💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
44 part – শেষাংশ
LAST PART
_______________________
সকাল সকাল ফারহান ভাইয়া হাত ধরে টানাটানি শুরু করে দিয়েছেন।
কি আজববব লোক এখন বাজে কয়টা, খুব হলে 5’30।
এই তো মাত্র ভোর হলো , কিন্তু ওনি এসে আমার ঘুমের বারোটা বাজিয়ে দিয়েছেন।
প্রথমে আম্মু কে পাঠিয়েছেন, যেই না আম্মুর ডাকে ঘুম থেকে উঠি নি ওমনি নিজে চলে এসেছেন।
অসহ্য একটু ঘুমাতে ও দিবে না নাকি।
বেশ অনেকক্ষণ ধরে ডেকে ও ফারহান ভাইয়া আমাকে ঘুম থেকে জেগে তুলতে অক্ষম।
উনি চলে গেলেন, উনি চলে যেতেই স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে ঘুমে তলিয়ে গেলাম।
কিন্তু হঠাৎ মনে হচ্ছে আমি শূন্যে ভাসছি।
মহাকাশের মতো পৃথিবীতে ও কি আজকাল ভেসে বেরানো যাচ্ছে নাকি।
তা দেখার জন্য চোখ পিটপিট করে তাকাতেই দেখি ফারহান ভাইয়া আমায় কোলে তুলে নিয়েছেন।
কি ভয়ঙ্কর লোক
আল্লাহ এখন কি ওনি আমায় আছাড় মারবেন নাকি।
ভয়াবহ পরিস্থিতির মধ্যে পড়েছি, আজ কোমর টা না যায়।
আমাকে চোখ পিটপিট করে তাকাতে দেখে ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– ফারাবি আজকাল বড্ড দুষ্টু হয়ে গেছিস।
বার বার কোলে চরতে চাস দেখছি ।
আমি হা হয়ে তাকিয়ে আছি।
আমি কখন কোলে চরতে চেয়েছি।
ওনার মাথা আছে না কি গেছে , যত্তসব ফালতু কথাবার্তা না বললে ওনার ভালো লাগে না ।
আমি কিছু না বলাতে ফারহান ভাইয়া বাঁকা হেসে বললেন
– তো ম্যাডাম আপনি বুঝি আজকাল বেশ রোমান্টিক মোডে থাকছেন।
আচ্ছা তাহলে চলুন গোসল টা আজ আমি ই করিয়ে দিই।
ওনার কথায় আমার চোখ রসগোল্লা হয়ে গেছে।
আমি তুতলিয়ে বললাম
– মানননে
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– মানে তোর বুঝতে হবে না।
আর এখন অনেক দেরি হয়ে গেছে তাড়াতাড়ি গোসল করে আয়।
আমি সন্দিহান চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম
– এই ভোর বেলা কেন গোসল করবো ?
ফারহান ভাইয়া আমায় বাথরুমের কাছে নামিয়ে দিয়ে বললেন
– কারন আজ কে 10 টায় আমাদের ফ্লাইট আছে।
আমি চমকে গিয়ে বললাম
– কিহহহহহ। আমরা কোথায় যাচ্ছি, আমাকে তো আগে বলেন নি।
ফারহান ভাইয়া কোমরে হাত গুঁজে বললেন
– এখন তো জানলি।
ইটস এনাফ না ?
আর আমরা রাঙামাটি যাচ্ছি।
আমি ভাবলেশহীন ভাবে বললাম
– কেন ?
