“হালাল প্রেম” পর্ব-২৪

“হালাল প্রেম”
পর্ব-২৪
(নূর নাফিসা)
.
.
শারমায়া লজ্জায় দাঁতে দাঁত চেপে চোখ বন্ধ করে ফেললো। অতঃপর দীর্ঘশ্বাস নিয়ে দেয়াল ঘড়ির দিকে তাকালো। আসরের নামাজের সময় প্রায় পেরিয়ে যাচ্ছে। সে জোভানের দিকে তাকিয়ে বললো,
“নামাজ পড়েছেন?”
“হুম। নামাজ পড়েই রওনা দিয়েছি।”
“আরেকটু অপেক্ষা করুন। আমি নামাজ পড়ে রেডি হই?”
“ওকে।”
শারমায়া নামাজ পড়ার জন্য মায়ের রুমে যাচ্ছে জোভানও পিছু পিছু বেরিয়ে এলো রুম থেকে। ড্রয়িংরুমে সাফওয়ানা আছে। শারমিন মাত্রই নামাজ পড়ে জায়নামাজ রাখছে। তিনি রুম থেকে বের হতেই জোভানকে সালাম দিতে শুনে শারমায়া বুঝতে পারলো বেশিক্ষণ হয়নি জোভান এসেছে। তার মা নামাজ পড়ছিলো বলেই জোভান তার রুমে গিয়েছে। আর নিশ্চয়ই সাফওয়ানা জানিয়েছে সে ঘুমাচ্ছে! এই স্টুপিডটার জন্যই বারবার তাকে লজ্জায় পড়তে হয়! শারমায়া ওযু করে নামাজ আদায় করে নিলো। নিজের রুমে এসে শাড়ির প্যাকেটটা নিয়ে ড্রয়িংরুমে এসে দেখলো সাফওয়ানা এইমাত্র গরম গরম নুডলস নিয়ে এসেছে এবং জোভানের হাতে প্লেট দিচ্ছে। সাথে জোভানের নিয়ে আসা মিষ্টিও দিয়েছে। জোভান প্লেটে ইশারা করে শারমায়াকে ডাকলো খাওয়ার জন্য। শারমায়া মাথা নেড়ে বললো,
“আপনি খান। আমি একটু পাশের ফ্ল্যাটে যাবো।”
“কেন?”
“আপুর কাছে, রেডি হতে।”
“শুনে যাও।”
“আমি এখন খাবো না।”
“শুনে যাও অন্তত।”
শারমায়া এগিয়ে এলে জোভান বসতে বললো। শারমায়া বসলে জোভান বললো,
“বেশি সাজবে না।”
“আমি সাজি ই না। শাড়ি পড়বো আর হিজাব পড়বো।”
“না সাজবে, কিন্তু হালকা সাজবে। মানে বেশি সাজতে নিষেধ করলাম। যেদিন আমাদের বাসায় যাবে সেদিন বেশি সাজবে। বউ সাজ। এখন বউ সাজলে তো পরে সেজে আর মজা পাবে না। ঠিক না সাফওয়ানা?”
সাফওয়ানা খেতে খেতে মৃদু হাসলো শুধু। শারমায়া বললো,
“হয়েছে না বলা? যাই তাহলে…”
“রাগ করেছো?”
এই সামান্য বিষয়েও রাগের কথা জানতে চাওয়ায় শারমায়া বললো,
“আপনি আসলেই একটা…”
“কি?”
