“হালাল প্রেম” পর্ব-৬

“হালাল প্রেম”
পর্ব-৬
(নূর নাফিসা)
.
.
মাগরিবের প্রায় পাঁচ মিনিট পর মেহমানদের আগমন। আশরাফ আহমেদ খান স্যার, তার স্ত্রী জুলেখা ইয়াসমিন ও দুই বছর বয়সের পুত্র সন্তান নিয়ে তার কন্যা আমাতুল জেভা এসেছে শারমায়াকে দেখতে। স্যারের মেয়ে জেভা শারমায়াকে দেখতেই “মাশাল্লাহ” বলে খুশি মনোভাব প্রকাশ করলেন। এমনিতে যেমন তেমন, স্যার সমন্ধ নিয়ে আসায় শারমায়ার লজ্জায় মরি মরি অবস্থা! না পারছে তাদের সাথে ফ্রি মাইন্ডে কথা বলতে আর না পারছে তাদের ইগনোর করে চলে যেতে! সাফওয়ানা পিচ্ছিটার সাথে ভাব জমিয়ে ফেলছে। খুব সুন্দর বাবুটা। তারা যতক্ষণ ছিলো, সাফওয়ানা ততক্ষণই পিচ্চির সাথে দুষ্টুমি করেছে। পিচ্চিটাও বারবার এই রুম থেকে সেই রুম দৌড়াদৌড়ি করছিলো। শারমায়ারও ইচ্ছে করছে কোলে নিয়ে একটু দুষ্টুমি করতে কিন্তু লজ্জা কাটিয়ে উঠতে পারছে না বিধায় তা আর সম্ভব হলো না। রাতে খাওয়াদাওয়া করে তারা চলে যাওয়ার পর শারমায়া হাফ ছেড়ে বাঁচলো। কিন্তু অস্থিরতা কাটেনি! মনের মধ্যে অজানা এক অস্থিরতা কাজ করছে। স্যারের ছেলের সাথে তার বিয়ের কথাবার্তা চলছে, তা জানতেই ভেতরের ধুকপুকানি সেকেন্ডের কাটার সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়ে চলেছে। কে সে? দেখতে কেমন? কি নাম তার? সে তো তাকে দেখলোই না কখনো। অথচ এদিকে এনগেজমেন্টের তারিখও নির্ধারণ করতে যাচ্ছিলো! অপরিচিত লোকটার পরিবারের কাছে তো জানতে পারলো যে, তার পরিবারের পছন্দের উপরই নির্ভর করে তার পছন্দ। আসলেই কি সে পছন্দ করবে শারমায়াকে!
ভেবে ভেবে কল্পনায় নানান ছবি আঁকতে লাগলো শারমায়া। নানান নামকরণ করতে লাগলো সাথে নানান অনুভূতি। এদিকে সাফওয়ানা সুষনার কাছে কল করে বলা শুরু করেছে শারমায়ার বিয়ের কথা। বিয়েটা হলে যেন তার চেয়ে বেশি খুশি কেউ হবে না! শারমায়ার ইচ্ছে করছিলো তার খুশির বারোটা বাজিয়ে ইচ্ছেমতো ঝগড়া করতে। কিন্তু স্বার্থ হাসিলের জন্য তা না করে খুব ভদ্রতার সাথে জিজ্ঞেস করলো,
“সাফু, তুই চিনিস তাকে?”
“কাকে?”
“পাত্রকে।”
সাফওয়ানা মস্করাস্বরূপ বললো,
“পাত্রকে চিনবো না আবার!”
“দেখেছিস কখনো?”
“আবার জিগায়!”
“কোথায় দেখেছিস?”
“কিচেনে।”
শারমায়া বিস্মিত হয়ে বললো,
“কিচেনে মানে!”
“কিচেনে মানে রান্নাঘরে। রান্নাঘর বুঝো না? পাকের ঘর বুঝো?”
“কিচেনে কি করে দেখলি তুই?”
