হুজুরের বউ যখন ডক্টর পর্ব-২১

0
1959

হুজুরের বউ যখন ডক্টর
লেখকঃ রাকিবুল ইসলাম
পর্বঃ২১

মেহেদি বেখেয়ালি ভাবে সিঁড়ি দিয়ে উঠতে গিয়ে হঠাৎ পা পিছলে পড়ে যায় সে।,মাথায় প্রচন্ড আঘত প্রাপ্তহয়ে ঘটনা স্থলেই জ্ঞান হারিয়ে ফেলে,। মেহেদীর পড়ে যাওয়া দেখে সবাই ছূটে চলে আসে মেহেদীর কাছে,এসে প্রথমে তাকে চেনার চেষ্টা করছে, সবাই সবাই কে বলাবলি করছে কে এই ব্যাক্তি,আর এভাবে পড়ে গেলেন কেন? ভির ঠেলে এক যুবক সামনে এগিয়ে এলো,আর বলল,

– এভাবেই কি সবাই চেয়ে চেয়ে দেখবেন,নাকি তাকে হাসপাতালে নেওয়ার ব্যবস্থাও করবেন। সবাই তার কথার সাথে মিলিয়ে বলল, হ্যা হ্যা তাই করা হোক

————————

সাথি তার বাচ্চাকে ভিরের মাঝের ব্যাক্তিটিকে একবার দেখতে চাইলো,কিন্তু ভির বেশি থাকায় সামনে যেতে পারলো না,তাই সেখান থেকে চলে এলো সে। পাশের একটা দোকানে থেকে একটা জুসের বোতল,একটা চিপ্পস,আর একটা পানির বোতল কিনে নিয়ে যেই না ভিতরে ঢুকতে যাবে,ওমনি এম্বুলেন্সের দিকে তার নজর পড়ে গেল। সেখানে সে দেখছে,একটা হুজুরের মত দেখতে কাকে যেন তুলে নিচ্ছে,কিন্তু,তাকে আমার মেহেদীর মতন দেখাচ্ছে কেন? আর অই রকম জুতা তো মেহেদীও পরে, তাহলে ওটা আবার মেহেদী নয়তো?

অনেকটা আবেগ নিয়েই এম্বুলেন্সের দিকে এগিয়ে যায় সে। এদিকে এম্বুলেন্স এ প্রায় তোলাই হয়েগেছে মেহেদীকে, এমন সময় একটা মেয়ে বলল,

– একটু দারান, কে এটা, কাকে নিয়ে যাচ্ছেন?.

– আমরা তো এনাকে চিনিনা,ইনিতো ভিতরের যাওয়ার সময় সিড়িতে পা পিছলে পড়ে গিয়েছিলেন, তাই ওনাকে হাসপাতালে নিয়ে যাচ্ছি,

– আমি কি ওনাকে একবার দেখতে পারি?

– জি অবশ্যই,

এম্বুলেন্স থেকে একটু বের করার পর তাকে দেখে সাথি থ মেরে দাঁড়িয়ে পড়লো,চোখ থেকে পানি প্পড়া শুরু হয়ে গেছে তার,কারন এটা আর কেউ না, মেহেদীই এটা।

– কি ব্যাপার, আপনি কি এনাকে চেনেন?

– সাথি কান্না করে দিয়ে বলল, জি,এটা আমার স্বামী।

সবাই বেশ অবাক হয়ে তাকিয়ে আছে তার দিকে।

-তো এতোক্ষন কোথায় ছিলেন আপনি? আর এনাকে দেখেন নি কেন,

– আসলে আমি…… এতোটুকু বলার আগেই আরেক জন বলল,

– পরিচয় পরে দিয়েন,আগ ওনাকে হসপিটাল নিয়ে জান,মাথায় মনে হয় গুরুতর আহত পেয়েছেন।

– হ্যা ঠিক বলেছেন,আপনিও চলে আসুন এই এম্বুলেন্স এ।

– ঠিক আছে।

মেহেদীর সাথেই গাড়িতে উঠে হাসপাতালের দিকে যেতে থাকে সাথি। আর কান্না করে বলতে থাকে।

– কেন এসেছিলেন আপনি? আপনাকে না বললাম আমার পিছু নিবেন না,আমি আর আপনাদের মাঝে থাকতে চাইনা,তবুও কেন চলে এলেন আপনি? আজ আমার জন্য আপনার কত কষ্ট পাচ্ছেন,। এই বলে কান্না করছে সে।

এদিকে এম্বুলেন্স সেই হাসপাতালেই এলো যেখানে জাফরীও আছে। একটা বেডে করে মেহেদীকে আনা হচ্ছিল আর সাথি কান্না করতে করতে তার সাথেই আসছিল,।

এই কয়দিনে হাসপাতালের প্রায় সবাই মেহেদীর সাথে পরিচিত হয়ে গেছে, তাই মেহেদীকে হাসপাতালে আনা মাত্রই সবায় এগিয়ে এসে বলতে লাগলো,

কি হয়েছে মেহেদীর,ওর এই অবস্থা কেন?

