স্বর্ণাভ সুখানুভূতি। পর্ব-১০

0
1961

#স্বর্ণাভ_সুখানুভূতি। (পর্ব-১০)
আফিয়া খোন্দকার আপ্পিতা

জৈষ্ঠ্যের নতুন প্রভাত। রবির এক ফালি কোমল রোদ এসে পড়েছে জানালায়। নীলাভ পর্দার জন্য রুমে আসার সুযোগ পাচ্ছে না। মুশরাফা পরনের লাল টুকটুকে শাড়ির আঁচলটা ঠিক করে উঠে দাঁড়াল। জানালার পর্দা সরিয়ে রোদ্দুরের দলের আগমনের পথ উন্মুক্ত করল। হুড়মুড় করে রোদ এসে পড়ল মেঝেতে, জানালা ঘেঁষে থাকা খাটে। ছুঁয়ে দিল ঘুমন্ত জাওয়াদকে। সূর্য্যের আলো তখন ধারালো আকার ধারণ করেছে। রোদ চোখে লাগতেই ঘুমের মাঝে ভ্রু কুঁচকাল জাওয়াদ। কপালে বিরক্তির গাঢ় রেখা উদয় হলো। নড়েচড়ে উঠল সে। মুশরাফা ধারণা করল, এবার চোখ খুলবে জাওয়াদ। কিন্তু ওর ভাবনায় ব্যাঘাত ঘটিয়ে পাশ ফিরে ঘুমিয়ে পড়ল।

মুশরাফা শূন্য চাহনি দিয়ে বসল তার পাশে, খাটের অন্যপাশে। ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল জীবনসঙ্গীর দিকে। কী শান্ত, কোমল, সুশ্রী নিষ্পাপ মুখশ্রী! অদ্ভুত এক মায়া চেহারাটায়, সেই মায়া ওকে টানছে। চোখে মুগ্ধতা ভর করছে। প্রেমমাখা চোখে তাকিয়ে রইল অনেকক্ষণ। জাওয়াদের মাথার চুল মাথা গড়িয়ে কপালে এসে পড়েছে, বড্ডো এলোমেলো দেখাচ্ছে তাদের। আলতো হাতে কপালের চুল সরিয়ে দিল মুশরাফা। কোমল স্বরে ডাকল,
‘ অনেক বেলা হয়ে গেছে, উঠুন।’

জাওয়াদের কোন হেলদোল নেই, সে আগের মতোই গভীর ঘুমে আছন্ন। স্ত্রীর কথাটা তার কর্ণকুহরে পৌঁছে নি। মুশরাফার চোখের মুগ্ধতা সরে গেল। উদয় হলো হতাশার আভা।
ঘড়ির কাটায় সকাল সাতটা বাজে। লোকটার উঠার কোন লক্ষণ দেখা যাচ্ছে না। ফজর নামাজটাও পড়েনি। এত করে ডেকেছে, উঠাতে পারেনি। জেগে গিয়ে হু হা করে আবার ঘুমিয়ে পড়েছে। ভোরে উঠার অভ্যাস নেই বোধহয়। আচ্ছা, লোকটা কি নামাজ পড়েনা? লোকটার সম্পর্কে তার ধারণা ভুল? সে তার মনের মতো কেউ নয়? সে ভুল কাউকে বেছে নিল না তো! কত প্রশ্ন উঁকি দিল মুশরাফার মনে। কপালে চিন্তার ভাজ পড়ল, চেহারা ঢেকে গেল অজানা কৌতুহলে। লোকটা উঠলেই জেনে নিবে। এই প্রয়াসে কাধে ধাক্কা দিয়ে ডাকল।

এবার নড়ে উঠল জাওয়াদ। ঘুম ছুটেছে চোখ থেকে। তবে ঘুমভাব পুরোপুরিভাবে কাটেনি। আধো চোখ খুলে চাইল স্ত্রীর পানে। লাল টুকটুক বউকে দেখে চমৎকার হাসল। বলল,
‘এতদিন এলার্মের আওয়াজে ঘুম ভাঙতো, আজ বউয়ের মধুর ডাকে ঘুম ভেঙেছে। অবশেষে জীবনে পরিবর্তন এসেছে। ‘

মুশরাফা তাড়া দিল, ‘সাতটা বাজে, উঠুন।’
জাওয়াদ মুশরাফার একটা হাত নিজের মাথায় নিয়ে বলল,
‘উঠছি, তার আগে বিলি কেটে দাও।’

মুশরাফা ওর রেশমি চুলে হাত ডুবাল। আলতো হাতে বিলি কাটতে লাগল। জাওয়াদ ওর দিকে পূর্ণচোখে চেয়ে বলল,
‘তোমাকে সুন্দর লাগছে। বউ বউ ধরনের সুন্দর।’

