স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৩৮

0
970

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৩৮

শহর জুড়ে গুঁড়িগুঁড়ি বৃষ্টির আবির্ভাব। এখন বর্ষাকাল। নানান মানুষ ছাতা হাতে হেঁটে চলেছে। কোনো কোনো ছেলে মেয়েরা ছাউনির নিচে দাঁড়িয়ে গল্প করছে। কারো জন্য এই বৃষ্টিটা খুবই বিরক্তিকর। তো আবার কপোত-কপোতীদের জন্য রোমাঞ্চকর প্রহর। হাত ধরে একে অপরকে নিয়ে স্বপ্ন বুনতে বুনতে বৃষ্টিবিলাস করছে। কত রকমের আকাঙ্খা!

দুই হাতে ব্যাগ কাঁধে চাপিয়ে ক্লাসরুম থেকে বের হয় পায়রা। হাতের উল্টো পিঠ দিয়ে ঘাম মুছে নেয়। জানালা দিয়ে বাহিরে তাকিয়ে একবার পরিবেশে চোখ বুলায়। ঠোঁট কামড়ে আনমনা হয়ে ভাবে আজ নীলাংশের কিছু জরুরি কাজ পড়ে গেছে তাই আসতে পারবে না। সকালেই বলে দিয়েছিলো। দুইদিন আগে ছাঁদ নেমে আসার পর নীলাংশের সঙ্গে বসে খুব সময় নিয়ে কথা হয়নি আর। পায়রাই লজ্জায় বেশি একটা সামনে যায়নি৷ নীলাংশ চেষ্টা করছিলো পায়রাকে আজ সময় দিতে। কিন্তু সামনেই একটা অনুষ্ঠান আছে ভার্সিটির। সেখানের দায়িত্বটা তাঁর কাঁধেই এসে পড়েছে। একদম পাশাপাশি দুটো প্রতিষ্ঠান। একটা বিল্ডিং-এর জানালা দিয়ে অপরটি দেখা যায়। কলেজের চেয়ে ভার্সিটির পরিবেশ বেশি মনোরম। পায়রা একধ্যাণে কিছুক্ষণ সেদিকে তাকিয়ে থাকে। যেনো সামনেই নীলাংশ দাঁড়িয়ে আছে। অনুভব করার চেষ্টা করছে পায়রা। মুখে লাজুক হাসি। অতিরিক্ত ব্যস্ততা না থাকলে নীলাংশ এই দেড় বছরের বেশি সময়েও একা ছাড়েনি। আজ একা একা বাড়ি ফিরতে হবে ভেবে মনটা খারাপ লাগছে। একটা দিনই অবশ্য। কিন্তু কলেজ থেকে বাড়ি ফেরার পথটুকু কেনো জানি পায়রার কাছে খুব বিশেষ। নীলাংশের সঙ্গে কথা বলতে বলতে পুরো পথটা চোখের পলকে ছুটে চলে।
হাত বাড়িয়ে বৃষ্টির ফোঁটাগুলো হাতে জমিয়ে নেয় সে।
নানান ভাবনার মাঝেই হাঁটতে হাঁটতে লিফ্টের কাছে আসে। ক্লাস থেকে অনেকটা দেরি করে বের হওয়ার পরও মানুষের ভীড় কমেনি। বৃষ্টি থেকে বাঁচতে সবাই-ই অপেক্ষা করছে এখনো। লিফ্টের মধ্যে যেতে হলে অনেকক্ষণ দাঁড়াতে হবে। তার চেয়ে ভালো হবে সিঁড়ি বেয়ে নামা। ভেবেই পায়রা নিচের দিকে উদ্যত হলো। স্কুলে পড়াকালীন পাশের ভবনে দুই তলায় ক্লাস ছিলো। এখন কলেজের সপ্তম ফ্লোরে ক্লাস। পায়রা ভীড়ের ধাক্কাধাক্কির চেয়ে হেঁটে যাওয়াই ভালো মনে করে। সিঁড়িতে এখন তেমন কেউ নেই। ধীরে ধীরে নামতে লাগে সে। তিন তলা দিয়ে নামার সময় হুট করেই খেয়াল করে আভাস স্যারের কেবিনের দরজাটা ওপেন রাখা। সাধারণত পায়রা বেশিরভাগ সময় দেখে স্যার নিজের দরজা বন্ধই রাখেন। কয়েক দিন যাবৎ আভাস স্যারের সঙ্গে দেখা হয়নি তার। সেদিন কী কাজে যেনো তার ডাক পড়েছিলো। কিন্তু পায়রা ভুলে যাওয়ায় আর যায়নি। আজ মনে পড়ায় ভাবলো, এখন গিয়ে জিজ্ঞেস করি কী জন্য ডেকেছে।
চঞ্চল পায়ে এগিয়ে যায় সে। কিন্তু যতটা উৎসাহ নিয়ে এগোয়, দরজায় দাঁড়িয়ে ঠিক ততটাই বিস্মিত হয় সে।
প্রথম পাঁচ সেকেন্ড মুখ হা করেই দাঁড়িয়ে থাকে। সম্বিত ফিরতেই ধরফরিয়ে বের হয়ে আসে। চোখ মুখ কুঁচকে আসে তার। আভাস স্যারের সঙ্গে একটা মেয়ে ঘনিষ্ঠ হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। আভাসের গলা জড়িয়ে ওষ্ঠে চুমু খাচ্ছে। আভাসও ধরে আছে। পায়রার ঘেন্নায় মুখ তেঁতো হয়ে আসে। আভাস তার এমন কেউ নয় যে তার খারাপ লাগবে। পায়রার এমন করার কারণটা হচ্ছে, প্রথমত সে স্যারকে প্রচুর সম্মান করে। এই পর্যন্ত পায়রার পাশে ছায়ার মতো আগলে রেখেছে। আর দ্বিতীয়ত, কোনো মেয়ের সঙ্গে তার সম্পর্ক থাকতেই পারে এটি স্বাভাবিক। কিন্তু তাই বলে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এগুলো কী ধরনের আচরণ!
সম্মানের উপরিস্থিত জায়গাটা নড়বড়ে হয়ে যায়। আভাস স্যারের থেকে এমন নোংরামি দেখতে হবে ভাবেনি সে। অবচেতন মনে ঠিক করে নেয়, এখন থেকে দূরত্ব বজায় রেখে চলবে সে। তার সাথে যত ভালো ব্যবহারই করুক, শুধু মাত্র ভদ্রতাসূচক আচরণই করবে। আগের মতো হুটহাট কথা আর বলবে না। দ্রুত জায়গাটা ত্যাগ করে পায়রা। এক সিঁড়ি বেয়ে নামতেই খেয়াল করে আভাস স্যার তাঁকে পেছনে থেকে ডাকছে। এখন পুরো সিঁড়িটা নির্জন। একা থেকে বিপদে পড়তে চায়না পায়রা। ভয়ে ভয়ে দ্রুত নেমে আসে। পরে যা কথা সে বলবে শুনবে। গেট পেরিয়ে একপ্রকার দৌড়েই চলে আসে। বিন্দু পরিমাণ বিশ্বাস করতে পারছেনা তাকে। নীলাংশ ব্যতীত কোনো পুরুষকে মন থেকে আর বিশ্বাস করতে পারেনা সে। গেটের বাইরে এসে আরেক বিপত্তি সৃষ্টি হলো। বাড়ির গাড়িটা এখনো আসেনি। ভেবে নিলো পাশে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করবে। অনেকেই আছে আশেপাশে। পাশে দাঁড়াতেই খেয়াল করে আভাস স্যার বৃষ্টিতে ভিজে তার দিকেই এগিয়ে আসছে। ভয়ে হৃদপিণ্ডটা ধরাস করে ওঠে। যতসম্ভব স্বাভাবিক থাকে সে। আভাস স্যারের ফর্সা মুখটা বৃষ্টিতে ভিজে উঠেছে।
বোঝা যাচ্ছে খুব তাড়াহুড়ো করে আসছেন। পায়রার সামনে দাঁড়িয়ে সে হঠাৎ-ই বলে-

