#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৬
পড়ে যাওয়ার আগেই সমুদ্র ধরে ফেলে ফুলকে। এ দৃশ্য দেখে অভ্রর ঠোঁটে থেকে হাসি সরে খানিকটা হিংসে বিরাজ করতে লাগলো আর ফুলের ভাইদের মধ্যে ভয় এসে ধাক্কা দেয়।আকাশ আর পলাশ ফুলের কাছে এসে ফুলকে আঁকড়ে ধরে বললো,
-পুতুল বোন ঠিক আছিস তুই?
-হ্যাঁ নানা ঠিক আছি কিচ্ছু হয় নি আমার। পড়ে যাই নি তো আমি ভয় পেও না।
আশিক ফুলের একদম কাছে এসে জড়িয়ে ধরে বললো,
-সরি বোন,আমার জন্য তুই ব্যাথা পেতে যাচ্ছিলি।
-আরে দাদা তুমি মন খারাপ করছো কেনো কিচ্ছু হয় নি আমার।আমি পড়ে যাওয়ার আগেই তো সমুদ্র ভাইয়া ধরে ফেলেছে।
-যদি পড়ে যেতিস অনেক ব্যাথা পেতিস!
ভাইয়েরা এমন রকম করা শুরু করলো যেনো ফুল পড়েই গিয়েছিলো। ফুলের বদলে একটু কেঁদে দিলে পারলে হয়তো
ঠান্ডা হতো।প্রত্যেকেই ফুলের প্রতি ওর ভাইদের ভালোবাসা দেখে ইম্প্রেস হয়ে গেছে।ভাইয়েরা এতো আদরের রাখে বলেই ফুল এতো ছোটো বাচ্চাদের মতো করে সব সময়।
অনু অভ্রর কাছে দাঁড়িয়ে বললো,
-ভাইয়া দেখেছো ফুলকে ওর ভাইয়েরা কতো ভালোবাসে!
-কেনো আমরাও কি তোকে কম ভালোবাসি নাকি?
-কম না ঠিক কিন্তু দেখো আমি একটা সময় ভাবতাম আমিই হয়তো পৃথিবীর সব থেকে আদুরে বোন। কিন্তু এখানে তো সব মিথ্যে।ফুল কত্ত আদরের ওর ভাইদের কাছে!
-কারণ ফুলের সাতটা ভাই আর তোর মাত্র চারটা ভাই।এখানে সাত ভাইয়ের এক বোন।আর আমাদের ক্ষেত্রে চার ভাইয়ের চার বোন।
-তাও কথা।ফুল সত্যি খুব লাকি তাই না?
-হুম তাই ই তো মনে হচ্ছে।
এসব কিছুর মধ্যে মাথায় চিন্তা চাপলো ফুলের প্রতি ওর সব বন্ধুর একটা আলাদা অনুভুতি কাজ করে শুধু কাব্য বাদে।কাব্য ফুলকে নিজের বোনের চোখেই দেখে।
-আরে ভাই অভ্র কিছু একটা কর!তোর চোখের সামনে তো সবাই ফুলের ঘাণ নিয়ে শেষ দিলো।শেষ বেলায় তুই তো ফুলের পাপড়িও পাবি না! কিছু একটা করতে হবে না হলে চলছে না।
মনে হচ্ছে হুরপরীর থেকে ওদের দূরে রাখার জন্য আমার ভিলেনের ক্যারেকটারে ঢুকে যেতে হবে।পরে না হয় হিরোর ক্যারেকটারে ঢুকে যাস ভাই অভ্র!
