“হালাল প্রেম” পর্ব- ৪

“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৪
(নূর নাফিসা)
.
.
“শুধু কুংফু না, কাটিং মাস্টারও। দ্বিতীয়বার আপনার সিংহ মার্কা চুলগুলো কেটে তার প্রমাণ দিবো।”
“ওরে বাবা, ভয় পাইছি!”
পেছন থেকে আরেকজন ছেলেটিকে ধাক্কা দিয়ে সামনের দিকে নিয়ে যেতে যেতে বললো,
“ধুর, চলতো! মেয়ে দেখলেই তোর ফাজলামো!”

এদিকে শারমায়া এসে বললো,
“কি হয়েছে রে? খারাপ কিছু বলেছে?”
“না, ফাজিলটা আমার মাথা ভরে ফুল দিয়ে আবার মুখে দিতে আসছিলো। আস্তো একটা বান্দর।”
“থাকুক। ওদিকে আর যাস না। ভাইয়ারাই তাদের আপ্যায়ন করবে। খাওয়াদাওয়ার মাঝে আমাদের যেতে নিষেধ করেছে।”
“আপুকে স্টেজে নিয়ে যাবো না?”
“হুম, তখন যাবো।”
কয়েকজন ছেলে এমন ফাজলামো করায় কনেপক্ষ থেকে আর মেয়েরা যায়নি বরের বাড়িতে লগনে। শুধু ছেলেদের পাঠানো হয়েছে এখান থেকে। আর মেয়েরা নিজেদের বাড়িতে উৎসবে মেতে ছিলো। বরাবরই কাজিনরা একত্রিত হলে বেশ মজা হয়। আজও তার ব্যতিক্রম নয়। ভাইয়ারা বরের বাসা থেকে ফিরলে গভীর রাত পর্যন্ত সবাই একত্রিত হয়ে হাসি ঠাট্টায় আড্ডা দিয়েছে।
গায়ে হলুদে তারা পার্লারে পার্টি সাজেলেও পরদিন কনে ও তার ভাবি ছাড়া কেউই পার্লারে সাজেনি। নিজেদের মতো সিম্পল সাজে সেজেছে। তারা সবাই জামার সাথে হিজাবও পরেছে। শারমায়া গতকালও শাড়ির সাথে হিজাব পরেছিলো কিন্তু সাফওয়ানা চুল খোলা রেখেছে। আজ আবার মায়ের বকুনি খেয়ে হিজাব পরেছে। তাদের আত্মীয়স্বজন সবাই মোটামুটি পর্দাশীল। মামা মামী, খালা খালুদের মধ্যে অনেকেই হজ্জ করেছে। তাই এভাবে বিয়ের অনুষ্ঠানও করতে চাইছিলো না। কিন্তু কাজিনগুলো জেদ ধরেছে, অনুষ্ঠান না হলে তারা কেউ আসবে না বিয়েতে। তাদের জন্য এমন আয়োজন করা হয়েছে, তবে শর্ত একটাই কোনো অসভ্যতামী যেন না হয়। তারা শর্ত মেনেছে এবং যথেষ্ট চেষ্টা করছে সবকিছু সুন্দরভাবে নিয়ন্ত্রণ করার। আয়োজন সব তারাই করেছে।
বিকেলে বরপক্ষ এলে শারমায়া ও সাফওয়ানা আপু ভাইয়াদের সাথে গেইটে গেলো বরকে বরণ করতে। সাফওয়ানার হাতে ফুলের থালা ও কাচি। থালা নিয়ে সে সামনে দাড়াতেই দেখতে পেল গতকালের সেই পাজি ছেলেটাকে। গতকাল পাঞ্জাবী আর আজ টিশার্টের সাথে স্যুট-কোট। সে তাকানোর পরপর ছেলেটাও তাকিয়েছে। আর সাথে সাথে মুখের হাসি প্রশস্ত হয়ে গেছে। বিপরীতে সাফওয়ানাও মুখে দুষ্টুমি হাসি ফুটিয়ে কাচি দেখালো৷ ছেলেটি চেহারায় ইচ্ছাকৃত বিস্মিত ভাব ফুটিয়ে সানগ্লাস খুলে টিশার্টে ঝুলিয়ে এগিয়ে এলো। এবং নিজের মাথায় হাত বুলিয়ে বললো,
“বেয়াইন, বিয়ে বাড়িতে চুল কাটতে বসেছেন? সিরিয়াল লাগাবো নাকি?”