“থাক, বললাম না।”
“বলতে হবে না। অল্প খাও।”
বলতে বলতে জোভান নুডলস তার মুখের সামনে ধরলো। শারমায়া বললো,
“আপনি ডাকার মূল উদ্দেশ্যই এটা। আমি জানি তো।”
জোভান হেসে বললো,
“না, খাওয়ার জন্য না। সেটা বলার জন্যই ডেকেছি। খাবারের সামনে এসে খালি মুখে চলে যাবে এটাও তো ঠিক না। নাও।”
শারমায়া পরপর দুচামচ নুডলস মুখে নিয়ে তারপর চলে গেলো ফারিয়ার কাছে। যদিও গিয়েছিলো শুধু শাড়ি পড়তে, ফারিয়া পরিপূর্ণভাবে তৈরি করে দিলো তাকে। সাজ বলতে শাড়ি, হিজাব ও চুড়ি পড়লো। কসমেটিকস ফেস পাউডার ও লিপস্টিক ইউজ করলো শুধু। সাফওয়ানার পরীক্ষা হওয়ায় যেতে দিলো না শারমিন। জোভান এখানে এসেই বলেছিলো রেডি হতে কিন্তু আগামীকাল গণিত পরীক্ষা, প্রাক্টিস না করলে চলবে না৷ বাসায় ফিরতে ফিরতে রাত হবে, এসে পড়তেও পারবে না তারউপর কাল পরীক্ষা হওয়াতে কালও যেতে পারবে না। সাফওয়ানারও যাওয়ার ইচ্ছে নেই, জোভানও পরীক্ষার চেয়ে প্রোগ্রামকে প্রাধান্য দিলো না। মাগরিবের পর তারা দুজন বেরিয়ে এলো। শারমায়া তৈরি হতে হতে জোভান মসজিদে নামাজ আদায় করে নিয়েছে। বের হওয়ার সময় শারমায়া নিচু স্বরে জিজ্ঞেস করেছিলো,
“সাজ ঠিক আছে?”
জোভান মুচকি হেসে পলক ফেলেছিলো শুধু। আজ জোভানদের সাদা গাড়িতেই যাচ্ছে তারা। জোভান বললো,
“ডিয়ার, দেখেছো? শাড়িটা কিন্তু বেশ মানিয়েছে তোমাকে।”
“থ্যাংক ইউ।”
জোভান তার দিকে একবার তাকিয়ে আবার ড্রাইভিংয়ে মনযোগ দিয়ে বললো,
“আমার তুমির সৌন্দর্য আমি প্রকাশ করেছি এতে থ্যাংকস বলার কি আছে? আমার ক্ষেত্রে এই ওয়ার্ডটাও আর ইউজ করবে না। স্যরি এন্ড থ্যাংকস তোমার কাছে কখনোই প্রত্যাশা করি না। এমন কিছু প্রকাশ করতে হলে ভিন্নভাবে প্রকাশ করবে। হুম?”
“কেমন ভিন্ন? হিন্স দিয়ে দিন।”
“হিন্স! হিন্স তো ডিরেক্টলি দিবো না। আমাকে ফলো করবে।”
“ওকে।”
এদিকে একটু পরপর তার বন্ধুরা কল করেই যাচ্ছে। এখনও কল করলো মিরাজ। জোভান রিসিভ করে জানাতে লাগলো তারা আসছে আর শারমায়া ভাবতে লাগলো থ্যাংকসকে ভিন্নভাবে কিভাবে প্রকাশ করা যায়! জোভান কল কাটতেই শারমায়া বললো,
“আপনাকে ব্লু পাঞ্জাবিতে অনেক ভালো লাগছে।”
“সত্যি?”
“মিথ্যে না।”
জোভান মুচকি হেসে বাম হাতটা বাড়িয়ে শারমায়ার হাত ধরে বললো,
“ভালোবাসি।”
শারমায়া হাতের দিকে তাকিয়ে লজ্জায় মুখ চেপে হাসলো এবং মনে মনে বললো,
“এই তাহলে আপনার হিন্স! আমি তো জীবনেও বলতে পারবো না এভাবে! পাজি লোক একটা।”
জোভান তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“পেয়েছো কোনো হিন্স?”
