স্বপ্নের প্রেয়সী 💖 পর্ব- ৬

0
3419

💖 স্বপ্নের প্রেয়সী 💖
Part – 6
__________________

ভয়ে দুইদিন আমি স্কুল এবং কোচিং করতে যাই নি।
আমার এক কথা শিলা সুস্থ হলেই যাবো ।
বাসার সবাই আমার এহেম আচারনে হতবাক ।
সবার মুখে এক বুলি যে মেয়ে নিজের জ্বর হলে ও স্কুল কোচিং বন্ধ করে না সে বান্ধবীর জ্বরের জন্য এপসেন করছে। ব্যাপারটা কেমন যেন সন্দিহান তাই নয় কি ।
উফফফফ বুঝি না যেহেতু আমি একা যেতে চাচ্ছি না নিশ্চয়ই কোনো সমস্যা আছে । কিন্তু এরা কেউ তো বুঝতেই চাচ্ছে না । কি মহা ঝামেলা তে পরলাম।
তাই মাথায় একটা বুদ্ধি খেলালাম , রুমে গিয়ে চট করে দরজা লাগিয়ে বসে রইলাম । আর তার আগে একটা কাগজে বড় বড় করে লিখলাম যে ফারাবি ততক্ষণ পর্যন্ত দরজা খুলবে না , যতক্ষণ না সবাই স্কুল আর কোচিং এর কথা বলা বন্ধ করছে । এই সুন্দর লেখাটা রুমের পাশের দেওয়ালে টানিয়ে দিলাম ।
সবাই এই ব্যাপারে চমকে উঠলো এই টুকু ব্যপারে কেউ এমন করে জানা ছিল না ।
রিফাত ভাইয়া দরজার কাছে এসে অনেক্ষন ডেকে গেল কিন্তু আমি বলে দিলাম তোমাদের কথা বিশ্বাস করি না । তারপর একে একে আম্মু, বড় মা, বড় আব্বু ডেকে গেলেন । আব্বু বাসায় নেই আজ দুদিন অফিসের কাজে কক্সবাজার গেছেন, না হলে হয় তো তিনি এসে ও ডাকতেন । আব্বুর কথা ভাবতেই মন টা খারাপ হয়ে গেল ।
নিজের মন কে নিজেই সান্ত্বনা দিলাম তারপর দীর্ঘশ্বাস ফেলে চুপ চাপ পা ছড়িয়ে খাটে শুয়ে পড়লাম।
ফ্যানের দিকে এক ধ্যানে তাকিয়ে আছি । কালকের কথা মনে পড়তেই মন টা বিষিয়ে উঠলো।
আবার খানিকটা লজ্জা পেলাম ফারহান ভাইয়া কে জড়িয়ে ধরার কথা ভেবে ।
সে যাই হোক ভাইয়াই তো হয় । কিন্তু ফারহান ভাইয়া কাল এতো ঠান্ডা মেজাজে কথা বলছিলো কেন, হয়তো আমাকে কাঁদতে দেখে । এই সব চিন্তা করছিলাম এমন সময় রিফাত ভাইয়া ডাক দিলো আমাকে শুনিয়ে শুনিয়ে বলল ফারাবি তুই বোধহয় আর কিটক্যাট খেতে পছন্দ করিস না । আচ্ছা থাক আমি ই খেয়ে নেই ,আমি চললাম রে । এই যে রিফাত ভাইয়া সব সময় আমার কলিজা তে টান মারে । ধ্যাত কি যে করি ভাল্লাগেনা । রুমের মধ্যেই পায়চারি করছি আর নিজেই নিজেকে বলছি যাই হয়ে যাক কিটক্যাট এর সাথে রাগ করা যাবে না ।
দরজা খুলে দিলাম এক দৌড়, দেখি রিফাত ভাইয়া করিডরেই আছে । হাত থেকে হ্যাঁচকা টান মেরে চকলেট নিয়ে নিলাম বললাম তোমরা কিন্তু বলেছো আমাকে আর স্কুল কোচিং মিস নিয়ে কিছু বলবে না ।
রিফাত ভাইয়া বলল ,
– চকলেট নিয়েছিস না এখন যেতেই হবে । কোনো অজুহাত চলবে না ।
কিন্তু আমি তো আমি ই যা বলেছি তাই শিলা সুস্থ হলেই যাবো ।
মুখ ভেঙচিয়ে চলে আসছিলাম ওমন সময় ফারহান ভাইয়া কে দেখে চমকে গেলাম ।
ফারহান ভাইয়া এতক্ষণ এখানেই ছিল হায় হায় কোথায় যাই আমি কি করবো বুঝতে পারছি না ,তাই চুপ চাপ পাশ কাটিয়ে যেতে নিলাম ।
তখনই ফারহান ভাইয়ার ডাক পড়ল ,
– স্কুল যেতে চাচ্ছিস না নাকি ?
আমি শুকনো ঢোক গিলে বললাম,
– শিলা অসুস্থ তো তাই ।
– আচ্ছা । শিলা সুস্থ হলেই কিন্তু আর মিস দিবি না বুঝেছিস ।
মাথা ঝাঁকিয়ে চলে আসলাম ।
অতঃপর কেউ আমাকে আর জোড় করে নি। কারন তারা ও জানে আমি নাম্বার ওয়ান ঘাড় ত্যাড়া ।

