স্মৃতিতে তোমারবন্দনা পর্ব-১৫

0
2507

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_১৫
#Saji_Afroz
.
.
সকাল দশটা হতেই ছোঁয়ার ফোন বেজে উঠলো । পরশ ফোন দিয়েছে ।
-হ্যালো?
-ছোঁয়া বলছেন?
-জ্বি ।
-আপনার বাড়ির সামনে গাড়ি এসেছে । উঠে চলে আসুন।
-আচ্ছা ।
.
ছোঁয়া ফোন রেখে চেঁচিয়ে বললো-
কই তোমরা? আমি যাচ্ছি ।
.
নয়নতারা চুলে বেণি করতে করতে বললো-
আমিও যাবো ।
-সত্যি যাবা? আমি ভেবেছি এমনিতে বলেছো ।
.
আফিয়া জান্নাত বললেন-
কেনো যাবিরে নয়ন? প্রথমদিন মেয়েটা কাজে যাচ্ছে । সাথে করে বোন নিয়ে যাবে । কেমন দেখায় না?
-তোমার মেয়ে কোথায় কাজ করতে যাচ্ছে এটা জানার প্রয়োজন আছে বলে মনে হয়না তোমার? নাকি বেতন পাবে শুনেই তুমি খুশি হয়েছো?
-নয়ন!
.
নিজেকে স্বাভাবিক করে নয়নতারা বললো-
আজকাল কাউকে বিশ্বাস করতে নেই । আমি একবার দেখে আসতে চাই ।
-রুপালি দেখেছে না?
-রুপালি ছোট মানুষ কি বুঝবে?
.
চুপসে গেলেন আফিয়া জান্নাত ।
ছোঁয়া বললো-
আপু তুমিও উনাকে চেনো । কালই তো বললাম । তোমার সাথে একবার দেখা হয়েছে ডাক্তার পরশের ।
-একবার দেখা হয়েছে মানেই কি তার সম্পর্কে সব জেনে ফেলেছি আমি! নিজের চোখে না দেখে অপরিচিত কোনো বাড়িতে তোকে পাঠাতে পারিনা আমি ।
.
বাইরে বেরুতে বেরুতে নয়নতারা বললো-
আয় ছোঁয়া ।
.
ছোঁয়া এসে সালাম করলো তার মাকে । তারপর জড়িয়ে ধরে বললো-
দোয়া করো, রাফসান ভাইয়ার কাছে যেনো আর হাত পাততে না হয় ।
-রাফসান নিজেই…
-থাক ওসব ।
.
ছোঁয়া বেরিয়ে যেতে আফিয়া জান্নাত বিড়বিড়িয়ে বললেন-
রাফসান যা করেছে ভালোবেসে করেছে । তুই ওকে বুঝলিনা ছোঁয়া । আমি কখনো তোর খারাপ চাইনি । একদিন ঠিক বুঝবি তুই ।
.
.
টেবিলে হরেক রকমের নাস্তা সাজানো । আজ নিজের হাতে নাস্তা বানিয়েছে পরশ । সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
তুই এসব পারিস আমার তো জানা ছিলোনা!
-ইউটিউবের কামাল সব ।
– তা কি মনে করে এসব?
-মন চাইলো তাই ।
.
শফিউল আহম্মেদ এসে বসে বললেন-
আজকাল আমাদের পরশকে কেমন যেনো খুশি খুশি লাগছে না?
-হ্যাঁ, সেটা আমিও খেয়াল করছি ।
-কেনো বলো তো?
-কেনো?
-প্রেমের বাতাস লেগেছে তোমার ছেলের গায়ে । এমন সময় আমিও পার করেছি তাই বুঝতে অসুবিধে হচ্ছেনা ।
.
হো হো শব্দে হেসে উঠলেন তিনি ।
পরশ বললো-
আসলেই বাবার আইডিয়া ঠিক ।
.
সাথে সাথে কলিংবেল বেজে উঠলে পরশ সেদিকে এগিয়ে গেলো ।
সাফিনা আহম্মেদ মুচকি হেসে বললেন-
তোহাকে ওর জন্য ঠিক করে তাহলে আমরা ভুল করিনি ।
.
দরজা খুলে ছোঁয়া ও নয়নতারাকে দেখতে পেলো পরশ । নয়নতারাকে চিনতে তার অসুবিধে হলোনা ।
মৃদু হেসে বললো-
চিনেছেন আমাকে?
-আপনি আমাকে চিনেছেন এতেই আমি অবাক ।
-না চেনার কিছু নেই । আপনি ছোঁয়ার বড় বোন ।
.
তাদের কথা শুনে ছোঁয়া বেশ অবাক হলো । তার বোনকে পরশ চিনেছে কিন্তু তাকে চিনেনি সেদিন । আসলেই চিনেনি? নাকি না চেনার ভান করেছিলো?
.