শারমায়া লজ্জায় বাইরে তাকিয়ে বললো,
“দুইহাতে ড্রাইভ করুন। রিস্ক নেওয়ার প্রয়োজন নেই।”
জোভান শরীর কাপিয়ে হেসে হাত সরিয়ে নিলো। বিয়ে বাড়িতে আসতেই মানুষজন ঝাক বেধে গেলো জোভানের বউ দেখার জন্য। প্রথমে তার বন্ধুবান্ধবদের সাথে পরিচিত হলো শারমায়া, অতঃপর মিরাজের বাবা-মা, অতঃপর একদল মহিলা অতঃপর একদল বালিকা! শারমায়া এমনিতেই নার্ভাস ছিলো, এখন অস্থির হয়ে যাচ্ছে! তারা যেন তাকে দেখার জন্যই অপেক্ষা করছিলো। জোভান কি এমন একজন, যার বউ দেখার জন্য সবাই অস্থির হয়ে পড়েছে! মেয়েগুলো এসে তো বিপত্তিই ঘটিয়ে দিলো। একের পর এক জিজ্ঞাসাই জবাব দিতে দিতে প্রায় ক্লান্ত শারমায়া। দেখতে দেখতে জোভান নিজেই অস্থির হয়ে গেছে! সে কোনমতে শারমায়াকে তাদের কাছ থেকে মুক্ত করে নিতে পেরেছে। জোভান ফিসফিসিয়ে বললো,
“ডিয়ার, প্রেশার বেশি পড়ে গেছে তাই না?”
শারমায়া হেসে উঠলো এবং বললো,
“আপনি কোন সেলিব্রিটি, সেটা বলুন আগে।”
জোভান জিভ কেটে মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে বললো,
“আল্লাহ! কোনো সেলিব্রিটি ফেলিব্রিটি কিছু না। সেলিব্রিটি হলে তুমি জানতে না!”
“কোনো সেলিব্রিটি না হলে এমন কিছু ঘটার সম্ভাবনা আছে বলে মনে হচ্ছে না।”
“তুমি আমাকে সন্দেহ করছো? সবাই একটু বেশি আদর করে তো তাই এমন। যখন স্কুলে পড়তাম টিচাররা আমার গাল আর নাক টানতে টানতে লাল বানিয়ে ফেলতো। দেখাদেখি সিনিয়র আপুরাও এগুলাই করতো। আর কোনো আত্মীয়ের বাসায় গেলে সাথে সাথেই কোলে নিয়ে ফেলতো। বাবা-মা, আপু ও আপন চাচা-মামাদের কোল ছাড়া অন্য কারো কোলে উঠতে আমার লজ্জা লাগতো। যখন একটু বড় হলাম, তখন সেজন্য বেড়াতে যাওয়াই ছেড়ে দিয়েছি।”
শারমায়া হেসে উঠলো। হঠাৎই দুটি মেয়ে এলো এবং এদের মধ্যে একজন বললো,
“ওরে বাবা! কি খুশি রে! এটাই কি আমার সতীন?”