ভিরঠেলে মেহেদীকে ভিতরে আনা যাচ্ছিল না,এই দেখেতে পেয়ে নাসরীন বলল,কি ব্যাপার, কি হচ্ছে এখানে?

একজন বলে উঠলো, মেহেদী অনেক আঘাত পেয়েছে,তাই তাকে হাসপাতালে আনা হচ্ছে,

– কি বলছেন এসব,কই দেখি দেখি।

ভির কমিয়ে দিয়ে নাসরীন দেখতে পেল মেহেদী বেডে রক্তাক্ত অবস্থায় শুয়ে আছে,আর তার পাশেই সাথেই দারিয়ে আছে। সাথি কে বলল

– কি হয়েছে মেহেদী ভাইয়ের, এমন হলো কি করে?

এদিকে সাথি শুধু কান্নাই করে যাচ্ছে,কিছু বলছে না সে।

মেহেদীকে ইমারজেন্সিতে নেওয়া হলো,ভিতরে শুধু নাসরীন আর ডাক্তারেরা গেল। তাই সাথি দেই না করে বাচ্চাটাকে নিয়ে জাফরীর কেবিনে গেল।

এদিকে জাফরী সেই কখন থেকে মেহেদির জন্য অপেক্ষা করছে মেহেদির আসার কোন নাম গন্ধ নেই সে ভাবছে সাথী আপুর আবার কিছু হলো নাকি এখনো তাকে খুঁজে পাওয়া যায়নি কিন্তু এত সময় তো লাগার কথা না আর আমার এমনই বা লাগছে কেন যেন কিছু হয়েছে আমার সাথে

একটু পর কেবিনে সাথী প্রবেশ করল

জাফরি বলল আপু তুমি চলে এসেছো কোথায় গিয়েছিলে তুমি আমাদের একা রেখে জানো না তোমায় মিস করছি আর তুমি এভাবে কান্না করছো কেন হুজুর কোথায় তাকে তো দেখছিনাসাথী বলল

আসলে
আসলে কি
সাথে এবার জাফরিকে পুরো ঘটনাটা বলল এই শুনে জাফরি এক ছুটে বাইরে কেবিনে চলে গেল।

মেহেদীর কেবিনের সামনে গিয়ে কান্না করছে সে আর বলছে,বার বার কেন আমাদেরই উপর এমন বিপদ প্রভাবিত হয় প্রভু? আপনি কি আমাদের সাহায্য করবেন না?

অনেক্ষন পর নাসরীন সহ সকল ডাক্তারেরা বাইরে এলো। জাফরী বলল,

– কিরে আমার হুজুরের কি অবস্থা এখন?

– ২৪ ঘন্টা না হওয়া অবদি কিছুই বলা যাচ্ছে না। বেশি বেশি আল্লাহর কাছে দোয়া কর দেন মেহেদীভাই তারাতারি সুস্থ হয়।

সাথি আর জাফরী দুজনে একসাথে সাথে চুপচাপ হয়ে বসে আছে,কিছুক্ষন পর জাফরী বলল,

– আপু চলো দুজনে মিলে আল্লাহর কাছে সাহায্য চাই,আমার বিশ্বাস ওনি আমাদের কে নিরাশ করবেন না।

– জি আপু তুমি ঠিকই বলেছো,চলে তাহলে।
দুজনে মিলে ওজুকরে নামাজে দারিয়ে যাবে ঠিক এমন সময় জাফরী বলল,আপু তুমি কি নামাজ পড়বে?

কেন সালাতুল হাজত,

– ও,কিন্তু আমি তো অনেক দিন হলো পড়িনা তাই ভুলে গেছি,তুমি কি আমাকে একটু সাহায্য করবে?

– কেন নয় বোন,অবশ্যই,তবে এই সম্পর্কে পাঠকদেরও তো কিছু ধারনা দেওয়া দরকার তাই না?

– যেমন?

