#স্রোতের_টানে
লেখিকা:#Tarin_Niti
পর্ব:৯
রাতে আয়ান বাসায় ফিরে রুমে এসে দেখে ফারিহা সোফায় হেলান দিয়ে শুয়ে বই পড়ছিে।রেগে থাকলেও আয়ান ফারিহাকে কিছু বলে না।সোজা ওয়াশরুমে চলে যায়।ফারিহা আয়ানকে আসতে দেখে সোফা থেকে উঠে নিচে চলে যায় কফি বানানোর জন্য।
ফারিহা কফি করে রুমে এসে দেখে আয়ান টাওয়াল দিয়ে মাথা মুচ্ছে।ফারিহা চুপচাপ আয়ানকে কফি দিয়ে আবার সোফায় এসে বসলো।
আয়ান কফির মগে চুমুক দিয়ে বললো,
“ব্যাগ গোছাও! আগামীকাল সকালে আমরা কক্সবাজার যাবো”
ফারিহা অবাক চোখে আয়ানের দিকে তাকাযলো। হঠাৎ কক্সবাজার কেনো যাবে?ফারিহা বুঝতে পারছে না। ফারিহাকে অবাক চোখে তাকিয়ে থাকতে দেখে আয়ান বলেলো,
“আমরা হানিমুনের জন্য যাচ্ছি না। আমার কক্সবাজারে একটা মিটিং আছে তার জন্য যাচ্ছি”
ফারিহা আয়ানের কথা শুনে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেললো।ও ভয় পেয়ে গিয়েছিলো!তারপর বললো,
“আপনার কাজ আছে তাহলে আপনি যান। কিন্তু আমি কেনো?”
“আমি তোমাকে নিয়ে কোনো রিক্স নিতে চাই না।আমি জানি আমি ঢাকায় না থাকলে তোমার সাহস বেড়ে যাবে।তো তুমি আমার সাথে যাবে”
“আমার ক্লাস আছে তো।”
“দুদিন ক্লাস না করলে কোন সমস্যা হবেনা।নওশীনের থেকে নোট নিয়ে নিও।”
“আমি প্রমিস করছি আমি পালানোর চেষ্টা করবো না।কিন্তু প্লিজ আমি যাবো না”
আয়ান শান্ত দৃষ্টিতে ফারিহার দিকে তাকিয়ে বললো, “আর কোনো কথা না,তুমি যাবে! দুই দিনের জন্য যা যা লাগবে প্যাক করে নাও।আমরা কালকে সকালে রওনা দিবো”
আয়ানের কথা শুনে ফারিহা চুপ হয়ে গেলো। কক্সবাজার যেতে ফারিহার কোনো আপত্তি নেই কিন্তু আয়ানের সাথে যেতে আপত্তি!ফারিহা আয়ানের সাথে কোথাও যেতে চাচ্ছেনা। তাছাড়া আয়ান কি শুধুমাত্র পালিয়ে যাবে এই ভয়ে ওকে সাথে নিয়ে যাচ্ছে? নাকি অন্য কোনো কারণ আছে!
ফারিহা আবার দুপুরে কথা ভেবে ভয়ে জড়োসড়ো হয়ে যায়।মিস্টার আজাদ যে ঠিকানায় ফারিহার সাথে দেখা করতে গিয়েছিলল এটা নিশ্চয় আয়ান এতক্ষণে জেনে গেছে।ফারিহা এটা ভেবে অবাক হয় যে,আয়ান ওকে কিছু বলল না কেনো!
.
