“হালাল প্রেম” পর্ব- ১৬

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ১৬
(নূর নাফিসা)
.
.
বেশ কিছুক্ষণ কথাবার্তা বলে জুমার নামাজ পড়ে আবার বাসায় এলো জোভান, আশরাফ স্যার ও সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা। এতোক্ষণে শারমিন রান্নাবান্না শেষ করে নিয়েছেন। শারমায়া সাফওয়ানাও গোসল সেড়ে নিয়েছে। শারমায়া সেই যে রুমে প্রবেশ করেছিলো আর বের হয়নি। তারা নামাজে যাওয়ার পর একবার শুধু মাকে দেখতে পেয়ে রুম থেকেই বলেছিলো,
“মা, আগে বললে না কেন মেহমান আসবে?”
“আমি কি জানতাম! আমাকে তো এব্যাপারে কিছু বলেনি তোর বাবা।”
তারা বাসায় ফেরার পর এবারও দরজা খুললো সাফওয়ানা। তবে সর্বশেষে প্রবেশ করলো জোভান। নিজেই দরজা লাগাতে লাগাতে বললো,
“তোমার আপু কোথায়?”
“নামাজ পড়ছে।”
জোভান আবার চলে গেলো বাবার পাশে ড্রয়িংরুমে। অতপর খাওয়াদাওয়া হলো। তখন আশরাফ স্যার আবার জিজ্ঞেস করছিলো শারমায়ার কথা। জোভান জবাব দিয়েছে সে নামাজ পড়ছে। খাওয়াদাওয়ার পর জোভান সাফওয়ানাকে ইশারায় জিজ্ঞেস করলো যে, শারমায়া কোথায়? শারমায়ার অবস্থা জানাতে সাফওয়ানা ডান হাতে নিজের গলা কাটার ভঙ্গি দেখিয়ে নিঃশব্দে হেসে উঠলো এবং চলে গেলো নিজের রুমে । জোভান বুঝতে পেরেছে শারমায়ার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা তাই তাদের সামনে আসছে না। সে চুপচাপ বাবা ও শ্বশুর শ্বাশুড়ির বৈঠক থেকে উঠে বেরিয়ে এলো। এবং সরাসরি প্রবেশ করলো শারমায়ার রুমে। কিন্তু এখানে সাফওয়ানা একা। জোভানকে দেখে সাফওয়ানা ইশারা করলো শারমায়া বারান্দায়। জোভান সেদিকেই পা বাড়ালো। আর এদিকে সাফওয়ানা বেরিয়ে গেলো রুম থেকে।
হঠাৎ করেই কেউ পেছন থেকে জড়িয়ে ধরায় শারমায়া বিস্মিত হয়ে কেপে উঠেছে। কোনো কিছু বুঝার পূর্বেই জোভান বলে উঠলো,
“এতো লজ্জা কেন আপনার? কখন এসেছি খেয়াল আছে? একবার দেখা করতেও বের হলেন না কেন?”
শারমায়া কথা কি বলবে খুজেই পাচ্ছে না। সে লজ্জায় কুকড়ে যাচ্ছে! জোভান তাকে আরও জোরে চেপে ধরে বললো,
“আজ লজ্জা কোথায় যায় দেখবো আমি।”
“খে..খেয়েছেন আপনি?”
“খাবার দিয়েছো তুমি?”
“সাফওয়ানা দিয়েছে না।”
“এখানে বসে বসে সব খবর রাখছো অথচ বের হওনি একবারও। লুকিয়ে লুকিয়ে হাড়ি গিলছিলে এখানে?”
জোভানের মুখে হাড়ির কথা শুনে এবার সত্যি সত্যিই লজ্জায় জ্ঞান হারানোর ইচ্ছে করছে। কিন্তু জ্ঞান হারানোর অভ্যাস তো নেই তাই সেই হাড়ির নিমকুচি করছে শারমায়া। জোভান বললো,
“আমি এভাবে ধরে রেখেছি, ব্যাথা পাচ্ছো না তুমি?”
শারমায়া মাথা দু’দিকে নাড়াতেই জোভান তার মাথার সাথে মাথা ঠুসে বললো,
“ওকে, আমি সারাজীবন এভাবে আঁকড়ে ধরে রাখতে রাজি আছি। সইবে না তুমি?”
জোভানের কথায় কঠিন ঢোক গিলে শারমায়া সাথে সাথেই বলে উঠলো,
“আমার ব্যাথা লাগছে।”
জোভান শরীর কাপিয়ে হেসে তাকে ছেড়ে দিয়ে বারান্দার গ্রিলে হেলান দিয়ে পাশাপাশি দাঁড়ালো এবং বললো,