– যেমন ধরো…
হাজতের নামাজ কি?
উত্তরঃ # সালাতুল হাজাত বা ‘প্রয়োজনের নামাজ’ একটি বিশেষ নফল ইবাদত।
.
মানুষের যখন বিশেষ কিছুর
# প্রয়োজন হয় কিংবা শারীরিক-মানসিকভাবে কোনো # দুশ্চিন্তা দেখা দেয় তখন এ নামাজ পড়তে হয়।
.
হুযায়ফা (রাঃ) বলেনঃ
রাসুল (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) যখন কোন সংকটে পড়তেন, তখন সালাতে রত হতেন।
[আবু দাউদঃ ১৩১৯; সালাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-৩১২; ছহিহুল জামেঃ হা/৪৭০৩; মিশকাতঃ ১৩১৫]
.
এই বিষয়ে হযরত ইবরাহিম (আঃ) এর ঘটনা স্মরণ করা যেতে পারে।
যখন তিনি অপহৃত হয়ে মিশরের লম্পট বাদশাহ’র নিকট উপনিত হলেন ও অত্যাচারি বাদশাহ তার নিকট এগিয়ে গেল, তখন তিনি অজু করে সালাতে রত হয়ে আল্লাহ’র নিকট সাহায্য প্রাথনা করে বলেছিলেনঃ ‘হে আল্লাহ! এই কাফেরকে তুমি আমার উপর বিজয়ি করোনা।’
সংগে সংগে আল্লাহ তার ডাকে সাড়া দিয়েছিলেন এবং ঐ লম্পট বাদশাহ’র হাত-পা অবশ হয়ে পড়েছিল।
তিন-তিনবার ব্যর্থ হয়ে অবশেষে বিবি সারাকে সসম্মানে মুক্তি দেয়।
এবং বহু মুল্যবান উপঢৌকনাদি সহ তার খিদমতের জন্য হাজেরাকে তার সাথে ইবরাহিমের (আঃ) নিকট পাঠিয়ে দেয়।
[বুখারীঃ ২২১৭; কেনা-বেচা অধ্যায়-৩৪, অনুচ্ছেদ-১০০; আহমাদ-৯২৩০।
সনদ সহিহ]
.
বিশেষ কোন হালাল চাহিদা পুরনের জন্য আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে “সালাতুল হাজত” বলা হয়।
[ইবনু মাজাহঃ হা/১৩৮৫; সালাত অধ্যায়-২, অনুচ্ছেদ-১৮৯]
.
সালাতুল হাজত নামাজের আলাদা কোনো নিয়ম নেই।
.
# নিয়মঃ স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়বে।
# নিয়ত রাখবেনঃ দুই রাকাত সালাতুল হাজত পড়ছি। যেহেতু কুরআন হাদীসে এটি আদায় করার আলাদা কোনো নিয়ম বর্ণনা করা হয়নি। তাই এই নামাজ সূরা ফাতিহার সাথে যেকোন সূরা দিয়ে পড়া যায়। অর্থাৎ অন্যান্য স্বাভাবিক নামাজের মতোই উত্তমভাবে অজু করে দুই রাকাত নফল নামাজ পড়তে হবে।
.
নামাজ শেষে অর্থাৎ সালাম ফেরানোর পর আল্লাহ তায়ালার হামদ ও সানা (প্রসংসা) পাঠ করে [হতে পারে সূরা ফাতিহার ১ম আয়াত] এবং নবী করিম (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম) এর ওপর দরুদ শরিফ পাঠ করে [যেকোন দরুদ শরিফ, দরুদে ইব্রাহিম একবার পড়লে ভালো]
# নিজের_মনের_কথা ব্যক্ত করে আল্লাহর নিকট দোয়া করবে।
.
দোয়ার ক্ষেত্রে বিশেষভাবে হাদিস শরিফে নিম্নোক্ত দোয়া পাঠের বর্ণনা আছে।
.
দোয়াটি হলোঃ-
ﻻَ ﺇِﻟَﻪَ ﺇِﻻَّ ﺍﻟﻠَّﻪُ ﺍﻟْﺤَﻠِﻴﻢُ ﺍﻟْﻜَﺮِﻳﻢُ ﺳُﺒْﺤَﺎﻥَ ﺍﻟﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺮْﺵِ ﺍﻟْﻌَﻈِﻴﻢِ ﺍﻟْﺤَﻤْﺪُ ﻟِﻠَّﻪِ ﺭَﺏِّ ﺍﻟْﻌَﺎﻟَﻤِﻴﻦَ ﺃَﺳْﺄَﻟُﻚَ ﻣُﻮﺟِﺒَﺎﺕِ ﺭَﺣْﻤَﺘِﻚَ ﻭَﻋَﺰَﺍﺋِﻢَ ﻣَﻐْﻔِﺮَﺗِﻚَ ﻭَﺍﻟْﻐَﻨِﻴﻤَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺑِﺮٍّ ﻭَﺍﻟﺴَّﻼَﻣَﺔَ ﻣِﻦْ ﻛُﻞِّ ﺇِﺛْﻢٍ ﻻَ ﺗَﺪَﻉْ ﻟِﻲ ﺫَﻧْﺒًﺎ ﺇِﻻَّ ﻏَﻔَﺮْﺗَﻪُ ﻭَﻻَ ﻫَﻤًّﺎ ﺇِﻻَّ ﻓَﺮَّﺟْﺘَﻪُ ﻭَﻻَ ﺣَﺎﺟَﺔً ﻫِﻲَ ﻟَﻚَ ﺭِﺿًﺎ ﺇِﻻَّ ﻗَﻀَﻴْﺘَﻬَﺎ ﻳَﺎ ﺃَﺭْﺣَﻢَ ﺍﻟﺮَّﺍﺣِﻤِﻴﻦَ
