স্রোতের টানে পর্ব:১০

0
4079

#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:১০

আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে দেখে ফারিহা ঠোঁট উল্টে বসে আছে।আয়ান ফারিহাকে দেখে হাসলো। তারপর ফারিহার কাছে গিয়ে বললো,
“কি হলো সমুদ্র দেখোনা?”

ফারিহা কিছু বলে না অন্যদিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলল।এটা দেখে আমার ঠোঁট কামড়ে হাসলো।তারপর বললো,
“ওমাআআ..ফারিহা দেখি অভিমান করতে জানে!তাহলে আমি একাই সমুদ্র দেখতে চলে যাই,ঠিক আছে?”

ফারিহা কিছু বললোনা আয়ান ফারিহার কাছে গিয়ে ওর হাতের বাধন খুলে দিতে দিতে বললো,
“কি হলো?কিছু বলছো না কেনো?এত রাগ!! ”

হাতের বাঁধন আলগা হয়ে গেলে ফারিহা এক ঝটকা মেরে হাত সরিয়ে নিয়ে বললো,
“আপনি খুব বাজে।আমাকে এভাবে বেঁধে রাখতে পারলেন?”

“তো কি করবো? বেঁধে না রাখলে তুমি তো রুমের বাইরে চলে যেতে।”

“তো গেলে কি হবে?আমি কি বাচ্চা নাকি যে হারিয়ে যাবো?”

“এভাবে অচেনা অজানা একটা জায়গায় আমি তোমাকে একা ছাড়তে পারিনা ফারিহা।এত জিদ করো না, তোমাকে নিয়ে যাবো বলছি তো”

“ফারিয়া আয়ানকে নকল করে মুখ বাঁকিয়ে বলে,
“তোমাকে নিয়ে যাবো বলছি তো!যান..নিয়ে যেতে হবে না”

ফারিহার কথায় আয়ান জোরে হাসলো।ফারিহা আবার বললো,
“আপনার মিটিং কখন?”

“মিটিং দুটোর দিকে।মিটিং শেষে লাঞ্চ করে আমরা ঘুরতে যাবো।ওকে?”

“আবার ফিরে যাবো কখন?”

আয়ান একটু হেসে বললো,
“আজকে তো ফিরতে পারবো না।আজকে রাত থেকে আগামীকাল ফিরবো।”

ফারিহা আয়ানের হাসির মানে বুঝতে পারলো না। আয়ান ফারিহার চুলগুলো ঠিক করে দিতে দিতে বললো,,
“তুমি গিয়ে ফ্রেশ হয়ে নাও।ঘুমানোর কারণে চোখ মুখের কি অবস্থা হয়ে রয়েছে,দেখেছো?”

ফারিহা “যাচ্ছি” বলে ব্যাগ থেকে ড্রেস নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

.
দুপুর দুইটার দিকে ফারিহা আর আয়ান একটা রেস্টুরেন্ট আসলো। মিটিং মূলত এখানেই হবে।
আয়ান একবার ভেবেছিলো ফারিয়াকে হোটেল রুমে রেখে আসবে।কিন্তু ফারিহার সমুদ্র দেখার জন্য যে পাগলামি শুরু করেছিলো এভাবে রেখে আসা রিক্স হয়ে যেতো। তাই আজ সাথে করে নিয়ে আসে।
রেস্টুরেন্টে ঢুকে আয়ান একটা টেবিলের দিকে এগিয়ে গেলো।ওখানে আরো তিন চারজন লোক আছে।আয়ান সবার সাথে হ্যান্ডশেক করে তারপর ফারিহার সাথে সবার পরিচয় করিয়ে দিলো।ফারিহা সবার সাথে হাসি মুখে পরিচিত হলো।

আয়ান ফারিহাকে পাশের একটা টেবিলে বসিয়ে বললো,
“আমি মিটিং করে আসছি। তুমি ততোক্ষণ এখানে বসো।কিছু খাবে,অর্ডার করবো?”