______________

শিলা কে নিয়ে স্কুল যাচ্ছি ।
তিন দিনের মাথায় সুস্থ হয়েছে শিলা ।
শিলা পাশে থাকা সত্যে ও মন কিছু তেই সায় দিচ্ছে না ।
তিন তিনটে দিন স্কুল , কোচিং মিস হয়েছে আমার ,মন সায় না দিলে ও যেতেই হবে ।
আমি যে নিরুপায় হতাশা, দূর্বলতা , আর চিন্তা সব কিছু দীর্ঘশ্বাস হয়ে বেরিয়ে আসলো ।
_________________

ধীরে ধীরে হেঁটে চলছি ।
মনের ভেতর অজানা সব ভয় কাজ করছে ।
নিজেকে সামলাতে বেশ বেগ পেতে হচ্ছে আমায়।
অসহায় এর মতো হেঁটে চলছি আর সেইদিনের নরকীয় ঘটনা গুলো মাথায় ঘুরপাক খাচ্ছে।
আমাকে ভাবলীলাস হীন ভাবে হাঁটতে দেখে শিলা কয়েক বার ডাকলো।
শিলার কন্ঠস্বর যেন আমার মস্তিষ্ক কে সাড়া দিলো না ।
শিলা আমার এমন মতিভ্রম দেখে হালকা করে কয়েক টা ধাক্কা দিলো।
এবার বোধহয় আমার শরীররের প্রতি টা কোষ সংকুচিত হয়ে শিলার দিকে মনোযোগ দিলো ।
শিলার দিকে হালকা করে তাকিয়ে বললাম ,
– হুম ।
শিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো কিরে এতোক্ষন ধরে ডাকছি কোনো সাড়া নেই যে ?
কোন জগতে আছিস হুম ?
– না তেমন কিছুই না ।
– আচ্ছা শরীর খারাপ হলো না তো ।

আমার কপালে শিলা আলতো ভাবে হাত ছোঁয়া লো তারপরই বলা শুরু করলো ,
– উমমম না , জ্বর তো না ।
টেম্পারেচার তো একদম ঠিক তাহলে ?
ফারাবি অন্য কোনো সমস্যা হচ্ছে কি ?
বাসায় বেক করি তাহলে ?

শিলার হাত ধরে হালকা হেসে বললাম,
– আরে তেমন গুরুত্বপূর্ণ কিছু না ।
অতিরিক্ত গরমের কারনে হয়তো অস্বস্তি বোধ হচ্ছে ।

