“হালাল প্রেম” পর্ব-২৩

“হালাল প্রেম”
পর্ব-২৩
(নূর নাফিসা)
.
.
সাফওয়ানার পরীক্ষা আছে তাই সকালে নাস্তা করেই খালামনির বাসা থেকে বাবা-মায়ের সাথে চলে এলো সাফওয়ানা। শারমায়াকে তার মা বলে গেলো কোচিং করে যেন আজই বাসায় চলে যায়। সাফওয়ানার পড়াশোনা দেখিয়ে দিতে হবে তাকেই। শারমায়া খালামনির বাসা থেকে কোচিং-এ গেলো। যদিও আজ যাওয়ার ইচ্ছে ছিলো না, তবে যেতে হলো জোভানের জন্য।
কোচিং শেষে বের হতেই ফোনটা বেজে উঠলো। জোভানের কল! শারমায়া রিসিভ করে এদিক সেদিক তাকাতেই পূর্বদিকে গাড়ি দেখতে পেলো। তাই সে কল কেটে দিলো। এগিয়ে গাড়ির কাছে আসতেই জোভান বামপাশের দরজা খুলে দিলো।
“আসসালামু আলাইকুম।”
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। একা বের হলে যে! ফ্রেন্ডরা কেউ আসেনি?”
“এসেছে এবং আগে বেরিয়ে গেছে। আমি তো কিডন্যাপড হবো তাই লেট করে বের হলাম।”
জোভান হেসে বললো,
“আচ্ছা?”
“হুম। একা এসেছেন কিডন্যাপ করতে?”
“বউকে কিডন্যাপ করতে আবার দলবলের প্রয়োজন আছে নাকি! এসো।”
“কোথায় যাবো এখন?”
“যেদিকে নিয়ে যাই।”
“লেট হবে অনেক?”
“ভয় পাচ্ছো কেন?”
“ভয় না। আম্মু তো বাসায় যেতে বলেছে। বেশি দেরি হলে আবার টেনশন করবে।”
“সেসব ম্যানেজ করার জন্য তো আমি আছিই। এসো।”
শারমায়া গাড়িতে উঠে বসলো। জোভান অলটাইম কেকের প্যাকেট এগিয়ে দিলো শারমায়ার দিকে। অতঃপর ড্রাইভিং করতে করতে বললো,
“কোচিং-এ আসার পূর্বে লাঞ্চ করে এসেছো?”
“হুম। আপনি লাঞ্চ করেছেন?”
“হ্যাঁ।”
“আজ অফিসে যান নি?”
“হুম।”
“এতো তারাতাড়ি চলে এলেন যে?”
“তোমাকে কিডন্যাপ করতে।”
শারমায়া বিড়বিড় করে বললো,
“অফিস ফাঁকিবাজ।”
জোভান মুচকি হেসে বললো,
“ফাঁকিবাজ না গো। এখন তো আমারই সময়। নতুন বিয়ে করেছি, বউকে সময় দিতে হবে না! কিছুদিন পর যখন তারা একে একে বিয়ে করবে তখন আবার তারা ছুটি কাটাবে আর আমাকে অফিসে বেশি সময় দিতে হবে। এটা খাচ্ছো না কেন? গাড়ি থামিয়ে অন্যকিছু নিবো?”
“উহুম।”
শারমায়া প্যাকেট খুলে কেক নিজেও খেলো জোভানকেও খায়িয়ে দিলো। জোভান তাকে শপিংয়ে নিয়ে এসেছে তা-ও আবার শাড়ি কিনে দেওয়ার জন্য! যা দেখছে সবই সুন্দর কিন্তু শারমায়া একটাও পছন্দ করতে পারছে না কারণ, সে শাড়ি পরে না যেহেতু কিনে কি লাভ! তবুও জোভান কিনে দিবে আগামীকাল প্রোগ্রামে পরে যাওয়ার জন্য। নিজে পছন্দ করতে পারছে না বিধায় জোভানকেই পছন্দ করতে বললো। তাই জোভানই পছন্দ করে একটা ব্লু গোল্ডেন মিক্সড শাড়ি কিনে দিলো। অন্য কোয়ালিটির মধ্যে আরেকটা নিতে চেয়েছিলো দুইদিনের পোগ্রামের জন্য কিন্তু শারমায়া তাকে কিছুতেই কিনতে দিলো না। এই একটা পরতে পারবে কি না তারই নিশ্চয়তা নেই আবার দুইটা! পরবর্তী প্রোগ্রামের জন্য জোভান অন্য ড্রেস কিনতে বললো কিন্তু শারমায়া তা-ও কিনলো না। রেডিমেড এর মধ্যে পছন্দ হচ্ছে না আর সালোয়ারকামিজ সেট নিতে চাইলে একদিনে তৈরি করা সম্ভব না। তার যথেষ্ট ড্রেস আছে সেগুলো থেকেই পরবে।
অতঃপর তারা রেস্টুরেন্টে খেয়ে বাড়ির উদ্দেশ্যে রওনা হলো। সবসময় রেস্টুরেন্টে খাওয়াদাওয়া শারমায়ার মোটেও পছন্দ না। আজ এমনিতেই জোভানের অনেক অফারে শুধু না আর না ই জবাব দিয়েছে। তাই ইচ্ছে না থাকলেও রেস্টুরেন্টে খাওয়ার ব্যাপারে আর নিষেধ করলো না। বের হওয়ার সময় শারমায়া বললো,
“আম্মু দেখি একবারও কল দিলো না! আপনি জানিয়েছেন কিছু?”
