স্রোতের টানে পর্ব:১

0
7304

#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:১

“উমম উম উহমমমমম…”

“এই মেয়ে চুপ।দেখছিস না মুখ বেঁধে রেখেছি তবুও কথা বলার চেষ্টা করছিস কেনো?”

“উমমম..”

“মেয়েটাকে বেঁধে রেখেছি তবুও ছোটার চেষ্টা করছে। বস অজ্ঞান করতে বারণ করেছে, না হলে তো অজ্ঞান করে ফেলে রাখতাম”

তখন আরেকটা লোক বললো, “বসকে বল কাজ শেষ”

“দাঁড়া কল দিচ্ছি”

তারপর একটু দূরে গিয়ে ওই লোকটা কাউকে কল দে। কিছুক্ষণ পর ওপাশ থেকে কল রিসিভ হলে লোকটা বললো, “বস,,কাজ শেষ!”

ফোনের ওপাশে গম্ভীর গলায় কেউ বলে ওঠে,
“ওকে আমি আসছি”

কথা বলা শেষ করলে ওই লোকটা এদিকে আসলে আরেকটা লোক বললো,
“কি বললো?”

“আসছে বলছে”

এবার বেধেঁ রাখা মেয়েটাকে দেখিয়ে বললো,
“এ তো এখনো মুচরামুচরি করতাছে।এক কাজ কর মুখের ট্যাপটা খুলে দে”

” খুললে যদি চিল্লাচিল্লি শুরু করে?”

” চিল্লাচিল্লি করলে আবার লাগিয়ে দিবি এখন খুলে দে”

একটা লোক গিয়ে মেয়েটার মুখের ট্যাপটা খুলে দে।মুখ খোলা পেয়ে মেয়েটা বললো,
“আপনারা কারা?আমাকে এখানে নিয়ে এসেছেন কেনো?”

কেউ কিছু বলছে না দেখে মেয়েটা আবার বলে ওঠে,
“কি হলো কিছু বলছেন না কেনো?আপনার আমাকে এভাবে বেঁধে রেখেছেন কেনো?”

তখন একটা লোক বলে ওঠে,
” আমাদের বসের অর্ডার”

“কে আপনাদের বস?দেখুন আপনাদের হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।আমাকে ছেড়ে দিন প্লিজ”

“আমাদের কোনো ভুল হচ্ছে না ম্যাডাম”

তারপর লোকটা মেয়েটার সামনে একটা ছবি দেখিয়ে বললো, ” এটা আপনি তো?”

মেয়েটা অবাক চোখে ছবির দিকে তাকিয়ে মাথা নাড়িয়ে বললো,
” হ্যাঁ এটাতো আমি!কিন্তু…”

“আর কোনো কিন্তু না ম্যাডাম। বস আমাদের ছবির মেয়েটা কে তুলে আনতে বলেছে আর ছবির মেয়েটা তো আপনি”

“কে আপনাদের বস?আমার সাথে তো কারোর কোন শত্রুতা নেই। তাহলে আমাকে এভাবে তুলে আনতে বলবে কেনো?”

তখন আরেকটা লোক বলে উঠে,
“সেটা বস আসলে জিজ্ঞেস করে নেবেন”

“প্লীজ প্লীজ শুনুননন..”

মেয়েটাকে আর কিছু বলতে না দিয়ে লোক গুলো রুম থেকে বেরিয়ে যায়। তারপর দরজা আটকে তালা মেরে দে।
ওই রুমটাতে কোনো আসবাবপত্র নেই।একটা চেয়ারে মেয়েটাকে বেঁধে রাখা। পাশে কিছু ভাঙ্গা টেবিল পড়ে আছে।রুমটা প্রায় অন্ধকার শুধু জানালা দিয়ে এক চিলতে আলো আসছে! মেয়েটা অবাক হয়ে চারদিকে তাকায়।অন্ধকারে ভয় পাচ্ছে না ঠিকই কিন্তু চিন্তা হচ্ছে যে কে ওকে এভাবে বেঁধে রাখলো?