ফারিহা চোখ বুলিয়ে চারদিকে তাকিয়ে বললো,
“হুম.. আইসক্রিম আর জুস খাবো”

আয়ান হেসে একটা ওয়েটারকে বললো ফারিহাকে আইসক্রিম আর জুস দিতে।তারপর পাশের টেবিলে ঐ লোকগুলোর সাথে গিয়ে কথা বলা শুরু করলো।

ফারিহার ওইদিকে কোনো মনোযোগ নেই।আইসক্রিম খেতে খেতে ফারিহা চোখ বুলিয়ে চারদিক দেখছে।একটু দূরে ফারিহার সামনের টেবিলে একটা কাপল বসে আছে।মেয়েটা একটু বেশিই ন্যাকামি করছে।ফারিহা ভাবছে ছেলেটার সহ্যশক্তি অনেক,না হলে এত ন্যাকামির সাথে থাকে কীভাবে!
ফারিহা চোখ ঘুরিয়ে আবার অন্য দিকে তাকায়। দেখে একটা 3/4 বছর হবে বাচ্চা ছেলে ফারিহার দিকে তাকিয়ে আছে।ফারিহা জুস খেতে খেতে বাচ্চাটার দিকে তাকিয়ে ভ্রূ নাচায়।বাচ্চাটা লজ্জা পেয়ে ওর মায়ের কাঁধে মুখ গুজলো।

আর এদিকে আয়ান মিটিং করছে আর কিছুক্ষণ পরপর ফারিহার দিকে তাকিয়ে ফারিহার কান্ড গুলো দেখছে।এখানে ওর বিজনেস পার্টনার থাকায় আয়ান হাসতে পারছে না।না হলে ফারিহা যা হাসি কান্ড করছে!

.
ঘণ্টাখানিক পর আয়ান মিটিং শেষ করে।ঐ লোকগুলোর সাথে হ্যান্ডশেক করে বিদায় জানালো। তারপর ফারিহার টেবিলের কাছে আসলো। ফারিহা আইসক্রিম আর জুস খাওয়া শেষ করে গালে হাত দিয়ে বসে অন্যদিকে তাকিয়ে ছিল।আয়ান ফারিহা সামনে তুড়ি বাজায়।ফারিয়া আয়ানকে দেখে বললো,

“এতক্ষণে আপনার মিটিং শেষ হলো?আর আসছেন কেনো? ওখানে বসে থাকুন না! আমি এখানে বসে বসে বোর হচ্ছি আর উনি মিটিং করছে”

আয়ান ফারিহার সামনে বসতে বসতে বললো,
“কোথায় বোর হচ্ছো? তুমি কি দুষ্টুমি করছিলে আমি দেখেছি তো”

আয়ানের কথা শুনে ফারিহা মুখ বাঁকালো।আয়ান ফারিহার দিকে তাকিয়ে হাসলো।তারপর ওয়েটার ডেকে ওদের জন্য লাঞ্চের অর্ডার দিলো। আয়ান ফারিহাকে বলা,
“আইসক্রিম টা কেমন ছিলো? মানে এই জায়গার খাবার।ভালো তো?”

“হুম..দারুন ছিলো আইসক্রিমটা।আমার তো ইচ্ছে করছে আরও খেতে”

আয়ান আদেশের সুরে বললো, “এখন লাঞ্চের টাইম।আর আইসক্রিম খেতে হবে না।”

খাবার আসলে ওরা খাওয়া শুরু করলো।ফারিহা খাচ্ছে আর আয়ান ফারিহাকে দেখছে।একটু ঝুঁকে খাওয়ার কারণে ফারিহা সামনের চুলগুলো বারবার মুখে এসে পড়ছে।আয়াত চুলগুলো হাত দিয়ে সরিয়ে নিতে গিয়ে থেমে গেলো।ফারিহার আয়ানের দিকে কোনো খেয়াল নেই।ও এক মনে খেয়েই যাচ্ছে। যদি একবার আয়ানের দিকে তাকাতো তাহলে দেখতে পেতো আয়ান কতো মুগ্ধ দৃষ্টিতে ওর দিকে তাকিয়ে আছে!