পরদিন সকালে ফারিহা ভোরে উঠে পড়লো।তারপর নামাজ পরে সব সময়ের মতো ছাদে চলে যায়।
রাতে আয়ানের কথামতো কাপড় গুছিয়ে রাখে।নওশীন আর শিহাবকে কল করে বলে দে যে,ও দুদিন ইউনিভার্সিটি যাবেনা।আয়ানের সাথে কক্সবাজার যাবে।শিহাব অনেক চিন্তিত মুখে বলে,কেন হঠাৎ তোকে নিয়ে কক্সবাজার যাচ্ছে।কিন্তু ফারিহা হাসি মুখে বুঝিয়ে বলে যে, আয়ান মিটিং এর জন্য যাচ্ছে আর ওকে একা ছেড়ে যাবেনা।তাই ওকে নিয়ে যাচ্ছে।
তারপর নওশীন, শিহাব ফারিহাকে সাবধানে
থাকতে বললে ফারিহা নওশীনকে বলে,ও সাবধানে থাকবে আর নওশীন যেনো ওর বাবাকে জানিয়ে
দে যে ও কক্সবাজার যাচ্ছে,না হলে মিস্টার
আজাদ শুধু শুধু চিন্তা করবে।আরো কিছুক্ষণ কথা বলে কল কেটে দে।
আজকে ফারিহা বেশিক্ষণ ছাদে থাকেনা।10 মিনিট থেকে নিচে নেমে আসে।রুমে এসে দেখে আয়ান ঘুম থেকে উঠে পরেছে।
আয়ান ফারিহাকে দেখে বললো,
“রেডি হয়ে নাও। কিছুক্ষণ পর আমার বের হবো”
তারপর আয়ান ওয়াশরুমে চলে গেলো।ফারিহা ও কাপড় নিয়ে অন্য রুমে গিয়ে চেঞ্জ করেন। ফারিহা একটা নেভিব্লু লঙ্গের কুর্তি পড়ে সাথে কালো জিন্স,গলায় স্কার্ফ।তারপর রুমে এসে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে এক হাতে চুড়ি আর এক হাতে ঘড়ি পড়ে।কানে ওর বাবার দেওয়া দুলগুলো।চুলগুলো একসাইড দিয়ে বেঁধে ছেড়ে রাখে।
আয়ান ওয়াশরুম থেকে বেরিয়ে ফারিহার দিকে তাকিয়ে চোখ আটকে যায়। ফর্সা শরীরের নেভি ব্লু কালার টা ফারিহাকে দারুন মানিয়েছে।আয়ান ফারিয়াকে আগে কুর্তি পড়তে দেখেনি।ফারিহা
সব সময় থ্রি-পিস পড়তো।আজকে কুর্তি পড়াতে ফারিহাকে বেশ পিচ্চি লাগছে।
আয়ান চোখ সরিয়ে নিজে রেডি হতে থাকে।ড্রাইভার এসে ওদের ব্যাগগুলো গাড়িতে তুলে। ফারিহা বেশি কিছু নে নি।দুদিন থাকার জন্য কয়েকটা থ্রিপিস আর প্রয়োজনীয় যা যা যা লাগে।
গাড়িতে ওঠে আয়ান গাড়ি ড্রাইভ করে। ফারিহা কিছু বলে না চুপচাপ আয়ানের পাশের সিটে বসে বাইরে দিকে থাকে।ওরা দুজনই শুধু যাচ্ছে,সাথে আয়ানের কোন বডিগার্ড নেই।এটা দেখে ফারিহা একটু বেশি খুশি হয়। কিছুক্ষণ পর ফারিহা বললো,
“আপনি পুরো রাস্তা ড্রাইভ করবেন?”
আয়ান ড্রাইভ করতে করতে বললো,
” হুম.. আমার অভ্যাস আছে”
আয়ান গাড়ির স্পিড একটু স্লো করে পেছনের দিকে হাত বাড়িয়ে একটা ব্যাগ থেকে স্যান্ডউইচ বের করে।তারপর ফারিহার দিকে বাড়িয়ে দিয়ে বললো,
“এটা খাও”
ওরা নাস্তা না করেই রওনা দে তাই আয়ান সার্ভেন্টকে বলে এগুলো গাড়িতে তোলে।ফারিহা আয়ানের হাত থেকে স্যান্ডউইচ নিয়ে একটু হেসে বললো,
“থ্যাংকস, কিন্তু আপনি খাবেন না?”
আয়ান ওর হাতে আর একটা স্যান্ডউইচ নিয়ে বললো,”খাচ্ছি।”
আয়ান এক হাতে ড্রাইভ করছে আরেক হাতে খাচ্ছে।ফারিহা ভেবেছিল আয়ানকে হেল্প করবে, কিন্তু কি যেন ভেবে আর করে না!চুপচাপ বসে থাকে।
“পানির বোতল টা দাও তো..”
