হৃদয়ের ওপারে তুমি ❤ পর্ব-৮

0
1915

#হৃদয়ের_ওপারে_তুমি
#গল্প_ভাবনায়_ফারজানা_ইয়াসমিন_রিমি (আপু)
#লেখিকা_রিয়া_খান
#পর্ব_৮
আগ্রহ নিয়ে এদিক ওদিক তাকাতাকি করছে অভ্র, এই বিশেষ সুরের সন্ধানে।
কিছুক্ষণ পর অনেকটা নুপুরের আওয়াজের মতো এলো । তারপর
আবার সুর ভেসে আসতে লাগলো,কিন্তু এবার আগের থেকে অন্যরকম ছন্দের মনে হচ্ছে।আর আগের থেকে বেশি মন মাতানো লাগছে।কান পেতে শুনতে শুনতে অভ্রর দৃষ্টির সীমানা পেরিয়ে নজর গেলো আকাশদের ফ্ল্যাটের পাশের ফ্ল্যাটে ছাদের বাগানে একটা আকাশী রঙের রাউন্ড ড্রেস পড়া নারী, হালকা কোঁকড়া ঘন লম্বা চুল আলগা দেয়া।উল্টো দিক ঘুরে পায়ের উপর পা তুলে বসে ভায়োলিন বাজাচ্ছে আপন মনে আর তাঁর পাশে আরেক নারী পায়ের নূপুর খোলে হাতে নিয়ে ঝমঝম করে বাজনা বাজাচ্ছে বেহালার সুরের সাথে তাল মিলিয়ে। অভ্র ছাদের রেলিংয়ের একদম কিনারায় গিয়ে দাঁড়ালো।

গত রাতের ঘটনা,
-আচ্ছা ফুল এই ভায়োলিন টা কার?
-ওটা আমার।
-বাহ! তুমি ভায়োলিন বাজাতে পারো?
-একটা একটু পারি আর কি।
-কার থেকে শিখেছো?
-জানো আমি যখন ক্লাস ফাইভে পড়ি আমার বার্থডে তে ছোটো দাদা আমায় ভায়োলিন গিফট করে।কিন্তু কোনো দিন শিখতে চাই নি আমি।যখন ক্লাস এইটে পড়ি তখন আমার শিখতে মন চাইলো আর ছোটো দাদার থেকে আমি একটু একটু করে শিখলাম, ছোটো দাদা আমায় একটু একটু করে শেখায়।আমি কোনো ভাবেই পেরে উঠছিলাম না।দু বছর ধরে একটু একটু বাজাতে পারি।
-ও তার মানে আশিক ভাইয়াও বাজানো পারে!উনি কোথা থেকে শিখেছে?
– ছোটো দাদার একটা ফ্রেন্ড সার্কেল ছিলো কলেজ লাইফে তারা গান বাজনা করতো,আর তাদের থেকেই শিখেছে গিটার বাজানো,পিয়ানো বাজানো, বাঁশি বাজানো, আর ভায়োলিন ।
-একটু শুনাও না ফুল।
-এখন!
-হুম।
-এখন তো রাত আর খুব টায়ার্ড ও লাগছে।চলো তোমাকে ভোর বেলা শুনাই?ভোর বেলা সব কিছু শান্ত শিষ্ট থাকে,পরিবেশ টাও অনেক মনোরোম থাকে,সাথে পাখিদের কিচিরমিচির আওয়াজের সাথে ভায়োলিনের টোন খুব জমে উঠে।
-ঠিক আছে, মনে থাকে যেনো।
-থাকবে থাকবে শুনতে যখন চেয়েছো অবশ্যই শুনাবো
-ওকে, তোমাকে এডভান্স থ্যাংক ইউ।

ভোর হতেই অনু ফুলের ঘাড় চেপে ধরে ভায়োলিন বাজাতে,অনুর কথা মতো ফুল অনুকে নিয়ে ছাদে বসে ভায়োলিন বাজাচ্ছিলো ছাদের অন্য পাশে বসে,কিছুক্ষণ বাজানোর পর থেমে গিয়ে ছাদের এপাশে বসে আবার বাজানো শুরু করে।

মনোযোগ দিয়ে সুরটা তো শুনছেই, চালাচ্ছে উল্টো দিক ঘুরে বসা বলে চেহারাটা দেখায় ব্যর্থ হচ্ছে।যদিও বোঝাই যাচ্ছে ওখানে অনু আর ফুল,তবুও ফুলকে দেখতে মন চাইছে খুব।

