“হালাল প্রেম” পর্ব- ৪৬

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৪৬
(নূর নাফিসা)
.
.
সকালে দেরি করেই বিছানা ছাড়লো শারমায়া। জোভান বাধ্য করেছে তাকে। এতোদিন যাবত থাকছে, একদিনও এতো দেরি করে উঠেনি ঘুম থেকে। বাইরে বের হলে চাচীমা কি বলবে ভাবতেই লজ্জা লাগছে। লোকটা সবসময় তাকে লজ্জায় ফেলে দেয়। শারমায়া হাতমুখ ধুয়ে এসে দেখলো জোভান উপুড় হয়ে শুয়ে আবারও ঘুমাচ্ছে! শারমায়া বললো,
“আবার ঘুমাচ্ছে!”
জোভান চোখ বন্ধ রেখেই সংকেত দিলো,
“হুম?”
“নাস্তা করবে না?”
“তুমি নাস্তা করো। আমাকে দু’ঘন্টা পরে ডেকে দিয়ো।”
“না খেয়ে ঘুমালেই চলবে?”
জোভান আর কোন প্রতিক্রিয়ায় করলো না। গভীর ঘুমের ঘোর লেগেছে ভেবে শারমায়া আর কিছু বললো না। দরজা খুলে সে বেরিয়ে এলো। সোয়াদ একা একা খেলা করছে, তানহা ফোন হাতে নিয়ে সোফায় বসে আছে। শারমায়া এসে সালাম দিলো। তানহা সালামের জবাব দিয়ে বললো,
“ঘুম ভেঙেছে? ক্ষুধা লাগেনি?”
শারমায়া মুচকি হেসে বললো,
“জুথিকা স্কুলে চলে গেছে?”
“হুম। যেতে চাইছিলো না। জোর করে পাঠালাম তার বাবাইয়ের সাথে। তোমার শ্বাশুড়ি মা রান্না করে খাবার পাঠিয়েছে, আমরা তো খেয়ে সাবাড়।”
“খেলেই ভালো। নষ্ট তো আর হয়নি।”
তানহা হেসে বললো,
“বাব্বাহ! নিজের ভাগ ছেড়ে দিবে! হটপটে খাবার রাখা আছে, খেতে বসে যাও। জয় কোথায়?”
“ঘুমাচ্ছে।”
“নাস্তা করবে না?”
“বললো, পরে খাবে। আরও নাকি দু’ঘন্টা ঘুমাবে।”
“এখন আর ঘুমাতে হবে না। নাস্তা করে তারপর ঘুমাতে বলো। নয়তো অসুস্থ হয়ে পড়বে। রাতেও কত বার খাওয়ার জন্য বললাম, কিছুই খেলো না। ডেকে নিয়ে এসে একসাথে খাও। সোয়াদকে সাথে নিয়ে যাও, নাক কান টেনে জাগিয়ে দিবে।”
বলেই হেসে উঠলো তানহা। অতঃপর সোয়াদের উদ্দেশ্যে বললো,
“সোয়াদ, জ্যাক্স এসেছে ভাবি মনির রুমে।”
সোয়াদ অবাক হয়ে তার মায়ের দিকে তাকালো অতঃপর দৌড়ে রুমের দিকে চলে গেলো মায়ের কথার সত্যতা যাচাই করতে। পিছু পিছু শারমায়াও এসেছে রুমে। জোভান তাকিয়েই ছিলো, তাকে দেখে সোয়াদ খুশিতে চিৎকার করে উঠলো,
“জ্যাক্স!”
জোভান হাসিমুখে ঘুষি দেওয়ার স্টাইলে হাত মুঠো করে সোয়াদের পেটে ঠুকে বললো,
“হেই, রক্স! গুড মর্নিং।”
“গুড মর্নিং। তুমি কখন এসেছো?”
“রাতে এসেছি। ব্রেকফাস্ট করেছো?”
“হাম। তুমি ব্রেকফাস্ট করবে না? এসো।”
“তুমি আমার পিঠের উপর বসো।”
“পিঠের উপর?”
“হুম।”
সোয়াদ বিছানায় উঠতে লাগলো। শারমায়া বললো,
“এতোক্ষণ না ঘুমের ঘোরে কথাই বলতে পারছিলেন না! তো ঘুম কোথায় গেলো?”
জোভান মুচকি হেসে বললো,
“অনেক চেষ্টা করলাম, তোমাকে ছাড়া ঘুম ডেকে আনতে পারলাম না। নাস্তা করোনি কেন?”
