“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৪২
(নূর নাফিসা)
.
.
ইশারের পরপরই তারা বেরিয়ে এলো। বন্ধুবান্ধব চলে গেলো একদিকে, জোভান ও শারমায়া অন্যদিকে। এতোক্ষণ শারমায়া স্বাভাবিক থাকলেও এখন আবার মুড অফ তার। জোভান শারমায়ার হাত ধরে বললো,
“চলো একটু হাটি এদিকে।”
শারমায়া তার হাত টেনে নিয়ে বললো,
“আমি বাসায় যাবো।”
“কেন? ভালো লাগছে না আমার সাথে সময় কাটাতে?”
“আমার ভালো লাগায় কি আসে যায়? আপনারই তো ভালো লাগে না আমার সাথে সময় কাটাতে। আমি দূরে গেলেই আপনার শান্তি।”
“শারমায়া, তুমি কি বলছো এসব?”
শারমায়া কথায় একটু জোর টেনেই বললো,
“কিছুই বলতে চাইছি না। আমি বাসায় যাবো, বাকিটুকু সময় আমার পরিবারের সাথে কাটাবো।”
তাহলে জোভান কি তার পরিবারের কেউ নয়? চাইলে জোভান অনেক কড়া জবাবও দিতে পারতো তার বলা আঁকাবাঁকা কথা গুলোর। কিন্তু তা করলো না। কেননা সে জানে বেশ অভিমানে কথা বলছে শারমায়া। কষ্টগুলো নিজের ভেতর চাপা রাখায় উপরটা কঠোর রূপ নিচ্ছে। তারউপর জবাব দিয়ে যন্ত্রণা বাড়িয়ে দিতে চায় না প্রিয়তম। বলে যাক যা ইচ্ছে। নিরবে সহ্য করে নিজের অনুভূতিকে চেপে রেখে চুপচাপ গাড়িতে উঠলো জোভান। দুজনেই নিরব। পথে ভেলপুরি দেখে জিজ্ঞেস করলো,
“ভেলপুরি খাবে?”
শারমায়া তার দিকে বিরক্তিকর দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“আপনার মাঝে বেশ আমেজ থাকতে পারে৷ আমি আমেজে মরছি না।”
জোভান বিষন্ন দৃষ্টি পাঁচ সেকেন্ডের মতো স্থির করলো তার দিকে। অতঃপর চুপচাপ ড্রাইভ করলো। আর কোনো কথাই বললো না সে। প্রায় দশটার দিকে শারমায়াদের বাসায় এলো তারা। জোভান সাখাওয়াত বদরুদ্দোজাকে দেখে সালাম দিলো। সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা সালামের জবাব দিয়ে বললেন,
“চলো, ডিনার করি।”
জোভান হাসিমুখেই বললো,
“না আংকেল, ডিনার করেছি আপুর বাসায়। আমি আসি তাহলে।”
“এখন চলে যাবে? সকালে তো আবার আসতেই হবে। থেকে যাও আজ।”
জোভান কিছু বলার আগে শারমায়াই বলে উঠলো,
“না, আব্বু। অযথা থাকার প্রয়োজন নেই। উনার কাজ আছে। উনাকে যেতে হবে।”
শারমায়ার আচরণে মন খারাপ হলেও সে হাসিখুশি ভাবটা প্রকাশ করেই বললো,
“হ্যাঁ, আংকেল যাওয়াটা জরুরী। আমি আসি। আন্টি আসি তাহলে।”
শারমিন বললেন,
“সাবধানে যেয়ো।”
জোভান চলে গেলো। মেয়ের আচরণে যেন খুশিমনে বিদায়টাও দিতে পারলেন না সাখাওয়াত সাহেব। তিনি শারমিনকে এককভাবে বিষয়টি জানালে শারমিন রুমে এসে শারমায়াকে জিজ্ঞেস করলেন,
“কি হয়েছে, শারমায়া?”
“কোথায় কি হয়েছে?”
“জোভানের সাথে রাগারাগি করেছিস নাকি?”
“কই? না তো।”
“তাহলে কেমন করে কথা বললি তার সাথে?”