“হুম, দুপুরে জানিয়েছি আন্টিকে।”
“এজন্যই তো বলি, এখনো কল দেয় না কেন!”
জোভান তাকে বাসার সামনে নামিয়ে দিয়ে বললো,
“শারমায়া, আজ আন্টির সাথে দেখা না করে গেলে হবে না? আজ তো তোমাকে বাসা থেকে নিয়ে যাইনি তাছাড়া কাল তো আসছি ই।”
“আপনার ইচ্ছা।”
“রাগ করেছো? দেখো, আজ ড্রেসাপও তেমন ভালো না। সেই সকালে বাসা থেকে বেরিয়েছি। সারাদিন অফিস করে আবার শপিংয়ে ঘুরাফেরা, অনেকটা নোংরা লাগছে নিজেকে। কালতো আসবোই।”
“ওকে, সাবধানে যেয়েন। আর বাসায় পৌঁছে কল দিবেন।”
শারমায়ার ইতিবাচক মনোভাব দেখে ক্লান্ত মুখে হাসি ফুটিয়ে জোভান বললো,
“ওকে। তুমি ঘরে প্রবেশ করে সবার আগে তোমার রুমের জানালার পাশে আসবে। তারপর আমি যাবো।”
শারমায়া মুচকি হেসে চলে গেলো। ফ্ল্যাটে দরজা খুললো সাফওয়ানা। তার হাতে প্যাকেট দেখে প্যাকেট টেনে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
“এগুলো কি, দেখি?”
শারমায়া তার জবাব না দিয়ে প্যাকেট ছেড়ে আগে রুমে এসে জানালার পাশে এলো। তার পরপরই জোভানের গাড়ি চলতে দেখা গেলো। জোভানের পাগলামোতে শারমায়া মৃদু হাসলো। ফ্রেশ হয়ে সে রুম থেকে বের হতেই সাফওয়ানা বললো,
“শাড়িটা অনেক সুন্দর। ভাইয়া গিফট করেছে?”
“হুম।”
শারমিন বললো,
“জোভান আসেনি?”
“উহুম। আমাকে নামিয়ে দিয়ে চলে গেছে।”
.
বেড়াতে যাবে তাই আজ কোচিং-এ যাবে না শারমায়া। সাফওয়ানা চলে গেছে স্কুলে পরীক্ষা দিতে। কয়েকদিন যাবত আসবাবপত্র ধোয়ামোছা হয় না তাই সময় পেয়ে আজ কাজে হাত লাগালো শারমায়া। কাজ করতে করতে সে এক পর্যায়ে ভুলেই গেছে আজ হলুদ প্রোগ্রামে যাওয়ার কথা। সে কাজ সেড়ে গোসল করে দুপুরে ঘুমিয়ে পড়েছে।
চোখ খুলে পাশের বালিশে জোভানকে দেখতে পেয়ে ঘুম ঘুম চোখে কয়েকবার পলক ফেললো শারমায়া। অতঃপর ঠোঁটে মুচকি হাসি ফুটিয়ে ঘুমঘুম কণ্ঠে বললো,
“এখনো যাওনি? সকাল হয়ে গেছে তো।”
প্রত্যুত্তরে মুচকি হাসলো জোভান। কয়েক সেকেন্ড হাসিমুখেই নিষ্পলক তাকিয়ে থেকে শারমায়ার দিকে ঝুঁকে কপালে কোমল স্পর্শ দিয়ে বললো,
“সকাল নয়, বিকাল হয়েছে। গুড আফটারনুন।”
মুহূর্তেই শারমায়ার মুখ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে! সে জোভানকে ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে ধরফরিয়ে উঠে বিছানা ত্যাগ করলো এবং সোজা বাথরুমে চলে গেলো! জোভান হাসতে হাসতে আবার বিছানায় দেহ এলিয়ে দিলো। শারমায়ার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা! জোভান কখন এলো আর সে কি বললো এটা! আজ যে তার আসার কথা সেটা তো মনেই নেই! কি লজ্জাটাই না পেল! এখন তার সামনে যাবে কিভাবে!
লজ্জা কাটাতে কয়েক মিনিট অযথা বাথরুমে কাটালো সে। অতঃপর ফ্রেশ হয়ে মনে যথেষ্ট সাহস নিয়ে রুমে এলো এবং সোজা চলে গেলো ওয়ারড্রবের কাছে। জোভান মাথার নিচে দুহাত রেখে লম্বালম্বিভাবে শুয়ে আছে। শারমায়াকে দেখে বললো,
“সুইটহার্ট, আমি কি প্রতিদিনই তোমার স্বপ্নে আসি?”
শারমায়া লজ্জায় মুখ চেপে হেসে বললো,
“জানি না।”
“তুমি স্বপ্নে যে আমাকে ‘তুমি’ বলে সম্বোধন করো, আজ না এলে তো জানতেই পারতাম না!”
শারমায়া লজ্জায় দাতে দাত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেললো!

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here