শিলা আমার গাল টেনে বললো,
– আচ্ছা ঠিক আছে চল তাহলে।
_____________

ধীরে ধীরে আগাচ্ছি যতো, মনের ভেতর অজানা সব ভয় বাড়ছে ততো ।
সামনে তাকাতেই দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়া দের আড্ডা মহল দেখা যাচ্ছে ।
এবার যেন পা চলছেই না ।
কোনো রখম হেঁটে চলছি আর সেইদিনের ঘটনা সব চোখের সামনে ভেসে উঠছে ।
আকাশ ভাইয়া দের আড্ডা মহলের কাছাকাছি চলে এসেছি তখন দেখতে পেলাম আকাশ ভাইয়া রা
আমাদের দিকে এগিয়ে আসছেন ।
আমি স্থির হয়ে গেলাম ।
শিলা সামনের দিকে এক দৃষ্টি তে চেয়ে আছে ।
বোঝার চেষ্টা করছে কি হচ্ছে কিন্তু ওর কিছুই বোধগম্য হলো না ।
আকাশ ভাইয়া আমাদের একদম কাছে চলে এসেছি মাঝে দুহাতের দূরত্ব হবে ।
মনের ভেতর অজানা আশংকা ঝড় তুলছে ।
তবে কি আজও সেদিনের মতো ?
না না মাথা কাজ করছে না।
আমার ভাবনাকে অগ্রসর করতে না দিয়ে হঠাৎ আকাশ ভাইয়া আমার পা ধরে বসে পড়ল।
আকাশ ভাইয়া দের মতো এমন নরপিশাস বখাটের এমন অপ্রত্যাশিত কান্ডে আমি বাকশক্তি হারিয়ে ফেললাম ।
মনে হচ্ছে আমি স্বপ্নে আছি এ কি হচ্ছে আমার সাথে?
আমার ভাবনাকে সম্পূর্ণ মিথ্যে করে দিয়ে আকাশ ভাইয়া পা জড়িয়েই বলা শুরু করলো,
– বোন আমারে মাপ করে দেও ।
আমি অন্যায় করে ফেলেছি। আর কখনো এমন হবে না।
প্লিজ বোন প্লিজ লাস্ট বারের মতো মাপ করো আমায় ।
এই যে কান ধরছি , কখনো কারো সাথে এমন করবো না, প্লিজ বোন প্লিজ।

আকাশ ভাইয়ার এমন বিহেভ এ আমি হতবুদ্ধি না হারিয়ে পারলাম না ।

শরীরের প্রতি টা নিউরন স্তব্ধ হয়ে গেছে ।
আমার কি করা উচিত তা মতিভ্রম হলো না ।

পরিস্থিতি সামাল দিতে কোনো রখমে বললাম ।
ঠিকাছে আমি মাপ করে দিয়েছি ।
এই বলেই পাশ কাটিয়ে চলে আসলাম । কোনো ভাবেই এই নরপিশাস দের এক মুহূর্ত দেখতে ইচ্ছে হচ্ছে না ।
কিন্তু এটা কি হয়ে গেল আমার সাথে সে বিষয়ে আমি সন্দিহান ।

_________________

আমি একটু আগে ঘটে যাওয়া অকল্পনীয় ঘটনায় হতভম্ব ।
মনের সকল কার্যক্রম স্থির হয়ে শুধু একটা কথাই জানান দিচ্ছে কি হলো
এটা।
খানিকটা পথ চলে আসার পর শিলা আমাকে জিজ্ঞাসা করলো ফারাবি সব কিছু বুঝিয়ে বল তো ।
আকাশ ভাইয়া দের মতো এমন নরপিশাস বখাটে হঠাৎ পথ আটকিয়ে এভাবে তোর কাছে ক্ষমা কেন চাইলো । কিছু কি হয়েছে ?
আর ওদের অবস্থায় দেখেছিস।
শিলার কথায় আমার ধ্যান ভাঙ্গলো ।
আসলেই তো । আমি আমার চিন্তা তে এতোই বিভোর ছিলাম যে আমি খেয়াল ই করি নি আকাশ ভাইয়া দের করুন অবস্থা ।

– শিলাকে সেইদিনের সব ঘটনা খুলে বললাম ।
শিলা আমার দিকে তাকিয়ে বললো ,
– ও মাই গড । এতো কিছু হয়ে গেল আর তুই আমাকে জানালি ও না ।
আমার পতিউওরের প্রত্যাশা না করে শিলা আমাকে জড়িয়ে ধরে বললো ,
– আম সরি ফারাবি । আমি থাকলে হয়তো এমনটা হতো না ।
আমি শিলা কে আমার থেকে ছাড়িয়ে নিয়ে মাথায় গাট্টা মেরে বললাম,
– দুর বোকা ।এতে তুই কেন আপসেট হচ্ছিস। তোর কি দোষ আর নরপিশাস রা অদের নরকীয় আচারন দেখাবেই । তাই বলে আমরা কেন নিজেদের দোষারোপ করবো । আর তাছাড়া দেখলি না কেমন শাস্তি পেয়েছে ওরা । আল্লাহ্ যা করেন নিশ্চয়ই ভালোর জন্যই করেন ।
এর জন্য আপসেট হবি নি প্লিজ ।

__________

স্কুলের কাছাকাছি চলে এসেছি তখনই শিলা আমাকে বলল ,
– ফারাবি আকাশ ভাইয়া দের এই অবস্থা কে করলো বল তো ?
তুই কি বাসায় কাউকে বলেছিস ?

