“হালাল প্রেম”
পর্ব- ১১
(নূর নাফিসা)
.
.
আজ আর পড়া হলো না কারোই। শারমায়া তো না ই! আর সাফওয়ানা বাসায় মেহমান এলেই সেদিন তার পড়াশোনা বলতে কিছু নেই। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। কিছুক্ষণ মায়ের সাথে রাগারাগি করে এলো, আগে কেন বলেনি বিয়ের কথা! আগে বললে তো আপু ভাইয়াদের কল করতো, গত সন্ধ্যায় ছোটখাটো একটা হলুদের প্রোগ্রাম হয়ে যেতো। মজাটা বরবাদ করে দিলো একেবারে! এমন বিয়ে জীবনে প্রথমবার খেলো সে! শারমিন তাকে ধমকে তাড়া করেছে। তবুও সে থেমে নেই! রুমে এসে শারমায়ার ফোন নিয়ে যত কাজিনদের ফোন নম্বর আছে সবার কাছে কল করে জানাচ্ছে আজ শারমায়ার বিয়ে ছিলো অথচ তাদের ফুপি/খালা কাউকে আসতে বলেনি।
খবরটা জানাতে গেলো মায়ের বিপক্ষে তাদের দাঁড় করানোর জন্য অথচ সে উল্টো ধাওয়া খেয়ে এলো! তারা নাকি দুতিন দিন আগে থেকেই জানে! শারমিন বলেছিলো তাদের শুক্রবার আসতে। কিন্তু শারমায়ার মামারা নিষেধ করেছে। পরে যেহেতু অনুষ্ঠান করবে তাই এখন কারোই যাওয়ার প্রয়োজন নেই। কম খরচে চুপচাপ বিয়ে পড়িয়ে রাখুক সেটাই ভালো। তা জেনে মেজাজটাই বিগড়ে গেছে সাফওয়ানার! তাই সে তার ফ্রেন্ডদের সাথে কথা বলতে লাগলো।
রাত সাড়ে দশটার দিকে সাফওয়ানা রুমে এলো। শারমায়ার মাথাটা একটু একটু ব্যাথা করছে তাই সে ইশার নামাজ পড়ে শুয়েছিলো। চোখ বন্ধ রেখেছে কিন্তু ঘুম আসেনি। চোখের সামনে বারবার সেই শোপিচটাই ভাসছিলো। এ পর্যন্ত কতবার যে তা দেখেছে আর ছুয়েছে তার হিসেব নেই! এখন সাফওয়ানা রুমে আসায় সে চোখ খুলে তাকালো। সাফওয়ানা ফোন এগিয়ে দিয়ে বললো,
“ভাইয়া কল করেছিলো। সুষনা আপুর সাথে কথা বলছিলাম বিধায় রিসিভ করতে পারিনি।”
শারমায়া ফোন হাতে নিয়ে ভাবছে কল ব্যাক করবে কি না! অতপর ডায়াল করেও সাথে সাথেই কেটে দিলো। আবার দিলো, তবে এবার মিসড কল। পরক্ষণে অপেক্ষায় রইলো জোভান ব্যাক করে কি না। পাঁচ-ছয় মিনিট পর জোভানের কল এলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। ঘুমিয়ে পড়েছিলে?”
“উহুম, সাফওয়ানার কাছে ফোন ছিলো।”
“খাচ্ছিলাম বিধায় কল ব্যাক করতে দেরি হলো।”
“এতো দেরিতে খাওয়া যে?”
“শ্বশুরবাড়ি তো নিয়ে যাইনি তাই বন্ধুবান্ধবদের রেস্টুরেন্টে নিয়ে যেতে হলো। বাইরে থেকে এলাম একটু আগে।”
“বাইরে থেকে এসে আবার ঘরে খাওয়া! আপনি খাননি রেস্টুরেন্টে?”