মেয়েটা হলো ফারিহা।পুরো নাম ফারিহা বিনতে আজাদ।এমপি মহিদুল হক আজাদের একমাত্র মেয়ে।ফারিহার পৃথিবীতে ওর বাবাই সব।
ফারিহা দেখতে মাশাল্লাহ অনেক সুন্দর।চেহারাটা অনেক মায়াবী। তবে একটু বেশিই চিকন।চুলগুলো একদম কোমর পর্যন্ত। চিকন, মায়াবী চেহারা, কোমর পর্যন্ত চুল এক কথায় অসাধারণ!ফারিহার কোন ভাই বোন নেই। তাই ফারিহার বাবা যেমন ফারিহার জান,তেমনই ফারিহা ওর বাবার জান।

ফারিহা অনার্স থার্ড ইয়ারে পড়ে।আজকে সকালে ভার্সিটিতে আসার সময় রাস্তায় লোক গুলো ওকে তুলে আনে।এমপির মেয়ে হলেও ফারিহা কখনো গাড়িতে করে ভার্সিতে যায় না।ও সব সময় সাধারন ভাবে চলতে চায়।মিস্টার আজাদ ফারিহাকে গাড়ির কথা বললেও ফারিহা না করে। আর মিস্টার আজাদ ফারিহার অনুরোধ ফেলতে পারেনা।
ফারিহার 18 তম জন্মদিনে ওর বাবা ওকে একটা স্কুটি দিয়েছিল।ফারিহা স্কুটি দিয়েই চলাফেরা করে। আজকে ভার্সিটিতে আসার সময় মাঝরাস্তায় দুটো ব্লেক কার ফারিহার স্কুটি আটকে দাঁড়ায়।তারপর গাড়ি থেকে কিছু কালো পোশাক পরা লোক নামে ফারিহাকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই ও মুখ চেপে ধরে ওদের গাড়িতে উঠায়। আশেপাশে কেউ ছিল না তাই কেউ ফারিহাকে কিডন্যাপ হতে দেখিনি।লোক গুলো গাড়িতে তোলে ফারিহার চোখ মুখ বেঁধে দেয়।

চোখ খুললে ফারিহা নিজেকে এই রুমে আবিস্কার করে।ফারিহা বসে বসে ভাবছে কে এমন হতে পারে যে ওকে কিডন্যাপ করলো! লোকগুলো চলে গিয়েছে প্রায় এক ঘন্টা হয়ে যাবে। ফারিহার
খুব পানি তৃষ্ণা পাচ্ছে। সকালে ইম্পরট্যান্ট ক্লাস আছে বলে নাস্তা না করে বেরিয়ে যায়।
মিস্টার আজাদ অনেকবার নাস্তার কথা বললেও ফারিহা তাড়াতাড়ি করে বেরিয়ে যায়। ভেবেছিলো ভার্সিটিতে ক্যান্টিনে গিয়ে কিছু খেয়ে নেবে।এখন পর্যন্ত কিছু খায়নি!এখন প্রচুর পানি তেষ্টা পাচ্ছে।ফারিহা আস্তে সরে ডাকলো,

“কেউ আছেন?প্লিজ আমাকে একটু পানি দিবেন?”

কোনো আওয়াজ নেই!ফারিহা ভাবছে লোকগুলো কি চলে গেলো নাকি? ফারিহা চেয়ারের সাথে পর বাঁধা হাতগুলো ছোটাতে মোচড়ামুচড়ি করতে থাকে। কিন্তু কিছুতেই খুলতে পারে না। আশেপাশে এমন কিছু নেই যেগুলো দিয়ে দড়ি কাটবে।ফারিহা একটু নিচু হয়ে মুখ দিয়ে দড়ির বাঁধন খোলার চেষ্টা করে তখন দরজায় আওয়াজ হয়। ফারিহা মুখ তোলে একটা অবয় দেখতে পায়।
দরজা খোলার কারণে বাহিরের আলো এসে সোজা ফারিহার চোখে পড়ে। ফারিয়া চোখ পিটপিট করে সামনের মানুষটাকে দেখে। মুখটা দেখা যাচ্ছে না শুধু একটা ছেলের ছায়া দেখা যাচ্ছে।ফারিহ ঐভাবেই বসে থেকে ভীতু ভীতু চোখে সামনে তাকিয়ে থাকে। ছেলেটা আস্তে আস্তে ফারিয়ার দিকে এগিয়ে আসে। ফারিহা ছেলেটাকে চেনার চেষ্টা করছে কিন্তু ছেলেটার মুখে দেখা যাচ্ছে না।
ছেলেটা এসে একটা সুইচ টিপে রুমে থাকা লাইট অন করে। তারপর ফারিহা সামনাসামনি একটা চেয়ারে বসে। ফারিহা অবাক হয়ে তাকিয়ে বললো,

“আয়ান খান! ”

আয়ান ঠোঁট কামড়ে অন্যদিকে তাকিয়ে বাঁকা হাসে। তারপর ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমাকে চেনো তাহলে?”