ঠিক এই সময় অভ্রর পেছন থেকে একটা কণ্ঠস্বর ভেসে এলো।
-এতো কষ্ট করে দেখার চেষ্টা করছিস কেনো।ডাইরেক্ট ভায়োলিনওয়ালাকে ডাক দিলেই তো পারিস।
অভ্র পেছনে ঘুরে দেখলো কাব্য।দাঁত কেলিয়ে হেসে হেসে কথাটা বলছে।
-তোরা আমার সাথে এতো বড় প্র‍্যাংক করতে পারলি?
-এবাড়িতে অদ্ভুতুড়ে অদ্ভুতুড়ে কাজ তো একজন ই করে জানা কথায়।রাতে বলার পর মাথায় নিলি না এখন তো ঠিকি উদঘাটন করতে এসেছিস।
-তোরা যেভাবেই বলিস না কেনো, ভোর বেলা আমার ধারণা বদলেই গিয়েছিলো।মনে হচ্ছিলো রাতে তোরা সত্যিই বলছিলি।কে জানে এটা ফুলের কাজ!

অভ্র থেমে গিয়ে কিছু একটা ভেবে বললো
-আচ্ছা আসলেই ফুল ওটা?
-হ্যাঁ ওটা ফুল, দাঁড়া ডাক দিচ্ছি তাহলেই দেখবি।
-আরে ডাকিস না বাজাতে দে।যদিও অবিশ্বাস্য ব্যাপার এটা! ফুলের গানের অবস্থা এতো বাজে আর সেই ফুল এতো ভালো ভায়োলিন বাজায়! ইট’স জাস্ট আনবিলিভেবল!
-অবিশ্বাস্য হলেও এটাই সত্যি!
-যে নারীর কন্ঠে কোনো সুর নেই সেই নারীর হাতে সুর! আই থিংক গান গাওয়ার থেকে এটা বেশি কষ্টকর, অনেক মনোযোগী হতে হয় বাজানোর সময়।

কাব্য পকেটে হাত দিয়ে সোজা হয়ে দাঁড়িয়ে বলতে লাগলো,
-ফুল প্রায় ই এরকম বেহালা বাজায়,বিভিন্ন সুরে।শুনতে বেশ লাগে।একদম অন্যরকম সুর লাগায় ও।
-রাতে ওভাবে ডাহামিথ্যে বললি কেনো দুজন?
-আরে ওটা তো আমরা মজা নেয়ার জন্য বলেছিলাম।
-আমি কি ছোটো বাচ্চা নাকি আমার সাথে মজা নিবি এসব ব্যাপারে!
-হি হি হি…জানিস অভ্র মাঝে মাঝে তোকে খেপাতে বেশ ভালোই লাগে।
-ছোটো বেলা থেকে ওটাই ভালো পারিস তুই।
-হুম্মম।বাই দ্যা কথার মধ্যে কথা, আচ্ছা ঢাকাতে তো তুই ফুলের নাম শুনলে খুব জ্বলতিস, টাংগাইল আসার পরও কি অনুভুতি টা একই আছে?

কাব্যর প্রশ্নে অভ্র কি উত্তর দেবে ঠিক বুঝতে পারছে না।ভুলেও যদি মুখ ফসকে বলে দেয় যে ফুলকে দেখার পর থেকে ভেতরে ভেতরে ফুলের জন্য আলাদা একটা দুর্বল অনুভুতি কাজ করছে।কাব্য তো মজা উড়াবেই সাথে সব কটা ফ্রেন্ড। তখন অভ্রর হয়ে যাবে মাথা হট আর রেগে মেঘে টাংগাইল ছেড়ে চলেও যেতে পারে।সব কিছু ক্যালকুলেট করে অভ্র উত্তর দিলো।
-তোর বর্ণনা শুনে মনে হচ্ছিলো ফুল মেয়েটা অনেকটা ন্যাকা টাইপের। দুষ্টু কিন্তু অনেক বোকা, সহজ-সরল মেয়ে।কিন্তু বাস্তবে একদমই উল্টো ভাইদের অতি আদরের কারণে বোকা সেজে থাকতে ভালোবাসে কারণ ওর ভাইয়েরা ওকে অই রূপেই দেখতে চায়। কিন্তু ভেতরে ভেতরে মেয়েটা হেভবি চালাক আছে।কথা একটাও মাটিতে পড়তে দেয় না।রিভেঞ্জ নেয়ার ব্যাপারটাই খুব একটিভ। ছোটো হোক বা বড় সবার বিচার বিচক্ষণতার সাথেই করে ও।কিন্তু এটা ঠিক মেয়েটা খুব সরল,কারো দুঃখ দেখতে পারে না।
-জাস্ট এক দিনে তুই ওকে এতোটা পর্যবেক্ষণ করে ফেলেছিস?যা আমি এতোদিনেও জানতে পারিনি!
-অভ্র মানুষ চিনতে কখনো ভুল করে না।এক দেখায় ই কম্পিউটারের মতো স্ক্যান করে তার ভেতরের দোষ গুণ গুলো বের করে ফেলে।
কাব্য হেসে হেসে বললো,
-তুই ডক্টরি না পড়ে, ইঞ্জিনিয়ারিং পড়তিস। কিছু একটা আবিষ্কার করে ফেলতিস এতো দিনে আ’ম শিউর।