“ওঠো, একসাথে খাবো।”
“তুমি খেয়ে আসো। আমি একেবারে লাঞ্চ করবো।”
“জ্বি না, এখন ওঠো। সোয়াদ, নামো। ভাইয়া উঠবে।”
জোভান বললো,
“না, থাকুক।”
সোয়াদ তার পিঠে বসে লাফাতে থাকলো। শারমায়া সোয়াদকে নামানোর জন্য হাত ধরে টেনে বললো,
“সোয়াদ, এভাবে লাফায় না। ভাইয়া ব্যাথা পাবে।”
জোভান বললো,
“লাফাতে দাও। ভালো লাগছে।”
শারমায়া বিরক্তিকরভাবে বললো,
“উঠতে বলেছি।”
“পরে।”
এবার আহ্লাদী সুরে বললো,
“আমার ক্ষুধা লেগেছে। ওঠো।”
জোভান এক হাতে কম্বল উপরে তুলে তাকে কাছে যাওয়ার আহ্বান জানিয়ে বললো,
“এখানে এসো, ক্ষুধা মিটিয়ে দিবো।”
“বেশি ভালো হবে না কিন্তু। সোয়াদ, জ্যাক্সকে মাইর দিয়ে উঠাও।”
“নো, জ্যাক্স ইজ মাই হাট্টিমাটিম।”
কথাটা বলে সোয়াদ বসে বসে লাফাতে লাগলো পিঠের উপর। জোভান হাসলো। শারমায়া রেগে বিড়বিড় করতে করতে জানালার ধারে চলে গেলো।
“ধ্যাৎ! খাবোই না আমি। ঘুমাক সে।”
জোভান সোয়াদকে পিঠের উপর থেকে নামিয়ে দিতে দিতে বললো,
“রক্স, নামো নামো। তোমার ভাবিমনি রেগে গেছে। সবাইকে মাইর শুরু করবে। তারাতাড়ি বিছানা গোছাও।”
জোভান দ্রুত নেমে সোয়াদের উপর কম্বল ফেলে সোয়াদকে ঢেকে দিয়ে চলে গেলো বাথরুমে। ফ্রেশ হয়ে এসে দেখলো সোয়াদ কম্বল টানাটানি করছে ভাজ করার চেষ্টায়। জোভান বললো,
“থাকুক, আর গোছাতে হবে না। গোছানো হয়ে গেছে। শারমায়া, একটা টিশার্ট দাও তো। ঠান্ডা লাগছে।”
জোভান তোয়ালে দিয়ে হাতমুখ মুছে ফেললো অথচ শারমায়া একইভাবে একই জায়গায় দাঁড়িয়ে আছে। যেন সে শুনেই নি তার কথা। জোভান নিজেই টিশার্ট নিয়ে পরতে পরতে বললো,
“ওফ্ফ! কি ক্ষুধা লেগেছে। দ্রুত এসো, খেতে যাবো।”
তবুও শারমায়া কোনো প্রতিক্রিয়া জানালো না। ওদিকে সোয়াদ কম্বল ভাজ করতে না পারায় বিরক্ত হয়ে বিছানা ছেড়ে নেমে পড়লো। এদিকে জোভান মুচকি হেসে শারমায়াকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে কানে আলতো কামড় বসিয়ে দিয়ে বললো,
“বউ, চলো। দুপুরের পর আমরা বেড়াতে যাবো আবার।”
সোয়াদের সামনে জড়িয়ে ধরায় শারমায়া দ্রুত তার হাত ছুটিয়ে দিয়ে বেরিয়ে এলো। এটা ভয়ংকর লোক, বলা তো যায় না তাকে মানাতে এখন আরও কত কি করে বসে! শারমায়ার পিছু পিছু জোভানের হাত ধরে এলো সোয়াদ। জোভানকে দেখে আগে চাচীমা সালাম দিলো প্রত্যুত্তরে জোভান মুচকি হেসে সালামের জবাব দিয়ে বললো,
“চাচীমা, এসো। ব্রেকফাস্ট করি।”
“করো তুমি। আরেকটু পরে লাঞ্চ করবো।”
“রক্স, এসো।”
“আমি ব্রেকফাস্ট করেছি।”
সোয়াদ ফলের ঝুড়ি থেকে একটা আপেল নিয়ে তার মায়ের কাছে সোফায় চলে গেলো। শারমায়া প্লেটে খাবার দিয়ে জোভানের পাশের চেয়ারে বসলো। ওদিকে আপেল খেতে খেতে সোয়াদ তার মায়ের উদ্দেশ্যে বললো,
“মাম, জ্যাক্স ভাবিমনিকে মেরেছে। ভাবিমনির কানে বাইট দিয়েছে। ব্যাথা পেয়েছে না ভাবিমনি? জ্যাক্সকে কিছু বলো।”
উপস্থিত সবাই শকড! তানহা তাদের দিকে এক পলক তাকিয়ে ছেলেকে কোলে নিয়ে নিজের রুমের দিকে যেতে যেতে ছেলের উদ্দেশ্যে বললো,
“জ্যাক্স দিয়েছে তাই ব্যাথা পায়নি ভাবিমনি। তুমি আবার দিতে যেয়ো না, বাবা। তাহলে কান্না করে দিবে ভাবিমনি।”
“কোথায় নিয়ে যাচ্ছো, আমি কার্টুন দেখবো।”
“কার্টুন পরে দেখবে, বাবা। এখন শান্তিতে খেতে দাও তাদের।”
তানহার মুখে চাপা হাসি স্পষ্ট। যতক্ষণ না তারা উক্ত স্থান ত্যাগ করলো, ততক্ষণ জোভান হা হয়ে তাকিয়ে ছিলো তাদের দিকে। তাদের থেকে দৃষ্টি সরিয়ে শারমায়ার দিকে তাকাতেই দেখলো শারমায়া কঠিন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে তার দিকে। লজ্জায় কান্না করার মতো অবস্থা তার! জোভান চেয়ার টেনে আরও কাছে এসে বসে একহাতে শারমায়াকে জড়িয়ে ধরে বললো,
“সুইটহার্ট, মায়ের হাতের রান্না মজা না? গরুর মাংসটা খেয়ে দেখো, ওটা বেশ মজা।”
শারমায়া তার হাত ঝাড়ি মেরে সরিয়ে দিয়ে প্লেট নিয়ে উঠে চলে গেলো বিপরীত পাশে। জোভান নিজের চেয়ার ছেড়ে শারমায়ার পূর্বে বসা চেয়ারে বসে তার মুখোমুখি হলো। টেবিলের নিচে পা বাড়িয়ে শারমায়ার পা স্পর্শ করতেই শারমায়া পা টেনে নিতে চাইলো কিন্তু জোভান পায়ে চেপে আটকে রাখলো। শারমায়া রাগান্বিত দৃষ্টিতে তার দিকে তাকাতেই জোভান ঠোঁট নাড়িয়ে বললো,
“লাভ ইউ।”

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here