স্বপ্নচূড়ার আহবান ‘ পর্ব-৩১

0
1017

“স্বপ্নচূড়ার আহ্বান”
পর্ব-৩১

ঝালে চোখ মুখ টকটকে লাল হয়ে আছে। চোখ দিয়ে নোনা পানির ধারা। পুরো ফুচকার প্লেটটা শেষ করে তবেই ক্ষ্যান্ত হলো পায়রা। বহুদিন পর এই অমৃতস্বাদ পাবার সৌভাগ্য হলো। গ্রামের বাড়িতে থাকতে প্রতি দিন স্কুলের সামনে দাঁড়িয়ে কড়া ঝাল দিয়ে আট দশটা ফুচকা খেয়ে নিতো অনায়াসে। এখনও জোড় করে প্রচুর মরিচ গুঁড়ো দিয়ে বানাতে বলেছিলো ফুচকাওয়ালাকে। নীলাংশ বহুবার মানা করে বলেছে –

‘এগুলো খুব আনহাইজেনিক পিচ্চি!তোমার শরীর খারাপ করবে। চলো রেস্টুরেন্ট থেকে হেলদি কিছু খাবে। ‘

পায়রা বাচ্চাদের মতো ল্যাম্পপোস্টের খাম্বা ধরে বললো-

‘না না না, আমি এখান থেকেই খাবো। অন্য কোথায় আর দরকার নেই। ‘

‘আহা! এমন জেদ করছো কেনো? ‘

‘আমি কিছু জানিনা। আপনি টাকার জন্য এমন করছেন? এত কিপটে কেনো আপনি? আচ্ছা আমি আমার জমানো দিয়ে খাবো। ‘

নীলাংশ বোকা বনে গেলো। হা করে তাকিয়ে উচ্চস্বরে হেঁসে বললো-

‘সিরিয়াসলি পিচ্চি! তোমার মনে হয় আমি তোমাকে আমার টাকা খরচ হবে বলে খাওয়াচ্ছি না? ‘

পায়রা চোখ ছোটছোট করে তাকিয়ে দেখছে। বড্ড মায়াবী লাগে হাসলে ছেলেটাকে। এই তিনদিন কী রাগটাই না দেখাচ্ছিলো। পায়রা কোমরে হাত রেখে ঝগড়ার মতো মুখ করে বললো –

‘এভাবে হাসছেন কেনো?হাসির রোগ আছে নাকি? ‘

নীলাংশ হাসি থামিয়ে গম্ভীর করে ফেললো৷ আশেপাশে যত বন্ধু বান্ধব, মানুষজন আছে তারা সবাই কমবেশি হাসির প্রশংসা করে। এই একমাত্র মেয়ে, সে হাসলে তাঁকে বলে রোগী। অদ্ভুত! সে আর ঘাটালো না। ফুচকাওয়ালাকে এক প্লেট ফুচকা দিতে বললো। পায়রা চমৎকার হাসলো। এতক্ষণের মনোবাসনা পূর্ণ হলো তবে।

ফুচকার প্লেট হাতে আসতেই সে খাওয়া শুরু করলো। পৃথিবীর সকল খাবার তার বিস্বাদ ঠেকতে পারে। কিন্তু ফুচকা লাগবে না। চোখ বন্ধ করে খাচ্ছিলো সে। নীলাংশের সেদিকেই স্থির হয়ে তাকিয়ে আছে। মুখ চোখ লাল হচ্ছে ধীরে ধীরে। চোখ থেকে পানি পড়ছে। সামান্য খাওয়ার চিত্রটা তার চোখে অসহ্য রকমের সুন্দর লাগছে। বুকের ঢিপঢিপ বাড়ছে। চোখ ফিরিয়ে অন্য দিকে তাকালো সে। পায়রা খাওয়ার মধ্যে তাকে সাধছে। কিন্তু সে তো ঝাল পছন্দ করেনা তাই না করে দিলো। পায়রার খাওয়া শেষ হতেই নীলাংশ বিল দিয়ে
টিস্যু হাতে দিলো। পায়রা চোখ মুখ মুখছে। নাক টানছে বারবার। নীলাংশ বাঁকা হাসি ফুটিয়ে বললো –

‘এখন খুব ভালো লাগছে নিশ্চয়ই? নোংরা খাবার খেয়েই এরকমটা হলো। ‘

পায়রা হার মানলো না। ফুচকার অপমান মানে মেয়ে জাতির অপমান। দুষ্টু হাসি দিয়ে বললো-

‘আপনি কী বুঝবেন ফুচকার স্বাদ? সাদা খরগোশদের মুখে শুধু গাজরই মানায়। আপনি খাবেন প্রচুর পরিমাণ সালাদ। কাঁচা কাঁচা খাবার ছাড়া কী আর খরগোশদের ভালো লাগে! ‘