“তাদেরই তো হয়নি, আমি খাবো কিভাবে! ওয়ালেট বিক্রি করে দেওয়া বাকি ছিলো তাদের। কোনমতে বেঁচে গেছে বেচারা।”
শারমায়া নিচু শব্দে খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। তা দেখে সাফওয়ানা তার গা ঘেঁষে শুয়ে তাকে ধাক্কা দিয়ে ফিসফিসিয়ে বললো,
“হাসো কেন? লাউড স্পিকারে রাখো, আমিও শুনি।”
শারমায়া তাকে এক হাত ও দুই পা দিয়ে ঠেলে বিছানার অপর প্রান্তে পাঠিয়ে দিলো। যার ফলে শারমায়া রেগে চেচিয়ে বললো,
“ভাইয়া, আপনার বউ একটা বেয়াদব ডাইনি। আমাকে দুইপায়ে লাথি মারছে!”
কিন্তু জোভান শুনতে পায়নি তার কথা। কেননা শারমায়া জোভানকে বলছিলো,
“তাই বলে আপনাকে রেখেই খেয়ে ফেললো!”
“আরে না। মজা করছিলাম তোমার সাথে। সবাই মিলেই খেয়েছি।”
“রেস্টুরেন্টে খেয়ে আবার বাসায়!”
“কি আর করবো বলো। বাসায় ফিরে দেখি আম্মাজান প্লেটে খাবার বেড়ে বসে আছেন। সেটা কিভাবে রিজেক্ট করা যায়। তাই বাসায়ও খেতে হলো। তুমি ডিনার করেছো?”
“না।”
“কেন?”
“বিকেলে খেয়েছি তাই এখন আর খেতে ভালো লাগছে না।”
“তাইতো বলি, এতো শুকনা কেন বউটা।”
“ইশ! আমি মোটেও শুকনা না। আমার স্বাস্থ্য পারফেক্ট।”
“উহুম, আরেকটু স্বাস্থ্যবান হওয়া প্রয়োজন।”
“হয়েছে! আপনার যেই স্বাস্থ্য, দেখেছি না!”
“সত্যিই তুমি দেখেছো আমাকে?”
এমন প্রশ্নে আর কোনো জবাব দিলো না। শারমায়া লজ্জা পেয়েছে তাই জোভানও আর লজ্জা দিলো না। রাতও গভীর হয়ে আসছে তাই বললো,
“ডিয়ার, আজ কিন্তু আমাদের ফার্স্ট ওয়েডিং নাইট। যদিও তুমি বিহীন আমি বেডরুমে, তাই বলে নই দূরে। রেখেছি তোমায় হার্টরুমে। আর ডিস্টার্ব করছি না ঘুমের। যেদিন আমাদের বেডরুমে ফার্স্ট নাইট হবে সেদিন না হয় দুজন প্রেমের গল্পে হারিয়ে নির্ঘুম রাত কাটিয়ে দিবো। আজ ঘুমিয়ে পড়ো। তার পূর্বে অল্প কিছু হলেও খেয়ে নাও। নতুবা অসুস্থ হয়ে যাবে।”
“এখন কিছু খেতে পারবো না। এখন খেলে বরং অসুস্থ হয়ে যাবো।”
“এটা আবার কেমন!”
“তৈলাক্ত খাবার খেয়ে গা গুলাচ্ছে। অতিরিক্ত কিছু খেলে বমি হবে নিশ্চিত।”
“আচ্ছা। তোমার কন্ডিশন তুমিই ভালো জানো। আমি আর জোর করছি না। তবে ক্ষুধা থাকলে খেয়ে নাও।”
“ওকে, আল্লাহ হাফেজ।”
“শারমায়া, শুনো?”
“হুম?”
“আমার ফ্রেন্ডরা তোমাকে দেখতে চায়। কোথাও দেখা করতে আসতে পারবে একদিন?”
“আমাকে আসতে হবে? ছবি দেখেনি তারা?”
“ছবি তুলেছি নাকি তোমার?”
“তুলেননি?”
“কোথায়, আমার ফোনে তো নেই!”