“কোথায় আমি কেমন করে কথা বললাম? মা, এখন কি আমার কথা শুনতেও তোমরা বিরক্ত হয়ে যাচ্ছো? তাহলে তো দেখছি আমাকে কথা বলাও বন্ধ করে দিতে হবে।”
লক্ষণীয় আচরণে অন্যসময় হলে বকাঝকা করতেন কিন্তু আজ কিছু বললেন না। তিনি রুম ছেড়ে যেতে যেতে বললেন,
“খেতে আয়।”
“তোমরা খাও। আমি খেয়ে এসেছি।”
বাবা, মা ও সাফওয়ানা ডিনার করছে। আর রুমে একা বসে বসে অশান্তিতে মরছে শারমায়া। জোভানের সাথে কি আচরণ করে এলো, মায়ের সাথেই বা কিভাবে কথা বললো ভাবতেই অন্তর ফেটে যাচ্ছে তার। জোভানের জায়গায় সে থাকলে তো সেই মুহূর্তে চড়িয়ে দাঁত ফেলে দিতো। জোভান কিছু বললো না কেন? যেতে যেতে কি সবাইকে কষ্ট দিয়েই যাবে? সব বুঝেও এতোটা জঘন্য আচরণ কেন করতে গেলো সে! ভেবে ভেবে কিছুক্ষণ নিরবে কান্না করলো সে। অতঃপর বারান্দায় এসে কল করলো জোভানের কাছে।
“হ্যাঁ, বলো?”
“কোথায় আপনি?”
“এইতো বাসার কাছাকাছি আছি।”
“ফোন রিসিভ করতে দেরি হলো কেন? আপনি একজায়গায়, ফোন কি আরেক জায়গায় থাকে?”
জোভান চুপ করে আছে বিধায় শারমায়া রাগান্বিত গলায় বললো,
“চুপ করে আছেন কেন? কিছু জিজ্ঞেস করেছি শুনতে পাননি?”
“তুমি কল দিয়েছো তাই রাস্তার একপাশে গাড়ি পার্ক করে তারপর রিসিভ করেছি। তাই দেরি হয়েছে।”
“আমার একটা লাগেজ লাগবে।”
“সেদিন না একটা কিনে দিলাম? তুমি না বললে আর লাগবে না!”
“এখন লাগবে বলেই তো বলেছি। সেদিন নিষেধ করে আবার এখন চাওয়াতে কি অপরাধ হয়ে গেছে?”
“কি বলছো এসব? এমন কেন করছো?”
“আমি পাগল হয়ে গেছি তাই এমন করছি আর যা-তা বলছি। এখন আমার লাগেজ লাগবে, আপনি নিয়ে আসবেন কি না সেটা বলুন।”
“আচ্ছা, কাল সকালে আসার সময় নিয়ে আসবো। লাগেজে যা রাখবে সামনে রেখো, সকালে গুছিয়ে নিবে।”
“আমার এখন লাগবে।”
“এখন তো আমাদের বাসায় এসে পড়েছি। তুমি আগে বললে তো আমি তোমাকে নিয়ে বাসায় যাওয়ার আগে শপিংমলে চলে যেতাম।”
“মনে ছিলো না আগে। আমি সকাল পর্যন্ত অপেক্ষা করতে পারবো না। তাড়াহুড়ো করে কাজ করা আমার পক্ষে সম্ভব না। এখনই প্রয়োজন।”
“আচ্ছা, আমি ভোরে উঠে ফজরের নামাজ পড়ে সাথে সাথেই চলে আসবো। তাহলে ঠান্ডা মাথায়ই গোছাতে পারবে। আমি হেল্প করবো সাথে। ঠিক আছে?”
“আমি কিছু জানি না। আপনার হেল্প-এরও প্রয়োজন নেই। এখন লাগবে বলেছি তো এখনই লাগবে আমার।”
অন্ত রাগান্বিত জোভান চুপ করে আছে৷ অতি জেদের কারণে তার উপর রাগও হচ্ছে আবার তার মায়ায় কষ্টও লাগছে। কিন্তু কিছুই বলতে পারছে না। সে চুপ করে থাকায় শারমায়া বললো,
“কি ব্যাপার? চুপ করে আছেন কেন? পারলে হ্যাঁ বলুন, না পারলে না বলুন। এমন চুপ থেকে আমাকে অপেক্ষা করাচ্ছেন কেন? কিছু তো বলবেন?”