কোন এক কারণে মুশরাফার মন অশান্ত হয়ে আছে। নিজেকে স্বাভাবিক রেখেছে বহু চেষ্টার পর। জাওয়াদের কথায় অশান্ত মনটাও শান্ত হলো। হেসে ফেলল। বলল,
‘আপনাকে কিন্তু স্বামী স্বামী ধরনের সুন্দর লাগছে না একটু ও। ‘

জাওয়াদ ওয়াশরুম থেকে এসেছে। গলায় টাওয়াল ঝুলানো। টাওয়াল দিয়ে মাথা মুছছে। মুশরাফা খাটে বসে ওকে পরখ করছে। ওর অশান্ত মন নামাজের ব্যাপারে প্রশ্ন করতে চাইল। কিন্তু ও মনকে সায় দিল না। সবে বিয়ে হয়েছে, আজই প্রশ্নবাণে ফেলা উচিত হবে না। কায়দা করে জেনে নিতে হবে। মুশরাফা করুণ সুরে বলল,
‘ফজর নামায তো মিস হয়ে গেছে।’

কার সেটা উল্লেখ করল না ও। জাওয়াদ ভেবেছে, মুশরাফা নিজের কথা বলছে, ও মাথা মুছতে মুছতে শান্তস্বরে বলল,
‘সমস্যা নেই। একদিনই তো। কাযা পড়ে নাও।’

নিজের যে নামাজ পড়া হয়নি সে খেয়াল নেই। একজন পাকাপোক্ত নামাজি ব্যক্তির এক ওয়াক্ত নামাজ কাযা হলে অনুতাপে তার মুখ ভাসে, আফসোসের অন্ত থাকে না। ফজর না পড়তে পারলে সকালে উঠেই কাযা আদায় করে নেয়। মুশরাফা জাওয়াদকে পরখ করল। ওর মুখভঙ্গি স্বাভাবিক। চেহারায় অনুতাপের লেশ মাত্র নেই, আফসোসের রেখা নেই। যেন ব্যাপারটা স্বাভাবিক, গুরুত্বহীন। মুশরাফা তবুও মনের ভাবনাকে প্রাধান্য না দিয়ে ক্ষীণ আশা নিয়ে অপেক্ষা করল, জাওয়াদ কাযা পড়বে। কিন্তু সে ওয়াশরুম থেকে ফিরে আয়নার সামনে গিয়ে তৈরি হতে ব্যস্ত। না নামাজের তাড়া, আর না জায়নামাজের খোঁজ। চুল আঁচড়িয়ে, গায়ে পারফিউম মেখে বলল,

‘আমি রেড়ি। চলো বের হই। নাস্তা করে অনিকের বাসায় যাব।’ সকালে উঠে নাস্তা হলে হোক না হলে নাই, একটা সিগারেট তার চাই-ই চাই। নিকোটিনে আসক্ত জাওয়াদের ক্রেভিং উঠেছে ঘুম ভাঙার পরই। নতুন বউকে মান দিতে গিয়ে খাওয়ার কথা ভাবনায় আনে নি। এখন বউয়ের চোখের আড়াল হতে পারলেই হয়। একটা সিগারেট ছাড়া থাকা যাবে না।

আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে আবার চুল সেট করানোয় মন দিল। মুশরাফা কিংকর্তব্যবিমুঢ় হয়ে বসে রইল। তার সন্দেহই ঠিক, লোকটা নামাজের ব্যাপারে উদাসীন। তার এই উদাসীনতা দ্বীনের ব্যাপারটাও স্পষ্ট করে দেয়। সে দ্বীনদার নয়।

ধারণা করা সবচেয়ে বড়ো মিথ্যা কথার সমান। মুশরাফা কোন ধারণা মাথায় আনতে চাইল না। ইতিবাচক ভাবতে চাইল, একদিন বাদ গেছে, কাল থেকে নামাজী পাবে তাকে। কিন্তু শয়তান ভর করা মন কত কী ভেবে যাচ্ছে। ধাক্কা লাগছে, হতাশা ছুঁয়ে দিচ্ছে। সে মনে প্রাণে একজন দ্বীনদার জীবন সঙ্গী চেয়েছে, তার সাথে জান্নাতে যাবার স্বপ্ন দেখেছে। কিন্তু সঙ্গী যদি দ্বীনদার না হয় তবে সে স্বপ্ন পূরণ হবে কেমন করে?
মুশরাফা স্থির দৃষ্টিতে আধুনিকতার ছোঁয়ায় নিজেকে সাজাতে ব্যস্ত থাকা জাওয়াদকে দেখতে লাগল। মাথায় চলছে অজস্র ভাবনা। কপালে চিন্তার ভাজ। হঠাৎ প্রশ্ন করল,
‘আচ্ছা, আপনি প্রতিদিন সকালে কয়টায় উঠেন ঘুম থেকে?’

