“হালাল প্রেম” পর্ব- ১৩

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ১৩
(নূর নাফিসা)
.
.
রেস্টুরেন্টের পাশে গাড়ি পার্ক করলো জোভান। শারমায়া গাড়ি থেকে নামতেই একটা ছেলে এসে সালাম দিলো,
“আসসালামু আলাইকুম, ভাবি।”
ভাবি ডাকার ফলে শারমায়া বুঝতে পেরেছে এটা জোভানের বন্ধু। সে সালামের জবাব দিলো। জোভান মুচকি হেসে পরিচয় করিয়ে দিলো,
“শারমায়া, সে আমার বাল্যকালের বন্ধু সাদাত। স্কুলজীবন একসাথে পাড় করেছি আমরা। আর সাদাত, সে আমা…”
“হুম, সে তোর জান শারমায়া সাদিয়া।”
“এমন ভাব করছিস যেনো আগে থেকেই চিনিস?”
“এখানে ভাব করার কি আছে! তুই ভাবিকে আনতে গিয়েছিস তা তো জানিই। সাথে তো দুএকজন নেই যে কনফিউজড থাকবো কোনটা ভাবি।”
“তারা আসেনি?”
“সেই কখন ইফাজ বললো রাস্তায় আছে। এখনো তাদের রাস্তা ফুরায় না।”
“চল, আমরা ভেতরে যাই।”
তিনজন রেস্টুরেন্টের ভেতরে প্রবেশ করে ফাঁকা টেবিলে বসলো। সাদাত শারমায়ার স্কুল কলেজ ও পরিবার সম্পর্কে কিছু জিজ্ঞাসা করে জানলো। চার-পাঁচ মিনিট পরেই আবার একজন এলো। শারমায়াকে দেখেই যেন চমকে উঠলো তার চেহারা! জোভান জিজ্ঞাসা করলো,
“আমার বউকে দাওয়াত করে এখন তোরা নিজেরাই উধাও! এমন হলে তো দ্বিতীয়বার দাওয়াতের দ-ও রাখবো না!”
ছেলেটি শারমায়ার দিকে তাকিয়েই চেয়ারে বসতে বসতে বললো,
“মিরাজের জন্য দেরি হলো।”
“সে আবার কোথায় আটকে গেলো?”
“তার বাপের ক্যাশ নিয়ে ব্যাংকে গেছে। আমি তাকে রেখেই চলে এলাম। ইনি কি আমাদের ভাবি?”
“সাদাত চিনে ফেললো আর তুই আমাকে জিজ্ঞাসা করছিস!”
“ভাই, দুনিয়াতে আজকাল কোনোকিছুর উপর বিশ্বাস করা খুব কঠিন। বলা তো যায় না, বউ রেখে যদি আবার শালিকা নিয়ে ডেটে আসিস!”
“প্রথম ডেটে শালিকা!”
সাদাত প্রত্যুত্তরে বললো,
“আরে বুঝিস না? এটা ইফাজের ফিউচার প্ল্যান। বউ রেখে শালিকার সাথেই ফার্স্ট ডেটিং।”
জোভান ও সাদাত একজোটে হেসে উঠলো। অতপর শারমায়ার উদ্দেশ্যে জোভান বললো,
“শারমায়া, এ হচ্ছে ইফাজ। সে-ও আমার বাল্যকালের বন্ধু। ইভেন, তার বাবাও আমার বাবার বন্ধু।”
শারমায়া সালাম দিয়ে কেমন আছে তা জিজ্ঞেস করলে ইফাজ উত্তর দিলো এবং সে-ও জিজ্ঞেস করলো ভালোমন্দ। ইফাজের মুখে অন্যরকম এক হাসি ফুটে আছে যা রহস্যজনক মনে হচ্ছে। প্রথম থেকেই শারমায়া লক্ষ্য করছে তার মুখের এই চাপা হাসি। সে হাসি মুখে ফোন বের করে কাউকে কল করলো। রিসিভ হতেই বললো,
“দোস্ত তুই কি আজ আসবি ভাবির সাথে দেখা করতে?”
“…..”
