“হালাল প্রেম” পর্ব- ৩৮

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৩৮
(নূর নাফিসা)
.
.
“ভাইয়ার কথাই রাখলাম। করিনি ডাক্তার মেয়ে বিয়ে। তবে বউ ডাক্তার হওয়ার সম্ভাবনা আছে।”
জেভা হাসলো তার কথায়৷ শারমায়া তার দিকে তাকালো শুধু। অসুস্থ থাকা সত্ত্বেও লোকটার দুষ্টুমির অন্ত নেই। শারমায়া বললো,
“হাটুন দেখি একটু।”
“তোমাকে এগিয়ে দিতে যাবো?”
“এগিয়ে দিতে বলিনি। এখানেই হাটবেন।”
জোভান বেড থেকে নেমে দু-তিন কদম এগিয়ে আবার বেডের কাছে এলো। হাটতে পারছে ঠিকই কিন্তু বাম পায়ে পুরোপুরি ভর ফেলতে পারছে না। শারমায়া রাগান্বিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। জোভান বললো,
“কি হয়েছে? আমি মিথ্যে বলিনি। আপু এক্স-রে করিয়েছে। জিজ্ঞেস করো আপুকেই।”
“তাহলে এভাবে হাটছেন কেন?”
“পা একটু মচকে গিয়েছিলো, সেটার ব্যাথাটা রয়ে গেছে। আবার কাটা জায়গায়ও তো ব্যাথা আছে।”
জেভা বললো,
“না, আল্লাহর রহমতে পায়ে তেমন কিছু হয়নি।”
শারমায়া জেভার কথা বিশ্বাস করলো। জোভানের দৃষ্টি শারমায়ার হাতের দিকে পড়তেই জোভান তার হাত ধরে কাছে এনে দেখলো এবং বললো,
“হাতে কি হয়েছে?”
“সব আপনার দোষ।”
কথার মর্মার্থ বুঝতে না পেরে জোভান অবুঝের মতো তাকালো তার দিকে। জেভা বললো,
“ঠোসা পড়লো কিভাবে?”
“ভাতের মার পরে গেছে, আপু।”
“কতক্ষণ আগে?”
“এখানে আসার পূর্বেই।”
“এতোক্ষণ যে আমার সাথে বসে রইলে বললে না কেন? তখন অয়েন্টমেন্ট লাগিয়ে দিলে কি ঠোসা পড়তো?”
জেভা জোভানের বেডের পাশে থাকা ট্রে থেকে একটা অয়েন্টমেন্ট নিয়ে লাগিয়ে দিচ্ছে। জোভান চিন্তিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার হাতের দিকে। তা দেখে শারমায়া বললো,
“আপনার ভাঙা হাত নিয়েই আমাকে টেনশন করতে নিষেধ করেছেন, তাহলে এখন আপনি এভাবে তাকিয়ে আছেন কেন?”
জোভান তার দৃষ্টিতে দৃষ্টি রেখে বললো,
“ভাবছি দোষটা আমার কিভাবে?”
“আপনার অবস্থা জেনেই তো এসব হলো। না আপনি বাইক চালাতেন আর না এতোসব হতো।”
জোভান চুপ করে রইলো। শারমায়া বেরিয়ে আসার পূর্বে জোভানকে বলে এলো,
“ওষুধ ঠিকমতো খাবেন, আর রেস্টে থাকবেন। আমি এক সপ্তাহের মধ্যে আপনাকে সুস্থ দেখতে চাই।”
জোভান মুচকি হেসে বললো,
“যা হয় ভালোর জন্যই হয়। দূর্ঘটনার ছলে প্রিয়জনদের ভালোবাসাগুলো তো অন্তত দলবেঁধে প্রকাশিত হয়।”
জেভা হেসে তাকে মারার জন্য হাত তুললে জোভান মাথা হেলিয়ে পেছনে সরিয়ে নিয়ে আবারও হাসিমাখা মুখে শারমায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“সাবধানে যেও। রাতে যেন সুন্দর ঘুম হয়।”
শারমায়া জেভার কেবিনে এসে তার শ্বশুর শ্বাশুড়ির সাথে দেখা করলো। অতঃপর বাবামায়ের সাথে বেরিয়ে এলো। তারা বের হওয়ার পূর্বে আবারও জোভানের সাথে দেখা করে এলো। সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা রিজার্ভ সিএনজি নিলেন। গাড়িতে কারো সাথে কোনো কথা হয়নি তাদের। বাড়িতে এসে শারমিন গোমড়ামুখো হয়ে আছেন। বোরকা খুলে তিনি কিচেনে এসে ভাত ও সবজি রান্না করা দেখলেন। অতঃপর ডিম ভাজি করার কথা ভাবলেন। কেননা, কিছু রান্না করার মুড নেই এখন। এগুলো দিয়েই ডিনার হয়ে যাবে। ওদিকে সাখাওয়াত সাহেব রুমে বসে শারমায়ার সাথে কথা বলছেন,
“আম্মা, তুমি এসব কি বলো? এভাবে কেউ কথা বলে?”
শারমায়ার চোখে পানি টলমল করছে। সে ধাধানো গলায় উচ্চারণ করলো,
“স্যরি আব্বু।”
সাখাওয়াত সাহেব মেয়ের মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন,
“যার উপর যত রাগই হোক, মুখের ভাষা ঠিক রাখবে। উল্টাপাল্টা ভাষা তো আমরা শিক্ষা দেইনি তোমাদের, তাই না? তোমার মা কিন্তু খুব রেগে আছেন। আজ জোভানের পরিবারের কেউ যদি তোমার কথা শুনতেন তাহলে তো খারাপ ভাবতেন। আর কখনো বলবে না এসব। হুম?”