“ওকে। আসছি।”
খুবই শান্ত গলায় জবাব দিতেই কল কেটে দিলো শারমায়া। অতঃপর অন্ধকার ভুবনে তাকিয়ে নিরবে অশ্রু ফেলতে লাগলো। মিনিট দশেক পর সাফওয়ানা এসে ঘুমানোর জন্য বিছানা গোছাতে গোছাতে বললো,
“আপু, বারান্দায় কি করছো? ফারিয়া আপু সন্ধ্যায় অনেক্ক্ষণ বসে থেকে গেছে তোমার অপেক্ষায়।”
“কেন?”
“এমনি, গল্পসল্প করার জন্য।”
“কাল সকালে দেখা করবো। তুই আজ ওই রুমে ঘুমা। তোর ভাইয়া আসছে।”
“ভাইয়া না চলে গেলো?”
“আবার আসছে। তুই ওই রুমে যা। আর কলিং বেল বাজালে দরজা খুলে দিস। আমি গেলে তো গেলামই।”
“ওকে।”
সাফওয়ানা পাশের রুমে চলে গেলো। প্রায় বিশ মিনিট পর কলিং বেল বেজে উঠলো। ঘুমানোর পূর্বে সাখাওয়াত সাহেব রুমের সামনে ফাঁকা জায়গায় হাটাহাটি করছিলেন। সাফওয়ানা এসে দেখলো বাবা ই খুলছে দরজা। জোভান সালাম দিলে তিনি বললেন,
“ওয়ালাইকুমুস সালাম। বাসায় যাওনি, বাবা?”
জোভান ইতস্ততবোধ করে বললো,
“হ্যাঁ, আংকেল। শারমায়া কল করে বললো লাগেজ লাগবে এখন। তাই নিয়ে আসতে হলো। শারমায়া ঘুমিয়ে পড়েছে?”
তাকে লজ্জিত অবস্থা থেকে উদ্ধার করতে সাফওয়ানা বলে উঠলো,
“ভাইয়া, ঘুমায়নি। আপু রুমে আছে যান।”
জোভান তার রুমের দিকে যেতে লাগলে সাখাওয়াত সাহেব ক্লান্ত জোভানকে দেখে দরজা লাগাতে লাগাতে বললেন,
“জরুরী কাজ না থাকলে আজ থেকে যাও, জোভান।”
জোভান রুমে এসে শারমায়াকে দেখতে পেলো না। কিন্তু বারান্দায় থেকে শারমায়া তাকে দেখে রুমে চলে এলো। জোভান লাগেজ ফ্লোরে রেখে বললো,
“এই নাও লাগেজ। শপিংমলে যাওয়া সম্ভব হয়নি তাই আমারটা নিয়ে এসেছি। নতুনই প্রায়, গত বছর কিনেছিলাম। দুইবার ব্যবহার করেছি।”
“গাড়ি কোথায় রেখে এসেছেন?”