অভ্র নিজের মধ্যেকার জড়তা ভেঙে ফুলের সাথে টুকিটাকি কথা বলতে লাগলো।আর সবার মতো ফ্রি হতে লাগলো একটু একটু করে। থেকে থেকে ফুলের দুষ্টুমি গুলোকে খুব স্বায় দিচ্ছে।
অনেক্ষণ ঘুরাঘুরির পর সবাই সন্ধ্যার আগে বাড়ি ফিরে এলো।
রাতের সাথে সাথে বাড়িটা উজ্জ্বল হয়ে উঠছে।পুরো বাউন্ডারিটা আলোকসজ্জায় ভরপুরো।রোজ প্যাটেলের বাইরে অনেকটুকু রোড জুড়ে আলোকসজ্জায় ডেকোরেশন করা হয়েছে।ভেতরে পুরো বাগানের সব গুলো গাছে ঝাড়বাতি লাগানো হয়েছে গাছগুলো জ্বলজ্বল করছে।বিয়ের সম্পূর্ণ অনুষ্ঠান বাড়িতেই করা হচ্ছে কোনো কমিউনিটি সেন্টারে যাওয়া হচ্ছে না কারণ বিয়ে বাড়ির প্যান্ডেল রোজ প্যাটেলের ভেতরই সাজানো হচ্ছে।
একপাশে বড় করে গায়ে হলুদের স্টেজ সাজানো হয়েছে আজকেই প্রায় সব কাজ কমপ্লিট করে রেখেছে কারণ যদি বৃষ্টি নামে তাতে কাজ পিছিয়ে যায় সেই জন্য এতো তোড়জোড়।
রাতের বেলা বাগানের মাঝখানে একটা চেয়ারে বসে আছে ফুল আর ওর গায়ের সাথে হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে নিয়াজ, পাশে বসে আছে বর্ষা আর মিনা ,আর ফুলের ঠিক সামনে একটা ছোট্ট পিচ্চি (নিয়াজের থেকে বয়সে একটু ছোটো) ছেলেকে ধরে রেখেছে বাদল আর বকুল।
ফুল রাগী মেজাজে অই ছেলেটার দিকে তাকিয়ে বললো,
-তুই যে গাড়ীটাতে হাত দিয়েছিস গাড়ির মালিকের থেকে পারমিশন নিয়েছিস?
-………………
পিচ্চি টা ভয়ে কাবু হয়ে আছে।ফুল ধমক দিয়ে বললো,
-কি হলো বলছিস না কেনো?
ছেলেটা মাথা দিয়ে না করলো।তুই এসেছিস সেই সকাল আর সকাল থেকে দেখছি তুই খুব লাফালাফি করছিস তোকে আমি একবার ওয়ার্নিং দিয়েছিলাম না ভদ্রভাবে থাকতে?
-…………………!
-নিয়াজ ওর গালে দুটো থাপ্পড় লাগা।
নিয়াজ সাথে সাথে পিচ্চি ছেলেটার গালে থাপ্পড় মারলো দুটো।ছেলেটা ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কাঁদতে লাগলো।
-এই খবরদার কাঁদবি না। কাঁদলে গলা টিপে মেরে এখানে বালি চাপা দিয়ে রাখবো কান্না থামা।
ছেলেটা না চাইতেও ভয়ের বশে কান্না থামালো অনেক কষ্টে।
-গাড়িটা ভেঙেছিস ভেঙে আবার জায়গা মতো রাখতে গিয়ে ধরা খেয়েছিস নিয়াজের হাতে, তাও তুই স্বীকার করিস নি কেনো?বড় ভাবীর সামনে মিথ্যে কেনো বলেছিস গাড়িটা নিয়াজ ভেঙেছে?
ছেলেটা আবার কেঁদে দিলো আবার।
ফুল নিয়াজের উদ্দ্যেশে বললো,
-নিয়াজ ওকে এবার পাঁচটা থাপ্পড়, পাঁচটা কিল দে।
নিয়াজ কারেন্টের গতীতে বসিয়ে দিলো সব কটা। ছেলেটা এবার কিছুটা জোরে জোরে কাঁদতে লাগলো অমনিই ফুল গলা চেপে ধরলো,আর বললো,
-এই বাদল যা তো আমার ছুরিটা নিয়ে আয় ও কথা শুনছে না মেরে ফেলবো ওকে এখন।বড্ড বেয়াদব তুই কান্না থামা না হলে মেরে ফেলবো।
ছেলেটা কান্না থামিয়ে ভয়ার্ত দৃষ্টিতে তাকিয়ে বললো,
-না না মারবেন না আমায়! মারবেন না। আমি নিয়াজকে নতুন গাড়ী কিনে দেবো , আমি মাকে বলবো গাড়ি কিনে দিতে তারপর দিয়ে দেবো গাড়ি।
-তোর গাড়ি বিক্রি করে তুই টানা খাইস ব্যাটা।গাড়ি ভেঙেছিস সেটা তোর অপরাধ না, অপরাধ হলো তুই নিয়াজের কাছে জিজ্ঞেস না করে গাড়িতে হাত দিয়েছিস,আর গাড়ি ভাঙার পর মিথ্যে কথা বলেছিস, অস্বীকার করেছিস।তাঁর জন্য তোর শাস্তি হবে।
-আরো মারবেন আমাকে?
