💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 16
_________________________
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া সাথে করে দুই জন নার্স নিয়ে এসে বললেন।
নার্স ওকে উঠিয়ে নিয়ে যান আর যা যা বলা হয়েছে মিস যেন না হয় ।
নার্স দুটো আলতো হেসে বলল
– ডোন্ট ওরি স্যার।
উই উইল মেনেজ।
ফারহান ভাইয়া বলল
– ইয়া প্লিজ গো এন্ড ডু ফাস্ট।
আমি এদের দিকে অসহায়ের মতো তাকিয়ে আছি।
এরা কেউ আমাকে কিছু বলছেই না ।
নার্স দুটো আমাকে আলতে ভাবে উঠাতে আসলেন।
কিন্তু আমি উঠতে রাজি নই। কারন আমি জানতে চাই আমাকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হচ্ছে ।
ফারহান ভাইয়া কিছু টা বিরক্ত হয়ে বললেন
– ফারাবি টাইম নেই।
এমন করছিস কেন ?
আমি বললাম
– কিন্তু আমি কোথায় যাচ্ছি সেটা তো বলুন ।
ফারহান ভাইয়া আবার দুষ্ট বুদ্ধি চাপলেন।
আমার কাছে এসে বলল
– জানতে চাস কোথায় নিয়ে যাচ্ছি তোকে ?
আমি ভেবলার মতো তাকিয়ে বললাম
– এতক্ষণ তো তাই বললাম।
ফারহান ভাইয়া দুষ্ট হাসি দিয়ে আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– গোসল করতে নিয়ে যাচ্ছি । আমি করিয়ে দিই ?
তুই বোধহয় সেটাই চাচ্ছিস ?
আমার কিন্তু সমস্যা নেই।
এই বলেই ব্রু নাচালেন।
আমি হতচকিয়ে বললাম
– এই নাহহ যাচ্ছি আমি।
কিন্তু নার্স দুটো এতক্ষণ বাইরে বেরিয়ে গেছে।
আমি অসহায় দৃষ্টি তে ফারহান ভাইয়ার দিকে চেয়ে আছি ।
ফারহান ভাইয়া ঠোঁটের কোনে হাসি লাগিয়ে বললেন
– আমি উঠিয়ে দিচ্ছি।
তারপর ফারহান ভাইয়া আমাকে অতি যত্নে উঠালেন।
বেড থেকে নামতেই পড়ে যেতে নিচ্ছিলাম ।
ফারহান ভাইয়া আমার কোমর জড়িয়ে ধরে ফেললেন।
তারপর একটু মুখ টা শক্ত করে বললেন
– ফারাবি । কেয়ার লেস কেন এতো তুই ।
আমি না থাকলে কি হতো বল তো ?
তারপর ই ফারহান ভাইয়া আমার দিকে তাকিয়ে বলল
– ওওও সিট ।
সরি ফারাবি আমার খেয়াল ই ছিল না তুই যে হাঁটতে পারছিস না ।
আমি চুপ হয়েই রইলাম।
একটা কথা ও বললাম না ,আর না ওনার দিকে তাকালাম।
– উনি আমাকে শুধু শুধু বকা দিলেন।
এবার আমার কোনো দোষ ছিলো ই না ।
ফারহান ভাইয়া আমার দিকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলেন তারপর নত সুরে বলল
– আম সরি ।
ভুল তো ফারহানের ও হতে পারে । তাই বলে এমন করবি ?
একদম বাচ্চা দের মতো করে বললেন ওনি ।
না চাইতে ও ওনার দিকে চোখ চলে গেল ।
ওনার এমন অপরাধবোধ হওয়া মুখ টা দেখে নিমেষেই সব কিছু ভুলে গেলাম।
তারপর হাসি মুখেই বললাম
– ইটস ওকে।
ফারহান ভাইয়া কিছু বললেন না ।
নার্স দুটো আবার চলে এসেছে ওনি আমাকে বাথরুম অব্দি পৌছে দিলেন।
তারপর নার্স দের বললেন ওকে গোসল করিয়ে দিন।
আমি ফারহান ভাইয়ার এমন কথায় অবাক হয়ে গেলাম।
ওনার দিকে তাকিয়ে আছি আমার চোখ দুটো রসগোল্লার মতো বড় হয়ে গেছে।
ফারহান ভাইয়া সন্দিহান চোখে তাকালেন তারপর বললেন
– কি হয়েছে কি ?
আমি বললাম
– ওনারা আমাকে গোসল করিয়ে দিবে ?
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হ্যাঁ তো কি হয়েছে কি ?
আমি বললাম
– আমি একাই গোসল করব প্লিজ।
কিন্তু ফারহান ভাইয়া আমার কথা শুনতে নারাজ।
তিনি তার কথাতেই অটল রইলেন।
আমি লজ্জা শরমের মাথা খেয়ে নিচের দিকে তাকিয়ে বললাম
– আমি পারবো না ।
কারন আমার লজ্জা করে ওনারা আমার দিকে তাকিয়ে
এই কথা বলেই আর কিছু বলতে পারলাম না আমি।
ফারহান ভাইয়া বুঝতে পেরে নিঃশব্দে হাসলেন
তারপর বললেন
– আচ্ছা বুঝেছি।
ওনারা তাকালেই তোর লজ্জা করছে ?