আয়নের কথায় ফারিহা আয়নের দিকে তাকালো।আয়ান ইশারায় ফারিহার ওই সাইড থেকে পানির বোতল দিতে বললো। ফারিহাকে বোতলটা দিলে আয়ান ঢকঢক করে পানি খেয়ে বোতলটা ফারিহার দিকে বাড়িয়ে দেয়…
___________
প্রায় 7 ঘণ্টা পর দুপুর বারোটার দিকে ওরা কক্সবাজার পৌঁছায়।পথে আর আয়ান কয়েকবার ব্রেক নিয়েছিলো।এভাবে একটানা ড্রাইভ করতে করতে হাঁপিয়ে উঠেছে।ফারিহা তো পুরো রাস্তা ঘুমিয়ে এসেছে।স্যান্ডউইচ খাওয়ার একটুপর ঘুমিয়ে পড়ে।ফারিহা সবসময়ই লম্বা জার্নিতে গাড়িতে উঠলে ঘুমিয়ে পড়ে। এখানেও ব্যতিক্রম ঘটেনে। সারা রাস্তায় ফারিহা ঘুমিয়েছে আর আয়ান ফারিহা কে দেখেছে। গাড়ি থামিয়ে আয়ান ফারিয়াকে ডাকলো,
“ফারিহা, এই ফারিয়া..আরে এই মেয়েটার এতো ঘুম কিভাবে আসে!ফারিহা ওঠো,আমরা এসে পড়েছি”
আয়ানের ধাক্কাধাক্কিতে ফারিহার ঘুম ভেঙ্গে যায়। পিটপিট করে চোখ খুলে এদিক-ওদিক তাকিয়ে বোঝার চেষ্টা করে ও এখন কোথায় আছে।ফারিহাকে এভাবে তাকাতে দেখে দেখে আয়ান হেসে বললো,
“ম্যাডাম আমরা এসে পড়েছি। হোটেলে গিয়ে ঘুমাবেন চলুন..”
আয়ানের কথায় ফারিহা একটু লজ্জা পেয়ে গেলো। ইশশ.. এভাবে এতক্ষন ঘুমিয়ে ছিলো!ওরা দুজন গাড়ি থেকে নেমে হোটেলের ভেতরে যায়।রুম আগে থেকে বুক করা ছিলো।আয়ান রিসিপশনে গিয়ে ওদের রুমের চাবি নে।তারপর ওখানে কাজ করা একটা ছেলেকে বলে গাড়ি থেকে ওদের ব্যাগ গুলোর নিয়ে রুমে পাঠিয়ে দিতে।ফারিহা হাঁ করে সব দেখছে।
হোটেল টা অনেক বড় আর অনেক সুন্দর।সব কি সুন্দর পরিপাটি,দিনের বেলাও রঙ বেরঙ্গের লাইট।
“কি হলো?এভাবে দাঁড়িয়ে থাকবে নাকি রুমে যাবে? এতক্ষণ তো ঘুমে ঢলে পড়ছিলে আর এখন ঘুম শেষ?”
“হুম..শেষ।গাড়িতে উঠলে আমার ঘুম আসে।আমার ঘুম নিয়ে আপনি বারবার এভাবে বলবেন না তো”
ফারিহার কথা শুনে আয়ান একটু জোরে হাসে। তারপর হেসেই বললো,
“তুমি ঘুমাতে পারো আর আমি বলতে পারবোনা?”