‘তোমাকে এতো ডাকার পরও সাড়া দিলে না কেনো?’

পায়রা মনে মনে ঘাবড়ে গেলেও বাহিরে হালকা হেঁসে বলে –

‘কখন স্যার! আমি খেয়াল করিনি, দুঃখীত। ‘

‘মিথ্যা বলছো কেনো? ‘

‘মিথ্যা কেনো বলবো? ‘

আভাস স্যারের মুখে একগাদা উৎকন্ঠা ভেসে আসে।
কিছু বলতে চাইছেন মনে হচ্ছে। পায়রা বিনীত হয়ে বললো-

‘কিছু বলবেন স্যার?’

আভাস অস্বস্তি নিয়ে বলেন-

‘হ্যা আসলে… ‘

পুরো কথাটা শেষ হওয়ার আগেই গাড়ির হর্ণ বেজে উঠলো। মনে মনে ভীষণ খুশি হলো পায়রা। তার একটুও ইচ্ছে করছিলো না এখন আভাস স্যারের সঙ্গে কথা বলতে। সে তো আর কৈফয়ত চায়না। শুধু মাত্র এখনও কিছুটা সম্মান করে বলেই কথা বলতে হচ্ছিলো। আভাস স্যারের কার সাথে কী হলো এতে তার মাথাব্যথা নেই। আভাস স্যারকে আর কথা বলার সুযোগ না দিয়ে বলে-
‘গাড়ি এসে গেছে স্যার, দেরি হলে আবার সমস্যা। আমি আসি। ‘

আভাস কিছু বলতে নিলেই পায়রা গাড়িতে গিয়ে স্টার্ট দিতে বলে। শো শো আওয়াজে গাড়ি গন্তব্যে যাত্রা শুরু করে। আভাস সেদিকে তাকিয়ে নির্লিপ্ত ভঙ্গিতে ভেতরে চলে যায়।

পায়রা বাসায় এসে ভুলে যায় সেসব। বৃষ্টির ফোঁটায় অর্ধ ভেজা হয়ে আছে শরীর। রূপসা দ্রুত এসে তাওয়াল দিয়ে ভেজা চুল মুছে দেন৷ চিন্তিত হয়ে বলেন –

‘যা মা, দ্রুত গোসল সেড়ে আয়। জ্বর এসে যাবে না হয়। আমি গরম দুধ নিয়ে আসি। ‘

পায়রা মিষ্টি হেঁসে গোসল করতে চলে যায়। রূপসা তাকে মেয়ের থেকে কোনো অংশে কম মনে করেননা। পায়রাও তাঁকে মায়ের উপরি আসনে বসিয়েছে। গোসল করে হাত মুখ মুছতে মুছতে বের হয় সে। খাটের দিকে তাকিয়েই চমকে ওঠে!

চলবে…
গ্রুপের ৫০০ মেম্বার উপলক্ষে কাল আপনাদের জন্য একটা সারপ্রাইজ থাকবে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here