তোকে নিয়ে তো ভবিষ্যতে বেশ সমস্যা তে পরতে হবে দেখছি ।
ওনার শেষের কথা টা আমার বোধগম্য হলো না।
আমি নিচু হয়েই আছি তারপর ফারহান ভাইয়া বললেন
– তোকে ওনারা হেল্প করবে।
চেন্স টা তুই করে নিস।
আমি নিচু হয়েই মাথা নারালাম।
তারপর নার্সরা বাথরুমের ভেতর থেকে বললেন
– স্যার ম্যাম কে নিয়ে যাবো।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– হুম নিয়ে যান।
তারপর নার্স রা আমাকে নিয়ে গেলেন।
গিয়ে দেখলাম সম্পূর্ণ গরম পানির ব্যস্ততা ।
সাথে হাইজিন মেন্টেন করার মেডিসিন।
আর সব কিছুই হাইজিন মেন্টেন করা।
টাওয়াল, থেকে শুরু করে সাবান সব কিছুই স্পেশাল তাই তো বলি গোসলের জন্য এতো আহামরি কেন করছেন।
আমি গোসল সেরে নিলাম।
নার্স রা আমাকে সম্পূর্ণ সাহায্য করলেন।
ওনাদের বাইরে পাঠিয়ে দিয়ে আমি চেন্স করে নিলাম ।
তারপর ওনাদের ডাকলাম কিন্তু ওনারা নেই ।
কারন ফারহান ভাইয়া ওনাদের পাঠিয়ে দিয়েছেন।
আবার ডাকলাম আমি, কারন উঠার মতো শক্তি আমার নেই।
ফারহান ভাইয়া বাইরেই দাড়িয়ে আছেন ।
তিনি বার বার ডাকতে শুনে
বললেন
– ফারাবি আমি আসতে পারবো ?
আমি হালকা স্বরে বললাম
– হ্যাঁ।
ফারহান ভাইয়া আমার অনুমতি পেয়ে চটজলদি আসলেন।
এসে থমকে দাড়িয়ে রইলেন।
আমি কিছুটা অস্বস্তি বোধ করলাম ।
ফারহান ভাইয়া আমার কাছে এসে কানে কানে ফিসফিস করে বললেন
– ভেজা চুল নিয়ে কারো সামনে যেতে নেই।
নাহলে, যা তা সমস্যা হয়ে যেতে পারে ।
আমি কিছু বলতে পারলাম না ।
ফারহান ভাইয়া আমাকে উঠিয়ে আবার বেডে নিয়ে বসালেন।
তারপর চুল গুলো মুছিয়ে দিলেন ।
যদি ও হিম লাগানো শীত তাতে ও শীত বস্ত্র প্রয়োজন হলো না।
কারন পুরো হসপিটালে এসি ডাবল সিস্টেম আছে।
অথার্ৎ ঠান্ডা বাতাসের পাশাপাশি গরম বাতাসের।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– এখন ঠিক লাগছে ?
আমি বললাম
– হ্যাঁ ।
ফারহান ভাইয়া বললেন
– কাকি এখনি তোর জন্য খাবার নিয়ে আসবেন।
বারন করবি না লক্ষি মেয়ের মতো খেয়ে নিবি ।
আমি উওরে মাথা ঝাকালাম।
ফারহান ভাইয়া আমার চুল গুলো খুলে দিলেন যাতে শুকিয়ে যায় ।
তারপর দেখলাম নার্স আসছেন ।
ফারহান ভাইয়া নার্স কে বললেন
– ওকে ম্যাম কে দেখে রাখবেন।
আমি আসছি তারপর ফোন টা হাতে নিয়ে বললেন
– ফারাবি । ইটস 8’30 খেয়ে নিবি কিন্তু ।
আমি মাথা ঝাঁকালাম।
ফারহান ভাইয়া চলে গেলেন।
কিছুক্ষণ পর আরেক জন নার্স এলেন।
দুজোন নার্স আমার পাশে এসে বসলেন তারপর একজন নার্স হেসে হেসে বললেন
– ইউ আর সো লাকি ম্যাম।
তাই তো এমন একজন হাসবেন্ড পেয়েছেন।
আমি কখনো এমন জুনিয়র কাপল দের মধ্যে এতো কেয়ার দেখি নি।
আমি ওনার কথায় বিষম খেলাম সাথে কিছুটা লজ্জা ও পেলাম।
তারপর অন্য একটা নার্স হেসে বললেন
– ইউ আর রং।
ওনারা কাপল নয়।
প্রথম নার্স বললেন
– তাহলে ?