জাওয়াদ প্রশ্নের গভীরত্ব নিয়ে ভাবল না। স্বাভাবিক স্বরে উত্তর দিল,
‘ অফিস থাকলে আটটায় উঠা হয়, আর অফিস না থাকলে বেশ বেলা করে উঠি।’

থেমে ভ্রু কুঁচকে বলল,
‘ তুমি হঠাৎ আমার ঘুমের হিসেবে নিকেশ করছো কেন? কারফিউ জারি করবে না কি! ‘
কৌতুকের সুর জাওয়াদের। মুশরাফা তার বুঝ পেয়ে গেল। মনটা আহত হলো। আশা ভঙের আওয়াজ শুনতে পেল।

মুশরাফা উঠে দাঁড়াল। প্রশ্নের উত্তর এড়িয়ে গেল সুকৌশলে। বলল,
‘সাড়ে সাতটা বাজে। মামী নাস্তা বানিয়ে বসে আছেন। আমাদের যাওয়া উচিত।’

জাওয়াদ ঘাটল না। তার ও দ্রুত যাওয়া উচিত। সস্ত্রীক রুম থেকে বের হলো। মুশরাফা রান্না ঘরের দিকে এগুল। নাজমুল সাহেব নতুন জামাইকে টেবিলে নিয়ে বসালেন। অনিক এলো খানিক পর। এ বাসায় অনিকের দাওয়াত দু’দিনের। নতুন জামাইয়ের বন্ধু, সাথে উকিল বাবা। দুই কুটুমে তার আপ্যায়ন হলো ভালোভাবে। নাস্তার টেবিলে
মুশরাফার বাবা তানভীর সিদ্দিকী ও উপস্থিত। তারা কাল চলে যেতে চেয়েছে, কিন্তু সবার কথার চাপে পড়ে যেতে পারেনি। জাওয়াদ গেলে চলে যাবে।
নাজমুল সাহেব, মুশরাফার খালু, দুই চাচা সবাই বসেছে। মুশরাফার বাবা মেয়ে জামাইকে তার কর্মজীবন সম্পর্কে নানা প্রশ্ন করছেন। জাওয়াদ চুপচাপ উত্তর দিচ্ছে। অনিক থাকায় টেবিলের কাছে গেল না মুশরাফা। নাস্তা খেয়ে রুমে চলে এলো।

রুম গুছানোর পর, সকালে রেখে আসা ভেজা কাপড় ধুতে গেল। জাওয়াদের প্যান্ট ধোয়ার সময় হাতে শক্ত কিছু লাগল। ঘটনা পর্যবেক্ষণ করতে গিয়ে পকেট থেকে লাইটার বেরিয়ে এলো। মুশরাফা তীক্ষ্ম চোখে চেয়ে রইল লাইটারটার দিকে। ছেলেরা একটা কারণেই পকেটে লাইটার রাখে, তা হলো সিগারেট ধরানোর জন্য। উনি কি তবে সিগারেট খান! সিগারেটের অপকারিতার দিকে লক্ষ থেকে সিগারেটকে ইসলামের নিষিদ্ধ হিসাবে ধরা হয়। এটা নেশার মতো। একটা ধার্মিক বা স্বাস্থ্যসচেতন মানুষ কখনো সিগারেট খেতে পারেন না। জাওয়াদ যদি সিগারেট খেয়ে থাকে তবে তার ধার্মিক হওয়ার ব্যাপারে প্রশ্ন উঠবে। নামাজ পড়ে না ঠিকমতো, সিগারেট খায়।

মুশরাফা আবার ধাক্কা খেল। লোকটার বদ স্বভাব গুলো বেরিয়ে আসছে। একদিনেই এগুলো জেনেছে, দিন গড়ার সাথে আরও কত কি বেরিয়ে আসবে! আবার না বের হয় সে মদ টদ ও খায়।
একরাশ হতাশা ঘিরে ধরল মুশরাফাকে। কাউচে গম্ভীর ভঙ্গিমায় বসে রইল।

জাওয়াদ ফিরল মিনিট দশেক পর। হাতে একটা গিফট বক্স। মুশরাফার দিকে এগিয়ে এলো। মুশরাফা তাকিয়ে রইল তার দিকে। জাওয়াদের চোখমুখ পরখ করল। শ্যামবর্ণের চোয়ালটার ঠোঁট জোড়া মাত্রাতিরিক্ত কালো। ছেলেদের ঠোঁট দুই সময় কালো থাকে। ১. যদি তার গায়ের রঙ কালো হয়। ২. যদি সে সিগারেট খায়।
জাওয়াদের ক্ষেত্রে দ্বিতীয় অপশন প্রযোজ্য। সন্দেহ সত্যে প্রমাণিত হচ্ছে ধীরে ধীরে। মুশরাফার দৃষ্টি গম্ভীর হলো। তার গম্ভীরর্যতা আঁচ করতে পারল না জাওয়াদ। আলতো স্বরে জিজ্ঞেস করল,
‘নাস্তা করেছো?’