লাঞ্চ শেষে ওরা সমুদ্রের পাড়ে আসে। ফারিহা তো খুশিতে কি করবে বুঝতে পারছে না। কখনো পানিতে লাফাচ্ছে কখনো হাততালি দিচ্ছে।ফারিহা একদম বাচ্চা হয়ে গিয়েছে।
ফারিহা জিন্সটা একটু উপরে তোলে সমুদ্রের পানিতে পা রাখে।আয়ান দূরে দাঁড়িয়ে বুকে হাত রেখে ফারিহাকে দেখছে। হঠাৎ একটা বড় ঢেউ আসলে ফারিহার দৌড়ে আয়ানের কাছে চলে আসে।
আয়ান ফারিয়ার দৌড় দেখে জোরে হেসে দিলো।তারপর বললো,
“কি হলো?চলে আসলে কেনো?যাও..আরো যাও পানিতে ”

“দেখলেন না ঢেউ আমাকে দৌড়ানি দিয়েছে”

ফারিহার কথা শুনে আয়ান হেসে বললো,
“ঢেউ তোমাকে দৌড়ানি দিয়েছে?সমুদ্রে নিয়ম ই তো এটা।কখনো ঢেউ আসবে কখনো যাবে। আচ্ছা আরেকটু পা ভিজাবে চলুন ”

“না আমি যাবো না।তুমি যাও..”

“আপনি এতো নিরামিষ কেনো? চলুন তো..”

ফারিহা আয়ানের হাত ধরে টানতে টানতে সমুদ্রের পানিতে নিয়ে গেলো।আয়ান বললো,
“তুমি যদি ভেবে রাখো যে আমাকে ভেজাবে।তাহলে আগে থেকে বলে রাখছি একদমই এই কাজটা করার চেষ্টা করবে না”

ফারিহা মুখ বাঁকিয়ে বললো, “আপনাকে ভেজাতে আমার বয়েই গেছে”

তারপর ওরা আরো অনেকক্ষণ সমুদ্রে ঘোরাঘুরি করলো। বিকালের দিকে স্থানীয় একটা মার্কেটে গেলো।সেখানে আরও কিছুক্ষণ ঘোরাঘুরি করে ফারিহা আয়ানের অগোচরে ওর বাবার জন্য একটা শাল কিনলো।আয়ানকে লুকিয়ে গেলেও আয়ান ঠিকই দেখেছে কিন্তু কিছু বলেনি!
আরো অনেকক্ষণ ঘোরাঘুরি করার পর সন্ধ্যার দিকে আয়ান বললো,
“এবার হোটেলে ফিরে যাক”

ফারিহা বললো, “না না এখন না।আরো কিছুক্ষণ ঘুরবো”

“ফারিহা তোমাকে তো বলা হয়নি, রাতে একটা পার্টিতে যেতে হবে। তো এখনই হোটেলে ফিরতে হবে”

ফারিহা আয়ানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“পার্টি?কিসের পার্টি?”

“এখানে সব বিজনেসম্যান দের জন্য আজকে একটা পার্টি আয়োজন করছে আর সেখানে আমরা ইন্ভাইটেট”

“আগে বলবেন তো।কিন্তু আমি তো পার্টিতে পরার মতো কোনো ড্রেস আনিনি”

“চিন্তা করো না ব্যবস্থা হয়ে যাবে।এখন চলো হোটেলে ফিরি”

হোটেলে এসে আয়ান ফারিহাকে বললো, ” তুমি রুমে যাও আমি আসছি”