পরশের সাথে সোজা ডাইনিং রুমে এলো তারা ।
পরশ তাদের পরিচয় করিয়ে দিলো মা ও বাবার সাথে । সাফিনা আহম্মেদ বসতে বললেন তাদের । নয়নতারা বললো-
আমি দুঃখিত এখানে আসার জন্য । আসলে ছোঁয়া কোথায় কাজ করতে আসছে এটা জানা জরুরী মনে হয়েছে আমার ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
অনেক ভালো করেছো মা এখানে এসে । এটা তো বড় বোনের দায়িত্ব । তুমি একেবারে ঠিক কাজ করেছো । এবার দেখে নাও, মানুষ হিসেবে আমরা খারাপ নয় ।
.
শব্দ করে হেসে উঠলেন তিনি ।
সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
ও একটু এমনি, রসিকতা করতে পছন্দ করে বেশি ।
তোমরা নাস্তা করো আমাদের সাথে ।
.
ছোঁয়া বললো-
এতো দেরীতে নাস্তা করেন আপনারা?
-আরেনা! সকালে করেছিলাম সেই কবে । এই সময় আরেকবার করা হয় । তবে আজকের এসব পরশ নিজ হাতে বানিয়েছে । খেয়ে দেখো কেমন হয়েছে । তবে ভালো হয়েছে কিনা গ্যারান্টি দিতে পারছিনা ।
.
ছোঁয়া নুডলস মুখে দিয়ে বললো-
অনেক বেশি ভালো হয়েছে ।
.
পরশ নিজেরমনে বললো-
আমার কষ্ট সার্থক হলো ।
.
নয়নতারা চোখ বুলিয়ে চারপাশে দেখতে থাকলো । সাজানো গোছানো পরিপাটি একটা বাড়ি । এমন একটা বাড়ি মানুষের স্বপ্ন হয়ে থাকে । ভেতরে ঢুকতেই দুইজন কাজের মানুষের দেখা পেয়েছে সে । তার মানে সত্যিই ছোঁয়া শুধু সাফিনা আহম্মেদের দেখভাল করবে?
নয়নতারার চোখের ভাষা যেনো পড়তে পারলেন সাফিনা আহম্মেদ । তার পাশেই বসে ছিলেন তিনি । নয়নতারার হাতে হাত রেখে বললো-
বোনকে নিয়ে চিন্তা করোনা । বান্ধবী ডেকেছি ওকে আমি । বান্ধবীর মতোই থাকবে আমার সাথে । তুমি নিশ্চিতে থাকতে পারো ।
.
আনন্দে নয়নতারার চোখ ছলছল করে উঠলো । এতো ভালো মানুষের সঙ্গ ছোঁয়া পাবে, ভাবেনি সে ।
.
কিছুক্ষণ তাদের সাথে সময় কাটানোর পর নয়নতারা বললো-
আজ আসি আন্টি । ভালো লাগলো এসে ।
-আবার এসো কিন্তু ।
.
সবাইকে বিদায় জানিয়ে পরশের সাথে বেরুলো নয়নতারা ।
গাড়ির সামনে এসে পরশ বললো-
ড্রাইভার পৌঁছে দিবে আপনাকে ।
-আমি যেতে পারবো বাসে চড়ে । আমার অভ্যেস আছে ।
-আমার বাড়ি থেকে বাসে চড়ে যাবেন, এটা হবেনা ।
.
কিছুট সংকোচ করে নয়নতারা বললো-
আমি জানি ছোঁয়া জাস্ট আন্টির পারসোনাল কাজ করবেভ। এতে ছোঁয়ার অসুবিধে নেই । কিন্তু ও আমার একমাত্র আদরের ছোট বোন । ওকে নিয়ে চিন্তা হচ্ছে আমার । ওর বদলে কাজটা কি আমি করবো? না মানে শুধু আন্টির দেখাশোনা নয়, পুরো ঘরের কাজ সামলাতে পারবো আমি ।
-কি যে বলছেন না আপনি! আমাদের বাড়িতে কম হলে চারজন কাজের লোক আসে । বিভিন্ন কাজের জন্য লোক ভাগ করা আছে । ছোঁয়ার একমাত্র কাজ হলো আমার মাকে খুশি রাখা । আর মা যেহেতু ওকেই পছন্দ করেছে সেহেতু…
-আমি বুঝতে পেরেছি ।
-আপনি চিন্তা করবেন না ।
.
নয়নতারা চলে গেলে পরশ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো-
আমারো কি ইচ্ছে করে কাজের অজুহাতে ছোঁয়াকে এখানে রাখতে? কি করবো আমি! এই ছাড়া কোনো উপায় নেই । কাজ ছাড়া আমার কোনো সাহায্য যে ছোঁয়া নিবেনা ।
.
.
সাফিনা আহম্মেদের সাথে তার রুমে এলো ছোঁয়া । বেশ বড়সড় একটা রুম । রুমের প্রত্যেকটা জিনিসই পরিপাটি । ছোঁয়া বললো-
কে গুছিয়ে রাখে ঘর?