মুশরাফা ছোটো করে উত্তর দিল, ‘হ্যাঁ।’
জাওয়াদ তার হাতে থাকা গিফট বক্স স্ত্রীর দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বলল,
‘উকিল বাবা তোমার জন্য উপহার পাঠিয়েছেন।’

মুশরাফা চুপচাপ নিল গিফটটা। জাওয়াদ ওর পাশ কাটিয়ে নিজের ব্যাগের কাছে গেল। থাকার প্রস্তুতি নিয়ে এসেছিল ও। নিজের স্বভাব সম্পর্কে অবগত নয় ও। যতযাই হোক, সিগারেট ছাড়া থাকতে পারবে না ও। আসার সময় কয়েক প্যাকেট সিগারেট ব্যাগে পুরেছে। অনিকের কড়া নির্দেশ ছিল, ওর পরিধেয় কাপড়ে যেন সিগারেট বা লাইটার না নেয়। রাফাদের বাসায় থাকাকালীন যেন সিগারেট না খায়। তাই ব্যাগেই নিয়েছিল। কিন্তু মধ্যরাতে সিগারেটের ক্রেভিং উঠলে সব ভুলে চুপিচুপি বারান্দায় গিয়ে সিগারেট খেয়েছে। মুশরাফা ঘুমে ছিল বিধায় টের পায়নি। খেয়ে সচেতনভাবে সিগারেটের প্যাকেট ব্যাগে লুকিয়ে রেখেছে, কিন্ত লাইটার রাখতে ভুলে গিয়েছে। ব্যাগটা মুশরাফা থেকে একটু দূরেই আছে। জাওয়াদ আড়াল হয়ে ব্যাগ থেকে সিগারেট নিয়ে নিল পকেটে। লাইটার খুঁজতে গিয়ে বাধল বিপত্তি। কোথাও নেই লাইটার। পুরো ব্যাগ তন্ন তন্ন করে খুঁজে পেল না। ওকে উদ্ভান্তের মতো দেখাল।

মুশরাফা ভ্রু কুঁচকাল। লোকটা কী খুঁজছে এমন করে? সে যদি কোন সাহায্য করতে পারে এই আশায় নিঃশব্দে গিয়ে পিছনে দাঁড়াল। ‘কী খুঁজছেন আমায় বলুন? আমি সাহায্য করি। ‘ বাক্যটা বলার জন্য মুখ খুলতেই চোখ গেল জাওয়াদের ব্যাগে এলোমেলো কাপড়ের মাঝে উঁকি দেয়া সিগারেটের প্যাকেটের দিকে। সন্দেহরা সত্য প্রমাণিত হলো। জাওয়াদ লাইটার খুঁজছে বুঝতে বাকি রইল না মুশরাফার। তার উদ্ভ্রান্ত আচরণই বলে দেয়, সিগারেটে তার কতখানি নেশা।

মুশরাফা আশাহত হয়ে আবার গিয়ে কাউচে বসল। গম্ভীরমুখে ভাবতে বসল আবার। জাওয়াদ কিছুক্ষণ খোঁজাখুঁজি করে উঠে দাঁড়াল। মনকে কিছু একটা বলে বুঝ দিয়েছে হয়তোবা। মুশরাফার কাছে এসে আলতো স্বরে ডাকল,
‘রাফা?’

মধুরমাখা ডাকটা উপেক্ষা করতে পারল না মুশরাফা। চোখে হাজার অভিযোগ নিয়ে তাকাল। ছোটো করে উত্তর দিল,
‘হু!’
জাওয়াদের ব্যস্ত মন মুশরাফার অভিযোগ পড়তে পারল না। বলল,
‘আমি অনিকের বাসায় যাব, সেখান থেকে একটু বাইরে যাব। তোমার কিছু লাগবে?’

‘কিছু লাগবে না।’ ছোটো করে উত্তর দিল মুশরাফা। জাওয়াদ যত্নের সাথে জিজ্ঞেস করল,
‘ তুমি কী খেতে পছন্দ করো, বলো নিয়ে আসব।’
মুশরাফা এবারও নেতিবাচক উত্তর দিল। জাওয়াদ বলল,
‘কিছু লাগলে কল করে বলবে। আসি।’

