“হালাল প্রেম”
পর্ব-২২
(নূর নাফিসা)
.
.
অতঃপর কথা বলতে বলতে সবাই খাওয়া শেষ করলো। সাফওয়ানা ছোট বলে তাকে বারবার রাগিয়ে দিতে বেশ মজা পাচ্ছিলো মিরাজ। তবে সাফওয়ানার সাপোর্টার ছিলো জোভান। উক্ত স্থান ত্যাগ করার সময় জোভান তাদের রিকশায় তুলে দিলো। অন্য পথে তারা গাড়ি নিয়ে নিজেদের কর্মস্থলে চলে গেলো। শারমায়া বাসায় ফিরে শুনতে পেলো আগামী শুক্রবার খালামনি তার পরিবারসহ জোভানের পরিবারকে দাওয়াত করেছে। উপলক্ষ, ভগিনীর নতুন জামাই। শুনে হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ছে সাফওয়ানা।
“বাব্বাহ! নতুন জামাই বলে দাওয়াত করে খাওয়াতে হবে! কই, আমাদের তো কখনো স্পেশালি দাওয়াত করে খাওয়ালো না খালামনি! আমি যাবো না এমন দাওয়াতে। যেখানে আমার মূল্য নেই সেখানে আমি কেন যাবো!”
তার এমন উক্তিতে শারমিন তাড়া করলেন মেয়েকে! বড়দের কথায় কথায় কেন এতো প্যাচ দিবে! দিন দিন বড্ড বেয়াদব হয়ে যাচ্ছে মেয়ে দুইটা!
রাতে জোভান কল করলে শারমায়া জিজ্ঞেস করলো,
“খালামনি না দাওয়াত করেছে আসবেন না শুক্রবার?”
“দাওয়াত করেছে যেহেতু, আসবো না?”
“আমাকে উল্টো প্রশ্ন?”
“তুমি কি বলো, সেটার উপরই নির্ভর করবে।”
“ইশ! দাওয়াত যেন আমি করছি! খালামনিকে কি জবাব দিয়েছেন?”
“আমি বলিনি কিছু। বিকেলে কল করেছিলো মায়ের কাছে। আমি তখন অফিসে।”
“আন্টি কি বলেছে আপনি শুনেননি?”
“জবাব নিয়েই ছাড়বে?”
“না বলতে চাইলে তো আর জোর করবো না।”
জোভান হেসে বললো,
“রাগ করেছো? আসবো। তবে সন্ধ্যায়। দুপুরে আরেকটা দাওয়াত আছে।”
“দুপুরে দাওয়াত খেয়ে আবার সন্ধ্যায় খেতে পারবেন?”
“কি আর করার! দাওয়াত পড়লে যেতে হবে না! আর আমি না খেতে পারলে তুমি আছো তো।”
“আচ্ছা? তবে আমারটা খাবে কে?”
“তোমারটা…? উম্মম্মম…তোমারটা খাবে আমাদের টুকটুকি।”
“টুকটুকি?”
“হুম।”
“এটা আবার কে?”
“উহুম। জিজ্ঞেস করো ‘সে আবার কে?’…”
“আচ্ছা, সে আবার কে?”
“আওয়ার ডটার।”
জোভানের কথায় লজ্জা পেয়ে শারমায়া চুপ করে আছে তাই জোভান বললো,
“কি গো? কোথায় গেলে?”
….
“টুকটুকির আম্মু?”
….
“শারমায়া?”
“আপনি এভাবে লজ্জা দিলে আমি আর কথা বলবো না।”
জোভান হাসলো অতঃপর বললো,
“ওগো আমার লজ্জাবতী, এতো লজ্জা
কেন পাও তুমি? যখন বাস্তব এসে ধরা দিবে, কোথায় পালাবে তুমি? লুকাবে তো আমার শানেই!”
“আবার!”
“ওকে, যাও। দিবো না আর লজ্জা। ওহ, ভালো কথা মনে পড়েছে। শুক্রবার দুপুরে একটা বিয়ের দাওয়াত আছে ফুল ফ্যামিলির। তুমিও তো ফ্যামিলি মেম্বার, বাবা বলছিলো তোমাকে নিয়ে তারপর যেতে। আসবো নিতে?”
“এই না! আমি কোথাও যাবো না।”
“কেন?”
“এমনি। শ্বশুর বাড়িতে প্রবেশ করিনি এখনো, আবার দাওয়াতে যাবো। কেউ জানে আমি যে আপনার বউ?”
