স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-২৫

0
1005

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব -২৫

বুকের সম্পূর্ণটা জুড়ে আছে অস্বাভাবিক ধুকপুকানি।
হাত পা ঠান্ডা হয়ে আসছে। চোখের সাদা অংশের শিরাগুলো লাল হয়ে গেছে। নীলাংশের মাথা ফাঁকা ফাঁকা হয়ে গেলো মুহুর্তেই৷ কী থেকে কী হয়ে গেলো সে বুঝতে পারছে না। আরেকবার পায়রার মুখে দুই তিন বার হালকা নাড়ালো। ভীতি একত্রিত হয়ে যাওয়া স্বরে থেমে থেমে বললো-

‘পিচ্চি! কী হলো তোমার? কথা বলো প্লিজ। ‘

পায়রার চোখ কাঁপছে। অল্প জ্ঞান এখনো আছে তার।
এতক্ষণ ব্যাথায় চোখে মুখে অন্ধকার দেখছিলো। এখন একটু বোধ শক্তি পাচ্ছে। সে পাশ থেকে নীলাংশের হাতটা মুঠোয় নিয়ে খুব কষ্টে মুখ দিয়ে আওয়াজ করে বললো –

‘সুন্দর সাহে..ব পানি দেন একটু। ‘

নীলাংশ আটকে যাওয়া নিঃশ্বাস নিয়েই গাড়ির বক্স থেকে মিনারেল ওয়াটারের বোতলটা বের করে ক্যাপ খুলে পায়রার মুখের দিকে ধরলো। পায়রা অল্প কিছুটা খেলো৷ মাথায় জোরে আঘাত পাওয়ায় মাথা ঝিমঝিম করছে। কী নিদারুণ যন্ত্রণা! বিস্ময়কর ব্যাপার হলো এতটা আঘাতে রক্ত বেরোয়নি। অবশ্য মাথা ফুলে গেছে ৷ কিছু অংশ ছিলেও গেছে বোধ হয়। নীলাংশ অস্থির চিত্তে পানির বোতল উপুড় করে কিছুটা পানি হাতে নিয়ে পায়রার কপালের ডান পাশে ঢেলে দিলো। তারপর পকেট থেকে রুমাল বের করে পায়রার মুখটা দিলো। আশ্চর্য কান্ড, একই রুমালটা প্রথম বারও পায়রার জন্যই ব্যবহার করতে হয়েছিলো। নীলাংশ মুখ মুছে দিয়ে বললো –

‘চলো, হসপিটালে গিয়ে ব্যান্ডেজ করিয়ে আনবো। ‘

পায়রা চকিতে তাকালো। হসপিটালের প্রতি তার তীব্র ভীতি কাজ করে। সেদিন প্রথম বার হসপিটালেই তার চেহারা হয়েছিলো। আর কক্ষনও সে হসপিটালের ত্রিসীমায়ও পা ফেলবেনা৷ নীলাংশের হাতটা আঁকড়ে কাঁপতে কাঁপতে বললো-

‘না না, আমি হসপিটালে যাবো না! বাড়ি যাবো। ‘

নীলাংশ রেগে ব্লাস্ট হওয়ার মতো উচ্চস্বরে বললো-

‘হোয়াট! তুমি জানো কত বড় ক্ষতি হতে পারে! মন চাইছে থাপ্পড় দিতে। ‘

পায়রা হার মানলো না। সে ছলছল চোখে তাকিয়ে রইলো। নীলাংশের আর কিছু বলতে পারলো না। মনে মনে কিছু একটা ভেবে বললো-