-বুয়া । তবে আমি নিজের রুম নিজে গোছাতে বেশি পছন্দ করি ।
.
বিছানার উপরে বসলেন তিনি ।
ছোঁয়া বললো-
আমি কি চুল আঁচড়ে দিবো আপনার?
-দিতে চাও?
-হুম ।
-তবে দাও ।
.
ড্রেসিংটেবিলের উপর থেকে চিরুনি ও তেলের বোতলটা নিয়ে, সাফিনা আহম্মেদের পেছনের দিকে বসে পড়লো ছোঁয়া । চুলে তেল লাগিয়ে আঁচড়াতে লাগলো সে । সাফিনা আহম্মেদ বললেন-
উম্ম… অনেক দিন পর আরাম পাচ্ছি ।
.
এদিকে নয়নতারা ঘরে আসতেই আফিয়া জান্নাত প্রশ্নের ঝুড়ি খুলে বসলেন ।
নয়নতারা বললো-
ছোঁয়া সেখানে ভালো থাকবে । কষ্টের কাজ নয় । একটু মানিয়ে নিলেই হয়ে যাবে । কিন্তু আমি ভাবছি অন্য কথা ।
-কি?
-এতসব সুবিধা ছোঁয়াকে কেনো দেয়া হলো? না মানে তাদের বাড়িতে আরো অনেকে কাজ করে, সবাইকে নিশ্চয় গাড়ির সার্ভিসও দেয়া হয়না ।
-এতো ভাবিস নাতো । খালি পেটে থাকতে হবেনা এখন আর এটাই অনেক । মাথা থেকে তোরও একটা বোঝা কমলো ।
.
নয়নতারার ফোন বেজে উঠলে দেখলো রাফসানের ফোন ।
রিসিভ করে বললো-
কেমন আছো রাফসান?
-ভালো । তুমি কেমন আছো?
-আছি ভালো ।
-আন্টি?
-ভালো ।
-আর ছোঁয়া?
-ভালোই ।
-কি করে এখন?
-তাকে ফোন দিলেই পারো ।
-কি করে দিবো? কথা বলতে চায়না আমার সাথে । লজ্জা পায় বোধহয় । শুধু হুম হ্যাঁ করতে থাকে । এমন করলে কথা বলে শান্তি আছে?
-বুঝলাম নেই ।
-তো কোথায় সে মহারানী?
-আছে হয়তো কোথাও । এক জায়গায় তো স্থির থাকেনা । তোমার কি খবর বলো?
.
রাফসানের সাথে কথা বলা শেষে আফিয়া জান্নাত বললেন-
রাফসানকে না জানিয়ে ভালো করেছিস । ছোঁয়া কারো বাসায় কাজ করছে জানতে পারলে মানতো না বিষয়টা ।
-কিন্তু লুকোবো কতোদিন?
-যতোদিন না বিয়েটা হচ্ছে ।
-আমি চাকরী পেলেও ছোঁয়া এই কাজটা করুক তুমি চাও?
.
আফিয়া জান্নাত উঠতে উঠতে বললেন-
আমার মনেহয়না তুই আর কোনো চাকরী পাবি ।
.
.
দুপুর গড়িয়ে বিকেল হয়ে গেলো । রান্নাঘরে এসে চা বানাচ্ছে ছোঁয়া ।
পরশ বললো-
শুধু কি আন্টির জন্য বানাবেন? না মানে আমিও কি পেতে পারি এক কাপ?
-আমি ভালো চা বানাই সো কেনো নয়!
-আবার যদি বলেন? একজনের বান্ধবী হবার কথা ছিলো এখন অন্যজন বন্ধু হবার জন্য পেছনে লেগেছে?
-এক কাপ চা বানিয়ে দিলেই কি বন্ধুত্ব হয়ে যায়?
.
কিছু না বলে হাসলো পরশ । ছোঁয়া চায়ের পাতা খুঁজতে লাগলো ।
পরশ এসে তাকে সব দেখিয়ে দিলো । ছোঁয়া তাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়লো ।
হাতঘড়ির দিকে চোখ পড়লো তার । একটু পরেই ছোঁয়া চলে যাবে । আজ সময়টা এতো দ্রুত চলে যাচ্ছে কেনো? কেনো সময় থামেনা? থামলে যে পরশ এখানেই সময়টা থামিয়ে দিতো । রান্নাঘরেই নাহয় দুজনে থাকতো, তবুও সাথেতো থাকতো…
.
চলবে
.
বি:দ্র: সাজির সব গল্পে টুইস্ট থাকে, এটাতে কেনো দেখছেন না? আমি কোনো গল্প লম্বা করিনি। তাই টুইস্টও খুব দ্রুত সামনে এনেছি। তবে এটার ক্ষেত্রে ভিন্ন হবে। এই গল্পটার আসল কাহিনী কিছুই সামনে আসেনি এখনো। তবে খুব দ্রুত আসতে চলেছে। ধৈর্য্যসহকারে পড়ার অনুরোধ রইলো।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here