হৃদয়ের কোণে পর্ব ২৫

0
568

#হৃদয়ের_কোণে (পর্ব ২৫)
#নাহার
·
·
·
সকালবেলা ছাদের উপর মাদুর বিছিয়ে বসে আছে নিরা। নিরার পাশে কাশফি বসে বসে মোবাইল গুতাচ্ছে। নিরা আনমনে কিছু ভাবছে আর হাসছে। দুই বোন সকাল সকাল গোসল সেরে ছাদে রোদ শুকাচ্ছে। বাড়ির তিন বউ এদিক সেদিক ছোটাছুটি করছে। বিভিন্ন কাজ করছে। গোছগাছ করছে। কৌশিককে এই পর্যন্ত পাঁচ ছয়বারের মতো দোকানে পাঠিয়েছে। কয়েকবার মার্কেটে পাঠিয়েছে প্রয়োজনীয় জিনিস কিনতে। মার্কেটে যাওয়ার সময় রাফিনও গেছিলো।

বাড়ির তিন গৃহিনীর কড়া নির্দেশ আজকে কেউ কাজে যেতে পারবে না। সাড়ে তিনটার দিকেই তারা রওনা দিবে আফিয়াদের বাসায়। বাড়ির বড় ছেলের বিয়ে এবং তাদের বাড়িতে এটা প্রথম বিয়ে তাই খুব যাক জমক ভাবেই সবকিছু হবে। আজকে তাদের বাসায় প্রস্তাব নিয়ে যাবে৷ আফিয়াও তার বাসায় জানিয়ে দিয়েছে এবং সেখানেও সব কিছু রেডি করা হচ্ছে।

কিছুক্ষণ পর ফাতেমা দৌড়ে এলো। নিরার সামনে দুইপা ভাজ করে বসেছে। তিনজনের চুল ছাড়া। ভেজা চুল তাই রোদে শুকিয়ে নিচ্ছে। ফাতেমা বড় একটা বাটিতে করে ফুসকা নিয়ে এসেছে। ফামেতা কিভাবে যেনো মেনেজ করে নিয়ে এসেছে। কাশফি মোবাইল কোলের উপর রেখে দিয়েছে। খুব আয়েশ করে তিনবোন ফুসকা খাচ্ছে। একটা ফুসকা নিয়ে তাতে টক বেশি করে দিয়ে মুখে পুড়ে দিলো নিরা। ফাতেমা গপগপ করে খাচ্ছে আর অস্পষ্ট ভাবে বলছে,
— আপু আজকে আমরা কি পড়ে যাবো?

কাশফি মশকরা করে বললো,
— ছালা পরে যাবো।

নিরার হাসতে গিয়ে নাক তালুতে খাবার উঠে গেছে। ফাতেমা দৌড়ে পানি আনতে গেলো। কাশফি নিরার মাথায় এবং পিঠে হাত দিয়ে হালকা হালকা ভাবে বারি দিচ্ছে। ফাতেমা পানি এগিয়ে দিয়ে কাশফিকে বললো,
— ছালাটা আগে তুমি পড়বে তারপর আমরা পড়বো নে।

আবার ফুসকা একটা মুখে পুড়ে দিলো ফাতেমা। নিরা শান্ত হয়ে বসে বললো,
— জিন্স আর শার্ট পড়লে কেমন হয়?

কাশফি বললো,
— তোর ডাক্তার সাহেব মাথায় তুলে তোরে আছাড় মারবে। সাথে আমাদেরকেও মারবে। বাবাগো আমি নাই এইসবে।

নিরা কিছু বললো না। টকের বাটি থেকে কয়েক চামচ টক খেয়ে নিলো। তারপর বললো,
— আমরা তিনবোন শাড়ি পড়ে গেলে কেমন হয়?

কাশফি বললো,
— খারাপ না ভালোই হয়।

ফাতেমা খুশিতে গদগদ হয়ে বললো,
— আপু প্লিজ শাড়ি পড়ি এটাই ভালো হয়। আমি কখনো আগে শাড়ি পড়িনি। প্লিজ এবার শাড়ি পড়ি?