উচ্চারণঃ ‘‘লা- ইলাহা ইল্লাল্লাহুল ‘হালি-মুল কারি-ম, সুবহা-নাল্লাহি রব্বিল ‘আরশিল ‘আযীম।
আল’হামদুলিল্লাহি রব্বিল আলামিন, আছআলুকা মু-জিবাতি রাহমাতিক;
ওয়া আজা-ইমা মাগফিরাতিক,
ওয়াল গনি-মাতা মিং কুল্লি বিররিউ ওয়াছ ছালা-মাতা মিং কুল্লি ইছমিন লা- তাদা’আলি- জাম্বান ইল্লা- গফারতাহু ওয়ালা- হাম্মান ইল্লা- ফাররাজতাহু ওয়ালা- হা-জাতান হিয়া- লাকা রিদং ইল্লা- ক্বদাইতাহা- ইয়া- আর’হামার র-হিমি—ন৷”
(- মানে এক আলিফ টান)
.
অর্থঃ- “আল্লাহ ছাড়া কোন ইলাহ নেই। তিনি অতি সহিষ্ণু ও দয়ালু, সকল দোষ-ক্রটি থেকে পবিত্র তিনি, মহান আরশের প্রভু।
সকল প্রশংসা আল্লাহর, তিনি সারা জাহানের রব।
আপনার কাছেই আমরা যাঞ্ছা করি, আপনার রহমত আকর্ষণকারী সকল পূণ্যকর্মের ওয়াসীলায়, আপনার ক্ষমা ও মাগফিরাত আকর্ষণকারী সকল ক্রিয়াকাণ্ডের বরকত, সকল নেক কাজ সাফল্য লাভের এবং সব ধরনের গুনাহ থেকে নিরাপত্তা লাভের।
আমার কোন গুনাহ যেন মাফ ছাড়া না থাকে।
কোন সমস্যা যেন সমাধান ছাড়া না যায় আর আমার এমন প্রয়োজন যাতে রয়েছে আপনার সন্তুষ্টি তা যেন অপূরণ না থাকে, হে আর রাহমানুর রাহিমীন; হে সর্বশ্রেষ্ঠ দয়ালু।”
(ইবনু মাজাহ ১৩৮৪, তিরমিজী ৪৭৯)
.
সুতরাং দোয়ার ক্ষেত্রে হাদিস শরিফে বর্ণিত উপরোক্ত দোয়াটি অন্যান্য দোয়ার সাথে নামাজের শেষে # বিশেষভাবে পড়া যেতে পারে।
.
তবে দুয়াটি পড়তেই হবে–এমন নয়।
আপনি ২রাকাত নফল হাজতের(প্রয়োজনের) নামাজ শেষ করে আপনার মত করে # দোয়া করলেও কোনো অসুবিধা নেই।
.
# সালাতুল_হাজত_কখ
ন_পড়া_যাবে_নাঃ
.
নিচের ৫টি সময় বাদে যেকোন সময় পড়তে পারবেন-
# যেসময় কোন নামাজ পড়া যায় নাঃ (ফরজ/সুন্নত/নফল)
—– ১- সূর্যোদয় এবং তার পরে 15 মিনিট।
২-দ্বিপ্রহর এবং এবং তার আগে পরে 5 মিনিট 5 মিনিট করে 10 মিনিট এবং
৩-সূর্যাস্ত ও তার পূর্বে 15 মিনিট।
এই ৩ সময়ে সকল প্রকার
নামাজ পড়া নিষিদ্ধ।
তবে ওই দিনের আসরের চার রাকাত ফরজ নামাজ কেউ না পড়ে থাকলে সূর্যাস্তের সময় পড়ে নিবে।
#যেসময় কোন নফল নামাজ পড়া যায় নাঃ
—- ১- সুবহে সাদিক থেকে সূর্যোদয় পর্যন্ত ফজরের দুই রাকাত সুন্নত নামাজ ব্যতীত কোন সুন্নত বা নফল নামাজ পড়া নিষেধ এবং
২- আসরের ফরজ নামাজের পরে আর কোন সুন্নত না নফল নামাজ পড়া নিষেধ।
তবে এ সময় কাজা নামাজ ও সিজদায়ে তেলাওয়াত আদায় করা যায়।
.
# সালাতুল_হাজত_কত_দিন_পড়বঃ
যেহেতু বিশেষ কোন হালাল চাহিদা পুরনের জন্য আল্লাহ’র উদ্দেশ্যে দুই রাকাত নফল সালাত আদায় করাকে সালাতুল হাজত বলে, আপনার চাহিদা পূর্ন হওয়ার আগ পর্যন্ত যতদিন আপনি পড়তে চান পড়তে পারেন। হ্যা, দিনে একাধিকবারও এই নফল নামাজ পড়া যাবে। দুয়া কবুলের জন্য সালাতুল হাজতের পাশাপাশি তাহাজ্জুদের নামাজ পড়েও দোয়া করতে পারেন ]
______________