-যাহ কি যে বলিস না!
– বৌমণি ঠিকি বলে,
তুই যদি সাইকোলজিস্ট হোস তাহলে অনেক ভালো নাম কামাবি।টপ সাইকোলজিস্টদের মধ্যে একজন হবি।
-ভাই এবার কিন্তু বেশি প্রশংসা হয়ে যাচ্ছে।বাদ দে এটা।
-আচ্ছা বাদ দিলাম।এখন প্রশ্নের উত্তর দে আমার।
-কোন প্রশ্নের?
-এখনো বিরক্ত লাগে ফুল নাম টাকে?

অভ্র একটা বড় নিশ্বাস ফেলে বললো,
-সারা রাত রামায়ণ শুনে সকালে বলে,সীতা কার বাপ!
-মানে?

অভ্র তুচ্ছ এক পিছ হাসি দিয়ে ছাদে থেকে চলে গেলো। কাব্যও অভ্রর পেছন পেছন ছুটতে লাগলো।

সকাল হতে না হতেই বাকি যেসব আত্মীয় স্বজন আসা বাদ ছিলো তাঁরা সবাই আসছে। সকালে আয়মানের স্ত্রীর বড় ভাই ও বোন পরিবার সহ এসেছে, কবিতার বড় বোনের এক ছেলে আর ভাইয়ের দুই ছেলে। আমানের নানা নানু গত কাল এসেছে।

সকালে ব্রেকফাস্টের পর সবাই বসে রেস্ট নিচ্ছে ফুল অনুকে নিয়ে বর্ষা, বকুল, বাদল,মীনার সাথে গল্প করছে।

অনুর সাথে ফুলের এতো ভাব হয়েছে যা করছে অনুকে সাথে নিয়ে করছে।অনুও খুব ভক্ত হয়ে গেছে ফুলের আর ফুলের গ্যাংয়ের।

বেলা উঠতেই প্রচুর রোদ উঠেছে, গতকালই ভালোছিলো কি সুন্দর বৃষ্টি আর আকাশ মেঘলা ছিলো, শরৎকালের আবহাওয়া বোঝা বড্ড মুশকিল!এই রোদ,এই মেঘকালো, এই বৃষ্টি। আজ বেশ গরম ও পড়েছে। যদিও বিয়ে বাড়ির পুরো প্যান্ডেল তাবু টানিয়ে রাখা হয়েছে তাই রোজ প্যাটেলে রোদ স্পর্শ করতে না পারলেও গরম টা বেশ পড়েছে।

অভ্ররা ব্রেকফাস্ট শেষে আকাশদের ড্রয়িংরুমেই গল্প করছিলো সাথে ভাবীরাও কবিতা ওর ভাই, ভাইবউ, বোন, বোনের জামাইয়ের সাথে পরিচয় করিয়ে দেয়। ওদের গল্পের আসরে সবাই উপস্থিত শুধু ফুল আর অনুকে দেখা যাচ্ছে না।ফুল তো অনুকে নিয়ে ওর গ্যাংয়ের সাথে বাইরে। তবে আজ রোজ প্যাটেলের বাইরে বের হয় নি। বাড়িতে আসা আত্মীয়দের মধ্যে আরো কিছু ফুলের সমবয়সী ছেলে মেয়ে ওদের সাথে যোগ দিয়েছে।