ফারহান ভাইয়া বাঁকা হেসে বললেন
– হানিমুন করতে।
আমার চোখ তো বেরিয়ে যাবার উপক্রম ।
বিয়ে ই হলো না আবার হানিমুন।
আমাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– ভাইয়ারা আর রিমিরা হানিমুনে যাবে।
সাথে আমরা সবাই ওওও
আমি হা হয়ে বললাম
– মানে টা কি।
ওদের হানিমুনে আমরা সবাই যাবো।
এটা কি ধরনের মজা আর ওদের হানিমুনে আমরা গিয়ে কি করব ।
ফারহান ভাইয়া মুচকি হেসে বললেন
– ওরা শর্টস হানিমুনে যাচ্ছে।
যেহেতু এখন কেউ বাহিরে যেতে পারছে না, বিজনেস এর জন্য।
তাই এটাই ওদের শর্টস হানিমুন হবে ।
ফারহান ভাইয়ার কথার আগা মাথা আমি বুঝলাম না।
যাই হোক এখন যদি শাওয়ার এ না যাই তাহলে এ সত্যি সত্যি ই না নিজে চলে আসেন।
ওনাকে দিয়ে ভরসা নেই , যাহহহ যাহহহ করতে পারেন ।
তাই শাওয়ার নিতে বাথরুমে চলে আসলাম।
লম্বা একটা শাওয়ার নিয়ে ফিরে আসলাম।
ফারহান ভাইয়া এখনো সোফা তে বসে আছেন।
আমি ওনার দিকে তাকাতেই দেখলাম ওনি ঘোর লাগানো চোখে তাকিয়ে আছেন।
মনে হচ্ছে এই দৃষ্টি দিয়েই আমায় মেরে ফেলবেন।
উনি এই ভাবে তাকিয়ে আছেন দেখে আমার বেশ অস্বস্তি হচ্ছিল।
বার বার হাত কাঁচুমাচু করছিলাম, এই লোকটা আসলেই ভয়ঙ্কর।
কিছুক্ষণ পর ফারহান ভাইয়া চোখ সরিয়ে নিলেন আর হন্তদন্ত হয়ে বের হয়ে গেলেন।
বের হতে হতে বলে গেলেন 8’30 বের হবো তাই সব যেন গুছিয়ে নেই।
আমি ওনার যাওয়ার দিকে বেশ কিছুক্ষণ তাকিয়ে রইলাম।
তারপর দৌড়ে গিয়ে ডোর লক করে দিলাম।
এসেই বেডে চিৎ হয়ে শুয়ে পড়লাম।
ইসসস সত্যি বলতে এই লোকটা সামনে থাকলে ও অস্বস্তি হয় আর দূরে থাকলে ও মরন যন্ত্রণা হয়।
কেন যে আগে ওনার ভালোবাসা বুঝি নি ।
ব্যালকনিতে চলে গেলাম , তোতা পাখির কাছে রোজ ওনার নামে অভিযোগ করি ।
কিন্তু আজ খুব করে নিজের নামে অভিযোগ করবো , ওনাকে কেন বুঝি নি আমি।
_______________________
একটু আগেই ফ্লাইট রাঙামাটিতে ল্যান্ড করেছে।
পুরো চৌদ্দ গোষ্ঠী নিয়ে এসেছেন , এমন করে নাকি ওদের হানিমুন হবে।
মনে হচ্ছে আমরা সবাই ভ্যাকেশনে কোনো ট্যুর এ এসেছি।
মাথা টা নষ্ট হয়ে যাচ্ছে আমার।
এয়ারপোর্ট থেকে বেরোতেই দেখলাম সাড়ি করে দাড় করানো অনেকগুলো কার।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে নিয়ে একটা কারে বসিয়ে দিলেন।
তারপর উনি ড্রাইভিং সিটে বসে ড্রাইভ করতে লাগলেন।
রাঙামাটিতে আমি কখনোই আসি নি।
এতো সুন্দর পরিবেশ আমি কখনো দেখি নি।
সব কিছুই ছবির মতো মনে হচ্ছে।
যখন টিভিতে বা কোনো ভিডিও তে রাঙামাটি দেখতাম তখন ইচ্ছে হতো এই সৌন্দর্যে ডুবে যাই।
কিন্তু কখনো আসা হয় নি , আর ছবির থেকে বাস্তবে আর ও বেশি সুন্দর এই পরিবেশ।
ফারহান ভাইয়া গাড়ি করে বেশ অনেক জায়গা তে ঘুরালেন।
এখানের বেশ কিছু স্ট্রিট ফুড ও খাওয়ালেন।
আমার কেমন যেন লাগছিল, কারন ওনি স্ট্রিট ফুড একদম ই পছন্দ করেন না।
কিন্তু আজ মহাশয়ের কী হলো ?
