“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব~২২
গাড়ির চাকা উল্কার গতিতে ছুটছে ৷ শো শো বাতাস কাচের জানালা ভেদ করে ভেতরে ঢুকছে। শরীরে মৃদু কম্পমনের সৃষ্টি হচ্ছে। এদিক তো খানিক বাদে ওদিক হেলে পড়ছে পায়রা। তার পাশের ড্রাইভিং সিটে খুশিমনে ড্রাইভ করছে নীলাংশ। গতকালই আয়মান সাহেব গ্রামের স্কুল থেকে সকল কাগজপত্র তুলে আনিয়েছেন ৷ পায়রা কৃতজ্ঞতা ভাষায় প্রকাশ করতে না পেরে আয়মান সাহেবের সামনে হু হু করে কেঁদে ফেলেছিলো। তিনি পরম স্নেহে আপন মেয়ের মতোন
বুকে আগলে নিয়েছিলেন। এমনিতেই অনেকটা সময় ব্যায় হয়েছে। যত দেরি হবে তত ক্ষতি। নীলাংশ রাতেই বলে রেখেছিলো তৈরি হয়ে থাকতে। সকালেই বের হবে পায়রাকে ভর্তি করাতে। পায়রা সারারাত ছটফট করেছে, কখন সকাল হবে? কখন সে নতুন স্কুলে পা রাখবে! সকাল আটটা বাজতেই পায়রা তৈরি হয়ে বসে রইলো। নীলাংশ খুব হেঁসেছে এত পাগলামি দেখে।
পায়রা লজ্জাও পেয়েছে বটে। তাকে স্বাভাবিক করতে
নীলাংশ রেডিও অন করে দিয়েছে। রেডিওতে প্রথমেই বেজে উঠেছিলো, একটি পুরুষের মন্ত্রমুগ্ধ কণ্ঠধ্বনি-
‘হ্যালো গাইজ, আশা করি সবাই ভালো আছো। আমিও আছি বেশ। আজকের আবহাওয়া ভারী সুন্দর। আমার কাছে তো সুন্দরই লাগছে। আবহাওয়া যদি মেয়ে হতো তাহলে আমি নিশ্চিত প্রেমে পড়ে যেতাম। এই যে, আকাশের ঠিক মাঝ বরাবর সোনালী রোদ। রোদ আর মেঘের অবিরত লুকোচুরি খেলছে।
প্রেমিক প্রেমিকার জন্য আজকের দিনটা বেশ হবে।
আপাতত তাদের জন্য একটা সুন্দর গান প্লে করে দিচ্ছি –
‘অলিরও কথা শুনে বকুল হাসে,
কই তাহার মতো তুমি আমার কথা শুনে হাসো না তো!
গম্ভীর গলায় এত উৎফুল্ল কন্ঠ বেশ ভালো লাগলো পায়রার। সে আনমনে বললো-
‘কী সুন্দর কন্ঠ তাইনে? একদম খাইয়ে ফেলার মতোন’
নীলাংশ ভ্রু কুচকে ঘাড় বাকিয়ে পায়রার দিকে তাকালো। এতক্ষণ ধরে মেয়েটার পাশে সে বসে আছে। দুটো শব্দও উচ্চারণ করেনি। রেডিওর একটা ছেলের আওয়াজ শুনে এতোই ভালো লাগলো! যে খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করছে। বাহ! তার আওয়াজের প্রশংসা তো কখনো করলো না। সাধারণত মেয়েরা যেমন মেয়েদের সৌন্দর্য দেখতে পায়না। ঠিক তেমন ছেলেরাও নিজের ব্যাতিত অন্য কোনো ছেলের গুণ বা প্রশংসা দেখতে পায়না। সেই নিয়ম অনুযায়ী নীলাংশও ছেলেটার কন্ঠে কিছু খুঁজে পেলো না।
তার কানে সুন্দর শব্দগুলো পায়রার প্রশংসার পর আরও বিদঘুটে শোনালো। তার মন চাইলো ছেলেটাকেই কাঁচা চিবিয়ে খেয়ে ফেলতে। খ্যাটখ্যাট করে বললো –
‘ইয়াক! পিচ্চি, তোমার এই কাকের মতোন আওয়াজ এতো ভালো লাগলো! ‘
পায়রা অবাক হয়ে তাকালো। কী বলছে এই সব! এত সুন্দর কন্ঠকে কাকের আওয়াজের সাথে তুলনা করলো! সে অবুঝের মতো বললো-
‘কী বলতেসেন সুন্দর সাহেব! কাকের মতো মানে? ‘
নীলাংশ মেয়েদের মতো মুখ ঝামটি মেরে নাকের ডগা ফুলিয়ে বললো-
‘তা নয় তো কী? কা কা করে কী বললো! আর তোমার খেয়ে ফেলতে ইচ্ছে করলো! হাও সিলি ইউ আর? ‘
পায়রা কথার মাথামুণ্ডু কিছু বুঝলো না। উল্টো আরও প্রশংসা শুরু করলো –
‘যাই বলেন, সত্যি ছেলেটার কন্ঠ ভালো লাগসে। আকাশ কী সত্যই এতো সুন্দর! আবহাওয়ার সাথে আবার পেরেম হয় নাকি! এমন সুন্দর চিন্তা সবাই করতে পারেনা। আসলেই ভাল্লাগছে ‘
নীলাংশের কী হলো কে জানে! সে গাড়িতে ব্রেক দিয়ে মৃদু চিল্লিয়ে বললো-
‘স্টপ ইট! আর একবার রিপিট করলে আমি তোমাকেই গিলে খেয়ে নিবো পিচ্চি! ‘
পায়রা চোখ বড়বড় করে তাকিয়ে আছে। সে তো এমন কিছু বলেনি যে এতো রেগে যাবে। সে মিনমিন করে বললো –
‘আপনার পেটে আমারে গিল্লা নেয়ার জায়গা হইবো সুন্দর সাহেব?’