সবাই মিলে গোল্লাছুট খেলছে।অনু আগে কখনো গোল্লাছুট খেলে নি তাই কৌতুহল নিয়ে ওদের সাথে খেলছে। প্যান্ডেলের ভেতর অনেক গুলো স্ট্যান্ড ফ্যান রাখা হয়েছে যার জন্য দৌড়াদৌড়ির মাঝেও বাতাস লাগছে গায়ে।

কিছুক্ষণ পর রোদ চলে গেলো নিমেষেই আকাশে একটু একটু করে মেঘ জমছে,সবাই প্রার্থনা করছে যেনো বৃষ্টি না নামে।বিয়ে বাড়ি বৃষ্টি নামলে ব্যাপার টা খুবই বিরক্তিকর।

অভ্রর ফোনে কল আসতেই ফোনে কথা বলতে বলতে বাইরে আসে গল্পের আসর ছেড়ে। বাগানে একটা চেয়ার টান দিয়ে বসে কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলছিলো।পেছন দিয়ে ফুল ছুটাছুটি করছিলো, এমন সময় ফুল খেয়াল করলো অভ্র কারো সাথে ভিডিও কলে কথা বলছে, ফোনের স্ক্রিন জুড়ে একটা কিউট ছোটো বাচ্চা, ফুল থেমে গিয়ে আগ্রহ নিয়ে অভ্রর কাছে গেলো ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছে।

হঠাৎ করে ঘাড়ের কাছে কারো নিশ্বাসের অনুভব হতেই অভ্র চোখ ঘুরিয়ে তাকাতে যাবে তখন ওর ফোন থেকে বলে উঠলো,
-ছোতো বাবা তোমায় পেছনে ওতা কে?
অভ্র ভালোমতো তাকিয়ে দেখে ফুল।
-তুমি যে রকম আমাদের বাড়ির একটা কিউট ডল।এটাও তেমন এই বাড়ির একটা কিউট ডল।
-অই দল তা আমায় জন্য নিয়ে আছো ছোতো বাবা।

অভ্র খিলখিল করে হেসে দিলো, ফুলও হেসে দিলো।ফুল হেসে হেসে বললো,
-নিয়ানা কত্ত কিউট!
-তুমি ওর নাম জানলে কি করে?
-কাল রাতে অনু আমায় সব বলেছে।
-ওহ!
-ছোতো বাবা বয়ো না নিয়ে আছবে অই দল তা?
-এই ডলটা লাগবেই মা তোমার?
-হ্যাঁ ওতা আমায় চাই চাই।
অভ্র ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে কি বলো যাবে আমার সাথে?
-কোথায়?
-অই যে নিয়ানা তোমায় নিয়ে যেতে বলছে।
-ধেত!
ফুল লজ্জা পেয়ে এক ছুটে চলে গেলো।
-ডল টা যাবে না বাবা।এই ডলটা খুব দুষ্টু।
-ছোতো বাবা আমায় এই দল তা চাই।তুমি আনবে।
-আচ্ছা আনবো তুমি ভালো ভাবে থেকো।আর দুষ্টুমি করবে না।নানু নানাভাইকে জ্বালাবে না।লক্ষ্মী মেয়ের মতো সব কথা শুনবে। ।নাহলে তো মাম্মাম কষ্ট পাবে পাপা কষ্ট পাবে।পাপা মাম্মামকে ডিস্টার্ব করবে না
-ওকে কইবো না দুস্তুমি।
-গুড গার্ল একটা আমার ছোটো মা।
-কিন্তু আমায় অই দল তা চাই।
-ওকে আনবো তোমার জন্য এই ডলটা, হ্যাপি?
নিয়ানা হেসে দিয়ে বললো,
-লাভ ই ছোতো বাবা।
-লাভ ইউ টু মা।
-আল্লাহ্ হাফেজ ছোতো বাবা।পয়ে কথা বব্বো। নানাভাই আর আমি খেয়া কইবো।
-ওকে মা আল্লাহ হাফেজ ।