যাই হোক তাতে আমার কি ?
আমি তো বেশ আনন্দ করে খাচ্ছি, আর ফারহান ভাইয়া এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছেন।
অনেক আনন্দ করে আমরা 1 টার দিকে একটা বিশাল হোটেল এ চলে আসলাম।
হোটেলে প্রবেশ করতেই সবাই আমাদের ওয়েলকাম জানালো।
এমন মনে হচ্ছে, ওনারা আমাদের জন্য ই অপেক্ষা করছিলেন।
ঘরের চাবি নিয়ে উপরে উঠে গেলাম।
সবাই এই হোটেলেই আছেন।
আর সব থেকে অদ্ভুত পুরো হোটেল জুড়ে ই আমাদের আত্মীয় স্বজন দেখতে পেলাম।
আমি আমার রুমে গিয়ে ফ্রেস হয়ে নিলাম।
তারপর রিমি এসে ডেকে নিলো , লান্স এর জন্য।
আজববব আমার সব বান্ধবীর ও আছে।
ওদের ভাষ্য মতে সবাই কে ফারহান ভাইয়া রিমি দের হানিমুনে ঘুরতে নিয়ে এসেছেন।
কি ভয়ঙ্কর কান্ড, এমন কোনো জন্মে হয়েছে কি না , আমার তো জানা নেই।
সবাই একসাথে লান্স করে হোটেল এর আশে পাশে একটু ঘুরলাম ।
হোটেল এর সাথে ই এক বিশাল রিসোট দেখতে পেলাম।
কিন্তু এই মুহূর্তে আমি বেশ ক্লান্ত তাই রুমে এসে বেডে শুয়ে পড়লাম।
বেডে শুতেই চোখ জোড়া ঘুমে তলিয়ে গেল।
বিকেল 5 টার দিকে এলামের শব্দে ঘুম ভেঙে গেল।
একটু ফ্রেস হয়ে আসলাম,একজন লেডি ওয়েটার এসে বিকেলের নাস্তা দিয়ে গেলেন।
হালকা খেয়ে নিয়ে, বেডে ফোন স্কল করছিলাম।
দরজা তে লক পড়ায় উঠে গিয়ে দরজা খুলে দিলাম।
দরজা খুলে দিতেই বেশ কয়েকজন বিউটিশিয়ান হাতে রাজ্যের জিনিসপত্র নিয়ে রুমে ঢুকে গেলেন । সাথে রিমি আমার বান্ধবী রা আর তনি আপু ও আছে।
আমি ওদের দিকে তাকাতেই ওরা শুধু হাসলো।
তারপর বিউটিশিয়ান আমাদের সাজাতে লাগলো।
ভারী মেকআপ না , একদম হালকা মেকআপ কিন্তু ব্রাইডাল লুক দেখতে লাগছে।
পিং কালারের গরজিয়াজ একটা শাড়ি লেহেঙা পড়িয়ে দিলেন।
সাথে কিছু জুয়েলারি, জুয়েলারি দেখে বুঝলাম ডাইমন্ডের।
কিন্তু আমাকে এতো সাজ গুজ করে এরা কোথায় নিয়ে যাবে।
কেউ কিছু বলছে ও না।
এরা এমন কেন , সবাই আমাকে বাচ্চা উপাধি দিয়ে দেয়।
যাহ আর কাউকে কিছুই বলব না।
যা ইচ্ছে হয় কর, হুহহহ।
সাজগোজ কমপ্লিট করে আমার চোখ বেঁধে কোথাও একটা নিয়ে বসিয়ে দিলো।
আমি ও বাচ্চাদের মতো বসে রইলাম।
কিছুক্ষণ পর একটা গানের সুর ভেসে আসলো, আর সঙে সঙে আমার চোখ খুলে দিলো।
আমি সামনে তাকাতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া গিটার হাতে সুর তুলছেন। সুর তুলতে তুলতে
ধীর পায়ে আমার দিকে এগিয়ে আসলেন।
তারপর ই গান শুরু করলেন
” I SWEAR ”
I swear by the moon
and the Star’s in the sky
And I swear like the
Shadow that’s by your side
I see the question in your eyes
I know what’s weighing on your mind.
