“হালাল প্রেম”
পর্ব- ৬৫
(নূর নাফিসা)
.
.
শেষ বিকেলে তারা ইফাজের বাসা থেকে নিজেদের বাসায় ফিরেছে। আর মামামামীসহ কাজিনরাও সবাই সাথে সাথেই বিদায় নিয়ে যার যার গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছে। খালামনিকে জোর করে রেখে দিলো শারমায়া ও শারমিন সাখাওয়াত। তাকে আরও দুদিন এখানে থাকতেই হবে এটা শারমায়ার আবদার। আর বাসায় পিঠার আয়োজন, দুদিন পর সাফওয়ানা চলে যাবে সেই আয়োজন এসবে মোটামুটি বড়সড় চাপ পড়ে শারমিনের উপর। একা হাতে কিভাবে সামলাবে, সেই অযুহাত দেখালেন শারমিন। খালামনি আর যেতে পারলেন না। সন্ধ্যায় শারমিন চেয়েছিলেন পিঠা তৈরি করবেন, কিন্তু ইফাজ ও জোভান দুজনেই নিষেধ করলো এখন তারা কোনো পিঠা খাবে না। এমনিতেই গরমকাল, সারাদিন তৈলাক্ত খাবার খেয়ে রুচি টানবে না পিঠাতে। খালামনি তাই রেখে দিতে বললো, পিঠার আয়োজন সকালেই হোক।
সাফওয়ানা চেঞ্জ করে হাতমুখ ধুয়ে বাথরুম থেকে এসে দেখলো ইফাজ বারান্দায় দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত প্যান্টের পকেটে অন্যহাতে ফোন। সাফওয়ানা তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছতে মুছতে এসে পাশে দাঁড়িয়ে বললো,
“চেঞ্জ করবে না?”
“আমি যে জোভানকে নাম ধরেই ডাকি, বাবা মা কি নারাজ হন?”
“নারাজ হওয়ার কি আছে! উনারা কি জানেন না তোমরা ফ্রেন্ড।”
“এখন তো সম্পর্ক ভিন্ন, সেজন্য বলি।”
সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে বললো,
“তাহলে ভাই ডেকো।”
“ধুর! এতো বছরের অভ্যাস চেঞ্জ করা সম্ভব!”
“মনের ভেতর এতো উশখুশ কেন! চেঞ্জ করো যাও।”
“যাচ্ছি। বাইরে যাবে নাকি কোথাও ঘুরতে?”
“গেলে তো ভালোই হয়।”
“জোভানকে, ভাবিকে জিজ্ঞেস করে দেখো যাবে কি-না।”
“যাচ্ছি।”
ইফাজকে তাদের বিয়ের ছবি ওয়ালপেপারে সেট করতে দেখে সাফওয়ানা তোয়ালে কাধে রেখে দুহাত বাড়িয়ে ইফাজের কনুই বরাবর হাতে ধরে বললো,
“একটা কথা বললে রাগ করবে?”
“কি?”
“বলো আগে, রাগ করবে কি না?”
“কি কথা, সেটা না জেনে কিভাবে বলবো!”
“ধরো, রাগ করার মতোই কোনো কথা। তাহলে রাগ করবে কি না বলো?”
ইফাজ ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটিয়ে বললো,
“তাহলে তো রাগ করবোই।”
“থাক, তাহলে। বলবো না।”
সাফওয়ানা হাত সরিয়ে নিতে চাইলে ইফাজ অন্য হাতে তার হাত ধরে বাঁধা দিয়ে বললো,
“বলো, রাগ করবো না।”
“নুসরাত আপুর একটা ছবি দেখাবা?”
ইফাজ ফোন থেকে দৃষ্টি সরিয়ে সাফওয়ানার দিকে তাকিয়ে বললো,
“কেন?”
সাফওয়ানা ইতস্তত বোধ করে বললো,
“দেখতাম একটু।”
“দেখে কি হবে?”
“এমনি।”
ইফাজ আবার ফোনে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে বললো,
“ছবি নেই।”
“রাগ করছো কেন? আচ্ছা, থাক। দেখবো না।”
“এখানে রাগ করার কি আছে? সত্যিই নেই। থাকলে দেখাতাম। একসময় ছিলো, তার বিয়ের দিন সব ডিলিট করে দিয়েছিলাম। পরের বউয়ের ছবি ফোনে রাখার প্রয়োজন আছে? আমার বউয়েরটা থাকুক আমার ফোনে।”
সাফওয়ানা মুচকি হাসলো। কয়েক সেকেন্ড নিরব থেকে বললো,
“তার সাথে পরে কি আর কখনো দেখা কিংবা যোগাযোগ হয়নি তোমার?”
“উহুম, বিয়েতে দাওয়াত করেছিলো। যাইনি।”
“ইশ! কষ্ট দিয়ে আবার দাওয়াতও করে!”
“কাকে কষ্ট দিলো? তোমাকে?”
“আমাকে কেন দিবে? আমি চিনি তাকে!”