আমি নিজে ও এই বিষয়ে চিন্তিত কে করল এমন ।
শিলার ডাকে ধ্যান ভাঙ্গলো।
– না রে । আমি তো বাসায় বলি নি ।
জানি না কি হলো এসব ।
আমাকে কাছে ঘুরিয়ে শিলা বলল ,
– সে যাই হোক । যা হয়েছে ভালো ই হয়েছে শয়তান গুলোর উচিত শিক্ষা হয়েছে ।
চল চল দেরি হয়ে যাচ্ছে ।
না হলে গনিত স্যার আজকে কান ধরে দাড়া করিয়ে রাখবেন ।

– হুম চল । বলেই তাড়াতাড়ি স্কুলে চলে গেলাম ।

_____________________

স্কুল থেকে ফিরছিলাম।
প্রচন্ড গরমে মাথা কাজ করছে না ।
তাই শিলা আর আমি একটা শপ থেকে আমার প্রিয় লেমন ফ্লেবার এর আইসক্রিম কিনে নিলাম সাথে নিলাম আমার দুর্বলতা কিটক্যাট আর ড্রাক চকলেট ।

দুজনে আয়েসে আইসক্রিম খেতে খেতে আসছিলাম ।
খাওয়া প্রায় শেষ তখনি দেখা হলো শিলার আব্বু আম্মুর সাথে ।
সালাম দিয়ে কুশল বিনিময় করলাম ।
শিলার আব্বু আম্মু সুপারসপ এ যাচ্ছি লো কেনাকাটার জন্য তাই সাথে করে শিলা কে ও নিয়ে গেল ।
মেয়েটা বাসায় একা একা থাকার থেকে ওনাদের সাথে গেলেই ভালো হবে এতে ওনাদের সাহায্য ও হবে আর ওনারা যথেষ্ট সময় নিয়ে কেনাকাটা ও করতে পারবেন । তাই ওনারা শিলা কে নিয়েই চললেন ।
বিদায় জানিয়ে চলে আসলাম ।

হাঁটছি ঠিকই কিন্তু মাথা কাজ করছে না ।
সকালে কি হয়ে গেলে, এক ধ্যানে হেঁটে চলছি , ভাবনা গুলো কুড়ে কুঁড়ে খাচ্ছে ।

[ আসসালামুআলাই রিডার্স । আজকে পার্ট টা একটু বড় করেই দিয়েছি হয়তো । কালকে এই পার্ট টা লিখছিলাম পুরো টা শেষের পথেই ছিল । হঠাৎ ফোনের চার্জ শেষ হয়ে ফোন টা ওফ হয়ে গেল । পুরো কষ্ট মাটি হয়ে গেল 😔। একটা গল্প লিখতে কতো টুকু সময় লাগে আর কতো টা ভাবতে হয় তা নিশ্চয়ই আপনারা জানেন । আমার পাঠক/ পাঠিকাদের জন্য মাথা ঠান্ডা করে আবার লিখতে হলো আমায় । আশা করি এই পার্ট টা ভালো লাগবে । একটি কমেন্ট করে জানাবেন প্লিজ ।
ভুল ত্রুটি হলে ধরিয়ে দিবেন ।
আমার লেখা গল্প যদি আপনাদের ভালো লাগে তাহলে পেজ এ লাইক আর বন্ধুদের ইনভাইট দিয়ে পাশে থাকবেন । আর লাইক কমেন্ট করতে ভুলবেন না । একটি লাইক কমেন্ট আমার কষ্ট কে সার্থকতা দেয় ]

বি : দ্র : ভুল ত্রুটি মাপ করবেন ।

💜 হ্যাপি রিডিং 💜

চলবে
ফাতেমা তুজ

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here