You can be sure I know my heart
‘Cause I’II stand beside
You thought the years
You’II only cry those happy tears
And though I make mistakes
I’ll never break your heart
And I swear by the moon
And the Star’s in the sky
I’II be there
I swear like a shadow that’s by your side
I’II be there………..
গান শেষ হয়ে গেলে ও আমি ওনার দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি।
পিংক কালারের শার্ট সাথে পিংক হোয়াইট ব্লেজার।
বুকে সানগ্লাস রাখা, চুল গুলো হালকা উড়ছে।
অসাধারণ লাগছে ওনাকে , ইসসস ইচ্ছে করছে নিজের মধ্যে লুকিয়ে নিই।
যাতে কেউ দেখতে না পায় ওনাকে।
আমি এখন ওনার পৃথিবী তে চলে গেছি।
এই মূহুর্তে আশে পাশের কারো দিকে কোনো ধ্যান নেই।
ফারহান ভাইয়া আমার একদম কাছে এসে সবার সামনে হাঁটু গেড়ে বসে পড়লেন।
তারপর বুক পকেট থেকে একটা গোলাপ বের করে আমার কাছে বাড়িয়ে দিয়ে বললেন
– আমার প্রেয়সী হবি ?
সারাজীবন এই বুকে আগলে রাখবে , একটু ও কষ্ট দিবো না।
শুধু একটু ভালোবাসবি আমায়।
আশে পাশে সব বড়রা আছে , কিন্তু আজকের এই মুহূর্তে আমার একটু ও লজ্জা লাগছে না।ওনার কথাতে চোখ দুটো ছলছল করে উঠলো।
এতো ভালোবাসেন ওনি আমায়।
আমার চোখের কোনে কিঞ্চিত পানি দেখে ফারহান ভাইয়া উঠে আমায় এক হাতে জড়িয়ে নিলেন।
আমি ওনার থেকে ফুল টা নিয়ে মৃদু স্বরে বললাম
– হ্যাঁ আমি আপনার সমস্ত সিদ্ধান্তে রাজি।
শুধু আপনাকে চাই , শুধু আপনাকে।
আমার কথাতে ফারহান ভাইয়া মুদু হাসলেন।
আজকের এই মেহেন্দি তে বড় বড় করে লিখবো ফারহান।
হ্যাঁ আজ থেকে এই মানুষটার নাম অন্তরে গভীর ভাবে লিখে নিবো।
_______________________
অবশেষে পবিত্র সেই তিন শব্দের মাধ্যমে আমার সাথে ফারহান ভাইয়ার বিয়ে সম্পূর্ণ হলো।
মনে হচ্ছে আজ আমি কোনো এক বিশাল পূর্নতা পেলাম।
মনে হাজারো খুশিরা ঝলমল করছে।
বউ সাজে সেই কখন থেকে রিসোটের গেটে দাঁড়িয়ে আছি।
কিন্তু এই আমার ফেন্ড , ভাইয়ারা , ভাবিরা ফারহান ভাইয়ার ফেন্ড রা বেরোতেই দিচ্ছেন না।
কারন আমাদের বাসর কেউ সাজানোর সুযোগ পায় নি।
এই বিষয়ে কেউ কিছু জানে ও না, ফার হান ভাইয়ার সিক্রেট ।
উনি ওনার মতো কোথাও একটা কিছু করেছেন ।
অবশেষে এদের টাকা দিয়ে আর এক গাদা শর্ত পূরণ করে আমরা রিসোট থেকে বের হতে পারলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিলেন।