“আজ না এলেও পারিস। তোর বাবার ক্যাশ ইন করতে কতো ঝামেলা না তোর? ঠান্ডা মাথায় কাজ করিস। এখানে না এলেও সমস্যা নেই। অন্য একদিন দেখা করবি।”
জোভান সামান্য বিরক্তির সাথে তার কাছ থেকে ফোন ছিনিয়ে নিয়ে বললো,
“সমস্যা কি তোর? তোর কি মনে হয় তোদের সাথে দেখা করার জন্য আমি প্রতিদিন নিয়ে আসবো আমার বউকে। তার বাপের যা কাজ তা রাত আটটায় করলেও হবে। আমার বউ আটটা পর্যন্ত বসে থাকবে না।”
জোভানের বিরক্তিতে ইফাজ ফিক করে হেসে উঠলো। কিন্তু কিছু বললো না। ওদিকে জোভান ইফাজকে ধমক দিয়ে ফোনে মিরাজকে বললো,
“ওই তোর সমস্যা কি? তুই কাকে অপেক্ষা করাচ্ছিস মাথায় আছে কিছু! একটাকেও আমি ছাড়বো না দেখিস।”
এমনি বাইরের দিক থেকে চেচানো কণ্ঠ ভেসে এলো,
“দো…স্ত! এইতো আমি এসে গেছি৷ এই হারামজাদা আমাকে কল করে আসতে নিষেধ করছিলো কেনো রে!”
বলতে বলতে দৌড়ে রেস্টুরেন্টে প্রবেশ করে তাদের কাছে এলো মিরাজ। হাপানো কণ্ঠে শারমায়ার দিকে তাকিয়ে বলতে লাগলো,
“ওয়েট করানোর জন্য সরি, ভাবি। যদি জানতাম আমার জন্য ওয়েট করছেন, তাহলে আরো দুই ঘন্টা আগে এসে বসে থাকতাম।”
উক্তিটির শুরুতে যতটাই না গতি ছিলো আস্তে আস্তে শেষ পর্যায়ে গতি অনেকটাই কমে গেছে। সে-ও বিস্মিতভাবে ইফাজের দিকে তাকালো। ইফাজ হেসে চেয়ার ছেড়ে উঠে যেতে যেতে বললো,
“আমি মেনু নিয়ে আসছি।”
জোভান ইফাজের দিকে তাকিয়ে বললো,
“ইফাজ তোর বিহেভিয়ার আমার কাছে সুবিধাজনক মনে হচ্ছে না। সমস্যা কি বলতো?”
“ক্ষুধা লাগছে, এটাই মূল সমস্যা দোস্ত। ”
কথাটা বলে ইফাজ চলে গেলো অর্ডার মেনু নিয়ে আসার জন্য। সাদাত শারমায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“ভাবি, এ হচ্ছে আমাদের বুড়া কালের বন্ধু মিরাজ। জোভান আর সে একসাথে পড়াশোনা করেছে ইংল্যান্ডে। আর আমরা দেশি ছাত্র। এই মিরাজ ছেলেটা বাইরে থেকে দেখতে যতটা নাটের গুরু ভেতর থেকেও ঠিক ততটাই নাটের গুরু।”
মিরাজ শারমায়ার পাশের চেয়ারটা বিপরীতে টেনে কিছুটা দূরে বসতে বসতে বললো,
“দোস্ত, তুই শিক্ষক হয়ে এমন উল্টা প্রবাদ বলবি ভাবতেও পারিনি। আরে গুরু নামক গরু, জটিল বাক্যের একদিক মন্দ হলে অন্যদিক ভালো হতে হয়। বাইরে থেকে নাটের গুরু বলেছিস, মেনে নেওয়া যায়। ভেতর থেকে তো হৃদয়বান ন্যায় কিছু বলতে পারতি।”
“তোর সম্পর্কে বলার জন্য এর চেয়ে ভালো কিছু আমি খুঁজে পাইনি।”
“ইনসাল্ট করলি ভাবির সামনে!”