– আচ্ছা আমি এবার আদায় করে নিচ্ছি,

– হুম।

দুজনে মিলে সালাতুল হাজত নামাজে দাঁড়িয়ে গেল,

অনেকক্ষন নামাজ পড়ে কান্নাকাটি করতে থাকে প্রভুর কাছে।

কিছুক্ষন পর এশা আজান হলো,দুজনে একিসাথে এশা নামাজ টা আদায় করে তসবিহ তাহলিল করছে আর জাফরী হুজুরের কথা ভেবে মন খারাপ করে বসে আছে। সাথি বলল,

– বোন তুমিকি এখনো আমার উপর রেগে আছো?

– নাহ তো কেন? আমি তোমার উপর রাগ করবো কেন?

– এই যে আজ আমার জন্য তোমরা এতো বছর নিজেদের থেকে দূরে ছিলে,আবার যখন একহতে চাইলে ঠিক তখনি আবার একটা ঝর…..

– নাহ বোন, আসলে আল্লাহ তায়ালা তার বান্দাদের কে কঠিন থেকে কঠিনতম বিপদের মূখে ফেলে দেখতে চান যে আমরা তাকে ভুলে গেছি কিনা।
আর আমরা যদি তাকে না ভুলে তার ইবাদতে তারই থেকে সাহায্য চাই তবে তিনি অনেক খুশি হন আর কাওকে ফিরিয়ে দেন না। তবে যাদের ফিরিয়ে দেন তাদের বোঝা প্রয়োজন আল্লাহ হয়তো এর থেকেও বেশি নেয়ামতপূর্ণ বস্তু আমার জন্য নির্ধারণ করে রেখেছেন।

– আপু তুমি অনেক ভালো,আর হ্যা,আমিও হার মানবো না,আজ রাতে তাহাজ্জত নামাজে আমি আল্লাহর কাছে সাহায্য চাইবো,

– ইনশাআল্লাহ, তবে একটা জিনিস কি তুমি জানো আপু?
– কি জিনিস?

– আপু তাহাজ্জত নামাজ কত রাকাত?

– কেন তুমি জানো না বুঝি?

– হুম জানি,কিন্তু তবুও যদি একবার বলতে তাহলে ভালো হতো,আসলে আমাদের পাঠক গনতো এসব একদম পড়ে না,এমন কি জানেও না,তাই যদি…

– আচ্ছা বলছি আমি শোন তাহলে.

– আচ্ছা বলো,

তাহাজ্জুদ শব্দটি আরবি। এর ব্যবহার পবিত্র কোরআনে আছে। তাহাজ্জুদ শব্দটি নিদ্রা যাওয়া ও জাগ্রত হওয়া এই পরস্পরবিরোধী দুই অর্থে ব্যবহৃত হয়। পবিত্র কোরআনের সূরা বনি ইসরাইলে ৭৯নং আয়াতের অর্থ এই যে, রাতের কিছু অংশ কোরআন পাঠসহ জাগ্রত থাকুন।
.তাহাজ্জুদ নামাজ একটি নফল ইবাদত। তবে এটি নফল ইবাদতগুলোর মধ্যে অন্যতম একটি ইবাদত। তাহাজ্জুদের নামাজ পড়ার জন্য গভীর রাতে ঘুম থেকে জাগতে হয়, এজন্য তাহাজ্জুদ নামাজের সওয়াব ও ফজিলত অনেক বেশি।

তাহাজ্জুদের নামাজ নবী (সা.)-এর জন্য অতিরিক্ত ফরজ হিসেবে নির্দিষ্ট ছিল। আমাদের তাহাজ্জুদের নামাজ ফরজ নয়, বরং সুন্নতে মুয়াক্কাদা। অবশ্য এই নামাজ নেককার ও আল্লাহভীরুদের বৈশিষ্ট্য।তাহাজ্জুদ নামাজ কু-প্রবৃত্তি দমনে অত্যন্ত শক্তিশালী ও কার্যকরী ভূমিকা পালন করে। হৃদয় ও মননকে নির্মল করে।