নীলাংশ হা করে তাকিয়ে বললো –

‘কী! আমাকে খরগোশ মনে হয় তোমার? ‘

পায়রা খিলখিল করে হেঁসে মাথা নাড়লো। নীলাংশ গাল ফুলিয়ে রাখলো৷ তারপর হঠাৎ-ই দাঁড়িয়ে গিয়ে বললো-

‘দাঁড়াও এখানে। ‘

পায়রাকে কিছু না বলতে দিয়েই সে চলে গেলো। পায়রা মনে মনে ভাবলো -‘ সুন্দর সাহেব, কী রাগ করে
একাই চলে গেলো নাকি!’ কিন্তু তা কেনো হবে, পায়রা স্কুলে যাতায়াত করতে করতে বাসার রাস্তা অনেকটাই চিনে ফেলেছে। সাত আট মিনিটের মাথায় কোথায় থেকে যেনো হাত ভর্তি আইসক্রিম নিয়ে ফিরলো। পায়রা অবাক হয়ে বললো-

‘এতগুলো আইসক্রিম! ‘

নীলাংশ মৃদু হেঁসে বললো –

‘তুমি ঝালে বারবার হিসহিস করছিলে। তাই নিয়ে আসলাম। ‘

‘কিন্তু তাই বলে এত!’

‘কী করবো! তোমার পছন্দের ফ্লেভার তো জানিনা আমি তাই সব ফ্লেভারের নিয়ে আসলাম। ‘

পায়রা মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে আছে। এই ছোট ছোট যত্ন গুলোই পায়রার হৃদয়ে দোল দিয়ে যায়। সে তো কথায় কথায় ঝাল ভুলতেই বসেছিলো। কিন্তু নীলাংশ ঠিকই খেয়াল করেছে। নীলাংশ ব্যাগটা খুলতে খুলতে বললো-

‘এখন বলো কোন ফ্লেভারের নিবে?’

‘ভ্যানিলা। ‘

নীলাংশ সেটাই বের করে দিলো। পায়রার হাতে দেয়ার আগে সেটা টিস্যু দিয়ে ক্লিন করে অল্প একটু ছিড়ে টিস্যু মুড়িয়ে দিলো। এতে খাওয়ার সময় হাতে লাগার সম্ভাবনা নেই। পায়রা হাতে নিলো। নীলাংশের হাতে চকলেট ফ্ল্যাভারের আইসক্রিম। বাড়ির গেটের সামনে আসতেই পায়রা খেয়াল করলো নীলাংশের ঠোঁটের কোণে একটু চকলেট লেগে আছে ৷ কী করবে বুঝতে না পেরে নিজের হাত দিয়েই মুছিয়ে দিলো। নীলাংশ বড়বড় চোখ করে একবার তাকালো। পায়রা স্মিত হেঁসে বললো –

‘একটা কথা বলবো সুন্দর সাহেব?’

নীলাংশ ঘোরের মাঝে আছে। সে ভাবলো পায়রা হয়তো আবেগপ্রবণ কোনো কথা বলবে। তাই সেরকম একটা মুড নিয়েই বললো-

‘একটা কেনো হাজারটা বলো। ‘

পায়রা হালকা পা উঁচু করলো। এতেই নীলাংশের বরাবর হয়ে গেলো। পায়রা এমনিতেই লম্বা। নীলাংশ পাঁচ ফুট সাড়ে দশ। বেশি একটা বেগ পেতে হলোনা পায়রাকে৷ সে ফিসফিস করে বললো-

‘খরগোশকে আইসক্রিম খাওয়ার সময়ও খুব কিউট লাগে, ইচ্ছে করে… ‘

প্রথম কথায় হতাশ হলো নীলাংশ। কিন্তু পরের লাইনে ভাবলো এবার হয়তো পায়রা সেরকম কিছু বলবে তাই ধীর কন্ঠে বললো –

‘কী ইচ্ছে করে? ‘

‘জোরে জোরে গাল টেনে দিতে! ‘

বলেই দুইগাল টেনে দিয়ে খিলখিল করে হেঁসে বাড়ির ভেতর ঢুকে গেলো পায়রা। নীলাংশ গালে হাত দিকে হাসতে হাসতে বললো-

‘দেটস নট ফেয়ার পিচ্চি! ‘

চলবে….
(আজ বাড়িতে ছিলাম না আমি, যে বাসায় ছিলাম সেখানে নেট নেই। এই মাত্র আসলাম। রিভিশন দেইনি ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন।)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here