‘ফাইন, বাসায় বাবা দুপুরের খাবার খেতে আসবে তখন ব্যান্ডেজ করে দিবে৷ ‘

পায়রা স্বস্তির নিশ্বাস ফেললো। মাথায় এক হাত চেপে সিটে হেলান দিলো। নীলাংশ সিট বেল্ট টেনে নিজেই পায়রাকে লাগিয়ে দিলো। পায়রার নেতিয়ে যাওয়া মুখটা দেখে কেনো জানি খুব মায়া লাগলো। অপলক তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছে করলো। মনকে পাত্তা না দূরে সরে গেলো। অবাধ্য চিন্তা ভাবনাকে দমিয়ে ড্রাইভ করা শুরু করলো। কিন্তু ঘুরেফিরে চোখ একই দিকেই যাচ্ছে। পায়রা অর্ধ ঘুমন্ত, অর্ধ জাগ্রত অবস্থায় আছে।
ঘুমে বারবার ঢোলে পড়ছে বিধায় মাথাটা নিচে পড়ে যাচ্ছে। নীলাংশ হাত দিয়ে ধরে আবার আগের জায়গায় রাখলেও গাড়ির ধাক্কায় বেসামাল হয়ে পরছে। শেষমেষ পায়রার মাথাটা টেনে তার কোলে রেখে দিলো৷ পায়রা ঘুমের ঘোরে আরামে নাক মুখ ঘষে ঘুমিয়ে গেলো৷ কী সুন্দর করেই না ঘুমাচ্ছে! অথচ এদিকে নীলাংশের শ্বাস নেওয়াও হারাম হয়ে গেছে।
পায়রার ঘন শ্বাস তার শরীরে এসে উত্তাল ঢেউয়ের মতো ধাক্কা দিয়ে যাচ্ছে। যত দ্রুত সম্ভব গাড়ি চালিয়ে বাড়ি পৌঁছালো। পুরোটা পথ যেন এক প্রকার যুদ্ধ করে ফিরলো সে। পায়রার ঘুমন্ত মুখটার দিকে তাকিয়ে আনমনে হাসলো ৷ নিজেরও বোধগম্য হলো না হাসির কারণটা। পায়রার মাথায় হাত বুলিয়ে আলতো করে দুই তিন বার ডাকতেই পায়রা পিটপিট করে তাকালো। সে কোথায় শুয়ে আছে খেয়াল হতেই
লজ্জ্বায় হুড়োহুড়ি করে উঠে বসলো৷ নিজ থেকেই গাড়ির দরজা খুলে দৌড়ে বাড়ির ভেতরে চলে গেলো।
নীলাংশ দুই সেকেন্ড হা করে তাকিয়ে ফিক করে হেঁসে জোরে বললো – ‘আস্তে যাও পিচ্চি, ব্যাথা পাবে। ‘

ঘরে ঢুকে পায়রা লম্বা লম্বা শ্বাস ফেললো। সারা শরীর ঠান্ডা হয়ে গেছে। লজ্জায় গাল লাল হয়ে গেছে। সে ভেবেছে, নিজেই নীলাংশের কোলে মাথা রেখেছে। সত্যিটা তো সে জানে না৷ নিজেকে নিজে ইচ্ছে মতো বকে হাত মুখে পানি দিয়ে আসলো৷ দরজা অল্প করে চাপানো। সে শুয়ে পড়লো বিছানায়। ঘুমের মাঝে বিলীন হয়ে যেতে চাইলো। কিন্তু বাঁধ সাধলো একজন।

দরজা ঠেলে নীলাংশ প্রবেশ করলো। বোঝা যাচ্ছে এখনও হাত মুখ ধোয়া হয়নি। আগে ভাগেই একটা ঔষধ নিয়ে এক গ্লাস পানি হাতে এসেছে। পায়রাকে অস্থির ভাবে আদেশের সুরে বললো –

‘পিচ্চি, দ্রুত ঔষধটা খাও নাহলে ব্যাথা তোমার পেটে বংশবৃদ্ধি করে ফেলবে।’

চলবে…
দুঃখজনক হলেও সত্যি আমি আজ সারাদিন লিখতে পারিনি৷ মেহমান বাসায় থাকায়, এক ঘন্টায় কোন রকম লিখেছি। কালকে পুষিয়ে দুইটা পার্ট দিবো। কেউ হতাশ হবেন না। গঠন মূলক মন্তব্য করবেন এতে আমার লেখায় মনোযোগ বাড়বে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here