পবিত্র কোরআনে ইরশাদ হয়েছে, ‘নিশ্চয়ই রাতে ঘুম থেকে ওঠা মনকে দমিত করার জন্য অধিক কার্যকর। ওই সময়ে পাঠ করা (কোরআন তেলাওয়াত বা জিকির) একেবারে যথার্থ।’ (সুরা মুজ্জাম্মিল, আয়াত : ৬)

অন্য আয়াতে বলা হয়েছে, ‘আর আল্লাহর প্রিয় বান্দা তারা, যারা তাদের রবের দরবারে সিজদা করে এবং দাঁড়িয়ে থেকেই রাত কাটিয়ে দেয়।’ (সুরা ফুরকান, আয়াত :৬৪)

তাহাজ্জুদ নামাযের সময় শুরু হয় অর্ধ রাতের পর। রাতের শেষ তৃতীয়াংশে তাহাজ্জুদ পড়া উত্তম। তবে ঘুম থেকে জাগার সম্ভাবনা না থাকলে ইশার ‍নামাজের পর দুই রাকাত সুন্নতের পর ও বিতরের আগে তা পড়ে নেয়া জায়েয আছে। তবে পূর্ণাঙ্গ তাহাজ্জুদের সওয়াব ও মর্যাদা পেতে হলে, রাত ২টা বা ৩টার দিকে উঠে নামায আদায় করা জরুরি।

শেষ রাতে মানুষ যখন গভীর ঘুমে মগ্ন থাকে, তখন তাহাজ্জুদ আদায়কারীরা আল্লাহর ভালোবাসায় নিদ্রা ত্যাগ করে জেগে ওঠে। আল্লাহ তাআলা ইরশাদ করেন, ‘তারা শয্যা ত্যাগ করে তাদের প্রতিপালককে ডাকে আশায় ও আশঙ্কায়। আর আমি তাদের যে রিজিক দিয়েছি, তা থেকে তারা ব্যয় করে।’ (সুরা সাজদা, আয়াত : ১৬)

শুধু নামাজ আদায় নয়, রাতের শেষ ভাগে আল্লাহর দরবারে কান্নাকাটি করা ও ক্ষমা প্রার্থনা করা খাঁটি ঈমানদারের অন্যতম বৈশিষ্ট্য। ঈমানদারদের গুণাবলি সম্পর্কে কোরআনে বলা হয়েছে, ‘তারা ধৈর্যশীল, সত্যবাদী, অনুগত ব্যয়কারী ও রাতের শেষ প্রহরে ক্ষমাপ্রার্থী।’ (সুরা আলে ইমরান, আয়াত : ১৭)

তাহাজ্জুদ নামাজ পাঁচ ওয়াক্ত নামাজের পর শ্রেষ্ঠ নামাজ। মহানবী (সা.) বলেছেন, ‘রমজানের পর সর্বশ্রেষ্ঠ রোজা হলো আল্লাহর মাস মুহাররমের রোজা। আর ফরজ নামাজের পর সর্বশ্রেষ্ঠ নামাজ হলো রাতের (তাহাজ্জুদের) নামাজ।’ (মুসলিম, হাদিস নং : ১১৬৩)

তিনি আরো বলেন, ‘আল্লাহ তাআলা প্রতিদিন রাতের শেষ তৃতীয়াংশে নিচের আসমানে অবতরণ করেন এবং বলেন, কে আমাকে ডাকবে, আমি তার ডাকে সাড়া দেব! কে আমার কাছে কিছু চাইবে, আমি তাকে দান করব! আর কে আমার কাছে ক্ষমা চাইবে, আমি তাকে ক্ষমা করব!’ (বুখারি ও মুসলিম)

এখন প্রশ্নঃ১.তাহাজ্জুদের নামায কত রাকাত .?

আবু সালামা ইবনে আব্দুর রহমান (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি হযরত আয়েশা (রা.) কে জিজ্ঞাসা করেন যে, রমযানে নবীজীর নামায কেমন হত? তিনি উত্তরে বলেন, রাসূলুল্লাহ (সা.) রমযানে এবং রমযানের বাইরে এগারো রাকাতের বেশি পড়তেন না।