-কান্না করলে মার খাবি। আর কান্না না করলে খাবি না।
-ঠিক আছে কান্না করবো না।
-হুম এখন তুই এখানে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে একশোবার কান ধরে উঠ বস করবি,আর নিয়াজ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে গণনা করবি।যদি ও থেমে যায় ওর কানে ধরে দিবি চিমটি।
-ঠিক আছে ফুপিমণি!
সত্যি সত্যি ফুলের বিচার মতো ছেলেটা কান ধরে উঠবস করতে লাগলো,আর নিয়াজ বসে বসে গণনা করছে।
ফুলের এই দুষ্টুমি বাগানের এক পাশে দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে অভ্র দেখছিলো আর মিটিমিটি হাসছিলো।
আকাশে জ্বল জ্বল করছে ঈদের চাঁদ।খুব সম্ভবত আশিকের বিয়ের পরের রাতে ভরা পূর্ণিমা পড়বে।তাই এখন চাঁদটা প্রতি রাতে একটু একটু করে ভরে উঠছে।চাঁদের দিকে তাকালে চোখ ধাঁধিয়ে যাচ্ছে।বাগানে এমনিতেই আলোকসজ্জার আলো তার উপর চাঁদের আলো, হাল্কা মৃদু বাতাস।আকাশে সাদা রঙের মেঘ ভেসে যাচ্ছে স্পষ্ট দেখা যাচ্ছে।সব মিলিয়ে পরিবেশটা বেশ রমরমা!
রাতে ডিনারের পর বাগানের এক পাশে গোল হয়ে চেয়ার পেতে বসেছে অভ্র , কাব্য,অয়ন,সমুদ্র,আবির আর ফুলের সব ভাইয়েরা । এখানে গানের রিহার্সাল হচ্ছে।অভ্রর হাতে গিটার, আকাশের হাতে গিটার, আর আশিকের হাতে বাঁশি কারণ আশিক অনেক ভালো বাঁশি বাজাতে পারে।টুকিটাকি গান গাওয়ার চেষ্টা করছে সবাই আর মেয়ের দলেরা বাড়ির ভেতর নাচের রিহার্সাল করছে।
এদের মধ্যে ফুল একজন নিরপেক্ষ প্রার্থী। যে ছেলে মেয়ে দুই গ্রুপেই স্ক্রল করতে পারবে।
ফুল একবার ছেলদের গ্রুপের রিহার্সাল দেখছে আবার মেয়েদের রিহার্সাল দেখছে।ফুলের এসব নাচ গান আসে না, ওর শুধু দুষ্টুমি আর খেলাধুলাটাই আসে।
বাগানের মাঝখানে ফুল ওর গ্যাং আর বাড়িতে আসা কিছু বাচ্চা কাচ্চা নিয়ে ছুটাছুটি করছে দুষ্টুমি করছে।
অভ্র গিটার বাজাচ্ছে বাজাচ্ছে এর মধ্যে ওর নজর ফুলের দিকে যাচ্ছে।
-কি অদ্ভুত মেয়েটা একটা সেকেন্ডের জন্যও স্থির থাকছে না। ছুটাছুটি দুষ্টুমি একটার পর একটা করেই যাচ্ছে।কে বলবে এই মেয়ে কলেজ পড়ুয়া!
মনে মনে কথা গুলো বলছে আর মুচকি মুচকি হাসছে।হঠাৎ করেই দেখে ফুল নেই চোখের সামনে। অভ্র গিটার বাজানো বাদ দিয়ে এদিক ওদিক ঘাড় ঘুরিয়ে খুঁজতে লাগলো এমন সময় কেমন যেনো বাম কানে কেউ ফুঁ দিচ্ছে এমনটা অনুভব হচ্ছে,অভ্র ঘাড় ঘুরিয়ে দেখতে যাবে এমন সময় বেড়ালের মুখোশ পড়া একজন শব্দ করে উঠলো,
-মেওওউউ!