ফারিহা আয়ানকে চেনে!যদিও সামনাসামনি ওদের কখনো দেখা হয়নি।ফারিহা খবরের কাগজে, টিভিতে আয়ানকে দেখেছে।
আয়ান খান।বাংলাদেশের টপ বিজনেসম্যান দের মধ্যে একজন।তাছাড়া মাফিয়া জগতে ওর বেশ নামডাক।27 বছরের এই যুবকটি অনেক বড় মাফিয়া। মন্ত্রী মিনিস্টারাও আয়ানের ভয়ে কাঁপে।তাছাড়া আয়ান দেখতে তো পুরা হিরো।আয়ান মোস্ট হ্যান্ডসাম ব্যাচেলরদের মধ্যে একজন।এই বয়সেই বিজনেস,মাফিয়া জগতে বেশ উন্নতি করেছে।

ফারিহা চোখ পিটপিট করে তাকিয়ে বললো,
“আপনি আমাকে কিডন্যাপ করেছেন? কিন্তু কেনো?আমার সাথে তো আপনার কোনো শত্রুতা নেই।এমনকি আমাদের কখনো দেখাও হয়নি।তাহলে..”

ফারিহাকে উত্তেজিত হতে দেখে আয়ান জোরে হেসে দেয়।তারপর বললো,

“আরে আরে রিলেক্স।এতো হাইপার হচ্ছো কেনো?”

“দেখুন আপনার হয়তো কোথাও ভুল হচ্ছে।আপনি যাকে খুঁজছেন সে আমি না। প্লিজ আমাকে ছেড়ে দিন”

“তোমার নাম কি?”

আয়ানের প্রশ্নে ফারিহা থতমত খেয়ে যায়।যে মেয়েটাকে কিডন্যাপ করতে বলেছে সেই মেয়েটার নামই জানে না।ফারিহাকে চুপ থাকতে দেখে আয়ান আবার বললো,
“কি হলো? নাম বলো”

ফারিহা একটু হাসিমুখে বললো,
“দেখলেন তো বলেছিলাম না আপনার কোথাও ভুল হচ্ছে।যেখানে আপনি আমার নামই জানেন না সেখানে আমাকে কেনো কিডন্যাপ করবেন!”

আয়ান ফারিহাকে একটা ধমক দিয়ে বললো,
“তোমাকে এত কথা বলতে বলিনি নাম বল”

আয়ানের ধমকে ফারিহা চুপসে যায়।কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে, “ফ ফা ফারিহা ”

আয়ান বিরক্তি নিয়ে বললো, ” পুরো নাম কি?”

“ফারিহা বিনতে আজাদ”

ফারিহার পুরো নাম শুনে আয়ান বাঁকা হাসে।তারপর বললো, “বাবা এমপি মহিদুল হক আজাদ?”

ফারিহা ভীতু চোখে আয়ানের দিকে তাকিয়ে হ্যাঁ সূচক মাথা নাড়ায়।আয়ান ঠোঁট কামড়ে হেসে বললো,
“তাহলে আমার কোথাও ভুল হচ্ছে না”

“আপনি আমাকে ধরে এনেছেন কেনো?”

“সেটা আস্তে আস্তে জানতে পারবে ”

” কিন্তু আপনার সাথে তো আমার কোন শত্রুতা নেই।তাহলে আপনি আমাকে কেনো..”

আইয়ান শান্ত দৃষ্টিতে ফারিহার চোখের দিকে তাকিয়ে বললো,
“তোমার সাথে শত্রুতা নেই। কিন্তু তোমার বাবার সাথে আছে”

ফারিহা অবাক চোখে তাকিয়ে বললো, “বাপির সাথে?”

“হ্যাঁ তোমার বাপির সাথে আর তুমি তো তোমার বাপির সবচেয়ে কাছের মানুষ।কাছের মানুষ হারালে কত কষ্ট হয় সেটা মিস্টার আজাদ বুঝুক”

আপনার বাপির সাথে কিসের শত্রুতা?আমার বাপি অনেক ভালো।বাপি কখনো কারোর কোনো ক্ষতি করেনি”

ফারিহার কথা শুনে আয়ান জোরে হেসে দিলো।তারপর হাসতে হাসতে বললো,
“তুমি তোমার বাপি কে চেনো না”

“না আমি আমার বাপিকে ভালো করেই চিনি।আমার বাপি কখনো কারো কোনো ক্ষতি করতে পারে না”

“সেটা তো সময়ই বলে দেবে।তোমার বাপি কি করেছে আর কি করেনি!”

আয়ান উঠে চলে যায়।ফারিয়া বলে উঠে,
“শুনুন,প্লীজ শুনুন..আমার বাপি কিছু করেনি।আমাকে ছেড়ে দিন”

আয়ান ফারিয়ার কথা শুনেও না শোনার ভান করে চলে যায়।ফারিহা কাঁদতে কঁদতে বললো,
“বাপি কোথায় তুমি?প্লিজ আমাকে এখান থেকে নিয়ে চলো।বাপিইইইই…”

চলবে…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here