কিছুক্ষন পর গাড়ি থামলেন একটা ডুপ্লেক্স সুন্দর বাড়ির সামনে ।
বাড়িটা বেশ বড় এমন না , কিন্তু ভিষন সুন্দর এ বাড়ি।
আর চারিপাশ টা বিশাল ।
মনে হচ্ছে বিশাল রাজ্যে ছোট্ট এক রাজপ্রাসাদ ।
সমস্ত আধুনিকতার ছোঁয়া রয়েছে এ বাড়িতে।
ছুটির দিনে সময় কাটানোর জন্য বেস্ট।
ডুপ্লেক্স বাড়িটার সামনে বেশ লম্বা সরু রাস্তা, আমি ফারহান ভাইয়ার দিকে তাকাতেই ফারহান ভাইয়া মুচকি হাসলেন।
কোনো কিছু না বলে আমায় কোলে তুলে নিলেন।
আর আমি দু হাতে ওনার গলা জড়িয়ে নিলাম।
সরু রাস্তা দিয়ে যাওয়ার সময় দেখতে পেলাম কালো গোলাপের বাগান।
পাশে বোর্ডে বড় বড় করে লেখা আমাদের জীবনের সমস্ত অন্ধকার শুষে নিক এই কালো গোলাপ।
কোলে করে সোজা বাসার ভেতরে নিয়ে গেলেন।
সিঁড়ি বেয়ে উপরে উঠে একটা রুমে নিয়ে গেলেন।
রুম টা ভীষণ সুন্দর, ফুল দিয়ে সাজানো।
এই বাসর যে ওনি নিজ হাতে সাজিয়েছেন , তা বুঝতে আমার সময় লাগলো না।
পুরো রমরমা পরিবেশ, ওনি আমায় বেডে বসিয়ে দিলেন।
তারপর আমার কাছে বসে গালে হাত দিয়ে কপালে গভীর ভাবে চুমু খেলেন।
ওনার উষ্ণ ঠোঁটের স্পর্শ আর গরম নিশ্বাস এই মুহূর্তে আমার শরীরে কম্পন সৃষ্টি করে দিয়েছে।
ভালোবাসা হলো এক জ্বালা , দূরে গেলে বাঁচা অসম্ভব আর কাছে থাকলে ও নিশ্চিত মৃত্যু।
তবু ও আমি খুববব করে চাই এই মৃত্যু কে।
ফারহান ভাইয়া আমার চোখের পাতাতে আলতো করে চুমু খেয়ে ঠোঁটে ভালোবাসার স্পর্শ ছুঁইয়ে দিলেন।
ঠোঁটে স্পর্শ পেয়ে আমি ওনার শার্ট খামচে ধরলাম।
আমার শরীরে প্রতিটা নিউরন এই মানুষটার প্রতি আসক্ত হয়ে গেছে।
ফারহান ভাইয়া কিছুক্ষণ আমায় আলতো হাতে জড়িয়ে ধরলেন।
তারপর উঠে গিয়ে কাবাড থেকে একটা রেড কালারে একচ স্লিক এর শাড়ি বের করে আনলেন।
আমার হাতে শাড়িটা দিয়ে বললেন
– ফ্রেস হয়ে আয়।
আমি নিচু হয়েই মাথা ঝাঁকালাম।
ফারহান ভাইয়া মৃদু হেসে আমার থুতনি উঁচু করলেন।
আমি চোখ বন্ধ করে নিয়েছি, কারন ওনার ঐ নেশাক্ত চোখের দিকে তাকালে আমি এখনি খুন হয়ে যাবো।
ফারহান ভাইয়া আমার কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
– লজ্জাবতী।
ফারহান ভাইয়া আমায় ছেড়ে নিচে চলে গেলেন।
আর আমি ফ্রেস হতে চললাম।
ফ্রেস হয়ে এসে বেডে ট্রাওয়াল টা রাখতেই দেখলাম ফারহান ভাইয়া আসছেন, হাতে এক মগ কফি।
লাল রঙের শার্ট এ ওনাকে পুরো ভালোবাসার সমুদ্র মনে হচ্ছে ।
আমায় দেখে মুচকি হাসলেন ওনি , বুকের ভেতর অসম্ভব কম্পন হচ্ছে।
