“হালাল প্রেম” পর্ব- ১৪

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ১৪
(নূর নাফিসা)
.
.
ঘুমাতে যাওয়ার সময় শারমায়ার আবারও মনে পড়লো জোভানের বন্ধুবান্ধবদের রহস্যময় ব্যাপার। বারবারই মনে হচ্ছে মিরাজ নামের ছেলেটাকে সে দেখেছে কিন্তু কোথায় দেখেছে সেটা মনে করতে পারছে না। ওদিকে সাফওয়ানা মুখে ইচ্ছেমতো পাউডার মেখে সাদা ভুত্নি হয়ে যাচ্ছে। শারমায়া ফেসবুকে লগইন করে জোভানের প্রোফাইল ঘেটে তার বন্ধুবান্ধবদের ছবি বের করলো। সাফওয়ানাকে ডেকে বললো,
“সাফু, দেখে যা।”
সাফওয়ানা এসে শারমায়ার হাত থেকে ফোন নিয়ে ছবি দেখে বললো,
“ওয়াও! ভাইয়া হিমছড়ি গেছে! ইশ! আমি যে কবে যাবো! এগুলো কি বন্ধুবান্ধব নাকি?”
“হ্যা, তোকে হিমছড়ি দেখতে বলিনি। বন্ধুবান্ধব দেখার জন্যই ডেকেছি। দেখতো, তাদের মধ্যে খাটো ফর্সা ছেলেটাকে চিনতে পারিস কি না?”
সাফওয়ানা জুম করে ছবি দেখে বললো,
“আরে, এইটা তো সিংহমার্কা চুল ওয়ালা ছেলেটা! সুষনা আপুর বিয়েতে যে ফাজলামো করেছে। এইযে, ভাইয়ার পাশের লম্বা ছেলেটাও তো ছিলো।”
“ও….! এজন্যই তো এভাবে হাসছিলো আমাকে দেখে! আমার খেয়ালই ছিলো না সুষনা আপুর বিয়ের কথা! শুধু ওই ছেলেটাকেই দেখেছি মনে হচ্ছিলো!”
“তাদের সাথে দেখা করেছো আজকে?”
“হুম। আমাকে দেখে মিটিমিটি হাসছিলো দুজন। এইমাত্র তার কারণ পরিষ্কার হলো। ওফ্ফ, স্মরণশক্তি আজকাল লোপ পাচ্ছে বোধহয়! এক-দেড় মাস আগের কথাই ভুলে গেলাম! ধনে পাতা আর ভাত দিলাম তোকে। গুড নাইট।”
“এতোটা খারাপ কি করে হতে পারো তুমি! তুমি জানো না আমার বাইরে ঘুরাঘুরি করতে ভীষণ ভালো লাগে! ভাইয়া তোমাকে আগেই বলেছিলো আমাকেসহ তোমাকে বেড়াতে নিয়ে যাবে। তহলে আগে বললে না কেন? তোমাদের সাথে গেলে তো ফাজিলটারে দৌড়ানি দিয়ে আসতাম।”
“ওই, চুপ থাক! আজ থেকে মাত্র কোচিং শুরু হলো, প্রথমদিনই মিস হতে দিবো নাকি আমি! সামনে পরীক্ষা, ঘুরাঘুরি বাদ দিয়ে মনযোগ সহিত পড়াশোনা কর। না হলে কপালে দুর্গতি আছে।”
“ওই, তুই আমার দুর্গতি দেখার কে রে? তোর দুর্গতি আমি দেখে ছাড়বো। হুহ্! নিজের কোচিং যে মিস গেলো সেটা কিছু আসছে অন্যেরটায় নাক গলাতে! ”
শারমায়া ব্রু কুচকে বললো,
“কি বললি তুই?”
“তোর মাথামুণ্ডু।”
শারমায়া রেগে শোয়া থেকে উঠতেই সাফওয়ানা লাফিয়ে নেমে গেলো খাট থেকে। রুম ছেড়ে বেরিয়ে যেতে যেতে চিৎকার করে উঠলো,
“ওই মা…! তোমার পেত্নী এই সন্ধ্যারাতে আমার ঘাড় মটকাতে আসছে!”
শারমায়া দরজা লক করে দিলো। আজ আর রুমে ঠাই হবে না তার। কিছুক্ষণ পর সাফওয়ানা এসে দরজায় দুতিন ঘা মেরে পাশের ফাঁকা রুমের ফ্লোর বিছানায় চলে গেলো।
সকাল সাতটার দিকে জোভানের কল এলো। শারমায়া রিসিভ করে সালাম দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। গুড মর্নিং ডিয়ার। ”
জোভানের ঘুমঘুম কন্ঠ শুনে শারমায়া বললো,
“গুড মর্নিং। ঘুম থেকে জাগলেন মাত্র! নামাজ পড়েননি?”
“হুম, পড়েছিলাম। নামাজের পর আবার ঘুমিয়েছি। কি করছিলে?”