জাওয়াদ চলে গেল। যাওয়ার আগে মুশরাফার কপালে অধর ছুঁয়ে গেল। বিষয়টা ভালা লাগার হলেও ভালো লাগল না মুশরাফার। আবার ভাবনায় মজল। ভাবনায় বিচরণের মাঝে চোখ পড়ল কোলে রাখা গিফট বক্সটায়। কৌতুহল বশত খুলল সে। বক্সটা খুব বেশি বড়ো না। ছোটো আকারের বলা যায়। র‍্যাপিং পেপার খুলতেই ভেতরে একটা বক্স বেরিয়ে এলো। ঘড়ির বক্স। চওড়া দামের ব্র‍্যান্ডেড লেডি ওয়াচ। দেখতে ভালোই। ঘড়ির বক্সের সাথে আরও একটা জিনিস পাওয়া গেল। তা হলো রোল করা একটা চিরকুট । মাঝে ফিতা বাধা। মুশরাফা ঘড়ি রেখে চিরকুট নিল হাতে। ফিতা খুলে চিরকুট মেলল। আকারে বেশ বড়ো। লাইনের সংখ্যাও কম নয়। সাদা রঙের চিরকুটে কালো কলমে লেখা বড়ো একটা কালাম। মুশরাফা চোখ বুলাল লেখাটায়,

‘আসসালামু আলাইকুম,
আমি অনিক, আপনাদের বিয়ের উকিল বাবা। সেই সাথে আমার আরেকটা পরিচয় আছে, আমি জাওয়াদের বন্ধু। দুটো সম্পর্কের ভিত্তিতে কিছু কথা বলতে চাই আপনাকে।
জাওয়াদের সাথে আমার বন্ধুত্বটা বেশ ঘনিষ্ঠ। ওর জীবনের সব কিছুই আমার জানা। স্বভাবগত ভাবে জাওয়াদ বেশ অগোছালো, বাউণ্ডুলে। ওর রুটিনটা বদ অভ্যাসে ভরা। আপনি সবে ওর জীবনে এসেছেন, ধীরে ধীরে জানতে পারবেন। যখন ওকে জানতে শুরু করবেন তখন হয়তো আপনি বুঝতে পারবেন, জাওয়াদ আপনার মতো নয়। হতাশা ঘিরে ধরবে আপনাকে, জাওয়াদকে মানতে নারাজ হবে আপনার মন। আপনার মামাকে ও দায়ী মনে হবে, তিনি কেন আপনার জন্য ভুল জীবনসঙ্গী বাছাই করে দিয়েছেন। উকিল বাবা হয়তো আমাকে ও দোষী ভাববেন না।
বাস্তবিকই, আমি দোষী। জাওয়াদ এবং আপনার জীবনধরণ একবারেই বিপরীতমুখী। ব্যাপারটা জানা সত্ত্বেও আপনাদের না জানিয়ে বিয়ের ব্যাপারে আগানোর পদক্ষেপটা আমার ছিল। আপনার মামা জানতেন না, তিনি জাওয়াদকে ধার্মিক হিসেবেই চিনেছেন। ওকে ধার্মিক উপস্থাপনের ভারটাও আমার ছিল। আমিই দোষী। আমার উচিত ছিল, আপনার মামাকে জাওয়াদ সম্পর্কে সঠিক তথ্য দেয়া, কিন্তু আমি তা করিনি। এর একটা কারণ আছে, যা আমাকে বলতে বাধা দিয়েছে। সেই কারণটা হলো জাওয়াদ।

জাওয়াদ আগ থেকেই বাউণ্ডুলে ছিল। ওর পরিবার ওকে ফেরানোর কম চেষ্টা করেনি, কিন্তু পারেনি। চেষ্টা কিন্তু আমি ও কম করিনি, কিন্তু ওর খারাপ অভ্যাস থেকে ফেরাতে পারিনি।
ছেলেদের চারজন মানুষ ঠিক করতে পারে। মা, বন্ধু, বউ, মেয়ে। প্রথম দুজন ব্যার্থ। আপনাকে দেখেই আমার মনে হয়েছিল, আপনি ওকে সঠিক পথে আনতে পারবেন। ভালোর সাথে থেকে মানুষ ভালো হয়ে যায়। আপনার সাথে থাকলে ও সঠিক পথে ফিরে আসতে পারবে।

মানুষ চায় তার জীবনসঙ্গী ও তার মতো গুছানো হোক, ম্যাচিয়ুর হোক। তাহলেই পারফেক্ট জুটি হবে। দুজনে টিপটপ। কিন্তু গুছানো মানুষগুলোর ভাগে যদি সব গুছানো মানুষ হয় তবে অগোছালো মানুষগুলোকে গোছাবে কে? তারা তো অগোছালোই রয়ে যাবে। তাদের গোছানোর জন্য জীবনে একজন গুছানো মানুষ দরকার। যে তার ভুল শুধরে দিয়ে তাকে সঠিক পথে ফিরিয়ে আনবে। তবেই হবে পারফেক্ট জুটি। এই সম্পর্কে সম্মান থাকে, ভালোবাসা থাকে। জাওয়াদের অগোছালো জীবনটাকে গোছানোর জন্যই আমি সব কথা লুকিয়ে বিয়ের কথা এগিয়েছি। এর জন্য আমি আপনার কাছে করজোরে ক্ষমা চাইছি।