“ও মা! পাত্র তো কিচেনেই থাকে! তুমি জানো না? দেখে এসো গিয়ে, চালের পাত্র, ডালের পাত্র, চায়ের পাত্র, তরকারির পাত্রসহ অনেক পাত্র আছে।”
শারমায়া রেগে বললো,
“সাফুর বাচ্চা! তোরে আমি ওইটা জিজ্ঞেস করছি!”
শারমায়াকে এগিয়ে আসতে দেখে সাফওয়ানা খাট ছেড়ে দৌড়ে বাথরুমে ঢুকে পড়লো। মাইরের হাত থেকে বাঁচার জন্য বাথরুম তার নিরাপদ জায়গা। শারমায়াও কম নয়। বাথরুমের দরজা বাইরে থেকে আটকে দিয়ে বললো,
“আজ রাত বাথরুমেই থাক তুই। গুড নাইট। হেভ এ সুইট ড্রিম উইথ বাথরুম। ”
সাফওয়ানা দরজা খোলার চেষ্টা করে দেখলো সত্যিই দরজা লক করা! তাই দরজায় নক করতে করতে বললো,
“ওই, দরজা খুলো।”
“উহুম।”
“খুলো, নয়তো আম্মুকে ডাকবো বলে দিলাম!”
“দে ডাক..”
সাফওয়ানা একবার তার মাকে ডাকলো কিন্তু মায়ের কোনো সাড়া না পাওয়ায় বললো,
“সব সত্যি বললে খুলে দিবা?”
“ভেবে দেখবো।”
“ওকে, কি জানতে চাও বলো?”
“প্রশ্ন তো আমি একবার করেছি ই। এবার মনে করে উত্তর দে।”
“ভুলে গেছি।”
“কমোডের ভেতর একটা ডুব দে, মনে পড়ে যাবে।”
“ছি! পেত্নী!”
“কে পেত্নী? ”
“তুই।”
“কে?”
“তুমি।”
“হিহিহি… পেত্নীর অবস্থান বাথরুমে হয়। তোর বর্তমান অবস্থান বাথরুমে। তাহলে আমি পেত্নী নাকি তুই?”
“তোমার প্রশ্ন ছিলো আমি দুলাভাইকে চিনি কি-না? রাইট? আমি তাকে চিনি। সে তোমার স্যারের একমাত্র ছেলে। এবার দরজা খোলো।”
“নাম কি তার?”
“নাম….ওহ, জোভান আহমেদ। এবার খোলো।”
“জোভান আহমেদ এবার খোলো! এটা আবার কেমন নাম!”
“কি ছ্যাচড়া মাইয়া রে! নিজের হবুর নাম নিয়ে ফাজলামো করে! দরজা খুলতে বলেছি।”
“সে দেখতে কেমন?”
“ওফ! আমি তাকে লাইভ দেখিনি, শুধুমাত্র ওই আপুটার ফোনে ছবি দেখেছি। অনেক হ্যান্ডসাম, গায়ের রঙ এডিট করা নাকি জানি না, উচ্চতা কতটুকু তা-ও জানি না, ফোনে তো আর তা বুঝা যায় না। মাথাভর্তি চুল আর চোখ ভর্তি সানগ্লাস।”
“চোখ ভর্তি সানগ্লাস মানে!”
“মানে, চার-পাঁচটা ছবি দেখেছি তো। বেশিরভাগই সানগ্লাস পরানো ছিলো।”
“তাহলে না এটা বলবি যে, ছবি ভর্তি সানগ্লাস। হুহ্! কথারও স্টেশন নেই।”
“ওকে, ফাইন। যতটুকু জানি তার সবটাই বললাম। এবার দরজা খুলো।”
“নামটা যেন কি বললি?”
“জোভান আহমেদ।”
“ওকে।”
“ওকে মানে? দরজা খুলো..”