সাফওয়ানা রেগে তার পায়ে পাড়া দিলো। ছেলেটি কেডস পড়া সত্ত্বেও সাফওয়ানার পায়ে হিল থাকায় ব্যাথা লেগেছে বেশ। পাশের জনের কাঁধে হাত রেখে সে হেলে গেছে। সাফওয়ানা তার পাশ থেকে অন্যদিকে যেতে যেতে বললো,
“সিরিয়ালের প্রয়োজন নেই। আমি এলোমেলো কাজ করতে পছন্দ করি। বুঝতে পেরেছেন তো?”
অত:পর গেইটে চললো বরপক্ষ ও কনেপক্ষের চাপা। বরের জন্য বরপক্ষ হেরে গেলো। কেননা সে দাবিকৃত সম্মানী দিয়ে দিয়েছে। হাতে নিয়েছে শারমায়া। অত:পর সসম্মানে গেইটের ভেতর প্রবেশ করলো। কনেপক্ষ বরকে স্টেজে নিয়ে গেলো। শারমায়া, সাফওয়ানা একসাথেই আছে। ছেলেটি স্টেজসহ বরের ছবি তুলে পাশে তাকিয়ে তাদের দুইবোনকে দেখতে পেল। দুজনের ড্রেসও একইরকম আবার চেহারায়ও সামান্য মিল আছে। তাই ছেলেটি জিজ্ঞেস করলো,
“আপনারা দুজন কি বোন?”
শারমায়ার আগে সাফওয়ানা জবাব দিলো,
“না, সতীন।”
“সতীন!”
পাজি ছেলেটি অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো। আর তার পাশের ছেলেটি বললো,
“কি বলেন! দুজনেরই এক পাত্রের কাছে বিয়ে হয়েছে! কত ভাগ্যবান পুরুষ, টিনেজের দুই বউ পেয়েছে! তা-ও আবার বউদের মধ্যে কত মিল! দেখতে চাই ভাগ্যবানকে।”
সাফওয়ানার এমন উল্টাপাল্টা জবাবে শারমায়া তার মাথায় ঠুসি দিতেই সাফওয়ানা বললো,
“মারো কেন? মা ই তো বলে, একাধারে নাকি সতীনের মতো ঝগড়া লাগি!”
শারমায়া ছোটখাটো ধমক দিলো,
“চুপ! কাচি আর প্লেট রেখে আয়। আমি ফোন নিয়ে আসছি।”
তাদের কথা শুনে পাজি ছেলে বললো,
“সে কি! পাত্র ছাড়াই দুজন সতীন? পূর্ব পরিকল্পনা তাহলে? খুঁজে দিবো নাকি পাত্র? ইফাজ, বিয়ে করবি? আমি কিন্তু দুই বউয়ের প্যারা নিতে পারবো না। সিঙ্গেল হলে ভেবে দেখতাম।”
কথা বলে ওদিকে দুজন হাসছেই। সাফওয়ানা কাচি নিয়ে চলে যাচ্ছে আর শারমায়া দাঁড়িয়ে আছে ভাইয়ার পকেটে তার ফোন সেটা নেওয়ার জন্য। পাজি ছেলেটা বসার জন্য একটা চেয়ার টানতে টানতে বললো,
“বড় সতীন বেশ নম্র ভদ্র ছোটটা একেবারে কড়কড়ি! কড়কড়ি বেয়াইন চলে যাচ্ছেন কেন? আসুন একসাথে খাওয়াদাওয়া করি।”
“আপনিই খান বেশি করে৷”
“আরে, আপনার প্রেমে পড়ে গেছি তো। এখন আপনাকে ছাড়া খাওয়া যাবে না।”
কথাটা বলে যেই চেয়ারে বসতে যাবে এমনি পেছন থেকে শারমায়া চেয়ার টেনে নিলো। সাথে সাথেই ছেলেটি মাটিতে পড়ে গেলো! পাশের দুতিনজন হতবাক! শারমায়া বললো,
“প্রেমে পড়ার আগে চেয়ার থেকে পড়া তো ছাড়ুন, ভাইয়া।”
কথাটা বলেই শারমায়াও চলে গেলো। শব্দ পেয়ে সাফওয়ানা পেছনে ফিরে দেখতেই হেসে উঠলো। আর পাজি ছেলে উঠে প্যান্ট ঝাড়তে ঝাড়তে বললো,
“এইটা তো দেখছি আরও ডেঞ্জারাস! হুটহাট কুপোকাত! একবোন পা শেষ করলো আরেকবোন কোমড় শেষ করতে যাচ্ছিলো! আরেকটা থাকলে বোধহয় ডিরেক্টলি মাথায় এট্যাক করতো!”