“এইতো, কুরআন পড়ছিলাম।”
“ওফ্ফ, ডিস্টার্ব করলাম। আচ্ছা তাহলে পড়ো।”
“পড়া শেষ। মাত্রই শেষ করে উঠলাম আর আপনার ফোন।”
“কার ফোন?”
“আপনার।”
“আপনি টা কে?”
“আপনিটা আপনি।”
“সেই আপনিটাই বা কে?”
“আমার স্যারের ছেলে।”
জোভান শব্দযোগে হেসে বললো,
“তোমার স্যারের ছেলে তোমার কি হয়?”
“আমার আব্বুর মেয়ের জামাই।”
“তোমার দুলাভাই?”
জোভানের কথার প্যাচে শারমায়া জ্বিভ কেটে বললো,
“আমার উনি।”
“উনিটা কে?”
“সাফওয়ানার দুলাভাই।”
“আমি তো সাফওয়ানার বড় ভাই।”
“তাই বলে কি এখন আমাকেও ভাই ডাকতে হবে?”
“তুমি জান ডাকলেই চলবে।”
“বিছানা ছেড়ে উঠুন, আর ফ্রেশ হয়ে নাস্তা করুন।”
“ইশ! মনে হচ্ছে আমাদের রুমে নাস্তা নিয়ে এসে ডাকলে আমায়। আচ্ছা, ঘুম থেকে উঠে আমাকে মর্নিং কিস দিয়েছো তো? আমি টের পেলাম না কেন?”
“কি বলছেন এসব!”
“আচ্ছা, আমি তো ফ্রেশ হয়েই ঘুমিয়েছিলাম। এবার তোমার হাতেই আমার নাস্তা কমপ্লিট করে দাও।”
“ঘুমিয়ে স্বপ্ন দেখছেন নাকি জেগে?”
“তোমার কি মনে হয়?”
“আমার মনে হচ্ছে ঘুমিয়ে।”
“তো জড়িয়ে ধরে ঘুমিয়ে থাকো তো।”
“আপনি সবসময় আমাকে লজ্জা দেওয়ার চেষ্টা করেন। আমি কিন্তু কল কেটে দিবো এখন।”
জোভান হেসে উঠে বললো,
“আরে পাগলি, লজ্জা দেই না। লজ্জা ভাঙানোর চেষ্টা করি। কারণ জানা আছে তো নাকি? ওইযে, তোমাকে দেখলে যে আমার ভয় হয়। এই বুঝি জ্ঞা…!”
“আবার!”
“যাও, ছেড়ে দিলাম বিছানা। সুইটহার্ট, আই উইশ খুব দ্রুত চার বছর পেরিয়ে যাক, খুব শীঘ্রই তুমি আমার নিকটে অবস্থান করো, খুব শীঘ্রই আমাদের সকালগুলো সুইট মর্নিং হয়ে উঠুক। আর খুব শীঘ্রই আমাদের ব্রাশ গুলো এলোমেলো হয়ে যাক।”
“আরও কিছু?”
“তুমি জানো, এখনো আমাদের বাথরুমে দুইটা ব্রাশ আছে। তা-ও একই রঙের। কিনেছিলাম একটা তোমার একটা আমার। কিন্তু ভুলে গেছি কোনটা তোমার আর কোনটা আমার। তাই দুইটা দিয়েই দাঁত মেজে ফেলি। ভুলে যাওয়ার কারণ হচ্ছে মনে রাখতেই চাইনি। নেক্সট টাইমও চাইবো না। অভ্যাস করে নিও আগে থেকে। তাই জানিয়ে দিলাম তোমাকে।”
“আপনি এখন ব্রাশ করছেন?”
“কেন, তুমি আমার মুখের আশেপাশে লালা দেখতে পাচ্ছো?”
“উহুম, কণ্ঠ শুনেই বুঝতে পারছি। আপনি না ফ্রেশ হয়েই আবার ঘুমিয়েছেন? তাহলে আবার ব্রাশ কেন?”
“দশ মিনিট ঘুমাই আর দশ ঘন্টা ঘুমাই না কেন, ঘুম থেকে উঠলেই মুখ ভারি হয়ে থাকে। ব্রাশ না করে কিছু খেতে ইচ্ছে করেনা।”
অতপর পানির শব্দে শারমায়া বুঝতে পারলো জোভান মুখ ধুয়ে নিচ্ছে। তাই সে চুপ করে রইলো। কয়েক সেকেন্ড পর জোভান বললো,
“লাইনে আছো নাকি চলে গেছো?”
“হুম, আছি।”
“আমার ফ্রেন্ডদের সাথে তো দেখা করলে, তোমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করবো কবে?”
“কেন, আমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করা কি প্রয়োজন?”
“আর ইউ জেলাস?”
শারমায়া চুপ করে রইলো। জোভান হেসে বললো,
“যদি জেলাস হও আই লাভ ইউর জেলাসি। আমি অবশ্যই চাই তুমি সবসময় আমার ব্যাপারে জেলাসি হও, আমিও তোমার ব্যাপারে জেলাসি হতে চাই। আর ফ্রেন্ডরা দেখা করতে চাইবেই, এটা স্বাভাবিক। কিন্তু তুমি তো এমন কিছু বলোনি আমাকে। ভেবেছি লজ্জায় বলতে পারছো না। তাই আমি নিজ থেকেই বললাম। তারা চায়নি দেখা করতে? নাকি জানেই না বিয়ের ব্যাপারে? না বরাবরের অভ্যাসে আমিই একটু বেশি ভেবে নিয়েছি?”