অভ্র খানিকটা ছিটকে গেলো।ভালো করে তাকিয়ে দেখে ফুল এটা। খিলখিল করে হাসছে মেয়েটা অভ্রর দিকে তাকিয়ে।ওর সাথে সবাই হেসে দিলো
-হি হি হি! অভ্র ভাইয়া ভয় পেয়েছে কি মজা আমাকে দেখে ভয় পেয়েছে!
অভ্র মুচকি হেসে উত্তর দিলো,
-সত্যিই ভয় পেয়ে গিয়েছিলাম।
-হি হি হি..
অয়ন ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-ফুল তুমি এখানে আসো তো কথা আছে।
ফুল অয়নের পাশে গিয়ে দাঁড়ালো, একটা চেয়ার টেনে বসতে বললে ফুল বসলো।ব্যাপারটা অভ্রর নজরে খুব লাগলো কিন্তু প্রকাশ করতে পারলো না।এমন সময় কাব্য অভ্রর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো,
– তোর কি আন ইজি ফিল হচ্ছে?প্লিজ ভাই কিছু মনে করিস না।আমি ফুলকে বলে দেবো ও তোকে যেনো ডিস্টার্ব না করে।তুই প্লিজ মাইন্ড করিস না!
-আরে কি বলছিস আমি কিছু মনে করি নি।আর ওকে কিছু বলতে হবে না বাচ্চা আছে একটা একটু দুষ্টুমি করে করুক সমস্যা নেই।দুষ্টুমি করার বয়স ই ওর।আর দুষ্টুমি করছে ফুল বেয়াদবি করছে না তো।এখানে মাইন্ড করার প্রশ্নই আসে না।
অভ্রর মুখে এই উত্তর শুনার জন্য কাব্য সম্পূর্ণ অপ্রস্তুত ছিলো।অনেকটা অবাক হলো যে অভ্রর গায়ে ফুলের নামে এলার্জি সে অভ্র বলছে ইট’স ওকে!খুবই ভাববার বিষয়।
-আচ্ছা ফুল তুমি গান পারো?
-হ্যাঁ পারি তো আমি অনেক গান পারি।
-তাই নাকি তাহলে আমাদের শুনাও একটা গান।
অয়নের এই কথা শেষ হতে না হতেই কাব্য বললো,
-আরে অয়ন থাক না ওর গান গাইতে হবে না তোরা গা।
-কেনো গায়বেনা কেনো?
-আরে গলায় প্রেশার পড়বে ওর। সমস্যা আছে বুঝবি না তোরা গান গা, ফুল শুনোক।
অয়নের সাথে তাল মিলিয়ে আবির সমুদ্রও গান শুনতে চাইলো ফুলের কন্ঠে,
-আরে ভাই তোর সমস্যা কোথায়।ফুল গায়বে বলছে।আর তুই মানা করছিস!
-ভাইরে ভাই কি করে বলি ফুলের কন্ঠের গান কানে নেয়ার মতো না।(মনে মনে)
কাব্য ফুলের ভাইদের দিকে অসহায়ের নজরে তাকালো,ফুলের সব ভাই কৌশলে না করতে লাগলো,ফুলকে গান গায়তে হবে না। কিন্তু কে শুনে কার কথা। অভ্র খানিকটা আন্দাজ করতে পারলো কিছু একটা ঘাবলা আছে, তাই চুপচাপ দুই দলের গান কাড়াকাড়ি দেখে যাচ্ছে অবশেষে কেউ ই অয়ন সমুদ্র আবিরকে বুঝাতে পারলো না ব্যাপার টা, ফুল গলায় কাশি দিয়ে চেয়ারে জোড়াশীন পেতে গান গাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে, আবির অভ্র আকাশকে বললো গিটার বাজানো শুরু করতে আর আশিককে বাঁশি।উত্তরে আকাশ বললো,
-কিছুই বাজাতে হবে না।পুতুলের গলা থেকেই সব বাজনাই বের হবে অটোমেটিক্যালি।অল ইন ওয়ান সিংগার আমাদের বোন।
-ওয়াও এতো ভালো গান গায় ফুল!তাহলে ফুল শুরু করো তোমার গান।
ফুল অয়নকে প্রশ্ন করলো,
– ভাইয়া কি গান গাইবো?ঝাকানাকা গান নাকি নিরামিষ?