“নেভার।”
“ওই, এইটা কিন্তু চিটিং! তুমি বলছো, আমি সব বললে দরজা খুলবা।”
“তুই তো এক মহা মিথ্যাবাদী রে! আমি কখন বললাম এটা? আমি তো বলছি ভেবে দেখবো। তুই যেহেতু প্রথমে বড় বোনের সাথে ফাজলামো করলি সেহেতু আমি ভেবে দেখলাম তোর আজ বাথরুমে থাকাটাই শ্রেয়।”
শুরু হলো সাফওয়ানার হামলা! শারমায়াকে বকাঝকাসহিত চিৎকার করে মাকে ডাকতে লাগলো এবং দরজায় ঢাকঢোল পেটাতে লাগলো।
“আম্মু…?মা…? ওই মা গো…!”
এভাবে একের পর এক হাক ছাড়তেই লাগলো। দরজা খোলা থাকায় চেচামেচি শুনে শারমিন সাখাওয়াত নিজের রুমে থেকেই বেশ কয়েকবার ধমক দিলেন। তবুও চেচামেচি থামছে না বিধায় হাতে ঝাড়ু নিয়ে তেড়ে এই রুমে এসে দেখলেন শারমায়া হাতে ফোন নিয়ে নিশ্চিন্তমনে খাটে বসে আছে আর সাফওয়ানা বাথরুমের দরজা প্রায় ভেঙে ফেলছে। শারমিন শারমায়ার উদ্দেশ্যে বললো,
“কি হয়েছে তোদের?”
“কোথায়! আমার তো কিছু হয়নি।”
“ওইটা এমন শুরু করছে ক্যা?”
“কি জানি! তোমার মেয়ে পাগল হয়ে গেছে বোধহয় ।”
এদিকে মায়ের কথা শুনে সাফওয়ানা বললো,
“আম্মু, দেখো বাইরে থেকে দরজা লক করে রাখছে তোমার শয়তান মাইয়া।”
“কোথায় দরজা লক করা? বাইরে আয়। বাইরে আয়…!”
সাফওয়ানা আবারও ভেতর থেকে দরজা খুলে দেখলো সত্যিই বাইরে থেকে লক খোলা! সে বেরিয়ে শারমায়াকে ভেঙচি কেটে বিড়বিড় করে বললো,
“দরজার লক খুলে কি সুন্দর করে ভদ্রমহিলা বসে আছে খাটে। যেনো কিছুই জানে না!”
এদিকে মাকে ঝাড়ু হাতে এগিয়ে আসতে দেখে সাফওয়ানা আবার দৌড়ে ঢুকে পড়লো বাথরুমে।
“দরজায় থাপ্পড় দিচ্ছিলি কেন? আয়, এখন দৌড়াস কেন!”
দরজা ভেতর থেকে লক করে সাফওয়ানা মায়ের প্রত্যুত্তরে বললো,
“আবার যেহেতু এখানেই পাঠাবা, তো বের করার কি প্রয়োজন ছিলো! হুহ! ”
“আর একবার দেখে নেই আর শুনে নেই কোনো ঝগড়াঝাটি আর চেচামেচি! এরপর দেখিস কি করি! ফাজিলের বাচ্চারা, এতো বড় হয়ে গেছে এখনো জ্বালিয়ে মারে!”
শারমিন ফুসতে ফুসতে বেরিয়ে গেলেন। তাদের কান্ড দেখে শারমায়া হাসতে লাগলো। সাফওয়ানা মায়ের চলে যাওয়া আন্দাজ করতে পেরে গোমড়ামুখু হয়ে বেরিয়ে এলো।
শারমিন ঝাড়ু রেখে আবার রুমে এলেন। শারমায়ার পাশে বসে বললো,
“শারমায়া, স্যারের ছেলেকে দেখেছিস কখনো?”
কথাটা শুনতেই আবার সেই অস্থিরতা ঘিরে ধরলো শারমায়াকে। সে মাথা দু’দিকে নাড়িয়ে “না” জবাব দিলো। শারমিন বলতে লাগলো…

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here