নিরা হেসে হেসে ফাতেমার গাল টেনে বললো,
— বিয়ের পর দেখবি তোর বর তোকে প্রতিদিন শাড়ি পড়াবে। ঠিকাছে আজকে আমরা শাড়ি পড়বো।

ফাতেমা একটু লজ্জা পেলো। নিরাও আনমনে হাসছে আর ভাবছে বিয়ের পর তার ডাক্তার সাহেব তাকে কি শাড়ি পড়তে বলবে নাকি সেলোয়ার-কামিজ কে জানে। কাশফি গোপনে একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো।
——————————————————————————–
সবাই রেডি হয়ে বের হয়েছে। মুরব্বিরা সবাই এক গাড়িতে বসেছে। কাশফি কলাপাতা কালারের একটা সুতির শাড়ি পড়েছে। ফাতেমা নীল রঙের সুতির শাড়ি পড়েছে। আর নিরা পড়েছে জলপাই রঙের সুতির শাড়ি। ফায়াজ, ফাহিম এবং নাঈম তারা তিন ভাই একই রকমের পাঞ্জাবি পড়েছে শুধু কালার ভিন্ন। রাফিন এবং কৌশিক সাদা পাঞ্জাবি পড়েছে। ছেলে মেয়েগুলা সবাই আরেকটা গাড়িতে। আজকে রাফিন ড্রাইভ করছে। নিরা রাফিনের পেছনের সিটে বসেছে। লুকিং গ্লাসে বারবার নিরাকে দেখছে রাফিন। তবে এখনো মাস্ক পরে আছে। ফাতেমা হুট করে জিজ্ঞেস করলো,
— রাফিন ভাইয়া তুমি মাস্ক পড়ে আছো কেনো?

রাফিন একটু নড়েচড়ে বসলো। নিরা ঠোঁট চিপে হাসছে। কাশফিও বললো,
— হ্যাঁ তাইতো। আমিও কালকে থেকে লক্ষ করেছি ভাইয়া তুই কালকে থেকেই মাস্ক পড়ে আছিস। কি হয়েছে তোর?

লুকিং গ্লাসে একবার নিরাকে দেখলো রাফিন। সবাই উৎসুক দৃষ্টিতে রাফিনের দিকে তাকিয়ে আছে। কৌশিক মিটিমিটি হাসছে। নিরাও হাসছে। রাফিনের একটু হিংসে হলো নিরার হাসি দেখে। মনে মনে বললো,
— আমাকে এই অবস্থায় ফেলে হাসা হচ্ছে তোমার তাই না? একবার কাছে পাই তারপর বুঝাবো তোমাকে। আপাতত তোমাকে জব্দ করতে হবে নিরুপাখি।

রাফিন মুখের মাস্ক সরিয়ে নিলো। সবার উদ্দেশ্যে বললো,
— আরে তোরা তো জানিসই আমাদের ঘরে একটা জংলি বিল্লী আছে। কথায় কথায় খামছি দিবে। আঁচড় দিবে, কামড় দিবে। কালকে ঘরের জংলি বিল্লীটা কামড় দিয়েছে আমাকে।

সবাই নিরার দিকে তাকয়ে একসাথে বললো,
— উউউউউউ!

সবাই এবার নিরার দিকে তাকিয়ে আছে। এদিকে নিরার হাসি চলে গেছে। মুখটা শুকনা হয়ে গেছে। লজ্জায় কারো দিকে তাকাতে পারছে না। সবাই মিটিমিটি হাসছে তারদিকে তাকিয়ে। আর কোনোদিকেই তাকাচ্ছে না নিরা। মনে মনে রাফিনকে অনেক বকেছে। চুপচাপ বাইরের দিকে তাকিয়ে আছে নিরা। রাফিনের ঠোঁটে বাকা হাসি। নিরাকে বেশ জব্দ করতে পেরেছে সে।

——————————————————————————–
আফিয়ার বাবা মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম কথা বলছেন মোহাম্মদ আনোয়ার, আফজাল এবং আহমাদ সাহেবের সাথে। এদিকে আফিয়ার মা মিসেস ফিরোজা খাতুন কথা বলছেন সৈয়দ বাড়ির তিন জার সাথে। সবার কথা বলে শেষে তারা ছেলে মেয়েদের সামনে এগিয়ে গেলো। মিসেস তানজুম বললেন,
— কৌশিক বাবা তুই আফিয়ার পাশে বয়।

কৌশিক তাই করলো। আফিয়া লাল রঙের একটা জামদানী শাড়ি পড়েছে। মুখে হালকা মেকাপ। খুব সুন্দর লাগছে তাকে। এদিকে বাকি ভাই বোন গুলা চোখে চোখে যুক্তি করে রাফিনের পাশে নিরাকে বসিয়েছে।

রাফিন আড়চোখে নিরাকে দেখছে বারবার। নিরা শাড়ির সাথে বেণুনি করেছে। লম্বা চুলে বেণুনি বেশ ভালোই লাগছে। দুই হাতে কয়েকটা কাচের চূড়ি। কানে ছোট ছোট দুল। এতেই বেশ লাগছে। নিরা সামনের দিকে তাকিয়ে আছে। একবারো তাকায়নি রাফিনের দিকে। এতে রাফিনের মেজাজ খারাপ হলো। পাঞ্জাবী পড়েছে, নিজেকে সুন্দর ভাবে উপস্থাপন করছে তাও এই মেয়েটা তার দিকে তাকাচ্ছে না। সবার আড়ালে রাফিন নিরার কোমড়ে কাতুকুতু দিলো। নিরা চোখ গরম করে তাকালো। রাফিন বিনিময়ে বত্রিশ পাটি দাঁত দেখিয়ে হাসলো।