দ্বিতীয় নার্স ঔষধ বেডের পাশের টেবিলে রেখে বললেন
– কাজিন বলতে পারো ।
ওনাদের দুজোনের বাবা খুব ভালো বন্ধু।
প্রথম নার্স বললেন
– ওওও। আম সরি ।
আমি কিছু বলার আগেই
দ্বিতীয় নার্স টি বললেন
– ভবিষ্যৎ বানী করতে পারছি না।
তবে এদের কাপল হিসেবে বেশ মানাবে কিন্তু ।
_________________________
প্রথম নার্স আমার মুখে আলতো হাত ছুঁইয়ে বললেন
– যদি ও পিচ্ছি তবে মাশআল্লাহ ।
আমি লজ্জা তে পরে গেলাম।
এখন ইচ্ছে করছে মাটির সাথে মিশে যেতে।
এরা কি সব ভাবছে যা কখনোই হবে না।
ফারহান ভাইয়া আর আমি দুজোন না না এটা আমি বা ওনি কেউ ভাবতে ও পারি নাহ।
এমন সময় আম্মু আর বড় মা কে দেখতে পেলাম।
বড় মা এসেই আমার কপালে চুমু এঁকে দিলেন।
আমি আলতো হাসলাম
তারপর আম্মু বললেন
– এখন ঠিক লাগছে রে মা ?
আমি বললাম
– চিন্তা করো না ।
আমি একদম ঠিক আছি।
তখনি দেখতে পেলাম রিফাত ভাইয়া, মনিকা আপু, চাচ্চু , বড় আব্বু আর আব্বু এসে হাজির।
সবাইকে একসাথে দেখে মনে প্রশান্তি জাগল।
সবাই একে একে আমাকে আদর করে যাচ্ছে ।
কি মজা আসলেই সবাই আমাকে খুব ভালোবাসে।
মনিকা আপু আর রিফাত ভাইয়া তো কথা কাটাকাটি তে পরে গেল ।
কারন তারা দুজোন ই আমাকে খাইয়ে দিতে চায় আমি ওদের কান্ড দেখে মুখ চেপে হাসছি।
তখনি আমার ছোট চাচ্চু এসে প্লেট টা নিয়ে বললেন
– আমার আম্মি জান আমার হাতে খাবে ।
এই কথাতে রিফাত ভাইয়া আর মনিকা আপু দুজন ই চুপসে গেলেন।
দুটোতে মুখ ফুলিয়ে রাখলো।
হাহা এরা পারে ও বটে।
চাচ্চু আমাকে নিজ হাতে খাইয়ে দিতে লাগলো ।
চাচ্চুর জন্য বেশ খারাপ লাগছে।
ইসসস আজ যদি মনি আন্টি ও থাকতো।
আমার ভাবনাকে
সত্যি করে দিয়ে আমি মনি আন্টিকে দেখতে পেলাম ।
পরক্ষণেই ভাবলাম দুর মনি আন্টি আসবে কোথা থেকে।
কিন্তু একি মনি আন্টি যে ক্রমশ আগাতে লাগলো।
তার মানে মনি আন্টি এখানে আসছে।
হাউ ইট পসিবল।
ইটস ম্যাজিক?
বাট এই ম্যাজিশিয়ান টা কে ?
উফফফ আমি আর ভাবতে পারছি না।
মনি আন্টি একা নয় সাথে রাজিব চাচ্চু ও আছে ।
এটা কি সত্যি নাকি স্বপ্ন ।
আমার সকল ভাবনাকে অগ্রসর করতে না দিয়ে রাজিব চাচ্চু ছোট চাচ্চুর পিঠ চাপরে বলল
– কিরে বেটা।
আমি থাকতে আমার আম্মি জান কে তুই খাইয়ে দিবি কাভি নেহি।
টপারের সুযোগ পেয়েছিস ঠিক আছে কিন্তু আজকে আর তুই সুযোগ পাবি না।এই বলে রাজিব চাচ্চু প্লেট নিয়ে আমাকে খাওয়াতে লাগলেন।
রাজিব চাচ্চু র পুরো পরিবার আমাকে অসম্ভব ভালোবাসে।
সবাই আমাকে খুব আপন করে নেয়।
আজ কে অনেক বেশি স্নিগ্ধ লাগছে প্রশান্তি অনুভব করতে পারছি।
কিন্তু এই সব ম্যাজিক করলো কোন ম্যাজিশিয়ান ?
_________________________
( আসসালামুআলাই রির্ডাস । আজকে গল্প কিন্তু আগে দিয়ে ছি । আশা করি ভালো লাগবে আর অবশ্যই একটি কমেন্ট করে জানাবেন ।
আলহামদুল্লিহ আমার পেজ এর 600 + ফলোয়ার হয়ে গেছে।
আশা রাখছি এই গল্প শেষ হওয়ার আগেই 1000+ ফলোয়ার হবে।
এর জন্য আপনাদের রেসপন্স আশা করছি ।
প্লিজ আপনাদের বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকুন।
আশা করছি আমার কষ্টের মূল্য পাবো আমি )
বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
💜 হ্যাপি রিডিং 💜
চলবে
ফাতেমা তুজ