ফারিহা রাগি চোখে কোমরে হাত দিয়ে আয়ানের দিকে তাকালে আয়ান ফারিহার হাত ধরে বললো,
“হয়েছে আর এভাবে তাকাতে হবে না।রুমে চলো”
তারপর আয়ান বাচ্চাদের মতো ফারিহার হাত ধরে, ওকে নিয়ে রুমের দিকে যায়।রুমের সামনে এসে চাবি দিয়ে দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে।রুমে গিয়ে ফারিহা আরো অবাক হয়! ওদের রুমটা অনেক বড়। এখানে সবকিছু সাদা।বেড কভার ধবধবে সাদা।রুমের সাথে লাগোয়া একটা বড় ব্যালকনি আছে। ফারিহা দৌড়ে ব্যালকনিতে যায়।
এখান থেকে সমুদ্রটা একদম স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে। খুশিতে ফারিয়ার চোখ মুখ উজ্জ্বল হয়ে ওঠে। আয়ান ব্যালকনিতে গেলে ফারিহা লাফিয়ে বললো,
“এই আমি সমুদ্র দেখতে যাবো”
“যাবে কিন্তু এখনো না।আগে ফ্রেশ হয়ে নাও তারপর..”
“না না না..!আমি এখনি যাবো।ওয়াও!কি সুন্দর সমুদ্রটা”
“আগে কখনো সমুদ্রে আসোনি?”
ফারিহা একটু মন খারাপ করে বললো,
“এসেছিলাম,তখন মাম্মা ছিলো!তারপর মাম্মা মারা যাওয়ার পর বাপি কোথায় ঘুরতে যায়নি।আর আমাকেও স্কুল-কলেজ থেকে একা একা ঘুরতে যেতে দিতো না।তাই আমার সেরকম ভাবে কোথায় ঘুরা হয়নি”
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন ঘুরবে কিন্তু আগে ফ্রেশ হয়ে নাও।এতোক্ষণ জার্নিতে তোমার ক্লান্ত লাগছে না?ওহ..তোমার ক্লান্ত লাগবে কেনো, তুমি তখন সারা রাস্তায় ঘুমিয়ে এসেছো”
ফারিহা একটু মেকি রাগ দেখিয়ে বললো,
“এই আপনি আবার আমার ঘুম নিয়ে কথা বললেন? আমি আপনার সাথে থাকবো না”
ফারিহা চলে যেতে নিলো আয়ান ফারিহার হাত ধরে বললো,
“কোথায় যাচ্ছো?”
“সমুদ্র দেখতে!”
“বললাম না ফ্রেশ হয়ে নাও আগে।তুমি আমার একটা কথা শোনো না!রুমে চলো..”
আয়ান ফারিহার হাত ধরে ফারিহাকে রুমে নিয়ে আসে।ফারিহা চারদিকে ঘুরে ঘুরে দেখছে।আয়ান ফারিহা দিকে তাকিয়ে বললো,
“আমি ওয়াশরুমে চলে গেলে সমুদ্র দেখতে চলে যাওয়ার ধান্দা না?দাঁড়াও তোমার ব্যবস্থা করছি”
ফারিয়া ভ্রু কু্ঁচকে আয়ানের দিকে তাকায়।আয়ান ঠিকই কি বলেছে, ফারিহা ভেবেছিলো আয়ান ওয়াশরুমে গেলে ও সমুদ্র দেখতে যাবে।হোটেলের কাছেই তো কোন সমস্যা হবে না।
আয়ান ফারিহার ব্যাগের চেইন খুলে ব্যাগ থেকে একটা ওড়না বের করলো।তারপর ফারিহার হাত বাঁধলো। ফারিহা লাফিয়ে উঠে বললো,
“আপনি কি করছেন?”
“তোমাকে বেঁধে রাখছি যেনো রুমের বাইরে যেতে না পারো!”
“আমি কি বাচ্চা নাকি যে আমাকে এভাবে বেঁধে রাখতে হবে?”
“তুমি বাচ্চাদের থেকেও ছোট।”
আয়ান ওরনার এক প্রান্ত ফারিহার দুই হাত বেঁধে আরেক প্রান্ত ব্যালকনির দরজার সাথে বেঁধে দিলো। তারপর ভ্রু নাচিয়ে বললো,
“তুমি ব্যালকনিতে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে সমুদ্র দেখো। আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি”
ফারিহা ঠোঁট উল্টে দাঁড়িয়ে থাকলো। দুই হাত বাধার কারণে ও হাত খুলতে পারছেনা!
চলবে…