অভ্র কল কেটে দিয়ে ফোন পকেটে রেখে
পেছনে ঘুরে তাকালো দেখলো অনু ওদের সাথে নেই,ফুল স্ট্যান্ড ফ্যানের সামনে দাঁড়িয়ে বাতাস খাচ্ছে হা করে।চুল গুলো খুব বিরক্ত করছে ওকে প্রবল বাতাসের বেগে খোলা চুল গুলো অগোছালো হয়ে উড়ছে।মনে হচ্ছে খেলার পর্বটা শেষ।
অভ্রর চোখের সাথে মিনার চোখ পড়তেই ইশারায় ফুলকে ডাকতে বললো।মিনা ফুলকে ডেকে দিলো, ফুল অভ্রর দিকে তাকাতেই অভ্র ইশারায় ওর কাছে যেতে বললো।সাথে সাথে ফুল ওর সামনে এসে দাঁড়ালো।
-বলুন ।
-বললে না যে।
-কি বলবো?
অভ্র ঠোঁট টিপে হেসে দিয়ে বললো,
-আমার সাথে যাবে না?
-ধুর এই কথা বলার জন্য ডাকছিলেন!
ফুল আবারো লজ্জা পেয়ে দৌড়ে চলে যেতে নিবে তখন অভ্র ওর হাতটা ধরে টান দিলো,
-আরে এতো ছুটাছুটি করছো কেনো,বসো এখানে কথা আছে।
-না আমি দাঁড়িয়ে থাকবো। বলুন আপনি।
অভ্র একটা চেয়ার নিয়ে ফুলের দিকে দিয়ে বসার জন্য ইশারা করলো,না চাইতেও ফুল বসলো।
-বলেন এখন।

-খুব সুন্দর ভায়োলিন বাজাতে পারো তো তুমি।কার থেকে শিখেছো এতো সুন্দর করে ভায়োলিন বাজানো?
ফুল অনেকটা প্রাউড ফিল করলো নিজের এই সুনাম রাজপুত্রের কাছে শুনে।
-এটা তো আমি ছোটো দাদার থেকে শিখেছি।কিন্তু আমি বেশি পারি না একটু একটু পারি।
-গানের সুরের থেকেও মনোমুগ্ধকর ছিলো তোমার ভায়োলিন বাজানো,আজকে সেকেন্ড টোনটা মেবি হ্যালো তাকদির মুভির টোন ছিলো তাই না?
-কি জানি জানি না,ওটা আজই প্রথম বাজিয়েছিলাম।অনু আমাকে মোবাইলে ওটা শুনানোর পর আমি বাজানোর চেষ্টা করছিলাম।
-ওহ।মারাত্মক লেভেলের সুন্দর ছিলো। যাকে বলে এক কথা জটিল লেগেছে।
-থ্যাংক ইউ এতো বড় প্রশংসা করার জন্য!
-যাই হোক।তোমাকে আমি একটা ডিল করার জন্য ডেকেছি।
-কি ডিল?
-তুমি যে আমার থেকে গিটার বাজানো শিখতে চাইলে।আমি তোমাকে গিটার বাজানো শেখাবো।তার বিনিময়ে তুমি আমাকে ভায়োলিন বাজানো শেখাবে।
-আমি নিজেই তো ঠিক মতো করে বাজাতে পারি না।ছোটো দাদার থেকে শিখে নিয়েন।

-না আমি তোমার থেকে শিখবো, তুমি তোমার মতো করে শেখাবে।
-ঠিক আছে চেষ্টা করবো ।
-ওকে ডান।
ফুল কিছু একটা ভেবে বললো,
-তাহলে অই স্থিরতার পরীক্ষা।
-ওটা অন্য কোনো ক্ষেত্রে প্রয়োগ হবে।
-ওকে।
-আর অই কাজ তুমি পারবেও না।
-ইমমহ! বলেছে আপনাকে আমি পারবো আপনাকে চ্যালেঞ্জ।
-আচ্ছা দেখা যাবে।
অভ্র দুষ্টু হাসি দিয়ে ফুলের দিকে তাকিয়ে বললো,
-তাহলে যাবে?
-কোথায়?
-আমার সাথে?
ইশারা করে ঢাকার দিকে দেখালো।

ফুল চোখ বন্ধ করে এক সেকেন্ডে উধাও হয়ে গেলো অভ্রর সামনে থেকে।অভ্র হো হো করে হাসছে ফুলের কান্ড দেখে।ফুলকে খেপানোর একটা কার্যকরি টোটকা পেয়েছে।