“তুমি আমার বউ সেটা জানে না ঠিক, কিন্তু আমি বিবাহিত এটা সবাই জানে।”
“জানুক, আমি যাবো না। আমার এমনিতেই দাওয়াতে যেতে ভালো লাগে না।”
“একটা কথা বলবো? আমিও চাই না তুমি এখন যাও। বাবা বলেছিলো, সরাসরি তো আর নিষেধ করতে পারিনি, বলেছি তোমার কাছে জিজ্ঞেস করে জানাবো।”
“আমার আন্সার নেগেটিভ।”
শারমায়ার উৎফুল্লতার জবাবে জোভান বললো,
“অনেক খুশি?”
“হুম।”
“পরের সপ্তাহে সোমবার কিন্তু যেতেই হবে। মিরাজের কাজিনের বিয়ে। ফুল ফ্যামিলি ইনভাইটেড। তোমার আর আমার আবার স্পেশাল ইনভাইটেশন।”
“মিরাজ ভাইয়ার কাজিনের বিয়ে! এটাও তো ইম্পর্ট্যান্ট না। মিরাজ ভাইয়ার বিয়েতে যাবো, ইনশাআল্লাহ।”
“উহুম, এটাও ইম্পর্ট্যান্ট। তাদের জয়েন ফ্যামিলি তো। সো, যেতে হবে। আমিও চাই, তুমি যাবে।”
“ওকে, পরেরটা পরে।”
“সাফওয়ানাকেও সাথে নিবো।”
“বললাম তো, পরেরটা পরে।”
“ওকে। ভিডিও কল দেই?”
“উহুম।”
“কেন?”
“শ্বশুর বাড়ি সরাসরি দেখবো বলে।”
জোভান হেসে উঠে বললো,
“আমি এখন রুমে আছি। আর আমাদের রুমে দেখার মতো তেমন কিছুই নেই। সো, কিছু পুরনো হবে না।”
“যেহেতু দেখার মতো কিছু নেই তাহলে আর ভিডিও কল দিয়ে লাভ কি?”
“আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে না?”
“সরাসরি দেখতে ভালো লাগে।”
“চলে আসতে ইচ্ছে করছে।”
“বলবো না আসতে।”
“হাহাহা… আমাদের রুমে জানতে চাও কি আছে? একটা খাট, একটা আলমারি আর আপুর বিয়ের পর আপুর ড্রেসিং টেবিলটা এখানে শিফট করেছি। তোমার আর কি প্রয়োজন, বলো তো?”
“কেন, এখন নিয়ে আসবেন?”
“এখন তো আর নিয়ে আসবো না, তবে তুমি এখানে আসার আগেই আনবো ইনশাআল্লাহ। ইনকাম সোর্স আরেকটু ইনক্রেস হোক।”
“ইশ! কত প্ল্যান! সারাদিন বসে বসে এসব প্ল্যানই করেন বুঝি! ঘুমাবেন না? রাত তো অনেক হয়েছে।”
“তোমার ঘুমও পেয়েছে অনেক।”
“পেয়েছেই তো।”
“স্বপ্নে এসো আবার। সুইট নাইট।”
“ইনশাআল্লাহ।”
শারমায়া ফোন রেখে পাশে তাকাতেই দেখলো সাফওয়ানা ব্রু কুচকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে। শারমায়া বললো,
“ঘুমাসনি এখনো!”
“কানের পাশে মাছির মতো ভ্যান ভ্যান করলে ঘুম আসবে কোথাকে!”
“ওমা! আপনার ঘুম আবার এতো পাতলা হলো কবে থেকে! আপনাকে তো শেয়াল কুকুর টেনেহিঁচড়ে নর্দমায় ফেলে দিলেও ঘুম ভাঙবে না!”
“শেয়াল কুকুর লাগে না! শারমায়া সাদিয়া নামের ডাইনী বুড়িটার গদগদই যথেষ্ট! ইদানীং এত্তো বাচাল হইছো! তোমার এই গদগদের জ্বালায় ভাইয়া পাগল হয়ে সংসার ত্যাগ করবে, দেখে নিও।”
“ওরে আমার জ্যোতিষী রে! কত পয়সা দান করবো আপনার এই জ্যোতিষ শাস্ত্রের কারণে?”
“কালী পেত্নী! তার পয়সা নেওয়ার জন্য আমি বসে আছি!”
“আমি কালী! হিহিহি… আমি কালী হলে তুই কি? কোকিলা…!”
“আমি কিন্তু এখন আব্বুকে ডেকে বিচার দিবো। প্রত্যেকদিন তুমি আমাকে ডিস্টার্ব করো।”
“এতো সমস্যা হলে রুম ছেড়ে দে।”
“তুই দে।”
“দাঁড়া, কালকেই আব্বুর কাছে বলে লাত্থি মেরে ওই রুমে পাঠাবো।”
“দেখবো নে, কে কাকে পাঠায়!”