প্রথমে চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা সম্পর্কে জিজ্ঞাসা করো না! এরপর আরও চার রাকাত পড়তেন, যার সৌন্দর্য ও দীর্ঘতা তো বলাই বাহুল্য! এরপর তিন রাকাত (বিতর) পড়তেন। -সহীহ বুখারী ১/১৫৪, হাদীস ১১৪৭; সহীহ মুসলিম ১/২৫৪, হাদীস ৭৩৮; সুনানে নাসায়ী ১/২৪৮, হাদীস ১৬৯৭; সুনানে আবু দাউদ ১/১৮৯, হাদীস ১৩৩৫; মুসনাদে আহমদ ৬/৩৬, হাদীস ২৪০৭৩

আব্দুল্লাহ ইবনে আবী কাইস বলেন, অর্থাৎ, আমি হযরত আয়েশা রা.-এর কাছে জিজ্ঞাসা করলাম যে, নবীজী বিতরে কত রাকাত পড়তেন? উত্তরে তিনি বলেন, চার এবং তিন, ছয় এবং তিন, আট এবং তিন, দশ এবং তিন। তিনি বিতরে সাত রাকাতের কম এবং তেরো রাকাতের অধিক পড়তেন না। -সুনানে আবু দাউদ ১/১৯৩, হাদীস ১৩৫৭ (১৩৬২); তহাবী শরীফ ১/১৩৯; মুসনাদে আহমদ ৬/১৪৯, হাদীস ২৫১৫৯

উল্লেখিত বর্ণনা দ্বারা বুঝা গেল রাসূলুল্লাহ (সা.) কখনো তাহাজ্জুদ নামায চার রাকাত পড়তেন, কখনো ছয় রাকাত পড়তেন। কখনো আট রাকাত পড়তেন। কখনো দশ রাকাত পড়তেন। সুতরাং তাহাজ্জুদের নামায ১০ রাকাত পর্যন্ত পড়া রাসূলুল্লাহ (সা.) থেকে আমরা সহীহ হাদীসে পাই। এর চে’ বেশি পড়া যাবে না, এমন নয়। যেহেতু এটি নফল নামায তাই যতো বেশি পড়া যায় ততোই সওয়াব। তাই ইচ্ছেমত পড়া যায়।

সেই সাথে চার রাকাতের কম পড়লে তা তাহাজ্জুদ হবে না, বিষয়টি এমনও নয়। তাই দুই রাকাত পড়লেও তা তাহাজ্জুদ নামায হিসেবেই গণ্য হবে। সময় কম থাকলে দুই রাকাত পড়ে নিলেও তাহাজ্জুদ নামায পড়া হয়েছে বলে ধর্তব্য হবে। রাতের এবং দিনের নফল নামাযের নিয়ত চার রাকাত করেও নিয়ত করা যায়, এমনিভাবে দুই রাকাত করেও নিয়ত করা যায়। কোন সমস্যা নেই।

প্রশ্নঃ ২.এই নামাজের জন্য কি নির্দিষ্ট কোনো সূরা আছে?

উত্তরঃ তাহাজ্জুদ নামায পড়ার জন্য নির্দিষ্ট কোন সুরা নেই। যে কোন সুরা
দিয়েই এই নামায আদায় করা যাবে। তবে যদি বড় সুরা বা আয়াত মুখুস্ত থাকে
তবে, সেগুলো দিয়ে পড়াই উত্তম। কারন রাসুল (সাঃ) সব সময় বড় বড় সুরা
দিয়ে তাহাজ্জুদ নামায আদায় করতেন। তাই আমাদেরও বড় সুরা মুখুস্ত
করে, তা দিয়ে তাহাজ্জুত নামাদ আদায় করা উচিৎ।
যাইহোক, বড় সুরা মুখুস্ত না থাকলে যে কোন সুরা দিয়েই নামায আদায়
করা যাবে। নিয়ম হল ২রাকাত করে করে, এই নামায আদায় করা। প্রত্যেক
রাকাতে সুরা ফাতিহা পড়ার পর, অন্য যে কোন সুরা মিলানো। এভাবেই
নামায আদায় করতে হবে।