ইফাজ শরীর কাপিয়ে হেসে বললো,
“আমি তো সেটাই ভেবে নিয়েছিলাম। বাই দ্যা ওয়ে, সে আমাকে কষ্ট দেয়নি এমনকি আমিও তাকে কষ্ট দেইনি। কষ্ট দিয়েছে ভাগ্য। যার যতটুকু প্রাপ্য, সে ততটুকু পাবেই। দেখি, তার ফেসবুক আইডি পাওয়া যায় কি-না। যদি পাওয়া যায় এবং ছবি আপলোড করা থাকে তাহলে তোমার দেখার সৌভাগ্য হবে।”
সাফওয়ানা চলে গেলো, বাইরে যাবে কি না তা জিজ্ঞেস করতে। কিছুক্ষণ পর ফিরে এসে বললো,
“আপু একটু অসুস্থ তাই যাবে না, মা যেতে দিবে না। ভাইয়া বললো অন্য কোনোদিন যেতে। ঘরে বোরিং লাগলে হয় ছাদ থেকে ঘুরে আসতে, না হয় রাস্তা থেকে ঘুরে আসতে।”
“বোরিং না। এমনি বলছিলাম।”
“চলো, নিচে যাই। ভেলপুরি খেয়ে আসি।”
ইফাজ ছোট ছোট চোখ করে তার দিকে তাকিয়ে বললো,
“টাকা আছে? ভেলপুরি খাবে, বিল কে দিবে?”
সাফওয়ানা চোখ রাঙিয়ে বললো,
“কিপটে বর হলে চলবে না, আয় বুঝে ব্যয় করবে। কিপ্টামি করলে একেবারে ভেনিস করে দিবো।”
“উ…হু! তাই নাকি? কিভাবে করে ভেনিস? দেখি?”
বলতে বলতে সাফওয়ানার পেছনে হাত দিয়ে কাছে টানতে গেলেই সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে পিছিয়ে গেলো। ইফাজ মুচকি হেসে স্বাভাবিকভাবে তাকে ডাকলো,
“এসো।”
“উহুম।”
“এই যে, ছবি দেখার জন্য আসতে বলেছি।”
“আইডি পেয়েছো?”
“হুম।”
সাফওয়ানা এগিয়ে এসে ফোন হাতে নিয়ে ছবি দেখে বললো,
“মাশাআল্লাহ। সুন্দরই তো। উনি কি তার হাসব্যান্ড নাকি?”
“হুম।”
“নুসরাত আপু আমার চেয়েও বেশি সুন্দর তাই না?”
“অন্যের সাথে তুলনা করার জন্য কি আল্লাহ তোমার সৌন্দর্য তোমাকে দান করেছে? তার সৌন্দর্য তার কাছে, তোমার সৌন্দর্য তোমার কাছে।”
সাফওয়ানা মুখ চেপে হেসে বললো,
“ওহ্! তাই? আমি তো জানি আমার সৌন্দর্য তোমার কাছে। তুমি সুন্দর বললেই আমি নিজেকে সুন্দর মনে করবো, কুৎসিত বললে কুৎসিত মনে করবো।”
ইফাজ দুষ্টু হেসে তার কাছ ঘেঁষে দাঁড়ালো এবং এক হাতে জড়িয়ে ধরে বললো,
“আমাকে পাগলে পেয়েছে তো, তোমাকে সুন্দর বলবো! সুন্দরী উপাধি কি অযথা সৃষ্টি হয়েছে?”
সাফওয়ানা খিলখিলিয়ে হেসে উঠলো এবং বললো,
“এই ছবি তো গ্যালারিতে!”
“হুম, তোমাকে দেখানোর জন্য সেইভ করে নিয়েছি।”
“আইডির নাম কি?”
ইফাজ তার দিকে তাকিয়ে হাত থেকে ফোন নিতে নিতে বললো,
“এজন্যই তো সেইভ করে নিয়েছি। প্রথমে দেখবে ছবি, তারপর আইডি, তারপর ইনবক্সে হাই/হ্যালো, এরপর চলে যাবে বাড়ি!”
“এহ! অন্যের বাড়ি যাওয়ার জন্য আমি বসে রয়েছি তো! শুধু বেশি বেশি।”
“হুম, বেশিই। নিচে গেলে চলো, এসে পরেই চেঞ্জ করবো।”
“কি স্যুট কোট পরে আছে, গরম লাগছে না?”
“না। চলো।”
বের হতে হতে ওড়নার আঁচল তুলে সাফওয়ানার মাথায় দিতেই সাফওয়ানা তার দিকে তাকালো। ইফাজ মুচকি হেসে বললো,
“নতুন বউ না! ঘোমটা না দিলে বুঝা যায় না।”
সাফওয়ানা মুচকি হেসে ঠিকভাবে মাথায় ওড়না দিয়ে বের হলো। বেরিয়ে দেখলো ড্রয়িংরুমে বসে শ্বশুরের সাথে টিভি দেখতে দেখতে গল্প করছে জোভান। তাদের দেখে সে সাখাওয়াত সাহেবের কাছে তাদের নিয়ে বাইরে যাওয়ার কথা বলে বেরিয়ে এলো। অতঃপর শারমায়াসহ তারা চারজন ফ্ল্যাট থেকে বের হলো। নিচে এসে তিন মিনিটের পথ হেটে রাস্তার ধারে ভেলপুরি খেলো। অতঃপর ছোলা এবং কাসুন্দিতে মাখানো আমড়া আর পেয়ারা কিনে তারা বাসার ছাদে চলে এলো। বিল ইফাজই দিতো কিন্তু জোভান দিতে দিলো না। ছাদে খেতে খেতে গল্পগুজবে কাটলো প্রায় দু’ঘন্টা সময়। তারপর ফ্ল্যাটে এসেও ডিনার করতে করতে সবার সাথে কথাবার্তা, হাসিঠাট্টা মন্দ লাগছে না ইফাজের।