শারমায়া অবাক আর জোভান হতবাক! পাশের মেয়েটা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো। জোভান শারমায়ার কাধ হাত রেখে মেয়েটির উদ্দেশ্যে বললো,
“না সিনথিয়া, এটা আমার বউ।”
সিনথিয়া জোভানের হাতে খোচা মেরে বললো,
“অই, তুমি আমার জামাই জানো না সেটা? আর সে তোমার বউ, মানে আমার সতীন। যাক আমার কিন্তু সতীনকে পছন্দ হয়েছে।”
অতঃপর শারমায়ার গাল টেনে বললো,
“অনেক কিউট। বাসা থেকে আসছি একটু। আজ সারারাত গল্প করবো সতীনের সাথে।”
মেয়ে দুটি চলে যেতেই এক মেয়ে হাতে ডালা নিয়ে যেতে যেতে বললো,
“ও মাই হিরো, বউকে কি সাথে নিয়েই ঘুরবা? ছাড়ো এবার আমরা একটু প্রেম কিচ্ছা শুনি। তুমিও তোমার ক্রাশগুলারে একটু আধটু সময় দাও। সবাই কিন্তু আছে আজকে।”
মেয়েটি শারমায়ার হাত ধরে টেনে বললো,
“ভাবি এসো স্নিগ্ধা আপুর কাছে।”
শারমায়া কিছু বলার আগে জোভান বললো,
“যাও তুমি, আমরা আসছি একটু পর।”
“আরে, স্নিগ্ধা আপু কখন থেকে অপেক্ষায় আছে তোমার বউ দেখবো! এসো।”
“স্নিগ্ধার বিয়েতে স্নিগ্ধার সাথে দেখা না করে তো আর যাবো না। আসছি আমরা, যাও।”
“তারাতাড়ি এসো।”
মেয়েটি চলে যেতেই শারমায়া পাঞ্জাবির উপর দিয়ে জোভানের পেটে চিমটি কেটে বললো,
“কয়টা বিয়ে করেছেন আপনি?”
জোভান পেটে হাত বুলিয়ে বললো,
“অনলি ওয়ান। তুমিই ফার্স্ট তুমিই লাস্ট।”
“হ্যাঁ, তা তো দেখতেই পাচ্ছি! ক্রাশেরও অভাব নেই, হিরোইনেরও অভাব নেই আবার বউয়েরও অভাব নেই।”
জোভান তার কাছ ঘেঁষে পিঠে হাত রেখে বললো,
“এগুলো বলে না, জান। তারা দুষ্টুমি করেছে, তুমি রাগ করেছো তাদের কথায়?”
“আমি কেন রাগ করতে যাবো অযথা!”
“এই, তুমি সিরিয়াসলি নিচ্ছো কেন? সত্যি, কারো সাথে কোনো এফেয়ার টেফেয়ার কিছু ছিলো না কখনো। মিরাজের কাজিনগুলো অনেক দুষ্ট। দেখো না, মিরাজও কেমন দুষ্ট। সিনথিয়া একটু বেশিই দুষ্ট। আর এই মেয়েটা তো একটা পিচ্চি, মাত্র ক্লাস নাইনে পড়ে।”
“লাইনে তো পড়েই গেছে তাহলে।”
“এই, আমার উপর তোমার সন্দেহ হচ্ছে?”
শারমায়া তার কোনো জবাব দিলো না। তাই জোভান বললো,
“শারমায়া, বিশ্বাস হচ্ছে না আমার কথা?”
শারমায়া এবারও কোনো জবাব দিলো না। দৃষ্টি ঘুরিয়ে প্রোগ্রামের ডেকোরেশন দেখতে লাগলো। জোভান ফোন বের করে মিরাজকে কল করলো,
“তুই কোথায় রে?”
“এখানেই।”
“এখানেই কোথায়?”
“বক্সের পেছনে।”
“বক্সের পেছনে কি করছিস? সামনে আয়।”
“একটু ডিস্টার্ব আছে, ঠিক করে আসি।”
“ওটা রাখ। আগে আমার কাজ করে যা। হারি আপ। দেরি করলে কপাল খারাপ তোর।”
মিরাজ স্টেজে সাউন্ড বক্সের পেছন থেকে বেরিয়ে দৌড়ে এসে বললো,
“কি কাজ, তারাতাড়ি বল।”
“তোর কাজিনগুলো এতো বদ কেন?”
“কি হইছে সেটা বল।”
“সিনথিয়া এসে উল্টাপাল্টা শুনিয়ে গেছে। এখন তুই সত্যটা বলে যা তোর ভাবিকে আমার কার সাথে এফেয়ার আছে?”
“ওহ্, এই ব্যাপার! ভাবি শুনেন, সিনথিয়া, মিমি, মুনিয়া, জুথি, রাফিকাসহ আরও অনেকের সাথে জোভানের এফেয়ার আছে।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here