“এই লজ্জার শেষ আমি দেখে ছাড়বো ডিয়ার৷ আমি বুঝি না, মানুষ এতো লজ্জা পায় কিভাবে! একটা লিমিটেশন থাকা দরকার। তুমি মিটিমিটি লজ্জা পাবে যাতে আমার মাঝে মিটিমিটি করে ভালোবাসার প্রদীপ জ্বেলে ওঠে। কিন্তু তুমি এমন লজ্জার স্পর্শ মাখাও যাতে ভালোবাসা দৌড়ে পালায় আর আমাকে তার পিছু ছুটে আবার পেছনে টেনে নিয়ে আসতে হয়। এমন হলে আমার প্রেম জমবে না। আ’ম ভেরি আপসেট! যদি তুমি আমাদের বাসায় থাকতে না, তিনবেলা তোমাকে হাড়িতেই খাওয়াতাম আমি। আর দেখে নিতাম, তোমার হাড়িময় লজ্জা কোথায় পালায়।”
শারমায়া আর দাঁড়িয়ে থাকতে পারছে না। সে রুমের দিকে পা বাড়িয়ে বললো,
“এখানে কেন, রুমে এসে বসুন।”
জোভান তার হাত ধরে টেনে কাছে এনে দাঁড় করিয়ে পেছনে থাকা ফ্ল্যাট গুলোর দিকে তাকাতে তাকাতে বললো,
“এখানে থাকলে সমস্যা কি? কেউ তো দেখছে না আমাদের।”
“আগে বলেননি কেন আপনি আসবেন আজ?”
“কেন? তাহলে কি বউয়ের হাতে স্পেশাল রেসিপি উপভোগ করতে পারতাম?”
“সরাসরি উত্তর দেওয়া যায় না?”
“আমি নিজেই জানতাম না আমি আসবো, তোমাকে কখন জানাবো! বাবা এসেছে আংকেলের সাথে একটা দলিলের ব্যাপারে কথা বলতে।”
“ওহ্, স্যারের সাথে দেখা করে আসি।”
“চলে যাবো আর এতোক্ষণে মনে পড়লো স্যারের সাথে দেখা করার কথা?”
“এখনই চলে যাবেন?”
“তুমি চাইলে থেকে যাবো।”
শারমায়া দৃষ্টি নিচের দিকে রেখে মুচকি হেসে বললো,
“আপনি থাকতে চাইলে আমি কি নিষেধ করবো!”
“তা-ও বলবে না, থেকে যান… জান।”
শারমায়া দৃষ্টি নিচের দিকে রেখেই চুপচাপ দাড়িয়ে আছে। জোভান হেলান ছেড়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে শারমায়ার কানের কাছে মুখ এনে বললো,
“ভেবেছিলাম চিরকুটে প্রেম জমা করবো। তুমি তো আমার চেয়েও এগিয়ে। সরাসরি বিয়ের ইঙ্গিত! সুযোগটা আমার জন্য বড় পাওয়া ছিলো সুইটহার্ট৷ তাই এখন সিদ্ধান্ত বদলে ফেললাম৷ আমাদের প্রেম হবে প্রত্যক্ষ। মাঝে মাঝে লুকিয়ে দেখা করবো, কফি হাউজে আড্ডা দিবো, কখনো বেড়াতে যাবো আবার কখনো দুজন বাসা থেকে পালিয়ে যাবো ল্যাম্পপোস্টের আলোয় নতুন ঠিকানা তৈরির উদ্দেশ্যে। আবার নীড়ে ফিরবো কুড়ানো ভালোবাসা নিয়ে। জান, আই নিড ইউর সাপোর্ট।”
শারমায়া চুপ করে আছে বিধায় জোভান বললো,
“স্যা সামথিং…?”
শারমায়া মনে মনে বললো,
“কিভাবে ফেলবো আপনার কথা? আপনি যে প্রিয় একজন হয়ে উঠেছেন। প্রিয়জনের ইচ্ছে পূরণে ব্যাঘাত ঘটানোর সাধ্য কি আমার আছে? কভু জন্ম না হোক এমন সাধ্যের।”
আর প্রকাশ্যে শুধু একটা শব্দই উচ্চারিত হয়েছে,
“ইনশাআল্লাহ।”
জোভান তার কপালে কোমল স্পর্শ দিয়ে চলে এলো বারান্দা থেকে। পিছু পিছু শারমায়া এলো। দেখা করলো স্যারের সাথে। মিনিট পাঁচেক পরেই বেরিয়ে গেলো তারা। যাওয়ার সময় সাফওয়ানা আবার হাড়ির কথা স্মরণ করিয়ে দিলো,
“ভাইয়া, সারপ্রাইজটা আজীবন মনে থাকবে। প্রত্যাশায় আছি এমন সারপ্রাইজ বারবার পাওয়ার।”
প্রত্যুত্তরে জোভান মুচকি হেসে শারমায়ার দিকে তাকিয়েছিলো শুধু। আর শারমায়ার কড়া দৃষ্টি নিক্ষেপ হয়েছিলো সাফওয়ানার দিকে। তারা যাওয়ার পরই লাঞ্চের আগে ধারুম-ধুরুম দুইটা লাগালো সাফওয়ানাকে। যদিও বিপরীতে তিনটা ভোগ করেছে সে। তবুও দিতে পেরে কিছুটা শান্তি।

[এর বেশি লিখতে পারলাম না আজ। চেষ্টা করবো পরবর্তী পর্ব বড় করে লিখতে । যদি সম্ভব হয় তো….]

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here