জাওয়াদের বদ অভ্যাসের মধ্যে অন্যতম হলো সিগারেট। সিগারেটে ওর নেশা আছে। মাত্রাতিরিক্ত সিগারেট খায় ও। ফলস্বরূপ ফুসফুসে ইফেক্ট পড়েছে। ডাক্তার কড়াভাবে নিষেধ করেছে। কিন্তু ও তাও ছাড়েনি।
আন্টি, আমি হাজার চেষ্টায় ও পারিনি ওর সিগারেট ছাড়াতে। আমাদের দৃঢ়বিশ্বাস আপনি পারবেন। জাওয়াদ আপনাকে ভালোবাসে, আপনার কথা শুনবে। আমাদের সবার মাঝে আপনি এখন ওর সবচেয়ে আপন মানুষ। তাই ওর দোষ গুলো আমি আপনাকেই বলছি।

দিন যাওয়ার সাথে সাথে জাওয়াদের সম্পর্কে হয়তো আপনার খারাপ ধারণা জন্ম নিবে। কিন্তু বিশ্বাস করুন, ও এতটাও খারাপ নয়। ওর মন ভালো। কিছু খারাপ সঙ্গের সাথে মিশে মনটা কুলশিত হয়ে গিয়েছে। মা, বন্ধুবান্ধবরা অনেককিছুই পারে না, যা জীবনসঙ্গী পারে। আপনি যদি ওর জীবনে মিশে ওর অভ্যাস বদলানোর চেষ্টা করেন, তবে সফল হবেন।

আপনার কাছে আমার অনুরোধ, ওর খারাপ অভ্যাসের জন্য আপনি ওকে ছেড়ে যাবেন না। ওর পাশে থেকে ওকে বদলানোর চেষ্টা করুন। আমার বিশ্বাস, আপনি পারবেন। গুছানো জাওয়াদ একজন চমৎকার জীবনসঙ্গী হবে। কথাগুলো আমি আজই বললাম, কারণ আমার মনে হলো এই বিষয়গুলো একদিন আপনাদের মাঝে দূরত্ব তৈরি করবে। এখন ব্যাপারটা মেনে নিয়ে পদক্ষেপ নিলে হয়তো সম্পর্ক সুন্দর হবে।

একজন মানুষকে সঠিক পথে আনার উছিলা হওয়ার সুযোগ এসেছে আপনার কাছে। একজন বুদ্ধিমান মানুষ হিসেবে এত পূন্যের কাজটা আপনি লুফে নিবেন, আমি এই আশা রাখি।

আমার বন্ধুটিকে আমি ভীষণ ভালোবাসি, তাকে সবসময় সুখী দেখতে চাই। আপনি ও চেষ্টা করবেন। পরবর্তীতে আমি আপনাদের সুখী হিসেবে দেখতে চাই। ভালো থাকবেন, আমার বন্ধুটিকে ভালো রাখবেন। আমি আপনার প্রতি ভীষণ আশাবাদী, আমাকে আশাহত করবেন না।

কথাগুলো আমি সরাসরি বলতে চেয়েছিলাম। কিন্তু আপনি আমার সাথে দেখা করবেন না জেনেই চিঠিকে মাধ্যম বানাতে হলো।

বিঃদ্রঃ গিফটের কথা বললেও চিরকুটের কথা জাওয়াদকে বলবেন না। এ ব্যাপারটা জাওয়াদের অজানাই থাকুক। ওর অজানাতেই ওর ভালো হওয়ার চেষ্টা চলুক। এটাও আমার অনুরোধের কাতারে পড়ে।’

এক টানেই পড়ে শেষ করল চিরকুটটা। মুশরাফার চোখে মুখে লেগে আছে বিস্ময়, হতভম্ব ভাব। ওর মস্তিষ্ক শূন্য হয়ে গেল। তৎক্ষনাৎ কিছু মাথায় এলো না। লোকটার সম্পর্কে বিয়ের আগে ওর সব ভাবনা মিথ্যা প্রমাণিত হলো। লোকটা ভুলে ভরা। লোকটা তার মতো নয়, একবারেই নয়। লোকটাকে ঠিক করার জন্য তাকে জীবনে জড়ানো হয়েছে। উকিল বাবা তো তার উপর কতগুলো দায়িত্ব চাপিয়ে দিয়েছে, এখন সে কী করবে? দায়িত্ব পালন করবে? না ছেড়ে দিবে?