শারমায়া বললো,
“ভাইয়া, আপনাকে চেনা চেনা লাগছে। কোথাও দেখেছি বোধহয়। আপনার বাসা কি এদিকেই?”
মিরাজ হেসে বললো,
“না তো। একই শহরে থাকি যেহেতু, দেখেছেন হয়তো কোথাও। বাসার সবাই ভালো আছে তো ভাবি?”
“আলহামদুলিল্লাহ।”
“ভালো লাগলো আপনার সাথে দেখা করে। কি খাবেন বলুন। ইফাজ, তোর এতোক্ষণ লাগে! মেনু আনতে গিয়ে শেফ হয়ে গেলি নাকি? মেনুর বদলে রান্না করে খাবার আনছিস?”
বলতে বলতে মিরাজও উঠে চলে গেলো ইফাজের কাছে। পেছন থেকে সাদাত বললো,
“কিরে, এইটুকুতেই তোর কথা শেষ! ভাবির কাছে কি কি যেনো বলবি জোভানের নামে লিস্ট করে রেখেছিস , বললি না যে?”
“ধুর! আমি আবার কি বলবো! তার ব্যাপারে আমাকে কিছু বলতে হবে নাকি! ভাবি এমনি এমনি জেনে যাবে সব। হৃদয়ে হৃদয়ে টান আছে না।”
অতপর তাদের অর্ডার কনফার্ম হলো, খাবার এলো। গল্প করতে করতে খাওয়াদাওয়া হলো। সবার হাত মুখ স্বাভাবিক গতিতে চলছে বেশ, কেবল শারমায়ার গতিই স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক কম। তার খাবার খেয়ে শেষ করলো জোভান। আর সাক্ষাৎ শেষে শারমায়ার পরিবারের জন্য কিছু খাবার প্যাকেট করে গাড়িতে এলো জোভান। তাদের কাছ থেকে বিদায় নিয়ে তারা চলে এলো গন্তব্যে। বাসার সামনে এসে জোভান গাড়ি থেকে প্যাকেট বের করে বললো,
“এটা হাতে নাও।”
“এটা কার?”
শারমায়ার এমন প্রশ্নে জোভানের দুষ্টু জবাব,
“আমি গভীর রাতে আসবো, তারপর দুজন মধ্যরাতে লাঞ্চ করবো আর গল্প করবো। যত্নে রেখে দিয়ো। ধরো।”
তার কথায় শারমায়া মৃদু হেসে প্যাকেট হাতে নিয়ে বললো,
“অযথা এগুলো কেনার কোনো প্রয়োজন ছিলো না।”
“তোমার খাওয়া দেখে আমি হতাশ! এমন খাওয়া চললে বছরে লাখপতি আর যুগে কোটি থেকে কোটিপতি হয়ে যাওয়া ব্যাপার হবে না আমার জন্য। আই হোপ তুমি তাদের সামনে খেতে পারোনি কিন্তু বাসায় ভালো খাওয়া চলবে তোমার। প্রত্যাশা পূরণ না হলে আমার সুচিন্তা বাদ দিয়ে দুশ্চিন্তার পথ বাছাই করতে হবে, ডিয়ার।”
“বাসায় যাবেন না?”
“তুমি কি চাও?”
“আম্মু চাইবে যাওয়ার পূর্বে আপনি দেখা করে যান।”
জোভান শারমায়ার হাত ধরে ঘরের দিকে চলতে চলতে বললো,
“এতোটা দায়িত্বহীন মনে করো আমাকে যে বাইরে থেকে চলে যাবো! ঘর থেকে বেরিয়েছো আমার সাথে, ঘরে না রেখে যাই কিভাবে সেটা বলো?”
জোভানের কথাবার্তা ভীষণ মুগ্ধ করে শারমায়াকে। জোভান তাকে ঘরে পৌছে দিয়ে এই সন্ধ্যায় আর বেরিয়ে আসতে পারলো না। তাকে রাতে খাওয়াদাওয়া করে তারপর বের হতে হলো। এরমধ্যে সাফওয়ানার সাথে আড্ডা জমেছে বেশ। সাফওয়ানার পড়াশোনা আজও ছুটিতে।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here