শারমায়া মাথা নাড়লে সাখাওয়াত সাহেব রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। বাবার পিছু পিছু বেরিয়ে শারমায়া কিচেনের দিকে চলে গেলো। শারমিন ডিম ভাজি করছেন। শারমায়া তার মাকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আম্মু, স্যরি।”
শারমিন কিছুই বললেন না। চুপচাপ ডিম উল্টেপাল্টে দিচ্ছেন। শারমায়া কান্নাজড়িত কণ্ঠে বললো,
“আম্মু, স্যরি তো। আর কখনো বলবো না।”
শারমিন কোনো জবাব না দেওয়ায় শারমায়া আবারও বললো,
“ক্ষমা করবে না তুমি? আর বলবো না, প্রমিজ।”
“হাতমুখ ধুয়েছিস?”
“উহুম।”
“হাতমুখ ধুয়ে খেতে আয়। ঘুমানোর আগে নামাজ পড়ে ঘুমাবি।”
সকালে জোভানের সাথে ফোনে কথা বললো অনেক্ক্ষণ। গতরাতে পাশের কেবিনের সেই সিজারিয়ান রোগীর টুইন বেবি হয়েছে। তা জেনে শারমায়া “মাশাআল্লাহ” বলেছে। সেই সুবাদে জোভান কিছুক্ষণ দুষ্টুমি করলো শারমায়ার সাথে তাদের ফিউচার প্ল্যান নিয়ে। বরাবরের মতোই শারমায়া রেগে গেছে তার উপর। তবে জোভানও প্রস্তুত তার রাগের লিমিটেশন ঠিক রাখতে।
সামনে পরীক্ষা থাকায় পরবর্তী দু সপ্তাহ শারমায়া খুব বেশি ব্যস্ত ছিলো পড়াশোনায়। তবে জোভানের সাথে কথা হয়েছে নিয়মিত দু’বেলা। পরীক্ষাও ভালোই হয়েছে, এখন রেজাল্টের অপেক্ষা। যদিও পুরোপুরি সুস্থ হতে জোভানের সময় লেগেছে প্রায় এক মাস। কিন্তু সে রেস্টে থেকেছে কেবল প্রথম চারদিন। পা ঠিক হওয়ার পর থেকেই স্বাভাবিক জীবনযাপন করছে, তবে হাতে প্রেশার নেয়নি। ড্রাইভ থেকেও তাকে দূরেই থাকতে হয়েছে। আল্লাহর রহমতে মাসখানেক পর আবার স্বাভাবিক।
এদিকে উল্লেখিত পাত্রের সাথেই ফারিয়া আপুর বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে। এ সপ্তাহের শুক্রবার বিয়ে। জেভাসহ জোভানের পুরো পরিবার আমন্ত্রিত, সাথে আমন্ত্রিত শারমায়ার মামা, খালাদের পরিবারও। সুষনার পড়াশোনায় ছুটি থাকায় শারমায়া ও সাফওয়ানা তাকে নানান ভঙ্গিতে রিকুয়েষ্ট করে, মাকে প্রেশার দিয়ে রবিবার তাদের বাসায় আনিয়ে ছেড়েছে। একেবারে ফারিয়ার বিয়ের পরেই যাবে সুষনা। তার আগে যেতে দিবে না তারা। সোমবার তারা দুইবোন শপিংয়ে গেছে মা ও সুষনা আপুর সাথে। জোভান বলেছিলো শারমায়াকে শপিংয়ের কথা, কিন্তু চাওয়া-পাওয়ার ব্যাপারে এখনো স্বাভাবিক হতে না পারায় শারমায়া নিষেধ করে দিয়েছে। বিয়ে হলেও বাবার বাড়ি থাকছে বিধায় আবদারটা এখনো পূর্বের মতো বাবামায়ের কাছেই সীমাবদ্ধ। তবে জোভান এলে মাঝে মাঝে জোরপূর্বকই কিছু টাকা দিয়ে যায় তার হাত খরচের জন্য।
মঙ্গলবার বিকেলে একটা পার্সেল আসে শারমায়ার নামে। হঠাৎ পার্সেল কে পাঠালো তা নিয়ে চিন্তিত শারমায়া। কেননা প্রেরকের নাম-ঠিকানা কিছুই নেই। তার ফোন নং ও লিপিবদ্ধ নেই, তাকে ফোনও করা হয়নি। তার বাড়ির ঠিকানা অনুযায়ী ডেলিভারি ম্যান সরাসরি ফ্ল্যাটের দরজায় এসে নক করেছে। ছেলেটাকে চেনা চেনা লাগছিলো কিন্তু সঠিকভাবে চিনে উঠতে পারছে না। কিছু জিজ্ঞেস করার সুযোগও পেলো না। কেমন যেন তারাহুরো করে বক্স ধরিয়ে দিয়ে চলে গেলো। জোভান পাঠায়নি তো? কিন্তু সে তো কিছু গিফট করলে তা নিজের হাতে দিতে পছন্দ করে। নিশ্চয়ই সে হবে না। তাহলে কে হতে পারে? আর বক্স তো আকার আকৃতির তুলনায় অনেকটা হালকা, কি আছে এতে? ভাবতে ভাবতে রুমে এলো শারমায়া।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here