ত হয়ে যায়। এমন অবিশ্বাস্য আর অবাস্তব ঘটনা ঘটবে সেটা কল্পনাও করতে পারে নি।মেহু।মেহু তখনো পাথরের মতো স্ট্যাচু।নিজেকে ছাড়ানোর কোনো প্রয়াস নেই। কীভাবে করবে যেখানে বিষয়টা বুঝতেই তার দীর্ঘ সময় লাগছে।আদ্য অনেক্ক্ষণ পর মেহুকে ছাড়ে।রাগে সে হিসহিস করছে।মেহু ছাড়া পেতে অন্য দিকে চলে গিয়ে শ্বাস নেয়।মনে হচ্ছে শ্বাসনালী বুঝি এই বেরিয়ে আসবে।আদ্য দরজার কাছে গিয়েই হুংকার ছাড়ে,

“খাবারটা শেষ করবে।ভুলেও সেটা ফেলে দেওয়া বা নষ্ট করার চেষ্টা করবে না।ফল কিন্তু এরচেয়ে ভয়ানক হবে।আর হ্যাঁ দ্বিতীয় বার যদি স্যার শব্দটা উচ্চারণ করো তাহলে এক্ষুণি যা ঘটলো তাই রিভিউ হবে।অবশ্যই তোমার যদি এমনটা আবারও ইচ্ছে হয় তবে আমার আপত্তি নেই আমি সর্বদা প্রস্তুত থাকবো তোমার কাছ থেকে স্যার ডাক শুনতে।আবারও বলছি খাবারটা খেয়ে নিও নাহলে খবর আছে। ”

আদ্য বেরিয়ে যেতেই মেহু দৌড়ে দরজা বন্ধ করে দেয়। দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে থাকে না জানি আদ্য আবার কখন ঢুকে পড়ে। মেহু চোখ বন্ধ করে বড় বড় নিঃশ্বাস নিচ্ছে। মনে হচ্ছে সবটা ঘুমের ঘোরে স্বপ্ন। সে নিজের গায়ে চিমটি কাটলো না সত্যিই সবটা ঘটেছে। লজ্জায় মেহু বারবার কুঁকড়ে উঠে। টেবিলে নজর পড়তেই প্যাকেটটা চোখে পড়ে। ভাবছে সেটা কি করবে যদি না খেয়ে অন্য কিছু করে আর আদ্য খবর পায় তাহলে হয়তো…… না না মেহু আর ভাবতে পারছে না।বারবার ঘটনাটা তাকে শিউরে দিচ্ছে। চট করে প্যাকেটটা হাতে নিয়ে খেতে শুরু করলো।তখনো খেয়াল করলো না আড়ালে দাড়িয়ে একজোড়া চোখ কতো শান্তি নিয়ে তার খাওয়া দেখছে!
,
,
,
চলবে……..

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here