প্রশ্নঃ৩.তাহাজ্জুদ নামাজের আগে কি কিছু করতে হয়…

তাহাজ্জুদ নামাযের আগে করণীয়ঃ
হুযাইফা (রাযিঃ) বলেন, রাসুল (সাঃ) যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতেন তখন
মিসওয়াক করতেন এবং আমাদেরকেও মিসওয়াক করার হুকুম দেয়া হত,
আমরা যখন তাহাজ্জুদ পড়তে উঠতাম, অতঃপর নবী (সাঃ) অযু করতেন
(মুসলিম) । তারপর দু’আ ও তাসবীহগুলি দশবার করে পড়তেন ।
তারপর নামায শুরু করতেন (আবু দাউদ, মেশকাত ১০৮ পৃঃ)
দোয়া গুলো হলো:
(১) দশবার “আল্লাহু আকবার (আল্লাহ সর্বশ্রেষ্ঠ)
(২) দশবার আলহামদুলিল্লাহ (সমস্ত প্রশংসা আল্লাহর জন্যই)
(৩) দশবার সুব্হানাল্লাহি ওয়া বিহামদিহী (আমি আল্লাহ প্রশংসার সাথে তাঁর
পবিত্রতা ঘোষনা করছি)
(৪) দশবার সুব্হানাল মালিকিল কদ্দুস (আমি মহা পবিত্র মালিকের গুণগান করছি)
(৫) দশবার আসতাগফিরুলাহ (আমি আল্লাহর কাছে ক্ষমা ভিক্ষা করছি)
(৬) দশবার লা ইলাহ ইল্লাল্লাহু (আল্লাহ ছাড়া ইবাদতের যোগ্য আর কেউ
নেই)
(৭) দশবার আল্লাহুম্মা ইন্নী আঊযুবিকা মিন দীক্বিদ্দুনিয়া ওয়া দীক্বি
ইয়াওমিল ক্বিয়ামাহ (হে আল্লাহ! আমি এই জগতের এবং পরকালের সঙ্কট
থেকে তোমার আশ্রয় প্রার্থনা করছি)

এখন তাহাজ্জতের সময় হয়ে গেছে,জাফরী আর সাথী একসাথে নামাযে দাড়িয়ে যায়। দুজনের প্রভুর কাছে আকুল আবেদন করছে যেন মেহেদী কে সুস্থ করে দেওয়া হয়।

সকাল বেলা ঠিক ৭ঃ৩৫ মিনিট এর দিকে মেহেদীর জ্ঞান ফিরে আসে,সে দেখতে পায় তার হাতের কাছে জাফরী শুয়ে আছে, সে আলতো করে জাফরীর মাথায় হাত বুলিয়ে দেয়। একটু পর সে লক্ষ করলো সে হাসপাতালের কেবিনে শুয়ে আছে,প্রথমে বেশ অবাক হয়ে যায় সে, এরপর যখন জাফরী জেগে ওঠে তখন মেহেদী বলল, কি ব্যাপার জাফরী আমি এখানে কেন? আর কি হয়েছে আমার?

জাফরী এক ধ্যানে তাকিয়ে আছে মেহেদীর দিকে,সে জাফরীকে একটু ধাক্কা দিয়ে বলল, কি হলো কিছু তো বলো?

জাফরী আত্নহারা হয়ে বলল,হুজুর হুজুর হুজুর….
আজ আমি অনেক খুশি,আর আপনিও সুস্থ হয়ে গেছেন,আলহামদুলিল্লাহ, আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেছেন।

– এসব কি আবল তাবল বলছো তুমি? কি হয়েছিল আমার? আর আমি এখানে কেন?.

– হুজুর আপনার কি সব মনে পড়ে গেছে?

– কি মনে পড়েছে আমার,ওফ জাফরী কিছু তো বলো?

– দারান আমি আসছি,
এই বলে একছূটে নামাজের ঘরে চলে আসে জাফরি এসে বলল,

– আপু,খুশির সংবাদ আছে,

সাথি এখনো মোনাজাত শেষ করেনি, তাই জফরী একটু অপেক্ষা করতে লাগলো, মোনাজাত শেষে যেই না চোখ তুলি তাকিয়েছে অমনি জাফরী তাকে টান দিয়ে দার করালো,আর জরিয়ে ধরে কান্না করে দিলো।

তার এই রকম আচরনে বেশ ভয় পেয়ে যায় সাথি, সে জাফরীকে সান্তনাদিতে দিতে বলল,

জাফরী,কি হয়েছে ওনার,তুমি কান্না করছো কেন? বলো জাফরী,প্লিজ বলো,আমাত অনেক টেন্সন হচ্ছে।

– আপু ওনি একদম সুস্থ হয়ে গেছেন।

– আলহামদুলিল্লাহ, এটা তো খুশির খবর,

– হুম এর সাথে আরেকটা সংবাদ আছে,

– কি?

– ওনার সব কিছু মনে পড়ে গেছে,

– কি বলছো তুমি এসব,তাহলে তো আল্লাহ আমাদের দোয়া কবুল করেছেন,

– হুম,তারাতারি চলো,অনার জ্ঞান ফিরেছে,

– আচ্ছা চলো।

দুজনে মিলে একসাথে কেবিনে প্রবেশ করলো,

এরপর,

কেমন গল্প লেখছি জানিনা,তবে ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন, জাযাকাল্লাহ খইরান, গল্প শেষ হতে আর এক পাঠ আছে,দয়াকরে কেউ নিরাশ হবেন না,আর এরপরই নতুন গল্প আসছে,ইনশাআল্লাহ 🥰🥰

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here