বৃহস্পতিবার কোচিং থেকে শারমায়া খালামনির বাসায় চলে গেছে। শনি কিংবা রবিবার কোচিং করে আবার বাড়ি ফিরবে। এদিকে সাফওয়ানা জানতে পেরে তুমুল কাণ্ড! তাকে জানিয়ে যায়নি বিধায় সে রাতেই একা একা বেরিয়ে যায় খালামনির বাসার উদ্দেশ্যে। সে জানেই এটা তার মা ও বোনের চালাকি! তাই মায়ের সাথে রাগারাগি করে রাতে ভাত খেতে চায় না। আগামী সপ্তাহে তার স্কুলে পরীক্ষা। সেখানে গেলে তার পড়াশোনা হবে না তাই শারমিন ইচ্ছে করেই যেতে দেয়নি তাকে। সাখাওয়াত সাহেব অনেক চেষ্টায় মানিয়ে খায়িয়ে নিয়েছে তাকে। তবে সে সিদ্ধান্ত নিয়েছে কাল যাবে না খালামনির বাড়িতে।
সকালে মায়ের কাছে ঘটনা জানতে পেরে শারমায়া জোভানকে ইনফর্ম করে দিয়েছে যাতে সাফওয়ানাকে আসতে বলে। জোভান বললে সাফওয়ানা আসবে সে নিশ্চিত। তাছাড়া খালামনি, সুষনা আপু, ভাবি, ভাইয়া কল করে কথা বলতে চাইলো সাফওয়ানার সাথে। কিন্তু কারো সাথে কথা ই বললো না সে! সন্ধ্যায় জোভান আসার পথে সাথে নিয়ে এসেছে তাকে। সাফওয়ানার জন্য তার বাবামাকে ও সন্ধ্যায়ই আসতে হলো। এবাড়িতে এসে সে গোমড়ামুখুই হয়ে আছে। শারমায়া আগুনে ঘি ঢালতে বললো,
“তুই না বলেছিলি আসবি না। তাহলে আবার এলি যে!”
সাফওয়ানা রেগে জবাব দিলো,
“শুধুমাত্র ভাইয়া বলেছে বিধায় এসেছি। নয়তো সাফওয়ানার ছায়াও দেখতা না!”
“ওবাবারে!”
সাফওয়ানাকে এভাবে রাগিয়ে দেওয়ার কারণে খালামনি শারমায়াকে মাইর দেখালো। আর সাফওয়ানার রাগ ভাঙাতে সবার নানান সমাদর। শারমায়া আশরাফ স্যার ও জুলেখা ইয়াসমিনকে দেখে ঘোমটা মাথায় টেনে চুপসে গেছে। জোভানের সাথে সে তেমন কথা বলেনি। সবার উপস্থিতিতে জোভানও তার সাথে কথা বলেনি। এমনিতে যেমনতেমন, অন্যদের সামনে তারা প্রয়োজন ছাড়া কথা বলে না একে অপরের সাথে। শারমায়ার মুখে জুলেখা ইয়াসমিনকে “আন্টি” ডাকতে শুনে শারমিন তাকে সুষনার রুমে এনে বললো,
“তুই তোর শ্বাশুড়িকে আন্টি ডাকিস!”
“তো কি ডাকবো!”
“একটা মাইর দিবো ফাজিল মেয়ে! মা ডাকবি।”
“ইশ! পরে চেষ্টা করবো। এখন তো আর ওবাড়িতে থাকছি না তাই কেমন যেনো লাগে।”
“কেমন লাগে মানে! সুষনা ও তো বাবার বাড়িতে থাকছে, তাই বলে আন্টি ডাকে!”
“ইশ! এতো রিয়েক্ট করছো কেন! তোমাদের জামাই ও তো তোমাদের আংকেল আন্টিই ডাকে!”
“ডাকুক। পরে ঠিক হয়ে যাবে।”
“তার বেলায় পরে হলে আমার বেলায় এতো তাড়া কেন!”
“কোনো কথা না। যা বলছি তা করবি।”
শারমিন চলে গেলো। এদিকে শারমায়া বিরক্ত হয়ে বললো,
“ধ্যাৎ! শ্বশুরকে স্যার ডাকি আর শ্বাশুড়িকে মা ডাকবো! কেমন লাগে এটা!”
তবে মায়ের কথা ফেলেনি। এরপর থেকে যতবার কথা বললো শ্বাশুড়িকে মা বলেই সম্বোধন করলো। জুলেখা ইয়াসমিনও যেন একটু বেশিই খুশি হলেন। আর জোভান তো বরাবরই হাসিখুশি। বেশ হৈ-হুল্লোড়েই কেটে গেলো সন্ধ্যা। শারমায়ার পরিবার আজ থেকে গেলো। রাতে জোভান চলে যাওয়ার কিছুক্ষণ পূর্বে সুযোগ বুঝে শারমায়ার কানে কানে বলে গেলো,
“আগামীকাল রেডি থেকো। কোচিং থেকে কিডন্যাপ করবো তোমায়।”