বাড়ির বাইরের দিকে কেমন সাজানো হয়েছে সেটা দেখার উদ্দ্যেশে ফুল মীনা, বর্ষা,বকুল বাদলকে নিয়ে বাইরে চলে যেতে নিলো রোজ প্যাটেলের গেটের সামনে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই দেখতে পেলো খানিকটা দুরত্ব পেরিয়ে সালমা বানু রোডের ওপাশে দাঁড়িয়ে উঁকি মেরে ভেতর দিকটা দেখার চেষ্টা করছে। ফুল ডেভিল স্মাইল দিয়ে তাঁর সামনে গিয়ে দাঁড়ালো ওর গ্যাং নিয়ে।
-আমার ভাইয়ের বিয়ে, গ্রীণ রোডের কেউ বাদ নেই দাওয়াত পাওয়ার।যদিও তুমি আমায় অপমান করেছো কিন্তু আমার বাবা চাচারা খুব রেসপন্সেবল, তোমার স্বামীকেও দাওয়াত করে এসেছে আমার মামা গিয়ে।তুমিও চাইলে আসতে পারো , বিয়ের কার্ডে লিখা আছে সপরিবারে আমন্ত্রিত!
সালমা বানু চোখ গরম করে তাকিয়ে বললো,
-এই মেয়ে তুই বলার কে সেটা।একদম ঠ্যাঙ ভেঙে দেবো।
ফুল ঠান্ডা ভাবে উত্তর দিলো,
-তুমি এসো আমরা কিন্তু কারো ঠ্যাং ভেঙে দেবো না।তুমি না এলে না আমাদের বিয়ে বাড়ির অনুষ্ঠান টা শুন্য শুন্য লাগবে গো।তুমি যখন এন্ট্রি নেবে তখন সাউন্ড বক্সে একটা গান ই বাজবে,
“এ এএ এই মেয়ে একদম ঠ্যাং ভেঙে দেবো,এই মেয়ে তোর ঠ্যাং ভেঙে পেয়ারা গাছে ঝুলিয়ে রাখবো “অই ডিজে ডিজে ডিজে।

ফুলের সাথে তাল মিলিয়ে ওর গ্যাং একসাথে বলে উঠোলো,
-“ডিজে ঠ্যাং ডিজে বানু”ডিজে পেয়ারা, ডিজে ডিজে ডিজে।

সালমা বানু রাগে ফুঁসতে ফুঁসতে বললো,
-তোকে পরে দেখে নিবো।
-কেনো? এখন না কেনো? আমার ভাইয়েরা আমাকে বাঁচাতে আসবে বলে?

কোনো উত্তর না দিয়ে হাতির মতো করে পায়ের বেগ নিয়ে চলে গেলো সালমা বানু।

ফুল রাস্তায় দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে প্রচন্ড রকম হাসছে।পুরো বাহিনী একসাথে কিটকিট করে হাসছে।

দেখতে দেখতে বেলা পেরিয়ে বিকেল হয়ে এলো।দুপুরের মধ্যে বিয়ে বাড়ির সমস্ত এরেঞ্জমেন্ট কমপ্লিট। আকাশটায় সেই যে সকাল থেকে মেঘ জমে আছে সূর্যের দেখা আর মিলছে না।

বিকেলের দিকে মেয়েরা সবাই গায়ে হলুদের ডালা সাজাচ্ছে।মেয়ের বাড়িতে নেয়ার জন্য তত্ত গুলো দুপুরের আগেই সাজানো হয়েছে।এখন সাজানো হচ্ছে গায়ে হলুদের স্টেজে আশিকের সামনে রাখা হবে সেসব ডালা।সবাই ফল মিষ্টি দিয়ে নানান রকম ফুল, পাখি , হরেক রকম ডিজাইন করে সাজাচ্ছে।ফুল বসে বসে আপেল দিয়ে হাঁস বানাচ্ছে ফুল বানাচ্ছে।অনু মাল্ট্রা দিয়ে টেডি বিয়ার বানালো, পাখি বানালো,ফুল বানালো।মীরা আর অয়নী মিলে একটা বিশাল ট্রে তে পায়েশ নিয়ে সেটার উপর ডালিম কিসমিস স্ট্রবেরী দিয়ে নানা রকম ডিজাইন করে ফুল বানাচ্ছে।বৃষ্টি মিষ্টি দিয়ে কিছু ডিজাইন করছে।