অয়ন উত্তরে বললো ,
-তোমার ইচ্ছে।
-বাংলা নাকি হিন্দি?
-তোমার ইচ্ছে।
-ঠিক আছে, তাহলে শুরু করলাম।
-করো।
ফুল গান গাওয়া শুরুর আগেই যারা জানে ওর গানের ইতিহাস তাঁরা আগে আগেই কান চেপে ধরতে লাগলো।আর ফুল চোখ বন্ধ করে গান গাওয়া শুরু করলো,
যেতে যেতে পথে পূর্ণিমা রাতে চাঁদ উঠেছিলো গগণে,
দেখা হয়েছিলো তোমাতে আমাতে কি জানি কি মহা লগনে ,
শালা চাঁদ উঠেছিলো গগণে!
অই হই ডিস্কু দিবানিইইই..
কি করে তোকে বলোবো…..চিনলি নারে তুই!
অই হই ধুপ চিক ধুপ ধুপ চিক,
ডার্লিং ও আমার ডার্লিং হ্যালো হাও আর ইউ,
ও কিরিং কিরিং বাজে রে এই মনে কলিংবেল!
ডিজে ডিজে…!
বন্ধু তিনদিন তোর বাড়িতে গেলাম তোরে পাইলাম না বন্ধু তিন দিন,
স্টেশনে রেলগাড়িটা, মাইপা চলে ঘড়ির কাঁটা…
জাস্ট চিয়াও জাস্ট চিয়াও……!
ফুলের এই ভুলভাল লিরিক্সের সাগর থেকে মহাসাগর আর আকাশের গর্জনের ন্যায় কণ্ঠস্বর নিয়ে গাওয়া গান শুনে আবির, অয়ন, সমুদ্র আবেগে আপ্লুত! জীবনে এমন ধাচের আর সুরের গান কোনোদিন শুনে নি।ফুলের গান শুনে আস্তে আস্তে গানের “গ ” টাও ভুলে যাচ্ছে এদিক ওদিক তাকিয়ে দেখে ওদের পাশে কাব্য থেকে শুরু করে ফুলের সাত ভাইয়ের একটা ভাইও নেই।শুধু দেখা যাচ্ছে ওদের সামনে বরাবর একমাত্র অভ্র নিরীহ প্রাণীর মতো চুপচাপ বসে আছে।ফুল এখনো চোখ বন্ধ করে গান গেয়েই যাচ্ছে।আবির, সমুদ্র, অয়ন, একে একে বিভিন্ন ছুতো দিয়ে উঠে যেতে লাগলো এখান থেকে।ফুলের সামনে একমাত্র অভ্রই আধা প্যারালাইজড হয়ে বসে আছে।গান গাওয়া শেষ হতেই ফুল চোখ খুলে তাকালো আর আশে পাশে কেউ নেই,শুধু অভ্র ছাড়া।
-আরে সবাই গেলো কোথায়?
ফুলের এই কথায় অভ্র হুঁশে এলো,
-আসলে তুমি এতো ভালো গান করেছো তাই সবাই তোমাকে অ্যাওয়ার্ড দেবে বলে মনস্থির করেছে।সবাই মিলে হয়তো হসপিটালে সরি শপিং মলে গিয়েছে!
-এতো ভালো গান করেছি আমি?যে সবাই আমাকে পুরষ্কার দিবে বলে নগদে মার্কেটে চলে গেছে!