ফারহান ভাইয়া কফি টা আমার হাতে দিয়ে আমার ভেজা চুল গুলো আলতো হাতে খুলে দিলেন।
ফারহান ভাইয়া আর আমি এক ই মগ থেকে কফি শেষ করলাম।
সারাজীবন আমি এভাবেই ওনার সাথে থাকতে চাই।
ওনার সাথে কাটানো প্রতি টা মুহূর্ত আমার কাছে জান্নাতের সুঘ্রান পৌছে দিচ্ছে।
মূহুর্ত গুলো সত্যি খুব পরিপূর্ণ।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে বাসা থেকে বের হয়ে আসলেন।
আমি জানতে চাইলাম না আমরা কোথায় যাচ্ছি।
কারন আমি জানি , যেই মানুষ টা আমাকে নিয়ে যাচ্ছে তার কাছে আমি সব থেকে নিরাপদ।
ফারহান ভাইয়া বাসা থেকে বের হয়ে আমায় নিয়ে বাড়ির পেছনের দিক টা চললেন।
বাড়ির পেছনের দিকটা দিয়ে ও সরু রাস্তা ।
সরু রাস্তা দিয়ে আমরা আগাতে লাগলাম।
পরিবেশ খুব ই মনোমুগ্ধকর, মনে হচ্ছে পৃথিবীর সমস্ত অনুভূতি আমার সাথে খেলা করে যাচ্ছে।
আকাশের হাজারো নক্ষত্র রা আলো ছড়াচ্ছে ।
সরু রাস্তা দিয়ে যাচ্ছিলাম আর আমাদের উপরে পড়ছিলো অজ্রস ফুলের পাপরি।
রাস্তার চারিপাশে সাজানো আমার আর ওনার ছবি।
প্রতিটা ছবিই বিয়ের আগের, সেই সপ্তম শ্রেণীতে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরেছিলাম সেটা ও আছে।
বোধহয় সিসি টিভি ফুটেজ থেকে কালেক্ট করেছিলেন। অষ্টম শ্রেণীতে কালোগোলাপ দেওয়ার সেই মূহুর্ত , হসপিটালে ওনার কাঁধে মাথা রেখে ঘুমানো।
বারান্দায় বার্থডে সেলিব্রেশন, তাছাড়া আমার কিছু ইউনিক মূহুর্ত ও আছে।
যখন আমি গাল ফুলিয়ে তোতার কাছে ওনার নামে অভিযোগ করতাম।
এগুলো কীভাবে পেলেন তা আমার জানা নেই।
ফুচকা খাওয়ার ছবি, সব থেকে লজ্জা লাগছিলো আমার কোমর জড়িয়ে ধরা ছবিটা দেখে যা কিছুক্ষণ আগের।
এই ছবিটাতে ওনার হাত শরীরে এক অংশ কে ছুঁইয়ে দিয়িছিল।
ইসসস এটা ও এখন কালেক্ট করে নিয়েছেন।
কিহহ লজ্জা, উনি এমন কেন, শুধু আমাকে লজ্জায় ফেলে দেন।
আরো হাজারো ছবি দিয়ে পূর্ন এই রাস্তাটা ।
মনে হচ্ছে এটা শুধু আমার আর ওনার দুনিয়া।
ফারহান ভাইয়া আমার হাত ধরে সরু রাস্তার শেষ পথে নিয়ে এসেছেন ।
আমি সামনে তাকিয়ে হা হয়ে আছি , এটা তো একটা
বিচ।
আমাদের বাসা টা তাহলে এই বিচের সাথেই।
বিচ টি ভয়ঙ্কর সুন্দর, সাথে লাইটিং এ আরো স্নিগ্ধ লাগছে।
পাশেই আমার তোতা পাখি টাকে দেখতে পেলাম।
ফারহান ভাইয়া আমার সামনে আরেকটা তোতা পাখি আনলেন।
আমি তাকাতেই বললেন
– এটা তোকে দেওয়া তোতা পাখির জোড়া।