“গাড়ি নিয়ে আসিনি। ড্রাইভ করতে ইচ্ছে করছিলো না, তাই লোকালে এসেছি। আচ্ছা, আসি তাহলে।”
জোভান পেছনে ফেরার আগেই শারমায়া হনহনিয়ে দরজার পাশে এসে দরজা লাগিয়ে দিয়ে আবার জোভানের কাছে এসে দুহাতে শার্টের কলার মুঠোয় ধরে বললো,
“কোথায় যাবেন? কত বছরের জন্য কাল চলে যাবো আমি, আমার সাথে একটু থাকতে ইচ্ছে করে না? আমার তো খুব ইচ্ছে করে। কোথাও যেতে পারবেন না আপনি।”
জোভানের ব্রু সামান্য কুচকে গেলো। দৃষ্টি স্থির শারমায়ার দৃষ্টিতে। হাত উঠিয়ে সে শারমায়ার হাত সরাতে চাইলে শারমায়া আরও জোরে চেপে ধরে বললো,
“একদম ছাড়বো না আমি। এই লোকটা আমার। তার সাথে আমি যা ইচ্ছে তাই করবো। একশো বার এভাবে ধরবো।”
বুক ভরা মায়া নিয়ে জোভান তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে রইলো এবং হাত নামিয়ে তাকে দু’হাতে ধরতে চাইলে শারমায়া কলার ছেড়ে তার হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে বললো,
“একদম স্পর্শ করবেন না আমাকে। শুধু আমি হাজারবার স্পর্শ করবো এই দেহে। আমার অধিকার আছে।”
বলতে বলতে সে জোভানের শার্টের বোতাম খুলে টানতে লাগলো, কিন্তু শার্ট ইন থাকায় শার্ট খুলে নেওয়াটা অসাধ্য হয়ে উঠেছে। যদিও কাজটা সাধ্যের বাইরে নয়, ভালোভাবে চেষ্টা করলে সুন্দরভাবেই করতে পারতো। কিন্তু এলোমেলো টানায় সম্ভব হচ্ছে না। জোভান তার দিকে নিষ্পলক তাকিয়ে থেকেই তার কাজ সহজ করে দিতে প্যান্টের বেল্ট খুলে দিলো। আর সহজেই টানাটানি করে শার্টটা খুলে নিয়ে ছুড়ে মারলো খাটের দিকে। অর্ধেক খাটে এটেছে বাকিটা ঝুলছে। শারমায়া তার সেন্টু গেঞ্জিটাও টানতে লাগলো খোলার জন্য। জোভান তার চেয়ে লম্বা হওয়ায় এতোটা সহজ নয় তার জন্য। এতেও জোভান সাহায্য করলো। এটাও ছুড়ে মারলো পেছন দিকে। গেঞ্জি উড়ে গিয়ে ওয়ারড্রবে ধাক্কা খেয়ে পড়েছে ফ্লোরে। অতঃপর শারমায়া একহাতে জোভানের কাধ খামচে ধরে বললো,
“এই দেহে আমি যা ইচ্ছে করবো, আপনি কিচ্ছু বলতে পারবেন না।”
জোভান কেবল তাকিয়ে আছে তার ভেজা চোখজোড়ায়। শারমায়া তার বুকে মাথা রেখে দু’হাতে উন্মুক্ত পিঠে খামচি রেখা টেনে বললো,
“আপনি কিচ্ছু বলতে পারবেন না আমাকে।”
জোভান ব্যাথা পেয়ে সামান্য কেপে উঠলেও নড়লো না একটুও। অতঃপর দু’হাতে জড়িয়ে ধরে বুকে চুমু দিয়ে চাপা কান্না কিছুটা উন্মুক্ত করে দিলো শারমায়া। ভেতরে যন্ত্রণাগুলো এমনভাবে আটকে আছে, কোনোভাবেই বের করতে পারছে না। ভিজিয়ে দিচ্ছে বুক তবুও জোভান শারমায়ার ইচ্ছেমতো স্থির দাঁড়িয়ে আছে। যা বলছে তা-ই শুনছে, তা দেখে চরম রাগ হলো শারমায়ার। তাই একটু পর তাকে ছেড়ে দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে শারমায়া শার্ট এবং গেঞ্জি কুড়িয়ে নিয়ে জোভানের দিকে ছুড়ে মেরে বাথরুমে যেতে যেতে বললো,