ফারিয়া কিছু না বলে বাধ্য মেয়ের মতো মাথা নাড়িয়ে রুমে চলে গেলো। আয়ান ওদের ড্রেসের ব্যবস্থা করে রুমে আসে।এসে দেখে ফারিহা ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে আছে।ফারিহা আয়ানকে রুমে আসতে দেখে ব্যালকনি থেকে রুমে আসে।
তখন একটা ছেলে এসে আয়ানের হাতে দুটো প্যাকেট দিয়ে যায়। আয়ান হেসে ছেলেটাকে বিদায় জানিয়ে দরজা লাগিয়ে একটা প্যাকেট ফারিহার হাতে দিলো।ফারিহা জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে আয়ানের দিকে তাকালে আয়ান ইশারায় প্যাকেটটা খুলে দেখতে বললো।
ফারিহা প্যাকেটটা খুলে একটা কালো রঙের গাউন বের করলো।নিচের দিকটা একটু ফোলা উপরের দিকে কালো জর্জেট কাপড়ের মধ্যে কালো পাথর চিকচিক করছে।ফারিহা করে গাউনটা দেখছে। আয়ান ফারিহাকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে বললো,
“পছন্দ হয়েছে?”

ফারিহা খুশি হয়ে বললো, “অনেককক..”

“আজকে পার্টিতে এটা পড়বে।”

“আমি এখনই ট্রাই করছি।”
ফারিহা খুশি হয়ে গাউনটা নিয়ে ওয়াশরুমে চলে গেলো।

কিছুক্ষণ পর ফারিহা গাউনটা পরে কাঁচুমাচু মুখে ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে আসলো।ফারিহার মুখের ভঙ্গি দেখে আয়ান ভ্রু কুচকায়।ফারিহা বারবার পেছনে হাত দিচ্ছে।আয়ান ফারিহাকে বললো,
“কি হয়েছে কোন সমস্যা?ফিটিং হচ্ছে না?”

ফারিহা কোনরকমে হেসে বললো, ” না না ঠিক আছে”

তারপর ফারিহা আস্তে আস্তে হেঁটে গিয়ে আয়নার সামনে গিয়ে দাঁড়ায়।আয়ান এবার বুঝতে পেরে ফারিহার সমস্যাটা কি!
আসলে স্লীভলেস গাউন হওয়ার কারণে ফারিহার পিঠের প্রায় পুরোটা অংশ দেখা যাচ্ছে। আয়ান অবাক হয় ফারিয়াকে বললো,
“এটা?কিন্তু আমিতো স্লিভলেস গাউন অর্ডার করিনি।ওই ছেলেটা নিশ্চয় ভুল প্যাকেট দিয়ে গিয়েছে”

আয়ানকে রাগতে দেখে ফারিহা বললো,
“আচ্ছা ঠিক আছে আর রাগারাগি করতে হবে না। আমি এটাই পড়ছি। এটাতো আমার গায়ে ফিট
হচ্ছে আর চুলগুলো খুলে রাখবো তাহলে পিঠ দেখা
যাবে না”

আয়ান কিছু বলতে যাবে কিন্তু ফারিহা আয়ানকে থামিয়ে দিলো।
আয়ানের নজর ফারিহার উন্মুক্ত এর পিঠের দিকে যায়।আয়ান আস্তে আস্তে ফারিহার পেছনে গিয়ে দাঁড়ালো।ফারিহা আয়ানকে আয়নায় দেখছে।আয়ান একটা ঘোরের মধ্যে চলে গিয়েছে। আস্তে করে ফারিহা খালি পিঠে হাত রাখলো,ফারিহা কেঁপে ওঠলো। আয়ান ফারিহা চুলে মুখ ডুবিয়ে চুলের ঘ্রাণ নিলো।
এভাবে অনেক্ষণ থাকার পর আয়ান ফারিহার ঘাড়ে কিস করতে যাবে তখন ফারিহা আয়ানকে ধাক্কা দিলো। হঠাৎ ধাক্কায় আয়ান তাল সামলাতে না পেরে পিছিয়ে গেলো।তারপর একবার ফারিহার দিকে তাকিয়ে কিছু না বলে ব্যালকুনিতে চলে গেলো।এদিকে ফারিহা মূর্তির মত দাঁড়িয়ে থাকলো..

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here