দুই পরিবারের সম্মতিতে একে অপরকে আংটি পড়িয়ে দিলো এবং তাদের বিয়ে ঠিক হলো। সামনের শুক্রবারে হবে গায়ে হলুদ এবং এর পরের শুক্রবারে বিয়ে। কৌশিক বিরক্তি নিয়ে বললো,
— এতো দেরি করার কি দরকার গায়ে হলুদের পরেরদিন বিয়ে হলে সমস্যা কই?

মিসেস তানজুম ছেলের কথায় একগাল হাসলেন। উপস্থিত সবাই হো হো করে হাসছে। এতে কৌশিক আরো বিরক্ত হলো। রাফিন ফিসফিস করে নিরার কানে কানে বললো,
— আমরা একই দিনে বিয়ে গায়ে হলুদ সেরে ফেলবো। এতো দেরি করতে পারবো না আমি। আর যদি দেরি হয়ে যায় তো তোমাকে তুলে নিয়ে যাবো।

নিরা শুকনো ঢোক গিললো। সামনে জুসের গ্লাস নেয়ার বাহানা দিয়ে উঠে গেলো রাফিনের পাশ থেকে। নিরা মনে মনে বললো,
— লজা লজ্জা কিছু নেই এই লোকটার।

জুসের গ্লাস নিয়ে নাঈমকে ধাক্কা দিয়ে উঠিয়ে দিয়ে নিজে সে জায়গায় বশে পড়লো। নাঈম এসে রাফিনের পাশে বসলো। রাফিন চোখ গরম করে নিরার দিকে তাকায়। নিরা ভেঙচি কেটে মুখ ঘুরিয়ে নেয়।

সবাই রাতের খাওয়া দাওয়া করে বাসায় ফিরে এলো। কৌশিক উপহার হিসেবে ছয় হাজার টাকা পেয়েছে। ভাইবোন সব কাপড় পালটে কৌশিকের ঘরে হাজির। উদ্দেশ্য কৌশিকের বকশিসে নিজের অধিকার বসানো। কৌশিক নাছোড়বান্দা দিবেই না টাকার ভাগ। এদিকে ভাইবোন সবগুলাও জেদ ধরে বসেছে কোনোভাবেই টাকা ছাড়া ঘর থেকে যাবে না। কৌশিক বললো,
— তোমাদের বিয়ের সময় অনেক টাকা পাইবা। এখন ভাগো এখান থেকে।

কাশফি কয়েকটা কিল দিয়ে বললো,
— না দিলে আজকে তুই শেষ। তাড়াতাড়ি টাকা বাহির কর।

অনেক ঝগড়াঝাঁটির পর টাকা দিলো কৌশিক। একা মানুষ এতো গুলা সাথে পেরে উঠে না। তাই বাধ্য হয়ে নিজেকে ছাড় দিতে হলো। মনে মনে বললো,
— একবার বিয়েটা হোক। এরপর বউ আমার পক্ষে থাকবে। তখন আমিও শক্তিশালী হবো। উহাহহাহা।

——————————————————————————–
কাশফির রুমে বসে সবাই টাকা সমানভাবে ভাগ করে নিলো। সবাই টাকা পেয়ে খুব খুশি। এই টাকা দিয়ে কে কি করবে এইসব বলছে আর হাসাহাসি করছে। সবার আড্ডা দেয়া শেষ হলো রাত দুইটায়। সবাই যে যার যার রুমে চলে গেলো। নিরাও বের হয়ে রুমে আসার জন্য।

কাশফির রুম থেকে নিরার রুমে যেতে হলে প্রথমে রাফিনের রুম এবং পরে কৌশিকের রুম ক্রস করে যেতে হয়। নিরা রাফিনের রুমের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় কেউ একজন হাত ধরে টেনে রুমের ভেতরে এনে দরজা লাগিয়ে দিলো। ঘটনা এতো তাড়াতাড়ি ঘটেছে যে নিরা বুঝে উঠতে পারলো না। মুহুর্তেই নিরার সেদিনের ওয়াশরুমের ঘটনা মনে পড়ে গেলো। একপ্রকার ভয় পেয়ে গেলো সে। পেছন ঘুরে দেখলো রাফিন দুইহাত বুকের উপর ভাজ করে দরজায় হেলান দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। ঠোঁটে সেই কিলার হাসি। নিরার ভয়ের রেশ কেটে গেলো রফিনকে দেখে।