নীলাংশ বোকাসোকা কথায় হেঁসে ফেলতে নিয়েও হাসলো না। হঠাৎ উপলব্ধি করলো৷ সে কিছু একটা উল্টো পাল্টা কাজ করেছে। অর্থাৎ, নিয়মের বাইরে।
মনে পড়েছে, সে রেগে গেছে। কিন্তু রাগলো কেনো! ঠিকই মেয়েটা তার রাগ হওয়ার মতো তো কিছু বলেনি। বড় একটা ঢোক গিলে নিলো সে। ছোট একটা মেয়ে তাকে তার নিয়মের বাইরে নিয়ে এলো। সে ব্যাপারটা মানতে চাইলো না। পাত্তা না দিয়ে লম্বা শ্বাস নিলো৷ বিষয়টা অতি সন্তর্পণে নিজের মধ্যে গোপন কুঠুরিতে লুকিয়ে নিলো। পায়রার বোকা মুখটার দিকে তাকিয়ে হেঁসে বললো-
‘হুম, একদম তাজা গিলে নিবো। আর সাথে সাথেই হজম! ‘
পায়রা বুঝতে পারলো তার সাথে মজা করা হচ্ছে। অদ্ভুত! ছেলেটা কখন রাগ হয় কখন খুশি হয় কিছুই মাথায় ঢোকে না। সে আর চাপ দিলো না মাথায়। লাভও নেই। কিছুক্ষণ পরই বিশাল একটা স্কুলের সামনে থামলো গাড়ি। বড় একটা সাইনবোর্ডে লেখা –
‘এস. টি স্কুল এন্ড কলেজ ‘ তার বিপরীত পাশেই ‘এস.আর ইউনিভার্সিটি’ (দুটি নামই ছদ্মনাম)।
পায়রা হা করে তাকিয়ে রইলো। গ্রামের স্কুল তো দুই তলা পর্যন্ত। পুরোনো একটা বাড়ির মতোন৷ প্রথম বার
এমন স্কুল দেখে হতভম্ব হয়ে গেছে। নীলাংশ বলেছে, এই পাশের ইউনিভার্সিটিতে নীলাংশ পড়াশোনা করে।
আর ডান পাশের সামনের স্কুলটায় পায়রাকে ভর্তি করানো হবে। নীলাংশ গাড়ির দরজা খুলে বাহিরে বের হলো। পায়রার সিটের দরজাটা খুলতেই পায়রা অতিরিক্ত খুশিতে উত্তেজিত হয়ে নামতে নিলো। কিন্তু,বাঁধ সাধলো কম দামী জুতোজোড়া। মাটিতে পা দিতেই সেটা ডেবে গেলো। পায়রা তাল হারিয়ে পড়ে যেতে নিলো। তার আগেই নীলাংশ দ্রুততার সঙ্গে পায়রার হাত টানলো। পায়রা ছিটকে গিয়ে পড়লো নীলাংশের বুকে। নাকে এসে লাগলো মাতাল করা ঘ্রাণ। এখন পায়রাকে যদি জিজ্ঞেস করা হয়, দুনিয়ার সবচেয়ে সুন্দর ঘ্রাণ কোনটি?
সে চোখ বন্ধ করে জবাবে বলবে –
‘সুন্দর সাহেবের ঘ্রাণ পৃথিবীর সবচেয়ে ভয়ংকর সুন্দর। এর উপরে সুন্দর ঘ্রাণ পৃথিবীতে খুঁজে পাওয়া যাবে না! একদমই না!
চলবে…..
আপনারা যারা আমার গল্প পড়েন, তারা জয়েন হতে পারেন গ্রুপে৷ আর অলরেডি যদি জয়েন হয়ে থাকেন তাহলে অবশ্যই গল্প পড়ে নিজেদের অনুভূতি সেখানে শেয়ার করতে পারেন।
রোদসীর সাহিত্যমহল+আড্ডা গ্রুপ
আর একটা কথা, গল্পটা যাতে অন্য আরও পাঠকদের কাছে পৌঁছায় সেটায় সাহায্য করবেন। আমি যেহেতু নতুন লেখিকা। অনেকেই এখন পর্যন্ত গল্প পড়েনি। তারা চেষ্টা করবেন গল্পগুলো শেয়ার করার।
ধন্যবাদ সবাইকে।