“জানে, চেয়েছেও দেখা করতে।”
“আমার ফ্রেন্ডদের সাথে দেখা করেছো বলে যদি চাও তোমার ফ্রেন্ডদের সাথেও আমাকে দেখা করতে হবে তাহলে আমার সমস্যা নেই। তোমার জন্য আমি অলওয়েজ ফ্রি। তবে ঢাকার ভেতর থাকতে হবে। বাইরে গেলে তো আর সম্ভব না। তাছাড়া তুমি যদি নিজে হ্যান্ডেল করতে পারো তাহলে আরও বেশি ভালো।”
শারমায়া তুলনামূলক নিচু স্বরে বললো,
“আসলে আপনার ধারণা ঠিক। তারা অনেক আগ্রহী ছিলো আপনার সাথে দেখা করার। কিন্তু আমি নিষেধ করে দিয়েছিলাম। তবে ছবি দেখিয়েছি পরবর্তীতে।”
“এটা ঠিক না। ফ্রেন্ডের খায়েশ তো মাঝে মাঝে পূরণ করাই যায়।”
“আমি বুঝতে পারিনি আপনি আসতে রাজি হবেন। তাই নিষেধ করে দিয়েছিলাম।”
“আচ্ছা, সেসব নিয়ে এখন মন খারাপ করার কিছু নেই। ইনশাআল্লাহ নেক্সট টাইম হয়ে যাবে। আরেকটা কথা, তোমার যেকোনো প্রয়োজন এবং ইচ্ছে আমার কাছে শেয়ার করতে পারো। শুধু পারো না, শেয়ার করবেই। আ’ম ইউর হাসব্যান্ড, ইউর লাইফ পার্টনার। নাউ, ইউ ক্যান ফুললি ডিপেন্ড অন মি। আলহামদুলিল্লাহ, আই হ্যাভ দ্যা এবিলিটি টু মিট ইউর নিডস এন্ড ডিজায়ারস। হুম?”
“আই উইল ট্রাই।”
“নট ট্রাই, ইউ উইল বেস্ট ট্রাই। ওকে?”
“ওকে।”
“আমার সাথে কথা বলতে বলতে এইটুকু সময়ের মধ্যে তুমি কি কাজ করলে?”
“বসে বসে কথা বলছি।”
“তুমি অনেক স্লো। তুমি জানো, এইটুকু সময়ে আমি কতকিছু করেছি? স্বপ্ন দেখলাম, তোমাকে ফিল করলাম, ঘুমের রেশ কাটালাম, ব্রাশ করলাম, ফ্রেশ হয়ে পোশাক পরে বাইরে যাওয়ার জন্য রেডি হয়ে গেলাম। অবশেষে এখন নাস্তার জন্য জননীর কাছে কিচেনে হাজির। লাইফ ফাস্ট করো ডিয়ার। স্লো মোশনে থাকলে লাইফে ঘুম ছাড়া কিছুই এনজয় করতে পারবে না। এক কাজের সাথেও অন্যকাজ করা যায়। এতে টাইম সেভ হয়, মাইন্ড ভালো থাকে, ফিটনেসও ভালো থাকে। চলো নাস্তা করে আসি। দেখি তোমার শ্বাশুড়ি আম্মা কি রান্না করেছে।”
এমনি জুলেখার কণ্ঠ ভেসে এলো,
“কার কল, শারমায়ার?”
ওদিকে জোভানের জবাব,
“না, তোমার বউমার।”
“ওহ্, আচ্ছা। আমার মেয়েটা কল করলে দিস আমাকে।”
“দেখো তো তোমার মেয়েটাই কি না।”
“না, সে তো বউমা। মেয়ে কল করলে কি আর তোর ফোনে করতো? মায়ের টানে মায়ের কাছেই করতো।”
“এখন না বললে, মেয়ে কল করলে তোমাকে দিতে! তোমার কাছে কল করলে আমার দেওয়ার সুযোগ কোথায়?”
“এটা তাকে শোনালাম।”
তাদের কথাবার্তা শুনে শারমায়ার হাসিও পাচ্ছে লজ্জাও লাগছে। জোভান মায়ের কথায় হেসে বললো,
“শারমায়া, ফোন লাউড স্পিকারে আছে। কথা বলো।”
শারমায়া সালাম দিয়ে কিছুক্ষণ কথা বললো জুলেখা ইয়াসমিনের সাথে। অতপর সে-ও কিচেনে চলে এলো। শারমিন রুটি বেলছে। জুলেখা তার মায়ের কথা জিজ্ঞেস করতেই শারমায়া মায়ের হাতে ফোন ধরিয়ে দিয়ে নিজে বেলতে লাগলো রুটি। ওদিকে চলছে দু’মায়ের খেজুরে আলাপ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here