কত ভাবনা এলো মাথায়। ওর ভাবনার মাঝে জাওয়াদ রুমে এলো। মুশরাফার সাথে চোখাচোখি হতেই প্রসন্ন হাসল। মুশরাফা চিরকুটটা লুকিয়ে ফেলল। জাওয়াদ পায়ে পায়ে এগিয়ে এসে বসল মুশরাফার পাশে। জাওয়াদের মুখে সুইংগাম। সুইংগাম চিবোতে চিবোতে জুয়েলারি বক্স দেখিয়ে বলল,
‘অনিক এর দেয়া গিফট এটা?’

সিগারেটের একটা স্মেল এসে ধাক্কা খেল মুশরাফার নাকে। মুশরাফা ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাল। লোকটা এখন সিগারেট খেয়ে এসেছে! মনটা কেন যেন আঘাতপ্রাপ্ত হলো। ঘাড় ঘুরাল সে। অন্যদিকে তাকিয়ে জবাব দিল,
‘হু।’

জাওয়াদের এতক্ষণে মনে পড়ল বিয়ের রাতে বউকে উপহার দিতে হয়। তার দেয়া হয়নি। সে অনুতাপের গলায় বলল,
‘ আমার ও তোমাকে গিফট দেয়ার কথা। আমি তো তোমাকে কিছুই দিলাম না। স্যরি।’

‘আমি কিছু মনে করিনি।’ গম্ভীরমুখে বলল মুশরাফা। জাওয়াদ বলল,
‘ আচ্ছা, তুমি বলো তোমার কী চাই? যা চাইবে তাই দিবো।’

এটা কেমন প্রশ্ন? বিয়ের রাতে বউকে নিজের পছন্দমাফিক গিফট দেয়া হয়। বউ চেয়ে নেয় না। এটাও জানে না লোকটা? মুশরাফা ভ্রু কুঁচকাল,
‘আমার কিছু লাগবে না।’

জাওয়াদ জোর করল, ‘ বলো, আমার কাছে কী চাও তুমি?’

মুশরাফা ভাবল। তারপর পাশ ফিরে বলল,
‘একটা ওয়াদা চাইব। দিবেন?’

জাওয়াদ ভ্রু কুঁচকাল। মানুষ সোনা রূপা, হীরা চায়। এ মেয়ে ওয়াদা চাইছে? সে কৌতুহলী জিজ্ঞেস করল,
‘কী ওয়াদা?’

মুশরাফা জবাব দিতে সময় নিল না। জাওয়াদের চোখে চোখ রেখে বলল,
‘আমাকে ওয়াদা করতে হবে, আপনি সেচ্ছায় নিজের এবং আমার বর্তমান ভবিষ্যতের কোন ক্ষতি করবেন না।’

জাওয়াদ এতকিছু ভাবল না। সে জেযে নিজের কেন ক্ষতি করবে? আর রাফার ক্ষতি করার তো প্রশ্নই আসেনা। সে বলল,
‘আমি ওয়াদা করলাম, আমি আমাদের দুজনের বর্তমান এবং ভবিষ্যতের কোন ক্ষতি করব না।’

মুশরাফা চমৎকার হাসল। বলল,
‘জাযাক-আল্লাহু খায়রান। (আল্লাহ আপনাকে উত্তম প্রতিদান দান করুক।)

জাওয়াদ বলল,
‘আর কিছু চাওয়ার নেই তোমার?’

মুশরাফা হেসে বলল,
‘এই ওয়াদার মাঝেই আমার সব চাওয়া আটকে আছে। আর চাওয়ার কিছু নেই।’

জাওয়াদের জং ধরা মস্তিষ্কে ওতকিছু বোধগম্য হলো না। সে ঘূর্ণাক্ষরেও টের পেল না কিসে আটকা পড়েছে সে। স্ত্রী অল্পতে তুষ্টি ভেবে হাসল জাওয়াদ। খুশিতে গদগদ হয়ে বলল,
‘ আজ বিকেলে ঘুরতে যাবে?’
‘আচ্ছা।’ সায় জানাল মুশরাফা।

জাওয়াদ আসার সময় নিয়ে আসা ব্যাগটা মুশরাফার দিকে বাড়িয়ে দিল,
‘ফাইজা বলল, তোমার নাকি আইসক্রিম পছন্দ।’

মুশরাফা হাত বাড়িয়ে নিল। বক্স খুলে খেতে গেলে বাধা দিল জাওয়াদ,
‘এখন খেও না, ঠান্ডা হোক। তোমার না ঠান্ডাজনিত সমস্যা আছে? ঠান্ডা লেগে যাবে। ‘