কবিতা আর তার বোন মিলে নকশী পিঠা দিয়ে সাজাচ্ছে।এরকম প্রায় সবাই যে যেটা পারে সেটাই করছে। প্রায় পঞ্চাশটার মতো ডালা সাজালো ওরা।মেয়ের বাড়িতে হলুদ দিয়ে এসে এগুলো আশিকের হলুদের স্টেজে নেয়া হবে।

বিয়ে বাড়ির সমস্ত কিছু রেকর্ড করার জন্য আলাদা করে ভিডিও ক্যামেরা ম্যান রাখা হয়েছে যে সব কিছু ভিডিও করছে।

ডালা সাজানো হলে সবাই সাজুগুজো করতে চলে যায়।
আজ মেয়েরা সবাই ইয়েলো এন্ড অরেঞ্জ কালার কম্বিনেশনের জামদানী শাড়ী পড়েছে।আর ছেলেরা সবাই লেমন কালার পাঞ্জাবী পড়েছে।

ফুলকে কবিতা নিজ দায়িত্বে সুন্দর করে সাজিয়ে দিয়েছে।শাড়ী কন্ট্রোল করতে পারে না বলে শাড়ী পড়ানোর সময় কঠিন ভাবে প্রতিটা স্টেপে সেইফটি পিন আটকিয়ে দিয়েছে যেনো কোনো ভাবেই ফুলের কোনো বিপদের সম্মুখীন না হতে হয়। কিন্তু ফুল শাড়ি পরে খুবই যন্ত্রণার মধ্যে আছে,মনে হচ্ছে একটু হাঁটলেই শাড়ীর কুচি খুলে খুলে পড়বে।

চুল গুলো ডিজাইন করে খোঁপা করে গাজরা ফুল দিয়ে খোঁপায় আটকে দিয়েছে।ঠোঁটে ডার্ক পার্পল কালার লিপস্টিক লাগিয়েছে,চোখে মোটা করে কাঁজল আর আইলাইনার, নাকে একটা ছোট্ট নথ পড়েছে। দু হাত ভরে লাল রঙের চুড়ি। ফুলকে দেখতে তো আজ মহামারী সুন্দর লাগছে!

অভ্র এখনো ফুলকে দেখেনি যখন দেখবে কি অবস্থা হবে ছেলেটার?কাদা মাখা অবস্থায় দেখেই তো নাম হুর দিয়েছিলো।আর আজকের এই অপরূপা সাজার পর কি নাম দেবে?হুরের থেকে তো সুন্দরী কেউ হতে পারে না!
-মাশআল্লাহ আমার মেয়েটাকে কত্ত সুন্দর লাগছে!
আমেনা বেগম ফুলের কপালে চুমু খেয়ে কথা টা বললো, ফুল খানিকটা লজ্জা পেয়ে মাথা নিচু করে রইলো।

এমন সময় আয়েশা বেগম সামনে এসে ফুলের কপালে চুমু খেয়ে দোয়া পড়ে গায়ে ফুঁ দিয়ে বললেন।
-দোয়া দিয়ে দিলাম কারো বদ নজর যেনো না লাগে আমার পরী মায়ের উপর।

আশিক ফুলকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরে বললো।
-মা আরেকটা দোয়া দিয়ে দাও, যেনো আমার পুতুল বোনকে কোনো জ্বীন ভুল করে তাঁর পরী মনে করে উঠিয়ে নিয়ে না যায়।
-উঠিয়ে নিয়ে গেলে আমার সাত ভাই আছে কিসের জন্য শুনি?
-সাত ভাই তো আর জাদু জানে না যদি তোকে সাথে করে ওদের দেশে নিয়ে যায়?তখন আমরা পৃথিবীতে বসে বসে কাঁদবো।
-হয়েছে আর বলতে হবে না। মানলাম আমি একটু বেশিই সুন্দর তাই বলে এতো প্রশংসা করতে হবে না আমার!
-প্রশংসা করবো না তো কি করবো বলতো।যদিও আমার ভেতরে হিংসে হচ্ছে তোকে দেখলে সবাই কি বলবে জানিস?
-কি বলবে?
-বলবে বিয়ে টা আসলে কার?আশিকের নাকি ওর বোনের?