সেইদিন তোর জন্য এনেছিলাম, কিন্তু আমাদের দূরত্বের জন্য এই পাখি দুটো কে ও কষ্ট দিয়েছি।
ওদের দুজন কে ও আলাদা করে দিয়েছিলাম।
কিন্তু আজ আমাদের মাঝে কোনো দূরত্ব নেই।
তাই আজকে ওদের ও পথ চলা শুরু হবে।
দুজন কে মুক্ত করে দিবো , যেমন আজ সেই পবিত্র শব্দ উচ্চারণ করে আমাদের ভালোবাসা মুক্ত ঠিক তেমনি ।
ওনার কথায় আমার মুখে হাসি ফুটে উঠলো ।
লোকটা পাগল একটা, উনি আর আমি এক সঙ্গে পাখি দুটো কে মুক্ত করে দিলাম।
ফারহান ভাইয়া জোড়ে চিৎকার করে বললেন
– হে মুক্ত বিহঙ্গ শুনে রাখো, আমাদের ভালোবাসার সাক্ষী হয়ে থেকো।
হে পৃথিবী হিংসে করো না আমাদের ভালোবাসা কে।
স্নিগ্ধ তা দিয়ে পরিপূর্ণ করে দিও, আমাদের ভালোবাসার সাথে মিতালি গড়ে নিয়ো।
আমি মুগ্ধ হয়ে ওনাকে দেখছিলাম, কি আছে ওনার মাঝে।
ফারহান ভাইয়া আমার খোলা এলোমেলো চুল গুলো ঘাড়ের এক সাইট করে দিলেন।
তারপর খোলা আকাশের সামনে আমার দু হাতের সাথে নিজের হাত মেলে দিলেন।
সমুদ্রের মৃদু বাতাস আমাদের আবদ্ধ করে নিয়েছে।
ফারহান ভাইয়া আমাদের ঘাড়ে গভীর ভাবে চুমু খেলেন।
আর আমার সারা শরীরে কাঁপন সৃষ্টি হলো।
ফারহান ভাইয়া আমার দু হাত শক্ত করে আবদ্ধ করে নিলেন।
তারপর ঘাড় থেকে মুখ উঠিয়ে কানের কাছে মুখ নিয়ে বললেন
💖 প্রেয়সী আমার স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
সমাপ্ত ❤❤❤❤
#স্বপ্নের_প্রেয়সী_সিজন_2
https://www.facebook.com/110123584545542/posts/195980095959890/
গল্পের এন্ডিং কেমন হয়েছে জানাবেন।
এদের ভালোবাসা এভাবেই সারাজীবন পরিপূর্ণতা পাক।
এই গল্পের প্রতি আলাদা মায়া পড়ে আছে তবে আমি এই কথা তে বিশ্বাসী শেষ থেকেই শুরু।😊
আর সবাই কে অসংখ্য ধন্যবাদ আমার প্রথম গল্পে 1000+ ফলোয়ার দেওয়ার জন্য ।
কাল থেকে কয়েকদিন অনুগল্প দিবো।আর তারপর শুরু হবে নতুন গল্প
❤ বান্ধবীর ভাই যখন বর ❤
আমার পঞ্চম গল্প হিসেবে স্বপ্নের প্রেয়সী সিজন 2
আনার ইচ্ছে আছে।
ঐ টাতে ওদের সংসার দেখানোর চেষ্টা করবো আর হ্যাঁ কনসেপ্ট টা তো অবশ্যই ভিন্ন হবে।
সবার প্রতি অজ্রস ভালোবাসা রইল।আর আমার পরবর্তী গল্প পড়ার জন্য আমন্ত্রণ জানাচ্ছি ।
সবাই ভালো থাকবেন আর হ্যাঁ এতোদিন কমেন্ট না করে থাকলে ও আজকে একটি কমেন্ট করবেন।
ভালো লেগে থাকলে একটি রিভিউ দিবেন।
বি: দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।
❤❤ ফাতেমা তুজ ❤❤