-সারা দিনে যতো টা তোমার ঘোরে পড়েছিলাম, গান শুনে সব ঘোর কেটে গেছে আমার!কিছুক্ষণের জন্য মনে হচ্ছিলো কানে ইয়ারফোন লাগিয়ে মাহ্ফুজ রহমানে গান শুনলেও ভালো লাগতো।ভাগ্যিস কানের পর্দা ফাটে নি (মনে মনে)
ফুলের ভাইয়েরা অব্ধি ওর সব অত্যাচার সহ্য করতে রাজি হলেও ওর গানের অত্যাচার শুনতে একদম ই নারাজ!বেসুরের কন্ঠের কথা বাদ ই দিলাম,গানের লিরিক্সের যে ১৬টা বাজিয়ে দেয় সেটা খুবই অগ্রাহ্যকর!
ফুল বসে বসে কল্পনা করছে সবাই ওর গানে মুগ্ধ হয়ে খুব বাহ!বাহ! করছে।গান গাওয়া ফুলের স্বপ্ন। আর একটা সময় ও অনেক বড় শিল্পী হবে।আকাশের দিকে তাকিয়ে ফুল গান নিয়ে নিজের ভবিষ্যৎ কল্পনায় মগ্ন হয়ে গেলো ক্ষণিকের জন্য।
অভ্র খেয়াল করলো,ফুল আকাশের দিকে তাকিয়ে মিটিমিটি হাসছে আর কিছু একটা ভাবছে,কিন্তু অস্থির ভাবে কেমন নড়চড়া করে যাচ্ছে।এসেছে পর থেকে ফুলকে এখন অব্ধি এক সেকেন্ডের জন্য স্থির ভাবে কোথাও বসে থাকতে দেখেনি।না হলেও বসে বসে গা ঢোলাবে, হাত পা নাচাবে।
-আচ্ছা তোমায় একটা কথা জিজ্ঞেস করি কিছু মনে করো না?
ফুল আকাশ থেকে নজর সরিয়ে অভ্রর দিকে তাকালো,
-বলুন ভাইয়া।
-তুমি কখনো স্থির থাকো না?
-কেনো এই যে স্থির হয়ে আছি।
অভ্র ফিক করে হেসে দিলো,
-ভালো করে দেখো তুমি গা ঢোলাচ্ছো।স্থির নও তুমি।
-ও আচ্ছা।তাহলে আর কি করার।
-আমার সামনে তুমি চুপচাপ ৫মিনিট বসে থাকো তো,একদম নড়বে না, শুধু নিশ্বাস নেবে।
-না আমি পারবো না আমার দম বন্ধ হয়ে আসে।
– এতো দুষ্টুমি করতে কেমন লাগে?
-খুব মজা লাগে।
-হুর রে এতো দুষ্টু হয়ো না।
অভ্রর মুখ ফসকে বেরিয়ে গেলো শব্দটা।
ফুল অভ্রর চোখের দিকে তাকিয়ে চোখ বড় বড় করে বললো,
-কে হুর?
-নাহ কিছু না।
ফুল পাল্টা প্রশ্ন না করে ডান দিকে বাম দিকে তাকালো।
-তুমি যদি পাঁচ মিনিট স্থির থাকতে পারো তোমাকে একটা জিনিস গিফট দেবো।
-কে দেবেন আগে বলেন?
-গিটার বাজানো পারো?
-নাহ! ছোটো নানাকে বলেছিলাম, বলে গিটার বাজাতে গেলে নাকি হাত কেটে যায় তাই শেখায় না কখনো। কিন্তু আমার খুব ইচ্ছে শেখার।
-আমি শেখাবো।
-সত্যি!?
-আগে পাঁচ মিনিট স্থির হয়ে বসো।
-ওকে।
-থ্রি…টু…. ওয়ান..ইউর টাইম স্টার্ট নাও!
ফুল কিছুক্ষণ চুপচাপ বসে রইলো এক মিনিট পার হতে না হতেই পা কাঁপানো শুরু করলো,অভ্র খেয়াল করলো ব্যাপারটা।
-ওমহু হচ্ছে না পা নাড়াচ্ছো।আবার প্রথম থেকে..
ফুল মুখ শুকনো করে অভ্রর দিকে তাকালো,
-আর নাড়াবো না কিন্তু প্রথম থেকে না।
-না প্রথম থেকে করো,আর কথাও বলবে না একদম স্ট্যাচু হয়ে থাকো।
চলবে…………