আইসক্রিমের বক্স নিয়ে নিল। ঠান্ডা ভাব কিছুটা কমে গেলে তারপর দিল। মুশরাফা আইসক্রিম খেতে খেতে জাওয়াদের দিকে তাকাল। লোকটা ওর কেয়ার করে। নিজের কেয়ার করে না কেন? তার সাথে কত ভালো আচরণ করছে? কত ভালোভাবে নিজেকে উপস্থাপন করছে, কিন্তু আড়ালে এত বদ অভ্যাস নিয়ে ঘুরে কেন? একটু ভালো হলেও তো পারতো। এখন সে কিভাবে ছাড়াবে অভ্যাস গুলো। সিগারেটের গন্ধ সহ্য হয়না ওর। মিদহাদ চেইন স্মোকার। ওর রুমে গেলেই গা গুলায়, দুই একবার তো বমি করে ভাসিয়েছে। জাওয়াদের ঘরটাও কি এমন হবে? সে থাকবে কিভাবে? কিভাবে ঘরকে, মানুষটাকে সিগারেটমুক্ত করবে? কোথায় উপায় খুঁজে পেল না ও।

বিকেল হতেই জাওয়াদ মুশরাফাকে তৈরি হতে বলল, ঘুরতে যাবে। মুশরাফা আগে ওকে তৈরি হতে বলল। জাওয়াদ আগে রেডি হয়ে বসার ঘরে গিয়ে শালিকাদের সাথে আড্ডায় বসল। মুশরাফা আসরের নামাজ পড়ে নিল। নামাজ নয়তো কাযা হবে, নামাজ পড়ার উপযুক্ত জায়গা ও পাবে না। নামাজ পড়ে কালো জিলবাব পরে তৈরি হয়ে নিল। মুশরাফার সাজগোজ কতদূর দেখতে রুমে এলো জাওয়াদ। দরজায় দাঁড়িয়ে মুশরাফাকে না দেখেই বলল, ‘শাড়ি পরো…

বলতে গিয়ে চোখ পড়ল আপাদমস্তক ঢাকা মেয়েটার দিকে। সে যেন চিনতে পারল না। চোখ ছাড়া কিছুই দেখা যাচ্ছে না। এভাবে যাবে ওরা ঘুরতে! জাওয়াদ অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল। তার পরিবারে কেউ তেমন পর্দা করে না। মা কখনো সখনো শাড়ির উপর কটি চাপান। বোরকা পড়লেও ডিজাইনার। তবে মুখ বাধেন না। জাওয়াদ পর্দার সংজ্ঞা ও জানে না সেভাবে। ওর ধারনা ছিল মুশরাফা মায়ের মতো কটি পরে মাথায় ঘোমটা টানবে। বা সেদিনের মতো বড়ো করে ওড়নায় গা ঢাকবে। এভাবেই বোধহয় চলাফেরা করে। তাই যখন নাজমুল সাহেব বললেন, ও পর্দা করে চলে, তোমার আপত্তি নেই তো? তখন ভাবনাহীন ভাবে না বলেছিল।
জাওয়াদের বান্ধবীরা সব ওয়েস্টার্ন ড্রেস পরতো, বাঙালি পোশাক পরলেও তার ঠিকঠিকানা ছিল না। সে তাদের সাথে চলতেই অভ্যস্ত।
তার বন্ধুদের বউরা শাড়ি পরে ঘুরতে যায়, ফেসবুকে ছবি ছাড়ে। সেই ছবি দেখে জাওয়াদ কৌতুক করে বলে, শুধু বিয়েটা করতে দে, তারপর বউকে নিয়ে প্রতিদিন ঘুরতে যাব। ছবি কাকে বলে তখন দেখিস।

মুশরাফাকে দেখে সে শূন্যচোখে তাকাল। এভাবে ঘুরতে যাবে ওরা? বিয়ের পর প্রথম ডেট, শাড়ি পরে হাত ধরে হাটবে, এমনটা আশা ছিল তার। তার আশায় গুড়োবালি পড়ল। বিয়ের আগে মুশরাফাকে এই বেশে দেখলে সে বিয়ের কথা মাথায় আনতো না। সে অবিশ্বাস্য গলায় বলল,
‘তুমি এভাবে যাবে ঘুরতে?’

তার প্রশ্নে অবিশ্বাস্য চোখে তাকাল মুশরাফা। জাওয়াদের চোখ পড়ে নিল। লোকটা কি জানতো না সে পর্দা করে? এখন কি সে ও বাধা দিবে তার বাবা মায়ের মতো। লোকটার চোখ দেখেই বুঝা যাচ্ছে, মুশিরাফার এই রূপ পছন্দ না তার। অথচ এই মানুষটা প্রথম আলাপে তাকে নিশ্চয়তা দিয়েছে। পর্দার পরিবেশ গড়ে দেয়ার কথাও দিয়েছে। সব কি তবে মিথ্যা? সে ছোটো করে উত্তর দিল,
‘আমি তো এভাবেই বাইরে যাই।’

জাওয়াদের মাথায় তৎক্ষনাৎ একটা কথাই এলো, ইউ আর নট মাই টাইপ। একই বাক্য ধাক্কা দিল মুশরাফার মনকেও।

চলবে….

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here