ফুল চোখ বড় বড় করে আশিকের দিকে তাকালো, আশিক খিল খিল করে হাসছে।
-তুই চিন্তা করিস না,তোকেও বিয়ে দিয়ে দেবো একদিন।সেদিন এর থেকেও সুন্দর করে সাজানো হবে।

বিয়ের কথা শুনে ফুল মন ভার করে রইলো কোনো কথা বললো না।মন খারাপ তাড়ানোর জন্য আশিক ফুলকে জড়িয়ে ধরে বললো,
-তোর বিয়ের পর তোর বরকে এবাড়িতেই ঘর জামাই করে রাখবো। সারাজীবন আমরা আমাদের বোনকে আগলে রাখবো রাণীর মতো করে।
এবার ফুল কিছুটা খুশি হলো।ভাইদের ছাড়া থাকা ফুলের পক্ষে অসম্ভব।

ফুল সেজেগুজে বাড়ির সবাইকে দেখাতে লাগলো।বাবা -চাচা-মামা-ফুপা-ফুপি-মামী -সব ভাইদের শুধু আকাশ বাদ দিয়ে।আকাশ আছে ওর বন্ধুদের নিয়ে এখনো ওদের রেডি হওয়া হয় নি।

ফুল সুমাইয়া ভাবীর সাথে বসেছিলো তখন অনু ফুলের সামনে এসে বললো,
-ফুল একটু চলো না একটু আকাশ ভাইয়াদের ফ্ল্যাটে যাই।
-তুমি যাও না।
-না একা যেতে ইচ্ছে করছে না ।তুমি চলো না প্লিজ।
-ওখানে কেনো যাবে?
-ভাইয়ার কাছে যাবো একটু দরকার আছে।ভাইয়াকে কল দিচ্ছি রিসিভ করছে না।ভাইয়ার ফোন অলওয়েজ সাইলেন্ট থাকে।

– আমার খুব লজ্জা লাগছে।
-আরে আমারও লজ্জা লাগছে বলেই একা যেতে চাচ্ছি না, তাই তোমাকে সাথে নিয়ে যেতে চাচ্ছি দুই জন একসাথে গেলে লজ্জা লাগবে না। অয়নী আপি বৃষ্টি আপি মীরা আপি ওদের এখনো সাজুগুজোই হয় নি।

সুমাইয়া ভাবী ফুলকে বললো,
-পরী যাও লজ্জার কিছু নেই তো।আশিক একটু আগে ওখানে গিয়েছে।তোমার আকাশ নানা আছে আশিক দাদা আছে,কাব্য আছে। লজ্জা পাবে কেনো?
ফুল অনুর দিকে ফিরে বললো,
-ঠিক আছে চলো।কিন্তু ওখানে বেশিক্ষণ থাকবো না কিন্তু?
-হ্যাঁ যাবো আর আসবো।

ফুল উঠে গিয়ে অনুর সাথে বেরিয়ে গেলো আকাশদের ফ্ল্যাটের উদ্দ্যেশে।

ওদিকে আকাশরা সবাই রেডি হয়ে বের হচ্ছে। আশিকও ওদের সাথে বের হচ্ছিলো ওরা সবাই কথা বলতে বলতে বের হয়ে বাগানের সামনে দাঁড়িয়ে হাসিঠাট্টা করছিলো।অভ্র এখনো বের হয় নি সবার পরে বের হচ্ছিলো। মাথা নিচু করে ওর হাতের DSLR টাতে কিছু একটা দেখতে দেখতে বের হচ্ছিলো।

আকাশদের ফ্ল্যাটের সদর দরজার সামনে দাঁড়াতে না দাঁড়াতেই ফুল অনু এসে সামনে দাঁড়িয়ে পড়লো।

অভ্র সেই যে মাথা নিচু করে DSLR এ গভীর মনোযোগ দিয়ে কি একটা দেখে দেখে বেরুচ্ছে সামনে কে এলো কিছু খেয়াল নেই।বেতালেই ফুলের গায়ের সাথে DSLR টার ধাক্কা লাগলো,অভ্র মাথা উঁচু করে তাকাতেই ,
চলবে…………
(আসসালামু আলাইকুম পাঠক পাঠিকা ভাই বোনেরা,আপনাদের জন্য গ্রুপে কুইজ প্রতিযোগিতার আয়োজন করা হয়েছে, আশা করি সকলে তাতে অংশগ্রহণ করবেন,ধন্যবাদ।)
নিচে গ্রুপের লিংক দেয়া হলো।
https://www.facebook.com/groups/399234587718623/?ref=share

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here