“আপনার কাজ শেষ। এই মুহূর্তে বেরিয়ে যান আপনি। আমি ঘুমাবো, আমাকে ডিস্টার্ব করবেন না।”
ঠাস করেই দরজা লাগিয়ে দিলো। তাকে চলে যেতে বললো নাকি থেকে যাওয়ার স্পষ্ট ইঙ্গিত দিয়ে গেলো ভাবতেই জোভানের ক্লান্ত চেহারায় ঠোঁটের এক কোণে সামান্য হাসি ফুটে উঠলো। সকল রাগ কেবল তার উপর, সকল অপরাধ যেন তার। মাত্রাতিরিক্ত পাগলামো করছে তার জান। চলে যাওয়ার পর যে এই পাগলামো গুলোই তাকে কুড়ে কুড়ে খাবে সেটা বেশ ভালো অনুধাবন করতে পারছে। সে ফ্লোর থেকে শার্ট এবং গেঞ্জি তুলে চেয়ারে রেখে খাটে বসলো। নিজের চুলগুলো দুহাতে হালকা টেনে ঘাড় চেপে ধরে রাখলো। চিন্তিত দৃষ্টি স্থির ফ্লোরের দিকে। হঠাৎই খুব বড়সড় এক নিশ্বাস বেরিয়ে এলো ভেতর থেকে। শারমায়া বেরিয়ে এলে সে উঠে বাথরুমে গেলো। হাতমুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো শারমায়া কাঁথা মুড়ে চোখ বুজে শুয়ে আছে। জোভান হাতমুখ মুছে তার নিকটে চলে গেলো অশান্ত মনটাকে একটু শান্তির ছায়ায় নিয়ে আসতে। শারমায়া কখনো আঘাত করে গেছে, কখনো বুক ভাসিয়েছে অশ্রুতে, কখনোবা আদরে মাখিয়েছে প্রিয়কে। তারা ঘুমিয়েছে মাত্র রাতের কিছুটা সময়। দুজনেরই ঘুম ভেঙেছে জোভানের ফোনের এলার্মের শব্দে। ঘুম থেকে জেগেও জোভানের কাছে তার আবদার যেন তাকে যেতে না দেয়। ছোট্ট একটা ভুল যে পরবর্তীতে বড় আফসোস হয়ে দাঁড়াতে পারে তা জোভান বুঝলেও কিছুতেই বুঝতে চাইছে না এই অবুঝ মন। জোভান না মানাতে আবারও রাগ করে জোভানকে ঠেলে উঠে চলে গেলো। শারমিন সেই ভোর থেকেই রান্না করছিলো। শারমায়া মাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলো অনেক্ক্ষণ। সকালের নাস্তায় মেয়েকে নিজ হাতে খায়িয়ে দিলেন তিনি। বাবাকে জড়িয়ে ধরে বসে রইলে বাবাও মেয়েকে কত পরামর্শ দিলেন, নানান দিক থেকে সাবধানও করে দিলেন। ফারিয়া আপু ও চাচা চাচীর সাথেও দেখা করলো। খালামনিও এসেছেন সকালে। অবশেষে বাসা থেকে বের হওয়ার সময় কান্নার রোল তুললো মা ও দুই মেয়ে। সাফওয়ানাটা অনেক কান্না করেছে। সে চলে যাবে তাই কদিন ধরে কোনোরকম দুষ্টুমিও করেনি তার সাথে।
এয়ারপোর্ট পর্যন্ত পৌঁছে দিতে সাথে এলেন বাবা, শ্বশুর ও তার প্রিয়। এখানে এসে দেখা পেলো সহপাঠীদের যাদের সাথে সে যাচ্ছে। যাওয়ার পথে বাবাকে জড়িয়ে ধরে কান্না করে দিয়েছে, আশরাফ স্যার তার মাথায় হাত বুলিয়ে আশ্বাস দিলেন। আর জোভান নিরব দর্শক। তার দিকে নিক্ষেপিত শারমায়ার শেষ দৃষ্টিটাও চরম অভিমানী ছিলো। শারমায়ার মনের ব্যাথাটা কেবল তার কাছেই স্পষ্ট প্রকাশ করলেও কিছুই করতে পারলো না সে। বুকে জমা ব্যাথা নিয়ে অভিমানী দৃষ্টির জবাবে শুধু মনে মনে বলছিলো,
“আজ যে কারণে রেগে আছো, একসময় সেই কারণের পুরষ্কার হিসেবেই বড্ড বেশি ভালোবাসবে আমায়। প্রিয়, আমি তোমার ভালোবাসাময় পুরষ্কারের অপেক্ষায়…”