হলুদ ও বিয়ের প্রোগ্রামে উপস্থিত থাকলেও বৌভাতের প্রোগ্রামে থাকেনি শারমায়া৷ শারমায়ার পড়াশোনার ক্ষতি হচ্ছে বিধায় সুষনার বিদায়ের পরপরই চাচীদের সাথে চলে এসেছে শারমায়া ও তার পরিবার। সাফওয়ানা থেকে যাওয়ার ইচ্ছে পোষণ করছিলো, কাজিনরাও রেখে দিতে চাইছিলো কিন্তু শারমিন সাখাওয়াত থাকতে দিলেন না। একা থাকলে দুষ্টুমি বেশি করবে তাছাড়া শারমায়া থাকতে না পারায় মন খারাপ করবে তাই দুজনকেই নিয়ে চলে এলেন। তবে তা নিয়ে তাদের মন তেমন একটা খারাপ নয়। কেননা যা মজা হওয়ার গায়ে হলুদের ও বিয়ের প্রোগ্রামেই হয়েছে। পরদিন বৌভাতে অনেক জোরাজোরির পর তাদের পরিবার থেকে শুধুমাত্র সাখাওয়াত বদরুদ্দোজা উপস্থিত হলেন।
দুদিন পর,
গরম লাগছে বিধায় খাটে হেলান দিয়ে ফ্লোরে বসে বিকেলে পড়ছিলো শারমায়া। তার মা এসে বললো,
“তোর স্যার এসেছে।”
“স্যার! কোন স্যার?”
“আশরাফ স্যার।”
আশরাফ স্যারের কথা শুনে শারমায়া চমকে উঠলো!
“স্যার কি এখন বিচার দিতে বাড়ি চলে এলো! আর কত অপমানিত হতে হবে আল্লাহ জানে!”
মনে মনে বলতে বলতে শারমায়া মাথায় ওড়না দিয়ে বের হতে গেলে শারমিন বললো,
“এই বেশে যাবি! নতুন জামা পরে আয়৷”
“আবার নতুন জামা কেন! এইটা খারাপ কি?”
“কেন, নতুন জামা পরে আসতে তোর সমস্যা কি? নাকি নতুন জামা নাই? এই পাগলের বেশ ছেড়ে নতুন জামা পরে মাথা আঁচড়ে সুন্দর করে আয়।”
শারমিন চলে গেলো আর মায়ের কথায় ভ্যাবাচেকা খেয়ে দাঁড়িয়ে রইলো শারমায়া। সে কি এমন বেশে আছে যার জন্য মা তাকে পাগল বলে গেলো! চুল তো ওড়নার নিচেই থাকবে আর জামা তো কাটাছেঁড়া না! তাহলে!
শারমায়া সাফওয়ানার কাছে এসে বললো,
“সাফু, আমাকে কি পাগলের মতো দেখাচ্ছে?”
“না তো। তোমাকে পুরাই রোবট সোফিয়ার মতো দেখাচ্ছে।”
অপ্রত্যাশিত জবাবে শারমায়া বালিশ নিয়ে সাফওয়ানার উপর ঢিল মেরে আয়নার সামনে দাড়ালো। অত:পর বুঝতে পারলো এক জামার সাথে অন্য জামার ওড়না পড়ে আছে তাই মা তার বেশকে পাগলের সাথে তুলনা করে গেলো! অত:পর শারমায়া নতুন জামা পড়ে ড্রয়িংরুমে গেলো। বাবা বাড়িতেই আছে। আশরাফ স্যার ও তার স্ত্রী এসেছেন। যথাযথ আপ্যায়ন করে বাবা মা উভয়ই কথা বলছে তাদের সাথে। শারমায়া এসে সালাম দিলো। স্যারের স্ত্রী শারমায়াকে নিজের কাছে বসালো এবং নিজে নিজেই পরিচিত হলো তার সাথে। অত:পর শারমায়ার সাথে কথাবার্তা বললো এবং বেশ কিছু প্রশ্ন করলো। স্যার শুধু এইচএসসির প্রিপারেশনের কথা জানতে চাইলেন। এবং ভালোমতো পরীক্ষা দিতে বললেন। অত:পর তারা বিদায় নিয়ে চলে গেলেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here