“এনগেজমেন্টের দিনও একের পর এক ছবি উঠলো ফোনে, আজও হিসেব ছাড়া।”
জোভান হেসে উঠলো এবং বললো,
“সব তোমার ফোনে ট্রান্সফার হয়ে গেছে।”
“কোথায়! আমার ফোনে তো আসেনি।”
“সেটা তুমি জানবে কি করে! সেটা তো এখন আমার সামনে। আর সারাদিন পড়ে থাকে আমাদের আলমারিতে।”
“আপনি তাদের ছবি দেখিয়ে দিন। আমার কেমন যেনো আনইজি লাগছে শুনেই।”
“আচ্ছা। তোমাকে জোর করবো না আমি। তবে ছবি দেখাবো না। ছবি দেখানোর হলে আরও আগেই দেখিয়ে দিতাম। কিন্তু দেখাইনি। ছবি দেখলেই তারা পরিবারকে দেখানোর জন্য নিতে চাইবে। আমি চাই না, আমার বউয়ের ছবি অন্যের ফ্রেমে সংরক্ষিত থাকুক। তাই আমার ফোনে তোমার কোনো ছবিই রাখিনি। সবটা তোমার ফোনে সংরক্ষিত। তবে এই ফোন কিন্তু এবাড়িতে আসার পূর্বে পাবে না তুমি। তবে আমি আবার নিঃস্ব হয়ে যাবো। ঘুমিয়ে পড়ো। পাশাপাশি স্বপ্নে আমাদের সুখের সংসার সাজিয়ে নিয়ো। গুড নাইট।”
“আপনি কি রাগ করেছেন?”
“না তো।”
“আচ্ছা। গুড নাইট।”
অতপর কল কেটে দিলো শারমায়া। জোভানকে নিষেধ করে শারমায়ার ভেতরে আরও বেশি অস্বস্তি লাগছে। বিয়ের প্রথম দিন জোভান কিছু একটা চাইলো, এতেই সে নিষেধ করে দিলো! তা ভাবতেই নিজেকে বেশ অপরাধী মনে হচ্ছে। সাফওয়ানা আজ ক্লান্ত হওয়ায় শুয়ে পড়া মাত্র ঘুমিয়ে পড়েছে। শারমায়া বিছানায় এপাশ ওপাশ ফিরে ছটফট করছে। প্রায় দশ মিনিট পর সে জোভানের ফোনে কল করলো। জোভান কল কেটে ব্যাক করলো,
“আমি জানি, বিয়ের রাত আমাকে ছাড়া একদমই ভালো লাগছে না বউটার। আমারও ভালো লাগছে না। ইচ্ছে করছে তোমার বাসার দেয়াল টপকে জানালা দিয়ে চুপিচুপি নিয়ে আসি তোমাকে।”
শারমায়া লজ্জা পেয়ে বললো,
“আমি অন্য বিষয়ে কিছু বলার জন্য কল করেছি।”
“ওহ্, আচ্ছা। আমি একটু বেশিই ভেবে ফেলি। বলো কি বলবে।”
“আমি যাবো আপনার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করতে।”
“শারমায়া, আমি মোটেও রাগ করিনি।”
“তবুও আমি যাবো।”
“সিরিয়াসলি? আমি কিন্তু তোমাকে জোর করছি না। পরে আবার মাত্রাতিরিক্ত লজ্জা পেয়ে জ্ঞান হারিয়ে আমাকে ভয় দেখিয়ো না।”
“আমার জ্ঞান হারানোর অভ্যাস নেই। আমি মোটেও কাপিনি আপনার সামনে। আপনি বেশি বেশি দেখেছেন।”
জোভান হেসে উঠলো এবং বললো,
“তাহলে বোধহয় আমার চোখ কেপেছিলো তখন।”
“হবে হয়তো।”
“হা হা হা… রাখতে মন চায় না। তবুও রাখি। ঘুমিয়ে পড়ো। আর জেগে থেকো না। রাত শেষ হয়ে যাচ্ছে তো। অন্তত স্বপ্নে ওয়েডিং নাইট আমার সাথে কাটাও।”
শারমায়া মৃদু হেসে ফোন রেখে দিলো পাশে। এবার ভালো লাগছে খুব। তাই খুব বড়সড় এক নিশ্বাস ফেলে ঘুমের জন্য চোখ বন্ধ করলো। কে জানে, ফার্স্ট ওয়েডিং নাইট ড্রিমে জোভান আসবে কি না তার পাশে!