রাফিন আস্তে আস্তে নিরার দিকে এগিয়ে এলো। রাফিনের এমন চাহনিতে নিরার বেশ লজ্জা লাগছে। নিরা মনে মনে বললো,
— এভাবে তাকিয়ে থাকার কি দরকার? উনি কি বুঝতে পারে না উনার এমন চাহনিতে খুব লজ্জা পাই আমি।

নিরা মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে আছে। এক হাত দিয়ে অন্য হাত ঘষছে। রাফিন নিরার খুব কাছে এসে দাঁড়ায়। যেখান থেকে দুইজনই দুইজনের নিঃশ্বাসের শব্দ শুনতে পাচ্ছে। নিরার কপালের অবাধ্য চুলগুলো সরিয়ে দিয়ে বললো,
— আমার ভালোবাসি কথাটার এখনো উত্তর পেলাম না নিরুপাখি।

নিরা এবার আরো লজ্জায় পড়ে গেলো। মনে মনে বললো,
— ডাক্তার সাহেব আপনি কি বুঝেন না আমার লজ্জা হয়। কিভাবে মুখ ফুটে বলব। বলতে গেলেই তো ভিষণ লজ্জায় পড়বো।

রাফিন ঠোঁট কামড়ে শব্দ ছাড়াই হাসে। নিরার দুইহাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে বললো,
— নিরুপাখি। আমার লজ্জাবতী। আমার লাজুকলতা। তুমি হচ্ছো লজ্জাবতী গাছের মতো। লজ্জাবতী গাছকে যেমন ছুইয়ে দিলেই নুইয়ে পরে। ঠিক তেমনই তোমাকে আমি যতবার ভালোবাসি বলবো তুমি ঠিক ততবারই আমার বুকে নুইয়ে পড়বে।

নিরা চোখ বন্ধ করে দাঁড়িয়ে আছে। রাফিন নিরার মুখটা উপরে তুলে বললো,
— আর আমি সবসময় তোমাকে আমার বুকে আগলে রাখবো। কখনো ক্ষতি হতে দিবো না।

কথাগুলো বলেই রাফিনের ওষ্ঠ ছোয়ালো নিরার কপালে। নিরা লজ্জা পায়ম ভিষণ লজ্জা। লজ্জায় মুখ লুকাতে নুইয়ে পড়ে রাফিনের বুকে। রাফিন হেসে এক হাতে নিরার কোমড় জড়িয়ে ধরে অন্যহাত নিরার চুলের ভাজে মিলিয়ে দেয়।

কিচ্ছুক্ষণ পর রাফিন নিরাকে বললো,
— আজকে পাঞ্জাবী পড়লাম অথচ একবারো তাকালেনা আমার দিকে। কষ্ট পেয়েছি।

ন্যাকা কান্নার ভাব করে বললো। নিরা রাফিনের দিকে তাকিয়ে বললো,
— আমার চকলেট কই?

— এনেছি তো।

— তো দিচ্ছেন না কেনো?

রাফিন ব্যাগ থেকে চকলেট বের করে নিরাকে দিলো। নিরা খুশিতে গদগদ হয়ে রাফিনের হাত থেকে ছো মেরে চকলেট নিয়ে নিলো। চকলেটের প্যাকেট ছিড়তে ছিড়তে বললো,
— আপনাকে সাদা পাঞ্জাবীতে অনেক সুদর্শন লাগছিলো। আপনি এমনিতেই সুদর্শন। পাঞ্জাবীতে আপনার সৌন্দর্য যেনো আরো বেড়ে গেছে। আমার খুব হিংসে হয়েছে আপনাকে এতো সুন্দর লাগছিলো তাই। তাই তাকাইনি। হুহ!

নিরার কথায় রাফিন হাসছে। নিরা মুখ বাকিয়ে চকলেট খাওয়া শুরু করে। রাফিন কয়েকবার ডাক দিয়েছে এখন না খেতে। কারণ চকলেট গুলো গলে আছে। সব গলে গলে পড়ে হাত মুখ ভরে যাবে। কিন্তু কে শুনে কার কথা। নিরা কোনো কথা পাত্তা না দিয়ে চকলেট খাচ্ছে। হাত ভরেছে, জামায় পড়েছে। মুখে তো লেপ্টে গেছেই।

রাফিন নিরার সামনে বরাবর সোফায় বসে নিরাকে দেখছে। নিরা চকলেট খাচ্ছে আর আড়চোখে রাফিনকে দেখছে। এভাবে একটা নির্ঘুম রাতে কাটে দুজনের। একজন চকলেট খেয়ে পার করেছে। আরেকজন প্রিয়তমার চকলেট খাওয়ার দৃশ্য দেখে পার করেছে।
·
·
·
চলবে………………………

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here